বিভাগের আর্কাইভঃ সাহিত্য

এখন যেমন

কিছু তাস গোছানোই থাকে, অল্পে কিছু আশা,
অভিমুখী অবিরত হাত মুন্সিয়ানা ছানে,
এই আছি এই নেই, আজকের নিঃশ্বাসের মানে,
পরিস্থিতিগতভাবে বদলে যায় কুশীলবী ভাষা।

চোখ তো দেখেছে রূপ-তেষ্টা-প্রেম-উচ্চাশা,
স্থাপত্য বৈভবে তবু অহংকারী মৃত বৃক্ষডাল–
কাকে যে ডোবাবে তুমি, কাকে দেবে বুকের আড়াল,
ভুলেগেছো সংগোপনী রোদ-বৃষ্টি-শিশির-কুয়াশা।

আজ রোদনের দিন

3

আজ রোদনের দিন
অশ্রুত কজ্জলে শোকের সাগরে ভাসার দিন
প্রাণের বাঁকে সহস্র ‘রাব্বির হাম হুমা’…
কামনার দিন!
ইস্পাত কঠিন চেতনায় পুনঃশপথে লীন হবার দিন!..

স্মরণ করো সেই ধ্বনি,
চিৎকার- বুকে ছিলো রক্তের জোয়ার
স্মরণ করো সেই তর্জনী, দরিয়ার গর্জন
আরক্ত হুংকার-
ভিড়ছে তরঙ্গ উর্বশী ফণায়, জনস্রোত ;
প্রকম্পিত আসমান জয় বাংলার গানে
সোনালী বয়ানে উদ্বেলিত জনতা
রেসকোর্স ময়দানে পিতার কণ্ঠে রচিত মহান স্বাধীনতা!

স্মরণ করো তীক্ষ্ণ ধার
স্মরণ করো সেই তৃষ্ণা, উষ্ণীষ আঁধার –
চব্বিশ বছর পূর্বে প্রাণের মননে লালিত
স্বাধীন বাংলার বুননকৌশল..
যার ফলিত পুষ্পোদ্যান ছারখার করেছে
দুধকলায় পোষিত সাপ
পনের আগষ্ট পচাত্তরে, শিখরের সিড়ি রুদ্ধ করে
জাতির কপালে এঁকে গেছে কলঙ্কের ছাপ!
স্মরণ করো সেই অশোধিত ঋণের ভার
রক্তে ডুবা তৃণের শীৎকার!..

আরো করো স্মরণ, আরো শ্রদ্ধা
দাও অঞ্জলি জাতির পিতার চরণে
যার ঋণ শোধানো অসম্ভব
তাকে শ্রদ্ধা স্বরণের ছেয়ে বেশি কিইবা দেয়ার আছে…
পৃথিবীর কাছে যার বেহিসাব পাওনা
রেখে
দিয়ে গেলো স্বাধীন শিরোস্ত্রাণের অধিকার
তাঁকে অমর্যাদা করার স্পর্ধা তাদেরই আছে
যারা নিজের জন্মকে করে অস্বীকার!..

.
১৫/৮/২৩

কবিতা

5c

লাল কলসে ধান রেখেছি
নীল পারিজাত ফুল
সোনা বন্ধু কোথায় গেলি
বাঁধি এলো চুল
গাঙের জলে ভরা ভাদর
নৌকা দেব পাড়ি
ভয়ে কাঁপে মনটা আমার
কেমনে যাব বাড়ি ?
বিজলি হানা আকাশ তলে
কালো মেঘের পাল
আয় বন্ধু ফিরে আয়
আজ নয় ত’ কাল।

মানুষের দিকে তাকালেই

মানুষের দিকে তাকালেই, আমার চোখের দিকে
উড়ে আসে একগুচ্ছ ছাই,
বৃক্ষের দিকে কান পাতলেই, বেজে ওঠে
একটি পুরনো করাতের ক্রন্দন ধ্বনি-
আর নদীর দিকে!
না, কী দেখি তা আর বলা যাবে না।

