বিভাগের আর্কাইভঃ অণুগল্প

আমার_হিয়ার_মাঝে_লুকিয়ে_ছিলে

কোথায় যেন ধূপের গন্ধ..বাতাসে ভাসে। দমকা বাতাস দ্রুতধাবমান বাসের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে ঘ্রাণকে উড়িয়ে নেয়। অখন্ড অবসর উপভোগরত ফুটপাত দিয়ে হেঁটে চলা সাজ্জাদের জটিল এক আইডিয়ার বিশ্লেষণরত ব্রেইনকেও সতেজ করে এই ধুপের ঘ্রাণ।

ডাইনে-বামে অহেতুক তাকিয়ে ঘ্রাণের উৎস খুঁজে দেখার অপচেষ্টা চালায় সে। তবে পরবর্তী ক’সেকেন্ডেই অন্যান্য আরো অনেক অতীত মৃত চিন্তার মত এটাও ডিলিট হয়ে সোজা রিসাইকেল বিনে জায়গা করে নেয়।

এইমাত্র যা করলো সেটা ভাবতেই আনন্দ অনুভব করে। এখন হেঁটে হেঁটে তা উপভোগ করছে।

সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ানোর জন্যই ওর নাম টো টো সাজ্জাদ হয়ে গেছে। বন্ধুমহল থেকে শুরু করে ওর বাসার সবাই- এমনকি শায়লা পর্যন্ত জানে।

শায়লা!
নামটিই কেমন এক প্রশান্তি এনে দেয়। সবসময়।

মটর বাইকে করে এলাকায় অস্থির অলসতায় ঘুরে বেড়ানোর সাথে সাথে কিছু প্রয়োজনীয় কাজও সে করে। বাসায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখাশুনা করাটাই প্রধান কাজ। আর মাসের শেষে বাড়ির ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা, পানি-গ্যাস-বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা- এ সবই সে করে। ওর বড় ভাই একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। প্রতিমাসে একবার বাবা-মাকে দেখতে আসেন। তাই বাবা-মার প্রতি ভালবাসার বড় ভাই এর অংশটুকুও সে প্রতিদিন নিজের মত করে।

এর মাঝে নিজের বিকৃত মস্তিষ্কের কিছু চাহিদাও তাকে পূরণ করতে হয়। বিকৃত কথাটা বলা একটুও ভুল হচ্ছে না। সাজ্জাদের খুব প্রিয় একটি কাজ হচ্ছে, এলাকায় নতুন কেউ এলে ইচ্ছেকৃত সে ভুল ঠিকানা দেখিয়ে দেয়। আর নতুন মানুষটি যখন এক গলি থাকে অন্য গলিতে ঘুরপাক খায়, সে বাইকে করে দূর থেকে দেখে আনন্দ পায়।

আলমগীর মুন্সীর চায়ের দোকানের পাশে ওর বাইকটা স্ট্যান্ড করা। বাইকের ঘাড়ের লক খুলে স্টার্ট বাটন পুশ করে আশপাশ সচকিত করে একটা ইউ টার্ণ নিয়ে বেরিয়ে পড়া সুদর্শণ সাজ্জাদ মুহুর্তে টো টো সাজ্জাদে পরিণত হয়। ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত হাসি। এইমাত্র নতুন একটি আইডিয়ার জন্ম হয়েছে ওর উর্বর মস্তিষ্কে।

শায়লা অনেকক্ষণ ধরে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছে। যা ও বা পাচ্ছে সবই ওর উল্টো পথের। এই ভরদুপুরে সবাই যার যার বাসায় কিংবা নিরাপদ কোনো ছায়াঘেরা জায়গায় যেতে চায়। বান্ধবী রিতার বাসায় এসে ফেসে গেছে শায়লা। একটা অটো নিয়ে চলে যাবে কিনা ভাবল একবার।

দূর থেকে শায়লাকে দেখছে সাজ্জাদ। সে যেখানে আছে সেখান থেকে শুধু শায়লাকেই দেখা যাবে। শায়লা ওকে সেইভাবে দেখতে পাবেনা। বাইকের লুকিং গ্লাস দিয়ে বিপরীত দিক থেকে শায়লাকে দেখছে সে। শায়লা যদিও এদিকে তাকায় তবে শুধু পিছনের অংশই দেখতে পাবে। পিছন থেকে দেখেও কি সে চিনবে সাজ্জাদকে?

এই মেয়েটিকে দেখলেই কেমন যেন হয়ে যায় সাজ্জাদ। ওদেরই ভাড়াটিয়া। বৃদ্ধা মা এবং ছোট এক বোনকে নিয়ে থাকে ওরা। তৃতীয় তলার ডান পাশের ফ্ল্যাটে। একেবারে সাজ্জাদদের সরাসরি নীচের ফ্ল্যাট। শায়লার বড় এক ভাই আছেন। সে ঢাকায় এক পোশাক কারখানায় ভালো পোষ্টে চাকরি করে। সেখানেই দুই মেয়ে আর বউকে নিয়ে থাকে। তবে মা ও বোনদেরকে দেখার জন্য প্রতি মাসে একবার আসবেই। যতই কাজ থাকুক না কেন। নিজের ফুল ফ্যামিলি নিয়ে আসে সে।

সেই কটা দিন শায়লার খুব আনন্দে কাটে। দিন না বলে ক’টা রাত বললেই বেশী মানানসই হয়। ভাইয়া তো বৃহষ্পতিবার এসে আবার শুক্রবার রাতে চলে যায়। তবে ভাবী ও বাচ্চারা কখনো দু-তিনদিন থেকে যায়। এই ভাড়া বাসাটি তখন শায়লার কাছে নিজের বাড়ির মত শান্তি এনে দেয়। সেই যে বাবা বেঁচে থাকতে ওদের গ্রামের বাড়িতে সবাই মিলে একসাথে থাকার সময় যা অনুভব করত, সেরকম। আসলে পরিবারের সবাই এক সাথে থাকার আনন্দের সাথে অন্য কোনো কিছুর তুলনাই হয় না।

গরমে ঘেমে অস্থির হয়ে আছে। বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু স্টপেজে কোনো বাস ও আসছে না সেই অনেকক্ষণ হয়ে গেলো। শায়লা বিরক্তির একেবারে চরমে পৌঁছে গেলো। ঠিক তখনই উল্টো দিকে সাজ্জাদের পিছনটা সে দেখতে পায়।

এবং চিনে ফেলে।

মেয়েদের ভিতরে অনেক অদ্ভুত জিনিস আছে। একইসাথে এদের অতিরিক্ত একটি ইন্দ্রিয় রয়েছে। অদৃশ্য কিছু অতি সহজে বুঝে ফেলার… দ্রুত উপলব্ধি করার এমন কিছু সহজাত ক্ষমতা পুরুষের থেকে এদের বেশী। তবে এই এরাই আবার খুব কাছ থেকে সহজ অনেক কিছুও অনেক দেরীতে বুঝে।

সাজ্জাদ নামের এই ছেলেটি যে ওকে কেন্দ্র করেই চিন্তা-ভাবনার এলোমেলো জগতে সর্বক্ষণ অবস্থান করে সেটাও মেয়েলি এই বিশেষ ক্ষমতাবলে সে বুঝে গেছে।

বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে হেঁটে হেঁটে সাজ্জাদের বাইকের পাশে এসে দাঁড়ায় শায়লা। লুকিং গ্লাসে শায়লাকে ওর দিকে আসতে দেখেও একচুল নড়তে পারেনা সাজ্জাদ। চোরের মত ধরা পড়া অভিব্যাক্তি নিয়ে ফুটপাতের দিকে তাকিয়ে থাকে সে।

কাছে এসে বেশ স্বাভাবিকভাবেই শায়লা বলে,
– চলুন, বাসায় যাই।

নীরবে শায়লাকে বাইকে বসার জায়গা করে দিয়ে একটু সামনে সরে বসে সাজ্জাদ। ওরা দু’জন যখন বাইকে করে চলে যায়, নিজের খুব কাছে স্বপ্নের রাজকন্যা থাকা সত্বেও কেন জানি চিরতার পানি পান করেছে এমন অভিব্যক্তি নিয়ে থাকে সাজ্জাদ। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় সে কেন জানি কোনো আনন্দ পায়না।

ওর সকল আনন্দের উৎস বিশ্লেষণধর্মী ব্রেইনে এই মুহুর্তে কোনো অনুভুতিই নেই। সব শূন্য হয়ে আছে। শুধু নিয়ম মেনে বাইক চালিয়ে বাসায় পৌঁছানোতেই ব্রেইনের সবটুকু অংশ মগ্ন।

_________________________
#আমার_হিয়ার_মাঝে_লুকিয়ে_ছিলে।

অণুগল্প : যমজিয়া

যমজিয়া

– কি চাও?
– শর্তহীন প্রণয়।
– প্রণয় কি শর্তহীন হয়?
– প্রণয় আমূল শর্তহীন। মানুষ শর্তযুক্ত করে করে প্রণয়কে পরিণয়ে পরিণত করে।
– পরিণয় কি প্রণয়ের গন্তব্য নয়?
– না। পরিণয় হলো প্রণয়ের মৃতদেহ। প্রণয় দুর্নিবার হাওয়া- শুধু তোমার কাছে যাওয়া।
– বেশ! আমার মাঝে কি যে পেয়েছ তুমি!
– কিছুই পাইনি, আপদমস্তক তোমাকে ছাড়া।
– তারপরেও শর্তহীন প্রণয় চাও?
– চাই, ভালোবাসিবার চাই অধিকার।
– তবে ভালবাসো, শর্ত একটাই- আমি এসবে নেই।
– বেশ, তবে আমিই ভালবেসে যাই–

ছেলেটি ভালবাসে। মেয়েটি পাগলামি দেখে হাসে, বিরক্ত হয়। প্রণয়ের দিন যায় যমজ ভাবনায়- কে কাকে গ্রাস করে! কে কাকে জড়ায় আপন ছায়ায়!

