বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

তুই কিরে ধন দুই জনমের টুনটুনি! (গীতিকাব্য)

একতারা-1

সুর হারা এই বুকের মাঝে
নিত্তি বাজাস ঝুনঝুনি –
তুই কিরে ধন দুই জনমের টুনটুনি!

ক্ষণিক দোষে মান না করে
সয়ে বর্ষা খরা,
হাতের কাছেই ছন্দে নাচিস
যায় না তবু ধরা।
না যদি হোস আপনজনা
তোর তালে ক্যান ক্ষণ গুনি –
তুই কিরে ধন দুই জনমের টুনটুনি!

নিদ্রা বা হোক জাগরণে
যেথায় থাকি মাতি,
তুই তো আমার ভাঙা ঘরে
জ্বালাস সাঁঝের বাতি।
পাই না বুঝে বারেক দেখা
তোর আশে ক্যান জাল বুণি –
তুই কিরে ধন দুই জনমের টুনটুনি!

বাণীশান্তার দিনগুলো

সিপাহি অস্ত্র গুণতে গুণতে গোলাপের দিকে
এগোচ্ছে-সবুজ ছড়ানো সাম্রাজ্য,
যুদ্ধগুলো ফুল হয়ে এদিক ওদিক নাচে
মেঘের কাতান ছুঁয়ে যায় ফের সে পথ-
মুখোমুখি সন্ধ্যা এবং সৌডল শিরোনাম

এই দুঃসময়ে সতর্ক টেনে ঘোর বুকে
সমস্ত আঘাত হাইফেনের মতো
আঙুলগুলোর উদ্যান যেন
শিস-গান; কী সুন্দর ট্রেনলাইন
ঈর্ষার বেড়াল-নদীর মতো বয়ে যায়…

শিরীষের বনে ভ্রাম্যমাণ রোদ আর
মুঠোর ভেতরে বসন্ত, সবুজপোষা বাণীশান্তা-
রাগের খাদে-খাদে মশলায় জমে আছে
উষ্ণ তৃপ্তিচিহ্ন, ফসলি রোপণে স্বাধীনতা!

বিজয়ের জলচাদর

গায়ে জড়িয়ে নিতে নিতে অনুভব করি রক্তের ওম
এই চাদর গায়ে দিয়েই নদী পার হয়েছিলেন আমার
সহোদর, আমার বুকের ভেতর যে পাখি দম নেয়
প্রতিদিন, তার জন্য জমা রাখি অমর উষ্ণতা।

এই বিজয়ের ভোরে
আমি বার বার পাঠ করি সেই চাদরের ভাজ
বার বার খুলে দেখি কিছু নাম ও শিখা
যে বাতির ভেতর সাদা সলতে পুড়ে,
ঠিক তার মতোই,
জলানলে পুড়ে আমি উড়াই বিজয় পতাকা।

প্রাণবীজ

সামাজিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
তবুও তুমি লিখছ – নিরন্তর
তোমার চিঠি পেলাম গতকাল
হলুদ খাম – সংসারী হতে চাও
কামনার ভ্রু উল্টে নতুন করে
শিখছ শরীরবিদ্যা – প্রণয় বুলি

ঘন নিঃশ্বাস ফেলে শূন্যে ঝুলিয়েছ ফানুস
সতর্ক সাইরেন – নারী কামনার ঘোর

উত্তর দিলাম –আমাকে অস্থির করো
মদ্যপানের ন্যায় মিইয়ে আসা রক্তঘুম
অন্ধ সৈনিকের ন্যায় অমিত সম্ভাবনার আবেগ
আমার প্রলম্বিত যৌবনের ধ্যান তোমার জন্যে

নিঃশ্বাস ভরা জল থিরথির ভালোবাসা
লাল খাম –ভেতরে দু’জনার প্রাণবীজ।

যে দিন পৃথিবী থেমে যাবে

30

একদিন ঝরাপাতারা থেমে যাবে
মাটির ছলনায়-গোধূলির সহচরে।
একদিন জীবনের পেয়ালায়
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি ঝরবে
কিশোরী কাঁকনের রাগিণী সুরে।

একদিন ঘুমিয়ে যাবো আমি
কেয়াফুল,শেফালীর দলে।
পলাতকা যূথিকার পায়ের শব্দে
হয়তো জাগবো আবার কখনো
আষাঢ়ের ভোরে কদম ফুলে।

একদিন ঝরে যাবে সব ফুল
শরতের ভোরে;শিশিরের মতন।
সেদিন,
নিঝুম ঘুমের ঘোরে হেঁটে যাবে তুমি
হেমন্তের হিম ঘাসের ‘পরে !

