বিভাগের আর্কাইভঃ সমকালীন

এত ধর্ম-কর্ম! তবু কেন অশান্তিতে সমাজ?

এ বিষয়টি বুঝতে পণ্ডিত হবার দরকার নেই যে, রাষ্ট্র অরাজক হলে অশান্তি পোহাতে হয় জনগণকে। তাই সবার আগে রাষ্ট্রকে ন্যায়ের দণ্ড ধারণ করতে হয়, তবেই জনগণ শান্তিপূর্ণ সমাজ পায়। কোনো আদর্শ যদি এমন হয় যে, তাতে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপরিচালক নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই, তাহলে ঐ আদর্শ আর যাই হোক সমাজে শান্তি আনার জন্য যথেষ্ট নয়। ঐ আদর্শ পূর্ণাঙ্গ আদর্শ নয়। এজন্য গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সাম্যবাদ, একনায়কতন্ত্র ইত্যাদি সমস্ত মতাদর্শই কিন্তু রাষ্ট্রকে নিয়ে কথা বলে, রাষ্ট্রকে একটি নির্দিষ্ট সিস্টেমের মধ্যে ফেলে সমাজে শান্তি আনয়নের চেষ্টা করে। কোনো মতাদর্শই রাষ্ট্রকে এড়িয়ে সমাজে শান্তি আনার অলীক কল্পনা করে না।

কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, গণতন্ত্র-সমাজতন্ত্র না হয়ে যখনই ইসলামের প্রসঙ্গ আসে, আমাদের মধ্যে একটি শ্রেণি সেই অযৌক্তিক কল্পনাটিই করে থাকেন। তারা চান ইসলাম মানুষকে শান্তি এনে দিক, সমাজে ন্যায়, সাম্য প্রতিষ্ঠা করুক, কিন্তু রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ে কোনো কথা না বলুক। এই স্ববিরোধী ও অযৌক্তিক দাবি তারা কীভাবে করেন? আজ যদি কোনো সমাজতন্ত্রীকে নসিহত করা হয়, ভাই, তোমরা আর্তপীড়িত মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করছো কর, কেবল একটাই অনুরোধ- রাষ্ট্র নিয়ে, রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা নিয়ে কোনো কথা বল না, এ বাদে অন্য যে কোনো বিষয়ে বলতে পারো আপত্তি নাই। তাহলে ঐ সমাজতন্ত্রী কি তা মেনে নিবেন? যদি কোনো গণতান্ত্রিক মতাদর্শীকে নসিহত করা হয়, তোমরা সমাজ, পরিবার, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি সকল বিষয়ে কথা বলো, শুধু রাষ্ট্র নিয়ে কোনো কথা বলো না, তাহলে কথাটি কেমন শোনাবে?

শিকারীকে বাঘ শিকার করতে হয় বনে গিয়ে। যদি আপনি তাকে বনেই যেতে না দেন, বনে না গিয়ে অন্য যে কোনো স্থান থেকে বাঘ শিকার করে আনতে বলেন সেটা শিকারীর পক্ষে সম্ভব হবে কি? জেলে কি পারবেন জলাধারে না গিয়ে মাছ ধরে আনতে? না। কিন্তু আমরা ওটাই চাচ্ছি ইসলামের বেলায়। তারপর যখন সমাজে খুব ধর্মকর্ম থাকার পরও, লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা থাকার পরও, লক্ষ মানুষের ইজতেমা হবার পরও, লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতি বছর হজ্ব করতে যাওয়ার পরও এবং রমজান মাসে ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে রোজা পালনের পরও সমাজ অন্যায়, অবিচার, খুনোখুনি, ধর্ষণ, রক্তারক্তি, দুর্নীতি ইত্যাদিতে ভরপুর হয়ে থাকে, তখন তাচ্ছিল্যের সুরে বলা হয়- এই কি তবে ইসলামের শান্তির নমুনা? কী হাস্যকর মূল্যায়ন!

আমাদের কথা হচ্ছে, তারা যদি সত্যিকার অর্থেই ইসলামের শান্তির নমুনা দেখতে চান তবে বলতে হয়, সে সময় এখনও আসে নি। যে এখনও পরীক্ষাতেই বসল না, তার পাস বা ফেল হবার প্রসঙ্গ আসে কি? তাকে আগে পরীক্ষায় বসতে দিন, জেলেকে জলাধারে যেতে দিন, শিকারীকে বনে যেতে দিন, তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার সময় আসবে। আল্লাহ-রসুলের প্রকৃত ইসলামকে সর্বপ্রথম একটি জনগোষ্ঠী তাদের সামষ্টিক জীবনে গ্রহণ ও কার্যকর করেছিল। ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজজীবন নয় কেবল, ঐ ইসলামকে অধিকার দেওয়া হয়েছিল তাদের জাতীয় জীবন নিয়ে কথা বলার, পরিবর্তন ও সংস্কারসাধন করার। তবেই পৃথিবীর ইতিহাসের সবচাইতে বড় রেনেসাঁটি সংঘটিত হয়েছিল।

যদি আরবরা আল্লাহর রসুলকে শর্ত জুড়ে দিতেন যে, ‘আপনি আমাদের ব্যক্তি ও সমাজজীবন নিয়ে কথা বলুন, কীভাবে ভালো হয়ে চলা যায়, কীভাবে সত্য কথা বলা যায়, কীভাবে হালাল কাজ করা যায়- এসব বলুন, কিন্তু আমাদের জাতীয় জীবন নিয়ে কোনো কথা বলবেন না। ওটা আমরা যেভাবে রেখেছি সেভাবেই থাকবে। জাতীয় জীবনে আমাদের গোত্রপতিরা যা বলবেন আমরা তাই করব, তবে চিন্তা করবেন না, ব্যক্তিজীবনে আমরা খুব ভালো মুসলিম হব, আপনার আনিত ইসলামের সমস্ত হুকুম আহকাম মেনে চলব।’ এই শর্ত মেনে সেই ইসলাম কি পারত আরবদের দাঙ্গা-হাঙ্গামাপূর্ণ অনিরাপদ সমাজকে পাল্টিয়ে ন্যায়, শান্তি, সুবিচার ও নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে?

মাইডাস টাচ

পাঁচ লক্ষ কোটি টাকার ‘মাইডাস টাচ’ বাজেট স্পর্শে,
ক্ষুধা কাতর মানবাত্মার হলো কি কোনো পয়মন্ত প্রাক্কলন?
কথা ছিলো মধ্যম আয়ের এই দেশে বাজেট স্পর্শে
ক্রমশ বিলীন হবে অবিনাশী দারিদ্র্যের প্রলয় অশ্রুজল I
অতলান্ত উন্নয়নের জোয়ার, সুখ সমৃদ্ধির প্লাবনে দেশ আমার,
হবে দূর প্রাচ্যের কোনো সিংহ নগরী বা নিখোঁজ আটলান্টিস !
কিন্তু ‘কেউ কথা রাখেনি’-র বরুনার মতোই ধোকা দিয়েছে কেউ,
অপ্রাপ্তির ডালি সাজিয়ে ফোটা গোলাপে আজ মৃত শবের গন্ধ!
সোনার ধানের সোনালী খাঁচায় বন্দি কৃষক সোনালী আগুনে অঙ্গার,
নিষিদ্ধ নৈবদ্য বাজিয়ে বুঝি চলবে অন্ত্যজের অন্তহীন আরতি !
নুন আন্তে পান্তা ফুরোনোর পুরোনো গল্পেই রাত কাবার,
ধুর শালা, কে শোনায় আবার সোনালী ভোরের কল্পগল্প!
‘মাইডাস টাচ’ বাজেট স্পর্শেও অপাঙতেয় আমি অন্ত্যজ অস্তিত্বে,
অস্তিত্ব বিনাশী পরিচয়ে হয়ে গেছি রাজা মাইডাসের গড়া নিস্প্রান স্বর্ণমূর্তি !

