সত্য কথা যতই হোক শিকারীর বান।
অকাট্য যুক্তি যতই অপ্রিয় হোক জ্বলবে অনির্বান।
ধুলি ধুসরিত মণি মানিক্য সাগরের নোনা জলে।
অাহরিত হয় যৎকিঞ্চিত সাধনার জালে।
সাধনার ধন কুক্ষিত নয় বিলাবে আজলা ভরি।
হর্ষ ধ্বনি তুলবে সবাই তোমায় স্মরণ করি।
বিভাগের আর্কাইভঃ বিবিধ
কবি কুহক, না ফেরার দেশে! আমাদের ব্লগার স্বজন!
কবি কুহক, সেই সময়ের সাথী, যে সময় ব্লগের শৈশব ছেড়ে যৌবনে পা দিয়েছে, প্রচুর লেখা লেখি প্রচুর গালাগালি, বলা যায় ব্লগ যৌবন, বলে কথা, প্রত্যহ তীর ভাঙা ঢেউয়ে জলের সল্লাৎ সল্লাৎ আমেজ কবি, লেখক, হ্ওযার সে কি শুভ্র বাসনায় ছুটে চলা !
গত প্রত্যকটি বই মেলায় কাঁদে ব্যাগ গোলায় দুই তিনটা ক্যামেরা, ঝুলিয়ে লিটিলম্যাগ চত্বরে ঘুরে বেড়াতেন আর ছবি তুলতেন। দুই বছর আগে এক বই মেলায় লিটিল ম্যাগ চত্বরে কবির সাথে দেখা, বললাম গুরু কেমন আছেন? এই তো যাচ্ছে চারু ভাই! কবি কইল, চারু ভাই এই দিকে আসুন একটা ছুবি নেই, তখন বাংলা একাডিমির চত্তরের দক্ষিনের সিড়িতে বসলাম আর উনি আঁকা বাঁকা হয়ে কয়েক টা ক্লিক মারলেন, আর বললেন চারু ভাই ইন বক্স এ দিয়ে দিমুনি। দেইখেইন কেমন হইছে।
এ ছাড়া অনুপ্রাণন পত্রিকায় কবিতা ছাপলেন,
সে ব্যপারে কয়েক বার কথা বলেছি, বসে আড্ডা হইছে, উনি অফিসে কফি বানিয়ে খেতেন, বললাম না গুরু আমি কফি খাই না, আরে আমি বানামু,
আরেক দিন কবিতা নিয়ে আলাপ, আমি বললাম গুরু ইদানিং আমি তুমি থেকে বেড়িয়ে এসে কবিতা লিখছি, একটু পর বললেন বেশ তো প্রকৃতি ছাড়া কি লেখা যাবে? আমি তুমির ঘ্যানোর আর ভালো লাগে না; বললেন তাই তো, হতে পারে। এই ছিল, যত সামান্য জানা, আমার প্রাণের একজন প্রিয়, গুরু কবি কুহক। না ফেরার দেশে উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ উনার সহায় হউন। আমিন।
ভারতসূর্য ডুবে গেল হায়! তৃতীয় পর্ব
ভারতসূর্য ডুবে গেল হায়!
তৃতীয় পর্ব।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন (১৮৫৭-১৯৪৭): একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ভারতবর্ষে ২০০ বছরের ইংরেজ শোষনের ইতিহাসঃ (প্রথম পর্ব) পূর্বে প্রকাশিত।
১০০ বছর ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক শোষনঃ (দ্বিতীয় পর্ব) পূর্বে প্রকাশিত।
৯০ বছরের ব্রিটিশ ভারত ঔপনিবেশিক শোষনঃ (তৃতীয় পর্ব) বর্তমানে প্রকাশিত।
পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম (চতুর্থ পর্ব) প্রকাশিত হবে।
স্বাধীন ভারত ও ভারতবাসীর স্বপ্ন (পঞ্চম পর্ব) প্রকাশিত হবে।
৯০ বছরের ব্রিটিশ ভারত ঔপনিবেশিক শোষনঃ (তৃতীয় পর্ব)
এরপর ১৮৫৮ সালে ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ব্রিটিশ রাজশক্তির হাতে স্থানান্তরিত হল। রানি ভিক্টোরিয়া নিজ হাতে ভারতের শাসনভার তুলে নেন। এর সঙ্গে সঙ্গে ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ ভারতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
ভারতবর্ষে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধঃ
প্রায় এই ১৯০ বছর এই ভারত ভুখণ্ডের মানুষরা বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ করেছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে। আর তাই ১৮৫৭ সালে ভারতে প্রথম স্বাধীনতার আন্দোলন হয়। কিন্তু বর্বর ইংরেজদের ভাষায় ওটা ছিল “সিপাহী বিদ্রোহ”।
ইংরেজ সেনাবাহিনীর অন্তর্গত ভারতীয় সিপাহীরা ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহে মূল ভূমিকা পালন করে। ইংরেজ সরকার এই বিদ্রোহ কঠোর হস্তে দমন করলেও এর মাধ্যমে ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা হয়।
এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অর্থাত্ ১৯৪৫ সালে ভারতবর্ষ জুড়ে “ইংরেজ ভারত ছাড়” আন্দোলন তীব্রতর হয়। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী সহ সব বড় বড় নেতা তখন সরাসরি ইংরেজদের হটাও আন্দোলনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন
মহাত্মা গান্ধীর দিক থেকে তাঁর “অহিংসা মনোভাব” এর কারণে হয়ত আন্দোলন বেগবান হচ্ছিল না। গান্ধীজীর মতে “যখন আমি হতাশ হই , আমি স্মরণ করি সমগ্র ইতিহাসেই সত্য ও ভালবাসার জয় হয়েছে । দুঃশাসক ও হত্যাকারীদের কখনো অপরাজেয় মনে হলেও শেষ সবসময়ই তাদের পতন ঘটে মনে রাখবেন সর্বদাই।” অপরেকে নেতাজীর বক্তব্য ছিল,”তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু মহাত্বা গান্ধীর এই অহিংসা মনোভাব পছন্দ করতেন না। উনি চাইতেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এবং সেটা হবে সমর যুদ্ধ। তাই তিনি খুঁজছিলেন ঠিক সেই মুহুর্তে ইংরেজদের বিরুদ্ধে কোন পরাশক্তি আছে। সেই হিসেবে সে খুঁজে পায় জামার্নীকে আর ইংল্যান্ড তো তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র বাহিনী। আর তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতবর্ষের অংশগ্রহনটা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ভালো ভাবে নেননি। তিনি হিটলারের কাছে গেলেন। কিন্তু সেই মুহুর্তে হিটলার প্রচন্ড ব্যাস্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে। তাই নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু অক্ষশক্তির আরেক শক্তিশালী রাষ্ট্র জাপানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। এসময় জার্মান তাকে একটি সাবমেরিনে করে জাপানে পৌছে দেয়। জাপান নেতাজীর পরিকল্পনা শুনে, এতে মত দেয়। এবং প্রয়োজনীয় অর্থ ও সমরাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে।
রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব নিয়ে ভারত আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেন। আজাদ হিন্দ ফৌজ মূলতঃ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা গঠিত একটি সশস্ত্র সেনাবাহিনী। ১৯৪২ সালে এই বাহিনী গঠিত হয়। এর বাহিনী ভিতরে ভারতের স্বাধীনতাকামী মানুষ, ইংরেজ নির্যাতিত ভারতীয়, মুটে ও মজুর ছিল। আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অর্থের অভাব থাকলেও নেতাজী সুভাসের অসাধারণ নেতৃত্বের ফলে প্রায় ৬০ হাজার সৈন্যের একটি সুশৃঙ্খল দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে। জাপানী সহায়তায় বলীয়ান হয়ে এই বাহিনী ভারতের উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ভারতকে আক্রমন করে। [এখানে একটা বির্তক আছে যে কেন সে ভারতীয় হয়ে ভারতকে আক্রমন করলো? আসলে তার আক্রমন ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে]
জাপানের সহায়তায় আজাদ হিন্দ ফৌজ অতর্কিত আক্রমনে ভারতে ইংরেজরা কিছুটা হলেও নড়বড়ে হয়ে যায়। এক যুদ্ধের ভিতরে আরেক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ভারতের আরাকান, ইম্ফল, ময়রাং, বিষেণপুর প্রভৃতি স্থান সুভাষ চন্দ্র দখল করে নেন। এসব দখলকৃত জায়গা পুনরুদ্ধারের জন্য ব্রিটেনের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা যুদ্ধবিমান ও কামান নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। ঠিক এই মুহুর্তে নেতাজীর দল একটু পিছপা হয়ে পড়ে। তখন তারা রেঙ্গুনে গিয়ে আবারো পুর্নগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। কয়েক মাস ব্যাপী এ যুদ্ধে মারা যায় উভয় পক্ষের অনেক সৈন্য। কিন্তু ঠিক এই মূহুর্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় পরাজিত হয় অক্ষ বাহিনী। তাই জাপানের আত্মসমাপর্নের ফলে বন্ধ হয়ে যায় আজাদ হিন্দ ফৌজের রসদ সরবরাহ। তারপর থেকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু নিখোঁজ হন। কথিত আছে ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্ট তাইওয়ানে একটি বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। (তবে তাঁর এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে বির্তক আছে)
ভারতসূর্য ডুবে গেল হায়!
ঐতিহাসিক যাত্রাপালা।
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
প্রথম অঙ্ক-তৃতীয় দৃশ্য
সময় : ১৭৫৬ সাল, ১০ই অক্টোবর। স্থান : ঘসেটি বেগমের বাড়ি।
[শিল্পীবৃন্দ : মঞ্চে প্রবেশের পর্যায় অনুসারে- ঘসেটি বেগম, উমিচাঁদ, রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রাইসুল জুহালা, রায়দুর্লভ, প্রহরী, সিরাজ, মোহনলাল, নর্তকী, বাদকগণ।]
(পৌঢ়া বেগম জাঁকজমকপূর্ণ জলসার সাজে সজ্জিতা। আসরে উপস্থিত রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায় দুর্লভ, বাদক এবং নর্তকী। সুসজ্জিত খানসামা তাম্বুল এবং তাম্রকূট পরিবেশন করছে। একজন বিচিত্রবেশী অতিথির সঙ্গে আসরে প্রবেশ করল উমিচাঁদ। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এক পর্যায়ের নাচ শেষ হলো। সকলের হাততালি।)
ঘসেটি : বসুন, উমিচাঁদজি। সঙ্গের মেহমানটি আমাদের অচেনা বলেই মনে হচ্ছে।
উমিচাঁদ : (যথাযোগ্য সম্মান দেখিয়ে) মাফ করবেন বেগম সাহেবা, ইনি একজন জবরদস্ত শিল্পী। আমার সঙ্গে অল্পদিনের পরিচয় কিন্তু তাতেই আমি এঁর কেরামতিতে একেবারে মুগ্ধ। আজকের জলসা সরগরম করে তুলতে পারবেন আশা করে এঁকে আমি সঙ্গে নিয়ে এসেছি।
রাজবল্লভ : তাহলেও এখানে একজন অপরিচিত মেহমান-
উমিচাঁদ : না, না, সে সব কিছু ভাবতে হবে না। দরিদ্র শিল্পী, পেটের ধান্দায় আসরে জলসায় কেরামতি দেখিয়ে বেড়ান।
জগৎশেঠ : তাহলে আরম্ভ করুন ওস্তদজি। দেখি নাচওয়ালিদের ঘুঙুর এবং ঘাগরা বাদ দিয়ে আপনার কাজের তারিফ করা যায় কিনা।
(ঘসেটি রাজবল্লভের দৃষ্টি বিনিময়। আগন্তুক আসরের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়াল)
রাজবল্লভ : ওস্তাদজির নামটা-
আগন্তক : রাইসুল জুহালা।
(সকলের উচ্চহাসি)
রাজদুলর্ভ : জাহেলদের রইস। এই নামের গৌরবেই আপনি উমিচাঁদজিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে এলেন নাকি?
(আবার সকলের হাসি)
উমিচাঁদ : (ইষৎ রুষ্ট) আমি তো বেশক জাহেল। তা না হলে আপনারা সরশুদ্ধ দুধ খেয়েও গোঁফ শুকনো রাখেন, আর আমি দুধের হাড়ির কাছে যেতে না যেতেই হাড়ির কালি মেখে গুলবাঘা বনে যাই।
ঘসেটি : আপনারা বড় বেশি কথা কাটাকাটি করেন। শুরু করুন, ওস্তাদজি।
জুহালা : য্যায়সা হুকুম।আমি নানা রকমের জন্তু জানোয়ারের আদবকায়দা সম্বন্ধে ওয়াকিফহাল। আপাতত আমি আপনাদের একটা নাচ দেখব। পক্ষীকুলের একটি বিশেষ শ্রেণি, ধার্মিক হিসেবে যার জবরদস্ত নাম, সেই পাখির নৃত্যকলা আপনারা দেখবেন। দেশের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে এই বিশেষ নৃত্যটি আমি জনপ্রিয় করতে চাই। (তবলচিকে) একটু ঠেকা দিয়ে দিন। (তাল বলে দিল। নৃত্য চলাকালে ঘসেটি এবং রাজবল্লভ নিচুস্বরে পরামর্শ করলেন। পরে উমিচাঁদ এবং রাজবল্লভও কিছু আলোচনা করলেন। নাচ শেষ হলে সকলে হর্ষ প্রকাশ।)
রাজবল্লভ : ওস্তাদজি জবরদস্ত লোক মনে হচ্ছে। ওঁকে আরও কিছু কেরামতি দেখাবার দায়িত্ব দিলে কেমন হয়?
(উমিচাঁদ রাইসুল জুহালাকে একপাশে ডেকে নিয়ে কিছু বলল। তারপর নিজের আসনে ফিরে এল)
উমিচাঁদ : উনি রাজি আছেন। উপযুক্ত পারিশ্রমিক পেলে কলাকৌশল দেখাবার ফাঁকে ফাঁকে দু-চারখানা চিঠিপত্রের আদান-প্রদান করতে ওঁর আপত্তি নেই।
রাজবল্লভ : তাহলে এখন ওঁকে বিদায় দিন। পরে দরকার মতো কাজে লাগানো হবে।
রাইসুল জুহালা : বহোত আচ্ছা, হুজুর।
(সবাইকে সালাম করে কালোয়াতি করতে করতে বেরিয়ে গেল)
ঘসেটি : তাহলে আবার নাচ শুরু হোক?
রাজবল্লভ : আমার মনে হয় নাচওয়ালিদের কিছুক্ষণ বিশ্রাম দিয়ে কাজের কথা সেরে নেওয়াই ভালো।
ঘসেটি : তাই হোক।
(ইঙ্গিত করতেই দলবলসহ নাচওয়ালিদের প্রস্থান)
রাজদুর্লভ : বেগম সাহেবাই আরম্ভ করুন।
ঘসেটি : আপনারা তো সব জানেন। এখন খোলাখুলিভাবে যার যা বলার আছে বলুন।
জগৎশেঠ : সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শওকতজঙ্গকে আমরা পরোক্ষ সমর্থন দিয়েই দিয়েছি। কিন্তু শওকতজঙ্গ নবাব হলে আমি কি পাব তা আমাকে পরিষ্কার করে বলুন।
ঘসেটি : শওকতজঙ্গ আপনাদেরই ছেলে। সে নবাবি পেলে প্রকারান্তরে আপনারাই তো দেশের মালিক হয়ে বসবেন।
রাজদুর্লভ : এটা কোনো কথা হলো না। যিনি নবাব হবেন-
জগৎশেঠ : আমার কথা আগে শেষ হোক দুর্লভরাম।
রাজদুর্লভ : বেশ, আপনার কথাই শেষ করুন। কিন্তু মনে রাখবেন কথা শেষ হবার পর আর কোনো কথা উঠবে না।
জগৎশেঠ : সে আবার কী কথা?
রাজবল্লভ : আপনারা তর্কের ভেতর যাচ্ছেন আলোচনা শুরু করার আগেই। খুব সংক্ষেপে কথা শেষ করা দরকার। বর্তমান অবস্থায় এই ধরনের আলোচনা দীর্ঘ করা বিপজ্জনক।
জগৎশেঠ : কথা ঠিক। কিন্তু নিজের স্বার্থ সম্বন্ধে নিশ্চিত না হয়ে একটা বিপদের ঝুঁকি নিতে যাওয়াটাও তো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মাফ করবেন বেগম সাহেবা, আমি খোলাখুলি বলছি। অঙ্গীকার করে লাভ নেই যে, শওকতজঙ্গ নিতান্তই অকর্মণ্য। ভাংয়ের গেলাস এবং নাচওয়ালি ছাড়া আর কিছুই জানে না। কাজেই শওকতজঙ্গ নবাব হবে নামমাত্র। আসল কর্তৃত্ব থাকবে বেগম সাহেবার এবং পরোক্ষে তাঁর নামে দেশ শাসন করবেন রাজবল্লভ।
রায়দুর্লভ : ঠিক এই ধরনের একটা সম্ভাবনার উল্লেখ করার ফলেই হোসেন কুলি খাঁকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
জগৎশেঠ : আমি তা বলছিনে। তা ছাড়া এখানে সে কথা অবান্তর। আমি বলতে চাইছি যে, শওকতজঙ্গ নবাবি পেলে বেগম সাহেবা এবং রাজা রাজবল্লভের স্বার্থ যেমন নির্বিঘ্ন হবে আমাদের তেমন আশা নেই। কাজেই আমাদের পক্ষে নগদ কারবারই ভালো।
ঘসেটি : ধনকুবের গজৎশেঠকে নগদ অর্থ দিতে হলে শওকতজঙ্গের যুদ্ধের খচর চলবে কী করে?
জগৎশেঠ : না, না, আমি নগদ টাকা চাইছিনে। যুদ্ধের খরচ বাবদ টাকা আমি দেব, অবশ্য আমার সাধ্য। কিন্তু আসল এবং লাভ মিলিয়ে আমাকে একটা কর্জনামা সই করে দিলেই আমি নিশ্চিত হতে পারি।
রাংদুর্লভ : আমাকেও পদাধিকারের একটা একবারনামা সই করে দিতে হবে। (প্রহরীর প্রবেশ। ঘসেটি বেগমের হাতে পত্র দান)
ঘসেটি : (চিঠি খুলতে খুলতে) সিপাহসালার মিরজাফরের পত্র। (পড়তে পড়তে) তিনি শওকতজঙ্গকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার পরামর্শ দিয়েছেন।
রাজবল্লভ : বহোত খুব।
উমিচাঁদ : আমার তো কোনো বিষয়ে কোনো দাবিদাওয়া নেই, আমি সকলের খাদেম। খুশি হয়ে যে যা দেয় তাই নিই। কাজেই এতক্ষণ আমি চুপ করেই আছি।
ঘসেটি : আপনারও যদি কিছু বলার থাকে এখুনি বলে ফেলুন।
উমিচাঁদ : নিজের সম্বন্ধে কিছু নয়। তবে সিপাহসালারের প্রস্তুতি আমার পছন্দ হয়েছে তাই বলছি। ইংরেজ আবার সংঘবদ্ধ হয়ে উঠেছে। সিরাজউদ্দৌলার পতনই তাদের কাম্য। শওকতজঙ্গ এখুনি যদি আঘাত হানতে পারেন, তিনি ইংরেজদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা পাবেন। ফলে জয় তাঁর অবধারিত।
ঘসেটি : সিরাজের পতন কে না চায়?
উমিচাঁদ : অন্তত আমরা চাই। কারণ সিরাজউদ্দৌলার নবাবিতে নির্বিঘ্ন হতে পারলে আমাদের সকলের স্বার্থই রাহুগ্রস্ত হবে।
ঘসেটি : সিরাজ সম্বন্ধে উমিচাঁদের বড় বেশি আশঙ্কা।
উমিচাঁদ : কিছুমাত্র নয় বেগম সাহেবা। দওলত আমার কাছে ভগবানের দাদামশায়ের চেয়েও বড়। আমি দওলতের পূজারী। তা না হলে সিরাজউদ্দৌলাকে বাতিল করে শওকতজঙ্গকে চাইব কেন? আমি কাজ কতদূর এগিয়ে এসেছি এই দেখুন তার প্রামণ।
(পকেট থেকে চিঠি বার করে ঘসেটি বেগমের হাতে দিল)
ঘসেটি : (চিঠির নিচে স্বাক্ষর দেখে উল্লসিত হয়ে) এ যে ড্রেক সাহেবের চিঠি!
উমিচাঁদ : আমার প্রস্তাব অনুমোদন করে তিনি জবাব দিয়েছেন।
ঘসেটি : (পত্র পড়তে পড়তে) লিখেছেন শওকতজঙ্গ যুদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সিরাজের সেনাপতিদের অধীনস্থ ফৌজ যেন রাজধানী আক্রমণ করে। তাহলে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় অভশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।
রাজবল্লভ : আমাদের বন্ধু সিপাহসালার মিরজাফর, রায়দুর্লভ, ইয়ার লুৎফ খান ইচ্ছে করলেই এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেন।
(হঠাৎ বাইরে তুমুল কোলাহল। সকলেই সচকিত। ঘসেটি বেগম কোলাহলের কারণ জানবার জন্যে যেতেই রাজবল্লভ তাঁকে থামিয়ে দিয়ে নাচওয়ালিদের ডেকে পাঠালেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তারা সদলবলে কামরায় এল।)
রাজবল্লভ : আরম্ভ কর জলদি। (ঘুঙুরের আওয়াজ উঠবার পর পরই সবেগে কামরায় ঢুকলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। পেছনে মোহনলাল। সবাই তড়িৎ-বেগে দাঁড়ালো। নাচওয়ালিদের নাচ থেমে গেল।)
ঘসেটি : (ভীতিরুদ্ধ কণ্ঠে) নবাব!
