অনেকদিন পরে সুদীপ্তর সঙ্গে দেখা হল। ও বলল ও এখন ভারত সরকারের যোজনা কমিশনে কাজ করে।
পিছনের বেঞ্চিতে বসত। পড়া পারত না। মোটামুটি রেজাল্ট করে কলেজে গেল। আমিও মাস্টার ডিগ্রির পরে একটা কাজ যোগাড় করে সংসারী।
জিজ্ঞেস করলাম, এইসব পোষ্টে যেতে হলে কি করতে হয়? ও বলল – কি আবার? পড়াশুনা করলেই এরকম অনেক রাস্তা খোলা থাকে।
বাড়ি ফিরে দেখলাম ছেলে পড়ছে। মেয়েকে বললাম – আমি চা করছি। তোরা পড়তে বস।
মিসেস আমার দিকে তাকিয়ে ছেলেকে যোগ বিয়োগ শেখাতে লাগল।
আমিও চায়ে চুমুক দিয়ে অনেকদিন পরে একটা বই টেনে নিলাম।
বিভাগের আর্কাইভঃ অণুগল্প
অণুগল্প : নীলা
নীলা তন্ন তন্ন করে ব্যার্থ সার্টিফিকেট খুঁজছে। এ ঘরে ও ঘরে। হঠাৎ যেন বুকের ঠিক মধ্যখানে চিনচিন করে উঠলো। স্বপ্ন গড়ে স্বপ্ন ভাঙে স্বপনেরও খেলা ঘরে। ছোট্ট একটা চিঠির ভাঁজে আঙ্গুল ছুঁয়ে নিমিষে চলে গেলো কক্সবাজার।
বয়স তখন ১৮ কি ১৯। বন্ধুরা মিলে কক্সবাজার গিয়েছিলো। সেই কবেকার কথা। আঁধার রাতে দুই মাতাল বন্ধুর খুনসুটি আর কত গল্প কত কথা। ধোঁয়াটে রুমে আধো আলোতে ভাসলো দুটি পাখি মেঘের ভেলায়। ঝুম বৃষ্টি নামলো, চঞ্চল নীলা সে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে গেলো। কখন কিভাবে দুটি ঠোঁট, ঠোঁটের ভেতর নীল স্বপ্নের মতন ছুঁয়ে রইলো অনন্ত আদি প্রেমের দুই যুগল।
নীলার হাতে তখনও ছোট্ট চিঠিখানা ধরা। নীলার পুত্র যখন এসে বললো, মা তোমার ফোন বাজছে. নীলা যেন, চিলের ডানায় চড়ে চলে এলো বর্তমানে. আদা, রসুন পেঁয়াজ, বাড়ি ভাড়া, সংসারের সস্তা নিয়মে।
বুকের চিনচিন ব্যথার দিকে তাকানোর সময় নেই নীলার। নীলার মেয়ে অনবরত যত্রতত্র মেঘের মূত্র ত্যাগ করছে। নীলা একবার মুছে এসে আবারও সার্টিফিকেট খুঁজছে। এর মধ্যে নীলার মায়ের ফোন এলো। ফোন ধরেই নীলা বললো, হ্যালো মা- ভালোবাসি মা, তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। মা তুমি কি জানো, বিষয় সম্পত্তি, নাম ডাক হাঁক কোনো কিছুর লোভ আমার কোনো কালে ছিল না। ছিলাম কাঙ্গাল ভালোবাসার। মাগো, ভালোবাসা কেন কাঁদালো আমাকে ? কোনো ভাবালো আমাকে? দরকষাকষিতে ব্যস্ত জীবনে আমার আবির্ভাব কেনই বা ঘটলো !!
নীলার মা এত কথার ফুলঝুরিতে কেমন যেন ঘাবড়ে গেলো। নীলা নিজেকে সামলে হো হো করে হেসে মা কে বললো, অবাক হচ্ছ ? ধুর মা… আমি তো আমার শব্দের বাগানের কিছু কুয়াশায় ভেজা গল্পের লাইন বলছিলাম।
মা মেয়ে দুজনই খুব হাসলো।
দর্পণ_মামুনের_অণুগল্প
সময়ের সাথে সাথে নিজের কর্মফলে মানুষ নিজ মনুষ্যত্ব হারায়। আবার কর্মগুনেই মানুষ অমরত্বও পায়।
শিহাব যখন মানুষ ছিলো, সেই সময়ের মুহুর্তগুলো মনে পড়ে। কেমন স্বাচ্ছন্দ্যে কেটে যেত দিন। যেন উদাসী গরম দুপুরে, দিঘীর জলে মাতাল সমীরের মৃদু সন্তরণ!
এখন অমানুষ পর্ব চলছে। সময়ের অসময়ের ফোড়ে, মানুষের সাথে সাথে একজন বাবাও হারিয়ে যায়। অক্ষম মানুষ সক্ষম বাবা হতে পারে কি?
এক জীবনে কেউ কেউ কিছুই হতে পারে না। জলে নিজের ছায়া। সেদিকে তাকিয়ে থাকাকালীন নিজের তিন জীবন শিহাবকে ঘিরে ধরে।
#দর্পণ_মামুনের_অণুগল্প_৫১২
পরপুরুষ
এক
এক দশকে তাদের একবারও দেখা হয়নি! বিশ্বাস হচ্ছে না? আসলে দুজনের কেউ-একটা অনিচ্ছুক হলেই সাক্ষাৎ অগুন্তি কাল ধরে পিছিয়ে যেতে থাকে।
ডিভোর্সের পরের মাসেই অরুণাভ বদলি হয়ে কলকাতা অফিসে চলে এল। শেক্সপিয়ার সরণি থেকে রাসেল স্ট্রিটে অদিতির ব্যাংক কতটুকু? তবু দশ ইন্টু তিনশো পঁয়ষট্টি ইনটু চব্বিশ ঘন্টা লেগে গেছে দুজনের মুখোমুখি হতে!
ফ্লাইট ন’টা দশে, বোর্ডিং টাইম আটটা পঁয়ত্রিশ। সে এয়ার ইন্ডিয়ার কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ঘাঁটছিল। হাতে বারো মিনিট, মানে কেএফসি থেকে একটা মুরগির ঠ্যাং সাঁটানোর পক্ষে যথেষ্ট — ভাবতে ভাবতে হাই উঠলো। মুখে হাত চাপা দিয়ে বাঁদিকে ঘাড় ঘুরিয়েছে কি…
অদিতি! ঝপঝপ করে হাঁটছে, সঙ্গে কে, গৌরবই তো। দশ বছর পিছিয়ে গেলে পাঁচ বছরের সংসার ছিল তাদের, তারও আগে তেরো মাসের প্রেম। তখন থেকে অরুণাভর কাছে শ্বেতপাথরের নগ্ন মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সময়; যদিও তার এক্স-বউ, হয়তো অরুণাভর ফিরে আসার সম্ভাবনায় ভয় পেয়েই, দু’বছরের মধ্যে ছোটবেলার বন্ধুকে বিয়ে করে বসেছিল।
আমি এতক্ষণ ধরে দিনমাসের হিসেব দিয়ে যাচ্ছি, তাই না? জীবন আসলে সংখ্যারই খেলা। সবাই বোঝে, সাড়ে দশ বছরের বড় বর তার গিন্নির সঙ্গে কিছুতেই ম্যাচ করতে পারবে না। অরুণাভ সরকার হোন না যতই হিন্দুস্তান লিভারের কমার্শিয়াল ট্যাক্স ম্যানেজার, যতই সারা বছর চরকিপাক মেরে বেড়ান কোম্পানির পনেরোটা ইউনিটে, বর্ধমানের ধ্যাড়ধেড়ে অম্বিকা-কালনায় তার শেকড়, যেখানে পরপুরুষ শব্দটা হচ্ছে মেয়েদের কাছে স্বামী ছাড়া অন্য সব ছেলের এক-কথায়-প্রকাশ!
দুই
অদিতিও তাকে দেখামাত্র চটাং করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আড়াআড়ি পার হয়ে যাওয়ার সময় একবার মেপে নেওয়ার ইচ্ছে ছিল অবশ্য, কিন্তু হাঁ করে এদিকেই তাকিয়ে আছে শয়তানটা। ওই পাগলের সঙ্গে এ-জন্মে চোখাচোখি করার ইচ্ছে নেই আর।
দা গ্রেট তারকাটা পরিবার তো অরুণাভদের!বাবা বুড়ো বয়েসে কোমরে দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকতো খাটের পায়ার সঙ্গে, এবং ওর ছোট মাসিকে বিয়ের একমাসের মধ্যে শ্বশুরবাড়ি কর্তৃক খাট-আলমারিসহ ওয়াপস! সেই বাড়ির মেজোপুত্রের মাথাখারাপের সঙ্গে উপরি পাওনা সন্দেহবাতিক। ইনস্যানিটির দু’কোটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ডিপ নেক ব্লাউজ কোনও কালেও পরতো না অদিতি, অথচ অসভ্য লোকটা অশান্তি শুরু করলো — “ছেলেরা তোমার পিঠের দিকে লোভীর মতো তাকিয়ে থাকে, খুব কষ্ট হয় আমার! তুমি ভিড়টিড়ের মধ্যে আঁচলটা নয় একটু পিঠের ওপর…।”
মানে, স্লো মোশানে দু’চারটে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া ছাড়া বুড়োর আর কোনও গুণ স্নিফার ডগ লাগিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওহ ভালো কথা, গৌরব আজ কটন বাডস আনতে ভুলে যায়নি তো?