*********
ইংরেজি ফ্রেজ ‘মাইডাস টাচ’ মানে হলো যে স্পর্শে সব কিছু সোনা হয় । গ্রিক মিথলজির রাজা মাইডাস দেবতার বরে যা স্পর্শ করতেন তাই স্বর্ণ হয়ে যেত। একদিন ভুল করে রাজা মাইডাসের স্পর্শে তার একমাত্র মেয়ে প্রাণহীন সোনার মূর্তিতে পরিণত হন । সেই শোকে রাজা মাইডাস মৃত্যুবরণ করেন I

বাবা তুমি ছিলে কেমন

(বাবাকে উৎসর্গ – পিতৃ দিবসে)

এলাম তো এলাম, সেই বৃত্তি পেয়ে
সোনার দেশ ছেড়ে আজ বহুদিন;
স্বপ্ন দেখি, বসে আছ সে পথ চেয়ে
বার্ধক্যে তোমাকে দেখিনি কোনদিন।

মনে পড়ে, তোমার হাতখানি ধরে
গিয়েছিলাম,সেই যে প্রথম স্কুলে;
আমার ব্যাগ তোমার কাঁধের ‘পরে
পথে হলো বায়না,বাঁশী দেবে বলে।

কত বার হয়েছিল আমার জ্বর
অসুস্থ সে আমি, দেখেছি ক্লান্ত তুমি;
জল দিয়েছিলে মাথায় রাত ভর
আর বড়ো স্বস্তিতে ঘুমিয়েছি আমি।

বিদায় বেলায় সে বিমান বন্দরে
দেখেছিলাম তব অশ্রু ভেজা চোখ;
সবই পেয়েছি তবু কাঁদি অঝোরে
পারিনি দিতে তোমাকে একটু সুখ।

হয়েছি বড় তুমি চেয়েছিলে যত
না দেখে তা, অভিমানে লুকিয়ে গেলে;
কপালে চুমু, তোমার আশীষ শত
পারিনি নিতে ভাসি তাই অশ্রুজলে।

দেখ আজ তোমার শিয়রের পাশে
সে আসামীর মত কাঁপছি দাঁড়িয়ে;
মানে মুখখানিও দেখালে না শেষে
কত না প্রতীক্ষা শেষে গেলে ঘুমিয়ে।

        তুমি ছিলে কেমন:
এতই মমতা, এতই নির্ভরতা
এ পৃথিবী জুড়ে মিলে নাক এমন;
পিতৃ প্রেমে নেই যে কোন কুটিলতা
শুধু নির্মলতা, এ মৃত্তিকা যেমন। 

লিমেরিক – ১৩

অদৃশ্য খুনী
তামাক আর ধূমপান এরা অদৃশ্য খুনী
যারা রয় চারিপাশে তাদেরও হয় হানি
দেয় না কখনো কোন ছাড়
জীবন চুরিই তার কারবার
পরে গলা টিপে ধরে পালায় শ্বাসখানি।

আমাদের ঈদ উদযাপনের বাস্তবতা

আনন্দ ও বেদনা আত্মার ভেতর থেকে আসতে হয়, জোর করে এটি করা যায় না। একটা মানুষ আত্মা থেকে তখনই আনন্দ অনুভব করে যখন তার কোনো আকাক্ষা, স্বপ্ন পূরণ হয়, যেমন পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করা, চাকরিতে পদোন্নতি পাওয়া, যে কোনো প্রতিযোগিতায় ভাল করা ইত্যাদি। ঠিক একইভাবে একজন আত্মা থেকে বেদনা, কষ্ট অনুভব করে তখনই যখন সে তার কোন আকাক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। যদি কোনো ব্যক্তি সকল বিষয়ে সফল হতে থাকে তবে ছোট খাট ব্যর্থতা তাকে কষ্ট দিতে পারে না, একইভাবে আজন্ম ব্যর্থ ব্যক্তি দু’-একটা সফলতায় খুব বেশি আনন্দিত হতে পারে না। শোকে, কষ্টে তার চেহারা হয়ে যায় নিরানন্দ, করুণ, তার চেহারায় আনন্দ যেন বেমানান।

সে আনন্দ করলেও লোকে দেখে ঠাট্টা করবে, তাছাড়া ব্যর্থতার সমুদ্রে নাকানি-চুবানি খাওয়া অবস্থায় বিশেষ কোনো দিনে ঘটা করে মহা আনন্দিত হওয়া নিতান্তই বোকামী। এটা গেল ব্যক্তি পর্যায়ের আনন্দের ও বেদনার কথা কিন্তু একটা জাতি কখন আনন্দিত হতে পারে? এক্ষেত্রেও আনন্দিত ও বেদনার্ত হওয়ার সূত্র একই, অর্থাৎ কোনো জাতি যখন জাতিগতভাবে বিশেষ কিছু অর্জন করে, কোনো আকাক্ষা বা লক্ষ্য সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে পূরণ করে তখন ঐ জাতির প্রত্যেকেই অত্যন্ত আনন্দিত হয় এবং এর বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে উৎসবের আয়োজন করাও যুক্তিযুক্ত হবে।

কিন্তু কোনো জাতি যদি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পরাজিত, অপমানিত, লাঞ্ছিত, নিষ্পেষিত হতে থাকে অনবরত তবে সেই জাতির অন্তত জাতিগতভাবে লাঞ্ছনার জীবনের অবসান না হওয়া পর্যন্ত আনন্দ উৎসব করা যুক্তিযুক্ত হবে বলে আমি মনে করি না। যাদের বিন্দুমাত্র কোনো প্রাপ্তি নেই, জাতিগতভাবে অপমান আর লাঞ্ছনা যাদের নিত্যসঙ্গী তাদের আনন্দ উৎসব করার ইচ্ছা জাগে কী করে? অবশ্য যাদের অপমান বোধই নেই তাদের পক্ষে সবই সম্ভব। জাতির লক্ষ্য সম্পর্কেই যারা অজ্ঞাত তাদের আবার লক্ষ্য অর্জন করতে না পারার বেদনা কোথায়! যে পরীক্ষাই দেয় না তার তো অকৃতকার্য হবার কিছু নেই। যাই হোক, একটা জাতির মধ্যে অনেক ধরনের মানুষ থাকে সুতরাং আমি বিশ্বাস করি এই মুসলিম নামক জনসংখ্যার অতি অল্প সংখ্যক মানুষ হলেও আছে যারা এই জাতিকে নিয়ে ভাবে, তাই তাদের উদ্দেশ্যেই কিছু কথা বলা দরকার।

রসুলাল্লাহ মক্কার ১৩ বছরে ঈদ উদযাপন করেন নাই, তিনি সর্বপ্রথম ঈদ উদযাপন করেন দ্বিতীয় হেজরী অর্থাৎ সমাজে আল্লাহর হুকুমত, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পর। কারণ তখন মদীনায় ইসলামের বিজয়কেতন পতপত করে উড়ছে, ইসলামের যে লক্ষ্য, যে উদ্দেশ্য (সমস্ত পৃথিবীব্যাপী আল্লাহর সত্যদীন তথা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে শান্তি আনয়ন) তা বাস্তবায়িত হওয়া শুরু হয়েছিল এবং রসুলাল্লাহর ওফাতের পর ৬০/৭০ বছর পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। এরপর জাতি তার আকীদা, তার উদ্দেশ্য ভুলে গেল, তারা ভুলে গেল তাদের কেন সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু ততোদিনে তারা অর্ধপৃথিবীর শাসনকর্তা, জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, অর্থ-সম্পদে সকল দিক দিয়ে সর্বোচ্চ আসনে আসীন। শ্রেষ্ঠ জাতি হিসাবে তারা পরবর্তী প্রায় সাত/আটশ’ বছর পর্যন্ত ছিল তবে বিভিন্ন দিক দিয়ে তাদের পরাজয়, অধঃপতন শুরু হয়ে গিয়েছিল। তখন পর্যন্তও তাদের জন্য ঈদ উদযাপন যুক্তিযুক্ত ছিল কিন্তু যখন থেকে তারা ইউরোপীয় শক্তির দাসে পরিণত হলো, জাতিগতভাবে পরাজয়, অপমান, লাঞ্ছনা যখন পিছু নিল তখন থেকে আর ঈদ উদযাপন যুক্তিযুক্ত রইল না।