বলতে পারছি না অনেক কিছুই,
দেখতে পাচ্ছি না কবি কিংবা চিত্রশিল্পীদের
মুখ। যারা বাঁশি বাজায়, কিংবা যারা একান্তই
একলা থাকতে ভালোবাসে, তাদের জন্য আমি
সাজাতে পারছি না গাঁদাফুলের হলুদ সৌরভ।

ঢাকার যে সড়কগুলোকে নিরাপদ করার জন্য
আজ সন্তানেরা আন্দোলন করছে-
তাদের মনে করিয়ে দিতে পারছি না, প্রজন্ম হে!
ভাবো – ‘আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে’

অনর্থক এই বেঁচে থাকা নিয়ে যে আমরা
ভুলে যাচ্ছি ক্ষোভ,
তারা কি কখনও পরখ করেছিলাম মোমবাতির
মন! জানতে চেয়েছিলাম লাইটভালবের
বিবর্তন ধারা!

আমাদের জনপদে সূর্যগুলো আলোহীন হয়ে পড়ছে,
এই দুঃখ-গল্প আর কাউকে বলতেও চাই না।
অনেক আগেই কমেছে আমাদের বক্তাসংখ্যা,
এখন আমরা একে একে গুনছি,
কমে যাওয়া স্রোতাসংখ্যার সর্বশেষ স্রোতগুলো।

.
[ ১১ আগস্ট হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুদিনে ]
√ নিউইয়র্ক @ ১১ আগস্ট ২০১৮

ভাবতে পারি না

images ধূলি

ভাবতেই পারি না
তুমি নেই- না ফেরার দেশে
কি অভিমান করে
চলে গেলে- চলে গেলে,
সারা আঙ্গিনা জুড়ে
খুঁজে ফেরি- মা গো- মা;

তোমার রান্না ঘর-
ধান শুকনো উঠান,
পায়ের চটি- থাল গ্লাস
সবই দাগ লেগে আছে!
স্মৃতির ভেলা যাই ভেসে;

দুচোখে বর্ষার ভেজা
খই ফুটানো নোনা জল;
এভাবে ক্যান্সারের কাছে
পরাজয় হবে, মা গো- মা
আমরণ কষ্ট- সহ্য করা দায়-
ভাবতেই পারি না।

.
২৬ শ্রাবণ ১৪২৯, ১০ আগস্ট ২৩

সুড়ঙ্গে মাথা

মরলে একটু নাড়াচাড়া পড়ে
রিখটার স্কেল চার সাড়ে-চারে
চেপে যা এখন, লুকো শেলটারে

আমরা মিছিল-ঘেরাওয়ের জোট
নবযুগ আনা সেরা হুজ্জোত
চুমু ছিল যারা, গুটিয়েছে ঠোঁট

নেট প্র‍্যাকটিসে দেখে নিতে হয় —
জুনিয়ার ব্যাট। এক হিটে ছয়?
বিপ্লবী নল দৃঢ় নিশ্চয়!

এসব বোঝে না মধ্যবিত্ত
নিচু শির, ভয়পূর্ণ চিত্ত
বেঁচে থেকে ছেলে কীই বা ছিঁড়ত!

তাকিয়া সাজিয়ে উঁচু নম্বর,
হেলান দিয়েছি পয়গম্বর;
সুড়ঙ্গে মাথা, মুক্ত গতর

প্রশাসন আর রাজনৈতিক
টেবিলে বসেছে আধিভৌতিক
স্টেপ নেবে ঠিক স্টেপ নেবে ঠিক…

নীলমাছি

gty

পায়ের কাছে জানলা খোলা। বাইরে ঝাঝা রোদ। গ্রীষ্ম দুপুরের তালুফাটা গরম। জানালার গ্রীলে তিন চড়ুই শলাপরামর্শ করছে। ধীর গতিতে পাখা ঘুরছে।