সেদিন,
থাকবো আমি সাঁজদীপ জ্বেলে
আলো আঁধারের বনপথ ধরে।
সেদিন এই পৃথিবীও থেমে যাবে;
থেমে যাবে কৃষ্ণাতিথির শশী !

প্রিয় আখর

তোমার বিষাদগুলো কাজল করে
চোখে এঁকে নিলাম চেয়ে দেখোনা
একদিন একটা সুন্দর আইভিলতার
ফাঁক দিয়ে দেখে নেব তোমার হাসি
জলেতে ভেসে যায় যে হাঁসের পালক
তার উপরে একটা করে প্রিয় আখর
যখন ঝুম বর্ষায় ভাসবে বকুলতলা
তখনি একমুঠো স্বপ্নবীজ ছড়িয়ে দিও।

অতটুকু অবুঝ না হলেই পারতে

267168

অতটুকু অবুঝ না হলেই পারতে
আমি নিতান্তই নাদান এই তুমি জানতে।
অনন্ত আকাশের অথৈই নীলের মাতম
আর একটু কান পাতলেই শুনতে পেতে।
তুমি জানতে
প্রিয়তমা তুমি ঠিকই বুঝতে
কোন বিষাদের ভয়ে ডুবে থাকি অগাধ স্বপ্নে
কোন কারণে সাঁতরিয়ে যাই তোমার অক্ষি-সমুদ্রে
অবাধে বিবাধে
কিসের টানে নিরন্তর জেগে থাকি নৈশ পূজার কান্তে।

বিষাদ বড্ড দুরন্ত
কাঠবিড়ালির মতো লাফিয়ে চলে এক ডাল থেকে অন্য ডালে
কিন্তু!
তুমি ঠিকই জানতে
কোন বৃক্ষের কোন ডালে লুকিয়ে আছে আমার সাম্য শক্তির ফুল;
কোন সুবাসে মিটে আমার বুকের অদম্য যন্ত্রণার শুল।

অতটুকু অবুঝ না হলেই পারতে
আমি যে নিতান্তই নাদান প্রেমিক এই তুমি জানতে।
যদি জানতে নির্মমতার কালিমায়
কোন কবুতর ডানা মেলে আত্মহত্যার চিত্র আঁকতে
যদি দেখতে বর্বরতার নগ্নতায়
কোন চাঁদ হয়ে উঠে উন্মাদ; আপন কলঙ্ক ঢাকতে…

মুখ লুকাতে পেয়েছিলাম তোমার বুকের উপত্যকা
তুমি জানতে
সুখ আরোহণে বেয়ে ছিলাম সুউচ্চ চূড়ার স্তন
শত ক্রোশ পথ হেটে
আমি তোমাতেই পেয়েছিলাম দুষ্পাপ্য গুপ্ত ধন।
তুমি দেখেছো
তারপর
আর পিছু হটেনি বেঁচে থাকার এই উদ্যম আয়োজন।

একদিন পাখি হয়ে যাই ইচ্ছে

32

পাখির চোখে মর্ত্য দেখি ইচ্ছে, ইচ্ছে ডানা মেলি,
উপর হতে দেখি কেমন করে ফুটে জুঁই বেলি,
ইচ্ছে হয় পাখির ডানায় আকাশ ছুঁয়ে আসি,
মেঘের ভেলায় ইচ্ছে শুয়ে শুয়ে ভাসি।

কী সুন্দর মেঘ, সাদা ডানায় উড়ে বেড়ায় দিনভর,
আহা আকাশ জমি আল্লাহর নিয়ামতে উর্বর,
যদি পাখি হতাম, নিয়ামত ছুঁয়ে আসতাম,
ইচ্ছে করে আল্লাহর দয়ার ভেলায় যদি ভাসতাম।

নীল যেন সাদা শাড়ি পরে ঘুরে বেড়ায় আকাশে,
আর আকাশ যেন ব্যস্ত বুকে তার স্বপ্ন চাষে,
ভালো লাগা আমায় যায় ছুঁয়ে,
কত মুগ্ধতা এসে এবেলা চোখে পড়ে নুয়ে।