আর বর্তমানের অবস্থা তো আরও ভয়ঙ্কর, পৃথিবীর অন্য সব জাতিগুলি এই জনসংখ্যাকে পৃথিবীর সর্বত্র ও সর্বক্ষেত্রে পরাজিত করছে, হত্যা করছে, অপমানিত করছে, লাঞ্ছিত করছে, তাদের মসজিদগুলি ভেংগে চুরমার করে দিচ্ছে অথবা সেগুলিকে অফিস বা ক্লাবে পরিণত করছে। এই জাতির মা-বোনদের তারা ধর্ষণ করে হত্যা করছে। কয়েক শতাব্দী আগে আল্লাহ ইউরোপের খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলিকে দিয়ে মুসলিম বলে পরিচিত এই জাতিটিকে সামরিকভাবে পরাজিত করে তাদের গোলাম, দাস বানিয়ে দিয়েছেন। এটা ছিল আল্লাহর শাস্তি।

আর বর্তমানেও পৃথিবীর কোথাও আল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠিত নেই, অধিকাংশ জায়গাতে মুসলিম নামক এই জাতি অন্য জাতির হাতে মার খাচ্ছে, অপমানিত হচ্ছে, পরাজিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছে, একটার পর একটা ভূখ- ধ্বংস ও দখল করে নিচ্ছে অন্য জাতি, দুর্ভিক্ষে পতিত হয়ে মারা যাচ্ছে, সাড়ে ছয় কোটি মুসলমান উদ্বাস্তু। আবার এ জাতির সদস্যরা নিজেরা নিজেরাও শিয়া-সুন্নি, ফেরকা-মাজহাব, দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে মারামারি করে শেষ হয়ে যাচ্ছে। জাতির মধ্যে কোনো ঐক্য চেতনা নেই। এভাবেই যদি চলতে থাকে তাহলে তো জাতি একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কাজেই আমাদের উচিত হবে রসুলাল্লাহ (সা.) এর ঈদ উদযাপন ও এর লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সচেতন হওয়া ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া। এবারের ঈদ যেন আমাদের মধ্যে জাতিগত এই ঐক্যচেতনা সৃষ্টি করে, আমীন।

ঈদের খুশি

উপচে পড়া ভিড়ে
যাচ্ছে নাড়ির টানে ঘরে ফিরে
শত শত শহরবাসী;

আসে একবার বছরে
হেন মহা উৎসব ঈদুল ফিতরে
ঘরে ফিরে কত হাসি।

কেনাকাটারও ধুমধাম
গরমে পায়ে ফেলে মাথার গাম
সবাই কিনছে পোষাক;

ভাবে না কেহ কতদাম
দোকানেও নেই দামের লাগাম
তবু ইচ্ছে সবাই পাক।

কতজনে নেই অর্থকড়ি
মনেও নেই খুশি সে বছর জুড়ি
তারাও তো করবে ঈদ;

কতজন আছে কৃপা করি
বিলায় কাপড় চোপড় ভুরি ভুরি
উবে তাই কচিদের নীদ।

আত্মশুদ্ধির এ মাসখানি
চলো তবে শুদ্ধ করি মনখানি
ছাড়ি সব হিংসা বিদ্ধেষ;

কত সংযমী ঐ জ্ঞানীগুণী
কখনোও করে না কারো হানি
তেমন হই বাঁচুক দেশ।

নিজেকে বড় ভেবে মরি
না ভেবে তা, করি কোলাকুলি
এই তো ঈদের খুশি;

সংযমী হই আত্মশুদ্ধি করি
যতো পাপ, দুষ্টু কর্ম দিই বলী
মর্ত্যে ফুটুক স্বর্গ হাসি।

দুই টাকা আর পাচ টাকার কয়েন এখন অনেকের মাথার বোঝা

এক ভিক্ষুকের ভিক্ষার বাটি! ছবিটি গত কয়েকদিন আগে নিজ এলাকা থেকে তোলা। এই ভিক্ষুকের ঘরে প্রায় ২০ থেকে ৩০ কেজি কয়েন জমা আছে। প্রতিদিন কিছুকিছু করে দোকানদারদের হাতে পায়ে ধরে সাপ্লাই দিয়ে থাকে। বললেন, ভিক্ষুক নিজেই।

ধাতব মুদ্রাকে আগে লোকে বলতো, ভাংতি পয়সা বা রেজকি পয়সা বা খুচরা পয়সা। বর্তমানে এটাকে বলে ‘কয়েন’। আগেকার সময়ে এক পয়সা, দুই পয়সা, পাচ পয়সা, দশ পয়সা আর আধলি সিকি খুব যত্ন করে ঘরের বাঁশের খুঁটি কেটে জমা করে রাখা হতো। যে ক’পয়সাই জমাক-না-কেন, এগুলোই হলো গ্রামের গরিব- দুঃখীদের দুর্দিনের কষ্টের যোগান। যাকে বলে গরিবের সম্বল!

একসময় আমার মা বোনেরাও রান্নাঘরের বাঁশের খুঁটি কেটে ভাংতি পয়সা জমাতো। কোনও পূজাপার্বণের আগমনে বা কোনও মেলা উপলক্ষে বাঁশের খুঁটি কেটে জমানো পয়সা বের করতো। সেসময় এই ভাংতি পয়সা (এসময়ের কয়েন) দেখে মনের মাঝে কী আনন্দ-ই-না জাগতো। গ্রাম্য গৃহিণী খুঁজে পেতো শান্তির পরশ। ছেলে- মেয়েরা দেখতো মজার স্বপ্ন।

আগের সেই তামার এক পয়সা, দুই পয়সা, আর পিতলের পাচ পয়সা, এলুমিনিয়ামের দশ পয়সা এখন আর নেই। নেই সেই সময়কার পয়সা জমানোর আনন্দও। সেই স্বপ্ন হারিয়ে গেছে আরও অনেক আগেই। বর্তমানে স্টিলের ধাতব মুদ্রার কয়েনও এখন দুঃস্বপ্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ছবিটি নিজ এলাকার এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ছবি। তিনি পান-বিড়ি-সিগারেট বিক্রেতা। সাথে রাখে আইসক্রিম-সহ নানারকম শিশু খাদ্য। কয়েনের ভারে লোকটির এখন কোমর বাঁকা।

কারণ, ভাংতি পয়সা হলো, এসময়ের অপছন্দের কয়েন। যেই কয়েন এখন বাংলার মানুষের কাছে অবহেলিত এক ভারি ওজনের মাথার বোঝে। এই কয়েনের ভারে দেশের অনেক ছোট-খাটো ব্যবসায়ী-সহ সাধারণ মানুষের কোমর বাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান এক টাকা, দুই টাকা, পাচ টাকার কয়েন একসাথে ১০টি কয়েনও কেউ নিতে চায় না। তাই কেউ শখ করেও কয়েন ঘরে মাটির ব্যাংকে জমায় না। কারোর কাছে পাচ টাকার চার পাচটি কয়েন জমা হয়ে গেলেই, তাঁর মাথা খারাপ হয়ে যায়। খুচরা ব্যবসায়ীর দোকান থেকে পান-বিড়ি-সিগারেট কিনে কয়েনের ওজন কমিয়ে রাখে।

কেউ কেউ কয়েনের ওজন কমানোর জন্য আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিকদের সাথে শলাপরামর্শ করে আইসক্রিমের ভেতরে দুই টাকার কয়েন ভরে দেয়। সেই আইসক্রিমের দাম ধরা হয় চার টাকা। ছেলে-পেলে মনের আনন্দে দুই টাকার লোভে পড়ে সেই আইসক্রিম চার টাকা দিয়ে কিনে খায়। আইসক্রিম চুষে খেতে খেতে শেষপর্যায় আসলে আইসক্রিমের নিচের অংশে দুই টাকার একটা কয়েন পেয়ে মহা আনন্দে নাচতে থাকে।

আইসক্রিমের ভেতরে দুই টাকা মূল্যমানের কয়েন। এই কয়েনের লোভে পড়ে ছোটছোট স্কুল ছাত্র-ছাত্রী-সহ এলাকার আরও দশটি দোকানের সামনে প্রতিদিন ভিড় জমায়। আইসক্রিম কিনে খায়, আর আইসক্রিম থেক কয়েন বের করে নাচে।

কিন্তু তাতে কি আসলে কয়েনের ভার বা ওজন বা বোঝা কমছে? মনে হয় না! মনে হয় ‘যেই লাই, সেই কদু’র মতো অবস্থা। ক্ষণিকের জন্য কয়েন সাপ্লাই করে স্বস্তির নিশ্বাস পেলা ছাড়া আর কিছুই নয়! কয়দিন পর আবার ‘যেই কপাল, সেই মাথা’।