কাথা মুড়ে শুয়ে আছি। তিন দিন ধরে ভীষণ জ্বর। আবার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে। তৃষ্ণা পাচ্ছে, বরফ চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে। জ্বর বাড়ছে আর বিছানাটা কেমন সবুজ মাঠ হয়ে যাচ্ছে। দূর্বা ঘাসের ঘ্রাণ, মাথার কাছে ফুটে আছে ঘাসফুল। ফড়িংয়ের ঝাক উড়ে গেলো- এলোমেলো। একটা চকচকে নীল ডুমো মাছি নাকের কাছে অনেকক্ষণ ভনভনালো। কোথায় উড়ে গিয়ে ফিরে এলো। কাথার উপরে বসলো,
— আবার জ্বর বাঁধিয়েছ?
— জ্বর কি ছবির ফ্রেম না পুকুরের ঘাট যে বাঁধাবো?

আমার বিরক্তিকে পাত্তা দেয় না মাছি,
— হাহাহাহাহা… ভনভনানিতে রাগ করছ?

কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করে মাছি কথা শুরু করল,
— ভনভনিয়ে কি খুঁজছিলাম জানো?
— কি!
— পাকা ল্যাংড়া আমের রসের ঘ্রাণ।

বিরক্তির মাত্রা অসহ্যের সীমা অতিক্রম করল,
— আমি কি ল্যাংড়া আম! তোমার তাই মনে হয়! যুক্তিসহ ব্যাখ্যা কর..

মাছির স্বর কিছুটা বিব্রত,
— ধ্যাত, তুমি ল্যাংড়া আম হবে কেন! সেই জ্বর জ্বর দুপুরের কথা একটুও মনে নেই তোমার!
— কোন দুপুরের কথা?
— সেই যে চারদিন আগে তোমার দাদিজান মারা গেছেন। উনার চেহলাম। দুপুরে ক’জনকে খাওয়ানো হবে। মা কুঁচো চিংড়ি দিয়ে করলাভাজি, পুঁইশাক দিয়ে বড় চিংড়ি, লাউ দিয়ে ইলিশ মাছ, আলু-বেগুন দিয়ে রুই মাছ রান্না করেছেন। রুইমাছের তরকারীতে জিরা ভেজে গুড়ো করে দিয়েছেন। সজনের ডাল থেকে ধোঁয়া উড়ছে। শোক আর ঘ্রাণে উথলে ওঠা দুপুর। নামাজ শেষে মিলাদ, তারপরে খাওয়ানোর পর্ব শুরু হবে। যাদের পাতে দু’বেলা সাদামাটা ভাত জোটে কি জোটে না, এমন ক’জন খাবেন। কি মনে আছে?

বিরক্তি কিছুটা কমে, স্মৃতির ঘায়ে কণ্ঠ কিছুটা কোমল হয়ে আসে,
— হ্যা, মনে আছে। সেসব বহু যুগ আগের স্মৃতি। তুমি এসব জানো?
— জানবো না কেনো! আমিও যে ছিলাম।

বিস্মিত হই,
— নীলমাছি, তুমিও ছিলে?
— হুম। সেদিন তোমার বেশ জ্বর। রান্নার ফাঁকে ফাঁকে মা মাথায় পানি দিচ্ছেন। জ্বর কমছে বাড়ছে, কিন্তু এক্কেবারে ছেড়ে যাচ্ছে না। ঘরের এক কোণে শুয়ে আছো- গুটিশুটি ছোট্ট মানুষ।
— হুম, গায়ে লেপ। দাদিজানের কাফনের মত শাদা কভার। ন্যাপথলিনের কড়া গন্ধ।

নীলমাছি মাথা দোলায়,
— তোমার স্মৃতি দেখছি খুব টনটনে। মেহমানদের জন্য ফল আনা হয়েছে— ল্যাংড়া আম, শক্ত কোষের কাঁঠাল আর তরমুজ। বাবা একটুকুরো আম কেটে তোমার মুখে দিলেন। সেই আমের রস টুপ করে শাদা কাভারে পড়লো।

মনের ভেতর উৎলে উঠে বিষাদ,
— বাবা মারা গেছেন বাইশ বছর হয়ে এলো। সে কথা থাক, তোমার কথাই বলো…

