বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

বিবর্ণ আকাশ ঝুলে আছে মাথায়

314

বন্ধ আকাশটা তোমার মত, রঙ নেই অল্প,
আকাশের সাথে শরতের নেই কোনো গল্প,
কেমন বিষণ্ণ আলোয় ছেয়ে আছে ধরা,
বন্ধু মন খারাপের চিঠি নিয়ে আসছে বৃষ্টি হরকরা!

আজ আকাশটা তুম হয়ে আছে, দেখো তাকিয়ে,
আকাশ হেমন্ত হয়ে তাকাচ্ছে চোখ পাকিয়ে,
পেঁচা মুখি বন্ধু, আকাশটাও আজ তাই,
এমন উপকরণ সম্মুখে আমার, মনে শান্তি নাই।

তোমার ঠোঁটেও মেরেছো তালা,
আকাশটাও তাই, একি জ্বালা!
আকাশের বুকে শরত এসে হাসলো না,
তোমার মত আকাশও সুখের নায়ে আমায় নিয়ে ভাসলো না!

তুমি হেসে ফেলো তো, কথা বলো অনর্গল,
খুলে দাও বন্ধু মনের আগল,
মন আকাশে ওড়াও আজ শরতের মেঘ, আমি মুগ্ধ হই,
এক বিন্দু উচ্ছলতা পেতে মনে উতলা রই।

এমন মেঘলা আকাশ আমার মন হয়ে যায় বিষণ্ণ
তুমিও রোজ বিষাদ রাখো আমার জন্য,
ভালো লাগে না বন্ধ দিনের আলো নিভে গেলে,
কেমন যেন বিতৃষ্ণা মনে, লাগে এলেবেলে।

তুমিও বদলে যাও, শরত হয়ে এসো আমার সম্মুখ,
চাই এক পাহাড় স্বস্তি, সাত সমুদ্দুর সুখ,
বিবর্ণ রেখো না আর মনের আকাশ,
দিয়ো না প্লিজ আর দীর্ঘশ্বাস।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, বুড়িগঙ্গা নদী, ঢাকা)

দলিলের প্রাচীন অক্ষর

সাকিন খিত্তা পরগনার পুরানগাঁও মৌজা। পড়তে পড়তে আরও খুঁজতে থাকি
দলিলের উপাত্ত। বিক্রেতা শ্রী নগেন্দ্র কুমার দাশ। ক্রেতা শ্রীযুক্ত ওমর শাহ।
নামের দাগ খতিয়ান দেখতে দেখতে আমিও ক্রমশ শ্রীযুক্ত হয়ে যাই।আসলে
কখনও সুশ্রী ছিলাম কী না-কিংবা আমার চারপাশে ভেসে বেড়াতো কী না
সলাজ বিলপদ্ম, সেই স্মৃতির পাতায় হাত রাখি।

অনেকগুলো অক্ষরের গায়ে লেগে আছে পিতামহের হাতের ছাপ, অনেক
দলিলে এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে তাঁর নাম ! ভিটেসূত্রের ভোরে দাঁড়িয়ে
দেখি সেই বাটোয়ারানামা, দ্বিখণ্ডিত ভূমির জরিপ। দু’ভাগ হয়ে গেছে,
সীমান্ত এসে হাজির হয়েছে প্রহরী হয়ে। কেবল নদীরাই অব্যাহত রেখেছে
তাদের উজান-ভাটির টান।

আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের স্মরণে

54355

ভাষা আন্দোলন দিবস বা শহীদ দিবস, বাংলাদেশে পালিত একটি জাতীয় দিবস। ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে সংগ্রামে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই জাতীয় দিবসটি পালন করা হয়। সেই চর্যাপদের কবিদের থেকে শুরু করে বড়ু চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, কৃত্তিবাস, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ এবং আরও কতজন বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন তা বলার শেষ নেই। বাংলা ভাষা যে শুধু আমাদের মাতৃভাষা তা নয়, এ যেন আমাদের শৈশব অবস্থা থেকে পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক হবার এক অতীব প্রয়োজনীয় মাধ্যম। বাংলা ভাষার অনুধাবন ও অনুশীলনের মাধ্যমে বাঙালী আজ বাংলা সাহিত্যে পূর্ণ অবয়বে প্রস্ফুটিত হয়েছে। আজি কমল মুকুলদল খুলিল। রবীন্দ্রনাথের একটি গান বাংলা ভাষার সমৃদ্ধির স্মরণে:

মনোমন্দিরসুন্দরী ! মণিমঞ্জীর গুঞ্জরি স্খলদঞ্চলা চলচঞ্চলা? অয়ি মঞ্জুলা মুঞ্জরী ! রোষারুণরাগরঞ্জিতা ! বঙ্কিম-ভুরু-ভঞ্জিতা ! গোপনহাস্য-কুটিল-আস্য কপটকলহগঞ্জিতা ! সঙ্কোচনত অঙ্গিনী ! ভয়ভঙ্গুরভঙ্গিনী ! চকিত চপল নবকুরঙ্গ যৌবনবনরঙ্গিণী ! অয়ি খলছলগুণ্ঠিতা ! মধুকরভরকুণ্ঠিতা লুব্ধপবন -ক্ষুব্ধ-লোভন মল্লিকা অবলুণ্ঠিতা ! চুম্বনধনবঞ্চিনী দুরূহগর্বমঞ্চিনী ! রুদ্ধকোরক -সঞ্চিত-মধু কঠিনকনককঞ্জিনী।।

মাতৃভাষা
বাংলা মাতৃভাষা মায়ের শিক্ষা মোদের ধ্যানজ্ঞান
মায়ের সাবলীল চিন্তাশৈলী মোরা করেছি অনুদান
উজ্জীবিত আশা স্বপ্ন নিয়ে হয়েছি মায়ের অনুগামী
তাঁর ভাবনা চিন্তা সকলই মোদের কাছে অত্যন্ত দামি
ভাষা ব্যতীত শিক্ষা অসমাপ্ত, তাই শিক্ষাই যাবতীয়
নানান জাতি নানান ভাষা আমরা সবাই ভারতীয়
মায়ের প্রশস্ত ললাট, অপূর্ব কাব্যশৈলী করেছে মুগ্ধ
এসেছে শান্তির সহবাস থেমে গেছে বাকবিতন্ডা যুদ্ধ।

শুকায়ে যাবে আমাদের বক্ষভূমি

শুকায়ে যাবে আমাদের বক্ষভূমি
থাকিবে না কোন স্রোতধারা;
সেফটি পিনে জীবনের সেফটি
একদিন নিশ্চয় হবে হারা।

ঘড়ির কাঁটা কোনদিন থেমে যাবে
ছুটিবে অনন্ত সময় দিগ্বিদিক বাঁধনহারা;
প্রলয়ের দুরন্ত দুর্বার ঝড়ে ওরে
উড়িবে সকল নশ্বর জীবন পাগলপারা।

কোথায় হারাবে বন্ধু বলো!
চারি দিকে শুধু ধূ-ধূ সাহারা;
কোথায় পালাবে বন্ধু বলো!
এমন কোন দেশ নেই মৃত্যুছাড়া।

ভাষারা সব ফুল হয়ে যায়

Poli

ভাষা
রুধিরা স্রোতে
ভেসে যাওয়া প্রাচীন ভালবাসা!
মাতৃ জঠরে জন্মানো প্রাণের লিপিকা
নিঃশ্বাসে
প্রশ্বাসে
চেতনায়
আদর্শে
মিশে থাকা অনুপ্রাণন
অ আ ক খ…
অক্ষরের জঠরে অক্ষরের ধ্বনি!…
বুলবুলির বোলে
কোকিলের কুহু সুরে
মাতৃকার মাদল;
কে না জানে-
বাদল দিনে
ঝিরিঝিরি বরিষণে
টিনের ছালে
পাতায় পাতায় … গাছের শাখায় …
জেগে উঠে একটি আন্দোলন
মাতৃভাষা বাংলা চাই
তোমার ভাষা আমার ভাষা
বাংলা ভাষা বাংলা ভাষা…..

বন্দুকের নল থেকে
লৌহ মোড়ানো বুট থেকে
ফুলের কলি থেকে চিনিয়ে নেয়া দীর্ঘশ্বাস থেকে
ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি গুঞ্জন তোলে;
ভিন ভাষায়
প্রকাশ করা যায় না এমন সব আত্মনিনাদ
অবলীলায় রচিয়ে যায় মহাকাব্য
নির্ভিকতার অদম্য বীর
রফিক
সালাম
জব্বার
শফিক
পিতৃত্বের অধিকারে আসে একুশে গ্রন্থমেলায়
প্রতি বছর জন্ম দিয়ে যায় অসংখ্য কবি-র!
গভীর শ্রদ্ধায়
গভীর ভালবাসায়
লাখো ভাষাপ্রেমী মানুষ
স্রোতের মতো নেমে আসে
প্রভাতফেরিতে
কৃতজ্ঞচিত্তে, ফুলেল জলসায়
একুশ এলে
এভাবেই
ভাষারা সব ফুল হয়ে যায়।
.