মামুনের_অণুগল্প : কাছে_পাবোনা_জানি_তোমাকে_তো_আর

মামুনের_অণুগল্প : কাছে_পাবোনা_জানি_তোমাকে_তো_আর।

তখন খুব দুরন্ত ছিলাম। দলবেঁধে রাস্তার মোড়ে মোড়ে কিংবা গার্লস স্কুলের গেটের রাস্তায় গল্প-আড্ডায় বেশ সময় কেটে যেত। স্কুল ফেরত মেয়েদের দেখে সিটি দেয়াটা বেশ রপ্ত হয়েছিলো। আর নতুন সিগ্রেট ফুঁকতে শিখেছিলাম। সিগ্রেট ফুঁকা একজন রোমিও হয়ে কল্পনার জুলিয়েটের পিছু ধাওয়ায় আমাদের সময় কিভাবে যেন কেটে যাচ্ছিলো। সবাই বখাটে বলতো আমাদের। আর আমি ছিলাম বখাটেদের দলনেতা।

একদিন সেই বখাটে দলনেতার সামনে দিয়ে এক এলোকেশী, নিজের বুকের ওপর দু’হাত ভাঁজ করে, গলির মাথা যেখানে শেষ হয়েছে সেখানে যে কৃষ্ণচূড়া গাছটি ছিলো, ওটার নীচে এসে দাঁড়ায়। কেন জানি হাসছিল সে। তার হরিণী চোখের ওপর এক গোছা উড়ন্ত কালো চুল! শুভ্র দেহে যেন আঁধারের টিপ! এমনই মনে হয়েছিলো সেদিন আমার।

সেদিনই ওড়নাবিহীন সেই তরুনী ঘি ঢেলে দিলো আমার বখাটেপনার উচ্ছলতার আগুনে।

এরপর এক অন্য ইতিহাস…

গলির রাস্তা ধরে পায়ে পায়ে ফিরে চলি… অন্য এক আমাকে দেখি। হাতের সিগ্রেট আনে মুখে বিস্বাদ। গলিগুলো বিস্মৃতির আড়ালে লুকোয় নিঃশ্বাস। সিটিগুলো এখন আর বাজে না মোটেও। অপেক্ষায় বন্ধুরা সব ফেলে দীর্ঘশ্বাস।

আর আমি?

চোখ খুললেই দেখি সেই এলোকেশী, যার তীর্যক চাহনিতে ভাসে অণুক্ষণ রহস্যময় হাসি। হৃদয়ে সুঁই ফোটানো ব্যথায় ভেসে ভেসে অনুভূতির বালুচরে জমে থাকা কষ্টগুলো, একসময় নষ্ট হতে হতে রুপ নেয় নীল অপরাজিতায়!

একদিন সে নিজেই এসে আলাপ করলো। সে এক অসাধারণ অনুভব আমার! সেদিন কত কথা বললো সে। আমি কেবল ওর ঠোঁটের কম্পন দেখছিলাম, শুনছিলাম না কিছুই। ওর শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ, আর ওকে ঘিরে আমার কল্পনার বল্গাহীন ঘোড়া ছুটছিলো অজানা সে কোন তেপান্তরের পানে।

একটা সম্পর্ক তৈরী হলো হঠাৎ করেই। আমাদের দেখা হতো রোজ। কথা হতো। দু’একটা চিঠিও আদান-প্রদান হলো। তখন তো আর মোবাইল ছিলো না। তাই কথাবার্তা সামনাসামনিই যা হতো। আর হতো মনে মনে। যখনই ভাবতাম ওর কথা, মুহুর্তে সে সামনে হাজির। পড়ালেখা মাথায় উঠলো।

তারপর একদিন…

সেই চিরপরিচিত কৃষ্ণচূড়ার নিচে দেখি তাকে ঢেউ খেলানো চুলের এক সুদর্শনের সাথে। মটর বাইকে চড়ে প্রচন্ড গতিতে ধাবিত হয় ওরা আমার হৃদয় মাড়ানো লাল রাজপথ ধরে। সেদিনও সে ওড়নাবিহীন, ভাঁজ করা হাতের নীচে ওর সেই সম্পদটুকু সেদিনও উন্মুক্ত। আর লিলুয়া বাতাসে অস্থির কালো কেশে ঢেকে থাকা একটি চোখ। আমার সামনে দিয়ে সে সেই চোখটি সহ হারিয়ে গেলো… আমি গলির মাথায় দাঁড়িয়ে দূর দূর পর্যন্ত ওদের ক্রমশঃ ক্ষীণ হয়ে আসা বাইকের টেইল লাইটের পানে চেয়ে রইলাম দীর্ঘক্ষণ।

এরপর কি হলো?

আবারো সেই চেনা বন্ধুদের সাথে সিগ্রেট হাতে সেই গার্লস স্কুল.. উল্লসিত গলিতে গলিতে সিটির তীব্রতায় চমকে ওঠে কিশোরীরা! আর চমক উপভোগরত এই আমি… সেই আমি, যার হৃদয়ে সুঁই ফোটানোর ব্যথা। ভালোলাগা পুড়ে পুড়ে প্রেম না হয়েই দীর্ঘশ্বাসের ছাই হয়ে বাতাসে মিলিয়ে গেলো। তারপরও কোনো কোনো বিরহী বিকেলে বিষণ্নতায় পুড়ে যাই আমি। সিগ্রেটের শেষাংশের মতো ক্রমশঃ নিস্তেজ হতে হতে একটা ভাবনাই দোলা দিয়ে যায় আমায়,

‘এক জীবন আসলে কাউকে ভালোবাসার জন্য খুবই অল্প সময়।’

আহ জীবন!
হায় প্রেম!
‘প্রেম বড় মধুর… কভু কাছে কভু সুদূর।’

লোকটা

হত্যাকাণ্ডের তখনো কিছুটা সময় বাকি। সাদা শার্টের আস্তিন কনুই পর্যন্ত গোটানো শেষ, মগে আধ খাওয়া কফি। বহুকাল তেল না দেওয়া কাঁধ ছুঁই ছুঁই ধূসর এলোমেলো চুল, ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে যেন তীক্ষ্ণ ছুরির ফলা। মধ্যবয়সী মানুষটার চেহারায় তবুও কেমন এক মায়া। দেখলেই বুকের ভেতরটায় শুধু হু হু করে।

ঘরময় দামী এক্সপ্রেসো কফির ঘ্রাণ আর সিগারেটের ধোঁয়া গৌধুলীলগ্নের আলো আঁধার যে পরিবেশ তৈরি করেছে তাতে সুইস নাইফ হাতে থাকলে যে কারোরই খুন করার জন্য হাত নিশপিশ করারই কথা। রফিক একটার পর একটা সিগারেট জ্বালাচ্ছে, আর জীবনানন্দের কবিতা পড়ছে। সামনের চেয়ারে হাত পা বাঁধা মুখ বন্ধ শিখা দেখছে আর অপেক্ষা করছে। এমন একটা পরিস্থিতিতে দুই ঘন্টা ধরে আটকে এভাবে আটকে থাকা কোন সহজ কথা নয়। কিন্তু বুঝা যাচ্ছে লোকটা কিছুক্ষণের ভিতরেই কিছু একটা করবে। লোকটার কাছে আর মাত্র দুইটা সিগারেট আছে, যারা চেইন স্মোকার তাদের কাছে সময় মতো সিগারেট না থাকাটা অনেক বিপদজনক। সেই হিসাবে দুইটা সিগারেট শেষ হতে দশ পনেরো মিনিট লাগার কথা।

আর মাত্র পনেরো মিনিট, তারপরই সব শেষ। ধারণা মতো শেষ সিগারেটা মাঝামাঝি জ্বলছে। নীরবতা ভেংগে লোকটা কবিতার বইয়ের থাকে চোখ না সরিয়েই জিজ্ঞেস করলো- “নাম কি?” কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে উত্তর না পেয়ে, শিখার দিকে তাকিয়ে দেখে বললো, ওহ তোমার তো মুখ আটকানো। এই বলে সে শিখার মুখ খুলে দিল।

তুমি চিৎকার করবে না জানি, সাহসী মানু‌ষকে আমি পছন্দ করি। চিৎকার করার ইচ্ছা থাকলে তুমি আগে থেকেই হাত পা খোলার চেষ্টা করতে। যে এরকম পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে পারে সে অবশ্যই সাহসী, Am I right?