স্মৃতিকাতর মাছি বলে চলে,
— সেদিন গরম আর ক্ষিধের জ্বালায় অস্থির ছিলাম। চিন্তা না করেই লেপের কভারে পড়া দু’তিন ফোঁটা রস খেতে শুরু করলাম। তুমি অবাক হয়ে খাওয়া দেখছিলে।

মাছির ভুল ভাঙাই,
— তোমার খাবার দেখছিলাম না। তোমার নীল শরীরে আলোর ঝিলিমিলি দেখছিলাম।
— খাওয়া শেষে ভাবলাম একটু জিরোই। তুমি অসুস্থ শিশু এক— আমায় কি আর ধরতে পারবে!
— হিসেবে খুব বড় ভুল করেছিলে..

মাছির অকপট স্বীকারোক্তি,
— হ্যা, আত্মঘাতী ভুল করেছিলাম। হঠাৎ মুঠোর ভেতরে ধরে ফেললে। সে কি ভয়! জীবন হারানোর আশঙ্কা ও আতঙ্ক! পায়ে সুতো বেঁধে আমৃত্যু উড়াবে— ভাবতেই বুক ফেঁটে কান্না এলো।
— আহারে! হাহাহাহাহাহাহা…
— হাসছো কেনো! তখন কি জানতাম যে কয়েক মুহূর্ত দেখে ছেড়ে দিবে!

মাথা ব্যথা আর গায়ের তাপ দুইই বাড়ছে, ক্লান্ত স্বরে জানতে চাই,
— আজ সেসব কথা ভনভনাতে এসেছো!

মাছি শোনায় অদ্ভুত কথা,
— রূপকথার অভিশাপে অমরত্ব পেয়েছি। মরে যাই— ফের একজীবনের স্মৃতি নিয়ে জন্মাই। আজ দুপুরে সেই দুপুরের কথা মনে হতেই ছুটে এলাম।

জ্বরের ঘোরে রসিকতা করি,
— নীল মাছির আগমন, শুভেচ্ছায় স্বাগতম। তা কি দেখলে!
— তোমার মুখে এখনো আমের রসের ঘ্রাণ লেগে আছে।
— এখনো ঘ্রাণ লেগে আছে! কত বছর আগের কথা! সময় চলে গেছে কত!
— ধ্যাত! সময় যাবে কোথায়! সময় তার প্রতিটা বিন্দুতে স্থির।

রূপকথার অভিশাপে অভিশপ্ত মাছির কাছে কৌতূহল গোপন করি না,
— ও নীলমাছি, সময় তবে কোথাও যায় না?
— না, যায় না। সময় তার প্রতি বিন্দুতে স্মৃতি সঞ্চয় করে রাখে।
— তবে আমাদের যে বয়স বাড়ে? দিন ফুরোয়?
— বয়স বাড়বে না কেনো বলো! তোমাদের মানুষ হবার কত তাড়া। পায়ের তলায় সর্ষে। বিরাম নেই, বিশ্রাম নেই, শুধু যাওয়া আর যাওয়া।
— সবাই তো যায়, কি যায় না!

নীল মাছির কণ্ঠে বিষাদ ভর করে,
— যেয়ে লাভ কি! সময়বিন্দুকে অতিক্রম করে যেতে যেতে একদিন একেবারে থেমে যাওয়া। থেমে যাবার আগে মনে হওয়া- এই ইঁদুর দৌড়, এই দিনযাপন অর্থহীন… সব অর্থহীন! শুনতে পাওয়া কে যেনো ডাকনাম ধরে ডেকে বলছে, “তোমার না মনসুখিয়া যাবার কথা ছিলো!”

কথা খুঁজে পাই না। নীল মাছি বিজ্ঞের মত বলে,
— এসব কথা থাক। এত ঘনঘন তীব্র মাথাব্যাথা আর গাঢ় জ্বর আসার লক্ষণ মোটেও ভালো নয়। তুমি কি পুষছো?
— জ্বরের লক্ষণ বিচার পরে করো। ও নীল মাছি, মনসুখিয়ায় কবে যেতে পারবো! ছুঁতে পারবো অভ্রজোনাকের পাখা!