সিরাজ : কি ব্যাপার খালাআম্মা, বড়ো ভারী জলসা বসিয়েছেন?
ঘসেটি : (আত্মস্থ হয়ে) এ রকম জলসা এই নতুন নয়।
সিরাজ : তা নয়, তবে বাংলাদেশের সেরা লোকেরাই শুধু শামিল হয়েছেন বলে জলসার রোশনাই আমার চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে।
ঘসেটি : নবাব কি নাচগানের মজলিস মানা করে দিয়েছেন?
সিরাজ : নাচগানের মহফিলের জন্যে দেউড়িতে কড়া পাহারা বসিয়ে রেখেছেন খালাআম্মা। তারা তো আমার ওপরে গুলিই চালিয়ে দিয়েছিল প্রায়। দেহরক্ষী ফৌজ সঙ্গে না থাকলে এই জলসায় এতক্ষণে মর্সিয়া শুরু করতে হতো। (হঠাৎ কণ্ঠস্বরে অবিচল তীব্রতা ঢেলে)
রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায় দুর্লভ, আপনারা এখন যেতে পারেন। মতিঝিলের জলসা আমি চিরকালের মতো ভেঙে দিলাম। (ঘসেটি বেগমকে) তৈরি হয়ে নিন, খালাআম্মার পক্ষে প্রাসাদের বাইরে থাকা নিরাপদ নয়।
ঘসেটি : (রোষে চিৎকার করে) তুমি আমাকে বন্দি করে নিয়ে যেতে এসেছ? তোমার এতখানি স্পর্ধা?
সিরাজ : এতে ক্রুদ্ধ হবার কি আছে? আম্মা আছেন, আপনিও তাঁর সঙ্গেই প্রাসাদে থাকবেন।
ঘসেটি : মতিঝিল ছেড়ে আমি এক পা নড়ব না। তোমার প্রাসাদে যাব? তোমার প্রাসাদ বাজ পড়ে খান খান হয়ে যাবে। (সহসা কাঁদতে আরম্ভ করলেন)
সিরাজ : (অবিচলিত) তৈরি হয়ে নিন, খালাআম্মা। আপনাকে আমি নিয়ে যাব।
ঘসেটি : (মাতম করতে করতে) রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ বিধবার ওপরে এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপনারা কিছুই করতে পারছেন না?
রাজবল্লভ : (একটু ইতস্তত করে) জাঁহাপনা কি সত্যিই-
সিরাজ : (উত্তপ্ত) আপনাদের চলে যেতে বলেছি রাজা রাজবল্লভ। নবাবের হুকুম অমান্য করা রাজদ্রোহিতার শামিল। আশা করি অপ্রিয় ঘটনার ভেতর দিয়ে তা আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে হবে না।
(রাজবল্লভ প্রভৃতি প্রস্থানোদ্যত) হ্যাঁ, শুনুন রায়দুর্লভ, শওকতজঙ্গকে আমি বিদ্রোহী ঘোষণা করেছি। তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেবার জন্যে মোহনলালের অধীনে সেনাবাহিনী পাঠাবার ব্যবস্থা করেছি। আপনি তৈরি থাকবেন। প্রয়োজন হলে আপনাকেও মোহনলালের অনুগামী হতে হবে।
রায়দুর্লভ : হুকুম, জাঁহাপনা। (তারা নিষ্ক্রান্ত হলো। ঘসেটি বেগম হাহাকার করে কেঁদে উঠলেন।)
সিরাজ : মোহনলাল আপনাকে নিয়ে আসবে, খালাআম্মা। আপনার কোনো রকম অমর্যাদা হবে না। (বেরিয়ে যাবার জন্যে পা বাড়ালেন)
ঘসেটি : তোমার ক্ষমতা ধবংস হবে, সিরাজ। নবাবি? নবাবি করতে হবে না বেশিদিন। কেয়ামত নাজেল হবে। আমি তা দেখব-দেখব।
[দৃশ্যান্তর]
ভারতসূর্য ডুবে গেল হায়! দ্বিতীয় পর্ব
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন (১৮৫৭-১৯৪৭): একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। ভারতবর্ষে ২০০ বছরের ইংরেজ শোষনের ইতিহাসঃ (প্রথম পর্ব) পূর্বে প্রকাশিত।
১০০ বছর ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক শোষনঃ (দ্বিতীয় পর্ব) বর্তমানে প্রকাশিত।
৯০ বছরের ব্রিটিশ ভারত ঔপনিবেশিক শোষনঃ (তৃতীয় পর্ব) প্রকাশিত হবে।
পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম (চতুর্থ পর্ব) প্রকাশিত হবে।
স্বাধীন ভারত ও ভারতবাসীর স্বপ্ন (পঞ্চম পর্ব) প্রকাশিত হবে।
১০০ বছর ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক শোষনঃ (দ্বিতীয় পর্ব)
১৭৬৫ সালের ১লা অগাষ্ট লর্ড ক্লাইভ দিল্লির বাদশাহ শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-ওড়িশার দেওয়ানি লাভ করেন। বিহার-ওড়িশার প্রকৃত শাসন ক্ষমতা লাভ করে, নবাবের নামে মাত্র অস্তিত্ব থাকে। ফলে পূর্ব ভারতের এই অঞ্চলে যে শাসন-ব্যবস্থা চালু হয় তা দ্বৈত শাসন নামে পরিচিত। নবাবের হাতে থাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব, আর রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের পূর্ণ কর্তৃত্ব পায় কোম্পানি। এতে বাংলার নবাব আসলে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে আর এই সুযোগে কোম্পানির লোকেরা খাজনা আদায়ের নামে অবাধ লুণ্ঠন ও অত্যাচার শুরু করে দেয়। মূলতঃ ১৭৫৭ সাল থেকে ১৮৫৭ সাল এই প্রায় ১০০ বছর ইষ্টইন্ডিয়া কোম্পানীর হাতে ভারতবর্ষের শাসনভার থাকে।
ভারতসূর্য ডুবে গেল হায়!
ঐতিহাসিক যাত্রাপালা।
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
প্রথম অঙ্ক-দ্বিতীয় দৃশ্য
সময় : ১৭৫৬ সাল, ৩রা জুলাই। স্থান : কলকাতার ভাগীরথী নদীতে
ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজ।
[শিল্পীবৃন্দ : মঞ্চে প্রবেশের পর্যায় অনুসারে-ড্রেক, হ্যারি, মার্টিন, কিলপ্যাট্রিক, ইংরেজ মহিলা, সৈনিক, হলওয়েল, ওয়াটস, আর্দালি।]
(কলকাতা থেকে তাড়া খেয়ে ড্রেক, কিলপ্যাট্রিক এবং তাদের দলবল এই জাহাজে আশ্রয় নিয়েছে। সকলের চরম দুরাবস্থা। আহার্য দ্রব্য প্রায়ই পাওয়া যায় না। অত্যন্ত গোপনে যৎ-সামান্য চোরাচালান আসে। পরিধেয় বস্ত্র প্রায় নেই বললেই চলে। সকলেরই এক কাপড় সম্বল। এর ভেতরেও নিয়মিত পরামর্শ চলছে কী করে উদ্ধার পাওয়া যায়। জাহাজ থেকে নদীর একদিক দেখা যাবে ঘন জঙ্গলে আকীর্ণ। জাহাজের ডেকে পরামর্শরত ড্রেক, কিলপ্যাট্রিক এবং আরও দুজন তরুণ ইংরেজ।)
ড্রেক : এই তো কিলপ্যাট্রিক ফিরে এসছেন মাদ্রাজ থেকে। ওঁর কাছেই শোন, প্রয়োজনীয় সাহায্য-
হ্যারি : এসে পড়ল বলে, এই তো বলতে চাইছেন? কিন্তু সে সাহায্য এসে পৌঁছোবার আগেই আমাদের দফা শেষ হবে মি. ড্রেক।
মার্টিন : কিলপ্যাট্রিক সাহেবের সুখবর নিয়ে আসাটা আপাতত আমাদের কাছে মোটেই সুখবর নয় তিনি মাত্র শ-আড়াই সৈন্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। এই ভরসায় একটা দাঙ্গাও করা যাবে না যুদ্ধ করে কলকাতা জয় তো দূরের কথা।
ড্রেক : তবুও তো লোকবল কিছুটা বাড়ল।
হ্যারি : লোকবল বাড়ুক আর না বাড়ুক আমাদের অংশীদার বাড়ল তা অবশ্য ঠিক।
ড্রেক : আহার্য কোনো রকমে জোগাড় হবেই।
মার্টিন : কী করে হবে তাই বলুন না মি. ড্রেক। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎটাই তো জানতে চাইছি। এ পর্যন্ত দুবেলা আহার্যের বন্দোবস্ত হয়েছে? ধারেকাছে হাটবাজার নেই্ নবাবের হুকুম প্রকাশ্যে কেউ কোনো জিনিস আমাদের কাছে বেচেও না। চারগুন দাম দিয়ে কতদিন গোপনে সওদাপাতি কিনতে হয়। এই অবস্থা কতদিন চলবে সেটা আমাদের জানা দরকার।
কিলপ্যাট্রিক : এত অল্পে অধৈর্য হলে চলবে কেন?
হ্যারি : ধৈর্য ধরব আমরা কীসের আশায় সেটাও তো জানতে হবে।
ড্রেক : যা হয়েছে তা নিয়ে বিবাদ করে কোনো লাভ নেই। দোষ কারো একার নয়।
মার্টিন : যাঁরা এ পর্যন্ত হুকুম দেবার মালিক তাঁদের দোষেই আজ আমরা কলকাতা থেকে বিতাড়িত বিশেষ করে আপনার হঠকারিতার জন্যেই আজ আমাদের এই দুর্ভোগ।
ড্রেক : আমার হঠকারিতা?
মার্টিন : তা নয়ত কি? অমন উদ্ধত ভাষায় নবাবকে চিঠি দেবার কী প্রয়োজন ছিল? তা ছাড়া নবাবের আদেশ অমান্য করে কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দেবারই বা কী কারণ?
ড্রেক : সব ব্যাপারে সকলের মাথা গলানো সাজে না।
হ্যারি : তা তো বটেই। কৃষ্ণবল্লভের কাছ থেকে কী পরিমাণ টাকা উৎকোচ নেবেন মি. ড্রেক, তা, নিয়ে আমরা মাথা ঘামাবো কেন? কিন্তু এটা বলতে আমাদের কোনো বাধা নেই যে, ঘুষের অঙ্ক বড় বেশি মোটা হবার ফলেই নবাবের ধমকানি সত্ত্বেও কৃষ্ণবল্লভকে ত্যাগ করতে পারেননি মি. ড্রেক।
ড্রেক : আমার রিপোর্ট আমি কাউন্সিলের কাছে দাখিল করেছি।
মার্টিন : রিপোর্টের কথা রেখে দিন। তাতে আর যাই থাক সত্যি কথা বলা হয়নি। (টেবিলের ওপর এক বান্ডিল কাগজ দেখিয়ে) ওইতো রিপোর্ট তৈরি করেছেন কলকাতা যে ডুবিয়ে দিয়ে এসেছেন তার। ওর ভেতরে একটি বর্ণ সত্যি কথা খুঁজে পাওয়া যাবে?
ড্রেক : (টেবিলে ঘুষি মেরে) দ্যাটস নান অব ইওর বিজনেস।
মার্টিন : অব কোর্স ইট ইজ।
কিলপ্যাট্রিক : তোমরাই বা হঠাৎ এমন সাধুত্বের দাবিদার হলে কীসে?
ড্রেক : তোমাদের দুজনের ব্যাংক ব্যালানস বিশ হাজারের কম নয় কারোরই। অথচ তোমরা কোম্পানির সত্তর টাকা বেতনের কর্মচারী।
হ্যারি : ব্যক্তিগত উপার্জনের ছাড়পত্র কোম্পানি সকলকেই দিয়েছে। সবাই উপার্জন করছে, আমরাও করছি। কিন্তু আমরা ঘুষ খাইনি।
ড্রেক : আমিও ঘুষ খাইনে।
মার্টিন : অর্থাৎ ঘুষ খেয়ে খেয়ে ঘুষ কথাটার অর্থই বদলে গেছে আপনার কাছে।
ড্রেক : তোমরা বেশি বাড়াবাড়ি করছ। ভুলে যেও না এখনো ফোর্ট উইলিয়ামের কর্তৃত্ব আমার হাতে।
হ্যারি : ফোর্ট উইলিয়াম?
ড্রেক : ইংরেজের আধিপত্য অত সহজেই মুছে যাবে নাকি? এই জাহাজটাই এখন আমাদের কলকাতার দুর্গ। আর দুর্গ শাসনের ক্ষমতা এখনো আমার অধিকারে। বিপদের সময়ে সকলে একযোগে কাজ করার জন্যেই মন্ত্রণা সভায় তোমাদের ডেকেছিলাম। কিন্তু দেখছি তোমরা এই মর্যাদার উপযুক্ত নও।
মার্টিন : বড়াই করে কোনো লাভ হবে না, মি. ড্রেক। আমরা আপনার কর্তৃত্ব মানব না।
ড্রেক : এত বড় স্পর্ধা? উইথড্র। হোয়াট ইউ হ্যাভ সেইড, মাফ চাও দ্বিতীয় কথা না বলে। নাথিং শর্ট অফ অ্যান আনকন্ডিশনাল অ্যাপোলজি উইল সেইভ ইউ। মাফ চাও তা না হলে এই মুহূর্তে তোমাদের কয়েদ করবার হুকুম দিয়ে দেব।
(জনৈক ইংরেজ মহিলা দড়ির ওপর একটা ছেঁড়া গাউন মেলতে আসছিলেন। তিনি হঠাৎ ড্রেকের কথায় রুখে উঠলেন। ছুটে গেলেন বচসারত পুরুষদের কাছে।)
ইংরেজ মহিলা : তবু যদি মেয়েদের নৌকোয় করে কলকাতা থেকে না পালাতেন তা হলেও না হয় এই দম্ভ সহ্য করা যেত।
ড্রেক : উই আর ইন দ্যা কাউন্সিল সেশন, ম্যাডাম, এখানে মহিলাদের কোনো কাজ নেই।
ইংরেজ মহিলা : ড্যাম ইওর কাউন্সিল, প্রাণ বাঁচাবে কী করে তার ব্যবস্থা নেই, কর্তৃত্ব ফলাচ্ছেন সব।
ড্রেক : সেই ব্যবস্থাই তো হচ্ছে।
ইংরেজ মহিলা : ছাই হচ্ছে। রোজই শুনছি কিছু একটা হচ্ছে। যা হচ্ছে সে তো নিজেদের ভেতরে ঝগড়া। এদিকে দিনের পর দিন এক বেলা খেয়ে, প্রায়ই না খেয়ে, অহোরাত্র এক কাপড় পড়ে মানুষের মনুষ্যত্ব ঘুচে যাবার জোগাড়।
ড্রেক : বাট ইউ সি-
ইংরেজ মহিলা : আই ডু নট সি অ্যালোন, ইউ ক্যান অলসো সি এভরি নাইট। এক প্রস্থ জামা-কাপড় সম্বল। ছেলে-বুড়ো সকলকেই তা খুলে রেখে রাত্রে ঘুমুতে হয়। কোনো আড়াল নেই আব্রু নেই। এনিবডি ক্যান সি দ্যাট পিটিএবল অ্যানাটমিক এক্সিবিশন। এর চেয়ে বেশি আর কী দেখতে চান?
(হাতের ভিজে গাউনটা ড্রেকের মুখে ছুড়ে দিতে যাচ্ছেলেন মহিলাটি, এমন সময় জনৈক গোরা সৈনিকের দ্রুত প্রবেশ।)
সৈনিক : মি. হলওয়েল আর মি. ওয়াটস।
(প্রায়ই সঙ্গে সঙ্গে হলওয়েল আর ওয়াটস ঢুকল)
কিলপ্যাট্রিক : গড গ্র্যাসিয়োস
হলওয়েল : (সকলের উদ্দেশে) গুড মনিং টু ইউ।
(সকলের সঙ্গে করমর্দন। ওয়াট্স কোনো কথা না বলে সকলের সঙ্গে করমর্দন করল। মহিলাটি একটু ইতস্তত করে অন্য দিকে চলে গেলেন।)
ড্রেক : বল, খবর বল হলওয়েল। উৎকণ্ঠায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে এল যে।
হলওয়েল : মুর্শিদাবাদে ফিরেই নবাব আমাদের মুক্তি দিয়েছেন। অবশ্য নানা রকম ওয়াদা করতে হয়েছে, নাকে-কানে খৎ দিতে হয়েছে এই যা।
ড্রেক : কলকাতায় ফেরা যাবে?
হলওয়েল : না।
ওয়াটস : আপাতত নয়, কিন্তু ধীরে ধীর হয়ত একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
কিলপ্যাট্রিক : কী রকম ব্যবস্থা?
ওয়াটস : অর্থাৎ মেজাজ বুঝে যথাসময়ে কিছু উপঢৌকনসহ হাজির হয়ে আবার একটা সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
ড্রেক : তার জন্যে কতকাল অপেক্ষা করতে হবে কে জানে?
হলওয়েল : একটা ব্যাপার স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, নবাব ইংরেজের ব্যবসা সমূলে উচ্ছেদ করতে চান না। তা চাইলে এভাবে আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারতেন না।
ড্রেক : তাহলে নবাবের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থাটা করে ফেলতে হয়।
হলওয়েল : কিছুটা করেই এসেছি। তা ছাড়া উমিচাঁদ নিজের থেকেই আমাদের সাহায্য করার প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
ড্রেক : হুররে।
ওয়াটস : মিরজাফর, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ এঁরাও আস্তে আস্তে নবাবের কানে কথাটা তুলবেন।
ড্রেক : (হ্যারি ও মার্টিনকে) আশা করি তোমাদের মেজাজ এখন কিছুটা ঠান্ডা হয়েছে। আমাদের মিলেমিশে থাকতে হবে, একযোগে কাজ করতে হবে।
হ্যারি : আমরা তো ঝগড়া করতে চাইনে। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ জানতে চাই।
মার্টিন : যেমন হোক একটা নিশ্চিত ফল দেখতে চাই।
(উভয়ের প্রস্থান)
ড্রেক : (উচ্চকণ্ঠে) পেশেন্স ইজ দ্যা কি ওয়ার্ল্ড, ইয়াংম্যান।
হলওয়েল : (পায়ে চাপড় মেরে) উঃ, কী মশা। সিরাজউদ্দৌলা মসকিউটো ব্রিগেড মবিলাইজ করে দিয়েছে নাকি?
ড্রেক : যা বলছ ম্যালেরিয়া আর ডিসেন্ট্রিতে ভুগে কয়েকজন এর ভেতরে মারাও গেছে।
ওয়াটস : বড় ভয়ানক জায়গায় আস্তানা গেড়েছেন আপনারা।
ড্রেক : বাট ইট ইজ ইমপরট্যান্ট ফ্রম মিলিটারি পয়েন্ট অব ভিউ। সমুদ্র কাছেই। কলকাতাও চল্লিশ মাইলের ভেতরে। প্রয়োজন হলে যে কোনো দিকে ধাওয়া করা যাবে।
কিলপ্যাট্রিক : দ্যাটস ট্রু। কলকাতায় ফেরার আশায় বসে থাকতে হলে এই জায়গাটাই সবচেয়ে নিরাপদ। নদীর দুপাশে ঘন জঙ্গল। সেদিক দিয়ে বিপদের কোনো আশঙ্কা নেই। বিপদ যদি আসেই তাহলে তা আসবে কলকাতার দিক দিয়ে গঙ্গার স্রোতে ভেসে। কাজেই সতর্ক হবার যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে।
হলওয়েল : কলকাতার দিক থেকে আপাতত কোনো বিপদের সম্ভাবনা নেই। উমিচাঁদ কলকাতার দেওয়ান মানিকচাঁদকে হাত করেছে। তার অনুমতি পেলেই জঙ্গল কেটে আমরা এখানে হাট-বাজার বসিয়ে দেব।
ড্রেক : অফকোর্স নেটিভরা আমাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু ফৌজদারের ভয়েই তা পারছে না।
(প্রহরী সৈনিকের প্রবেশ। সে ড্রেকের হাতে এক টুকরো কাগজ দিল। ড্রেক কাগজ পড়ে চেঁচিয়ে উঠল)
উমিচাঁদের লোক এই চিঠি এনেছে।
সকলে : হোয়াট? এত তাড়াতাড়ি। (চা-সহ প্রহরীর প্রবেশ। অভিবাদনান্তে ড্রেকের হাতে পত্র দিল আগন্তুক। ড্রেক ইঙ্গিত করতেই তারা আবার বেরিয়ে গেল)
ড্রেক : (মাঝে মাঝে উচ্চৈ:স্বরে পত্র পড়তে লাগল)’- আমি চিরকালই ইংরেজের বন্ধু। মৃত্যু পর্যন্ত এই বন্ধুত্ব আমি বজায় রাখিব। – মানিকচাঁদকে অনেক কষ্টে রাজি করানো হইয়াছে, সে কলকাতায় ইংরেজদের ব্যবসা করিবার অনুমতি দিয়াছে। এর জন্যে তাহাকে বারো হাজার টাকা নজরানা দিতে হইয়াছে। টাকাটা নিজের তহবিল হইতে দিয়া দেওয়ানের স্বাক্ষরিত হুকুমনামা হাতে হাতে সংগ্রহ করিয়া পত্রবাহক মারফত পাঠাইলাম। এই টাকা এবং আমার পারিশ্রমিক ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ যাহা ন্যায্য বিবেচিত হয় তাহা পত্রবাহকের হাতে পাঠাইলেই আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকিব। বলা বাহুল্য, পারিশ্রমিক বাবদ আমি পাঁচ হাজার টাকা পাইবার আশা করি। অবশ্য ড্রেক সাহেবের বিবেচনায় তাহা গ্রাহ্য না হইলে দুই চারি শত টাকা কম লইতেও আমার আপত্তি নাই কোম্পানি আমার উপর ষোলো আনা বিশ্বাস রাখিতে পারেন। সুদূর লাহোর হইতে আমি বাংলাদেশে আসিয়াছি অর্থ উপার্জনের জন্য, যেমন আসিয়াছেন কোম্পানির লোকেরা। কাজেই উদ্দেশ্যের দিক দিয়া বিচার করিলে আমি আপনাদেরই সমগোত্রীয়।’ (চিঠি ভাঁজ করতে করতে)
এ পারফেক্ট স্কাউন্ড্রেল ইজ দিস ওঁমিচাঁদ।
হলওয়েল : কিন্তু উমিচাঁদের সাহায্য তো হাতছাড়া করা যাচ্ছে না।
ওয়াটস : ইভেন হোয়েন ইট ইজ টু কস্টলি।
ড্রেক : সেই তো মুস্কিল। ওর লোভের অন্ত নেই। মানিকচাঁদের হুকুমনামার জন্যে সতেরো হাজার টাকা দাবি করেছে। আমি হলপ করে বলতে পারি দুহাজারের বেশি মানিকচাঁদের পকেটে যাবে না। বাকিটা যাবে উমিচাঁদের তহবিলে।
হলওয়েল : কিন্তু কিছুই করবার নেই। উপযুক্ত অবস্থার সুযোগ পেয়ে সে ছাড়বে কেন?
