বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

ড্রেসিং আয়না

নার্সের গাছচোখ-অনিদ্রিত পাখির কোলাজ যেন
প্রকাশ পাচ্ছে। বিলাপ হৃদয়ে-এত সুন্দর রচিত মুখ;
হৃদয়ের শিখায় শক্তিহীন জিনিস, একদম খাঁটি-

তরতাজা আপেলের মতো; সুগোল, ভাবলেশবুঝ-
চতুর স্রোতে একবার তাকালে এমন কনটেন্টের
নমুনা কেবল প্রগতি বাড়ায়-মরবার আগে
এক নিস্তরঙ্গ সীমাহীন দিনে প্রেম থাকা সঙ্গগুলো
জীবন একটা ব্যক্তিগত উপন্যাস, হাসপাতালের-
৫ নম্বর কেবিন, নির্ভরযোগ্য নির্জনতায় কাঁপিয়ে
ওঠানো বিলাপ আর প্রিয় গান, খুব আপনজন
ভেবে এই অবয়বে ঈশানীঘুম পাইতে ইচ্ছে করে

জানাশোনা মন্ত্র, শাদাবক; বুকপিঠে নেমে আসে
শাদা অ্যাপ্রনে প্রতারিত হবার মতো; না। ডানাহীন-
উড়ন্ত আকাশ/টাটকা দেখা যায়। মুখ ফসকে
বলা যায়, আহ জলের ওপর শান্ত সরোবর, ড্রেসিং
আয়না-এই মুন্সিয়ানা উড়ে যাচ্ছে। উড়ে আসছে…

কিছু হতাশা মন ছুঁয়ে থাকে

pa

হতাশাদের যায় না করা বিদায়, ছুঁয়ে থাকে মন,
কোলাহল আর ভাল্লাগে না, আমি খুঁজি নির্জন;
কেন জানি না কিছু নিরাশা এসে বুকে বাঁধে বাসা;
আর সেইসময়গুলো থাকে বিষাদে ঠাসা।

আমার ভালো লাগে না, বসে না মন কাজে,
এবেলা আমার যাচ্ছে তাই সময়, কাটছে বাজে,
কিছু দীর্ঘশ্বাস ওঠে বক্ষ ফুঁড়ে,
ভাবি বসে সুখগুলো কী তবে বহুদূরে।

কেমন যেন নিস্তেজ দেহ, চোখের নিচে কালির ছাপ
আমি টের পাচ্ছি বুকের বামে হতাশার উত্তাপ;
যায় না দূরে সরানো, মন হয় না আর ভালো;
নিতে চাই না স্ট্রেচ, তবুও কিছু বিষাদ এসে
মনের বাড়ী করে দিচ্ছে কালো।

ইচ্ছে হয় কাঁদি খুব কাঁদি, অথচ কান্নার কই স্থান?
এবেলা বুঝি সুখগুলো আমায় ছেড়ে করেছে প্রস্থান।
দিনদুপুরে বসে আছি চুপ, কাজগুলো আছে পড়ে,
আমার বসবাস এখন বেদনার বালিচরে।

চাই না হতাশা পুষি বুকে, নিরাশারা ঝাপটে ধরুক চাই না,
আশার আলো তো চোখের সম্মুখ আর দেখতে পাই না।
জানি হতাশারা চলে যাবে খানিক বাদে দূর;
তবুও তো মনে নিরাশা জমা হয় সাত সমুদ্দুর।

পারি না কিছুই সামলাতে, না সংসার, না সন্তান
মনের উঠোনে তাই পারি না বাজাতে আনন্দ কলতান
কেমন করে যেন মুহুর্মুহু হতাশার সমুদ্দুরেই হই নিমজ্জিত,
কিছু না পারার জন্য আমি জীবনের কাছে বড্ড লজ্জিত।

যুদ্ধ কোনো কবিতা নয়

দু’ একটি বর্ণচোরা অপাংক্তেয় শব্দ…..
আজ হঠাৎ কমরেড হয়ে উঠতে চাইছে…
ওরা এমনই ভয়ংকর যে,
কোনোপ্রকার বুলেট-বোমার ধার ধারে না!
কালবৈশাখী ঝড়ের মতো সত্যকে সত্য বলে
টাইফুনের মতো মিথ্যাকে মিথ্যা বলে!!