নীল মাছি কোনো উত্তর দেয় না। জ্বর বাড়ছে, তৃষ্ণা তীব্রতর হচ্ছে। ঘরের সিলিং কখন নীলাকাশ হয়ে গেছে। মেঘে মেঘে কত প্রিয়মুখ। সবুজ ঘাসে দাঁড়িয়ে আম কাটছেন বাবা, ধবেধবে শাদা পাঞ্জাবী হাওয়ায় উড়ছে যেন মনসুখিয়ার নিশান।

.
নীলমাছি | ২০১৬ | বর্তমানে ‘মনসুখিয়া‘ বইটি আউট অব স্টক।

ডিজিটাল বাংলাদেশ

out.

নাম তার নিতাই চন্দ্র, ডাকে সবাই বাবু,
নেই কোনও জমিদারি, বাবু ডাকে তবু।
লেখাপড়া নেই তেমন, শুধু অল্পকিছু জানা,
ইচ্ছে ছিল লেখাপড়ার, সমস্যা ছিল আনা।

যা হয়েছে নিজের চেষ্টায়, তা দিয়েই চলে,
ঘরে খাবার না থাকলেও সত্য কথাই বলে।
কাজে ছিল পাকা, হিসাবে ছিল ঠিক,
বে-হিসাবে চলতে গিয়ে, সব হলো বেঠিক।

জায়গাজমি নেই কিছুই, পরের বাড়ি বাসা,
স্বপ্ন বলতে জীবনটুকু, বেঁচে থাকার আশা।
এখন বয়সে সে কাবু, মাথায় পেকেছে চুল,
স্মরণশক্তি কমেছে খুব, হিসাবে করে ভুল।

শরীরের চামড়া হচ্ছে ঢিলে, গুটিকয়েক দাঁত,
চোখের দৃষ্টি নেই তেমন, ঝাপসা দেখে দিনরাত।
একসময় দৌড়াত খুব, ক্যামি ঘড়ির পেছনে,
সারাক্ষণ বসে থাকতো, টিভির পর্দার সামনে।

সেইদিন নেই বাবুর, এখন ডিজিটাল দেশ-বিদেশ,
হাতে হাতে মোবাইল ফোন, আগের দিন শেষ।
ছোট একটা যন্ত্র মোবাইল, ভেতরে সব তার,
দুনিয়াটা হাতের মুঠোয়, চিন্তা কীসে আর।

লেখাপড়া লাগে না লিখতে, মুখে বললেই হয়,
কী লিখবে আমায় বলো, গুগল মামায় কয়।
তাইতো সবাই লিখে যাচ্ছে, হচ্ছে সবাই কবি,
স্টুডিওতে যায় না কেউ, নিজেই তোলে ছবি।

কমেছে ক্যামেরার মান, ধূলিসাৎ স্টুডিওর ব্যাবসা,
ফটোগ্রাফার সবাই এখন, মোবাইল ছাড়া সমস্যা।
দুঃখ করে বাবু বলে, মোদের দিন তো শেষ,
তথ্যপ্রযুক্তির এই দুনিয়ায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ।।

.
নিতাই বাবু:
১১/০৮/২০২৩ইং।

ফেউ

আকাশে ছড়িয়ে যাক একথালা ভাত
বুভুক্ষু মানুষগুলো চোখ মেলে থাক
বিত্তশালীরা কতোবড় দানশীল!
বুঝুক এইবার বস্তির যতীন।

মানুষ খেতে না পাক পড়ে থাক রাস্তায়
তারা কথা বলে বড় বড় হপ্তায় হপ্তায়
বানের জলে ভেসে যাক বানভাসী মানুষ
আমরাতো শহরে উড়াই রঙিন ফানুস।

কথায় নয় শুধু চাটুকারে ভরা
লাশবাহী গাড়িটা যাচ্ছে একা
আমরা যেমন থাকি ভাবছে না কেউ
নিরন্ন যারা তারা নয় এদেশের ফেউ।