সময় সময় এমনও দেখা যায়, কয়েনের পুটলি মাথায় নিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরতে। কিন্তু দোকানদার অন্তত কয়েন না রাখার বান্দা। প্রয়োজনে মাল বিক্রি করবে না, কিন্তু কয়েন নেওয়া হবে না। নেয়ও না। এরপর নিয়ে যাওয়া হয় বাস স্ট্যান্ডে। বাসের কন্ট্রাক্টররা কিছু রাখে প্যাসেঞ্জারের কাছ থেকে ন্যায্য ভাড়া আদায় করার জন্য। তাও মনে হয়, ১০০টাকার কয়েন মাত্র ৯০টাকা ধরে। কয়েনের মালিক কয়েন বিক্রি করে কয়েনের ওজন কমিয়ে নিজের কানে ধরে উঠবস করতে থাকে। কয়েন জমানো ব্যক্তি বলে, “ছাইড়া-দে-মা কাইন্দা বাঁচি”।

আবার কেউ নিয়ে যায় নদী পারাপার হওয়ার গুদারা ঘাটে। সেখানেও একই অবস্থা দেখা যায়। কয়েন গুনো টোল আদায়কারীর কাছে বুঝিয়ে দিয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। কয়েনের সাথে দেওয়া হয় কয়েন মালিকের ফোন নাম্বার। গুদারা ঘাটে টোল আদায় করে জমা দেওয়া কয়েনের পরিমাণমত টাকা জোগাড় হলেই ফোন করে টাকা দেওয়া হয়। এতে কয়েনের পরিবর্তে কাগুজে নোট হাতে পেতে দু’এক দিন সময়ও লেগে যায়। তবু কি ধাতব মুদ্রা কয়েনের ওজন কমছে? মনে হয় না। সমস্যা থেকেই যাচ্ছে বলে মনে করি।

কয়েনের ওজন কমানো যেতো, যদি সরকার বর্তমান বাজারে কয়েন ছাড়া বন্ধ করে দিতো। কিন্তু না, তা আর সরকার করছে না। বরং প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে কয়েন বাজারে ছাড়ছেই। তাহলে এই কয়েনের ওজন কমবে কি করে? তাই আর কয়েনের ওজন কমছে না। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছোটখাটো দোকানদার, সাধারণ মানুষও কোমর সোজা করতে পারছে না। একবার এনিয়ে এক ব্লগে মাননীয় অর্থমন্ত্রী মহোদয়কে প্রশ্ন করে লিখেছিলাম।

লেখার শিরোনাম ছিল, “মাননীয় অর্থমন্ত্রী দুই টাকা, পাচ টাকার কয়েক কি পানিতে ফেলে দিবো”! লেখায় উল্লেখ করেছিলাম, মাননীয় অর্থমন্ত্রী, দেশে দুই টাকা, পাচ টাকার কাগুজে নোট থাকতে এতো ব্যয়বহুল ধাতব মুদ্রার দুই টাকা, পাচ টাকার কয়েন কেন? দুঃখ হয়! এর কোনও প্রতিকার পেলাম না।

এখন মাননীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন না রেখে প্রিয় পাঠকের কাছে আমি ছোট একটা প্রশ্ন করি! প্রশ্ন হলো, “এই দেশের বাজারে একই মূল্যমানের দুইপ্রকার মুদ্রা থাকা কতটুকূ যুক্তিযুক্ত?” যদিও বর্তমানে আমরা মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে চলছি। তাই এই দেশের সিংহভাগ জনসাধারণই আজ বিত্তশালী। এরপর অনেক আছে মধ্যবিত্ত। আমরা যারা আছি নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। মধ্য আয়ের দেশেও বর্তমানে আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়।

এরপরও সারাদিন ফ্যাক্টরিতে, গার্মেন্টসে, রিকশা চালিয়ে বাসায় ফেরার পর, পকেটে থাকা অবশিষ্ট কয়েকটা কয়েন মাটির ব্যাংকে জমা করে রেখে দেই; অসময়ের সম্বল হিসেবে। যাতে গরিবের জমানো কয়েনগুলো দুর্দিনে হাতের লাঠি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু তা না হয়ে কষ্টার্জিত কয়েনগুলো যদি মাথার বোঝা হয়ে দাঁড়ায়? তখন একজন অসহায় গরিব মানুষ বা ছোট-খাটো একজন দোকানদারের অবস্থা কেমন হতে পারে তা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়। যা এখন অনেকেরই মাথার বোঝা। না পারে রাখতে, না পারে ফেলে দিতে।

ছবি : নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে তোলা।

ফাও চা পাতায় আর ফাও সিম কার্ডের নেশায় আমরা আসক্ত

কয়েকদিন আগে নিজের মোবাইল ফোনে 4G ইন্টারনেট ব্যালেন্স ছিল না। তখন সময় রাত ১০টার মতো। আমার মাথা খারাপ হয়ে যাবার মতো অবস্থা হয়ে গেল। এতো রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ হাতে থাকা সত্ত্বেও তাড়াতাড়ি করে ফোন ফ্যাক্সের দোকানে গেলাম। দোকানে গিয়ে দেখি বর্তমান যুগের ইন্টারনেট রুগীদের ভিড় লেগে আছে। দুই-চার-পাচ জনকে আগে বিদায় করায়, আমার একটু দেরী হতে লাগলো। তাই আমি দোকানদারকে বললাম, “আঙ্কেল আমার নাম্বারটা লিখে টাকাটা রেখে দাও, তোমার সময় মতো দিয়ে দিও!”
আমার এমন কথায় দোকানের সামনে থাকা একজন বলল, “পরে লেখান। আমার কাজ আছে। তারাবীহ নামাজের সময় দোকান বন্ধ থাকার কারণে অনেকক্ষণ ধরে এখানে বসে আছি। মোবাইলে মেগাবাইট নাই। মাথা নষ্ট!”
ওই লোকটির মতো এমন মাথা নষ্টওয়ালা আরও অনেক দেখেছি, যাদের মোবাইলে ইন্টারনেট না থাকলে তাঁদের মাথা এমনই নষ্ট থাকে। লোকটির কথায় আমি নিশ্চিত হলাম, এই লোক ইন্টারনেট রোগে আসক্ত হয়ে পড়েছে। আমি ভাবতে লাগলাম! আর আগেকার ফাও চা মানুষের হাতে হাতে দেওয়ার শোনা কথাও মনে পড়ে গেল।

একসময় নাকি এই বঙ্গদেশে বিনা (ফাও) পয়সায় চা-পাতার একটা পুটলি মানুষের হাতে ধরিয়ে দিতো। সাথে চা বানানোর জন্য দিতে ২০০ গ্রাম আন্দাজ চিনি। অনেক সময় চা প্রচারকারীরা সাথে কেরোসিন তেলের চুলাও (স্টোভ) সাথে করে নিয়ে আসতে। গ্রাম শহরের হাট বাজারে বসে চা কীভাবে বানাতে হবে, তা প্রচারকারীরা নিজেই চা বানিয়ে দেখাতো। মানুষকেও খাওয়াত। মানুষ ফ্রি (ফাও) চা হাতে পেয়ে মনের আনন্দে চায়ের পুটলি আর চিনির পুটলি বাড়িতে নিয়ে নিজেরাই চা বানিয়ে পান করতো। এভাবে দিন-মাস-বছর যেতে যেতে একসময় মানুষ চায়ের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়লো।

সেসময় এই বঙ্গদেশে গরিব শ্রেণির মানুষের ঘরে চায়ের কাপ ছিল না। কিন্তু প্রায় মানুষেই তখন চায়ের নেশায় আসক্ত। না থাকুক চায়ের কাপ! নারিকেলের আইচা তো আছে? অনেকেই নারিকেলের আইচায় চা পান করে চায়ের তৃপ্তি মেটাত। এর চাক্ষুষ প্রমাণ আমি নিজেই একজন। আমার মাকেও দেখেছি, চা পান করার জন্য নারিকেলের আইচা সুন্দর করে চেঁছে রেখে দিতো। চা পান করার সময় ওই আইচা চায়ের কাপ হিসেবে ব্যবহার করতো।