ড্রেক : দেখি, টাকাটা দিয়ে ওর লোকটাকে বিদায় করি। (বেরিয়ে গেল)
ওয়াটস : শুধু উমিচাঁদের দোষ দিয়ে কী লাভ? মিরজাফর, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ, মানিকচাঁদ কে হাত পেতে নেই?
কিলপ্যাট্রিক : দশদিকের দশটি খালি হাত ভর্তি করলে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে ইংরেজ, ডাচ আর ফরাসিরা।
হলওয়েল : কিছু না, কিছু না। হাজার হাতে হাজার হাজার হাত থেকে নিয়ে দশ হাত বোঝাই করতে আর কতটুকু সময় লাগে? বিপদ সেখানে নয়। বিপদ হলো বখরা নিয়ে মতান্তর ঘটলে।
(ড্রেকের প্রবেশ)
ড্রেক : (উমিচাঁদের চিঠি বার করে) আর একটা জরুরি খবর আছে উমিচাঁদের চিঠিতে। শওকতজঙ্গের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলার লেগে গেল বলে। এই সুযোগ নেবে মিরজাফর, রাজবল্লভ, জগৎশেঠের দল। তারা শওকত জঙ্গকে সমর্থন করবে।
ওয়াটস : খুব স্বাভাবিক। শওকতজঙ্গ নবাব হলে সকলের উদ্দেশ্যেই হাসিল হবে। ভাং খেয়ে নাচওয়ালিদের নিয়ে সারাক্ষণ সে পড়ে থাকবে আর উজির ফৌজদাররা যার যা খুশি তাই করতে পারবে।
ড্রেক : আগেভাগেই তার কাছে আমাদের ভেট পাঠানো উচিত বলে আমার মনে হয়।
কিলপ্যাট্রিক : আই সেন্ড ইউ।
ওয়াটস : তা পাঠান। কিন্তু সন্ধে হয়ে গেল যে! এখানে একটা বাতি দেবে না?
ড্রেক : অর্ডারলি, বাত্তি লে আও।
হলওয়েল : নবাবের কয়েদখানায় থেকে এ দুদিনে শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছি। আপনাদের অবস্থা কি ততটাই খারাপ?
ড্রেক : নট সো ব্যাড, আই হোপ।
(আর্দালি একটা বাতি রাখল)
ড্রেক : পেগ লাগাও।
(দূরে থেকে কণ্ঠস্বর)
নেপথ্যে : জাহাজ-জাহাজ আসছে।
চারজনে
সমস্বরে : কোথায়? ফ্রম হুইচ সাইড?
নেপথ্যে : সমুদ্রের দিক থেকে জাহাজ আসছে। দুখানা, তিনখানা, চারখানা, পাঁচখানা। পাঁচখানা জাহাজ। কোম্পানির জাহাজ! (আর্দালি বোতল আর গ্লাস রাখল টেবিলে)
ড্রেক : কোম্পানির জাহাজ? মাস্ট বি ফ্রম ম্যাড্রাস। লেট আস সেলিব্রেট। হিপ হিপ হুররে।
সমস্বরে : হুররে।
(সবাই গ্লাসে মদ ঢেলে নিল)
[দৃশ্যান্তর]
(চলবে)
ভারতসূর্য ডুবে গেল হায় প্রথম পর্ব
আমার পরবর্তী নতুন বিভাগ “ভারত সূর্য ডুবে গেল হায়!” পর্বে পর্বে প্রকাশ দেওয়ার আশা রাখি। সকলের সহযোগিতা ও আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে নতুন বিভাগটি আজ থেকে নিয়মিত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত করা হলো। শেষাংশে সংযোজিত করা হয়েছে ভারতের শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার জীবন আলেখ্য গীতি নাটকের দৃশ্যায়ন।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু!
ভারতসূর্য ডুবে গেল হায়!
প্রথম পর্ব।
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন (১৮৫৭-১৯৪৭): একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ভারতবর্ষে ২০০ বছরের ইংরেজ শোষনের ইতিহাসঃ (প্রথম পর্ব)
১০০ বছর ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক শোষনঃ (দ্বিতীয় পর্ব)
৯০ বছরের ব্রিটিশ ভারত ঔপনিবেশিক শোষনঃ (তৃতীয় পর্ব)
পরাধীন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম (চতুর্থ পর্ব)
স্বাধীন ভারত ও ভারতবাসীর স্বপ্ন (পঞ্চম পর্ব)
ভারতবর্ষে ২০০ বছরের ইংরেজ শোষনের ইতিহাসঃ (প্রথম পর্ব)
মুলতঃ ইংরেজরা ১৬০৮-এ মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনকালে সুরাটে প্রথম বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি পায়। আস্তে আস্তে ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলে তাদের বিচরণ শুরু হয়। ১৬৫৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন প্রতিনিধি হিসেবে জেমস হার্ট ঢাকা প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে বাংলায় ইংরেজ আগমন শুরু হয়। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী যুদ্ধ হয় তাতে বাংলার নবাবের করুন মৃত্যু দিয়ে এই ভুখন্ডে অর্থাত্ ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সূচিত হয়।
এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় ইংরেজদের পক্ষ থেকে লর্ড ক্লাইভ। এবং তাকে সহায়তা করে নবাব সিরাজের পরিবারের কয়েকজন ও মীরজাফর, উমিচাঁদ, জগত শেঠ সহ অন্যান্য বিশ্বাসঘাতক। বিশ্বাসঘাতকতার পুরষ্কার স্বরূপ মীরজাফর বাংলার নবাব হয় এবং লর্ড ক্লাইভ তত্কা লীন ত্রিশ লক্ষ টাকা ও চব্বিশ পরগনার জায়গিরদারি লাভ করে। এর পরে লর্ড ক্লাইভ ইংল্যান্ড চলে যায় আবারো ফিরে আসে ১৭৬৫ সালের মে মাসে এবং ইংরেজ সরকারের গভর্নর নিযুক্ত হন। একজন কেরানী থেকে সে গর্ভনর হয়।
ভারতসূর্য ডুবে গেল হায়!
ঐতিহাসিক যাত্রাপালা।
সংগ্রহ ও সম্পাদনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
প্রথম অঙ্ক-প্রথম দৃশ্য
যবনিকা উত্তোলনের অব্যবহিত পূর্বে আবহ সংগীতের পটভূমিতে নেপথ্যে ঘোষণা :
ঘোষণা : এক স্বাধীন বাংলা থেকে আর এক স্বাধীন বাংলায় আসতে বহু দুর্যোগের পথ আমরা পাড়ি দিয়েছি; বহু লাঞ্ছনা বহু পীড়নের গ্লানি আমরা সহ্য করেছি। দুই স্বাধীন বাংলার ভেতরে আমাদের সম্পর্ক তাই অত্যন্ত গভীর। আজ এই নতুন দিনের প্রান্তে দাঁড়িয়ে বিস্মৃত অতীতের পানে দৃষ্টি ফেরালে বাংলার শেষ সূর্যালোকিত দিনের সীমান্ত রেখায় আমরা দেখতে পাই নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে। নবাব সিরাজের দুর্বহ জীবনের মর্মন্তুদ কাহিনি আমরা স্মরণ করি গভীর বেদনায়, গভীর সহানুভূতিতে। সে কাহিনি আমাদের ঐতিহ্য। আজ তাই অতীতের সঙ্গে একাত্ম হবার জন্য আমরা বিস্মৃতির যবনিকা উত্তোলন করছি।
১৭৫৬ সাল; ১৯এ জুন।
প্রথম দৃশ্য
সময় : ১৭৫৬ সাল, ১৯এ জুন। স্থান : ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ।
[শিল্পীবৃন্দ: মঞ্চে প্রবেশের পর্যায় অনুসারে-ক্যাপ্টেন ক্লেটন, ওয়ালি খান, জর্জ, হলওয়েল, উমিচাঁদ, মিরমর্দান, মানিকচাঁদ, সিরাজ, রায়দুর্লভ, ওয়াটস]
(নবাব সৈন্য দুর্গ আক্রমণ করছে। দুর্গের ভেতরে ইংরেজদের অবস্থা শোচনীয়। তবু যুদ্ধ না করে উপায় নেই। তাই ক্যাপ্টেন ক্লেটন দুর্গ প্রাচীরের এক অংশ থেকে মুষ্টিমেয় গোলন্দাজ নিয়ে কামান চালাচ্ছেন। ইংরেজ সৈন্যের মনে কোনো উৎসাহ নেই, তারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।)
ক্লেটন : প্রাণপণে যুদ্ধ করো সাহসী ব্রিটিশ সৈনিক। যুদ্ধে জয়লাভ অথবা মৃত্যুবরণ, এই আমাদের প্রতিজ্ঞা। ভিক্টরি অর ডেথ, ভিক্টরি অর ডেথ।
(গোলাগুলির শব্দ প্রবল হয়ে উঠল। ক্যাপ্টেন ক্লেটন একজন বাঙালি গোলন্দাজের দিকে এগিয়ে গেলেন)
ক্লেটন : তোমরা, তোমরাও প্রাণপণে যুদ্ধ করো বাঙালি বীর। বিপদ আসন্ন দেখে কাপুরুষের মতো হাল ছেড়ে দিও না। যুদ্ধ করো, প্রাণপণে যুদ্ধ করো ভিক্টরি অর ডেথ।
(একজন প্রহরীর প্রবেশ)
ওয়ালি খান : যুদ্ধ বন্ধ করবার আদেশ দিন, ক্যাপ্টেন ক্লেটন। নবাব সৈন্য দুর্গের কাছাকাছি এসে পড়েছে।
ক্লেটন : না, না।
ওয়ালি খান : এখুনি যুদ্ধ বন্ধ করুন। নবাব সৈন্যের কাছে আত্মসমর্পণ না করলে দুর্গের একটি প্রাণীকেও তারা রেহাই দেবে না।
ক্লেটন : চুপ বেইমান। কাপুরুষ বাঙালির কাছে যুদ্ধ বন্ধ হবে না।
ওয়ালি খান : ও সব কথা বলবেন না সাহেব। ইংরেজের হয়ে যুদ্ধ করছি কোম্পানির টাকার জন্যে। তা বলে বাঙালি কাপুরুষ নয়। যুদ্ধ বন্ধ না করলে নবাব সৈন্য এখুনি তার প্রাণ নেবে।
ক্লেটন : হোয়াট? যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা?
(ওয়ালি খানকে চড় মারার জন্যে এগিয়ে গেল। অপর একজন রক্ষীর দ্রুত প্রবেশ)
জর্জ : ক্লেটন, অধিনায়ক এনসাইন পিকার্ডের পতন হয়েছে। পেরিন্স পয়েন্টের সমস্ত ছাউনি ছারখার করে দিয়ে ভারী ভারী কামান নিয়ে নবাব সৈন্য দুর্গের দিকে এগিয়ে আসছে।
ক্লেটন : কী করে তারা এখানে আসবার রাস্তা খুঁজে পেলো?
জর্জ : উমিচাঁদের গুপ্তচর নবাব ছাউনিতে খবর পাঠিয়েছে। নবাবের পদাতিক বাহিনী দমদমের সরু রাস্তা দিয়ে চলে এসেছে, আর গোলন্দাজ বাহিনী শিয়ালদহের মারাঠা খাল পেরিয়ে বন্যাস্রোতের মতো ছুটে আসছে।
ক্লেটন : বাধা দেবার কেউ নেই। (ক্ষিপ্তস্বরে) ক্যাপ্টেন মিনচিন দমদমের রাস্তাটা উড়িয়ে দিতে পারেননি?
জর্জ : ক্যাপ্টেন মিনচিন, কাউন্সিলার ফাকল্যান্ড আর ম্যানিংহাম নৌকোয় করে দুর্গ থেকে পালিয়ে গেছেন।
ক্লেটন : কাপুরুষ, বেইমান। জ্বলন্ত আগুনের মুখে বন্ধুদের ফেলে পালিয়ে যায়। চালাও, গুলি চালাও। নবাব সৈন্যদের দেখিয়ে দাও যে বিপদের মুখে ইংল্যান্ডের বীর সন্তান কতখানি দুর্জয় হয়ে ওঠে।
(জন হলওয়েলের প্রবেশ এবং জর্জের প্রস্থান)
হলওয়েল : এখন গুলি চালিয়ে বিশেষ ফল হবে কি, ক্যাপ্টেন ক্লেটন?
ক্লেটন : যুদ্ধ করতে করতে প্রাণ দেওয়া ছাড়া আর উপায় কি, সার্জন হলওয়েল?
হলওয়েল : আমার মনে হয় গভর্নর রজার ড্রেকের সঙ্গে একবার পরামর্শ করে নবাবের কাছে আত্মসমর্পণ করাই এখন যুক্তিসঙ্গত
ক্লেটন : তাতে কি নবাবের অত্যাচারের হাত থেকে আমরা রেহাই পাব ভেবেছেন।
হলওয়েল : তবু কিছুটা আশা থাকবে। কিন্তু যুদ্ধ করে টিকে থাকবার কোনো আশা নেই। গোলাগুলি যা আছে তা দিয়ে আজ সন্ধে পর্যন্তও যুদ্ধ করা যাবে না। ডাচদের কাছে, ফরাসিদের কাছে, সবার কাছে আমরা সাহায্য চেয়েছিলাম। কিন্তু সৈন্য তো দূরের কথা এক ছটাক বারুদ পাঠিয়েও কেউ আমাদের সাহায্য করল না।
(বাইরে গোলার আওয়াজ প্রবলতর হয়ে উঠল)
ক্লেটন : তা হলে আপনি এখানে অপেক্ষা করুন। আমি গভর্নর ড্রেকের সঙ্গে একবার আলাপ করে আসি।
(ক্লেটনের প্রস্থান। বাইরে থেকে যথারীতি গোলাগুলির আওয়াজ আসছে। হলওয়েল চিন্ততভাবে এদিক-ওদিক পায়চারি করছেন।
হলওয়েল : (পায়চারি থামিয়ে হঠাৎ চিৎকার করে) এই কে আছ?
(রক্ষীর প্রেবেশ)
জর্জ : ইয়েস, স্যার।
হলওয়েল : উমিচাঁদকে বন্দি করে কোথায় রাখা হয়েছে?
জর্জ : পাশেই একটা ঘরে।
হলওয়েল : তাঁকে এখানে নিয়ে এসো।
জর্জ : রাইট, স্যার
(জর্জ দ্রুত বেরিয়ে চলে যায় এবং প্রায় পর মুহূর্তেই উমিচাঁদকে নিয়ে প্রবেশ করে)
উমিচাঁদ : (প্রবেশ করতে করতে) সুপ্রভাত, সার্জন হলওয়েল।
হলওয়েল : সুপ্রভাত। তাই না উমিচাঁদ? (গোলাগুলির আওয়াজ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। হলওয়েল বিস্মিতভাবে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলেন) নবাব সৈন্যের গোলাগুলি হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল কেন বলুন তো?
উমিচাঁদ : (কান পেতে শুনল) বোধহয় দুপুরের আহারের জন্যে সাময়িক বিরতি দেওয়া হয়েছে।
হলওয়েল : এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে উমিচাঁদ। আপনি নবাবের সেনাধ্যক্ষ রাজা মানিকচাঁদের কাছে একখানা পত্র লিখে পাঠান। তাঁকে অনুরোধ করুন নবাব সৈন্য যেন আর যুদ্ধ না করে।
উমিচাঁদ : বন্দির কাছে এ প্রার্থনা কেন সার্জন হলওয়েল? (কঠিন স্বরে) আমি গভর্নর ড্রেকের ধবংস দেখতে চাই।
(জর্জের প্রবেশ)
জর্জ : সার্জন হলওয়েল, গভর্নর রাজার ড্রেক আর ক্যাপ্টেন ক্লেটন নৌকা করে পালিয়ে গেছেন।
হলওয়েল : দুর্গ থেকে পালিয়ে গেছেন?
জর্জ : গভর্নরকে পালাতে দেখে একজন রক্ষী তাঁর দিকে গুলি ছুঁড়েছিল, কিন্তু তিনি আহত হননি।
উমিচাঁদ : দুভার্গ্য, পরম দুর্ভাগ্য।
হলওয়েল : যুদ্ধ করতে করতে প্রাণ দেবেন বলে আধ ঘণ্টা আগেও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ক্যাপ্টেন ক্লেটন। শেষে তিনিও পালিয়ে গেলেন।
উমিচাঁদ : ব্রিটিশ সিংহ ভয়ে লেজ গুটিয়ে নিলেন, এ বড় লজ্জার কথা।
হলওয়েল : উমিচাঁদ, এখন উপায়?
উমিচাঁদ : আবার কি? ক্যাপ্টেন কর্নেলরা সব পালিয়ে গেছেন, এখন ফাঁকা ময়দানে গাইস হাসপাতালের হাতুড়ে সার্জন জন জেফানিয়া হলওয়েল সর্বাধিনায়ক। আপনিই এখন কমান্ডার-ইন-চিফ। (আবার প্রচণ্ড গোলার আওয়াজ ভেসে এল)
হলওয়েল : (হতাশার স্বরে) উমিচাঁদ।
উমিচাঁদ : আচ্ছা, আমি রাজা মানিকচাঁদের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছি। আপনি দুর্গ প্রাকারে সাদা নিশান উড়িয়ে দিন।
(উমিচাঁদের প্রস্থান। হঠাৎ বাইরে গোলমালের শব্দ শোনা গেল। বেগে জর্জের প্রবেশ)
জর্জ : সর্বনাশ হয়েছে। একদল ডাচ সৈন্য গঙ্গার দিককার ফটক ভেঙে পালিয়ে গেছে। সেই পথ দিয়ে নবাবের সশস্ত্র পদাতিক বাহিনী হুড় হুড় করে কেল্লার ভেতরে ঢুকে পড়েছে।
হলওয়েল : সাদা নিশান ওড়াও। দুর্গ তোরণে সাদা নিশান উড়িয়ে দাও।
(জর্জ ছুটে গিয়ে একটি নিশান উড়িয়ে দিল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে নবাব সৈন্যের অধিনায়ক রাজা মানিকচাঁদ ও মিরমর্দানের প্রবেশ)
মিরমর্দান : এই যে দুশমনরা এখানে থেকেই গুলি চালাচ্ছে।
হলওয়েল : আমরা সন্ধির সাদা নিশান উড়িয়ে দিয়েছি। যুদ্ধের নিয়ম অনুসারে-
মিরমর্দান : সন্ধি না আত্মসমর্পণ?
মানিকচাঁদ : সবাই অস্ত্র ত্যাগ কর।
মিরমর্দান : মাথার ওপর হাত তুলে দাঁড়াও।
মাকিনচাঁদ : তুমিও হলওয়েল, তুমিও মাথার ওপর দুহাত তুলে দাঁড়াও। কেউ একচুল নড়লে প্রাণ যাবে।
(দ্রুতগতিতে নবাব সিরাজের প্রবেশ। সঙ্গে সসৈন্যে সেনাপতি রায়দুর্লভ। বন্দিরা কুর্নিশ করে এক পাশে সরে দাঁড়াল। সিরাজ চারদিকে একবারে ভালো করে দেখে নিয়ে ধীরে ধীরে হলওয়েলের দিকে এগিয়ে গেলেন।)
সিরাজ : কোম্পানির ঘুষখোর ডাক্তার রাতারাতি সেনাধ্যক্ষ হয়ে বসেছে। তোমার কৃতকার্যের উপযুক্ত প্রতিফল নেবার জন্যে তৈরি হও হলওয়েল।
হলওয়েল : আশা করি নবাব আমাদের ওপরে অন্যায় জুলুম করবেন না।
সিরাজ : জুলুম? এ পর্যন্ত তোমরা যে আচরণ করে এসেছ তাতে তোমাদের ওপরে সত্যিকার জুলুম করতে পারলে আমি খুশি হতুম। গভর্নর ড্রেক কোথায়?