১০০৮২০১৬

ধানশালিক যারা

স্বদেশ তুমি হাসো,এই বুনোহাঁসের বাংলায়
দ্বিধাহীন সেই রোদের মতো—বৃষ্টির প্রণয়ে
বাতাসও ডাকে সন্ধ্যা পাখির ছিন্ন ডানায়
এই পৃথিবীর ধানফুল দক্ষিণের খালপাড়ে

ভাঁটফুল ঝোপঝাড় পাতার কৌটা—মুমু রাত
এই যে গ্রাম মাটির দেওয়াল শহর বহুদলে
হেঁটে আসে নদী বাদামি বিকেল নতুন চাঁদ
ঘুড়ি আর ফড়িং নৃত্য করে কয়লার ফুলে

অধিক হেমন্ত সে নবান্ন গান চুলখোলা নারী
উষ্ণ বরফের ঠোঁট বুনে দেয় কুয়াশার চিল
নিজেল রাত্রি জলছাপ মানুষের কামার্ত পরী
উঠানের গীত ঘামের শিস মাটির সমুদ্র নীল—

আমাদের খুনসুটি এই আরও বকুল দোতারা
পৃথিবীর মলাট খুলে হাঁটে—ধানশালিক যারা!

রাতের পৃথিবী

fogg

কোন কোন ঘুম ভাঙ্গা রাতে দেখি
পৃথিবীটা নিঃসম্বল ভিখিরির মতো
ফুটপাথে কানা উঁচু থালা পেতে বসে আছে।
তন্দ্রাবেশে কুয়াশাভেজা নিস্তেজ রাত।

বাতাসের গায়ে গন্তব্যের প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে
একটি নিশাচর পাখি উড়ে গেলে; তুমুল
পাখসাটে হু হু করে বাজে অস্ফুট ব্যথাচ্ছন্ন এক সুর।
কখনোবা মানুষও তো পরিযায়ী পাখি!

শোনা না শোনার দোলাচলে হিস হিসে ধ্বনি বাজে ;
ঝলসে ওঠে রাতের চাবুক।

একটা প্রকাণ্ড কালো মাকড়শার মতো
কিলবিলে দশপায়ে হেঁটে যাচ্ছে জমকালো রাত।

যেতে যেতে কোথাও কী কিছু ফেলে গেলো কেউ
একটি পতত্র? এক ফোঁটা বিষ?

নিস্পৃহ সময়ের গান

নিস্পৃহ সময়ের কথা খুউব মনে পড়ে
তখন অকবিতারাও বেসুরো গান হয়
নদী আর নারী একই সুরে কথা কয়!

আজকাল দীঘির কালচে জলে নক্ষত্র জ্বলে
জোনাকিরা বেজায় ভয় পায়
ওদের কে বুঝাবে…?
যখন সাপ আর ব্যাঙ একসাথে ঘুমায়
তখন মহাবিশ্বের কারো কোনো ভয় নাই.!!

তবে ক্ষয় আছে মহাসমুদ্র কিংবা পাহাড়
জীবন যুদ্ধে টিকে থাকাই অতি বড় বিজয়
বিপদের দিনে অতিকায় হাতিও মশার আহার!!

মন কেন হয় মেঘলা আকাশ

cho

যেদিকে তাকাই যেন অথৈ সমুদ্র
কূল নাই, নাই কিনার, সাঁতরেও হতে পারবো না পার
কোথায় ভুল, কোথায় শুদ্ধতা
আকাশে তাকিয়ে উদাস, পাই না কথার উত্তর।

মানুষের মন কেন কালো মেঘ আকাশ,
কেন হয় না কাশফুল
মানুষের মন হয় না সাদা মেঘ
মানুষের মন কেন পাথরের পাহাড়।

ভাবতে গিয়ে ডুবে যাই চিন্তার ডহরে
পারি না স্বাচ্ছন্দ্যে উঠতে আর
ক্রমশ মনের আকাশ হয়ে যায় গ্রীষ্ম,
আমি তো চাই মন থাকুক হেমন্ত।