আমি পাখি ভেবে উড়ি মেলে ডানা,
কল্প লোকে আজ হারাতে নেই মানা,
পাখির সাথে আজ আড্ডায় দেব যোগ,
আমি আকাশ ভালোবাসি, এ যে মনোরোগ।

ইচ্ছে পাখি হয়ে ঘুরি গাঁয়ের উপর
মাথায় পরে মেঘের টোপর,
গাঁও হতে শহর, শহর পেরিয়ে গাঁয়ে
ইচ্ছে ভেসে বেড়াই হাওয়ার নায়ে।

মেঘ’রা যেমন বেড়ায় উড়ে
পাখিরাও ঘুরে দূর বহুদূরে
আমারও ইচ্ছে পিঠে লাগাই ডানা
ইশ উড়তে যদি আমার না থাকতো মানা।

(স্যামসাং এস নাইন প্লাস, চুনারুঘাট)

বিজয় পতাকা

Art_20

৭১ মানেই রক্ত ঝরা রাত
দীর্ঘ নয় মাস বীর বাঙালির যুদ্ধ;
৭১ মানেই ৭ মার্চের ভাষণ
২৫ মার্চের সার্চলাইটে ছাত্র, শিক্ষক
বুদ্ধিজীবী হত্যার কালো রাত,
আর ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ডাক;
৭১ মারেই ৩০ লক্ষ শহীদ- ২ লক্ষ
মা বোনের সম্ভ্রম হারানোর আর্তনাদ;
৭১ মানেই রক্তে অর্জিত ১৬ ডিসেম্বর
লাল সবুজের বিজয় পতাকা।

খুঁজলি না রে মন ভোলা! (গীতিকাব্য)

giti

খুঁজলি না রে মন ভোলা তুই
ক্যামনে বাঁচে চাতক পাখির প্রাণ!
সারাজীবন আশায় শুধু চেয়েই গেলি ত্রাণ –
খুঁজলি না রে মন ভোলা তুই
ক্যামনে বাঁচে চাতক পাখির প্রাণ!

জীবন ভেবে নিজের বিভব সটান রেখে ঘাড়,
চন্দ্রমা ক্যান জোছনা ঢালে ভাবলি না একবার!
আসতে যেতে তপ্ত বায়ু
চষতো যদি পরমায়ু
করতো কি রে মেঘের ডাকে দম কভু আনচান?
খুঁজলি না রে মন ভোলা তুই
ক্যামনে বাঁচে চাতক পাখির প্রাণ!

সঙ্গী মেনে ভবের মোহ গড়ে বুকের ভীত,
জানলি না ক্যান সরিৎ রচে জোয়ার ভাটার গীত।
চর্ম চোখের দৃষ্টি যদি
দেখতে পেতো নিরবধি
শুক কি রে তোর পিঞ্জিরাতে করতো অভিমান?
খুঁজলি না রে মন ভোলা তুই
ক্যামনে বাঁচে চাতক পাখির প্রাণ!

জাগানি

যদি জেগে থাকো মেলা রাত অব্দি
যদি কথা রাখতে ইচ্ছে হয়
সূর্য মেলে দিও রাত আঁধারে
ভয় থেকে টেনে নামিও
একজোড়া চোখ নিজের দিকে।

এখানে তো এখনো কত কথা জমে থাকে
শীতভোরের কুয়াশাচ্ছন্ন মায়ায়
কত অভিমান খেজুরের রসে হাঁড়ি ভরেছে
কত হাহাকার বাতাসে মিশেছে
যদি জেগে থাকো ভোর দেখিও।

সময়ের ঘোড়া দেখো সোনালী কেশরে
ছুটে যাচ্ছে যমুনার স্রোতে
কত শত নদী এমনি গড়িয়ে গেছে পা ছুঁয়ে
চলে গেছে বেহুলার কয়েকটা বাসরভেলা
কথার আঁটি মাথায় চাপিয়ে দিয়ে চলে যেওনা।

যদি জেগে থাকো সারারাত জলপট্টি হয়ে
আরামের সেঁকে হতে পারো মনোরম
কথা দিয়ে কথা রাখব ভুল হবে না
যদি জেগে থাকো কথা নয় ভালবাসায় বুঝিও
যেন পারি পথ চলতে কখনো দুজনে দুজনায়।