একথা বলেই লোকটা প্রচন্ড শব্দে হা হা হা করে হাসতে লাগলো। এই প্রথম শিখার ভিতরে প্রচন্ড ভয় লাগলো, এই লোকটা কোন স্বভাবিক মানুষের হতে পারে না। এই লোকটা গাছ থেকে মরিচ তোলার মতোই টুপ করে মানুষ মেরে ফেলতে পারে।

অণুগল্প : মায়াপোলাও

মায়াপোলাও

আড়াই মাস ধরে মিজানের খুব পোলাও খেতে ইচ্ছে করছে। অর্থাভাবে খাওয়া হচ্ছেনা। ইচ্ছে করলে হোটেলে খেয়ে নিতে পারে। কিন্তু হোটেলে বসলে ছেলেমেয়ে দুটোর কথা মনে পরে, বৃদ্ধ মা আর শরীফার কথা মনে পরে।

টানাটানির সংসার। পাঁচজনের জন্য দুইবেলা পোলাও রান্না করতে হাজার টাকা খরচ। একবেলা তো আর খাওয়া যাবেনা।

মাসের প্রথম সপ্তাহ। বিষ্যুদবার রাতে আলুভর্তা ও ডাল দিয়ে ভাত খেতে খেতে শরীফাকে বলে-
: কাইল পোলাও রাইন্দো, সকালে মুরগী আর পোলায়ের চাউল আইনা দিমু।
: এতদিন ধইরা জি আকলাইতাছে, হোটেলের পোলাও খাইলেই পারতা। খামাখা বাড়তি খরচ।
: তোমাগো ছাড়া কিছু খাই?হোটেলে খাইলে গলা দিয়া পোলাও নামবো!
: এই অভ্যাসটাই ভালা লাগেনা, আমগো থুইয়া একা দাওয়াত পানিতেও যাওনা।
: বাদ দাও, এক কেজি খাসির গোশতও আনুম। ঝাল কইরা আলু দিয়া রাইন্দো।
: আইচ্ছা।
: না না ঝাল দিও না, তোতন খোকন জি ভইরা খাইতে পারবো না।

শুক্রবার ভোর। বাড়ি ওয়ালার ডাকে ঘুম ভাঙে। বাড়িওয়ালা বলেন, ‘নাতির জন্মদিন। দুপুরে সামান্য খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করছি। তোমগো দাওয়াত। না করা পারবা না।” মিজান হাসি মুখে দাওয়াত কবুল করে।

মিজান জুম্মার নামাজে যাবার আগে শরীফার হাতে একহাজার টাকা দেয়। বাড়িওয়ালার দাওয়াতের সালামি। ছেলেমেয়ে আর মাকে নিয়ে দাওয়াতে যেতে বলে। শরীফা বিষণ্ন কণ্ঠে জানতে চায়-
: তুমি যাইবা না?
: না, তুমিই কও এক হাজার টাকা সালামি দিয়া কি পাঁচটা মানুষ খাওন যায়!
: তুমি না গেলে আমিও যামু না।
: শরীফা, বাড়িওয়ালা সব ভাড়াইটার ভাড়া বাড়াইছে। আমগো বাড়ায় নাই। আমগো ভালা পায়। না যাওনটা কি ঠিক অইবো!
: তুমি কি খাইবা?
: আমি একশো টাকা দিয়া হোটেলে তেহারী খায়া নিমু। দাওয়াতে গেলে তো পাঁচ শো দিতে অইবো।

মিজান জুম্মার নামাজ শেষে মসজিদে বসে ভিড় কমার অপেক্ষা করে। বহুদিন পরে আজ বাচ্চারা, মা ও শরীফা পোলাও খাবে। পোলাওয়ের সাথে টিকা কাবাব, রুই মাছ ভাজা, মুরগির রোষ্ট, মাংসের রেজালা, বোরহানি আর জর্দা ও আছে। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দুই রাকাত শোকরানা নামাজ আদায় করে।

সে মসজিদ থেকে বের হয়ে টং দোকানে বসে। আয়েশ করে চা’য়ে ডুবিয়ে বানরুটি খেতে থাকে। মাথার ভিতরে পোলাও খাবার ইচ্ছেটা আবার জেগে ওঠে। তার মাথার ভিতরে যেন সিনেমা চলছে- একটা শীতল পাটিতে প্লেটে প্লেটে সাজানো হালকা গরম সাদা পোলাও, মুরগি ভাজা, আলু দিয়ে রান্না করা মাংসের রেজালা, পেয়াজ কুচি, রসে জবজবে লেবু, কলাপাতা রঙ কাঁচা মরিচ- সে, তোতন-খোকন, মা, আর শরীফা মিলে গোল হয়ে বসে খাচ্ছে। নিজের অজান্তেই তার চোখ দুটো ভিজে আসে। শুক্রবারের ছুটির দুপুরে মিজানের ভেজা চোখ আরো ভিজিয়ে দিতে টং দোকানদারের চায়না মোবাইল সেটে এন্ড্রু কিশোর গেয়ে চলেন-
পূর্ণিমাতে ভাইসা গেছে নীল দরিয়া
সোনার পিনিশ বানাইছিলা যতন করিয়া
চেলচেলাইয়া চলে পিনিশ, ডুইবা গেলেই ভুস…

#অনুগল্প
#গ্রন্থ: লংকা কিন্তু জ্বলছে না/আবু সাঈদ আহমেদ

অণুগল্প : সুরুজ্জামানের একদিন

অণুগল্প : সুরুজ্জামানের একদিন

কিভাবে গল্পরা লেখকের হৃদয়ে জন্ম নেয় শুনতে চান? এক স্বাভাবিক দুপুরে, বাউরি বাতাসে, মন ভিজে যেতে যেতে পলকের তরে লেখক নিজেকে বিস্মৃত হন। অনেক আগে, প্রচন্ড গরমে পিচ ঢালা তপ্ত পথ ধরে, একজন সুরুজ্জামানের রৌদ্রক্লান্ত দেহের টেনে যাওয়া বড্ড স্পষ্ট ভাবে চোখে ভাসে। এক ছায়াসঙ্গী হয়ে নিজ সৃষ্ট চরিত্রের পিছু নেন লেখক। অসহ্য অলস গতিতে ছায়ার কায়াকে অনুসরণের মত…

প্রচন্ড পানির পিপাসা। যেখানে গন্তব্য, তার মাঝপথে দাঁড়িয়ে জিভ বের করা কুকুরের মত হাঁফাতে থাকে। পেছনের ফেলে আসা পথে, এক গাছের ছায়ায়, একজন শরবত বিক্রী করছে। বরফকুচি মেশানো শরবত বিক্রী করতে দেখার দৃশ্যটা এই মাঝপথে এসে, হঠাৎ বড্ড তীব্র হয়ে অনুভূত হয় সুরুজ্জামানের। খরখরে জিভটা আরো শুষ্ক হয়। পকেটে সম্বল তিন টাকা। এক গ্লাসের দাম দশ টাকা। পিচ থেকে আগুন বের হচ্ছে। গরম বাতাস সেই আগুনকে টেনে এনে ছুঁয়ে যাচ্ছে দেহমন। বড় কষ্টকর জীবন! আসলেই…

সামনে একটা পানির কল। দেখে আগায়। নিঃসঙ্গ এক শালিক নষ্ট কলটির ফোঁটা ফোঁটা পানির অণূকণায় পিপাসা মেটাতে চাইছে। সুরুজ্জামান কাছে যেতেই নিস্ফল আক্রোশে চিৎকার করে উড়ে যায়। তবে একেবারেই চলে যায় না। একটু দূরে নিরাপদ দূরত্বে অপেক্ষমান। রাস্তার পাশের শিরিষ গাছটির নিচু ডালের পাতায় বসে ক্ষোভ জানাতে থাকে শালিকটি।

একপলক দেখে সুরুজ্জামান। ওর ঘোলাটে চোখে কোনো ভাব জাগে না। নীরবে সামান্য সময়ের বিরতিতে নিচের ঘন সবুজ শ্যাওলার বুক ভিজিয়ে দিতেই, পরবর্তী ফোঁটাটি জন্ম নেয় পাইপের বুকের গভীর থেকে। করতল মেলে ধরে অপেক্ষায় থাকে এক দ্বাবিংশ বর্ষীয় যুবক। এক কাঠফাটা দুপুরে।

বাবার অফিসে যখন পৌঁছায়, লাঞ্চ টাইম মাত্র শেষ হয়েছে। অলস কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভাতঘুমের আবেশে ঢলে ঢলে পড়ছে। অলস আয়েসী মুহুর্তগুলি এই প্রতিষ্ঠানটিকে ভেতর থেকে ঘিরে রেখেছে। সোজা একাউন্টস সেকশনে চলে যায় সুরুজ্জামান। এখানেই যেতে বলে দিয়েছেন বাবা।

বাবা! শব্দটা মনে হতেই একজন নুয়ে যাওয়া যুদ্ধক্লান্ত মানুষ চোখে ভেসে ওঠে মুহুর্তে। নুয়ে যাওয়া এক অবয়ব। জীবনের এতগুলি ধাপ পেরিয়ে আসা একজন পরাজিত মানুষ? মাস ছয়েক হল আরো কয়েকজনের সাথে ‘সাসপেন্ড’ অবস্থায় রয়েছেন। কি হয়েছিল না হয়নি, কিছুই জানা হয়নি ওর। জানতেও চায় না সে। তবে না খেয়ে থাকার কষ্টে বিগত দিনগুলিতে কখনো কখনো একেবারেই যে জানতে ইচ্ছে হয়নি, তাও নয়।

মা কি কষ্ট করে এক একটি দিনের খাবার জোগাড় করছেন, এক একজনের অভ্যাসগত পছন্দ-অপছন্দকে সুন্দরভাবে সামাল দিতে মা-কে কতটা কষ্ট সইতে হচ্ছে… সব অনুভব করলেও কিছুই করতে পারেনি সে। নিজেও এতটা বড় হয়ে একটা কাজ যোগাড় করতে পারেনি। পড়ালেখাও শেষ হয়নি। একটা সার্টিফিকেট অর্জনের থেকে সে এখনো বেশ দূরে। ঠিক এই মুহুর্তেই বাবার এই সাসপেন্ডেড অবস্থা।
জীবনটা সাত সদস্যের এই পরিবারটির জন্য আক্ষরিক অর্থেই নরক হয়ে উঠলো!