অথচ সত্যবাদীকে কেউ কেউ বলে থাকেন
সম্ভবতঃ তাকে পাগলা কুত্তা কামড়াইছে,
তা না হলে এইভাবে কেউ নির্লজ্জের মতো
সত্য বলে!!

অতঃপর….
পর্দার অন্তরালে থেকে মিথ্যাবাদীরা তখন
মুচকি হাসতে হাসতে মঞ্চের দিকে হেঁটে চলে!

একটি কবিতার জন্মের জন্য যদি একটি
যুদ্ধ না হয়
তাহলে সে কবিতা, কতোটা কবিতা হয়??

তবুও আমার মতো নিরীহ, নিভৃতচারী কবি
বলতে চায়….
যুদ্ধ কোনো কবিতা নয়
যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়…নয় নয়!!

ফিরে যাই শিশুকাল

Joy-o

গরু কিংবা ছাগলের বাচ্চাদের
কিছু দিন পর গলায় দড়ি লাগাই
জানেন, কি কারণে দড়ি লাগায়;
দড়ি না লাগলে চার পায়ের বাচ্চারা
খেত খামারে র ফসল বিনষ্ট করবে;
এমন কি শিং দিয়ে ডিসাডিসি করবে।
সবকিছুরি নিয়ম কানুন ধর্ম কর্ম আছে;
কিশোর কিংবা যৌবন ব্যাপ স্বাধীনতার
কণ্ঠে জয় গান ধরি! শিশুকাল ভুলে যাই-
চলো না শিশুকালে, থাকবে না কোন বাঁধা
অতঃপর আর ফিরতে পারব না শিশুকাল
মেনে নিতে হয় নিয়ম কানুন ধর্ম কর্ম।

১৯ আশ্বিন ১৪২৯, ০৪ অক্টোবর ’২২

বিড়াল ছানা

index

বিড়াল ছানা মিউ মিউ
আরশি মনি পিউ পিউ
করছে শোরগোল
পাশের বাসায় ঝগড়াঝাটি
কে নিয়েছে আমের আঁটি
কী যে গণ্ডগোল!

বিড়ালছানা ঘাপটি মারে
আরশি কি আর ওকে ছাড়ে
লুকোচুরি খেলা
গাছের ডালে পাখপাখালি
ব্যাঙের বাড়ি মহাখালি
কেমনে কাটে বেলা!

চা

অশান্ত সন্ধ্যা-উড়ন্ত আকাশের নিচে
বৃহস্পতিবার এলে
বেগুনিফুলের ঘাসের মতো
নিজের সঙ্গে দূরগামী গ্রীবায় হাসি

এ পরাগ গভীর সমতলে-
মধ্যবিত্ত ঘরবাড়ির বারান্দাযুক্ত
রেলিং ছুঁয়ে ওড়ে ভিটামিন চাঁদ।

শাদা নাচের মুদ্রায় জলজ হওয়া
গাছ বালিকাদের নরম স্তন
আর জলঘরে-
অনন্তদাস তারাগুলো;
সহ্যধরা নির্জন গাছেদের
স্নিগ্ধ পাতায়
স্নান সারে রোজ
সৌগন্ধিকময় আসক্ত ফেনা-ধ্যান’চা

ইনফিনিটি

কিছুকাল পর জানা যাবে
আমার কবিতারা আমাকেই গালি দেয়,
কি অথর্ব লোক তাদের লিখে গেছে
আবোল-তাবোল বিদঘুটে সব অর্থ!
কেন মরে যাওয়ার আগে তাদের পুড়িয়ে যাই নি
তার জন্য গালি দিবে নিশ্চিত।
গালি দিবে নামের শেষে লম্বা ডিগ্রী না লিখতে পারার জন্য।
গালি দিবে শুধু বিফল হয়ে নিষ্কর্মা থেকে যাওয়ার জন্য।
আমি সেই গালি শুনবো না, শুনবেনা কোনো পাঠক
সেই গালি শুনবে আমার কবিতারা আর সাথে লাল ডায়েরি।