হলওয়েল : তিনি কলকাতার বাইরে গেছেন।
সিরাজ : কলকাতার বাইরে গেছেন, না প্রাণ নিয়ে পালিয়েছেন? আমি সব খবর রাখি, হলওয়েল। নবাব সৈন্য কলকাতা আক্রমণ করবার সঙ্গে সঙ্গে রজার ড্রেক প্রাণভয়ে কুকুরের মতো ল্যাজ গুটিয়ে পালিয়েছে। কিন্তু কৈফিয়ত তবু কাউকে দিতেই হবে? বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে বাঙালির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবার স্পর্ধা ইংরেজ পেলো কোথা থেকে আমি তার কৈফিয়ত চাই।
হলওয়েল : আমরা নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাইনি। শুধু আত্মরক্ষার জন্যে-
সিরাজ : শুধু আত্মরক্ষার জন্যেই কাশিমবাজার কুঠিতে তোমরা গোপনে অস্ত্র আমদানি করছিলে, তাই না? খবর পেয়ে আমার হুকুমে কাশিমবাজার কুঠি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্দি করা হয়েছে ওয়াটস আর কলেটকে। রায়দুর্লভ।
রায়দুর্লভ : জাঁহাপনা।
সিরাজ : বন্দি ওয়াটসকে এখানে হাজির করুন।
(কুর্নিশ করে রায়দুর্লভের প্রস্থান)
সিরাজ : তোমরা ভেবেছ তোমাদের অপকীর্তির কোনো খবর আমি রাখি না।
(ওয়াটস সহ রায়দুর্লভের প্রবেশ)
ওয়াটস।
ওয়াটস : ইওর এক্সিলেন্সি!
সিরাজ : আমি জানতে চাই তোমাদের অশিষ্ট আচরণের জবাবদিহি কে করবে? কাশিমবাজারে তোমরা গোলাগুলি আমদানি করছ, কলকাতার আশেপাশে গ্রামের পর গ্রাম তোমরা নিজেদের দখলে আনছ, দুর্গ সংস্কার করে তোমরা সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছ আমার নিষেধ অগ্রাহ্য করে কৃষ্ণবল্লভকে তোমরা আশ্রয় দিয়েছ, বাংলার মসনদে বসবার পর আমাকে তোমরা নজরানা পর্যন্ত পাঠাওনি। তোমরা কি ভেবেছ এইসব অনাচার আমি সহ্য করব?
ওয়াটস : আমরা আপনার অভিযোগের কথা কাউন্সিলের কাছে পেশ করব।
সিরাজ : তোমাদের ধৃষ্টতার জবাবদিহি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে তোমাদের বাণিজ্য করবার অধিকার আমি প্রত্যাহার করছি।
ওয়াটস : কিন্তু বাংলাদেশে বাণিজ্য করবার অনুমতি দিল্লি বাদশাহ আমাদের দিয়েছেন।
সিরাজ : বাদশাকে তোমরা ঘুষের টাকায় বশীভূত করেছ। তিনি তোমাদের অনাচার দেখতে আসেন না।
হলওয়েল : ইওর এক্সিলেন্সি নবাব আলিবর্দি আমাদের বাণিজ্য করবার অনুমতি দিয়েছেন।
সিরাজ : আর আমাকে তিনি যে অনুমতি দান করে গেছেন তা তোমাদের অজানা থাকবার কথা নয়। সে খবর অ্যাডমিরাল ওয়াটসন কিলপ্যাট্রিক, ক্লাইভ সকলেরই জানা আছে। মাদ্রাজে বসে ক্লাইভ লন্ডনের সিক্রেট কমিটির সঙ্গে যে পত্রালাপ করে তা আমার জানা নেই ভেবেছো? আমি সব জানি। তবু তোমাদের অবাধ বাণিজ্যে এ পর্যন্ত কোনো বিঘ্ন ঘটাইনি। কিন্তু সদ্ব্যবহার তো দূরের কথা তোমাদের জন্যে করুণা প্রকাশ করাও অন্যায়।
ওয়াটস : ইওর এক্সিলেন্সি আমাদের সম্বন্ধে ভুল খবর শুনেছেন। আমরা এ দেশে বাণিজ্য করতে এসেছি। উই হ্যাভ কাম টু আর্ন মানি। এ্যান্ড নট টু গেট ইনটু পলিটিক্স। রাজনীতি আমরা কেন করব।
সিরাজ : তোমরা বাণিজ্য কর? তোমরা কর লুট। আর তাতে বাধা দিতে গেলেই তোমরা শাসন ব্যবস্থায় ওলটপালট আনতে চাও। কর্ণাটকে, দাক্ষিণাত্যে তোমরা কী করেছ? শাসন ক্ষমতা করায়ত্ত করে অবাধ লুটতরাজের পথ পরিষ্কার করে নিয়েছ। বাংলাতেও তোমরা সেই ব্যবস্থাই করতে চাও। তা না হলে আমার নিষেধ সত্ত্বেও কলকাতার দুর্গ-সংস্কার তোমরা বন্ধ করনি। কেন?
হলওয়েল : ফরাসি ডাকাতদের হাত থেকে আমরা আত্মরক্ষা করতে চাই্
সিরাজ : ফরাসিরা ডাকাত আর ইংরেজরা অতিশয় সজ্জন ব্যক্তি, কেমন?
ওয়াটস : আমরা অশান্তি চাই না, ইওর এক্সিলেন্সি
সিরাজ : চাও কি না চাও সে বিচার পরে হবে। রায়দুর্লভ।
রায়দুর্লভ : জাঁহাপনা!
সিরাজ : গভর্নর ড্রেকের বাড়িটা কামানের গোলায় উড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিন। গোটা ফিরিঙ্গি পাড়ায় আগুন ধরিয়ে ঘোষণা করে দিন সমস্ত ইংরেজ যেন অবিলম্বে কলকাতা ছেড়ে চলে যায়। আশপাশের গ্রামবাসীদের জানিয়ে দিন তারা যেন কোনো ইংরেজের কাছে কোনো প্রকারের সওদা না বেচে। এই নিষেধ কেউ অগ্রাহ্য করলে তাকে গুরুতর শাস্তি ভোগ করতে হবে।
রায়দুর্লভ : হুকুম, জাঁহাপনা।
সিরাজ : আজ থেকে কলকাতার নাম হলো আলিনগর। রাজা মানিকচাঁদ, আপনাকে আমি আলিনগরের দেওয়ান নিযুক্ত করলাম।
মানিকচাঁদ : জাঁহাপনার অনুগ্রহ।
সিরাজ : আপনি অবিলম্বে কোম্পানির যাবতীয় সম্পত্তি আর প্রত্যেকটি ইংরেজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নবাব তহবিলে বাজেয়াপ্ত করুন। কলকাতা অভিযানের সমস্ত খরচ বহন করবে কোম্পানির প্রতিনিধিরা আর কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এখানকার প্রত্যেকটি ইংরেজ।
মানিকচাঁদ : হুকুম, জাঁহাপনা।
সিরাজ : (উমিচাঁদের কাছে এসে তার কাঁধে হাত রেখে) আপনাকে মুক্তি দেওয়া হলো, উমিচাঁদ।
(উমিচাঁদ কৃতজ্ঞতায় নতশির)
আর (মিরমর্দানকে) হ্যাঁ, রাজা রাজবল্লভের সঙ্গে আমার একটা মিটমাট হয়ে গেছে। কাজেই কৃষ্ণবল্লভকেও মুক্তি দেবার ব্যবস্থা করুন।
মিরমর্দান : হুকুম জাঁহাপনা।
সিরাজ : হলওয়েল।
হলওয়েল : ইওর এক্সিলেন্সি।
সিরাজ : তোমার সৈন্যদের মুক্তি দিচ্ছি, কিন্তু তুমি আমার বন্দি। (রায়দুর্লভকে) কয়েদি হলওয়েল, ওয়াটস আর কলেটকে আমার সঙ্গে পাঠাবার ব্যবস্থা করুন। মুর্শিদাবাদে ফিরে গিয়ে আমি তাদের বিচার করব।
রায়দুর্লভ : জাঁহাপনা।
(সিরাজ-বেরিয়ে যাবার জন্যে ঘুরে দাঁড়াবার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সবাই মাথা নুইঁয়ে তাঁকে কুর্নিশ করল।)
[দৃশ্যান্তর]
এক ঝাঁক হাইকু ১৬
(জাপানে প্রচলিত ‘হাইকু’
জাপানি কবিতা)
এক
তোমার মন
অজানা সততই
গহীন বন।
দুই
সময় কম
তাই তো চলা ধেয়ে
সে হরদম।
তিন
কত না লড়ি
জীবন খেলা ঘরে
সর্বদা হারি।
চার
কৃষক হাসে
নাচে ধানের শীষ
মৃদু বাতাসে।
পাঁচ
বারুদ ঘ্রাণ
জনতাও নির্বাক
হারাবে প্রাণ।
ছয়
এ ভালোবাসা
পেতে কত কি করি
শুধু প্রত্যাশা।
মাত্রা:৫-৭-৫
মুক্ত বাক, মুক্ত চেতনা, freedom of speech
বাক স্বাধীনতা, মুক্ত বাক
১৩ জুন ২০১৯ ঈসায়ী।
ব্লগ এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনি আপনার চিন্তা-চেতনা, মনের কথা, কবিতা, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি সব ধরনের কথা আমরা পাঠকদের সামনে মোবাইল, ল্যাপটপের কী বোর্ডের মাধ্যমে তুলে ধরি। ব্লগ হলো হাজারো গুণী লেখকদের একটি মিলন সেতু। আমরা ব্লগাররা ব্লগে লেখি, পাঠক ও অতিথিগণ সে সব গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল গুলো পড়ে সেখানে মন্তব্য করেন। এক কথায় বলা যায় ব্লগ একটি পাবলিক সাইট। হাজারো মানুষের হাজারো চিন্তা ও মন্তব্য বলার একটি জায়গা।
ব্লগে বাক স্বাধীনতা রয়েছে, বাক স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায়, এর কি অর্থ সে বিষয়ে আজ কথা বলার জন্য লিখছি।
বাক স্বাধীনতা, মুক্ত চিন্তা ভাবনা সম্পর্কে শুরুতেই কিছু জেনে নেয়া যাক, আসলে মত প্রকাশ বা বাক স্বাধীনতা বলতে কি বুঝায়?
যে কোন মতামত কি আমরা প্রকাশ করতে পারি বা করার সার্মথ্য রাখি? কিংবা বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্র কতটুকু? বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে শিক্ষিত অশিক্ষিত মানুষও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার রাখে গণতান্ত্রিক দেশে। তাদেরও স্বাধীনভাবে বলার অধিকার আছে। বাক স্বাধীনতা ও মুক্ত চিন্তা ভাবনাকে বিষয়বস্তু বানিয়ে বিশ্লেষণ করলে সারমর্ম যা বেরিয়ে আসে তা হলো, জাতি স্বাধীনভাবে কোন বিষয়ের উপর তার মন্তব্য তার ইচ্ছা তার চিন্তা-ভাবনা প্রকাশ করবে স্বাধীনভাবে। এক কথায় স্বাধীন ডানা মেলে উড়ে যাওয়া পাখির মত।
তারপরেও আমাদের মস্তিস্কে হিউম্যান ব্রেইন বাই ডিফল্ট এক ধরনের চলমান প্রক্রিয়া বসানো আছে, যা আমাদেরকে সব সময় সব জায়গাতেই সব কথা বলার ক্ষেত্রে বাধা প্রদান করে। সহজভাবে বলা যায়, প্রত্যেকটি মানুষের ভেতরেই বিবেক নামক একটি সত্তার উপস্থিতি রয়েছে যা মানুষের চাহিদা মোতাবেক যা খুশি তা বলার পরিস্থিতিকে বাধা প্রদান করে বা সিস্টেমকে কিছু সময়ের জন্য স্থির করে দেয়।
পৃথিবীর বুকে আমরা বিচরণ করছি, বিশুদ্ব অক্সিজেন গ্রহন করছি এসবি হচ্ছে উপরওয়ালার নিয়ামত। যদি তা না থাকে তাহলে কি হতো সেটা আমরা চোখ বন্ধ করে চিন্তা ভাবনা করলেই বুঝতে পাই, দেখতে পাই। ধরে নিন আমি ব্লগে এমন কিছু লিখলাম বা বললাম যার দ্বারা আমাদের দেশের মরহুম গ্রেট লিডার শেখ মুজিবর রহমান, দেশের প্রধানমন্ত্রী বা ওনার ছেলে এসব কথা বা লিখার দ্বারা আক্রান্ত হলেন বা মনে কষ্ট পেলেন। তারা কি ভারাক্রান্ত মন ও রাগ ক্ষোভ নিয়ে বসে থাকবে? নিশ্চই উত্তর দিবেন না, তারা আমাকে আইনের আওতায় আনবে, আমার বিরুদ্ধে চার্জ নিবে আন্তর্জাতিক আদালতে।
এখন ভাবুন দেশের সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে কথা বলায় যদি আপনি আইনের আওতায় আনা হয়, আপনার উপর চার্জ নেওয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের ৮৮% মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মত কথা বা মন্তব্যের শাস্তি কি?
বাংলাদেশ পেনাল কোড বা ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৮ ধারা অনুসারে ধর্মাবমাননার অপরাধ প্রমাণিত হলে অর্থদণ্ডসহ সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ধর্মাবমাননার তীব্রতার পরিপ্রেক্ষিতে এই দুই ধারায় বর্ণিত শাস্তির পরিমাণ হলো এই।
বাক স্বাধীনতা বলতে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার। আপনার আছে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার। আপনি বলবেন, আপনাকে বাধা প্রদান করার মত কেউ নেই, তবে বলার বা মন্তব্য করার একটি সীমানা পরিধি থাকে। আসলে বাক স্বাধীনতা হলো সর্বস্তরের মানুষের কথা বা মত বক্তৃতা-বিবৃতি ধারণা প্রকাশের একটি মৌলিক মানবিক অধিকার। মানুষ যা চিন্তা করে তা বাধাহীনভাবে বলতে পারার নামই বাক স্বাধীনতা। বাক স্বাধীনতার ও পরিধি-সীমানা রয়েছে।
আপনি কতটুকু বলবেন বা বলতে পারবেন। বাক স্বাধীনতার প্রাথমিক ধারণাটি মানবাধিকার সম্পর্কিত প্রাচীন নথিপত্রেও পাওয়া যায়। ১৯৪৮ সালে অান্তর্জাতিকভাবে এ অধিকারটি মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার ( Universal Declaration of Human Right) আর্টিকেল-১৯ এর মাধ্যমে গৃহীত হয়, যা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি (International covenant on civil and political Right ICCPR) কর্তৃক স্বীকৃত। একবার নজর করলেই বুঝা যাবে ঐ অান্তর্জাতিক ঘোষণায় বাক স্বাধীনতার পরিধি ও সীমান্তপথ কতটুকু? বলার বা মতামতের ক্ষেত্রে কতটুক আপনার বলার অধিকার আছে। প্রত্যেকেরই কোনো রকম হস্তক্ষেপ এবং বাধা ছাড়াই যে কোন মত পোষণ এবং প্রকাশের অধিকার থাকবে যে কোন ধরণের তথ্য বা ধারনা চাওয়া, এবং তাতে অংশ নেয়ার অধিকার, তা তার পছন্দের যে কোন মিডিয়ার মাধ্যমে বা পাবলিক সাইড গুলিতে হতে পারে। যেমন: মৌখিক, লিখনি, মুদ্রণ, অংকন ইত্যাদি।
এ ঘোষণার ভিতরেই যে নিয়ন্ত্রণ বা নিষেধাজ্ঞার কথাও রয়েছে তা হলো (১) বিশেষ কর্তব্য ও দায়িত্ব পালন (রাষ্টীয়, আঞ্চলিক, সামাজিক নেতৃত্ব এ সীমা নির্ধারণ করবে) (২) অন্যের অধিকার, খ্যাতি ও সম্মান সুরক্ষার ক্ষেত্রে (৩) জাতীয় নিরাপত্তার বিবেচনা (৪) নাগরিক সুশৃঙ্খলা সংরক্ষণ (৫) জনস্বাস্থ্য (৬) নীতিশাস্ত্র (ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি, কল্যাণকর সামাজিক রীতি-নীতি ইত্যাদি) সেখানে আরো উল্লেখ আছে যে, এই বাক স্বাধীনতার নামে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, পর্ণগ্রাফি, অসামাজিকতা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ধর্ম নিয়ে এমন কথা যার ভিত্তি নেই, ইত্যাদি অবাধ প্রচারের সুযোগ থাকবেনা। কারো প্রতি বা কোনো বিষয়ে ঘূণা প্রকাশের মাত্রারও সীমা অতিক্রম করা যাবে না। তাহলে বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যারা যখন যা খুশি তাই বলা, মত প্রকাশ করা বা প্রচার করা কিংবা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার সুযোগ কি আছে?? অবশ্যই উত্তর হবে না!
অথচ ইদানিং প্রায় লক্ষ্য করা যায় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগে নানা রকম অশ্লীল ও আপত্তিজনক মন্তব্যও লেখা হচ্ছে মুক্ত চেতনার নামে। আসলে মুক্ত চেতনা কি কাউকে বা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য চেতনা? বরং মুক্ত চেতনা তো হওয়া উচিত যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, প্রতিবাদী হয়ে উঠা। তাহলে ধারাবাহিকভাবে ইসলাম, কোরআন, মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিরুদ্ধে বিষোদগারের হেতু কি?
আর যারা এ জাতীয় কাজে লিপ্ত তারা বেশিরভাগই অমুসলিম কিংবা অঘোষিত বা স্বঘোষিত নাস্তিক। তাহলে প্রশ্ন রাখা যায়, একজন অমুসলিম কুরআন, হাদীস, ইসলামের রীতি-নীতি, ইসলামিক জীবন-ব্যবস্থা, শিষ্টাচার,আইন কানুন সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞান আছে বা রাখে? যতটুকু জানে তা দিয়ে কি নানারকম বিদ্বেষপূর্ণ কথা বলতে পারে? তাহলে উপরে বলা মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণাটি ঠিক থাকলো? আমাদের দেশের পেনাল কোড বা ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ ও ২৯৮ ধারা কোথায় টিকলো?