আত্মীয়স্বজনেরা ধীরে ধীরে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আসলে বাস্তবতা বড়ই কঠিন। অসময়ে কেউই থাকে না। অথচ সুসময়ে কি রমরমা অবস্থা। দুধের মাছিরা আজ কে কোথায়?

বেতনের একটা অংশ গত ছ’মাসে জমেছে। সেটা নিতেই বাবা ওকে সেই কয়েকশ’ কিলোমিটার দূরত্ব ঠেলে পাঠিয়েছেন। আসার ভাড়াটাই কেবল দিতে পেরেছেন বাবা। মা কিছু খাবার তৈরী করতে রাতের বাড়তি সময়টুকু জেগেছেন। লঞ্চে আসার সময়ে সেগুলি কাজে লেগেছে। সকালেও নাস্তা হিসেবে শেষাংশটুকুর সদ্ব্যবহার করেছে।

একাউন্টসে যিনি টাকা দেবার দায়িত্বে, তিনি ওকে অনেকক্ষণ বসিয়ে রাখলেন। বাবার নাম শুনেই যেন তিনি আগ্রহ হারালেন। এই লোক ওর পরিচিত নন। ছ’মাস পূর্বের এই শহুরে জীবনের অভ্যস্ত জীবনে সামাজিক আবহে বিভিন্ন পার্বণে কখনো সুরুজ্জামান এই লোকটিকে বাসায় দেখেনি। বাবার কলিগদের সাথেও কখনো এই লোক আসেন নাই। হয়ত নতুন জয়েন করেছেন। তবে একজন সহকর্মী যখন সাসপেন্ডেড থাকেন, তখন অন্যদের কাছে তিনি যেন মৃত! এতগুলি বছরের সৃষ্ট পারষ্পরিক সম্পর্ক যেন কোথায় হারিয়ে যায়! আসলেই কি কোনও সম্পর্ক কখনো তৈরি হয় এদের মাঝে? হলে এত দ্রুত ভাঙ্গেই বা কিভাবে?

সামশু ওনার নাম। তিনি এসে আবেগবিহীন স্বরে টুকটাক কথা বললেন। যেগুলির কোনো অর্থই হয় না। নিরর্থক একা-ই বলে গেলেন। ক্ষুধার জ্বালায় সুরুজ্জামান কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ শুনে গেলো। ওর চোখে পথের পাশের ঝুপড়ি দোকানের ভেতরে সাদা ভাত আর গরুর গোশতের ঝোল ভাসছিল। টাকাগুলি হাতে পেলে, এখান থেকে বের হয়েই প্রথম সুযোগে খেয়ে নিতে হবে। যতটা কম খরচে পারা যায়। চিন্তা-ভাবনার এই পর্যায়ে অভুক্ত ছোট ভাই-বোনদের মুখগুলি ভেসে ওঠায় ভেতরে ভেতরে তাড়া অনুভব করে সে।

হিসাব করে বাবার ছ’মাসের পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে দু’জায়গায় ওর স্বাক্ষর নেন সামশু সাহেব। তাকে সালাম জানিয়ে হাসিমুখে চেয়ার ছেড়ে উঠবে, এমন সময় অন্য একজন রুমের ভেতরে ঢুকেন। সামশু সাহেবের সিনিয়র হবেন। তার পাশের টেবিলে বসে সুরুজ্জামানের দিকে জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকালে সামশু সাহেব জানায়,
– স্যার, মাহতাব সাহেবের ছেলে। ভ্যাটের মাহতাব সাহেব, ঐ যে মাস ছয়েক আগের মেয়র কেলেংকারি…

কথা শেষ না করে উর্ধতনের দিকে তাকায় সামশু। ওর কর্তা ব্যক্তি এবার কথা বলেন,
– তো এখানে কি জন্য এসেছে?
– মাহতাব সাহেবের গত ছ’মাসের হাফ বেতন নিতে এসেছে।
– দিয়েছ নাকি?
– জি স্যর, অনেকক্ষণ হলো এসেছে। সব ফর্মালিটিজ শেষ। এখন চলে যাবে, আপনিও এলেন।
– দেবার আগে আমার কাছে জিজ্ঞেস করবে না? উত্তেজিত স্বরে জানান উর্ধতন কর্তা।

সুরুজ্জামান এবং সামশু দু’জনেই অবাক হয়ে বক্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কর্তা ব্যক্তি সামশুকে লক্ষ্য করে বলেন,
– মাহতাব সাহেব সহ বাকীদের বেতন হেল্ডয়াপ করার ব্যাপারে কমিশনারের নির্দেশ এসেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরণের লেনদেন না করার জন্য সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে।

নিজের ফাইল কেবিনেটের বিশেষ একটি ফাইলের দিকে অংগুলি নির্দেশ করে সামশুর দিকে তাকান তিনি। একটি প্রতিষ্ঠানের বদ্ধ কেবিনে তিনজন ভিন্ন বয়সী মানুষকে ঘিরে সময় যেন স্থির হয়ে বড্ড বিব্রতবোধ করে।

বাবার অফিস থেকে বের হয়ে একটা দুই টাকার নোট আর এক টাকার কয়েন হাতে সুরুজ্জামান পথে হেঁটে হেঁটে ভাবে, ‘এই তিন টাকায় কি খাওয়া যায়?’ কিভাবে সে বাড়ি ফিরবে কিংবা বাড়িতে ওর টাকার পথ চেয়ে অপেক্ষারত ছয় সদস্যের অভুক্ত মুখ এই মুহুর্তে একবারও ওর চোখে ভাসে না। প্রচন্ড এক ক্ষুধা ওকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়…তিন সংখ্যার গুণাগুণ বড্ড তীব্র হয়ে বাজে একজন দ্বাবিংশ বর্ষের যুবকের হৃদয়ে। প্রচন্ড গরমের এক দুপুরে পিচ ঢালা পথের পেভমেন্ট ধরে হেঁটে চলে সে উদ্দেশ্যবিহীন…।।

#মামুনের_অণুগল্প

অণুগল্প : দাফন

হুনছো ঘটনা! আমি হালায় পুরা তব্দা খায়া গেছি। আফজলের ফার্মাসীতে আড্ডা দিতাছি। এশার জামাত পইড়া মন্নাফ হাজী আইলো। আড্ডা দিলো। হাকিমপুরী জর্দা দিয়া পান খিলাইলো। ফজরের ওয়াক্তে জানলাম মইরা গেছে।

পঞ্চাতের গোরস্তান। আমি, পান্নু, সাপু, আলম, তাইজু কব্বর খুদতাছি। তারাতারি কব্বর না দিলে মুর্দার আজাব অয়। জোহরের পরে দাফন।
১২টার মৈদ্যে কব্বর খুদা শ্যাষ। কব্বর থেকা য্যান রোশনাই বাইড়াইতাছে। মন্নাফ হাজীর আমল বালা।

আলি বেপারী গোরস্তানেই চা আর বাখরখানি পাঠাইছে। খাইতাছি আর বাতচিত করতাছি। আচমকা পান্নু হালায় কয় “চাচ্চা, জীবনে এত্ত সোন্দর কব্বর খুদি নাই। একটু হুয়া দেহি কিমুন লাগে! নসীবে আল্লাহ কিমুন কব্বর রাখছে কে জানে!! ”

পান্নু কব্বরে হুয়া ঘুম দিতাছে। তাইজু কইলো, “মাম্মা, কব্বরে হুইয়া পোংটামি করিছনা, উইঠা আয়।” মাগার পান্নু আর উইঠা আইলোনা।

আফসোস, মরনের আগে পান্নু হালায় জাইনা যাইতে পারলোনা সোন্দর কব্বরটা অর নসীবে আছিলো, হাজী সাবের নসীবে না।