তিন
শিলিগুড়ির টিটি-কোচের মেয়ে, প্লেন উথাল আর পাথালের সময়ে তুলোগোঁজা কান শক্ত দুহাতে চেপে রাখতো যে, তার মোস্ট অপছন্দ ছিল রবীন্দ্রগান। তারপর হঠাৎ এক ব্যাঙ্গালোর-কলকাতা উড়ানে ধরিত্রীর সাতশো কোটি মানুষকে হতবাক করে বলে ওঠে, “গান শোনাও প্লিজ; না না অরিজিৎ সিং নয়, অরুণাভ সরকারের”! তাড়াতাড়ি ইউ টিউব থেকে নামিয়ে রাখা নিজের গাওয়া রবীন্দ্রসংগীত চালিয়ে হেড ফোন অদিতির কানে গুঁজে দিলে শান্তিতে চোখ বুজেছিল সে। পরের তিন বছর প্লেনে উঠলে ওটাই নিয়ম।
আজ আবার সেই চেনা পারফিউমের ঝটকা, ঠিক তিন সেকেন্ডের জন্যে ফিরে আসা প্রত্নযুগ। অরুণাভর চোখ শিউরে উঠল অদিতির শিরদাঁড়ার পেছল পুষ্প উপত্যকায়, তৎক্ষণাৎ মুছেও গেল — মেয়েটা পিঠে আঁচল টেনে দিয়েছে!
নিভে যাওয়া চিতার কাঠে খইয়ের মতো আগুনের ফুলকি ফুটেছিল দেখার সঙ্গে সঙ্গে, এবার ওরা উড়তে লাগলো অরুণাভর চোখের তারায়! আমাকে বাতিল করলেও আমার সব আর্তিগুলো তাহলে মুছে দাওনি, সোনা!
তক্ষুনি পিঠোপিঠি ভাইয়ের মতো এল পরের ভাবনাটা। অরুণাভ টের পেল, শাবলের চাড় দিয়ে মাটি থেকে ফুলগাছ উপড়ে তোলা হচ্ছে:
আচ্ছা, অদিতি আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়েই গা ঢেকে নিলে কেন…ওহ, আমিও তো এখন পরপুরুষ! বন্ধু প্রেমিক বর বা ঝগড়ার উপলক্ষ্য কিচ্ছু নই। চোখ নাক ঠোঁট না-থাকা এক মুখ, স্বভাবহীন, নিশ্চিন্ত অচেনা…!
প্রশ্ন
ইরা যখন বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তখন আমরা ভেবেছিলাম ও নিশ্চয়ই কোন ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে।
ওর বাবা মা মুখ দেখাতে পারল না। সারা পাড়ায় ঢি ঢি পড়ে গেল। তবে কোথাও কোনো ইরার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ছেলে বন্ধুর কেউ খোঁজ পেল না। পাড়ায় রটে গেল নিশ্চয়ই খারাপ পাড়ায় উঠেছে।
প্রায় বছর পাঁচ সাত পরে ইরা বাড়ি ফিরে এল। একা।
অভিজ্ঞ হলধর ওর বাবাকে বলল – এতদিন পরে ফিরল, তাও মেয়েকে ঘরে তুললে? কোন প্রশ্ন করলে না?
ইরার বাবা বলল – ও যদি মেয়ে না হয়ে ছেলে হত, তাহলে কি এই প্রশ্ন উঠত?
নীরার ক্লান্ত দুপুর
অনেকদিন পর, নতুন করে আবারও লেখালেখিতে ফিরে যাবার চেষ্টা। কিন্তু মনে যেভাবে লেখাগুলো এলো, অক্ষরে সেভাবে রুপ দেয়া গেলো না। না লিখতে লিখতে, শব্দেরা আগের মত ধরা দিতে চাইলো না। তারপরও… নতুনভাবে আরো একবার শুরু হলো গল্প লেখা…
_____________
এক ভাতঘুমে ঢলে পড়া ক্লান্ত দুপুরে, এলোমেলো ভাবছিলো নীরা। ভাবনাগুলো ওকে কষ্ট দিচ্ছিলো। আবার কষ্টের ভিতরে কিছু সুখও ছিলো। সুখগুলো কষ্ট হয়ে পরক্ষণেই আবার কষ্টগুলো সুখে রুপান্তরিত হচ্ছিলো। হৃদয়ের এপিঠ-ওপিঠে লুকিয়ে থাকা প্রেম কতটুকু পুষ্টি পেয়েছে, সেই দুপুরে এমনটাই অনুভব করতে চাইলো নীরা।
অবাক হয় নীরা! কষ্টের অনুভুতি অনুভব করার পাশাপাশি কষ্টের রঙকেও দেখতে পায় সে! নীল জোছনা!!
নীল এর কথায় আরও একদিনের কথা মনে পড়ে। দিনটি ছিল অষ্ট প্রহরব্যাপী নীলাভ জোছনায় ঢাকা। হৃদয়ের দু’কূল প্লাবিত মৌণতায় ভেসে থাকা চাঁদের কণাগুলোও যেন নিঃসঙ্গতার তুলির ছোঁয়ায় আঁকা! এমন দিনে নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে, অকপটে মনের কথা বলতে, পিচ ঢালা জোছনাক্লান্ত পথ ধরে সেই বিবর্ণ নগরের দিকে পা বাড়িয়েছিলো নীরা। সঙ্গীহীন, বিবর্ণ ও বিষণ্ণ নীরা, সেদিন সময়ের তালে তালে হেঁটেছিলো পথ নিঝুম নিমগ্ন সুখে!
সেই ছেলেটি, যে ওকে জোছনা দেখাবে বলেছিল একদিন, সে ঐ শহরে থাকে। কাছে-দূরে করে করে বেলা বয়ে গেছে শুধু, নীরার- কিছুই বলা হয়নি তাকে। সেদিন শেষ প্রহরে, নীল জোছনায় ভিজে ভিজে, নীরা ছেলেটির বাড়ীর সামনে গিয়েও ফিরে এসেছিলো। সে আরেক গল্প.. ক্লান্ত দুপুরের এক নষ্ট গল্প।
ভালোবাসা হলো মনের মিলন। বাবা-মেয়ে, ছেলে-মা কিংবা বাবা-ছেলে কিংবা মেয়ে-মা এদের ভিতরে রয়েছে মন ও আত্মার সম্পর্ক। এখানে দেহের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর প্রেম হলো, ভালোবাসা সহ শারিরীক ও জৈবিক সম্পৃক্ততা।
সেই ছেলেটি ভালোবাসা ছাড়াই কেবল প্রেম করতে চাইলে, সেই ক্লান্ত দুপুরে, ভালোলাগা পুড়ে পুড়ে প্রেম না হয়ে, দাবানল হয়ে শরীর পুড়িয়েছিলো শুধু।
আরেক ক্লান্ত দুপুরে, হৃদয়ের দু’পিঠে তন্নতন্ন করে সুখগুলোকে খুঁজে ফিরে ভাবে নীরা,
– কতটা ভালোবাসি এখনও ওকে, বলা-ই হলো না তাকে!
_____________________________
#নীরার_ক্লান্ত_দুপুর_মামুনের_অণুগল্প_৫৪৮
জোড়া অণুগল্প
জোড়া অণুগল্প
**
আমি যেখানে বসা আছি, সেখান থেকে একদিন নিজেকে দেখার চেষ্টা করি এক নিরব প্ল্যাটফরমে, ওয়েটিং পিলারের সাথে হেলান দিয়ে বসে।
একটা অপেক্ষমাণ ট্রেন আর আমার ছায়া নিয়ে আমি এক উল্টাপাল্টা জীবনের অধিবাসী হয়ে বসে আছি, নিজেকে দেখবার ব্যাকুলতা মনে।
থার্ড ক্লাস সিটিজেনের ছায়ারও কায়া থাকে, আমার কায়া কোথায়.. সবাই আমার যে ছায়া দেখে ওটাই কি আমি?
এই দেশে আমি নাগরিকদের কোনো শ্রেণিতেই পড়ি না।
#শ্রেণিহীন_অণুগল্প_৪৮৮
**
মেইন রোডের সাথে অফিসের মোড়ে এসে প্রচন্ড জ্যামের কারণে ইমরুলকে নিয়ে আসা মাইক্রোবাসটি অনেক্ষণ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আরো অনেক অফিসগামী মাইক্রোবাস, মালামাল ও যাত্রী নিয়ে ট্রাক-বাস-টেম্পু আর ম্যাক্সির ভিড়ে, ইমরুলের অফিসের নীল মাইক্রোটিকে আলাদা করা যাচ্ছে না। সাথের অন্য কলিগেরা প্রায় সবাই-ই ঘুমে। দু’একজনের নাক ডাকছে। স্মিত হেসে ভাবে ইমরুল, রাতের বেলাটা এরা বাসায় কি করে? ঘুমায় না নাকি?
জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। লাইন ধরে পথের ভাঙ্গাচুরা অংশ দিয়ে যার যার কর্মক্ষেত্রে চলে যাচ্ছে সেলাই দিদিমনিরা। সেলাই বন্ধুরা। কত রঙ বে রঙ এর পোশাক পরণে তাদের। কিন্তু জীবনটা কি ওদের পরিধানের পরিচ্ছদের মত-ই বর্ণীল?
হাতে এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। কিছুক্ষণ আগ পর্যন্ত ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাসটি পড়ছিল। মোবাইলে পিডিএফ ফাইলগুলি অফিসে আসা-যাওয়ার সময়গুলোতে ইমরুলের বিশ্বস্ত সঙ্গী। কোনাবাড়ি থেকে অফিস শেষে ঢাকায় নিজের বাসায় পৌঁছাতে, দুর্বিষহ বেশ কয়েকটি জ্যামের কবলে পড়তে হয়। নাগরিক বিড়ম্বনা। সেই সময়গুলিতে পিডিএফ গুলোতে নিজেকে হারিয়ে ফেলে সে।
সামনের মাইক্রোটির টেইল লাইট জ্বলে উঠতেই ইমরুলদের গাড়ির ড্রাইভার বাসেত তৎপর হয়। কে কার আগে যাবে তার-ই এক দৃষ্টিকটু প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইমরুল। কেউ-ই আইন মেনে চলতে চায় না।
মোড় ঘুরে মেইন রোড থেকে শাখা রোডে ঢুকতেই ওদের কারখানাটিকে দেখতে পায় সে। চকিতে একটু আগে পড়া গোর্কির লাইনটা মনে পড়ে-‘কারখানার উঁচু উঁচু পাথুরে খুপরিগুলো ওদেরই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে নির্বিকার আত্মপ্রত্যয়ে।’
হ্যা! যদিও দুই দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্নতায় আবহাওয়া উপযোগী ইমারত নির্মাণের কারণে, ইমরুলের কাছে নিজেদের কারখানাটি উপন্যাসে বর্ণিত হুবহু অনুভব আনে না; কিন্তু সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এই বিশাল কংক্রিট- কাঠামো যে ওদেরকে গিলে খেতেই অপেক্ষায় রয়েছে, সেটা ভেবেই নিজের অজান্তে মনটা একটু দমে যায়। দীর্ঘশ্বাসগুলোও কেন জানি মহানগরের ভিতরের ছোট্ট এই নগরের প্রাচীরে বাঁধা পেয়ে ফিরে ফিরে আসে।
ওখানে দীর্ঘশ্বাসগুলির জন্ম হয় বলেই কি?
#একদিন_প্রতিদিন_অণুগল্প_৪৮৯
ব্যালকনির_মানুষ_মামুনের_অণুগল্প
পাশাপাশি দু’টি বিল্ডিং। ছ’তলা। নির্বিকার দাঁড়িয়ে। পথ চলতি মানুষের বিস্ময় উদ্রেককারী না হলেও, ভবন দুটির মুখ দেখতে তাদের ঘাড় ভেঙ্গে যাবার আশংকায় তারা উপর দিকে তাকায় না। নগর জীবনের ভেতর আরেক নগর যেন। গল্প সমৃদ্ধ জীবনের প্ল্যাটফর্ম।
দক্ষিণের ছ’তলার ব্যালকনিওয়ালা রুমটিতে তিনি থাকেন। একা। পাশের ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। পরিবার ভিন্ন এক শহরে থাকে। তিনি একা এই শহরে।
এখন অনেক রাত। গ্রিলের ওপারে নিচের জীবন অনেক জটিল। নিচু সামাজিক পদমর্যাদাধারীদের সাময়িক আবাসভূমি বলেই কি? উঁচুমনের উঁচুতলার মানুষেরা এই যে এদেরকে ‘নিচুতলার মানুষ’ তকমা এঁটে দিয়েছেন, দিচ্ছেন! তবে কে নিচু মনের? তিনি বিব্রত হন।
সিগ্রেট বাদ দিয়েছিলেন। এই বদ অভ্যাসটি আবার শুরু হয়েছে। তবে তা রাতের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে। চোরের মত সংলগ্ন ওপাশের ব্যালকনির দিকে তাকান। নাহ! কেউ নাই। এতো রাতে অবশ্য থাকার কথাও না কারও।
এখন রাত দেড়টা।
সামনের বিল্ডিংটির দিকে তাকান। তখুনি মেঘ সরে যায়। চাঁদের রুপালি স্রোতে ভেসে যায় চরাচর। নারী তার এলোচুলে আঁধারের আড়াল নিয়ে নিজের অতি স্বাভাবিক পরিচ্ছদে-নিজ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে। নিজের ভুবনে একা। কোথায়ও হারিয়ে যাচ্ছিল আনমনে। রুপালী ঝলকে ওপাশের তিনি বেশ স্পষ্ট হতেই, নারীর মনে পড়ে তিনি আলুথালু বেশে আছেন। কিছু পরিচ্ছদ গরমে খুলে এসেছেন, রেখেছেন গোপন জায়গায়। চোখের আড়ালে। তিনি যে আলোয় প্রতিভাত সাময়িক নিঃসঙ্গ মানুষটার কাছে- ‘কাছের নারী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন, নারী তা জানেন না। যেমন পুরুষ তিনি জানেন না, পাশের নারীর মনে তিনি ‘ব্যালকনির মানুষটা’ হিসেবে পরিচিত ছাপ ফেলে চলেছেন।
পাশের নারী গরম সহ্য করতে পারেন না। আর রাত বাড়তেই তিনি ক্রমশঃ যুবতী হতে থাকেন। গরম হন। তৃষ্ণা জাগে। নিজের মানুষটা তাঁর দূরের শহরে থাকে। তাই ‘ব্যালকনির মানুষটা’ ‘দুরের মানুষ হয়ে’ পাশের নারীর হৃদয় ছুঁয়ে থাকেন। অনুভবে- কল্পনায়! যেমন থাকে ব্যালকনির মানুষটার ভিন্ন এক দূরের শহরে- ‘দূরের নারী’ হয়ে তারও প্রিয় একজন! অর্ধাঙ্গিনী। ইদানিং ছায়াসংগী?
কতটা জিঘাংসা নিয়ে এই পাথর জীবন সব কাছের সম্পর্ক গুলিকে একাধারে কাছে-দূরের অনুভূতিতে আনা- নেওয়া করে চলেছে! হায়! কেউ জানতে চায়?
নাহ!
পাশের নারী এখন যুবতী। ব্যালকনির পিছনের তিনি তখন যুবক। যার যার দূরের প্রিয় মানুষ দু’জনও যুবক-যুবতী। মনে কষ্ট। শরীরে জ্বালা। সমাজ ভ্রষ্ট। এ অনুভব-শরীরের যন্ত্রণার। এক চরম নষ্ট কষ্ট। সব ভুলিয়ে দিতেই বুঝি বয়ে চলা বাতাস, পাশের নারীর দেহে পরম তৃপ্তির সুখানুভূতি এনে দিয়ে যায়। তিনি শীতল হন। ঘেমে যাওয়া তপ্ত শরীর জুড়িয়ে যায়। নিজের দেহের পরিচিত সৌরভ প্রিয় দূরের মানুষটার কথা মনে করিয়ে দেয়। মানুষটা তার দেহের এই ঘ্রাণ পছন্দ করে। রাতের গভীরে সময় গড়ায়- তপ্ততা বাড়ে- ঘ্রাণ বাতাসে মিলায়। ভালোবাসা বাড়ায়।
আজ তিনি কেন জানি বড্ড অস্থির। ভিতরে কোথাও আগুন লেগেছে। ফায়ারব্রিগেড এসেও নেভাতে পারবে না। এমন আগুন! প্রচুর বৃষ্টি দরকার। ভালোবাসার ঝিরঝিরে বর্ষণ। দূরের নারীর কথা মনে পড়ে তাঁর। কাছের নারী দূরের নারীতে পরিণত হন। এক নিষিদ্ধ লোবান!
নগর জীবনে দুটি ভিন্ন পাথরজীবন, কাছে-দূরের তীব্রানুভূতিতে বিলীন হয়ে কখন যে এক হয় নিজেরাও ওনারা জানতে পারেন না। অনুভবে একে অন্যের খোলস খুলে ভিতরের সুখগুলোকে অনুভবের চেষ্টা করেন।
সুখ তো ওখানে থাকে না।
ওরা ওখানে কেন ‘সুখের সন্ধানে’ ধায়!
সুখ কোথায়?
দুইটি অণুগল্প
এক.
বারো ঘন্টা কঠিন ডিউটি করে কাপড় পাল্টানোর মেলে না অবকাশ। ম্যাসেঞ্জারে মৃদু আওয়াজ। আমান ডিভাইস হাতে নেয়। সদ্য বন্ধু হওয়া এক নারীর মুখ ডিসপ্লেতে গোলাকার।
আয়নায় বিস্মৃত বন্ধুর মুখ? স্মৃতির প্ল্যাটফর্মে ঘুরে আসা ..পলকেই! নাহ! এই মুখ কষ্ট দেয়নি আগে।
অচেনা নারী শুধায় কালো অক্ষরে আলো জ্বেলে,
– কেমন আছ?