কবিতা

অনিশ্চিত

নির্বাকের উত্তরীয় পরেই যজ্ঞিডুমুরের তলায় ঘুমিয়ে থাকি একরাশ বাক্যস্থিত স্বপ্নে
যখন ঘুম ভাঙে তখন পূবের চাঁদ পশ্চিম দিগন্তে ছুঁয়ে আসে
কখনো মধ্যরাতে বিষ্ময় জাগে, ঘুম ও স্বপ্ন মারামারি করে
কখনো তিলক স্পর্শ করে করোটির ব্যথা
আগের শীতের মতো রুক্ষদলীয়!
একযোগে একরকম চলতে চলতে ওরা ক্লান্ত শরীরে
ওরাও তীব্র জ্বালায় পীত হৃদয়ে লালচে ফোস্কা ফলায়
এভাবেই একদিন ঘাস হয়ে পায়ের নিচে
পিঁপড়ের সাথে আঁতাত করি ফরমিক এসিডের এক ফোঁটা আমায় ঢেলে দাও পোড়া গায়ে!

হোক বিশ্বটা এক বাড়িতে

বন্ধু দিবসে আমার মনের কোণায়
উঁকি মারে কত প্রিয় মুখ;
কত বছর পরে কে যে তবে কোথায়
পেল সুখ নাকি শুধু দুখ।

নিয়ত মনে পড়ে এখনো তোমাদের
কাঁদি, বসি যখন একাকী;
পালিয়ে গেলে আকাশে ফেলে আমাদের
কি অপরাধে দিলে গো ফাঁকি।

আগে না হতো এ মোবাইল ফোনে কথা
কই টুইটার ফেসবুক;
ছিল তবু অটুট বন্ধন, মধুরতা
হত ভাগ সব দুঃখ সুখ।

আগে হতো ভাইয়ের হাতে এই রাখি
বোনকে দেখেছি তা পড়াতে;
সময় গিয়েছে পাল্টে আজ তবে দেখি
সখা বাঁধে তা বন্ধুর হাতে।

যান্ত্রিকতার এ যুগে বাড়ুক বন্ধুত্ব
বিশ্বের সব নরনারীতে;
হোক বন্ধুত্ব আর বাড়ুক এ মমত্ব
হোক বিশ্বটা এক বাড়িতে।

আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছি

309

চুমুকে তুলে নিয়ে তৃপ্তি, চোখ রাখি বন্ধ
আল্লাহর নিয়ামত নিয়ে ভাবি, আহা জীবনে কী সুখ ছন্দ,
নেই অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের চিন্তা, কত সুখে আছি,
আল্লাহর দয়ায় এই তো অল্প ব্যথা বেশি সুখেই বাঁচি।

তবুও হা হুতাশে রেখে দেই মন
কষ্ট পাই অল্পতেই খুঁজি নির্জন,
তবুও বিতৃষ্ণা পুষে রাখি মনে,
ভাবি এই, চৈত্রের খরা ছুঁয়েছে মন উঠোনে!

চায়ের কাপে তুলে রাখি কত ভাবনার ছবি,
সুখে নেচে ওঠে সহসা দেহ পল্লবি,
দেহে ফিরে আসে কর্মের শক্তি,
আল্লাহর প্রতি শোকরিয়ার বাড়ে অনুরক্তি।

সকাল হলেই নিঃশ্বাস ফেলে বলি এই তো আছি বেঁচে,
হাত পা নেড়ে হাই তুলি, মন সুখে ওঠে নেচে,
ব্যস্ততাদের দূরে ঠেলে আমি অবসর খুঁজি,
এক বেলা অবসরে চায়ের কাপে ঠোঁট গুঁজি।

আমি চায়ের কাছে দুঃখ বিকিয়ে দেই
সুখ কিনি, সময় কেটে যায় আনন্দেই,
ছুটির দিনগুলো যেন ট্রেন, হুইসেল বাজিয়ে যায় দূরে
কিছু সুখ, কিছু অবসর দিয়ে সময় বাজে করুণ সুরে।

সময় চলে যায়, রেখে যায় এক চিলতে সুখ,
হয়তো ব্যস্ততা এসে দাঁড়াবে ফের সম্মুখ,
তবুও সুখে রেখেছেন আমার আল্লাহ্,
ভালো আছি, বেশ আছি আলহামদুলিল্লাহ।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, ঢাকা।