#অণুগল্প

অবহেলা

পিতার প্রতি সন্তানের অবহেলা সহ্য হলোনা তোমার সেই শোক সইতে না পেরে তুমিও চলে গেলে আমাকে আরো অন্ধকারের অতল গহবরে রেখে ৷ এখন আমার সময় কাটে ৫’×৪’ ফুটের একটা ছোট্ট ঘরে যা কিনা তোমার আদরের সন্তানদের ষ্টোর রুম হিসেবে ব্যবহার হয় সেখানে অপ্রয়োজনীয় সব কিছুই অযত্নে অবহেলায় পরে থাকে আমিওতো এখন এই বৃদ্ধ বয়সে তোমার আদরের খোকার এই সংসারে অপ্রয়োজনীয় তাই আমারও জায়গা এই ষ্টোর রুমে ৷ খোকার মা তুমি তো মরে বেঁচে গেছো কিন্তু আমি? আমিতো আর পারছিনা মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে বুকটাতে হাহাকার এসে ভীড় করে যে সন্তান কে বড় করতে লেখাপড়া করিয়ে মানুষ করতে দিনরাত সব একাকার করে হার ভাঙা পরিশ্রম করে তিলে তিলে বড় করে তুলেছিলাম দুজনে মিলে ৷ আমার বুকে না শুলে যার ঘুমই আসতো না ক্লান্ত শ্রান্ত সেই আমি বিরক্ত না হয়ে বরং আদর করে বুকে রেখে ঘুম পারাতাম মাঝে মাঝে তুমি রাগ করতে খোকাকে বকাঝকা করতে বলতে তোমার বাবা ক্লান্ত তাকে বিরক্ত করোনা সেই খোকা কিনা আজ বড় হয়েছে মস্ত অফিসার হয়েছে, খোকার মা জানো তোমার আদরের সেই দাদুমনিও আজ খোকার মতো জেদ করে খোকার বুকে ঘুমানোর জন্য তখন আমার চোখ বেয়ে একাই পানি চলে আসে এই দেখ তুমি যেনো আবার কেঁদোনা আমার কথা শুনে, তুমি চলে যাওয়ার পরতো আরো একা হয়ে গেছি কারো সংগে কথা বলতে পারিনাতো তাই লিখছি খোকার মা আমি কিসে লিখছি তুমি জানো? দাদুভাইয়ের পুরোনো বাতিল খাতায় যেখানে তোমার দাদুভাইয়ের লেখা আছে তার উপর দিয়েই লিখছি সেদিন বউমাকে বললাম বউমা একটা পুরোনো কলম দিতে পারো? বউমা কি বললো জানো? কলম কিনতে টাকা লাগে কলম নষ্ট করার জন্যে না তোমার দাদুভাই চুরি করে একটা কলম দিয়ে গেছে আর তাতেই আমার না বলা কথাগুলো তোমাকে বলতে পারছি ৷ খোকার মা একবার ভেবে দেখেছো নিজেদের সব শখ আহ্লাদ জলাঞ্জলী দিয়ে যে খোকাকে বড় করলাম সেই খোকা কিনা ! যাকগে বাদ দাও , খোকার মা কষ্ট লাগে কখন জানো যখন দেখি তোমার চলে যাওয়ার দিনটাও তোমার খোকার মনে নেই বরং সেদিন বাড়িতে আরো হৈ হুল্লোর করে পার্টি করে আর আমি তোমার শোকে একা একাই কাঁদি ৷ আচ্ছা খোকার মা আমরা কি খুব বড় কোন পাপ করেছিলাম? তা না হলে এই শেষ বয়সে কেনো এরকম ভাবে কাঁদতে হবে বলোতো ৷ খোকার মা আমাকে কেনো এই কষ্ট আর অবহেলার নদীতে একা ফেলে গেলে ? তুমি যেনো আবার খোকাকে কোন অভিশাপ করোনা আমিও করবোনা বরং দোয়া করো যেনো খোকা আরো বড় হয় , আর দোয়া করো আল্লাহ যেনো আমাকে তারাতারি মৃত্যু দিয়ে এই অবহেলা থেকে মুক্তি দেয় ৷

অণুগল্প : খুঁজিস যাহারে

খুঁজিস যাহারে

‘এই বয়সে আমার শরীর না, একটা হৃদয় দরকার, যেখানে আমার জন্য ভালোবাসা পূর্ণ থাকবে। সেই হৃদয়ের অধিকারিণী আমাকে ভালোবাসবে, একটু বুঝবে, একটু আমার জন্য ফিল করবে, টেন্সড হবে। সব কিছু আমাকে ঘিরে হবে তার। এমন কেউ কি আছে?’ – একদিন নিজের ভেতর থেকে এমন অনুভবে বিলীন হয় শিহাব।

আরেক দিন এক নির্জন খোলা প্রান্তরের পাশ দিয়ে যাবার সময়, সে খোলা মাঠে গিয়ে চিৎকার করে,
‘এমন কেউ কি আছে?’

মাঠ কোনো উত্তর দেয় নাই… শব্দগুলি আকাশের মোহনায় গিয়ে বাতাসের তোড়ে দূর অনন্ত নক্ষত্রবিথী পানে হারায়…।

সেদিনও নদীর পাড়ে বসে জলের বয়ে যাওয়া দেখে দেখে জলের কাছে জানতে চায়,
‘এমন কেউ কি আছে?’ জল বলে,
‘ঢেউয়ের চোখে তাকাও। দেখো, পাবে।’

কিন্তু ঢেউকে আপন মনে সাগর পানে জলকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া শিহাব আর কিছু-ই দেখতে পেলো না।

তারপর অন্য একদিন যাত্রীপুর্ণ বাসে ভরা যাত্রীদের মাঝে থেকেও শিহাবের নিজেকে একা… বড্ড একা লাগে। প্রচন্ড চলার পথের শব্দে বড্ড নিঃশব্দে নিজেকে নিজের ভিতর থেকে টেনে এনে সে জিজ্ঞেস করে, ‘এমন কাউকে কি তুমি সত্যি-ই চাও?’

উত্তরে ভিতরের ‘শিহাব’ কী জানায়?

প্রচণ্ড এক বজ্র নির্ঘোষে সে জানান দেয়,
‘হ্যা, চাই চাই চাই। আমি তো এটাই চাই। কিন্তু এমন কেউ কি আছে?’

#মামুনের_অণুগল্প

এক বোকা বাবার গল্প শোন

খুব তাড়াহুড়া করে বাসায় ফেরে রাশিদুল। দরজায় খুলতেই ঝাঁপিয়ে পড়ে জারা। দুহাতে বাবাকে জড়িয়ে বুকে মাথা গেঁথে দেয়। মা এসে জিজ্ঞেস করে এত দেরী করেছ কেন? মেয়ে দুহাতে বাবার বুকে থাপ্পড় দিতে থাকে। বাবার চশমা ধরে টানাটানি করে। মেয়েকে নিয়ে রাশিদুল ফ্যানের নিচে বসে। বাসের ভীড়ের ধাক্কাধাক্কিতে গা ঘেমে নেয়ে একাকার। শুধু ঘামাঘামি হলে হত, তুমি দাঁড়িয়ে আছ শতেক ধাক্কা সহ্য কর। শতেক জন এসে পা মাড়িয়ে দিয়ে যাবে। কিছু বলাও যাবে না। কেউ কেউ বলে। এই নিয়ে ঝগড়া শুরু হয়। মাঝে মাঝে হাতাহাতিও হয়। আসলে কারোই দোষ নাই। সবার মেজাজ খারাপ থাকে। লেগে যায়। কন্ডাক্টর এসে বারবার ভাড়া চেয়ে বিরক্ত করে। আর বসে থাকলে দেখা যাবে আরেকজনের পশ্চাদ্দেশ তোমার মুখের উপর কিংবা তার দুই রানের মাঝামাঝি পয়েন্টটা তোমার গায়ে এমনভাবে সেট করে রেখেছে তোমার বমি পাচ্ছে কিন্তু তোমার কিছু করার নাই। ঐ লোকটারও দোষ নাই। তার পিছনে এমন ঠাসাঠাসি অবস্থা তার নিজের জান ত্রাহি ত্রাহি করছে। সারাদিনের অফিসের শেষে এই সমস্ত ধাক্কাধাক্কি ঘষাঘষি পার করে বাসায় এলে মেয়েটা যখন নাকের ফুটোয় দুই আঙুল ঢুকিয়ে দেয় কিংবা চুল ধরে টানা করে তখন রাশিদুলের আর কিছু মনে থাকে না। মেয়ের এখনো কথা ফোটেনি। বায়না ধরতে পারে না। রাগ করতে পারে না। অভিমান করে না। একটু উঁ আঁ আর নাচানাচিতেই রাশিদুলের মনে হয় কত সুখের জীবন। মেয়ের মা চা এনে দেয়। মেয়েকে সাবধানে ধরে চায়ে চুমুক দেয়। উড়ুৎ উড়ুৎ করে চা খায়। এই নিয়ে জারার মা কত হাসাহাসি করে, তবু এই অভ্যাস যায় না তার। কিন্তু আজকে চা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, রাশিদুলের খেয়াল থাকে না। উড়ুৎ উড়ুৎ করার দরকার পড়ে না। মেয়েকে বুকের মাঝে ঝড়িয়ে ধরে, আরো জোরে জড়িয়ে ধরে। বউ রান্নাঘর থেকে এসে জিজ্ঞেস করে ‘কি হইছে তোমার? শরীর খারাপ?’