বর্তমান সময়ে মত প্রকাশ বা বাক স্বাধীনতা এমন একটি বহুল প্রচারিত টার্ম, যা মানুষকে স্বস্তিও দিতে পারে আবার বিড়ম্বনায়ও ফেলতে পারে। তথাকথিত মুক্ত চিন্তার লেখকের নাম দিয়ে, বিজ্ঞানমনস্ক লেখার দোহাই দিয়ে, বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যারা এসব করছে এরা আমাদের আশে পাশেই আছে। আমরা তাদেরকে বলি আহাম্মক, বলি ব্যাটার হুঁশ-বুদ্ধি নাই নাকি? কোথায় কি বলতে হয় তাও জানে না? এরা মনে যা আসে তাই বলে। কোনো রাখঢাক না করে বাছ-বিচার না করে বলে ফেলা মানুষদের আমরা বলি পাগল বা উন্মাদ।
কারণ বিবেক সত্তা তাদের ভিতরে নেই, এরা নিজেদেরকে সমাজের সামনে অনেক জ্ঞানী বলে উপস্থাপন করেন। একটি কথা শেষের দিকে না বললেই নয়, আপনি, আমি, আমরা সবাই বলার অধিকার রাখি সব জায়গাতেই। আপনার বলার অধিকার কেউ ছিনিয়ে নেয়নি। বলা বা মতামতের ক্ষেত্রে আমাদের ইসলাম অনেক গুরত্ব দিয়েছে আপনাকে। সন্দেহের বিষয়গুলো আলেম মাওলানা বা মুফতিদের থেকে জেনে সন্দেহ দূর করুন।
ব্লগে ইদানিং কালে কিছু ব্লগার শব্দ দিয়ে অন্যকে আঘাত করে, ধর্মকে অবমাননা করা করে, না জেনে না পড়ে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ কথা বলে! এটা মোটেও কাম্য নয়। এ সমস্ত ব্লগার রা যুক্তি তর্কে গ্রহণযোগ্যতা রাখে না। আপনাকে আমাকে বিড়ম্বনায় ফেলে গা ঢাকা দিয়ে চলে যায়। ফিরতি তর্কে এরা আপনার ধারে কাছেও ফিরে না। সত্যিকার ব্লগাররা গা ঢাকা দেয় না, তারা তর্ক করে সত্যকে জানতে চায়। শব্দনীড়কে এ নিয়ে কিছু বলার ছিলো বলে আজ বলছি। ব্লগের পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য আপনি তর্ক করুন, প্রশ্ন রাখুন। আপনার করা যত কঠিন প্রশ্নের উত্তর কেউ না কেউ দিবেই। সুতরাং কোন বিষয় সম্পর্কে না পড়ে না জেনে গালমন্দ করা বোকাদের কাজ। ধর্ম নিয়ে আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, ডিবেট করতে পারেন। আঘাত করতে পারবেন না। ব্লগ কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ের দিকে কড়া নজর না রাখে তাহলে ব্লগ তার লেখকদের হারাবে।
আমি তর্ক বা ডিবেট করাকে পছন্দ করি বলেই তর্ক করে যাই। তর্কে সত্য বেরিয়ে আসে। আমি শব্দনীড়ে রাগ করেই কয়েকদিন পোস্ট দেইনি। একজন ব্লগারের পোস্টে আমার করা মন্তব্য তর্কের জবাব এখনো পাইনি ! আমি জবাব চাই! যদি ফিরতি তর্ক মন্তব্য না পাই তাহলে ধরে নিবো আপনি হেরে গিয়েছেন আপনার যুক্তিতে। সুতরাং জবাব দিয়ে যান, তা না হয় স্বীকার করুন আপনি ভুলের বশে না জেনে বলে ফেলেছেন! বিদ্বেষ ছড়ানো কোন মন্তব্য করবেন না ব্লগে। ধন্যবাদ।
উগ্র ধর্মান্ধতা বিকারগ্রস্ততার আরেক রূপ
ওপার বাংলার কলেজ স্কোয়ারে সড়কের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। বেশ রাত। আনুমানিক এগারোটা বাজে। এ সময় একজন মধ্যবয়স্ক দীর্ঘকায় লোক কোনও বিশেষ ঠিকানা বা কোনওকিছু জানতে চাইলে, আমি আমার আয়ত্তের মধ্যে তাকে যথাসম্ভব সাহায্য করি। লোকটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গা’য়ে পড়ে আমার সঙ্গে আলাপ জমাতে লাগলো। এব্যাপারে আমার মোটেও কোনও আগ্রহ ছিলো না। তারপরও সমাজ রক্ষার্থে কথোপকথনে অনিচ্ছাসত্ত্বেও জড়িয়ে পড়ি। বয়সে বড় কাওকে সরাসরি বলতেও পারি না যে, আমি এখন বেশি কথা বলতে চাচ্ছি না! এক পর্যায়ে আমার ভাষা শুনে সে বুঝতে পারে, আমি বাংলাদেশী। আমিও কথায় কথায় তাকে দ্বিধাহীন জানিয়ে দেই, বাংলাদেশ থেকে এসেছি, ট্যুরিস্ট, অমুকদিন এসেছি, তমুকদিন যাবো ইত্যাদি। তারপর এক পর্যায়ে সেই ভদ্রলোক তার পরিচিত আরও কোনও বাংলাদেশীর কথা বলতে লাগলো আমাকে; ভারতে পরিচয়, হিন্দু, বাংলাদেশের বিশেষ জায়গায় বাড়ি, নাম ইত্যাদি। যে কোনও কারণেই হোক লোকটা অনেকটা নিশ্চিত ছিলো যে, আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। এ পর্যায়ে আমি সেখান থেকে যেতে উদ্যত হই। লোকটা আসলে চাইছিল যে, আমার সাথে পথ চলতে চলতে কিঞ্চিত এই পরিচয়টাকে আরও স্থায়ী করতে। বেশ হাসিখুশি উজ্জ্বল মুখে তখন আমাকে সে আচানক জিজ্ঞেস করে বসলো, “আপনি তো হিন্দু তাই না?” এমনিতেই বিরক্তির পারদ উপরে চড়া ছিলো, তারপর আবার এরকম অপ্রয়োজনীয়, অনাকাঙ্ক্ষিত, অর্থহীন ব্যক্তিগত প্রশ্ন! আমি উত্তরে বেশ খানিকটা কঠিন স্বরে সোজাসাপ্টা বললাম যে, “আমি হিন্দু কিনা সেটা জেনে তার কি হবে? চেনা নেই জানা নেই অকস্মাৎ এভাবে অপরিচিত কাওকে সে হিন্দু কিনা জিজ্ঞেস করার কোনও অর্থই হয় না!” খুবই বিরক্ত হয়েছিলাম হঠাৎ এরকম প্রশ্নে।
(আগামী পর্বে সমাপ্য)
নপুংশক জাতীর অহংকার: প্রসঙ্গ কিছু আলোচিত মন্তব্য
শ্রদ্ধেয় একজন ব্লগার পূর্ববর্তী এক পোস্টে তার মূল্যবান মন্তব্য করেছেন এবং তাতে আরেকজন ব্লগার সমর্থনও করেছেন। আমার কাছে মনে হলো এটা নিয়ে কিছু তথ্যবিভ্রাট সম্পর্কিত আলোচনার দাবী রাখে।
১৯৪৭, ৬৬, ৭১ পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে প্রচুর প্রচুর বাঙ্গালী হিন্দু মাইগ্রেশন নিয়েছে ভারতে। হিন্দুস্থান ভাবতে এরা পুলকিত হয়। প্রণামে আর ঈশ্বর কৃপায় মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে ফেলেন আর কি। বৃষ্টি হয় এখানে আর মাথায় ছাতা তুলে দেশে।
“দাঙ্গার ইতিহাস” লিখেছেন শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, রকমারীতে পাবেন। বইটি সংগ্রহে রাখার মতো। বেশ বস্তুনিষ্ঠ দলিল এজন্য বলবো যে ততকালীন পত্র পত্রিকা ও দস্তাবেজ ঘাটলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। কলকাতায় দাঙ্গা শুরু হয়েগেছে এবং সে খবরে বাংলাও বেশ গরম। ঈদুল ফিতরের নামাজের পর নোয়াখালীর পীর গোলাম সারোয়ার হুসেনী জনসমাবেশে হিন্দুদের ওপর সরাসরি আক্রমন করার নির্দেশ দেন নবী মোহাম্মদের ফিদায়ী অভিযান ও বানু কুরায়জার গনহত্যার রেফারেন্স টেনে। তখন তার নিজস্ব মিঞা বাহিনী ও এলাকার মুসলমান অনুসারীরা হিন্দুদের ওপর আক্রমন করে হাটের মধ্যে। শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা। পুরো দাঙ্গায় মৃত্যু হয় প্রায় ৫০০০০ হিন্দু এবং ধর্ষিতা হয় লক্ষাধিক নারী। কখনো কখনো নবী মোহাম্মদের সাফিয়া ধর্ষন অনুসরনে সেখানকার বনেদী ব্যাবসায়িক পরিবারের প্রধান কর্তা, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা করে যুবতী ও কিশোরী নারীদের ধর্ষন করা হতো গনিমতের মাল হিসেবে এবং তাদেরকে উপহার হিসেবে বন্টন করে দেয়া হতো। প্রতিবেশী হিসেবে থাকা মুসলমানেরা তাদের হিন্দু প্রতিবেশীদের ঘরে ঢুকে হত্যা ধর্ষন কিছুই বাদ রাখেনি। পরে যখন নোয়াখালী ছেড়ে রায়টের ভয়াবহতা কুমিল্লা চাঁদপুর ছড়িয়ে পড়ে তখন মুসলিম লীগের পান্ডারা তাতে যোগ দেয় এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম আক্রান্ত হয়।
ততকালীন মাংলার মূখ্যমন্ত্রী হোসেন সোহরাওয়ার্দী এটাকে তুচ্ছ সন্ত্রাসী ঘটনা বলে উড়িয়ে মুসলমান জঙ্গিদের আরও সুযোগ করে দেন সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গার স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করতে। যখন কেন্দ্রিয় সরকার থেকে প্রচন্ড চাপ আসতে থাকে এবং স্বয়ং গান্ধীজি স্বদ্যোগী হন তখন তিনি মেনে নেন। কতটা চশমখোর হলে এটা সম্ভব, চিন্তা করা যায়? এমনকি কাজী নজরুল ইসলামের টাকা মেরে খাওয়া আরেক জোচ্চর শেরে বাংলা ফজলুল হক বলে বসেন হিন্দু নারীদের ধর্ষন সম্পর্কে: হিন্দু নারীরা প্রাকৃতিক ভাবেই বেশী সুন্দরী।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজারে কম্যুনিস্ট ধরবার নামে এক হিন্দু বাসায় গিয়ে স্ত্রী কন্যাকে একি বিছানায় ধর্ষন করতে উদ্যোত হলে জয়দেবের বর্শায় খোচায় দুই ধর্ষক মুসলমান কনস্টেবল জায়গায় অক্কা পায় এবং শুরু হয় ৫০ এর রায়ট যা ছড়িয়ে পড়ে বরিশাল খুলনা পর্যন্ত। নাচোলের গনহত্যার নাম শুনে থাকবেন হয়তো। এরকম আপ্যায়নের কথার সাথে “হিন্দুস্থান ভাবতে এরা পুলকিত হয়।” এ কথাটি যায় না।
সত্যিকারের অত্যাচারিত কত জন সেটা বলা যাবে না। আমি তো অন্তত বিশ্বাস করি না। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা সব দেশেই আছে।
মন্তব্যে এ কথাটা তৎকালীন বাংলার মূখ্যমন্ত্রী হোসেন সোহরাওয়ার্দী বললেও যখন গান্ধীজি এবং কেন্দ্রিয় সরকারের অন্যান্য মন্ত্রী আকাশযোগে উপদ্রুত এলাকা পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে সেসব এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিয়ে নামসর্বস্ব তদন্তকমিটি গঠন করলেন। কিন্তু সেসব এলাকার জঙ্গি মুসলমানরা এক অদ্ভুত টেকনিক হাতে নিলো। তারা ধর্ষিতা ও গনিমতের মাল হিসেবে রেখে দেয়া নারীদের দ্রুত কাগজ কলমে টিপসই নিয়ে ধার্মান্তরীত করে বোরখা পড়াতে শুরু করলেন। যাতে করে স হসা না চেনা যায়। এবং যারা বেচে গেছেন তাদের কাছ থেকে মুসলিম লীগের জিহাদী ভাইয়েরা জিজিয়া করের নামে চাঁদা ওঠাতে লাগলেন। পরে যখন কেন্দ্রীয় সরকার স হ ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও অন্যান্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন রিপোর্ট দেয়া শুরু করলো তখন বাঙ্গালী জঙ্গি মুলসমানদের হত্যাকান্ডগুলো বানু কুরায়জার ওপর নবী মোহাম্মদের ফিদায়ী অভিযান বা আলির খাওয়াজিরী গনহত্যা বা বক্কর উমরের রিদ্দার যুদ্ধে অনুসৃত নৃশংস ও বর্বরতম পদ্ধতিগুলো অনুসরন করা হয়েছে যেসবের বর্ননা দেখলে আতকে উঠতেই হয় এবং শুধু শৈলেশের বই নয়, ১৯৬০ সালে লেখা মোকসেদের লেখা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নামের বইতেও সেটা উঠে এসেছে। এরপরও প্রচুর দাঙ্গা হয়েছে এবং সেসবে বাঙ্গালী জঙ্গি মুসলমানদের বর্বরতা পাকিস্থানীদের হার মানায়। আর ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সেই পাকিস্থানী মুসলিম ভাইয়েরাই ১৯৭১ সালে বাঙ্গালি মুসলমানদের একই রকম ফিদায়ী ধর্ম যুদ্ধ শুরু করে যার ফলাফল হয় রক্তাক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। কিন্তু যে জাতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফিদায়ী অভিযান, আমাদিয়া ইশতিশাদী, ইন ঘিমাসের মতো জিহাদী চেতনা সে দেশ কিভাবে সাম্প্রদায়িক না হয়ে থাকতে পারে?
কাগজে কাগজে যতই সেক্যুলারিজমের কথা বলা হোক না কেন; বর্তমানে ভারতের রাজনৈতিক পরিবেশ আপনিও ভালো জানেন। ভারত এখন আর অসাম্প্রদায়িক দেশ নয়। হিংসাত্মক অত্যাচার কতটা আর এর চেহারা কতটা ভয়াবহ তা কিন্তু বাংলাদেশের নব্য মাথামোটাদের ধারণায়ই আসবে না। বাংলাদেশ অনেক ভালো আছে।
ভারতের কাগজে কলমে অসাম্প্রদায়িক হলেও তার কিছুটা ধরে রেখেছিলো বলেই আবুল কালাম আজাদ নামের মুসলিম বিজ্ঞানী প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছেন। সেখানে হিন্দু মুসলমান সবাই উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারে। এটা ঠিক মোদীর থিওক্রেটিক চেহারার ভারত কখনোই কারো কাছে কাম্য নয় এবং সেজন্যই সেখানে এর জোরালো প্রতিবাদ হচ্ছে। বর্তমানে ভারত বিজ্ঞান স হ অন্যান্য বিষয়ে যতটা এগিয়েছে সেটা আপনি ভাবতে পারবেন না। আবার বাংলাদেশের যত মানুষ ভারতে অবৈধভাবে পাড়ি দেয়, শোনা যায় না কাশ্মীর বা অন্যান্য অঞ্চল থেকে মুসলমানরা নিগৃহিত হয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। ভারতে মুসলমানরা যদি খারাপ হয়েই থাকবে তাহলে চলচ্চিত্র তারকা নুসরাত কিভাবে লোকসভায় আসন পায় এবং ধুমধাম করে শাদী করে। অথবা সালমান খান শাহরুখ খান? আপনি হয়তো বলবেন এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা তাহলে আসুন পরিসংখ্যান। অন্তত মানুষের মুখের গুজব ও মিথ্যা কথার জবাব পরিসংখ্যান ভিন্ন কিছু হতে পারে না
উইকির এই পেজ অনুসারে আপনি বাংলাদেশ থেকে কত হিন্দু, এমনকি মুসলমানরাও সেখানে যাচ্ছে। বারাকাত সাহেবের পরিসংখ্যান আপনাদের বিশ্বাস হবে না কারন উনি নিজে কিছু অন্যান্য দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকায় তার সবকিছুই এখন প্রশ্নবিদ্ধ কিন্তু উইকির ঐ পেজে বেশ কিছু একাডেমিক ও স্বাধীন পরিসংখ্যান আছে সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ করতে যাওয়া হাস্যকর। যদিও বাঙ্গালী যেখানে এখনও বিশ্বাস করে চাঁদে নবী মোহাম্মদের দ্বিখন্ডনের দাগ আছে বা চাঁদে নাসা যাইনি কিন্তু সাঈদিকে দেখা গেছে, তাদের কাছে একাডেমিক গবেষনা মানেই নাপাকী জিনিস, তাই না?
আরেক জায়গায় বলা হয়েছে
আমার আশেপাশে মুসলিম যারা রয়েছেন, আমি দেখেছি তারা কখনও ভিন্ন দেশে ইমিগ্র্যান্ট হবার চিন্তাই করে না।
ইউরোপীয়ান মাইগ্রেশন কাউন্সেলিং এর তথ্যমতে ইউরোপে রেকর্ডসংখ্যক মুসলিমরা অভিবাসী হয়। এদের বেশীরভাগই যুদ্ধ বিদ্ধস্ত, দুর্ভিক্ষপীড়িত এবং নানা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে। সবচেয়ে আশ্চর্য্যের বিষয় হলো মাইগ্রেশন পলিসির তথ্যমতে লিবিয়া দুবাই হয়ে সাগর পথে পাড়ি দেয়া সবচেয়ে অবৈধ অভিবাসী হলো বাংলাদেশীরা। ইউরোপীয়ানরা এই পরিসংখ্যান এজন্য অবাক হন যে বাংলাদেশে নেই কোনো দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ বা কোনোকিছু। আবার আপনিও বলছেন এদেশে হিন্দু মুসলমান সবাই ভারতের থেকে অনেক ভালো।
আবার কমেন্টের সাথে সহমত জানিয়ে আরেক সহব্লগার যে কমেন্ট করেছেন, প্রোফাইল ঘেটে দেখলাম উনি অস্ট্রেলিয়া নিবাসী। তবে এটা ঠিক ব্যাক্তিগত জীবনে আমরা সবাই এমন কিছু ঘটনার মুখোমুখি হই যেটা কিনা আমাদের ভাবনার মানসপটে এবং চিন্তা চেতনায় প্রভাব ফেলে
গতকাল বাবাকে ফোন দিলাম দেশের পরিস্থিতি জানার জন্য উনি বললেন গুজব নাকি ইন্ডিয়ার ষড়যন্ত্র। আমি তার উত্তরে বললাম, গুজব সবচেয়ে বেশী হয় পুরান ঢাকায় এটা তুমি নিজেও জানো। এবং এসব অশিক্ষিত লোকজন কি ভারত থেকে টাকা খাইছে? এটা তোমার মনে হয়?
তখন সে একটু চিন্তা করে বললো, তুমি ঠিক বলছো। অশিক্ষিতদের দোষ দিয়ে হবে, শিক্ষিতরাও তো করতেছে। সবাই করতেছে। আমি বুঝি না দোষটা তো সব তো দেখি আমাদের। আমরা এমন হইলাম কেন?
বাবার এ প্রশ্নের উত্তর আমি জানি। কিন্তু তাকে দিতে মন চাচ্ছে না। উনি আবার আগামী বছর দ্বিতীয় হজ্ব করার স্বপ্ন দেখছেন।
শুভ ব্লগিং
আইসো গাঁজা টানি
একসময় এলুমিনিয়ামের বাজারমূল্য রূপার চেয়েও বেশী ছিলো। কোনো রাজকীয় অনুষ্ঠানে রাজা বা তার পরিবারের লোকজনদেরকে এলুমিনিয়ামের চামচ দেয়া হতো এবং অন্যান্য অতিথিদেরকে দেয়া হতো রূপার চামচ। তখন রাজার টাকশাল থেকে শুরু করে বনেদী ঘরের সুন্দরী রমনীর অলংকারে এই ধাতুটি শোভা পেতো। অথচ এই এলুমিনিয়াম পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী পাওয়া যায় এমন তিনটি মৌলিক পদার্থের একটি। শুধুমাত্র বক্সাইট থেকে এলুমিনিয়ামের আলাদা করা বেশ কষ্টসাধ্য ও ব্যায় বহুল হবার কারনেই তখন এমন অবস্থা ছিলো।
যদিও ইলেক্ট্রোলাইট পদ্ধতির অভূতপূর্ব উন্নয়নের ফলে এলুমিনিয়ামের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন পরবর্তিতে বেশ সহজলভ্য হয়ে যায় তারপরও প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা ও জার্মানি তাদের এয়ারফোর্সের উন্নয়নের জন্য এলুমিনিয়ামের ব্যাবহার ব্যাপকভাবে শুরু করে। হালকা এবং ক্ষয়রোধী হবার কারনে বেশ প্রচলন ছিলো এখনো। যদিও বিমান তৈরীতে এলুমিনিয়ামের ব্যাবহার কমে গেছে তারপরও গেরস্থ ঘরের পাঁকা রাধুনীর কাছে এলুমিনিয়ামের পাত্রের কদর এতটুকু কমেনি।
মনে পড়ে গ্রামীন ফোনের সিআইসি প্রজেক্ট যখন চালু হয় তখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধীর গতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষদের জন্য সেবা দেয়াটা একটু দুস্কর ছিলো। বিশেষ করে খালবিল সংলগ্ন বা সপ্তাহে একবার হাটের সমাগম ঘটে এমন জায়গায় নেটওয়ার্ক নিয়ে বেশ বিপাকে পড়তে হতো। আবার এমন প্রত্যন্ত অঞ্চলে নির্দিষ্ট কোনো দিনে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের গতি বাড়াবার জন্য টাওয়ারে অতিরিক্ত রিসোর্স বিনিয়োগ করা সেসময়ে কারো জন্যই সাশ্রয়ী ছিলো না। তখন প্রায় সবার হাতেই নোকিয়ার টিপ মোবাইল। টাচস্ক্রীনের মোবাইলের নামগন্ধটি নেই কোথাও। তখন সমাধান হিসেবে আমি ইয়াগী উডা এন্টেনার একটা মডেল বানিয়ে বললাম কাজ হতে পারে। লম্বা খুটির মাথায় লাগিয়ে কোএক্সিয়াল ক্যাবেল আর হোল্ডার দিয়ে নেটওয়ার্ক দুর্বলতার সাময়িক সমাধান হতে পারে। তখন এই এন্টেনাগুলো বিক্রী হতো ২০০ টাকার মতো। আমার নিজ হাতে যেটা বানিয়েছিলাম সেটার খরচ মাত্র ৭৫ টাকা। এর মধ্যে লোকাল বাসে করে বংশালের মার্কেটে যাওয়া আসাও ছিলো। ইয়াগী উডা এন্টেনা বানানোর প্রধান অনুষঙ্গই ছিলো এলুমিনিয়ামের পাইপ। এটা ২০০৭ এর দিকের কাহিনী হবে।
এমন না যে এগুলো বাজারে ছিলো না বা এগুলো সম্পর্কে মানুষ জানতো না। মানুষের প্রয়োজনই বাধ্য করে নতুন বিষয় নিয়ে ভাবতে এবং পন্থা বের করতে। এর পেছনের গুঢ় রহস্য একটা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। ধরা যাক মধ্যযুগে ইহুদী আর ইসলামের প্রভাবে এলকোহলের প্রচলন পুরো বন্ধ হয়ে গেলো। আল রাজী নিতান্ত ধার্মিক হয়ে এলকোহলের বিশুদ্ধ সংশ্লেষ প্রক্রিয়া বের না করতেন তাহলে কি হতো?