পরিচিত কোনো টোন কি ছুঁয়ে যেতে চায় আমানকে?
নাহ! এই টোন আগে কখনো কষ্ট দেয়নি আমানকে।
নির্জলা সত্যি বের হয় আমানের বুক চিরে,
– খুব খারাপ আছি। তুমি কে?
ওপাশে নীরব নারী।
জানার তীব্রতা মানুষেরই থাকে। একজন নামানুষ হয়েও এই আকাংখাটা আমানেরও বড্ড তীব্র। তাই কি ব্যাকুল হওয়া?
– বললে না, কে তুমি?
– বললাম তো ফেসবুক বন্ধু।
সরব হয় নারী।
– তা তো জানি। তুমি দেখতে নারীর মতো- বলছ বন্ধু। আসলেই কি তুমি তাই? তুমি কি নারীর আদলে সত্যিই নারী?
– হ্যা!
– শুনে খুশী হলাম। বন্ধু বুঝে আসে? না এমনিতেই বলছ ‘বন্ধু’?
– বুঝিনি তোমার কথা। কি করছ এখন?
– এক অচেনা নারী যে বলছে বন্ধু, কিন্তু বন্ধু তার বুঝে আসে না, তাকে নিয়ে অণুগল্প লিখছি। বলতো, নারী বন্ধু হতে পারে? না বন্ধু কখনো নারী হয়?
– বুঝি না আমি।
– হ্যা! এটা সত্য বলেছ। কখনোই বুঝ নি তুমি! বুঝলেও বুঝার মাঝে কিছু বাকি রয়ে যায় তোমার। নও রহস্যময়ী তবু ভান কর যেন রহস্যময়ী। তোমার কোন কোন রহস্যটা বুঝতে বাকি রয়েছে, বলতো আমায়?
ওপাশে শ্মশান নীরবতায় অচেনা নারীর নীরব প্রস্থান। আমান কি ব্যথিত হয়?
নাহ! ব্যথাগুলি তো সেই কবে পারুকে খুঁজতে চলে গেছে.. পারুর পিছুপিছু। ফিরেনি আজো।
তাই ব্যথা নাই।
বোধ নাই.. কিছুই নেই এখন আর।।
#নারী_রহস্যময়ী_মামুনের_অণুগল্প
______________________
দুই.
কাছে ঘেষত না সে, সব সময় শিহাবের থেকে দূরে দূরে। বিষাক্ত প্রাণীর সতর্কতা অবলম্বন করত পারু শিহাবের কাছে এলে। শিহাব যেন অমৃত বিষে পূর্ণ নীলকন্ঠ।
‘খবরদার শরীরে হাত দিবি না’
– নাহ, যা ভাবছেন তা নয়। কাছে থাকার সময়ের কথা না এটা। নিভৃতে ফোনালাপের সময়েই এই নিষেধাজ্ঞার বেড়ি।
দূরালাপনীতে পারুর সাথে কথা বলার সময়েও শিহাবকে, আরো অনেক কিছুর মত হাতের ব্যবহারেও সংযত হতে হতো। অনুভবে এক অদৃশ্য বেড়ি থেকেই যায়! নারীর পক্ষ থেকে পুরুষের প্রতি.. সবসময়।।
#বেড়ি_মামুনের_অণুগল্প
অণুগল্পঃ কসাই
আতিকউল্লাহ সাদিক প্রথম দুই দিন ঝিম মেরে ছিল। গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপের মত। তৃতীয় দিন তার ক্রোধের বিস্ফোরণ ঘটে। তখন সে খুব চিৎকার করতে থাকে।
-চম্পা; চম্পা আআআআ !
চম্পা তখন ওর ছোট বোন টুম্পার সাথে ফোনে কথা বলছিল।
-এই বুবু, ঈদের দিনেও আতিক্যা অমন হাম্বা হাম্বা করতাছে কেন রে?
-জানিনা। কয়দিন ধইরা সে এল-নিনোয় আক্রান্ত হইছে। মনে হয় ব্যবসায় লস খাইছে
-নতুন কোন ব্যবসা আবার?
-হ
-কিসের?
-মরুভূমিতে রুম হিটার সাপ্লাইয়ের
-যাহ; কী হইছে ঠিক কইরা ক। ওকে ঠকাস নাই তো? তোর প্রেম, পুরান প্রেমিক এসব কী জানি কইতাছে?
টুম্পার শেষ প্রশ্নের কোন জবাব চম্পা দেয়না। উত্তেজনায় মোবাইল না কেটেই সে আতিকুল্লাহর সাথে যেন সম্মুখ রণেতে নামে। টুম্পা মোবাইল ডিসকানেক্ট না করে সব শুনতে থাকে।
-আমার পচিশ বছর আগের প্রেম নিয়া এমন করতাছ?! তেইশ বছর তো সংসার করলা। কী করতে চাও এখন? ডিভোর্স? আমি প্রস্তুত !
আতিকউল্লাহর চেয়ে দ্বিগুন জোরে চিৎকার করে চম্পা জবাব দেয়।
চম্পার গলার স্বরে আতিকউল্লাহ কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়ে। সে আর কথা বাড়ায়না। তবে তখন পাশেই অবস্থান করা সন্তানকে সব বলে দেয়! সব মানে চম্পার পুরান প্রেমিক ইনবক্সে আতিকউল্লাহকে সত্যমিথ্যা যা কিছু বলেছে তার সবই। মোবাইলের অন্যপাশ থেকে টুম্পা সব কথাই শুনে।
ঈদের দিনেও আতিকউল্লাহর অমন কান্ড দেখে টুম্পার মন বিষন্ন হয়। সে মোবাইল ডিস্কানেক্ট করে বেশ কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর সে চম্পাকে একটা টেক্সট করেঃ
“ডিভোর্সের জন্য যতো বড় যুক্তিই থাকুক না কেন ডিভোর্স করলি তো তুই বাতিল মেয়ে মানুষের ক্লাবে আজীবন সদস্য হয়ে গেলি। অথচ অনেক দেশে তোদের মত করে এভাবে জোড়াতালি দিয়ে থাকার ভাবনাটাকেই বাতিল করে দেয়।”
ছোট বোন টুম্পার মেসেজটা চম্পা গুরুত্ব দিয়ে পড়ে। কিন্তু জবাব না দিয়ে সে গলির রাস্তায় একজনকে নিবিরভাবে দেখতে থাকে। লোকটার পরনে প্রায় হাটু পর্যন্ত লম্বা ধবধবে সাদা স্যান্ডু গেঞ্জি এবং একই রঙের পায়জামা। সে সম্মুখের রাস্তা দিয়ে ঘনঘন যাওয়া আসা করছিল। তার পুরো গায়ে গরুর রক্ত। বুঝতে সমস্যা হয়না যে, এই কুরবানীর ঈদে সে একজন হেড কসাই।
লোকটাতে চম্পা একবার তার পুরান প্রেমিকের মুখ দেখে; একবার তার স্বামী আতিকুল্লাহ সাদিকের। কোথাও জীবনানন্দের খোঁজ পায়না!