না শরীর খারাপ না। শরীর তার খারাপ করে না। কিন্তু আজকে জারাকে দেখলেই তার –, তার কি—-? কি, সেটা সে নিজেই বুঝতে পারে না। কিছু একটা করা দরকার? কি করবে? তার কি করার আছে। এই শহরে দেড় কোটি মানুষের ভীড়ে সে কি? খড়কুটা; একটা ধূলিকণা মাত্র। জারা এখন বাবার গায়ে হিসু করে দিয়েছে। জারার হিসুতে ধূলিকণা ধুয়ে যায় না। জমাট বাঁধে। জারার হিসু পরিষ্কার করার কথা মনে থাকে না। বউ এসে জারাকে নিয়ে যায়। কিন্তু জারা রাশিদুলের মনের ভেতর বেড়ে উঠে বড় হয়ে যায়। জারার চারিদিকে কিলবিল করে ভাইরাস। দৈত্যের মত সে ভাইরাস শুঁড় বাঁকিয়ে বাকিয়ে এগিয়ে আসে। অসহায় জারা আর্ত চিৎকার করে।বাবা! বাবা!! আকাশ বাতাস ভারী হয়ে আসে চিৎকারে। মেয়ের চিৎকারে রাশিদুল কি করে? রাশিদুলের হাতে কোন ভ্যাকসিন নাই। রাশিদুল হাতড়ায়, খালি হাতড়ায়, ভ্যাকসিনের খোঁজে। ভ্যাকসিন পায় না। পায় মোবাইল। মোবাইল হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকে। মেসেজ দেয় সবাইকে যে আছে যেখানে। সবাইকে সে রিকোয়েস্ট করে,

“আগামি শুক্রবার (০৪/০৫/২০১৭) সকাল ৯ টা থেকে ৯.৩০ পর্যন্ত আমি একজন নাগরিক ও একজন পিতা হিসেবে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়াতে চাই, হযরত আলি আর আয়শার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে, যারা হযরত আলি আর আয়শা হত্যার বিচার চান আশা করি আপনাদের ও সাথে পাব”।

শুক্রবার সকালে, কেউ আসেনি, কেউ আসে না, কেউ না।
শুধু রাশিদুল একা দাঁড়িয়ে থাকে, একা। হাতে তার মত একা একটা প্ল্যাকার্ড, বিষণ্ণ ও বিপ্লবী।

ঝড়ের_রাতে_মামুনের_অণুগল্প

আকাশের এক প্রান্তকে চিরে দিয়ে অন্যপ্রান্ত পর্যন্ত বিদ্যুতের চমকের পর পরই বজ্রপাতের প্রচন্ড শব্দে কানে তালা লেগে যায়। এই অবসরে ওর রুমে ঢুকে পড়া এক যুবতীর দরজার হুক ভেতর থেকে আটকে দেবার শব্দটাও চাপা পড়ে।

মুষলধারে বারিধারা ঝরে পড়ার এমন দিনে কোথায়ও কেউ নেই। এক আঠারো বছরে সদ্য পা দেয়া যুবক অতৃপ্ত এক রমনীর সামনে দাঁড়িয়ে ঢোক গিলে। রমনী বড্ড রমনীয় ভাবে নিজেকে সামনে মেলে ধরে.. তাঁর বুকের আঁচল মাটিতে পড়ে যায়! প্রচন্ড এক অপ্রতিকূল আবহাওয়ায় একজোড়া আদম-হাওয়া, কাছে-দূরের অনুভূতি পার করতেই বুঝি নৈঃশব্দের প্রহর শেষ হবার অপেক্ষায় থাকে!

#ঝড়ের_রাতে_মামুনের_অণুগল্প

অণুগল্প : ভুতোলোজি

ভুতোলোজি

‘ভুত একটি সাইন্টেফিক প্রাণী, ভুতকে অস্বীকার করা মানে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করা..’

এটুকু শুনেই রবীন্দ্রনাথ ভাষা হারিয়ে ফেললেন। চোখের পলক পড়ছেনা। বিস্ময়ে মুখ হা হয়ে আছে। ফেলবার্ট ভুতস্টাইন যোগ করলেন, ‘পৃথিবীতে ভুত এবং মানুষের বিকাশ একই সময়ে শুরু, মানুষ ও ভুত সমসাময়িক প্রাণী।’

আড়াইটা ঢেকুর (তিনটেই হতো, তবে শেষ ঢেকুরটা পুরো গিলতে পারেননি, অর্ধেকটা গলায় আটকে আছে)তুলে রবীন্দ্রনাথ জানতে চাইলেন-
: ভুত আর মানুষের বিকাশ সমসাময়িক?

বাচ্চাদের অর্থহীন প্রশ্ন শুনে বড়রা যেমন করে হাসে ভুতস্টাইনও তেমন খ্যাঁকখ্যাঁকিয়ে হেসে উঠলেন, হাসি থামিয়ে বললেন-
: মিস্টার টেগোর, অবশ্যই সমসাময়িক। অন্যান্য হোমিনিড গোত্র থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে আলাদা প্রজাতি হিসেবে হোমো স্যাপিয়েন্স অর্থাৎ মানুষের উৎপত্তি। তবে, বিজ্ঞান বলে ২৩ থেকে ২৪লক্ষ বছর আগে শুরু হওয়া বিবর্তনে হোমো ক্যাটগরিতে অনেক প্রজাতিরই উদ্ভব ঘটেছিলো। এর মধ্যে ভুত, মানুষ আর হোমোসেক্স ছাড়া বাকী প্রজাতিগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

রবীন্দ্রনাথ জোড় দিয়ে বললেন-
: স্যার ভুতস্টাইন, আপনার এসব তথ্য কিন্তু প্রমাণ করেনা যে ভুত আছে। সাইন্টিফিক প্রাণী হওয়া তো পরের কথা।

ভুতস্টাইন নড়েচড়ে বসলেন, যেনো ক্লাশ নিচ্ছেন এমন করে বলতে শুরু করলেন-
: তত্বকথায় যাবো না। সহজ করে বলি। ডারউইনের বিবর্তনবাদ বলে যে, লক্ষ লক্ষ বছর আগে বানরদের একটি প্রজাতি গাছ থেকে মাটিতে নেমে এসেছিলো। তারা দু’পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে শিখেছিলো। এরাই মানুষেরর পূর্বপুরুষ। ক্লিয়ার?
: জ্বি, পরিস্কার বুঝতে পারছি।
: ভেইরি গুড, বানরদের একটা প্রজাতি মাটিতে নেমে এসেছিলো, ওই সময়ে অন্য আরেকটা প্রজাতি গাছের মগডালে উঠে বাস করতে শুরু করেছিলো। লক্ষ লক্ষ বছরের বিবর্তনে মানুষ হাঁটতে শেখে, আর মগডালে ওঠা প্রজাতিটি অদৃশ্য হয়ে ভাসতে শেখে। হোমো গ্রুপের স্যাপিয়েন্স যেমন মানুষ, তেমন মামদোপিয়েন্স প্রজাতিটিই হচ্ছে ভুত।

রবীন্দ্রনাথ বহুক্ষণপর স্বস্তি পেলেন, হাসতে হাসতে বললেন-
: হোমো মামদোপিয়েন্স-এর কথা তো কোনো বিজ্ঞানী বলেননি, এমন কিছু নেই।

আবার খ্যাঁকখ্যাঁকিয়ে হেসে উঠলেন ভুতস্টাইন-
: অহংকার পতনের মূল। লক্ষ লক্ষ বছর আগে জেনেটিক রোগ অহংকারোসিসে আক্রান্ত হয়েই মানুষের পূর্বপুরুষের অধঃপতন ঘটেছিলো। মানে গাছ হতে মাটিতে ধপ্পাস।
: মানে?
: মানেটা ভেরি সিম্পল, আপনার কি ধারণা বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, নায়ক, গায়ক, কবি সাহিত্যিক শুধু মানুষরাই হতে পারে ! অবশ্য, আপনার এই মনোভাবকে দোষ দেওয়া অন্যায়, এটা তো অহংকারোসিস রোগের সংকীর্ণচিন্তানিয়াম উপসর্গ।

রবীন্দ্রনাথ উত্তেজিত হননা, কিন্তু মানুষের প্রতি এ অপমানে তিনি রাগে থরথর করে কাঁপছেন, আধগ্লাস নিমপাতার রস এক চুমুকে শেষ করে বললেন-
: ইউ হ্যাভ নো অধিকার টু অপমান হিউম্যান। যা বলতে চান স্পিক সরাসরি।

ভুতস্টাইন রবীন্দ্রনাথের রাগকে পাত্তা না দিয়ে বললেন-
: পৃথিবীর জ্ঞানে বিজ্ঞানে যে জাতি সবচে বেশী এগিয়ে আছে তা হচ্ছে ভুতজাতি। ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্বের ১৬হাজার বছর আগেই প্রেতউইন এ তত্ব দিয়ে গেছেন। প্রেতউইন একজন ভুত। নিউটনের মধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কারের ১৯হাজার বছর আগে দানোটন মধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং ভুতদের ক্ষেত্রে মধ্যাবিকর্ষণ শক্তির ৩৪টি সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। এমন উদাহরণ আছে হাজার হাজার। শুধু বিজ্ঞান নয়, সাহিত্য শিল্পকলাতেও ভুতজাতি মানুষের তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছে।

সাহিত্য শিল্পকলার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দিতে রাজী নন রবীন্দ্রনাথ, তিনি বললেন-
: যে না ভুত জাতি! তার আবার সাহিত্য আর শিল্পকলা!! লেজ নাই বাঁদরের লেজরাজ নাম!