ভাষারা সব ফুল হয়ে যায় // দাউদুল ইসলাম ২১/২/২৩

আমরা বাংলায় কথা কই

ww

অমর একুশে
প্রভাতফেরির মিছিলে তুমি আসবে তো?
শোকের বসনে ৫২ এর সেই দিনের মতো চেতনায় ফিরে।

মুখের ভাষার সে কি বজ্র নিনাদ মিছিল?
মিছিলে মিছিলে সারা বাংলা;
পলাশের আগুনের দিনে মিছিলে গুলি
রক্তে ভেজা পিচঢালা পথ।
মায়ের বকুনিতে!
শহিদের তরে আজও পথ চেয়ে রয়।
ছেলে আসবে! ঘুমপাড়ানি গানে রাত্রি গভীর হয়,

রাত পোহালেই অমর একুশে
প্রভাতফেরির মিছিলে তুমি আসবে তো?
শহিদ বেদিতে শোকের মুর্চ্ছনায়
ফুলের শ্রদ্ধা।

আমরা বাংলায় কথা কই।

======
আজ ৭ ফাল্গুন ১৪২৯

ভালোবাসো বুঝতে পারি

Scre

বহুদিন আগে-
তখনও বসন্তের আগমন ঘটেনি,
কোকিলের কুহুতান কিংবা ফুলে ফুলে-
প্রেমের বারতা আনেনি ফাগুন।

খুদে বার্তায় কি যেনো বলতে চেয়েছিলে,
যতনে নিজেকে সাজিয়ে,
শীতের রিক্ততা উপেক্ষায়-
আমার পানে তাকিয়ে ছিলে বুঝি।

গোপন মারফতে খোঁজ নিয়েছিলে তুমি,
বার্তা বাহকের অদূরদর্শীতায়,
তা জানতে পেরেছিলাম-
তুমি কি আমাকে জানতে চাও?

অকারণে তোমার সখীদের হাস্যরসে,
আমি বুঝতে পারি,
কতক পঙক্তির আবরণ দিয়ে-
তুমি আমাকেই ঠিক উপস্থাপন করো।

তুমি অপলকে তাকিয়ে কি খোঁজ?
ডাগর চোখের মায়াবী পরশে,
বারংবার চোখে চোখ পড়ে-
হাজারটা স্বপ্ন ঠিকই দেখতে পাই।

তুমি কি ভালোবাসো?
গল্প সাজাতে চাও-
নতুন করে বাঁচার?
তুমি কি আপন করতে চাও আমায়?

নিজেকে লুকিয়ে রাখি,
আপনার অনুভূতি মরে যায় যাক,
কবিতার শব্দ খুঁজে পাই না-
তাই তোমাকে বলতে দ্বিধায় মরি,
ভালোবাসি।

শত বণিতা ছেড়ে,
পাশে থাকার আয়োজনে,
যদি বলতে পারো ভালোবাসি-
তবে দ্বিধাহীনভাবে বলবো,
ভালোবাসি।

তোমার চোখ যুগল বলে যায়,
তুমি জানতে চাও আমায়,
তাই বোধোদয়ের জাগরণে বুঝি-
ভালোবাসো আমায়।

দু’চারি শব্দের সমাবেশে,
এই বসন্তের শুভ দিন দেখে,
জানিয়ে দিও-
ভালোবাসো তুমি দ্বিধাহীনভাবে।

রঙ বিলাস

rongbilash

রস গাছের সন্ধি হেঁটে যায়
কোন প্রেমের কথা শুনলে-
কি অভিমানী পাতা গুলো
ঝরে পরতে থাকে; বলে
উঠে- এ বসন্তের খেলা-
নতুন ভাবনার রঙ বিলাস!
পা লম্বা হয় ঠিকই কিন্তু
বিভিন্ন ভালোবাসায় কাতর
হয়ে পরে প্রেম শুকনো বাসর;
অভিমানী জল তৃষ্ণায় মরে-
মধ্যরাতে কিংবা ভোর ক্লান্তে-
তবু প্রেম চুপি চুপি বাতাসে বয়;

০৬ ফাল্গুন ১৪২৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি’২৩

তোমার চোখের জল

তোমার চোখের জল কোন একদিন
মিশে গেলে নদীর জলে,
পাবো কী আর তারে খুঁজে!

তোমার বুকের দীর্ঘশ্বাস কোন একদিন
ছড়িয়ে গেলে ঝড়ের বাতাসে,
পাবো কী আর তারে বুঝে!