তার আগে জেনে নেই আসলে এলকোহলটা কি? আমরা যে সুমিস্ট ফল খাই তার মধ্যে প্রচুর প্রাকৃতিক গ্লুকোজ থাকে। এই গ্লুকোজ যখন ঈস্টের সংশ্পর্শে আসে তখন একধরনের এনজাইম নিঃসৃত হয় এবং বিক্রিয়া করে ইথানলের সৃস্টি হয় এবং তার ওপর কার্বন ডাই অক্সাইডের ফেনার সৃষ্টি হয়। তাই কোনো পচনশীল আম বা ভাতের মাড়ে পঁচে গেলে তার ওপর ফেনার অস্তিত্ব থাকলেই বুঝতে হবে সেখানে ইথানলের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেটা যদি খান তাহলে নেশা ধরবে না কারন এলকোহলের পরিমান তাতে খুব কম পরিমানে আছে। এই ইথানলের পরিমান বাড়ালেই এটা বেশ ভালোমানের মদ হবে।
ইথানলের বেশ কিছু উপকারী গুন আছে। যখন এন্টিবায়োটিক ব্যাপারটার প্রচলন ছিলো না বা যুদ্ধের সময় এর অভাব দেখা যায় তখন ইথানলের প্রয়োজন পড়ে যুদ্ধক্ষেত্রে ক্ষত সারাই এবং ডিসইনফেকশনে। এছাড়া ক্যামিস্ট্রির অনেক বিক্রিয়াতে এর অনুঘটক হিসেবে শুরু করে দ্রব্য, দ্রাব্য হিসেবে এর প্রচলন। আমাদের সভ্যতার বিকাশ বিশেষ করে রসায়ন ও চিকিৎসা শাস্ত্রে একটা অন্ধকার সময় এখনো বিরাজ করতো।
তবে নেশাজাতীয় দ্রব্য হিসেবে এ্যালকোহলের ক্ষতির কথা সর্বজনিবেদিত। কিছুদিন আগে গবেষনায় প্রকাশিত যেকোনো পরিমানের এলকোহলই শরীরে জন্য ক্ষতিকর। এবং ইউরোপীয়ানদের গড় আয়ু ঈর্ষনীয় হলেও এটা আরও বেশী হতো যদি তারা এলকোহলের আসক্ত না হতো। এই এ্যালকোহল আসক্তির কারনে তারা স্বাস্থ্য ও সামাজিক দিক দিয়ে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
সেক্ষেত্রে অনেক বড়াই করতে পারেন যেসব দেশে এ্যালকোহল নিষিদ্ধ তারা খুব বুঝি ভালো আছে। এটাও মিথ্যা। ২০১৪ সালের এক মেডিক্যাল সমীক্ষায় দেখা যায় যে পুরো বিশ্বে এমফিটামিনে আসক্ত হয়ে যতজন মানুষ ইমার্জেন্সিতে যায়, তার ত্রিশ ভাগ ঘটে সৌদী আরবে। ইসলামী বিপ্লবের পর ইরানে মদ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ হলেও সে দেশের জনসংখ্যার ২.৬ শতাংশ হেরোইন গাজা এমফিটামিন ম্যাথ স হ অনেক মারাত্মক ড্রাগে আসক্ত।
প্রশ্ন আসতে পারে মানুষকে কেনো নেশা করতে হয়। এটা কি জেনেটিক? প্রত্নতত্ববিদরা খুজে বের করেছেন আজ হতে প্রায় ৫০০০ থেকে ৬০০০ বছর আগে চীনারা এলকোহলের সংশ্লেষ করতে পারতো এবং বীয়ার জাতীয় পানীয় নিয়মিত পান করতো। তারও আগে ঈজিপশীয়ানরা, হিসাব করলে ১২০০০ বছর আগের ঘটনা, তারা তাদের শস্যাদী ঘরে তুলে বাড়তি অংশ গেজিয়ে মদসমতুল্য এলকোহল সমৃদ্ধ পানীয় পান করতো। যদিও তাতে এলকোহলের পরিমান বর্তমান সময়ের মতো এত বেশী ছিলো না, কিন্তু তা পান করেই টাল হয়ে থাকতো।
এলকোহল বেশ ক্যালোরী সমৃদ্ধ হওয়ায় এটার পুস্টিগুন আছে বৈকি। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের মধ্যে মেসোমোর্ফিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এদের দেহ ক্যালোরী থেকে গ্লুকোজ সংগ্রহ করে সরাসরি মেটাবোলিজমের কাজে ব্যায় করতে পারে। দেহের গঠনে বেশ শক্তিশালী, স্পার্টান এ্যাথলেট যাকে বলে। অনেক প্রাইমেট আছে যাদের মধ্যে উচ্চ ক্যালোরীর খাবার বেশ কাজে দেয়। উচ্চ মেটাবোলিক হার বজায় রাখতে এ্যালকোহলের বিকল্প আর কি হতে পারে। যদিও মানবদেহে এলকোহলের ক্রিয়া একটু বেশী বিনোদনমূলক, পুষ্টিগত দিকের থেকে একটু কমই বা চলে।
আজ হতে ১২ -১৩ হাজার বছর আগে যখন টিভি ইন্টারনেট ইলেক্ট্রিসিটি কিছুই ছিলো না। তখন গরীব শ্রান্ত কৃষক উদাসী মনে আকাশের তারাদের পানে তাকিয়ে পাত্রের গেজানো তাড়িতে চুমুক দিয়ে নিজের কষ্ট ভুলতো। অথবা নতুন বিয়ে বা নবান্নের আনন্দকে আরেকটু ভিন্ন মাত্রা দিতে সাময়িক উত্তেজনার লোভে একটু মদে চুমুক দিলে দুনিয়া তো উল্টে যাচ্ছে না তাই না!
হয়তো এসব কারনেই আমরা নিয়েনডারথাল থেকে আলাদা হতে পেরেছি, বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষ হতে পেরেছি। নইলে বানর হয়ে দেখা যেতো ঐ গাছের শাখা প্রশাখায় ডিগবাজী খেতাম।
প্রয়োজন জিনিসটা এমনই একটা অনুষঙ্গ যেটা কিনা সভ্যতার মোড় ঘুরিয়েছে সবসময়ই। জেনোর ছাত্র লিউসিপিয়াসের দর্শনানুসারে কোনো কিছুই দৈব্যক্রমে ঘটে না কিন্তু সবকিছুই ঘটে কোনো কারনে এবং প্রয়োজনে। এ্যারিস্ট টল এই যৌক্তিক প্রয়োজনীয়তাকে একটু স্পস্টবোধক রূপ দিতে গিয়ে বললেন পারস্পরিক বিপরীতার্থক বক্তব্যের একটি সত্য হলে অপরটি অবশ্যই মিথ্যা হবে। এ থেকে ডিডোরাস ক্রোনাস চারটা ধাঁধাঁর জন্ম দেন।
যদিও এরিস্ট টল সে ধাঁধাঁগুলোকে বেশ ভালোভাবেই খন্ডান সাগরের যুদ্ধের উদাহরন টেনে, কিন্তু সব কথার মধ্যে একটা ব্যাপার খুজে পাওয়া যায় না সেটা হলো যদি ১২০০০ বছর আগে এলকোহলের ব্যাব হার না জানতাম বা এলুমিনিয়ামের সংশ্লেষ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকতাম, তাহলে কি হতো?
আকাশে কি প্লেন উড়তো না? যুদ্ধাহতরা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে গ্যাংগ্রীনে মারা যেতো? নতুবা কেউ না কেউ পরে সেটা আবিস্কার করতোই?
তার চেয়ে বড় কথা আবিস্কার তো হয়েই গেছে, এখন এটা ভেবেই বা লাভ কি?
ঠিক এ কারনেই কি আমরা জাতি হিসেবে কোনো কিছুর আবিস্কারক হতে পারছি না?
একটার সাথে একটা খুব সূক্ষ্ম সংযোগ আছে বৈকি!
স্মৃতিতে গত ফুটবল বিশ্বকাপ ২০১৮ রাশিয়া
আসছে বিশ্বকাপ ফুটবল
বিশ্বকাপ ফুটবল আসন্ন। এবারের বিশ্বকাপ হবে রাশিয়ায়। বিশ্বকাপ ফুটবলকে বলা হয়ে থাকে, ‘বিগেস্ট শো অন দ্যা আর্থ’। সারা পৃথিবীকেই এই পুরো একটি মাস মোহাবিষ্ট করে রাখবে ফুটবল। একটি মাস শুধুই ফুটবলের। আমাদের দেশেও বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা মোটেও কম নয়, বরং অনেকক্ষেত্রে তা অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর থেকেও বেশি। বিভিন্ন দেশের রঙবেরঙের জাতীয় পতাকা এসময় উড়তে দেখা যায় দেশের সবখানে- গ্রাম গঞ্জ, শহর বন্দর সর্বত্রই। লোকজন দল বেধে সড়কের মোরে মোরে ভিড় ক’রে লাইভ ম্যাচ টিভিতে উপভোগ করে। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হয় শুধুমাত্র বিশ্বকাপ উপলক্ষেই। চায়ের দোকান, লোকাল বাস, অফিস আদালত, রোয়াক, পার্কের বেঞ্চ সবখানে শুধু ফুটবল ফুটবল আর ফুটবল। সত্যি, আমাদের দেশের আপামর মানুষের জন্যে দারুণ আনন্দের একটি মাস, বিশ্বকাপ ফুটবলের এই একটি মাস।
মনে পড়ছে, বিগত কোনও এক বিশ্বকাপে একবার সেলুনে চুল কাটতে গিয়েছিলাম, এসময় নরসুন্দর মহাশয় সেখানে উপস্থিত জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে ফুটবল নিয়ে এমন সিরিয়াস আড্ডা দেয়া শুরু করলো যে, আমার মনে হচ্ছিল, কোনও ফুটবল বিশ্লেষক গবেষক যেন আমার চুল কাটছে! চুল কাটায় তার আদতে কোনও মনোযোগই ছিল না, সব মনোযোগ ফুটবল নিয়ে আড্ডায়। কোনওরকম আর্মিদের মতো চুল ছোট ক’রে ছেটে দিয়েই বিদেয় করেছিল। হা হা হা।
ব্রাজিল আর্জেন্টিনা- দুভাগে পুরো দেশ বিভক্ত হয়ে যাবে। এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা সমালোচনা, তর্কবিতর্ক, বাদানুবাদ হবে দেশের সর্বত্রই। দুয়েক জায়গায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ভক্ত সমর্থকদের মাঝে তপ্ত বাক্য বিনিময় ও মৃদু হাতাহাতিও হবে কোথাও কোথাও।
***
এরিয়েল ওরতেগার জন্য ভালবাসা
আর্জেন্টিনা’র এরিয়েল ওরতেগা আমার অত্যন্ত পছন্দের একজন ফুটবলার। এ শুধুই তাঁর ক্রীড়া নৈপুণ্যের জন্য। সত্যি বলতে কি, বল ড্রিবলিং কাটানোতে তাঁর মতো দক্ষ খেলোয়াড় আমি আমার এযাবতকালের জীবনে আর দ্বিতীয়টি দেখিনি! এ কাজটা খুব ভালোই পারতেন তিনি। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলে দেখেছিলাম তাঁর অতিমানবীয় ফুটবলের জাদু। দিব্যি পাঁচ ছয় জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে, ইচ্ছেমতো ডস দিয়ে দিয়ে বল নিয়ে বারবার টুপ করে ঢুকে পড়তেন প্রতিপক্ষের ডি বক্সে। একবার দুবার তিনবার- বারবার। বল পেলেই প্রতিপক্ষের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতেন তিনি। সহযে আর বল পা ছাড়া করতেন না, যেন বুটে অদৃশ্য কোনও আঠা লেগে আছে, তাতে লেপটে আছে বল। প্রতিপক্ষকে কাটানো ডালভাতের মতো সহজ ব্যাপার ছিল এরিয়েল ওরতেগার জন্য। চার পাঁচ জন একত্রে ঘিরে ধরেও বল ছিনিয়ে নিতে পারতো না তাঁর পা থেকে। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা বুঝে যেতো, এঁকে বৈধভাবে কিছুতেই থামানো সম্ভব নয়। তাই বারবার অবৈধভাবে থামিয়ে দেয়া হতো। বেশিরভাগ সময় দেখতাম প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা জামা টেনে ধরতো, ধাক্কা দিতো, পা’য়ে ল্যাঙ মারতো- এভাবে একের পর এক ফাউল করে বলতে গেলে তাঁকে তাঁর স্বাভাবিক খেলাটাইই খেলতে দেয়া হয়নি; আমি ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপের কথা বলছি। সেবার নেদারল্যান্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে রেফারি নেদারল্যান্ডের পক্ষে উলঙ্গ পক্ষপাতিত্ব করে অবৈধভাবে লাল কার্ড দেখিয়েছিল ওর্তেগাকে। সে ম্যাচে ড্যানিস বার্গক্যাম্পের শেষ মুহূর্তের গোলে হেরে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। মনে পড়ছে, ওরতেগার অশ্রুসিক্ত চোখে হতাশ হয়ে মাথা নিচু করে শ্লথ পা’য়ে হেটে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়া। তখন বুঝিনি, সেটাই হতে চলেছে আমার দেখা তাঁর শেষ পূর্ণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ! সেসময় সেভাবে ক্লাব ফুটবলের সাথে পরিচিত ছিলাম না। তাঁর পরের ২০০২ কোরিয়া জাপান যৌথ রাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে সম্ভবত এরিয়েল ওর্তেগা আর খেলার সুযোগ পাননি। পেলেও পুরো সময় খেলতে পারেননি। সম্ভবত বদলি খেলোয়াড় হিসেবেই খেলেছিলেন দুয়েকটি ম্যাচে। এরকম কিছু হয়েছিল।
জানি না এখনও তিনি খেলেন কিনা। আমি তাঁর চমকপ্রদ অতিমানবীয় ক্রীড়া নৈপুণ্যের সাক্ষী। ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে আমি হাই স্কুলে অধ্যায়ণরত কিশোর ছিলাম। খেলাধুলা দারুণ পছন্দ করতাম। বিশেষ করে ফুটবল, ভলিবল ও সবরকমের মারপিটের খেলা- রেসলিং, বক্সিং, জুডো, তায়কোয়ান্দো ইত্যাদি। ক্রিকেট অতোটা নয়। সব থেকে প্রিয় ছিল ফুটবল। সেবার বিশ্বকাপে একমাত্র এই এরিয়েল ওর্তেগা’র কারণেই কিছুতেই চাইতাম না, জুর্গেন ক্লিন্সম্যান, অলিভার কান, লোথার ম্যাথিউস, মাইকেল বালাক’র মতো দক্ষ খেলোয়াড়ে পূর্ণ প্রিয় জার্মানি ফাইনালের আগে আর্জেন্টিনা’র মুখোমুখি হোক।
সে সব দিন ধূসর অতীত আজ। নিটোল সুখের একগুচ্ছ স্মৃতি। অনেককিছুই ভুলে গেছি সময়ের সাথে সাথে, যেটুকু মনে আছে, তাও বিস্তারিত বা পুঙ্খানুপুঙ্খ নয়। কিন্তু আমার পরিষ্কার মনে আছে এরিয়েল ওর্তেগাকে, তাঁর অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন ক্রীড়া নৈপুণ্য- খেলার যে কোনও পর্যায়ে বল পেলেই প্রতিপক্ষের একাধিক খেলোয়াড়কে ইচ্ছে মতো নাচিয়ে কাটিয়ে ডি বক্সে বারবার ক্ষিপ্রগতিতে ঢুকে পড়া। এঁকেই বোধহয় জন্ম ফুটবলার বা জাত ফুটবলার বলা হয়ে থাকে! বেশ নস্টালজিক হয়ে উঠছি তাঁকে নিয়ে লিখতে গিয়ে। তাঁর সাথে সাথে আরও মনে পড়ছে, আমার ছেলেবেলার শহর- রাত জেগে বিশ্বকাপের ম্যাচ দেখা, বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে আনন্দ ফুর্তিতে মেতে ওঠা, বাড়ির ছাদে পতাকা ওড়ানো, খেলার পর বিজয়ী প্রিয় দলের পক্ষে মিছিলে শরীক হওয়া… আহ, কতো যে প্রাণোচ্ছল সুমধুর ছিল সেসব দিন! যাই হোক প্রিয় ফুটবলার এরিয়েল ওর্তেগা’র জন্য হৃদয় নিংড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, আজ আমার এ সামান্য লেখার মাধ্যমে। যেখানে যেভাবেই থাকুক তিনি, সুখদায়ক ফল্গুপ্রবাহে ভরা থাক তাঁর অনাগত প্রতিটি দিন।
***
এক কাপ ক্যাপুচিনোতে খেলা শেষ ও আরও কিছু প্রাসঙ্গিক এলোমেলো কথা
গেল বিশ্বকাপের কোনও একটি ম্যাচ (ঠিক কোন খেলা এ মুহূর্তে মনে পড়ছে না, সম্ভবত আর্জেন্টিনার কোনও একটা গ্রুপ পর্বের খেলা ছিল সেটা) ঢাকার গুলশানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিজাত রেস্টুরেন্টে বসে দেখেছিলাম। চিনি ছাড়া ভীষণ কড়া এক কাপ গরমাগরম ক্যাপুচিনো খেতে খেতে। এক কাপ ক্যাপুচিনোতেই আমার খেলা শেষ! হা হা হা। রাত দেড়টা পর্যন্ত সেদিন ছিলাম সেখানে। আমার খুব প্রিয় ছিল সেই রেস্টুরেন্টটি সে সময়। তখন নিয়মিতই যেতাম। খুব ভালো বিভিন্ন কফি পাওয়া যেতো। ছিল, যেতো বলছি, কারণ দীর্ঘদিন সেখানে আর যাই না। ঠিক আজকে থেকে চার বছর আগের কথা এগুলো। এখনও রেস্টুরেন্টটা আছে সেখানে, সম্ভবত সবই তেমনি চার বছর আগের মতোই আছে, যেমন দেখেছিলাম। কিন্তু আমি এর মাঝে আর বহুদিন সেখানে যাইনি। রেস্টুরেন্টটির নাম সঙ্গত কারণেই উল্লেখ করলাম না। ছোট্ট এক কাপ ক্যাপুচিনোর দাম তখন ছিল, একশত পঞ্চাশ টাকার মতো। এখন নির্ঘাত আরও বেড়ে গেছে। তবুও তুলনামূলক সস্তাই বলা যায়। ওর পাশে হোটেল ওয়েস্টিন’এ একবার একজন ক্যাফে লাত্তে খাইয়েছিল। আলোআঁধারিতে বিলটা এক ঝলক দেখেছিলাম, লাত্তে ছয়শত + টাকা!