সেই ফ্রি (ফাও) চা এখন বাংলার ঘরে ঘরে, আনাচে-কানাচে, হাট বাজারে, পাহাড়ের উঁচুতে,নিচে, সাগরের মাঝে, অলিগলিতে, অতিথি আপ্যায়নে, মজলিশে, জলসাঘরে, ক্লাবে, রেস্তোরায়, বিয়ে শাদিতে, সচিবালয়ে, মন্ত্রণালয়ে, জাতীয় সংসদে, গণভবনে, বঙ্গভবন-সহ সবখানে সব জায়গায়। চা ছাড়া বাংলার মানুষের এখন জীবন যায়। একবেলা না খেতে পারলেও সমস্যা নেই! কিন্তু ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাঙালির চা চাই! তা লাগবেই লাগবেই। চা ছাড়া যেন কারোরই রাতের ঘুম হয় না। একসময়ের ফ্রি চা এখন এক কাপ চায়ের দাম ৫ টাকা থেকে শুরু করে ১০টাকা পর্যন্ত। কোনও কোনও জায়গায় আরও বেশি।

অনেকেই মনে করে থাকেন যে, এটা হলো একসময়ে ফাও খাওয়ার খেসারত দেওয়া। এই বঙ্গদেশে একটা কথা প্রচলিত আছে, “ফাও খেলে ঘাও হয়”। আগেকার সময়ের বুড়ো বুড়িদের ছন্দে ছন্দে বানানো কথা আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ফাও চা খেয়ে যেই খেসারত আমরা এদেশের অগণিত মানুষেই দিচ্ছি। এর চেয়ে বেশি খেসারত দিতে হচ্ছে ফাও মোবাইল সিমের ফাও ইন্টারনেটে। একসময়ের ফ্রি (ফাও) চায়ের মতো মোবাইল সিমও একসময় ফাও দিতো। বর্তমানেও ফাও বিতরণ করছে। আমরা তা ব্যবহার করে চায়ের মতো নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছি। অদূর ভবিষ্যতে আগামী প্রজন্মদের জন্য এর খেসারত হবে আরও বিপদগামী।

একসময়ে ফাও চায়ের মতোই এক ভয়াবহ রূপ নিতে চলেছে, বর্তমান যুগের 3G, 4G নামের ইন্টারনেট। যার সংযোগ থাকে মোবাইল বা সেলফোন তারবিহীন ছোট একটা যন্ত্রে। সবাই এখন এটাকে মোবাইল বলে। এর ভেতরে থাকা সিম কার্ডের সাহায্যে একস্থান থেকে অন্যস্থানে কথা বলা-সহ 4G-এর মাধ্যমে মুহূর্তেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যায়। ছবি দেখা যায়, ভিডিও দেখা যায়। ই-মেইলের মাধ্যমে ছবি সহ বার্তা আদান-প্রদান করা যায়। লেখা যায়। খবর পড়া যায়। বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপস্) ব্যবহার করে টেলিভিশনও দেখা যায়। এমনকি ভিডিও কলও করা যায়।

বর্তমানে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোন আবির্ভূত হয়েছে। মোবাইল ফোন ছাড়া এখন মানুষের চলেই না। মানুষের জীবন চলার মাঝে খাওয়া-দাওয়া সহ অন্যান্য যা কিছু লাগে, তারমধ্যে মোবাইল ফোন হলো একটি। মোবাইল সাথে থাকতেই হবে। এমনও দেখা যায় বর্তমানে যাদের রাত যাপন করার মতো খেতা- বালিশ বলতে নেই, সেই ব্যক্তির ঘরেও জনপ্রতি একটা করে মোবাইল ফোন আছে। তাই জোর দিয়ে বলা যায় বর্তমানে মোবাইল হলো মানুষের দেহের একটা অংশ।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মোবাইল ফোন চালু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে। হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল) নামে ঢাকা শহরে এএমপিএস মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ফোন সেবা শুরু করে। এর পর থেকে শুরু হয় তারবিহীন সংযোগের মাধ্যমে কথা বলা। এরপর একের পর এক কোম্পানিগুলোর নিজস্ব সুবিধাদি দেওয়ার প্রতিশ্রুত দিয়ে গ্রাহক আকৃষ্ট করতে শুরু করে। শুরুর দিকে এ ফোন এবং সংযোগ উভয়েরই মূল্য বেশি থাকায় এর ব্যবহার ছিল সীমিত। কিন্তু পরে এর মূল্য সীমিত করায় এর ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতেই থাকে। এর সাথে আগে ছিল 2G ইন্টারনেট সেবা। এরপর 3G, এখন হাতে হাতেই থাকছে 4G ইন্টারনেট। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬টি মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি সেবা প্রদান করে আসছে।

প্রথম প্রথম এই ৬টি মোবাইল অপারেটরই গ্রাহক বৃদ্ধি করার জন্য প্রতিযোগিতামূলক চায়ের মতো গ্রাহকদের হাতে বিনামূল্যে সিম তুলে দিতো। একসময় দেখতাম, নারায়ণগঞ্জ শহরে বাংলালিংক, ওয়ারিদ মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ট্রাকে করে ব্যান্ডপার্টি দিয়ে বাজনা বাজিয়ে ট্রাকের উপর থেকে সিম কার্ড রাস্তায় ছিটিয়ে দিতো। মানুষ তা কুড়িয়ে নিতো।

যা এখনও দিয়ে থাকে। তবে সীমিত মূল্যে। সিম কার্ডের যেই মূল্য নিয়ে থাকে, তার চেয়ে বেশি থাকে সিম কার্ড ব্যালেন্সে। এমনও দেখা যায় দুটি সিম কিনলে সাথে দিবে সাংসারিক কাজে ব্যবহৃত পণ্যসামগ্রী। যেমন– একটা বাটি। একটা টিফিন ক্যারিয়ার বক্স। নাহয় টি-শার্ট অথবা গেঞ্জি। আর ফ্রি (ফাও) কথা (টকটাইম) বলার তো সুযোগ থাকছেই। নতুন সিমের সাথে দিচ্ছে ফ্রি (ফাও) 4G নামের নামমাত্র ইন্টারনেট সেবাও।

তাহলে এখন বুঝাই যাচ্ছে, আগেকার সময়ের ফ্রি (ফাও) চা-পাতা হাতে পাবার মতো হয়েছে, ফ্রি (ফাও) সিম হাতে পাবার ঘটনা। একসময় চা প্রচারকারীরা জানতো যে, “বাঙালি এভাবে ফাও খেতে খেতে একদিন চায়ের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়বে। তখন আর প্রচার করা লাগবে না। চায়ের নেশা আসক্ত ব্যক্তিরাই চায়ের প্রচার করতে থাকবে। আর আমরা বসে বসে মোছে তেল মাখবো।”

হাতে হাতে ফ্রি চায়ের মতো একইরকম অবস্থা দেখা যায়, ফ্রি (ফাও) সিম, আর ফ্রি ইন্টারনেটের বেলাও। এখন বাংলার প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে দেখা যাচ্ছে ইন্টারনেট নেশায় আসক্ত রুগী। যা চায়ের নেশার মতো হয়েছে অবস্থা। ইন্টারনেট নেশায় আমরা এখন গ্রাম শহরের সবাই আসক্ত হয়ে পড়ছি। আমাদের এইরকম নেশাগ্রস্ত অবস্থা দেখে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো নানাভাবে প্রতারণার সুযোগও কাজে লাগাচ্ছে। তাঁরা বর্তমানে কল রেট সীমিত রেখে সরকারের বাহবা কুড়িয়ে, 4G নামের ইন্টারনেট সেবার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তা আমরা অনেকেই টের পেয়েও পাচ্ছি না। কারণ, আমরা সবাই এখন ইন্টারনেট নেশায় আসক্ত। তাই এবিষয়ে কেউ প্রতিবাদও করছি না বা কেউ করছেও না।

মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো রিচার্জ ব্যালেন্স টিক রেখে 4G ইন্টারনেটে বেঁধে দিচ্ছে ফাঁসির মতো সময়সীমা। যাকে বলে মেয়াদ! মোবাইলে 4G ব্যালেন্স থাকা সত্ত্বেও, এর মেয়াদকাল শেষ হয়ে গেলে মোবাইল স্ক্রিনে 4G ব্যালেন্স দেখায় 00। তাঁরা বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্নরকম 4G প্যাকেজের অপার গ্রাহকদের দিয়ে থাকে। যদি কেউ ১জিবি মেগাবাইট ১সপ্তাহ মেয়াদে কিনে, ১সপ্তাহের মধ্যে ১কেবি মেগাবাইটও খরচ না করে; তাহলেও নির্দিষ্ট সময়ে গ্রাহকের কষ্টার্জিত টাকায় কেনা ১জিবি ইন্টারনেট ব্যালেন্স 00 হয়ে যাচ্ছে। ভাবতে অবাক লাগে! এরকম বাটপারি জুচ্চুরি সরকারি টেলিটকও করছে। দেশে থাকা অন্যান্য মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর পথ অনুসরণ করে দেশের জনগণের সাথে প্রতারণায় লিপ্ত রয়েছে। বর্তমান সময়ে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর এরকম প্রতারণার ফাঁদ দেশের জনগণ দেখে-ই-না। আর দেখলেও কিছু বলতে পারে না। কারণ, দেশের প্রায় মানুষই এখন একসময়ের ফাও চায়ের নেশার মতো ফাও সিমের ইন্টারনেট নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাই।

লেটস্‌ ফাক দেম টু দ্যা এন্ড!