তোমার হৃদয়ের সকল কথা
ডুবে গেলে ধূসর অন্ধকারে,
সকরুণ স্বরে ডাকিবে না কেউ
নাড়িবে না কড়া রুদ্ধদ্বারে।

মহা শিবরাত্রি

ত্রিলোকের কর্তা তুমি
ভোলা মহেশ্বর,
তুমি আছো পৃথ্বী মাঝে
হয়ে যে ঈশ্বর।

ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব নিয়ে
ত্রিদেবতা জানি,
তুমি তো সবার গুরু
ইহলোকে মানি।

মরা গাছে ফুল ফোঁটে
তোমার নজরে,
জন্ম-মৃত্যু তব কর্ম
শংকর ভজরে।

শিব পুরানের মতে-
এই শিব রাত্রি,
প্রলয়ের নৃত্য আর
বিয়ে হর-গৌরী।

নির্জনতার গল্প

না পাওয়াই যেন প্রেম, প্রতীক্ষার ফলন-
এতটা মুখোমুখি হই
হয়তো পরাক্রম আলোর ভাঁজে
নির্জনতা নিয়ে বসে যায়
পা দুটোর সাঁকো, কমলার মতো মনস্তাপ

অরোচিত ভায়োলিনের সমুদ্র সুর
কেবল সেখানে, পৃথিবীর নির্জন প্রবাহ
ফাল্গুন আর গোপন খাতায়
বিকেলের দ্বিগুণ গল্প, গল্পসূত্রে-রয়ে গেছে
দুজন,মাখনভর্তি রোদ-
কী এমন সকাল, কোথাও আমার কিছু নেই

স্বরচিত বাতাস, মোরগ ঝুঁটির নৃত্য আর…

বেলা যে যায় বয়ে আলগোছে

32n

চোখ বন্ধ করে ছেড়েই দেখি বেলা গড়িয়েছে, সূর্য উপরে
কী করে যেন হেলায় হেলায় কেটে যায় সময়
কী করে যেন বিতৃষ্ণা এসে দাঁড়ায় মনের সম্মুখে
কিছুতেই সময় না ধরতে পারার আক্ষেপ থাকি ছুঁয়ে।

বেলা যে যায় বয়ে, হাসি গান ঠাট্টা আর আনন্দে
কোথায় যেন ছন্দহারা হই নিমেষেই
ভুলে যাই সুখ ছুঁয়ে আছি এবেলা
কী হারানোর খেলায় নিতে যাচ্ছি অংশগ্রহণ, কে জানে!

কেমন যেন লাগে, মন করে কেমন কেমন
কী নেই আমার, কী হারিয়েছি অবলীলায়
ভাবতে গেলে দেখি ভাবনার দেয়ালে অপূর্ণতার বিষণ্ণ ছবি
যে ছবি চাইনি ছুঁতে কখনো।

দীর্ঘশ্বাস কেন উড়বে বুকে অযথা
আমি ভুলে যেতে চাই বিগত দুঃখবোধ
মনের কিনারে বসে ঘূণপোকা কাটে মন কচকচ
হাসি মজা আনন্দের মাঝে আমি হয়ে যাই বিষণ্ণ।

এমন কেন আমি, উচ্ছল মন আমার তবুও বিষাদ পুষি
বেহুদাই মনের বাড়ি রোপন করি কাঁটা ঝোপঝাড়
আমি চাই ফুলেল সময় ঘুরুক ঘূর্ণিপাকে আমার চতুর্দিকে
চাই না বিষাদ টুটি চেপে ধরুক বারবার।

এই তো ভালোই তো আছি, কীসের অভাব মন ছুঁয়ে?
তবুও আগাছাই রাখি বুক জমিনে রুয়ে
সন্তুষ্টি আসবে কবে তবে জীবনজুড়ে,
কীসের এত চাহিদার হাপিত্যেশ বুক খায় কুরে কুরে!