চাই মন হউক শরতের মত, সুখে উদাস
অথচ সব আশা আমার গুঁড়েবালি
চোরাবালি সময়, হারিয়ে যাই মুহুর্মুহু কষ্টের অতলে,
হারিয়ে গেলেও খুঁজে না কেউ আর।

তুচ্ছ আমি, আমি অবহেলার চূড়ান্ত সীমানা
সে সীমানায় উচ্ছলতা নেই
নেই দু’দন্ড শান্তির হাওয়া
আমি অপ্রয়োজনীয়, কেন তবে হবে আমার
দুনিয়ার বুকে বসবাস!

ইশ পাখি হয়ে যেতাম যদি
অথবা আকাশে মেঘ
এখানে কেউ ছুঁয় না আমার মনের আবেগ
স্বার্থপরদের সাথে বসবাস, আর কিছু দীর্ঘশ্বাস
নিয়েই যেন দেব পাড়ি অনন্ত পথ।

.
(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, গ্রীণ মডেল টাউন ঢাকা)

বিশ্বস্ত বন্ধুদের প্রতি

এখন রপ্ত করতে চাই কীভাবে পালাতে হয়, কীভাবে দীর্ঘ করা যায়
বিভিন্ন ছুটিদিবস- কীভাবে অন্য কোনো গ্রহে পৌঁছে নেয়া যায়
মুক্ত নিশ্বাস। জানি সেদিন হয়তো থাকবে না আর এই শ্বাসকষ্ট,
এই পোড়ামাটিচিহ্ন লেগে থাকবে না আমার হাতে, অথবা যে ছবিগুলো
একদিন ছিঁড়ে ফেলেছিলাম, সেগুলোও জোড়া লাগাবার প্রয়োজন
পড়বে না আর।

এবার শিখে নিতে চাই নাম-নিশানা মুছে ফেলার কৌশল, কেউ
জানবে না এই নগরের ভোটার তালিকায় আমারও নাম ছিল,
একদিন কলমও ছিল আমার বিশ্বস্ত বন্ধু আর কাগজে
যে কাটাকুটিগুলো আমার পাঁজর ছিল- মূলত এরাই ছিল আমার কবিতা।

আমি পালিয়ে যেতে চাই,
মানুষ আমাকে পরাজিত পথিক বলুক
তারপরও,
যেতে চাই এই নগর থেকে অন্য কোথাও
যেখানে কেউ আমাকে আর চিনবে না
কেউ জানবে না পূর্বজনমে আমি আদৌ মানুষ ছিলাম কী না !

আবেগের আলিঙ্গন

sh

ছিঁড়েছে হৃদয়, হতাশায় জগৎ,
তবুও আশা বেঁচে থাকে, তাজা বাতাসের মতো,
পরীক্ষা এবং ক্লেশের মধ্য দিয়ে, আমরা সাহস করি,
প্রেমের যাত্রায় দুঃখ, বেদনাকে আলিঙ্গন,

এই বেদনাত্মক আত্মার ক্রন্দন,
ইথারের শূন্যতায় ভেসে যায় সুগন্ধি গোলাপ
সঙ্গীন জীবন, সংকীর্ণ পথ আর পথিক।

এভাবেই চলছে, শেষ পর্যন্ত,
একটি সময়ের পথে সম্পূর্ণ সুখ
দুঃখ স্মৃতির আবেশ যেনো এখানেই একাকার,
চারপাশের কানাঘষা খোলামেলা চিৎকার
মুখোমুখি মিষ্টি হাসি,

আমি বলে রাখি তোমার অপেক্ষা,
এই দিন শেষ হবে দুই আত্মা, এক হিসাবে,
নিয়তির মিষ্টি কীর্তি, প্রেমের সিম্ফনিতে
নাটক সাজিয়ে মন সুস্থ হবে,

ওহ এত ঝরঝরে,
এত স্মৃতি এত বেদনার পর
আবেগের এই ট্যাপেস্ট্রিতে,
ভালোবাসার হৃদস্পন্দন।