ভুতস্টাইন খুব জোড় দিয়ে বললেন-
: তাচ্ছিল্য করবেন না। আমাদের নমস্য সাহিত্যিক শাঁকচুন্নীন্দ্রনাথ পাকুড়ের ‘ভুতাঞ্জলি” নকল করে ‘গীতাঞ্জলী” লিখে কোন মানুষ লেখক না কি নোবেল প্রাইজও পেয়েছেন, আপনি জানেন!

এ কথা সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারালেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা চলছে, তিনি মাঝে মাঝে চোখ খুলে বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছেন, এরপর ‘ভুতাঞ্জলী’ উচ্চারণ করেই ফের অজ্ঞান হয়ে পরছেন। এদিকে ভুতস্টাইনও রাগে হাওয়ায় ভাসছেন, সব সহ্য হয়, কিন্তু ভুত জাতির অপমান আর মানুষের অহংকার মেনে নেওয়া যায় না। ভুত মানেই যে বিজ্ঞান- আজ এটা কবুল না করানো পর্যন্ত এখান থেকে তিনি নড়বেন না, এক্কেবারে নড়বেন না।

_________________
#ভুতবিজ্ঞান/০৫০৪২০১৯

।। লোভ // মামুনের অণুগল্প ।।

কসাইয়ের দোকানটা মাছ বাজারের সাথেই। দুটি গোশতের দোকান পাশাপাশি। একই মালিকের। গরুর দুইটা রান ঝুলছে। এর বিপরীত দিকে রাস্তার ওপারে, এক বুড়ো কুকুর দুপায়ের উপর মাথা রেখে চুপচাপ হামাগুড়ি দিয়ে আছে। তবে দৃষ্টি গোশতের দিকে নিবদ্ধ। ওর হাত পাঁচেক তফাতে, এক পঙ্গু বৃদ্ধ ভিক্ষুক। সামনে ‘অ্যালুমিনিয়ামের’ পুরনো থালা নিয়ে বসে আছে। কিছু মলিন নোট আর খুচরা পয়সা দেখা যাচ্ছে।

একটা সাদা প্রাইভেট কার এসে রাস্তার পাশে থামে। মালিক মধ্যবয়ষ্ক। জুলফির কাছে কিছু শুভ্র কেশের উপস্থিতি তাকে কেমন আলাদা ভাবগাম্ভীর্যে ভারিক্কী করে তুলেছে। তিনি ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে মাছ বাজারে ইলিশ বিক্রেতার সামনে গিয়ে দাঁড়ান। দরদাম করে মূল্য পরিশোধ করেন। এক হালি বড় সাইজের ইলিশ নিয়ে ওনার ড্রাইভার গাড়ির ‘বুটে’ রেখে দেয়। পঙ্গু ভিক্ষুকের নির্ণিমেষ দৃষ্টির সামনে মাছগুলি ‘বুটের’ ভেতর চালান হয়ে যায়। মুখটা লোভের লালায় ভরে উঠে ভিক্ষুকটির।

প্রাইভেট কারে বসে, ইলিশের ক্রেতা বিষয়টি লক্ষ্য করেন। পরক্ষণেই মানিব্যাগ থেকে দুটি বঙ্গবন্ধুর ছবিওয়ালা পাঁচ টাকার কয়েন, ভিক্ষুকের থালা লক্ষ্য করে ছুড়ে দেন। নির্ভুল লক্ষ্য!

ঝনঝন শব্দে সে দুটি থালায় গিয়ে পড়ে। এরকম গাড়িওয়ালাদের লক্ষ্য সবসময়েই নির্ভুল হয়। কয়েন দুটির যথাস্থানে পড়াতে, গাড়ির মালিকের চোখ দুটি আত্মতৃপ্তিতে বুজে আসে। তাকে নিয়ে সাদা গাড়িটি রাস্তার ধুলা উড়িয়ে সগর্বে চলে যায়।

ধুলার ভিতর আরো কিছু ধুলা মেখে বৃদ্ধ ভিক্ষুকটি কুকুরটির দিকে চেয়ে থাকে। এই মাত্র গোশতের দোকান থেকে এক টুকরা বাতিল হাড্ডি কুকুরটির সামনে ছুড়ে দিয়েছে কসাই লোকটা। কুকুরটি মুহুর্তে সজাগ হয়ে কান খাড়া করে। এগিয়ে হাড্ডিটা মুখে নিয়ে নিজের আগের জায়গায় ফিরে আসে। এরই ভিতর একবার কসাইয়ের দিকে তাকায়। সেই চোখে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টি। দেখে কসাই ও আত্মতৃপ্তিতে ভোগে।

বৃদ্ধ ভিক্ষুকের চোখে জিঘাংসা! না পাওয়ার ক্ষোভ। সেই অকৃতজ্ঞ দৃষ্টি নিয়ে সে কুকুরটির দিকে চেয়ে থাকে। কল্পনায় ওর এক হালি ইলিশ। এই মাছগুলি ওর মুখে যে লোভের লালা তৈরী করেছে, সেগুলি একত্রীত করে সে। অদৃশ্য সাদা প্রাইভেট কারটির মালিককে উদ্দেশ্য করে এক দলা থুথু নিক্ষেপ করে। যদিও একটু আগে, সেই মানুষটি তাকে দশটি টাকা দান করেছে! কিন্তু কল্পনায় ভাজা ইলিশের সুঘ্রাণ তাকে সেটা বিস্মৃত করায়।

ওদিকে শুকনা গোশত বিহীন একটা হাড্ডি মুখে নিয়ে কুকুরটি লেজ নাড়ে… আর কিছুক্ষণ পর পর কসাইয়ের দিকে কৃতজ্ঞ চোখে চেয়ে থাকে।।

#মামুনের_অণুগল্প

সুন্দরী বিলকিস এবং পাগলা জায়েদ -(অনুগল্প)

তারপর পাগলা জায়েদ যখন পুরো গ্রামে লাফালাফি ঝাঁপাঝাঁপি করে এলো এবং সবাইকে বলে বেড়ালো সে এই গ্রামের সবচাইতে সুন্দরী বিলকিসকে বিয়ে করবে সবাই হাসলো। বাচ্চারা তার দিকে ঢিল ছুঁড়তে লাগলো।
শুধু বিলকিস লজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারলো না। গ্রামের সবাই এসে বলতে লাগলো বিলকিসকে ঘটনাটা। এতে যে বিলকিস লজ্জা পেতে পারে অপমানিত বোধ করতে পারে এটা কেউ কেউ বুঝলেও বেশীরভাগই বুঝলো না। যারা বুঝলো তারা বিলকিসকে লজ্জা দেয়ার জন্য আরো বেশী করে রসিয়ে রসিয়ে বলতে লাগলো –
এমনিতে বিলকিস অসামান্যা সুন্দরী বলে এলাকার অন্য মেয়েরা ঈর্ষায় ভোগে। বিলকিসের এই নাজেহাল অবস্থায় তারা একধরনের পৈশাচিক আনন্দে আমোদিত হবার সুযোগ পেলো –

পাগলা জায়েদ ঘরে এলো। তার বয়স ৪৫ এর চাইতে কিছু বেশী। কাঁচাপাকা দাড়ি আর ভাংগাচোরা চেহারার কারণে তার বয়স আরো বেশী মনে হয়। জায়েদের বউ বললো শোনেন আফনে যে পাগল না সেইটা সবাই না বুঝলেও আমি বুঝি। আফনে বিয়াইতা মানুষ, বিলকিসের লাইগা পাগল অইছেন কেরে ? জায়েদ ঘরের মধ্যে দুইটা বড় করে লাফ দিল। এরপর বউয়ের কাছে এসে এভাবে সেভাবে হাত ঘুরালো, নাচানাচি করলো যাতে তাকে আরো বেশী পাগল মনে হয়।
তার বউ রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলো। তার ছেলেটা মাকে জিজ্ঞেস করলো – মা বাপজান কি হাছাই পাগল হইছে না শয়তানি করে ?
জায়েদ তার বউ কে বললো বউ ক্ষিধা পাইছে। ভাত দেও।
তার বউ রাগ করে ভাত না দিলে সে নিজেই ভাত খেয়ে নিলো।
মনে মনে ভাবতে লাগলো আচ্ছা এত সুন্দরী বিলকিসকে সে কি আসলেই বিয়ে করতে পারবে ? যদি না করতে পার তাহলে তার এত পরিশ্রম সব বৃথা। এই যে পাগল হয়ে থাকা এটা কম কষ্টের না। তার উপর পোলাপাইন গুলোন এত্ত শয়তান। যেদিন থেকে পাগলের অভিনয় শুরু করেছে এরপর থেকে বাহির হইলেই ইটা মারা শুরু করে। এ গুলানের জ্বালায় একটু শান্তিতে থাকা যায় না।

বিলকিসের বাবা স্থানীয় হাই স্কুলের হেডমাস্টার। তার স্কুলের দপ্তরী এই জায়েদ। এত্ত বড় সাহস তার, ভাবতে কষ্ট লাগছে। এলাকায় মুখ দেখানো কষ্ট হয়ে পড়ছে। ঘর থেকে বের হতেই লজ্জা লাগে। তার এত ছাত্র, অভিভাবক, গ্রামের মানুষ।