যোগী সোসাইটির মাঠ
ফাঁকফোকর পেলে ঢুকে পরাই আলোর স্বভাব, হাওয়ারও। যেখানে ঢুকতে পারেনা সেখানেই অন্ধকারের রাজত্বে উস্কানি দেয়, দমবন্ধ গুমোট করে তোলে। যোগী সোসাইটির মাঠেও আলো নিজ চরিত্র ভুলে শুদ্ধ হয়ে ওঠেনি, হাওয়াও।
হেমন্তের মিহি কুয়াশায় বিভোর মাঝরাত। ভরা পূর্ণিমা। জোছনায় ভেসে গেছে যোগী সোসাইটির চতুষ্কোণ মাঠ। মাঠের তিন দিকে ঘণ ঝোপঝাড়, বড় বড় ক’টা বট গাছ। ওখানে জোছনার জোড় খাটেনি। ওখানে ঘাপটি মেরে বসে আছে ভয় ভয় আবছায়া, ঝোপঝোপ অন্ধকার। সতর্ক সংকেতের মত জ্বলছে-নিভছে জোনাকি।
যোগী সোসাইটির সদস্যরা গোল হয়ে বসেছে। জোছনায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সবার চেহারা। চেহারাগুলোতে গাঢ় ক্ষুধা আর সীমাহীন উত্তেজনার ছাপ। বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুতে বসে আছে বৃদ্ধ এক নারী। তার হাত বাঁধা, পা বাঁধা, মুখ বাঁধা, শুধু চোখ দু’টো খোলা।
যোগী সোসাইটির জননী আতঙ্কিত চোখে আকাশ দেখছে। মিহি মিহি মেঘ জোছনায় ভেসে যাচ্ছে। ঝিঝি ডাকছে। হাওয়ায় পাকা ধানের মাতাল ঘ্রাণ। খুব দূর থেকে ভেসে আসছে কান্নার করুণ সুর। কান্নাটা কি ধীরে ধীরে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে ধেয়ে আসছে! চমক ভাঙে, ঘিরে থাকা সন্তানদের দিকে তাকান জননী, ছলো ছলো চোখে ঝাপসা সব মুখ।
শুদ্ধতম এক রাজ্যের স্বপ্ন রক্তে রক্তে সংক্রামিত করেছিলেন জননী। তিনি শিখিয়েছিলেন তার পক্ষ ছাড়া বাকীসব অশুদ্ধ- হোক মানুষ, হোক নদী, হোক ফুল, হোক পাখি, হোক আকাশ, হোক গান, হোক কবিতা, হোক গান, হোক মত, হোক পথ। ‘শুদ্ধে রাজ্যে অশুদ্ধের কোন স্থান নেই’ ব্যাধিতে আক্রান্ত অনুসারীরা শুদ্ধতার নামে একের পর এক খুন করেছে নদী, পাখি, ফুল, ফল, ভ্রুণ, পিতা, মাতা, ভাই, বোন, বন্ধু, আত্নীয় স্বজন।
শুদ্ধতার বিষয়ে যেই সংশয়ে প্রশ্ন তুলেছে, সেই অশুদ্ধতার অভিযোগে খুন হয়ে গেছে। খুনের পর লাশের সৎকার অনর্থক ভেবেই তারা পান করতে শিখেছে রক্ত এবং মাংস। মাংস খেতে খেতে খেতে খেতে তারা অশুদ্ধ মানুষের মাংস ভক্ষণে আসক্ত হয়ে পরেছে।
প্রোটিন ও মদের কোনো শুদ্ধাশুদ্ধ ভেদ নেই জেনেই যোগীয়ানরা স্বগোত্রীয়দের মাংসও খায়। খেতে না পেলে উন্মাদ হয়ে ওঠে। এটি জেনেই জননী সবাইকে নিরামিষভোজী হবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু যে বাঘ পেয়েছে রক্তের স্বাদ তার জিভে কি আর শরবত রুচে!
গত দু’মাস ধরে মানুষের মাংস খেতে না পেয়ে যোগীয়ানরা দানবের মত ক্ষুধার্ত উন্মাদের। অবশেষে জননীকেই তুলে নিয়ে এসেছে। বহুদিন অশুদ্ধ মানুষদের মাংস খেয়ে খেয়ে শুদ্ধতার যতটুকু ঘাটতি, আজ তা পূরণ করে নেওয়া যাবে। জননী শুদ্ধতাময়ীর মাংসে আছে অশুদ্ধতা নাশের সব উপাদান।
বৃত্ত থেকে একজন উঠে এসে আমূল একটি ছুরি জননীর চোখে ঢুকিয়ে দেয়। জননী কেঁপে উঠেন, তার মুখ বাঁধা বলে আর্তচিৎকারটা শোনা যায়না। একটানে বের করে আনলে ছুরিটার কোনায় দেখা যায় চোখের খণ্ডিত অংশ লেগে আছে। পরম ভক্তিতে চোখটি খেয়ে যোগী বলে, “মা গো, তোমার চোখ বেঁচে রইলো আমার চোখে, নয়ানে নয়ানে।” মুহুর্তে সবাই হায়নার মত ঝাঁপিয়ে পরে জননীর মাংস খেতে। অবশ্য খাওয়ার আগে ভক্তি ভরে জননীকে জানায়, “মা গো, তুমি এখন আমাদের সবার রক্তে মিশে গেছো। এতোদিন তুমিই ছিলে আমরা, আজ আমরাই তুমি। শুদ্ধ রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে ছাড়বোই ছাড়বো।”
যোগী সোসাইটির চতুষ্কোণ মাঠে নেমে এসেছে অসীম ক্ষুধা। জননীর কঙ্কাল চুষতে চুষতে পরস্পরের শরীরের দিকে তাকাচ্ছে শুদ্ধতম যোগীর দল – আহ! ক্ষিধে! অসহ্য ক্ষিধে! ছিঁড়েখুঁড়ে খাওয়ার মত দানবিক ক্ষিধে।
#অণুগল্প
মামুনের ছোটগল্প: লেট দেয়ার বি লাইট
পুকুর পাড় ঘেষে পায়ে চলা দুটি মেঠো পথ চলে গেছে। ডানদিকেরটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল ও কলেজের সামনে দিয়ে পিচের পথে গিয়ে মিশেছে। বামেরটি দু’পাশে নাম না জানা ঝোপকে পাশ কাটিয়ে ঘন জঙ্গলের ভেতর সামান্য এক না দেখা রেখা রেখে আঁধারে হারিয়েছে।
এই বেলা শেষের অবেলায় আহসান সেই আঁধারের পথ ধরে হেঁটে চলেছে। দুর্ভেদ্য মানবমনকে সাথে নিয়ে এক নামানুষ নিজের একচিলতে আলো বিসর্জন দিতে চলেছে। এভাবেই প্রতিদিন… জীবনের দিনগুলো, দিন দিন প্রতিদিন, এভাবেই চলছে। তবে তার বিসর্জনের সময় কোনো সন্ধ্যা আরতির সুর ভেসে আসে না। থাকে না কোনো উলু ধ্বনি কিংবা বিষণ্ণ নারীদের চোখের চকমকে আভা।
এই জঙ্গলের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ওদের আড্ডা। আড্ডা না বলে কয়েকজন অন্ধকারের জীবদের পারষ্পরিক মন্দ-লাগার অনুভবে প্রগলভ হয়ে ওঠা। কিংবা কিছু কর্কশ ক্ষণকে উপভোগ করার কথা বললে কিছুটা সত্য বলা হবে।
আজকাল সত্য কতটা সত্যি হয়ে প্রকট হয়? নিজের মনে ভাবনার এই অংশে এসেই অদূরে মাচার ওপর রায়হানকে দেখতে পায় আহসান। হৃদয়ে এক ভালোলাগা জেগে ওঠে। এই আঁধারে ওরা সাতজন জীব। যাদেরকে আশেপাশের সবাই এই ‘জীব’ই মনে করে। মানুষ হতে পারেনি ওরা কেউই এখনো। তাই মানুষের সমাজে থেকেও নিজেদের জন্য ওরা বেছে নিয়েছে এক ছায়াজীবন।
– কিরে বাইঞ্চোত! আমার আগেই চলে এলি?
আহসানের কথার উত্তরে ওর দিকে তাকায় রায়হান। প্রিয় বন্ধুকে দেখে। ওর মনেও ভালোলাগা দোলা দেয়। দাঁত না দেখিয়ে নিঃশব্দে হাসে।
উত্তরে ওর ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশ এভাবেই বের হয়,
– হুম। ..গির পোলা তোর না আমার আগে আসার কথা। ফোন দিবি বলছিলি, দিছিস?
– স্যরি দোস্ত! আমার মোবাইলে ব্যালেন্স ছিল না।
– কবেই বা তোর ছিল?
দু’বন্ধু মাচার নিচে বেঞ্চের মত করে বানানো বাঁশের মাচায় বসে। উপরে-নিচে এরকম বসার জায়গা বানানো। তিনটা আম গাছকে ঘিরে এই আড্ডাস্থল। নিজেদেরই বানানো। এই সাতজন ভিন্ন বয়সী নামানুষের ভেতর একজন রয়েছে, সে কাঠের কাজ জানে। সেই বানিয়েছে।
আহসান পাশে বসতেই রায়হান জিজ্ঞেস করে,
– মাল কার কাছে?
– জাহিদের আনার কথা আজ।
একটু বিরক্ত হয় রায়হান। ওর ভ্রু’র কোঁচকানো দেখে আহসান। একটু হাসে নিরবে। ওর এই বন্ধুটি অপেক্ষা করতে একটুও পছন্দ করে না। আর আজ এই জিনিসটাই অনেক্ষণ থেকে করতে হচ্ছে তাকে।
প্রসঙ্গ ঘোরাতে রায়হানের কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে,
– নারিকেলের ছুবা তোর আনার কথা ছিল। এনেছিস?