যাই হোক রাত দেড়টা পর্যন্ত ছিলাম সে রাতে, সেই রেস্টুরেন্টে। আগেই বলেছি গুলশানের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্ট ছিল সেটা। ওখানে নিত্য বড় বড় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আসা যাওয়া করতো। অনেককে দেখেছিলাম। মাঝেমাঝে খুব ইচ্ছে করতো, ওদের দুয়েকজনকে ধরে গুলশান দুইয়ের মোড়ে নিয়ে যেয়ে ইচ্ছে মতো পেটাই। তখন বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের আগুন সন্ত্রাসের দগদগে ক্ষত আমার বুকে। তাই মাঝেমাঝে এই ইচ্ছা বড্ড মাথাচাড়া দিতো।
এ ব্যাপারে আর তেমন কিছু বলার নেই আমার। শুধু আবারও বলছি, এক কাপ ক্যাপুচিনোতেই আমার সেই খেলা শেষ হয়ে গিয়েছিল! হা হা হা। রাত দেড়টায় ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখে বাড়ি ফিরেছিলাম। কিন্তু কীভাবে ফিরেছিলাম, তা আজ আর মনে নেই। বাসে নাকি হেঁটে হেঁটেই- এখন কিছুতেই মনে পড়ছে না। তখন অবশ্য গুলশানের খুব কাছে উত্তর বাড্ডায় থাকতাম। আরও অনেক এলোমেলো স্মৃতি এসে ভিড় জমিয়েছে সেই সময়ের। আহা, চারটি বছর চলে গেছে মাঝখানে। এখন আমি আর্জেন্টিনা’র ঘোর সমর্থক। আর্জেন্টিনা’র খুব ভালো একজন পত্র মিতা ছিল আমার, এন্টোনেলা পিনেডা নাম ছিল ওর। ২০১৩ সালে পরিচয় হয়েছিল। অত্যন্ত ভালো ও উদার মনের মেয়ে ছিল। ও তখন অষ্টাদশী। বেচারি ওর বাবাকে কোনওদিন দেখেনি। ওর জন্মের পরপরই ওর বাবা মা’র ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ওর বাবা ওদের ছেড়ে চলে যায়। তারপর আর কোনও যোগাযোগ ছিল না তাদের মধ্যে।
আর্জেন্টিনা’র টেনিস খেলোয়াড় ডেভিড নালবান্দিয়ান আমার অত্যন্ত প্রিয় খেলোয়াড় ছিল। বেশ ক’বছর হলো অবসর নিয়েছেন। কের্টে কখনও হাসি ছাড়া তাঁর মুখ দেখিনি। খেলায় অনেককেই দেখতাম আম্পায়ার লাইনম্যান’র সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতে, অনেকে তো রীতিমতো মারমুখী হয়ে উঠতো এসব নিয়ে। ডেভিড নালবান্দিয়ানকে কখনওই এরকম করতে দেখিনি। এক্কেবারে একজন মাটির মানুষ যাকে বলে, নিরহংকার, ক্রোধহীন, জলের মতো সহজ সরল। সবকিছু হাসি মুখে সহজভাবে গ্রহণ করতো। বেশ ক’বার আম্পায়ার লাইনম্যান’র পরিষ্কার ভুল সিদ্ধান্তেও সামান্য খেদ প্রকাশ করতে দেখিনি তাঁকে। একই কথা মেসিসহ সকল আর্জেন্টাইনদের ব্যাপারেই সম্ভবত প্রযোজ্য। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবল, রাগবি, টেনিস সবখানেই আর্জেন্টাইনদের মতো সুসভ্যা জাতি আমি আর দ্বিতীয়টি দেখিনি। তাই আমি এখন পুরোপুরিভাবে ঘোর আর্জেন্টাইন সমর্থক। এই বিশ্বকাপেও প্রত্যাশা আর্জেন্টিনার ঘরে যাক বিশ্বকাপ ট্রফিটি, নাহলে আবার জার্মানিই শিরোপা জয়লাভ করুক। তা নাহলে ইংল্যান্ড বা পর্তুগাল। পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো’র মতো তুখোড় ফুটবলারের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফিটি ওঠা উচিৎও বৈকি। একই কথা লিওনেল মেসি’র ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সবই অবশ্য কথার কথা। আমার কথায় তো আর কিছুই নির্ধারণ হবে না। আমি তান্ত্রিক বা জ্যোতিষীও নই। তবে আর সবার মতো মেসি, রোনালদো’র ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখার জন্যে মুখিয়ে আছি। উঠুক না হয় দুজনের একজনের হাতে দারুণ শৈল্পিক দৃষ্টিনন্দন ট্রফিটি।
***
স্মৃতিতে ৯৪’র ফুটবল বিশ্বকাপ
৯৪ সালে আমি খুব ছোটো ছিলাম, মাত্র সাত আট বছর বয়স। তবুও ফুটবল বিশ্বকাপের কথা মোটামুটি একটু আধটু ভালোই মনে করতে পারি। বিটিভি’র যুগ সেটা। স্যাটেলাইট তখনও আসেনি। টিভিসেটই ছিল হাতে গোনা! যাই হোক খেলা শুরুর আগে এ্যান্ড্রু কিশোর’র গান হতো, দিতি ইলিয়াস কাঞ্চন টিভি পর্দায় নাচতো; ‘রূপসী দেখেছি আমি কতো/ দেখিনি তোমার মতো’, ‘বেলি ফুলের মালা গেঁথে এক প্রেমিক তার প্রিয়াকে ঘরে তুলেছে/ যৌতুক টাকাকড়ি পা’য়ে দলেছে/ যারা পুরুষকে মন্দ বলে/ তারা এমন পুরুষ কি দেখেছে…’। এইসব সিনেমার গান খুব ভালো লাগতো আমার। ঢাকাই সিনেমায় তখন ইলিয়াস কাঞ্চনের দারুণ জয়জয়কার। পাশাপাশি রুবেলও জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। আমাদের বাড়ির কাছেই একটা সিনেমা হল ছিল। মাঝে মাঝে বন্ধু বান্ধবদের সাথে সিনেমা দেখতামও বৈকি। বিশ্বকাপের খেলাও দেখতাম, কিন্তু বোঝার মতো পরিণত ছিলাম না। ফুটবল খেলার মোটেই কিছু বুঝতাম না, শুধু দেখতাম একদল হাফ প্যান্ট ও সাদা কালো জামা পরিহিত মানুষ ফুটবল নিয়ে এলোমেলো দৌড়াদৌড়ি করছে। খুব সম্ভবত খেলাটাকে তখন বিরক্তিকরই মনে হতো! সেবার ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন ও ইতালি রানার্স আপ হয়েছিল। চারিদিকে তখন ‘রোমারিও রোমারিও’ তোলাপার। এছাড়া খুব ভালো মনে করতে পারছি, বিশ্বকাপ শুরুর প্রাক্কালে ম্যারাডোনা’র ড্রাগ কেলেঙ্কারি, খেলা না খেলার দোলাচল নিয়ে সারা শহরজুড়ে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। হ্যা পরিষ্কারই মনে করতে পারছি ঘটনাগুলো, সমস্ত শহর তখন ম্যারাডোনাময়। সে কী উত্তেজনা ম্যারডোনা’কে নিয়ে। আমার ফুটবল পাগল পিতাও যারপরনাই উদ্বিগ্ন, সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যরাও। স্থানীয় অনেককেই ফুটবল নিয়ে আলোচনায় ফিফা, রেফারি, আমেরিকা (৯৪’র আয়োজক রাষ্ট্র) এর ওর গুষ্ঠি উদ্ধার করতে দেখেছি। অনেকের তো রীতিমতো শোকে জর্জর হয়ে কেঁদে ফেলবার মতো পরিস্থিতি। যাই হোক সেই প্রথম শৈশবে আমার বাবা ও পরিবারের সদস্যদের ম্যারাডোনাকে নিয়ে এই উদ্বিগ্নতা দেখে, মনে মনে ধরেই নিয়েছিলাম যে, ম্যারডোনা খুব সম্ভবত সম্পর্কে আমার চাচা। বিশ্বকাপ শেষ হলেই আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবেন। আত্মীয় না হলে কী আর আমার বাবার মতো এহেন কাঠখোট্টা মানুষও তাকে নিয়ে এমন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে! বেচারা সর্বত্র অস্থিরতা নিয়ে ঘোরাফেরা করছে, চেহারা যারপরনাই বিষণ্ণ, জীবনের প্রতি হঠাৎই যেন বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে। কারণ আর কি- ভাই বলে কথা। মায়ের পেটের না হলেও কোনওরকমের রক্তের সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে দুজনার মাঝে! আমি অনেকটা নিশ্চিতই ছিলাম এ ব্যাপারে যে, ম্যারাডোনা নির্ঘাত বাবার দিকের কোনও আত্মীয় আমার! হা হা হা।
ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ‘Show must go on…’(অনুষ্ঠান নিশ্চয় চলতে থাকবে)। কথাটা এই মানবজীবন’রই অত্যন্ত সার সত্য। কারও জন্যেই কিছু থেমে থাকে না। ৯৪’র বিশ্বকাপও ম্যারাডোনার জন্য থেমে থাকেনি। পরবর্তীতে দেখেছি, একই ক্রীড়া প্রেমিক মানুষগুলো মেতে উঠেছে ব্রাজিলীয় রোমারিও’কে নিয়ে। চারিদিকে ‘রোমারিও রোমারিও’ হৈ চৈ। এর মাঝে আরও অন্যান্য বেশ কিছু খেলোয়াড়ের নামের সাথেও এর ওর মুখে শুনে ভালো পরিচিত হয়ে উঠেছিলাম। যেমন- বেবেতো (ব্রাজিল), ক্যানিজিয়া, বাতিস্তুতা (আর্জেন্টিনা), রজার মিলা (ক্যামেরুন), রবার্টো ব্যাজিয়ো (ইতালি) ইত্যাদি। সেবার ব্রাজিল’র হাতে চতুর্থ বারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফি ওঠে। রানার্স আপ হয়েছিল ইতালি। খেলার ফলাফল এক্সট্রা টাইমসহ সম্পূর্ণ ম্যাচ গোলশূন্য, টাইব্রেকারে ব্রাজিল ৩ – ২ ইতালি। সেই বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল পাওয়া সেরা ফুটবলার রবার্টো ব্যাজিয়ো পেনাল্টি মিস করেছিল ফাইনালে। খুব সম্ভবত সেটাই এযাবতকালের একমাত্র গোলশূন্য বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচ।
এই তো মনে পড়ছে, শহরজুড়ে হৈ চৈ, ইতিউতি ব্যস্তসমস্ত আলোচনা মানুষের, বাবার চেহারায় উদ্বিগ্নতা; খেলা চলছে, ফুটবল… বিশ্বকাপ ফুটবল। শেষের কয়েকটি তথ্য ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে টুকে দিয়েছি। আগেই বলেছি, খেলা বোঝার মতো পরিণত তখন ছিলাম না আমি, মাত্র সাত আট বছর বয়স। অনেকটা এমনি এমনিই বসে থাকতাম টিভিসেটের সামনে, কিন্তু উল্লেখিত ঘটনাগুলো দারুণভাবে মনে আছে। আর মনে আছে দিতি, ইলিয়াস কাঞ্চনের সিনেমার গানগুলো, ‘বেলি ফুলের মালা গেঁথে এক প্রেমিক তার প্রিয়াকে ঘরে তুলেছে/ যৌতুক টাকাকড়ি পা’য়ে দলেছে/ যারা পুরুষকে মন্দ বলে/ তারা এমন পুরুষ কি দেখেছে…’। খেলার থেকে তখন এই গানগুলোই বেশি আকর্ষক ছিল আমার কাছে।
আহ্ ৯৪! আহ্ দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা! সময় যেন বহতা পানি। ২৪ বছর চলে গেছে মাঝখান, দু’ দুটি যুগ, অথচ মনে হচ্ছে যেন এই তো সেদিনেরই কথা!
***
স্পেনের জন্য শুভকামনা
স্পেন মরক্কো’র খেলা দেখছি। এই সেন্টার হলো বলে। স্পেন’র প্রতি আমার বিশেষ ভালো লাগা, শুভকামনা আছে। আমি স্পেনীয় টেনিস খেলোয়াড় কার্লোস ময়া’র খেলা ও ব্যক্তিত্বের একজন অনুরাগী ছিলাম। ছিলাম নয়, বরং বলি, এখনও আছি, কিন্তু তিনি অবসর নিয়েছেন বেশ ক’বছর আগে, আর টেনিসও সেভাবে ইদানীং দেখা হয় না। বিশ্ব ফুটবলে স্পেন ভীষণ রহস্যময় একটা দল। নিয়মিত অংশগ্রহণ যেমন আছে তাদের বিশ্বকাপে, তেমনি ফুটবল বোদ্ধারাও বরাবরই ফেভারিটদের তালিকায় রেখে আসছে স্পেনকে। সেটাই স্বাভাবিক। স্পেনিশ লা লিগা পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যয়বহুল ফুটবল টুর্নামেন্ট। সেখানকার রিয়েল মাদ্রিদ ক্লাবটি যেমন অভিজাত, ঐতিহ্যবাহী, তেমনি সবচেয়ে ধনী ক্লাব। বিশ্বের সবচেয়ে পরীক্ষিত, শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের সংগ্রহ করে থাকে দলটি বেশুমার অর্থের বিনিময়ে। এছাড়া অলিম্পিক, কনফেডারেশন কাপ, ইউরো ইত্যাদি অন্যান্য আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বেশ ভালো ফলাফল করে আসছে তারা। কিন্তু বিশ্বকাপে বরাবরই হতাশাজনকভাবে কোয়ার্টার ফাইনালের পর আর যেতেই পারতো না! অনেক পরে ২০১০ এই শেষমেশ শিকে ছিড়লো স্পেনীয়দের। প্রথমবারের মতো শিরোপা জয় করলো। আমার শৈশব, কৈশোরে স্পেনিশ স্ট্রাইকার রউল গনজালেস একজন প্রিয় ও আদর্শ ফুটবলার ছিলেন। ৯৮, ০২, ০৬- ববিশ্বকাপ মাতিয়েছিলেন তিনি, যে পর্যন্ত স্পেন ছিল। মাঠে ভালো খেলার পাশাপাশি সবসময় সহাস্যমুখ দেখেছি তাকে। ভীষণ অমায়িক, উদার মনমানসিকতায় সমৃদ্ধ চমৎকার একজন মানুষ তিনি, একজন ভালো খেলোয়াড় হবার পাশাপাশি। ক্লাব ফুটবলে স্বদেশী ক্লাব রিয়েল মাদ্রিদের হয়েও দৃষ্টিনন্দন ফুটবল শৈলী দিয়ে মন কেড়ে নিয়েছিলেন আমার মতো আরও কোটি কোটি ক্রীড়ামোদী দর্শকদের। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় স্মরণ করছি রউল গনজালেসকে।
এবারের স্পেনিশ দলটিও দারুণ খেলছে। ভরপুর শুভকামনা তাদের জন্য। স্পেনের হাতে আবার উঠুক বিশ্বকাপ।
মরক্কো দুটো ম্যাচ হেরে রেস থেকে আগেই বাদ পড়েছে। কিন্তু পর্তুগাল, ইরানের সাথে দুটো পরাজিত ম্যাচেই তারা প্রতিপক্ষের থেকে ভালো ফুটবল খেলেছিল, কিন্তু গেলটাই শুধু দিতে পারেনি (না দিয়েছে ইরানের জালে নিজের জালে নিজেই হেতে বল জালে জড়িয়েছিল একজন মরক্কান খেলোয়াড়) হা হা হা।
যাই হোক, ভালো পরিচ্ছন্ন উপভোগ্য উত্তেজনাপূর্ণ একটি ম্যাচ দেখার অপেক্ষা…
***
গতকালকের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা
গতকাল রাতে ঢাকার একটি বিশেষ স্থানে জায়ান্ট স্ক্রিনে আর্জেন্টিনা নাইজেরিয়া খেলা দেখছিলাম। কোনও স্টেডিয়ামের ফুল প্যাকড গ্যালারীর মতো ভিড় বেশ বড়সড় একটি মাঠে। তিল ধারণের জায়গাও নেই বলতে গেলে। সত্যি, আর্জেন্টিনাতেও এভাবে তাদের খেলা দেখবার জন্য খোলা মাঠ ভর্তি দর্শক মাঝরাত অবধি থাকবে কিনা এব্যাপারে আমি সন্দিহান! গতকাল রাতের খেলা দেখার অভিজ্ঞতা আমি কোনওদিন ভুলবো না। এক্কেবারে যেন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে চাক্ষুষ দেখছি খেলাটি। সিংহভাগ দর্শক আর্জেন্টিনার ঘোর সমর্থক। খেলা চলাকালীন মেসি, ম্যারাডোনা পর্দায় এলেই, চিৎকার চেঁচামিচি করে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে লাগলো তারা। অনেকেই ভুডুজেলা, বাঁশী, আর্জেন্টিনার পতাকা নিয়ে এসেছিল খেলা দেখতে। অনেকের গা’য়ে আর্জেন্টিনার নীল সাদা জার্সি। একেবারে মেলার মতো উৎসবমূখর পরিবেশ। আমিও হাফ প্যান্ট, টি শার্ট পড়ে হাজির। বড় দলের খেলা হলে আমি সাধারণত মিস করি না, খেলা দেখতে চলে আসি এই মাঠে। যা হোক খেলা শুরু হলো। প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে হলে এ ম্যাচে আর্জেন্টিনার জয়ের কোনও বিকল্প ছিল না। মনে মনে অনেকটা নিশ্চিতই ছিলাম, বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে আর্জেন্টিনা আফ্রিকান বা এশিয়ান কোনও দলের কাছে পরাজিত হবে না (এর আগে কখনও এরকম ঘটেনি)। প্রথম অর্ধের শুরুতেই মেসি জ্বলে উঠলো। ১৪ মিনিটে দারুণ এক গোল করে এগিয়ে দিলো আর্জেন্টিনাকে। আর অমনি অনাবিল উল্লাসে মেতে উঠলো সেই মাঠে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখতে আগত উপস্থিত দর্শকবৃন্দ। হৈ হৈ রৈ রৈ পড়ে গেল চারিদিকে। ভুডুজেলা, পটকা ফোটানোর শব্দে কান ঝালাপালা একেবারে। ‘মেসি মেসি’ চিৎকার উল্লাস সর্বত্র। ‘আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনা’ কলরব। এর খানিক পর শুরু হলো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। কী যে বিড়ম্বনা। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই খেলা দেখছিলাম, আরও অনেকের সঙ্গে। অনুমিত ছিল, এই বৃষ্টি দীর্ঘস্থায়ী হবে না। থেমে গেলে টি শার্ট খুলে মাথা ও শরীর যথাসম্ভব মুছে নেবো। এভাবেই ঝঞ্ঝাটে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ খেলা দেখলাম।
খেলা চলতে লাগলো। আর্জেন্টিনা ১-০ গোলের লীড নিয়ে খেলছিল। এভাবেই শেষ হলো প্রথমার্ধ।
***
শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ও আরও দুয়েকটি ছন্নছাড়া কথা
বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল শুরু হতে যাচ্ছে আজ। এ পর্যন্ত ভালো, সফল, নির্ঝঞ্ঝাট একটি বিশ্বকাপ সমাপ্তির দিকে চলেছে। আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, পর্তুগাল, যাদের শিরোপা জয়ের দৌড়ে এগিয়ে রেখেছিল ফুটবল বোদ্ধা বিশেষজ্ঞরা, তারা কেউ প্রথম কেউ দ্বিতীয় রাউন্ডের গণ্ডিও পেরোতে পারেনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে ব্যথিত হয়েছি, দ্বিতীয় রাউন্ডে মেক্সিকোর পরাজয়ে। খুব আশা করেছিলাম, ব্রাজিলকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে তারা। কিন্তু তা হয়নি। পরের দিকে খেলাই আর দেখিনি। ব্রাজিল প্রথম রাউন্ডের তৃতীয় ম্যাচ থেকে ছন্দময় ফুটবল খেলছে। আমার এই ব্রাজিল দলের সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড় গ্যাব্রিয়েল জেসুস। খুবই ভালো লাগে ওকে। প্রচুর পরিশ্রমী ও পরিচ্ছন্ন ফুটবল খেলে থাকে, ফাউল টাউল একেবারেই করে না, আর নেইমারের মতো ন্যাকামো ট্যাকামো তো নয়ই। ওর জন্য বিশেষ শুভকামনা। বড় ক্লাব দলে দেখতে চাই জেসুসকে।
রাশিয়ার উথ্থান চমকে দিয়েছে সারা বিশ্বকে। প্রথম রাউন্ডে দারুণ খেলেছে তারা, তবে সাবেক এক চ্যাম্পিয়ন দল স্পেনকে ২য় রাউন্ডে টাইব্রেকারে হারানোটা সবচেয়ে চমকপ্রদ। এই বিশ্বকাপের মাঠ থেকেই পুতিন আমেরিকার দীর্ঘ একক আধিপত্য ভেঙে আবার বিশ্বের (সোভিয়েত ইউনিয়ন যেমন ছিল) সমান্তরাল আরেকটি প্রধান পরাশক্তি হবার মিশনে নামবেন, বা ইতিমধ্যেই নেমেছেন বলে মনে হচ্ছে। ইদানীং রাশিয়াকে প্রায়শই আন্তর্জাতিক নানান বিষয়ে মত ভিন্নতা থেকে সরাসরি যুদ্ধ, আক্রমণ, সামরিক পদক্ষেপ ইত্যাদির ভয় দেখাতে দেখা যায় সারা বিশ্বকে। রাশিয়ানরা জাতি হিসেবে অত্যন্ত উন্নাসিক, বেপরোয়া, জেদি আর উগ্র স্বভাবের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ান সৈন্যরা জার্মানিতে পৌছে অত্যন্ত বর্বরতা ও স্থানীয় নারীদের ওপর ভয়াবহ পৈশাচিক শারীরিক অত্যাচার করেছিল। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসক যোসেফ স্ট্যালিনকে এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে, তিনি সরাসরি কোনওরকমের ভণিতা ছাড়াই বেমালুম বলে বসেন, “পাঁচ হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে যুদ্ধ করে জার্মানিতে গেছে আমার ছেলেরা। তারা স্বভাবতই এখন ক্লান্ত, এ সময় তাদের একটু আনন্দ ফুর্তির দরকার আছে বৈকি!”
যাই হোক, আজকে প্রথম খেলা উরুগুয়ে বনাম ফ্রান্স। দারুণ একটি ম্যাচ দেখার অপেক্ষা করছি। দুটো দলই সমমানের শক্তিশালী দল। তবে উরুগুয়ের রক্ষণভাগ আর্জেন্টিনার তুলনায় ঢের শক্তিশালী। ফ্রান্সকে গোল পেতে হলে প্রচুর ঘাম ঝরাতে হবে। বিগত খেলাগুলো দেখে আমি এই ম্যাচে উরুগুয়েকেই এগিয়ে রাখবো। ফ্রান্সের রক্ষণভাগ ত্রুটিপূর্ণ। আর্জেন্টিনা প্রচুর সুযোগ তৈরি করেছিল গত ম্যাচে। তবে আবারও বলছি, আমার কথায় বা ভাবনায় তো আর কিছু হবে না, হয়ও না! নইলে ৯৪ সাল থেকে মেক্সিকো কেন কোয়ার্টার ফাইনালের গণ্ডিই পেরোতে পারে না! হা হা হা। আমার তো প্রতিবারই মনে হয়, ব্রাজিল, ইতালি, জার্মানিকে হারিয়ে দেবে তারা, শ্রেয়তর দল হিসেবেই। কিন্তু কোনওবারই তো তা হয় না!
পরের খেলা ব্রাজিল বনাম বেলজিয়াম। এটাও খুব বড় একটা ম্যাচ হতে চলেছে। উভয়ই ফিফা রেটিংয়ের শীর্ষস্থানীয় দুটো দল। ব্রাজিল ১, বেলজিয়াম ৩। এখানেও আমি এগিয়ে রাখবো বেলজিয়ামকে। এ পর্যন্ত বেলজিয়ামকেই আমার ব্রাজিলের থেকে পরিণত, সুগঠিত, শ্রেয়তর দল মনে হয়েছে। মনে পড়ছে ২০০২ সালের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ড বা কোয়ার্টারে ফাইনালেই উভয় দল খেলেছিল, দারুণ লড়াই হয়েছিল সেই ম্যাচে। সেখানে তখনকার বেলজিয়াম অধিনায়ক উইলমোস্ট’র শুরুর একটি গোল অফসাইড বা অন্য কোনও কারণে রেফারি কর্তৃক বাতিল করা হয়, পরবর্তীতে এটা নিয়ে অনেকের সাথে, কিংবদন্তী আর্জেন্টাইন ফুটবলার দিয়েগো ম্যারাডোনাও রেফারির সমালোচনা করেছিল। এই বিশ্বকাপেও রেফারিং নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে, হবেও। এটাসহ আসন্ন প্রতিটি বিশ্বকাপেই হবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, “মানুষ মাত্রই ভুল করে”। আর রেফারিরাও তো মানুষই, রোবট কিংবা ফেরেশতা নয়!