সময়

30

এই জানালা সব সময় দেখি,
বাইরের ঐ সবুজ দিগন্ত তাও।

এই ঘর, এই বারান্দা সব কিছুই,
যখনই সময় পাই, তখনই দেখি।

এখানে একটি আশার আলো আছে,
আছে স্বর্গীয় এক অনুভূতি।

অনেক দিন হলো জানালা দেখি না,
ঐ ঘর, ঐ বারান্দা কিছুই না।

এখন সময় গুলোতে সময় জমেছে,
সেই সময়ে অন্য সময় ভর করেছে।

পেরেকপাত্রে একা

আমাকে যে আপেলবাগানে নিয়ে যেতে চাইছো,
সেখানে অনেকগুলো কালো ভোমর থাকে।
আমাকে নিয়ে যেতে চাইছো যে আখক্ষেতে, সেখানে
এক মধ্যরাতে মুখ থুবড়ে পড়েছিল চন্দ্রের শবদেহ
আর কয়েকটি পিঁঁপড়ে, সেই শবদেহ টেনে নিয়ে
ফেলে দিতে চেয়েছিল নদীতে।

পেরেকপাত্রে এতোদিন একা পড়েছিল আমার যে
মৃত আত্মা, তুমি তাকে দিতে চেয়েছিলে যে প্রেম-
আমি এমন ভালোবাসা কখনও চাই’নি।
অংশীদারিত্বের প্রকরণে যে হিসেব- নিকেশ থাকে,
কবিতা তার পাশে বসতি গাড়ে না,
কবি জীবনেও হতে পারে না শাসনের তাবেদার।

জলুস ভরা মেহফিল

12

… তারপর পল্লবিত পুষ্পের মসৃণ পাপড়ি গুলো হলো রক্তাক্ত !
হেমলকের বিষ মাখা রেণু আর সমস্ত বিদ্বেষ চাপা অনুক্ত স্বপ্ন,
কাজল ডাগর চোখের নিচে জমাট বেধে রইল পৃথিবীর সমগ্র ক্লেদ
না, জল নাই
অশ্রু নাই… কান্নার মাতম হীন নীরবতায় নেমে এলো ঘুট ঘুটে রাত।

বড় আশার ভেলায় ছড়েছিল জীবন
তার চেয়েও বড় আঘাত পেয়ে রুদ্ধ হলো গগন মুখো দ্বার!
এখানে আর কোন দিন জোছনা নামবে না, বৃষ্টির রিনঝিন ছন্দ
অথবা আনন্দে হাসবে না গোধূলির হিজল রাঙ্গা ঠোঁট; কেবলই অন্ধকার
আর নিকোটিন পোড়া উজাড় জীবন।

সত্যি আজব এই পৃথিবী! এই উদ্যান… রঙ্গমঞ্চ
বড্ড আজব এক একটি চরিত্র,
ডায়লগের স্তূপে পড়ে থাকে ভালোবাসা, মানবতার প্রেম
গ্লাস ভর্তি সুরায় ডুবে থাকে সুখের সমস্ত আরাধনা; নিষ্প্রেম আগুনে
একের পর এক সিগারেট পোড়ে, তবু
কি অবলীলায় আওড়ায় প্রতিটি ডায়লগ.. সুর… অন্তরা

এত কিছুর পর চিনতে পারবে কি?
হে সতীর্থ…… শুভানুধ্যায়ী
হে জলুস ভরা মেহফিল
পারফিউমের ভারী আস্তর ভেদ করে তোমাদের নিঃশ্বাসে আমি আছি কি?
খোশ গল্পের রসনায় কিংবা বিষয় বস্তুহীন কোন আলোচনায় পৌঁছবে কি এই কবিতা!

অটোগিয়ার

মাঝেমধ্যে খুউব খুউব ইচ্ছে হয় সুতো ছিঁড়ি…
ছিঁড়তে ছিঁড়তে ওলটপালট করে দিই কালের নদী
বাদ-প্রতিবাদ-বিসংবাদ ওরা ফিরে আসে যদি!

তাহলে আমিও হতে পারি কার-হীন কালো অক্ষর
চোখের কাজলে মেখে নিতে পারি কাবিননামার
কাঁপা কাঁপা স্বাক্ষর! দেখছো না…যুগের পর
যুগ জিয়ে আছে কাবিলের কাব্যিক উত্তরাধিকার;
ছেঁড়াসুতোর গিঁটে গিঁটে কেমন হাসছে অটোগিয়ার!

তবুও কিছু কিছু পাঠক জনান্তিকে হবেই আটক
সুলভে কিনে নেবে দুর্মূল্যের বাজার, আমিও এখন
বোধ ছাঁকতে শিখে গেছি হাজারে হাজার!