কথা না বলে নিজের টি-শার্ট ওপরে তুলে দেখায় রায়হান। একপলক দেখে আহসান। এরপর দু’বন্ধু আশপাশের নিস্তব্ধতাকে ভেঙ্গে খানখান করে দেয় ক্রমশঃ বাড়তে থাকা হাসির এক একটা তীব্র ওয়েভে। রায়হান ওর কোমরে বেল্টের পরিবর্তে নারিকেলের তৈরী দড়ি ব্যবহার করেছে। একই সাথে বেল্ট এবং আগুন ধরাবার কাজে ‘ছুবা’র কাজও করবে।
ইতোমধ্যে সূর্য ডুবে গেছে। এই ঘন জঙ্গলের সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীগুলোও এই সাতজনের শরীরের ঘ্রাণ চিনে। পারতপক্ষে ওগুলিও এই জায়গাটিকে এড়িয়ে চলে। যেভাবে সমাজের ‘ভদ্র মানুষগুলি’ এড়িয়ে চলে সেভাবে নয়। সরীসৃপদের ভেতরে ভয় এবং কিছুটা মমতার মিশেলে দূর্বোধ্য একটা কিছু থাকে। তবে ভদ্র মানুষদের ভেতরে কেবলি ঘৃণা থাকে। তাই এই সাতজন নামানুষ সবসময়েই ভদ্র লোকদের আবাসভূমি এড়িয়ে চলে। যদিও ওদের পরিবারের বাকীরা সেই সমাজে বাস করেন। এরা যার যার পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন..আউটসাইডার! দু’জন অন্ধকারের জীব আরো পাঁচজন জীবের আগমনী বার্তা শুনবার অপেক্ষায় বড্ড উন্মুখ হয়ে থাকে। এদের পরিচয় যথাসময়ে জানা যাবে।
…
জাহিদ অরুণাপল্লীর একটু উপরের ঢালের কাছে ভ্রাম্যমান পুলিশ দলের চেকিংয়ের সামনে পড়ল। কলমা থেকে রিক্সায় এই পর্যন্ত ভালোই এসেছিল। সি এন্ড বি পার হলেই এমএস হলের সামনের ভার্সিটি গেট দিয়ে ঢুকে যাবে ভেবেছিল। কিন্তু তার আগেই বিপত্তি। পকেটে জিনিস। ইদানিং এই এলাকায় পুলিশের নজরদারী একটু বাড়াবাড়ি রকমের দৃষ্টিকটু।
দৃষ্টিকটু? হাসি পায় ওর। হ্যা, অন্ধকারের বাসিন্দা সে। ওর কাছে দৃষ্টিকটু বৈকি! ভাবনায় পলকের তরে আশপাশ সহ সবকিছু বিস্মৃত হয় সে। তাই হাবিলদারের প্রশ্ন প্রথমে সে শুনতে পায় না।
পাশ দিয়ে চলে যাওয়া একটা মোটরবাইকের হর্ণের আওয়াজে ওর সম্বিত ফিরে। ওর দিকে তাকিয়ে হাবিলদার দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করে,
– আপনাকে নামতে বলেছি আমি।
রিক্সা থেকে নামতে নামতে বলে জাহিদ,
– স্যরি, আমি শুনতে পাইনি।
উত্তরে কিছু না বলে আবারো হাবিলদার জানতে চায়,
– কোত্থেকে আসছেন?
কি বলবে ভাবে জাহিদ। এরা চেক করতে পারে, আবার না ও করতে পারে। তবে সে সত্যি কথাটাই বলবে মনঃস্থির করে। অকপটে জানায়,
– কলমা থেকে আসছি। গাঁজা কিনতে গেছিলাম।
পকেট থেকে নিজেই চারটা পঞ্চাশের ছোট পোটলা বের করে হাবিলদারের দিকে বাড়িয়ে ধরে। টহল পুলিশের বাকী সদস্যরা হাবিলদারের দিকে তাকায়। হাবিলদার একটু ধান্দায় পড়ে যায়। এভাবে সরাসরি কেউ বলে না সাধারণত। সে কি করবে ভাবতে কিছুটা সময় নেয়। পাশ দিকে হেঁটে যাওয়া সাধারণ মানুষ কৌতুহলী হয়ে উঠছে। তবে কেউ থামছে না। এরা এরকমই। দূর থেকে দেখবে, মজা নেবে, তবে কাছে আসবে না। পুলিশ বলে কথা।
হঠাৎ হাবিলদারের মনে হয়, পুলিশ বলে এরা আসে না সেটা ভয়ে না ঘৃণায়? তবে উত্তরটা জানার আগেই তার ভিতরের কর্তব্যবোধ মাথাচাড়া দেয়। আইন বলে একে ছাড়া যাবে না। আবার সে যেখান থেকে পুরিয়াগুলি সংগ্রহ করেছে, সেখানের বিক্রেতাকেও আইনের আওতায় আনতে হয়। কিন্তু সে জানে এটা সম্ভব না। আইনের ফাঁক ফোকর গলে সিস্টেমের ভেতরের অসাধু মনোভাবে লালন হওয়া কিছু কর্তা ব্যাক্তিদের অর্থলিপ্সু মনোভাব আর প্রভাবশালীদের পদলেহন মনোবৃত্তির জন্য অপরাধের মূল পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব না। বিনাশ তো বহু দূরের কথা। সাথে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্র নেতারা তাদের কর্মীদের ব্যাপারে বড্ড সচেতন। এই যুবকটি তাদের কেউ একজন কিনা কে জানে। ধরে নিয়ে গেলে মোবাইলের পর মোবাইল আসবে। অনেক ভেজাল। আবার ছাড়তেও মন চাইছে না। কিছু টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া যায়। তবে তাতেও অনেক ভেজাল। নিজের উর্দির ভেতরের সাধারণ মানুষটা আজো মরে নাই।
এসব ভেবে হাবিলদার কষ্ট পেতে থাকে। শেষে বলে,
– আপনাকে ধরে নিয়ে যাবার পরে অনেক ফোন আসবে। তার চেয়ে এখনই ফোন করান কাউকে দিয়ে, আপনাকে ছেড়ে দেই।
জাহিদ অবাক হয়। পকেট থেকে মোবাইল বের করে.. তখনও অবাক ভাবটা কাটে না ওর। ভাবে পুলিশটা কি মজা করছে ওকে নিয়ে।
…
হলে নিজের রুমে বসে কালকের প্রোগ্রাম নিয়ে ভাবছেন তিনি। সেই সাতজন অন্ধকারের জীবদের ‘ভাই’। বেকার এই ছেলেদেরকে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে খাটান, কাজে লাগান। তবে নিজের রাজনৈতিক খোলসের বাহিরে বের হলে একজন মানুষ হিসাবে তিনি তার হৃদয়ে ওদের জন্য মমতাও অনুভব করেন।
এদিকে রায়হান আবার ওনার স্যারের ছেলে। ভার্সিটিতে তার শিক্ষক ছিলেন রায়হানের বাবা।
টেবিলের ওপর চার্জে রাখা মোবাইলের রিং টোনের শব্দে বিরক্ত হন। অনিচ্ছা সত্বেও মোবাইল হাতে নেন। চার্জারের পিন আলাদা করতে করতে ভাবেন,
‘ইচ্ছা অনিচ্ছায়ও নেতাদেরকে অনেক কিছু করতে হয়’।
ডিসপ্লেতে জাহিদের নাম দেখে একটু আগের কুঁচকানো ভ্রু আরো বেঁকে যায়, তবে মনটা আনন্দের এক পল্কা হাওয়ায় জুড়িয়ে দিয়ে যায়। নেতারা এমনই। তাদের বুঝা দায়। তারা যেভাবে দেখান, ভেতরে আসলে তেমন তারা নন।
কল রিসিভ করেন। ওপাশের কথা শুনেন। শেষে বলেন,
– তোরা আর শুধরাইলি না। জিনিস কতটুকু?
…
হাবিলদার কথা শেষ করে জাহিদের হাতে মোবাইল ফেরত দিয়ে দেয়। মাছি তাড়াবার ভংগিতে জাহিদকে চলে যেতে বলে।
রিক্সায় ওঠে জাহিদ। রিক্সাওয়ালা এতক্ষণ পরে স্বাভাবিক হয়। বিপদ কেটে গেছে টের পায়। নিম্নশ্রেণীর অনেক প্রাণীর মত এই বিত্তহীনেরাও আগাম অনেক কিছু অনুভব করে। সেটা ঐ প্রানীকূলের মত একই ক্লাশের বলেই কি?
টহল পুলিশের যার হাতে পুরিয়া চারটি সে ওদের হাবিলদারকে জিজ্ঞেস করে,
– ওস্তাদ, এগুলা কি করবো?
হাবিলদার জাহিদের দিকে তাকিয়ে বলে,
– কি আর করবি, যার মাল তাকে দিয়ে দিবি।
বলেই আর দাঁড়ায় না সে। সামনের দিকে হাঁটা দেয়। পুলিশ কন্সটেবলটি পুরিয়াগুলি জাহিদের হাতে ফিরিয়ে দিয়ে কঠিন চোখে তাকায়। যেন নিরবে বলতে চায়,
‘নেক্সট টাইম’।
জাহিদ বাংলা পাঁচ এর মত মুখ করে মালগুলি হাতের মুঠোতেই রেখে দেয়। রিক্সা ক্যাম্পাসের দিকে আগায়। জাহিদের একটাই ভাবনা ঠিক এই মুহুর্তে,
‘অনেক দেরী হয়ে গেল, রায়হান এতক্ষণে চেইতে ফায়ার হয়ে আছে। তবে আজ যে মাল সে এনেছে, ঘ্রান শুকলেই রায়হানের সব রাগ পড়ে যাবে।’
জীবনের সময়গুলো এই সাতজনের জন্য এখন কেবলি একটু ভালো গাঁজার সন্ধানে ঘুরে বেড়ানতেই সার্থকতা খুঁজে বেড়ায়। অথচ অন্যরকম ও হতে পারত!