কবিতা : অপ্রকাশিত লেখা

3277

সঠিক মনে নেই তোমায়
শেষ কবে স্বপ্নে দেখেছিলাম !
হঠাত্‍,
কেমন উচ্ছিন্ন শব্দে জেগে উঠি;
ফাল্গুনের আগে মাঘের হিম শীতে
বিবর্ণ জড়ানো এক ঘরের কোণে।

রাত্রির শরীর বেয়ে জোছনা ঝরে
সময় বৃত্তের কাটি মেপে মেপে
পৃথিবীর উঠোন জুড়ে।
যা কেবল’ই ভাবায় ঘুমের ভিতর
গোলকধাঁধার মতন অনন্ত মাইল।

চারদিকে গাঢ় অন্ধকার নীরবে ঝরে
ভোরের নীলকণ্ঠ পাখির মতন
শিশির কণা ছুঁয়ে ছুঁয়ে নরম ঘাসে।

অনেক রাত্রি হলে, রোজ ঘুম ভেঙে যায়;
নক্ষত্রের নিচে ধূসর বিষণ্ণ পৃথিবীটা
ভীষণ ফাঁকা মনে হয় তখন !

হলুদ রঙের আলোয় আকাশ ভরে গেলে
নদীর ধারে জলের গন্ধ মেখে
প্রকৃতির নিবিড় পলকে ইচ্ছে হয়,
তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখতে।

পুরনো স্কুলঘর,
ভাঙা সাঁকোর নিচে নীরব স্রোতধারা,
আষাঢ়ের বিকেলে নরম ঘাসে হাঁটা …

আমি জন্মেছিলাম রাহু যুগের কবি হতে

32

আমি জন্মেছিলাম মাঘের হাড় কাঁপানো শীতের সন্ধ্যায়
কুয়াশা ঘেরা এক ঝাঁক অতিথি পাখির কিচির মিছির
আর মেঘ সাদৃশ্য বৃক্ষের ডগায় জোনাকির অস্থিরতায়,
শিশির ধোয়া জমিন এর সোঁদা গন্ধ মাখা হিমে
নীল হয়ে উঠা আমার পীযুষ মুখ; পরম স্নেহে
মাতৃত্বের খোমে পেয়েছিলাম প্রথম আমৃত্যু সুখ।

অতঃপর ধীরে ধীরে গভীর রাতের সাক্ষাত
নৈশব্দের জঠরে স্পন্দিত পৃথিবীর ঈষৎ দীর্ঘশ্বাস!
ধ্যান মগ্ন ঋষির নির্লিপ্ত সচেতনতা, নিকষ অন্ধকার,
চাপা কান্নার মত বিলাপ করা বৃক্ষের পাতা, ধাবমান রুহ্‌ ধ্বনি
একে একে চিনতে থাকি মর্মগাঁথা সৃষ্টি; জগত সংসার।
অগণিত চোখের দৃষ্টি রেখা মাপতে মাপতে অদম্য এক স্রোতে
প্রবেশ করি বৃত্তাকার জীবন গহ্বরে ……

অথচ আমি জন্মেছিলাম রাহু যুগের কবি হতে
ভ্রহ্মাণ্ডের গোপন কারাগারে বন্দি দশা হতে
আজন্ম শব্দ গুলো মুক্ত করতে; পাখীদের ঠোঁটে
কিংবা কোন বাউলের গানে-
যেই শব্দ, যেই সুর,ধ্বনিত হয়নি আজো!

আমি জন্মেছিলাম ছিলাম সেই নদীর স্রোত হতে
কৃষ্ণচূড়ার মতো মদিরা হতে হতে যেই নদী
হারিয়েছিলো তার অধরা যৌবন;
মিথ পোড়া দহনে নিজেকে জ্বালিয়ে
এসেছিলাম আমি, জাগাতে সেই নাড়িস্পন্দন!

সেফটিপিন

ছেঁড়া শাড়ির নিরাপত্তা সুরক্ষায় আরেকটি সেফটিপিন
গেঁথে দিতে চাইছেন আলপনা মিত্র,
হায়েনার রক্তাক্ত চোখ যেভাবে হরণ করতে চেয়েছিল
জলের আব্রু, তা দেখে ভয় পাচ্ছে নদীও। আর শাদাবকুল
ক্রমশ নীল হতে হতে বুকে পুষছে অনন্ত বেদনা।

আমরা যারা এতকাল বেদনাকে ভালোবাসতাম, তারাও
ঘর থেকে বের হতে ভীষণ ভয় পাচ্ছি। এই কালোরাত ঘেরা
গুমের নগরে যেন হার মানছে একাত্তরের পঁচিশে মার্চ।
এ শহরে নারীর অশ্রু বার বার ভিজিয়ে দিচ্ছে তারামার্কা
দেয়াশলাই বাক্সের কাঠি। তাই দুষ্প্রাপ্য আলো ও আগুনের জন্য
গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটোছুটি করছে সুবোধ শিশুরা।
ব্যাকুল তৃষ্ণায়,
জল, জল বলে মৃত্যুর সাথে লড়ছেন একজন অগ্রজ।