***
সেমি ফাইনাল লাইনআপ চূড়ান্ত, সমাপ্তির কাছে বিশ্বকাপ
বিশ্বকাপের সেমি ফাইনাল লাইন আপ চূড়ান্ত হয়ে গেছে। ফ্রান্স বনাম বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড বনাম ক্রোয়েশিয়া। দুটো সেমি ও পরবর্তীতে ফাইনাল ছাড়াও, ফাইনালের আগে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ খেলা হবে। সবমিলিয়ে শেষ চারটি ম্যাচের অপেক্ষা এখন সবার। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচটা কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিক একটি ম্যাচ ছাড়া আর কোনও গুরুত্ব বহন করে না- সাধারণ দর্শকের জন্যে যেমন, তেমনি সেমি ফাইনালে পরাজিত দেশ দুটির জন্যেও। আমি খুব খুশি হবো, বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়া’র মধ্যে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হলে। নতুন এক চ্যাম্পিয়ন দেখার জন্যে মুখিয়ে আছি। নতুন একটি দেশ চ্যাম্পিয়ন মানেই শিরোপাধারী দেশের কুলীন ক্লাবে আরেকটি নতুন নাম যুক্ত হওয়া। সেই কবে ১৯৬৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ড। সেই থেকে চির ফেভারিট হয়ে আছে তারা বিশ্বকাপ আসরে। এবার এই তালিকা আরও স্ফীত হোক।
বেলজিয়ামের সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি মনে হচ্ছে চার দলের মধ্যে। ফ্রান্স’র খেলোয়াড়রা রাফ, পাওয়ার ফুটবল খেলছে। উরুগুয়ের সাথে ম্যাচে প্রচুর ফাউল, নাটক, টাইম কিলিং ইত্যাদি অসাধুতা করেছে তারা। আমি কিছুতেই চাই না, ফ্রান্স ফাইনাল খেলুক। এছাড়া বিগত খেলাগুলো দেখে সার্বিকভাবে আমি বেলজিয়ামকেই শ্রেয়তর দল হিসেবে এগিয়ে রাখবো। তবে এটা যে মোটেও সহয হবে না, তা তো বলাই বাহুল্য। ২য় রাউন্ডের খেলায় আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ২-১ গোলে পিছিয়ে থেকেও পরপর তিন গোল করে ফ্রান্সের এগিয়ে যাওয়া ছিল বিস্ময়কর। যে কোনও সময় গোল করার দক্ষতা রয়েছে ফ্রান্স দলের। বেলজিয়ামকে জিততে হলে ডিফেন্স খুব শক্ত রাখতে হবে, প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে খেলোয়াড়দের। আর আমার মনে হয়, বেলজিয়ামের ডিফেন্স ফ্রান্সকে রুখে দিতে সক্ষমও বৈকি। দেখা যাক, কী হয়। খেলা তো আর অঙ্ক নয় যে, সূত্রানুযায়ী সব করলেই সঠিক সমাধান পাওয়া যাবে। ফলাফল যে কোনও কিছুই হতে পারে। দেখা গেল, আমার সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়ে বেলজিয়ামকে সেমি ফাইনালে ৫-০ গোলে হারিয়ে দিল ফ্রান্স! হা হা হা।
ইংল্যান্ড ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে আমি ক্রোয়েশিয়াকে এগিয়ে রাখবো। ক্রোয়েশিয়া ইংল্যান্ডের থেকে ঢের শ্রেয় দল। ইংল্যান্ড দলটা অনেকটা ভাগ্যের সহায়তা পেয়ে সেমিফাইনালে এসেছে। তুলনামূলক তরুণ ও সাধারণ মানের একটি দল। এ পর্যন্ত তেমন কোনও শক্ত প্রতিপক্ষের সামনে পড়েনি তারা। কলম্বিয়া, সুইডেন দুটো দলই তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ ছিল। এবার সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়া দুটো দলের থেকে অনেকটাই দক্ষ, সুগঠিত দল। শতাংশের হিসেবে আমি আমি উক্ত ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে ৭০% বনাম ৩০% জয়ের সম্ভাবনায় এগিয়ে রাখবো। ক্রোয়েশিয়া চমৎকার দল। ওদের খেলা বরাবরই উপভোগ্য। মনে পড়ছে ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলতে এসেই তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিল তারা। ডেভর সুকার নামের একজন দারুণ ফুটবলার ছিল সেই দলে। ক্রোয়েটদের খেলার একটা দিক আমার খুব ভালো লাগে, তারা কখনওই সেভাবে ডিফেন্সিভ খেলে না। একাধিক গোলে এগিয়ে থাকলেও তারা সবসময় চেষ্টা করে গোল ব্যবধান আরও বাড়ানোর। শুভকামনা তাদের জন্য। পক্ষান্তরে ইংল্যান্ড, আগেই যেমন বলেছি, তুলনামূলক তরুণ অনভিজ্ঞ, সাধারণ দল। এই ইংল্যান্ড দল কিছুতেই গুণে মানে ক্রোয়েশিয়া’র সমকক্ষ নয়। তাদের জয় মানে নেহাতই বিশ্বকাপে আরেকটা অঘটনের জন্ম দেয়া।
ক্রোয়েশিয়া বা বেলজিয়াম’কে এই বিশ্বকাপের সম্ভব্য শিরোপা জয়ী দল হিসেবে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানিয়ে রাখছি।
সবমিলিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে দারুণ উপভোগ করেছি এই বিশ্বকাপ। প্রচুর গোল হয়েছে, প্রত্যেক ম্যাচেই গোল হয়েছে, আর এবারের বিশ্বকাপেই খুব সম্ভবত প্রথমবার কোনও গোলশূন্য ম্যাচ দেখতে হয়নি আমাদের। রাশিয়াকে আন্তরিক ধন্যবাদ দুর্দান্ত একটি বিশ্বকাপ উপহার দেবার জন্য। গতকাল রাতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ট্রাইবেকারে দুঃখজনকভাবে হেরে গেছে তারা। তবে তাদের খেলা দারুণ উপভোগ্য ছিল। রাশিয়ানরা খেলোধূলায় বরাবরই ভালো। অলিম্পিক গেমসে প্রচুর পদক পায় তারা। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গড়া অন্যান্য দেশও বিভিন্ন খেলাধূলায় ভালো করে আসছে নিয়মিতভাবে।
যাই হোক এখন অপেক্ষা সেমি ফাইনালের…
(সংগ্রহ)
কথোপকথন -০৪
ক্রিং… ক্রিং… ক্রিং……….
–হ্যালো … কি বলবে বলো?
–কি বলবো মানে? সেই কখন থেকে কতবার ফোন
দিয়েছি হিসেব করছো? তুমি ফোন রিসিভ করোনি
কেন? কি হয়েছে তোমার? কিছু বলোনি কেন?
–কই না তো কিছু হয় নি। এমনই।
–তাহলে আমার সাথে কথা বলোনি কেন? কোনো এস এম এসও করোনি?
— এমনই। মন চায় নি তাই।
— ও…. মন চায়নি নাকি তুমিই কথা বলবা না। কোনটা?
কথা বলবা না সেটা তো বলে দিলেই পারো।
— কি বলার আছে?
— তাই না, কি বলার আছে।
তুমি কি আমার সাথে এই রিলেশনটা রাখতে চাও না?
–না চাই না! এই কথা বলার সাহস নেই বলেই তো এত
অভিনয়।
— চয়ন, তুমি কি সত্যি বলছো? কথা বলবা না, রিলেশন রাখ বা না?
— হুম সত্যি ই বলছি…..।
— চয়ন তুমি তো ঠিক আছো। এমন কেনো করছো।
কি হয়েছে তোমার, বলো আমাকে, প্লীজ বলো।
— কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি।
— না চয়ন, তুমি ঠিক নেই। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, তুমি এমন করবা,আমাকে এভাবে ঠকাবে তুমি কখনো ভাবিনি।
আমি কখনো ভাবিনি চয়ন, কখনো না….।
— হ্যালো –হ্যালো–হ্যা—লো। নিশ্চুপ…..।
০৭/০৭/১৯
দেখা হইয়াছে চক্ষু মিলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া – ২
১। ‘How to change your life’ বইটি একবার দ্বিতীয় সংস্করণে নামের বানান ভুল করে ‘How to change your wife’ হয়ে বের হয়েছিলো, তারপর সেটা সাথে সাথেই বেস্ট সেলার! পরে সেটা তারা কারেকশন করেছিল। তাতে কি? ব্যাপক বিক্রিই প্রমান করে সবাই এরকম একটা বই অনেক দিন থেকে খুঁজছিল।
>আহা এরকম যদি সত্যি একটা বই থাকত!
২। কয়েকদিন আগে ক্রিকেটার নাসির আর তার প্রেমিকা শোভার অডিওর কয়েকটা ভার্সন রিলিজ পেয়েছিল। বিশেষ করে শোভার কিছু অডিও। যারা বাংলা ভাষার সব ধরনের গালগালীর সংকলন চান তাদের জন্য আমি এটা চোখ বন্ধ করে সাজেস্ট করলাম। একবার শুনলে আপনার মনে হবে বাংলা ভাষার সব ধরনের গালীর উপর PhD করে ফেলেছেন। YouTube এ আছে।
>কষ্ট করে খুঁজে নিন। কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না! আর এই কেষ্ট যা তা কেষ্ট না।
৩। আপনি কি জানেন গুয়ামের আইন অনুসারে কোন কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারেনা!! তাই কিছু লোক আছে যারা পয়সার বিনিময়ে কুমারিত্বের অভিশাপ মুক্ত করার কাজ করে!! মেয়ের বাবা-মা সাধারনত এই কাজের জন্য অনেক টাকা খরচ করেন!! মজার বিষয় হলো এরা কাজ শেষে সার্টিফিকেটও দেয়!!
>সেইদিন খুব ইয়ার দোস্ত টাইপের একজন উপরের নিউজটা শেয়ার করে খুব দুঃখ করে আমাকে বললঃ কেন যে এই দেশে জন্ম নিলাম! এত দিন কি সব উল্টা পাল্টা চাকরী করছি! আমি এর আক্ষেপ শুনে একদম বাক্যহারা!
৪। বর্তমানে আমরা কেবল পোশাকে আধুনিক হচ্ছি, মানসিকতায় না। মেয়েদের স্লিভলেস পরা, সর্ট ড্রেস পরা বা স্কুটি চালানোই কেবল যদি আধুনিকতা হয় তবে সেটা ভুল, অবশ্যি ভূল। আমরা অনুকরণ করেই দ্রুত বড় হতে চাই, একবারে গাছের মগডালে ওঠার স্বপ্নের মতো, সিড়ি বাদ দিয়ে লিফটে উঠার মতো! এদিকে যে পাছার কাপড় খুলে কখন সবার অজান্তেই পড়ে গেছে সেদিকে কোন খবর নাই। আধুনিক হবেন সমস্যা নেই, বেঁচে থাকতে হলে আধুনিক হতে হবে এটা কে আপনাকে বলল?
>আপনি এই অদ্ভুত ধ্যান ধারনা নিয়ে আধুনিক না হয়ে আদিম হয়ে যাচ্ছেন। পাশ্চাত্যের ন্যাংটো সংস্কৃতি আমাদের এত সুন্দর সংস্কৃতির সাথে মিশিয়ে এটাকে আরও ন্যাংটো করে দিয়েছেন, সেটা কি জানেন?
৫। সেদিন যেন কোথায় ইন্টারনেটে পড়েছিলাম, এয়ারটেলের অ্যাড দেখে বন্ধুত্ব শিখো না, তাহসান এর নাটক দেখে প্রেম শিখো না। এগুলোতে হাজারটা জ্ঞানের কথা থাকতে পারে, তবে সবার অভিভাবক টাকা কিংবা অবস্থানের কথা কখনো লেখা থাকে না।
বাস্তবতা হলো, তোমার কাছে যখন মধু থাকবে তখন অসংখ্য শুভাকাংখী তোমার খোঁজ খবর নিবে, ভালো মন্দ জানতে চাইবে। এগুলোর অ্যাটিওলজী তুমি না, তোমার কাছে থাকা মধুটা। তাই নিজের কাছে থাকা এই মধুর ডিব্বাটার যত্ন নিও। মনে রেখ, ভোমরার অভাব না থাকতে পারে পৃথিবীতে, মধূ কিন্তু সবার কাছে থাকে না। কষ্ট করলে ঐ মধু সংগ্রহের জন্য করো, আশে পাশের ভোমরা গুলাকে আটঁকে রাখতে করো না।
>কথাটা দারুন বাস্তব এবং সত্য মনে হলো আমার কাছে । আপনার কি মনে হয়?
৬। অবশেষে সিভিতেও…সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ব্যক্তির স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘গ্র্যাজুয়েশনের পর স্বাভাবিক ভাবেই চাকরি খোঁজা একটা নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই এই অফিস ঐ অফিস ঘুরে ঘুরে সিভি ড্রপ আর ইন্টার্ভিউ দিতে দিতে এখন আমি বেশ বিরক্ত। গতকাল এক অফিসে গেলাম সিভি জমা দিতে, সেখানে এক আপুর সিভি নিয়ে একটা কথায় আমি বেশ অবাক হলাম। উনার মতে আমার দেয়া সিভি সেক্সি না। এখন মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরছে… আপা সিভি সেক্সি হয় কেমনে? সিভিতে দেয়া ছবিতে ক্লিভেজ দেখায়, নাকি লিখাগুলোয় আমার চাকরীর এক্সপেরিন্সের বদলে কারো সাথে শুয়ে জব পাওয়ায় পার্রদশী কিনা তা দেখিয়ে? অবাক লাগে যখন প্রফেশনাল কোনো সিভির বদলে আজকাল মানুষ সেক্সি সিভি খুঁজে। হায়রে মানুষ!! এখন সিভিকেও সেক্সি হতে হবে!!! নাহলে জব কাছে আসবে না!’
>ভাষাটা সুমধুর হলেও যা লিখেছে সেটা পড়ার পর থেকে আমি বাক্যহারা। এই বিষয়ে আমার কিছু বলা সম্ভব না। আপনাদের কি মন্তব্য?
৭। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ নিয়ে বিতর্ক কিংবা সমালোচনার শেষ নেই। গতবছর ফাইনালের মঞ্চের নাটকীয়তাকে ঘিরে কম বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। আর এবার অনুষ্ঠানটির ফাইনাল পর্ব শেষ হতে না হতেই সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে ফাইনালিস্টদেরকে নিয়ে। জনপ্রিয় মডেল এবং বিজ্ঞাপনের অভিনেত্রী ফারিয়া শাহরিন সম্প্রতি শেষ হওয়া ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানটি নিয়ে তার অভিমত শেয়ার করেছেন। দেশের একটা দৈনিক পত্রিকা এটা তুলে দিয়েছে। তিনি লিখেনঃ-
“আমরা কেন এই মেয়েগুলাকে নিয়ে হাসতেছি? ওদের কী দোষ। ওরা তো জেনেই আসছে যে ওদের চেহারাটাই আসল। ওদের কি শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হয়েছিল নিবন্ধনের আগে? আমার এ নিয়ে সন্দেহ আছে। আর যদি নাই দিয়ে থাকে ওদের কী গ্রুমিং করাইছে বা কারা করাইছে যারা ‘হাউ আর ইউ’ বলার পর ‘আই এম ফাইন’ পর্যন্ত বলা শিখাই নাই?
এতো ক্ষ্যাত মেয়েরা কীভাবে ফাইনালিস্ট হয় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে? বিচারকরা কীভাবে ওদের এতো দূর আনলো? যতদূর জানি যে প্রতিযোগিতায় অনেকগুলো রাউন্ড থাকে। তাহলে এতোগুলো রাউন্ড কীভাবে এই মেয়েগুলা শেষ করে ফাইনালে আসলো? এই দেশে সবসময় ক্ষমারই মূল্যায়ন হয়, যোগ্যতার না। তাই এসব মেয়ে ওইটা জেনেই আসছে। ব্যর্থতা এসব সংগঠকদের যারা এত বড় একটা প্ল্যাটফর্মকে কমেডি শো বানানোর সুযোগ করে দেয়”!
>মেয়েটার কথার খুব যৌক্তিক তাৎপর্য আছে আর তাই এটা এখানে তুলে দিলাম।
৮। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর বুকে হাত দেয়ার জন্য আটক করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে। তিনি রোববার বিমানে চড়ে হিউস্টন থেকে আল বাকার্কি যাচ্ছিলেন। এ সময় তার সামনের সারিতে বসা একজন নারীর বুকে দু’বার হাত দেন। এ অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম ব্রুস আলেকজান্ডার। তিনি বলেছেন, ‘নারীদের অঙ্গ স্পর্শ করা দোষের কিছু না। কারণ, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নিজে এ কথা বলেছেন’। এবিসি নিউজকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। ঘটনার শিকার নারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। তিনি কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন প্রথমবার হঠাৎ করেই তার বুকে ব্রুসের হাতের স্পর্শ লেগে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার একই ঘটনা ঘটার সময় বিপত্তি বাধে। আদালতের তথ্য অনুযায়ী, ফ্লাইট চলাকালীন ওই মহিলার ঝিমুনি এসে গিয়েছিল। তখন ব্রুস আলেকজান্ডার আবার তার বুক স্পর্শ করেন। এ সময় ওই নারী ঘুরে দাঁড়ান। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তিনি এ কাজ করছেন? এবং তাকে অবশ্যই এসব কাজ বন্ধ করতে হবে। এ নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে বিমানের স্টুয়ার্ডরা ওই নারীর সিট বদল করে দেন। বিমানটি আলবাকার্কিতে অবতরণের পর পুলিশ ব্রুস আলেকজান্ডারকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে বলেন, যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন মেয়েদের গোপন স্থানে হাত দিলে কোন দোষ নেই। পুলিশ তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছে। মঙ্গলবার দিনের আরো পরের দিকে তাকে আদালতে তোলার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারাভিযানের সময় একটি অডিও টেপ প্রকাশিত হয়। সেখানে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়ে ছিল যে, সেলেব্রিটিরা চাইলে নারীদের অঙ্গ তাদের অনুমতি ছাড়াই খামচে ধরতে পারে। তার এই মন্তব্যের জন্য তার নিজের দলসহ সারা দেশে প্রবল সমালোচনা হয়।
>লেখাটার পড়ার পর আমাদের দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের কথা কেন যেন খুব করে মনে পড়ে গেল!
বর্তমান এবং সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আমার মতো একজন অতি তুচ্ছ আমজনতা কি ভাবে আর মন কি চায় সেটাই তুলে ধরার এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। পুরো লেখাটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত। নিজের জীবনের কাছ থেকে যে ঘটনা গুলি দেখে মনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে সেগুলি ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরে যাব যদি সময় ও সুযোগ থাকে। এই এক্সপেরিমেন্টের এটাই দ্বিতীয় লেখা পোষ্ট। আমার মাথায় সারাক্ষনই এরকম উল্টা পাল্টা লেখা ঘুরে……
এর আগের পর্ব পড়ুন:-
দেখা হইয়াছে চক্ষু মিলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া – ১
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুলাই ২০১৯
আমার ভাবনা – ০৩
বর্ণ প্রথা বলে ধর্মগ্রন্থ সমূহে কোন শব্দ বা টার্ম নেই। তবে কেন সেটাকে আমি স্বীকার করবো ?
উচ্চ বর্ণ ও নিন্ম বর্ণ নিয়ে পৌত্তলিক ধর্মে যে ভেদাভেদ রয়েছে আমি সেটাকে স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর মনগড়া কেচ্ছা ছাড়া কিছুই বলে মনে করি না।
বর্ণ প্রথা বলে ধর্মগ্রন্থ সমূহে কোন শব্দ বা টার্ম নেই। আছে ‘বর্ণাশ্রম’। শাব্দিক অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ‘বর্ণ’ শব্দটি এসেছে ‘Vrn’ থেকে; যার অর্থ ‘to choose’ বা পছন্দ করা অর্থাৎ পছন্দ অনুযায়ী আশ্রম বা পেশা নির্ধারণ করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের সমাজে এখন তা জন্মসূত্রে বিবেচনা করা হয়।
ছারপোকা
রাত গভীর হলে ওরা বেরিয়ে আসে।
শত যুগের ক্ষুধা নিয়ে বেরিয়ে আসে।
কফিনের পেরেক খুলে ঢুকে পড়ে নিঃশব্দে
আঁতুড়ে নগরের বিক্ষিপ্ত কবরের কোণায় কোণায়।
অস্থিমজ্জার সবটুকু রস চুষে খায় ওরা
সিডর,আইলা,ফণীর মতন দারালো দাঁত বসিয়ে।
নারীর অঙ্গ ছুঁয়ে যে দেহ কফিনে শয়–আর,
যে দেহ মরবার আগেই মরে যায় তারও রক্ত খায়।
২২/০৬/১৯