পড়ন্ত বেলায় রিক্সায় বসে নিজের অদৃশ্য ছায়ার পানে তাকিয়ে থেকে এক আঁধারের জীব আরো অন্ধকারের অপেক্ষায় থাকে। রিক্সাটি এমএস হলকে ছাড়িয়ে দু’ পাশের গাছগুলির মাঝ দিয়ে বয়ে চলা কালো পিচের বুকের ওপর দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যায়।
…
রায়হান ক্রমশ: উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। আহসান ওর নাকের ওপরটা লালচে এবং ঘামে ভেজা দেখতে পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে না। ও জানে কি করতে হবে। গাঁজায় যদিও ‘উইথড্রয়াল সিম্পটম’ নেই, কিন্তু অনুভূতির গভীরে লুকানো মনের প্রতিদিনের সময়ের নিরবচ্ছিন্ন চাহিদা, এই সিম্পটমের থেকেও ভয়ানক। নিশ্চুপ থাকে আহসান। এই সময়ে নিরবতাই ভালো ফল এনে দেয়।
রায়হান বাবা-মা আর ভাইয়ের সাথে এই পাশেই থাকে। ওর বাবা জঙ্গলের সাথের এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। বাবার কথা মনে হতেই চোয়ালের দু’পাশ শক্ত হতে থাকে ওর।
জেদ?
জনকের প্রতি অভিমান?
অতিরিক্ত ভালোমানুষ বাবার নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখে নিজের ভিতরের চাওয়াগুলোর পূরণ না হওয়াতে তৈরী হওয়া ভালোবাসায় মাখামাখি নিরন্ত অভিমানে কুহকী প্রহর গোনা?
সে, আহসান আর জাহিদ, ভিন্ন সাবজেক্ট নিয়ে এখান থেকেই স্নাতোকোত্তর করেছে আজ দু’ বছর হলো!
– ওহ মাই গড!
অস্ফুটে বলেই উঠে দাঁড়ায় রায়হান।
– দুই বছর?
আবার আগের জায়গায় বসে পড়ে। আহসান অবাক হয় না। হয়.. এরকম প্রায়ই ওদেরকে শুনতে হয়। ওরা বুঝে। তবে বাবা- ছেলের মাঝে কখনো দূরত্ব এনে দেয়, এমন কিছুই এরা করে না, কেবল নিশ্চুপ থাকে। আর তাতেই অনেক কিছু প্রকাশ পায়।
এভাবেই রায়হান কিংবা প্রতিদিন এক একজন রায়হানের জায়গাটা দখল করে। অভিযোগ বুকে নিয়ে পাল্টা অভিযোগগুলিকে ধরাসায়ী করতে এরা বড্ড সিদ্ধহস্ত।
– শালারপুত কি করে এতক্ষণ? হারামি মোবাইলটাও অফ করে রাখছে কেন? এবার আক্ষরিক অর্থেই সে ফেটে পড়ে।
– মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গেছে মনে হয়।
আহসান উত্তর দেয়। ভ্রু- কুঁচকে রায়হান যখন কথা বলে ওকে বড্ড বাবু বাবু দেখা যায়। আহসান একটা বাবুর প্রতি অপার মায়ায় জড়িয়ে তাকিয়ে থাকে। এই মায়া একদিনে হয়নি। ওরা এই সাতজন নেংটোকালের বন্ধু। সময়ের ঘ্রাণে জড়ানো অনুভূতিতে মেখে মেখে ওরা বন্ধু হয়েছে। একদিন বা কিছু দিনে নয়।
উত্তেজিত রায়হান বলতে থাকে,
– বালের মোবাইল ইউজ কর তোমরা, নাহ? তোমার ব্যালেন্স নিল থাকে সবসময়, আর ঐ শালারপো’র চার্জ থাকে না।’
– ওর না, ওর মোবাইলের।
গম্ভীরভাবে আহসান শুধরে দেয়।
ঝিঁঝিঁ পোকা ডাকছে? রায়হানের এমন মনে হয়। আবার বাবার কথায় ফিরে যায় সে। একার সাথে একার কথা বলার এক অদ্ভুত রোগ এই সাতজনের। ব্রেইনের কোষে কোষে অনুভূতিদের নিজেদের ভেতরে যে অনুভব অনুভূত হয়, সেখানে অনেক আলোচনায় অংশ নেয় এরা যার যার মত।
বাবা চাননি এখানে তার পরিচয় ব্যবহার হোক.. তার ছায়ায় ছেলে বড় হোক। বাবা কি চেয়েছিলেন ছেলে নিজের মত করে তার থেকেও বড় হোক? সবসময় বড়-ই বা হতে হবে কেন?
বাবা কোনো সুপারিশ করলেন না কিংবা লাখ দশেক টাকাও দিলেন না। বছরগুলি পিতা-পুত্রের নীরব স্নায়ু যুদ্ধে কেটে গেলো। প্রশাসনিক অফিসারের চাকরিটা হতে পারত.. অতি সহজে। হলোই না। বাবা রাজনীতি পছন্দ করতেন না।
রায়হান সেন্ট্রাল এর ভাইয়ের অনেক কাছের মানুষ হয়ে গেল। বাবা ধুমপান অপছন্দ করেন। সে নিয়মিত কল্কিসেবী হয়ে পড়ল। বাবার সুনাম নষ্ট করতে করতে রায়হানের আরেক পৃথিবীর বাসিন্দা হবার প্রতিটি পদক্ষেপ কি ওকে কাছের মানুষদের থেকে এক পা করে করে দূরে সরিয়ে দিচ্ছিল না?
সে কি একবারও টের পেল না?
বাবা ও কি বুঝেছিলেন? তিনিও কেন টের পেলেন না?
ওর সাথের অন্য বন্ধুরা তরতর করে উঠে যাচ্ছিল, ওর মনের সেই কষ্টটুকু কেন বাবা অনুভব করতে চাইলেন না?
নাকি বাবা অনুভব করেছিলেন! কিন্তু সে নিজেই বাবার প্রকাশকে বুঝতে পারেনি? বাবা নিজের সাথে যুদ্ধ করে করে ক্লান্ত হয়েছিলেন, কিন্তু ছেলের জন্য নিজেকে পাল্টান নাই।
– এজন্য তো তোমার বাবার জন্য গর্ব করা উচিত!
ব্রেইনের এক অংশের প্রশ্নের উত্তরে রায়হান আনমনে ‘হুম’ বলে। চেতন মনের অবচেতনে অচেতন খেলায় জড়িয়ে যায় রায়হান। সে আলো হতে পারে নাই। তাই অন্ধকার হয়েছে। ও কিছু হতে পারে নাই দেখে পারুও ছেড়ে চলে গেছে!
– পারু আবার এই মুহুর্তে এলো কোত্থেকে?
বিভ্রান্ত রায়হান প্রচন্ড বিরক্তিতে আহসানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– আমার মোবাইল দিয়ে কল করে দেখ বাইনচোত মোবাইল খুলছে কি না? খুললে জিগা আর কতক্ষন লাগবে আসতে?
দুইটি অণুগল্প
অতৃপ্তিই জীবন
___________
আমি যেভাবে তাকে কাছে পেতে চাই, সেভাবে সে আসতে চায় না। আমাকে নিয়ে তার নিজের ইচ্ছেপূরণেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিনা আমি।
দুইয়ের ভিতর চলতে থাকা টানাপড়েণের মাঝে বয়ে যাওয়া সময়ের নাম-ই কী জীবন?
____________________
নিষিদ্ধ নগরী
এ গল্প এক হারানো শহরের। এখানে সম্পর্কগুলি অনবরত হারিয়ে যায়। প্রিয়জনেরা অসময়ে মুখ লুকায় আঁধারে।
এ এক রক্তাক্ত জনপদ। এখানের মানুষগুলো, বড্ড স্বাধীনচেতা। আপাত শান্ত, মনের ভেতর অহর্নিশ ফুঁসে চলে একটা আনাম বিসুভিয়াস। তারপরও শান্ত এরা।
এখানের বাতাসে আনন্দ-আর দু:খ, হাত ধরাধরি করে হেঁটে চলে। তাই জীবন বড্ড নিরুদ্বেগ এখানে।
এই শহরে হ্যালুসিনেটেড যুবকদের ছড়াছড়ি। এখানে নীল তীব্র বিষ সহজলভ্য। এখানে শহরের বুক জুড়ে বয়ে বেড়ায় বিভ্রান্তির বিষবলয়। এখানে মৃত্যুবাণ ছুড়ে দেয়া নীলচে ধাতব যন্ত্রের ছড়াছড়ি।
তবুও এটা আমাদের শহর। এখানে নিশ্চুপ বাবাদের মৌণতার হাহাকারে ভারী বাতাস- শেষ বিকেলের আবিরে মিশে মিশে, বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তাই এখানের বিকেলগুলি, অন্য শহরের থেকে অধিক রক্তিম!
দিগন্তব্যাপী সবুজ বলয় এভাবেই দৃশ্যমান এই শহরে। এখানে প্রতিটি মুহুর্তই এমন ঝঞ্চাবিক্ষুব্ধ- উত্তাল! অণুক্ষণ এমন-ই উন্মাতাল। এই শহরের বাসিন্দাদের হৃদয়েও, এর থেকে প্রবল ঝড় বয়ে চলে সারা বেলা!