সূর্যবালার হাত

রাতের ভেতরে হারিয়ে যেতে যেতে আমি আবারো
খুঁজে ফিরি আঁধারের নিজস্ব ওম। যারা নিজেদের
সাম্রাজ্য বাড়াবে বলে খুঁড়েছে আমার ভিটে, তাদের
প্রেতাত্মা দেখে আমি হেসে উঠি। এরা একাত্তরে ঠিক
এভাবেই হেরে গিয়েছিল আমার পূর্বসূরীর কাছে। রক্ত
ও রোদের নিয়ন্ত্রণে জয়ী হয়েছিল সূর্যবালার দুটি হাত।
দিনের ভেতরে হারিয়ে যেতে যেতে আমি আবারো
দেখে নিই আমার কনুই। চামড়ায় জমে আছে কালো
দাগ। হামাগুড়ি দিয়ে মরণাস্ত্র বহনের ভার। আর উত্তর
সূরীসুত্রে প্রাপ্ত গেরিলা কৌশল। সময় হলে যে পাঁজর
বিষ্ফোরিত হবে যথাশীঘ্র, একান্তই আণবিক উত্তাপে।

উপচানো জলের খতিয়ান

ক’দিন ধরে আমার সুখ যেনো উপচে উপচে পড়ে
আমিও কম না পরিত্যাক্ত একটি ডায়েরির পাতায়
লুকিয়ে রাখছি সেই উপচানো জলের খতিয়ান..,
তবুও সবাই বেসুরো জানতে চায়, কেমন আছো?
আমিও সংকোচহীন বলে দিই তাবত বয়ান—
বলি, বেশ ভালো আছি.. আছে দুই পাটাতনে পা
কেবল অন্তক্ষরা গ্রন্থিটার খবর কাউকে বলি না!

সেদিন বাংলিশ চ্যাটে কেউ একজন বললো,
আমাকে প্রেম দাও -আমি তোমায় শক্তি দেবো
বুকের গহিনে সেই প্রেম পারিজাত করে রাখবো!
আমি হাসতেও পারিনি, কাঁদতেও পারিনি..
শুধু নিজেকে নিজে একবার বললাম, যেই প্রেম
আমাকে একেবারে নিঃস্ব করেছে, আমাকে
চোরাবালি চিনিয়েছে, যেই প্রেম আমাকে ঘুমভাঙা
রাতদুপুরে মৃত কবিতা প্রসব করতে শিখিয়েছে
আবার কেন সেই প্রেম?

একবারও বলতে পারিনি চাইলেই যেই প্রেম
আষাঢ়ে জলের মতো পাওয়া যায়, এতো এতো
সস্তার প্রেম এখন আর আমার কাছে নেই-!!
ভালোবাসার জন্য যে আমি একদিন পৃথিবীর সব
বিশেষণ কিনে নিয়েছিলুম, আজ আর সেসবের
একটিও জীবন্ত নেই, এরা সবাই
একসমুদ্র অবহেলার নিদান জলে ডুবে মরেছে!!

মৃগ মৃণাল

316

রাঙাপলাশের আগুন ছুঁতে গিয়ে
আমি পুড়েছিলাম তুষারমণ্ডিত ঠোঁট!
প্রকাণ্ড কম্পনে
হীমে নীল হয়ে আসা দেহারণ্য ভেদ করে
বেরিয়ে আসে মৃগ মৃণাল;
ছুটে ব্যগ্র চিত্তে…
জঙ্ঘানদীর বাঁকে
আছড়ে পড়ে আদিম কল্লোলে…

নীরবতাই সৌন্দর্য

কী এমন ছড়িয়ে রেখেছ, যথার্থ করে?
এক অপূর্ব আহবান-আজ খেলাচ্ছলে
কাছাকাছি থাকবার পরও নৈঃশব্দ্য;

বিষাদ জানে, হাত-পা চোখ মুখ
সৌজন্য সমর্থনে সব ভূতভয় ছেড়ে
আসি জানালার পাশে, দুটো চড়ুই-
দাম্পত্য পেতেছে। সেগুলো দেখবার
জাগতিক নাচ একেবারে ফুল-ফল
এই তো, তারপর সম্ভবনার ভূষণ ধরে
শব্দহীন স্মৃতির শাদা হাঁসগুলো উড়ছে
দু চোখের ভ্রু মোধ্যি ইশারা গুঁজে
শেয়ালের রাত রোদ নিয়ে পালাচ্ছে