লেটস্‌ ফাক দেম টু দ্যা এন্ড!

সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভে একেক ধর্মের জন্যে একেক রকমের বিধান আছে। এই যেমন মুসলমানদের জন্যে রোজা নামাজ হজ্ব যাকাত। হিন্দুদের জন্যে দুর্গা, কালি, সরস্বতী, শীবলিঙ্গ সহ হরেক রকমের দেব-দেবীর পূজা। বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনরাও বলতে গেলে সৃষ্টিকর্তার সমকক্ষ। তাদের সন্তুষ্টি এখন জাতীয় কর্তব্য ও পালনে বাধ্যতামূলক ধর্ম। আওয়ামী ধর্মেরও দেব-দেবী আছেন। তাদের নৈকট্য লাভের জন্যেও আছে সুনির্দিষ্ট কিছু তরিকা। এই যেমন ৭১’এর মুক্তিযুদ্ধ বন্দনা ও পাকিস্তান গীবত চর্চা। শাহরিয়ার কবির, খুশি কবির সহ দেশের গোটা বুদ্ধিজীবী সমাজ এখন চেতনা উদ্দীপক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ইয়াবা সেবন করে চলছেন আর তার মূল্যবোধ অনেকটা বায়বীয় কায়দায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন দেশের আকাশে বাতাসে। পাকিস্তান গীবতই বা বাদ যেবে কেন! এই গীবতের উদাহরণ হিসাবে টানা যায় জনৈক চেতনাবাজ হযরতের পুত্রের বিদেশ যাত্রার কাহিনী।

পুত্র বিদেশ যাচ্ছেন। তবে আমার আপনার মত পকেটে ৫ ডলার নিয়ে বিদেশ যাত্রা নয়। পরবাসে পা রাখার আগেই পুত্রের চেতনাবাজ পিতা হবু দেশের ব্যাংক একাউন্টে সবেধন নীলমনি পুত্রের নামে ৫০০ কোটি ডিপোজিট করে রেখেছেন। পুত্রের ফ্লাইট উড়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের উপর দিয়ে। তিনি প্লেনে বসে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজের অভিব্যক্তির কথা প্রকাশ করছেন। পাকিস্তানের উপর দিয়ে উড়ে যেতে কতটা ঘৃণা হচ্ছিল তা প্রকাশের ভাষা খুজে পাচ্ছিলেন না তিনি। লুটেরা পিতার লুটের টাকায় বিদেশ যাত্রায় চেতনার এই বিষ্ফোরণ অনেকের কাছে দেশপ্রেমের জীয়নকাঠি মনে হতে পারে। কিন্তু আমার কাছে এ শ্রেফ ফাকিং লুটের মাল হালাল করার সুরা আল হাসিনার কয়েকটা লাইন মাত্র। আরবী আয়াতের মত এই আয়াত বুঝার সক্ষমতাও সীমাবদ্ধ কতিপয় শাহরিয়ার কবির ও জাফর ইকবালদের মত কিছু কিন্তা কুন্তিদের মাঝে।

পাকিস্তান!
মাথায় পাগড়ি, মুখে লম্বা দাড়ি আর সাথে হালি খানেক স্ত্রী নিয়ে একদল সামন্তযুগীয় মানুষকেই আমরা পাকিস্তানী হিসাবে চিহ্নিত করতে অভ্যস্ত। তাদের চিনতে এবং ঘৃণা করতে আমাদের খুব একটা অসুবিধা হয়না। কারণ, এরা হচ্ছে ৭১’এর খুনী ও ইসলামী জঙ্গিবাদের ধারক বাহক।

আমাদের দেশে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে অনেকটা আবাবিল পাখির মত ওরা উড়ে আসে। উড়ে আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত হতে। মুখে থাকে অসাম্প্রদায়িকতার ললিত বাণী, আর হাতে থাকে শায়েস্তা করার সৌদি তরবারী। সুজাতা বিবিরা অতিথি হয়ে আসেন। নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে রাজনীতিবিদদের সাথে দরবার করেন। এবং পৌছে দেন দিল্লীর হুঁশিয়ারী। … বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্ষমতায়ন মেনে নেবেনা দিল্লী।

আমাদের দেশে নির্বাচন হয়।
রাতের অন্ধকারে ভোটবাক্স ভর্তি করে প্রভুদের চরণে পূজা-অর্চনা দেয় তাদের লোকাল এজেন্টরা। উপহার দেয় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।

ভারত!
গুজরাটের কসাই নরেন্দ্র মোদি নতুন করে জনগনের ম্যাণ্ডেট পেয়েছেন। আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবেন তিনি। গোটা ভারতকে আনবেন গো-মূত্রের আওতায়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রবক্তা, ওলামায়ে কেরাম, হুজুরে আলা হযরত মোদির (সাঃ) ভারতকে কট্টর ধর্মীয় অনুশাসনের আওতায় আনার নির্বাচনী ওয়াদাকে ম্যাণ্ডেট দিয়েছে ‘অসাম্প্রদায়িক; ভারতের জনগণ। তারই তাৎক্ষণিক প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে দেশটার আনাচে কানাচে। মুসলমানদের গরু পেটা করে লাইনে আনা হচ্ছে। বাংলাদেশী অভিবাসীদের ঝেটিয়ে বিদায় করার হুমকি উচ্চারিত হচ্ছে ক্ষমতার উচ্চ পর্যায় হতে।
যে পাকিস্তানকে আমরা সাম্প্রদায়িক শক্তির ব্রীডিং গ্রাউণ্ড হিসাবে জানি বাস্তবতা হচ্ছে সে পাকিস্তানে কোনদিন কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় আসেনি। আসার সম্ভাবনাও নেই।

নতুন করে ভারত ও ভারতীয়দের চেনার সময় এসেছে। ওরা গো-মূত্র সেবক একদল উগ্র ধর্মীয় উন্মাদ। যে পশ্চিমবঙ্গে যুগ যুগ ধরে কম্যুনিষ্টরা শাসন করে গেছে, সে বঙ্গে এখন বিজেপি, বাজরাং আর লাল নীল গেরুয়া পোশাকধারী একদল গো-মূত্র সেবকের অভয়ারণ্য।
আবার এই গো-মূত্র সেবকদেরই চাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ!
লেটস্‌ ফাক দেম টু দ্যা এন্ড!