ঘরে এসে স্ত্রীর সাথে আলাপ করলেন কি করা যায়। বিলকিসের মা বললেন “কই কি ওরে আপনে ওর খালার বাড়িতে দিয়া আসেন। সে আপাতত ওইখানে থাকুক। জায়েইদ্দা হারামজাদারে ভালা কইরা একটা মাইর দেয়ার ব্যবস্থা করেন। মাইরের উফরে ওশুধ নাই।”

পরের দিন রাতের অন্ধকারে বিলকিসকে চুপিচুপি তার খালার বাড়িতে রেখে আসা হলো। জায়েদ কে শায়েস্তা করার জন্য এলাকার বড় ছেলেরা এক হলো। এর মধ্যে বিলকিসের প্রেমিক রুমিও ছিলো। সে জায়েদের এই বেয়াদবি সহ্য করতে পারছিল না।

জায়েদের মন আজ বড়ই বিষণ্ন। বিলকিসকে নাকি পার করে দেওয়া হইছে। তারে যেখানে পার করা হইছে খোঁজ করতে হবে। এরপর আবার সেখানে যাইয়া কাজে নামতে হবে। বিলকিসকে প্রথম যেদিন দেখেছে সে বিশ্বাস করতে পারে নাই মানুষ এত সুন্দর হইতে পারে।

অন্ধকার হয়ে আসছে।
জায়েদ বিষণ্ন মনে হাঁটতে লাগল গাঙ এর পাড় দিয়ে – সন্ধ্যার আধো আলো আধো অন্ধকারে এই গাঙকে লাগছে চিকন ফিতার মতো – সে ভাবলো তার সাথে যদি বিলকিসের প্রেম হয় তবে ভরা বর্ষায় সে আর বিলকিস এখানে বসে গল্প করবে – বিলকিসের হাতের উপর তার হাত – এটা কল্পনায় আসতেই সে পুলক অনুভব করলো – কিন্তু
হঠাৎই আক্রমন —
একদল মানুষ তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো – জায়েদ দৌড় দেবারও সময় পেলো না।

পিতাগোরাসের মহাউচ্চতর গণিত

পিতাগোরাসের মহাউচ্চতর গণিত

অটো হইলো গিয়া ব্যাটারিচালিত টেম্পু। অটোতে চড়লে সবসময় সামনের সিটে অর্থাৎ ড্রাইভারের লগে বসি। স্বভাবদোষে তাগো লগে কথা কই, তাগো কথা শুনি, তাগোর চোখ দিয়া আরেকটা দুনিয়ার কোনাকাঞ্চিতে উকি মারি, তাগো দুনিয়াটা বুঝবার চেষ্টা করি আর নিত্যনতুন ‘চোখের আলো দেখেছিলেম চোখের বাহিরে’ দেখি।

সকাল ৮টায় মফস্বলের রাস্তায় অটোতে উঠছি। যথারীতি ড্রাইভারের লগে বইছি। রাস্তার অবস্থা ভাঙাচুরা, ছালবাকলা উঠা নেড়িকুত্তার মতন। সামনে এক মালবাহী ট্রাক। শামুকের গতিতে আগাইতাছে ট্রাক, আধমরা শামুকের গতিতে পিছনে পিছনে ছুটছে অটো। ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য কইরা ‘এই রাস্তা যে কবে ঠিক অইবো!’ কইতেই তিনি মৌখিকভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অনেক কিছু করলেন, ট্রাক ও ট্রাক ড্রাইভাররেও ছাড়লেন না। এই শীতের মদ্যে তারে ফরজ গোছল করতে অইবো ভাইবা খারাপই লাগলো। আচমকা তার ফোন বাইজা উঠলো, স্পীকার মুডে দিয়াও কানের লগে কমদামী মোবাইল সেটটা চাইপ্পা ধইরা হুংকার দিয়া উঠলেন-
: অই! তুই ফোন করছোস ক্যা! অই হারামির বাইচ্চা, ক ফোন করছোস ক্যা?
: ও আব্বা, তুমি চাইরশো টাকা দেওনা আব্বা। বেরাকের কিস্তি দিমু। আব্বা দাওনা, আব্বা।
: হারামির বাইচ্চা হারামি! আমার কাছে টাকা নাই। তোর পিরিতের জামাই কই!
: কামে গেছে, উই আইলেই দিয়া দিমু। ও আব্বা, দাওনা আব্বা।
: আমার কাছে টাকা নাই। থাকলেও তুই হারামীরে দিতাম না।

ওপাশে ‘আব্বা, ও আব্বা’ কাতর অনুনয় শেষ হওনের আগেই তিনি লাইন কাইটা দিলেন। ট্রাকের পিছনে থাইমা থাইমা অটো আগে বাড়তাছে। ধুলার ঠেলায় নাক ঢাইক্যা ঘটনা বুঝার চেষ্টা করতাছি। তিন চার মিনিট পরে ড্রাইভার স্পিকার চালু কইরা মোবাইল সেট কানে চাইপ্পা রাইখা ফোন দিলেন, হুংকারের মাত্রা আগের থিকা বেশী-

: অই হারামীর বাচ্চা হারামী, টাকা কহন লাগবো?
: আব্বা, বেরাকের কিসতি দিমু। ১১টায় লাগবো।
: তুই কেউরে অটো ইসটানে (স্ট্যাণ্ডে) পাডা, ১০০০টাকা দিতাছি।
: আব্বা, তুমি চাইরশো টাকা দাও, বেশী দিওনা আব্বা। তোমার গাড়ি জমার টাকায় টান পরবো।
: হারামীর বাচ্চা, আমারে লয়া চিন্তা করণের ঢং করবি না। ছয়শো টাকা দিয়া মুরগীর গোশতো কিন্যা খাইস। আর চাইরশো টাকা আইজ বিকালে শোধ না দিলে তগো দোজখ কইরা ছাড়ুম, মনে রাহিস।

ড্রাইভার লাইন কাইটা ফোনসেট পকেটে রাইখা নিজেই কইতে শুরু করলেন-
: বুঝলেন ভাই, মাইয়ার লাইগা কইলজা পোড়ায়। আবার গোস্বাও অয়।
: কেন গো ভাই!
: বহুত আদর কইরা বড় করছিলাম। পড়ালেখা শিখাইছিলাম। গালস (গার্লস) ইস্কুলের স্যারেরা কইতো মেট্টিকে (মেট্রিক/এসএসসি) গুল্ডেন জিপি ফাইব পাইবো। বড় জায়গায় সম্বন্ধ ঠিক কইরা রাখছিলাম।
: পরীক্ষা দেয় নাই?
: দুইটা পরীক্ষা দিছিলো। তারপর ভাইগ্যা গেছে। এক আকাইম্মা ব্যাডায় ভাগায় নিছিলো। অবশ্যি ব্যাডায় তিন মাস দইরা গার্মেন্টে কাম করে। গার্মেণ্টে কাম কইরা কি ছয় পেটের সংসার চলে! তার মইদ্যে মাইয়াটা পোয়াতি হইছে। অহনে পেরেম-পিরিতি চাবাইয়্যা চাবাইয়্যা খা।

অটো চলতাছে। ময়লা নীল সোয়েটার আর মাথায় রিকণ্ডিশন ময়লা মাফলার প্যাঁচানো এক মহাপুরুষ অটো চালাইতাছেন। যিনি মাইয়ার কাছ থেকা চাইরশো টাকা না পাইলে দোজখ বানায়া ফালাইবেন মাগার ছয়শো টাকা মুরগীর গোশতো খাইতে দিবেন। এইসব অংকের হিসাব দুনিয়ার কোনো স্কুল-কলেজ-ভার্সিটতে শিখায়না, এইসব সুপার হায়ার ম্যাথ অর্থাৎ মহাউচ্চতর গণিত জনকের কলিজায় থাকে। পিথাগোরাসের জ্যামিতি পিতাগোরাসের জ্যামিতির মতন সূক্ষ্ম হইবার পারবোনা কোনোদিন। অটো থেকা নাইমা আবদার করি-
: চলেন, এই ঠাণ্ডায় দুই ভাই মিলা একটু চা খাই।
: না ভাই, চা লাগবো না।
: ভাই রে, দুই অচিন মুসাফির চল্লিশ কদম একলগে হাটলে ভাই হয়া যায়, আপনের অটোর চাক্কা কতবার ঘুরছে হিসাব করেন। আমরা তো চাচাতো ভাই হয়া গেছি। লন, চা খাই!
: হেহেহেহেহে

দু’জন মিলা চা খাইতাছি। আসলে একজন মহাপুরুষের লগে কিছুটা সময় থাকা আর তারে চা খাওয়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইতাছিলাম না। চায়ের মাঝখানে তিনি সিগারেট ধরাইলেন, তার শস্তা দামের সিগারেটের কড়া গন্ধও কেমন মিশকাম্বার আতরের ঘ্রাণের মতন লাগে। হঠাত দেখি পোস্টারের মহাপুরুষদের মতন তার মাথার পিছনে বিশাল হলুদ আলোর বৃত্ত- উরররররেএএএ সুন্দর!

#সৌন্দর্যগ্রস্থ-৬