এক হারানো শহরে- বিষন্ন বেলায়, একাকি একজন মানুষ-হৃদয়ে বয়ে চলা অনুভবের ভাংগাচুরায় ক্ষয়ে যেতে থাকে। তবুও কতটা নির্বিকার! সময়ের গলন্ত মোম জ্বলন্ত হৃদয়ে জ্বালা ধরিয়ে চলে..তবুও চিৎকার করা যাবে না এখানে! এ এক নিষিদ্ধ নগরী।
এক নিষিদ্ধ মানব, কোনো এক হারানো শহরের শেষ মানুষ হয়ে অপেক্ষায় থাকে, আরেক সভ্যতার ঊষালগ্নের। কখন সুতীব্র চিৎকারে জন্ম নেবে, আরেক জীবন!
___________________
শরমিন্দা
নান্টু মিয়া যে কারণে ফের লুঙ্গি পরতে শুরু করলো, তা সরল হলেও বিশ্বাসযোগ্য নয়।
ঝলমলে এই রাজধানীতে নান্টু মিয়ার পদার্পণ দুই দশক আগে। তখন তার ঘরবাড়ি নেই, আত্মীয় পরিজন নেই। বউ পালিয়েছে মামাতো ভায়ের সাথে। সংসারের প্রতি আগ্রহ নেই, মানুষের প্রতি আস্থা হারিয়েছে এরও আগে। সে জানেনা এখানে মানুষ মানেই শহর।
একটা মাত্র ছেড়া গেঞ্জি আর তাপ্পি মারা লুঙ্গি সম্বল করে শহরে আসা, মরার আগে শেষবারের মত বাঁচাতে শুরু করা। বাস্তবতা ও পরিস্থিতির মত দ্রুত শিক্ষণ পদ্ধতি আর নেই। দশ দিনের সময়কালেই নান্টু শিখেছিলো বিনা পূঁজিতে ভিক্ষার প্রাথমিক জ্ঞান। পরবর্তী বিশ দিনের ভেতর শিখে নিয়েছিলো ভিক্ষাবিদ্যার ছলাকলা আর আয় বৃদ্ধির কৌশল।
শহরবাসীর হৃদয় যতটা লাজহীন চোখ ততটা নয়। যে ভিক্ষা দেয়না, যে ভিক্ষার বদলে শুধু উপদেশ দেয়, সেও ন্যাংটো ফকিরের একটি লুঙ্গি কেনার আহাজারিতে সাড়া দেয়। একটি লুঙ্গি দানের সামর্থ্য না থাকার গ্লানিতে জর্জরিত মানুষ অনায়াসে দশ/বিশ টাকা ভিক্ষা দেয়। এ শহরের মানুষ একে অপরকে কাপড় খুলে নগ্ন করতে ভালোবাসে বটে, তবে আক্ষরিক অর্থেই কাউকে নগ্ন দেখলে সহ্য করতে পারে না। লজ্জায় কাবু হয়, অপরাধ বোধে ভোগে। মাত্র একমাসের অভিজ্ঞতায় এসব জেনেছে নান্টু।
নান্টুর এ জগতে কেউ নেই, তার উদোম হবার প্রতিবন্ধকতা শুধু আত্মলজ্জা আর সংস্কারের দাসত্ববোধ। কিন্তু পেট যখন ক্ষুধামগ্ন, শূন্যহাত যখন ভিক্ষা পাবার আশায় মেলে দেওয়া, যখন সমান খাটুনিতে তিনগুণ আয়ের হাতছানি তখন ন্যাংটো হওয়ার জন্য সাহসের প্রয়োজন হয়না, প্রয়োজন হয় পেশা ও পেটের প্রতি দায়বদ্ধতা। পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে নান্টুর ঘাটতি নেই, ছিলো না।
প্রতিদিন সকালে সচিবরা যেমন করে ড্রেসকোড মেনে স্যুট পরে অফিসে যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যাজ লাগিয়ে দায়িত্ব পালন করে, নার্সরা শাদা থান পরে হাসপাতালে সেবা বিক্রি করে তেমনই নান্টু কাপড় খুলে গায়ে কিছু মাটি মেখে পেশাগত দায়িত্বপালনে বেরিয়ে পরে। তার নগদ আয় রোজগার ভালোই হয়। রোজই কেউ না কেউ লুঙ্গি কিনে দেয়। সৌভাগ্যের এক একদিন তো পাঁচ’ছটা লুঙ্গিও জুটে যায়। দোকানে ওইসব লুঙ্গি অর্ধেক দামে বিক্রি করলে নগদ ভিক্ষার সাথে বোনাস লাভ মিলেমিশে একাকার।
প্রথম ক’টা দিন নান্টুর খুব লজ্জা করছিলো। মনে হতো কোটি কোটি চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখগুলো হাসছে, টিটকারি মারছে। অবশ্য দিনে দিনে লজ্জা কেটে গেছে। ক্যাশ টাকা, মফস্বলে ছয় শতাংশ জমির ওপর টিনশেড বাড়ি, তিন তিনটে স্ত্রী, চায়ের টং দোকান – এসবই ন্যাংটো হবার অবদান। ন্যাংটো হয়ে হাত পাততে শেখার দিন থেকেই উন্নয়নের শুরু।
দুই দশক ধরে ন্যাংটো থাকায় অভ্যস্ত নান্টুর দিনের আলোয় লুঙ্গি পরতে খুব অস্বস্তি হচ্ছে; যেনো দুনিয়ার সকল লোক লুঙ্গির দিকে তাকিয়ে আছে। সে গুটিসুটি মেরে নুরুর চায়ের দোকানে বসে। চা বানাতে বানাতে নুরু বারবার নান্টুর চেহারার দিকে তাকায়, লুঙ্গির দিকেও তাকায়। নান্টু সঙ্কোচে মূহ্যমান, নুরুর ঠোঁটে কৌতূহলের হাসি।
“কাঙ্গালের পো, তুই লুঙ্গি পিনছোছ ক্যান- নুরুর এমন প্রশ্নে নান্টু বিব্রত হয়। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে, “আমার চক্ষুটা মনে লয় বালা নাই, চাইরদিকে খালি ল্যাংটা মানুষ দেহি। শহরের সব মানুষরে ল্যাংটা দেহি। আমার শরম করে।”
নান্টুর স্বীকারোক্তি সরল হলেও বিশ্বাসযোগ্য নয়, ও যে ফের লুঙ্গি পরতে শুরু করেছে!
হারিকেনের আলোয় কয়েকটি নীল খাম
একদিন, বাজারে বিক্রি হওয়া প্রমাণ সাইজের একটি আর্ট পেপার কিনেছিলো শিহাব। আর, নীল খাম কয়েকটা। কণাকে বিশাল এক চিঠি লিখতে বসেছিলো। বিয়ের পরে.. একেবারে প্রথমদিকে। এক মধ্যরাতে। শীতের দীর্ঘ রাত ছিলো।
হারিকেন কুপির রহস্যময় আলোয় নীল খামগুলি, ততোধিক রহস্যের অবগুণ্ঠনে ঢেকে ছিলো বলে মনে হচ্ছিলো শিহাবের। মশারির ভিতর থেকে অস্পষ্ট শিহাব। কালো অক্ষরের গুটি গুটি অনুভূতি দিয়ে লাইনের পর লাইন সাজিয়ে চলা, দেড় দশক আগের সেই শিহাবের অনুভব কেমন ছিলো?
– কি কথা ছিলো তখন তোমার মনে?
– এতো কথা কোথায় জমিয়ে রেখেছিলে যে, আস্ত একটা আর্ট পেপারই লিখে পূর্ণ করতে হয়েছিলো সেই আস্ত এক শীতের রাতে?
– কি কথা ছিলো তাহার সনে?
রুমের অন্য দুই বাসিন্দা- একজন প্রভাষক, অন্যজন সিনিয়র শিক্ষক, পালাক্রমে দু’জনই জেগে উঠে একই প্রশ্ন করেছিলেন দুই ভিন্ন সময়ে,
– স্যার! এখনো লিখছেন!
তাদের দিকে না তাকিয়ে ভাবনায় বুঁদ শিহাব উত্তর দিয়েছিলো,
– হ্যা। লেখছি।
হয়তো রহস্যময় হারিকেনের আলোয় তাদের ঘুম ভেঙ্গে যাছিলো।
ঐতিহাসিক সেই চিঠিটি, কানে কম শোনা দপ্তরীর লাল মোরগটির প্রথম চিৎকারে, প্রহর শুরুর সাথে সাথেই লেখা শেষ হয়েছিলো।
প্রিয় সেজ অনুজ সেই গুরুদায়িত্ব পালন করেছিলো 😀 নিজেই কণার শহরের বাসায়, কনার কাছে ‘হ্যান্ডওভার’ করেছিলো চিঠিটা।
– এখন সারাক্ষণই কণা তোমার কাছে। কিন্তু বলার মতো কী কথা আছে এখন তোমার?
নিশ্চুপ শিহাব একা একা ভাবে,
– কথাগুলো কোথায় হারালো?
তাই তো!
কথাগুলো হারালো কোথায়?
.
#হারিকেনের_আলোয়_কয়েকটি_নীল_খাম_মামুনের_অণুগল্প