একজন মফিজ এর সমসাময়িক সাক্ষাৎকার-পর্ব ০২

সম্মানীত দর্শক, বিরতীর পর আবারো ফিরে এলাম আপনাদের প্রিয় অনুষ্ঠান “একজন মফিজ এর সমসাময়িক সাক্ষাৎকার” এ। আমরা কথা বলছিলাম সম্মানীত অতিথি মফিজ সাহেবের সাথে।

-আপনার বয়স কত?
-আরে ছাগলে কয় কি! তোর বয়স আর আমার বয়সতো প্রায় সমান।
-এইই কাট কাট….!!! কি হলো এটা? ক্যামেরা লাইট সব কিছু অন আর তুই কি না … কেমন সব জঘন্য ভাষায় কথা বলে যাচ্ছিস!
-অ এই কথা! সরি দোস্ত ভুলে গেছিলাম। .. নে এবার শুরু কর।
আবারো মেকাপম্যানকে তার মেকাপটা দেখে নিলেন। লাইট ক্যামেরা সবগুলো সার্ভিস আবারো কনফার্ম হল। এরপর এক দুই তিন স্টার্ট।

-প্রিয় দর্শক আপনাদের আর্শীবাদ দোয়ায় আমরা আবারো বিরতির পর ফিরে এলাম “একজন মফিজ এর সমসাময়িক সাক্ষাৎকার” অনুষ্ঠান নিয়ে। আজও যথারীতি প্রশ্ন চলবে এ ছাড়াও আমার প্রশ্নোত্তর ফাকে ফাকে আজ থাকছে দর্শকদের জন্য সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ। দর্শকদের প্রশ্ন করতে ডায়াল করুন-00000000420।

তাহলে শুরু করছি- আজকের পর্ব।
-কেমন আছেন আপনি?
-ভাল আছি।
-আমাদের আজকের এ পর্বটি তা গত পর্বের শেষের অংশ থেকে শুরু করব নাকি নতুন কিছু প্রশ্ন দিয়ে করব ?

-না না, যা গেছে তা যেতে দেয়াই ভাল অনর্থক মায়া কান্না করে লাভ কি! ঘুমানো লোকদের জাগানো যায় কিন্তু ঘুমের ভান ধরে ঘুমিয়ে থাকা বিবেককে জাগানো যায় না। এই যে আমরা এক সময় ওয়াজ মাহফিল হলে কত দূর দূরান্তেই না চলে যেতাম। ও’মুক হুজুর আসবে, ভাল ওয়াজ নসিহত হবে, মন ভাল হবে, আত্মা শুদ্ধিতার সুযোগ পাবে ইত্যাদি মনে এক ধরনের পবিত্রতার চিন্তা আসত।

সে সময় এতো ঘন ঘন ওয়াজ মাহফিল হতো না, এখন যেমন হয় বিশেষ করে শীতলকাল এলেই দেশে ওয়াজ মাহফিলের হিড়িক পড়ে যায়। দেশের প্রায় প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় মসজিদে মসজিদে এখন বলা যায় ওয়াজ মাহফিল নামক ধান্দার উৎসব চলে। আপনি হয়তো বলতে পারেন- এসবতো পূণ্যের কাজ তাহলে এ কাজটিকে আমি ধান্দার উৎসব বলছি কেন?
প্রথমতঃ আমি বলবো আশির দশক কিংবা তার আগ হতে নব্বই দশকে ওয়াজ মাহফিল হতো পুরো এক গ্রাম, বেশ কয়েকটি মসজিদ মিলিত হয়ে, বিশাল একটি মাঠে যেখানে ওয়াজ শুনতে ধর্মপ্রাণ মুসলমান কিশোর যুবক বৃদ্ধরা কনকনে শীতের হিমায়িত ঠান্ডায় গায়ে চাদর কিংবা মোটা কাপড় পড়ে, পায়ে হেটে জিকিরের সহিত দলে দলে গিয়ে পাটখরির/চট বা ছালার চাদরে ছাউনি বেষ্টিত বিশাল ওয়াজের ময়দানটি নিমিষেই লোকে লোকারণ্য হত। আরো অসংখ্য ভক্তপ্রাণ মুসলিম শীতের হিম সহ্য করে তাঁবুর বাহিরে দাঁড়িয়েই ওয়াজ শুনতেন। আর আশে পাশের বাড়ীগুলোতে নারী মুসলিমদের ভিড়তো বলাই বাহুল্য।

কি বলেন আপনার অভিজ্ঞতায় এ সব ঠিক কি না?
-হ্যা, আমারো এমন অসংখ্য স্মৃতি আছে। আমিও মাথায় টুপি আর পায়জামা পাঞ্জাবী পড়ে বাবার হাতটি ধরে চলে যেতাম কয়েক মাইল দূরে ওয়াজ শুনতে। সত্যিই সে সব স্মৃতিগুলো বড় মধুর ছিলো।
আবারো মফিজ বললেন।
-আর এখনকার সময়ের ওয়াজ মাহফিলের অবস্থা দেখলে আমরা কি দেখতে পাই! পাড়ায়-মহল্লায় ওয়াজের ব্যাবস্থা। পাবলিক শুনতে (ভিন্ন ধর্মের) না চাইলেও একেবারে কানের কাছে মাইক এনে দিবে। যদিও ওয়াজের প্যান্ডেল কয়েক মাইল দূরে তবুও তারা এতোটা দূরে মাইক লাগিয়ে শব্দ দূষণের কারনটা কি আমি ঠিক বুঝি না! এ ছাড়াও যদি ঐসব ওয়াজ মাহফিলের মুল প্যান্ডেলের ভেতরে অবস্থানরত ওয়াজ শুনার মুসল্লির সংখ্যা যদি আপনি দেখেন তবে দেখতে পাবেন প্রায় খালি ময়দান। তাহলে এতো দূর মাইক লাগিয়ে ওয়াজ করার ফজিলত কি? তারা কি মানে না যে,একটি দেশে অন্যান্য ধর্মের লোকদের নিশ্চিন্তে বসবাস করার নিশ্চয়তার কথা হাদিসেও আছে? এ ছাড়াও ছেলে মেয়েদের পড়া লেখা সহ এ সব শব্দ দূষণ হতে মুমূর্ষ রোগীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। তাদের কি এই কমনসসেনসটুকুও কি নেই যে, এ রকম শব্দ দূষনে পক্ষান্তরে তারা মানুষের বিরক্তের কারন হচ্ছেন। সে জন্যই হয়তো হাদিসে ইসলামের প্রথম ও শেষ নবী বলে গিয়েছেন-মসজিদ যত পাকা হবে মুসল্লী তত কমবে বা কাচা রবে অর্থাৎ কোন কিছুতেই অতিরঞ্জিত কিছু করতে নেই, তাতে হিতের বিপরীত হয়।

মফিজ সাহেবের জল তৃষ্ণা পেল। তিনি সামনে রাখা টি টেবিল হতে এক গ্লাস জল গলার্ধকরন করছেন।

এই ফাকে এবার উপস্থাপক বললেন…
-যতটুকু জানি আজ কালকার অনেক ওয়াজ মাহফিলে বক্তা হুজুররা নাকি হেলিকপ্টার করে ওয়াজ করতে আসেন…।
গ্লাসের জলটুকু মফিজ পুরোটা গলায় ঢালার পূর্বেই উপস্থাপকের এমন কথা শুনে মফিজ হাসতে গিয়ে জল অনেকটা তার নাকে মুখে উঠে গেল। অলরেডি পোষাকে পড়া জল মুছতে মুছতে বলতে লাগলেন।
-শুধু কি তাই! ভাল বক্তা এতই কম যে তাদের একটি ওয়াজ মাহফিলের জন্য দাওয়াত দিতে হলে অগ্রীম অসহনীয় টাকাতো দেওয়াই লাগে আবার সিরিয়ালেও থাকতে হয়। অথচ পবিত্র কোরান ও হাদিসে স্পষ্ট লেখা আছে-ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা করা হারাম। মুলতঃ এই কারনে হয়তো মানুষের মনে আ্ল্লাহর হেদায়েত ঢুকে না আর মানুষও ধর্মের পথে তেমন একটা চলতে চায় না–নয়তো স্বাধীনের পর হতে এ যাবৎকাল যত ওয়াজ নসিহত হয়েছে তাতে বাংলার প্রতিটি ঘরে প্রতিটি লোকের মাথায় টুপি থাকত। আরেকটি বিষয় হল আপনার সূত্র ধরেই বলছি- এই যে ওয়াজ মাহফিলের ব্যায় তা পূরণ করবে কি ভাবে ? পূরণ করতে তারা ভাল দুএক জন কালেকসন বক্তা আনেন যারা মাহফিলের একটি সময়ে টাকা কালেকসন করেই মাহফিল শেষ করেন তাহলে বান্দাদের মনে হেদায়েত আসবে কোথা হতে? যেখানে টাকার গন্ধ কয় সেখানে শয়তানেরও বসবাস রয়।

আগের দিনের ওয়াজ মাহফিল আর এখনকার দিনের ওয়াজ মাহফিল এর মধ্যে রাত দিন পার্থক্য। ইসলাম প্রচারে এই যদি হয় চিত্র! তাহলে ইসলাম প্রচারের চেয়ে অপপ্রচারটাই বেশী হবে। পক্ষান্তরে আমাদের প্রিয় ধর্মটিই ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। মনে রাখতে হবে ধর্ম প্রচারে,কোন জোর চলবে না, অন্য ধর্মকে কটুক্তি করা যাবে না, মানুষকে মানুষ হিসাবে ভাবতে হবে,যেন অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন, তাহলেই কেবল আপনার ধর্মের পরিধি বাড়বে-আর এসব আমার কথা নয় সব হাদিস কোরানের কথা। কিন্তু আমাদের দেশে দেখি এসব চিত্রের উল্টো রূপ।
আবারো উপস্থাপকের প্রশ্ন
-কিন্তু আমাদের দেশে যেখানে ৯০% মুসলিম সেখানে মুসলিম কোন দলই দেশের জাতীয় ক্ষমতা আসতে পারে না কেন?
-ঐতো এতক্ষণ কি বললাম! আরো কিছু কারন আছে যেমন ধরুন-ক্ষমতা ভাগা ভাগির বিষয়টি। এদেশে বৃহৎ ধর্ম একটি আর লক্ষ্য করে দেখুন দেশে ইসলাম ধর্মীয় দল কয়টি ? কিন্তু কেন ? এই সব ইসলামী দল গুলো কি একত্রিত হয়ে একটি ইসলামী দল গঠন করতে পারেন না ? পারেন কিন্তু তা তারা কখনোই করবেন না! তাহলে দলের মাথা যে কমে যাবে। ক্ষমতা যষ প্রতিপত্তিতে ভাটা পড়বে.. এখানে লোভ কাজ করে যার অবস্থান ইসলামের বিপরীতমুখী। আরেকটি বিষয়ে স্পষ্ট বলব ধর্ম নিয়ে যত চাপাচাপি করবেন ততই মানুষের অমঙ্গল বয়ে আসবে।
এই তো সেই দিন শান্তিপ্রিয় দেশ নিউজিল্যান্ডের মসজিদে প্রকাশ্যে ঘটে গেল ইসলাম ধর্ম বিদ্বেষী হত্যাযজ্ঞ। এর পর শ্রীলংকায় ঘটে গেল গীর্জা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সিরিজ বোমা হামলা যার মৃত্যু সংখ্যা প্রায় ৩৫৯ পরে তা সংশোধিত হয়ে ২৫৩ জন। এখন লক্ষ্য করে দেখুন দুটো হামলাতে ধর্মের ছোঁয়া পাওয়া যায় তবে কোন ধর্মেই কিন্তু এমন হত্যাযজ্ঞের অনুমতি নেই।

ধর্মীয় বিদ্বেষী এ দুটো হামলাতে বাংলাদেশের বেশ কয়জন লোক নিহত হয়েছেন। সব চেয়ে হৃদয় বিদারক হল মাননীয় সাংসদ শেখ সেলিমের নাতি কিশোর জায়ান এর মৃত্যু। কলি ফুটতে না ফুটতেই ঝড়ে গেল।

এই যে এতো সহিংসতা এতো হত্যা এ সব তারা কোন ধর্মীয় আদর্শে করেন! তারা মানুষকে মেরে আর কোন ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়! অথচ ধর্মের সকল কিতাবেই স্পষ্ট লেখা আছে “জীব হত্যা মহা পাপ”।

পৃথিবী হতে সকল ধর্মীয় বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর এখনি সময়…. বুঝাতে হবে পৃথিবীর বিপদগামী মানুষকে, একটাই পৃথিবী তার ধ্বংস হতে দূরে থাকার কারনগুলোর একটি হল ধর্মান্ধতা-তাই “যার যার ধর্ম ও সকল প্রাণীদের রক্ষার্থে-ধর্ম হউক যথা তথা-মানুষ হওয়াই বড় কথা”।

এর মধ্যে সরাসরি দর্শকদের প্রশ্ন করার টেলিফোন সেটে ফোন আসে। উপস্থাপক ফোনটি রিসিভ করতে ব্যস্ত হলেন।
-একজন দর্শক আমাদেরকে ফোন করেছেন কথা বলবেন। আমরা তার ফোনটি রিসিভ করছি-হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন? কোথা হতে বলছেন? আপনার পরিচয় দিয়ে প্রশ্ন রাখুন। তবে টিভির ভলিউমটি কমিয়ে নিবেন।
-জি আসসালামু আলাইকুম আমি ওমুক তমুক জায়গা থেকে বলছি.. আমি মফিজ সাহেবের সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছি।
উপস্থাপক অনুমতি দিলেন।
-জ্বী কথা বলুন।
-আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন ভাইয়া?
-জি আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি, আপনিও ভাল থাকুন। বলুন কি জানতে চান?
-আচ্ছা আপনিতো একজন মুলতঃ চিত্রশিল্পী এছাড়াও আপনি এ যাবৎকাল বহু বই লিখেছে যেখানে গল্প কবিতা প্রচ্ছদ সবিই আপনি করেছেন। এ সব প্রকাশিত বইগুলোর মাঝে সমসাময়িক প্রকাশিত একটি বইয়ে দেশের আইন কানুন আর বিচারিক অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ ক্ষোভ কি কেবল এ সরকারের বেলায় নাকি দেশ স্বাধীনের এ যাবৎকাল আগত সকল সরকারের উপরই বর্তায়? আর এই যে দেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনার বিচারহীনতা সে সম্পর্কে কি কিছু বলবেন?

-ধন্যবাদ আপনাকে, খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন করেছেন। আমি চেষ্টা করব আমার অভিজ্ঞতার আলোকে খুব সংক্ষিপ্ত ভাবে আলোচনা করতে। তবে….রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির ষষ্ঠ বার্ষিকী পালন করা হচ্ছে… শুধু এই টুকুই এখন মনে রেখে ভাবুন। আর…??

এর মধ্যে আমন্ত্রিত অতিথি মফিজ এর মাইক এর শব্দ বন্ধ,ক্যামেরাও ক্যামেরাম্যান ঘুরিয়ে নিয়েছেন উপস্থাপক আবুল এর দিকে।
-জ্বী দর্শক, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য। আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তরে আসবো তবে আরো একটি বিরতির পর। সেই পর্যন্ত সাথেই থাকুন।

ক্যামেরা লাইট সব বন্ধ করে আবুল তার লোকদের এখানেই কিছুক্ষণ অবস্থান করার কথা বলে বের হবেন বাহিরে মনস্থির করে মফিজের কাছে গেলেন।
-দোস্ত! মাথাটা ঝিম ঝিম করছে, বাহির থেকে একটা বিড়ি খাইয়া আসি।
-এই শুন গু’ খাবি খা-আমার কোন সমস্যা নাই তয় সিগারেটে প্যাকেটে যে ছবি দেয়া থাকে “ধূমপান বিষ পান” সেই ছবিটা ভাল করে দেখে নিজের মনকে প্রশ্ন করিস ঐসব গু’খাওয়া কি ঠিক নাকি বে-ঠিক!
-ঠিক আছে তা দেখা যাবেনে, তুইও চলনা?
-ঠিক আছে… চল।

আবারো আসছি…..

ইতিবাচক হও আলোকিত হও

Be positive, be enlightned.

কক্ষনো কোনো বাঙালির সাথে কথা বলার সময় আমি ইংরেজী বলিনা। অপরপক্ষ কথার মাঝে যদি ছটা শব্দের মধ্যে তিনটে ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেন তাহলে যথোচিত সৌজন্য বজায় রেখেই বাংলায় তার উত্তর দিই। আর অপরপক্ষ অপরিচিত হলে তাঁকে পরিষ্কার বলি, আমি একজন অশিক্ষিত ঘেসুড়ে, আদৌ ইংরেজী জানিনা বা বুঝিনা। কিন্তু আজ শুরু করলাম ইংরেজী দিয়েই, কারন মনে হলো আমি যা বলতে চাই তার সঠিক প্রতিশব্দ বাংলায় খুঁজে পাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই।

সঠিকভাবে বলতে গেলে আমার কি যোগ্যতা যে আছে তাই অনেক ভেবেও বার করতে পারিনি। শুধু হাসতে পারি আর অকাতরে বিলিয়ে দিতে পারি ভালোবাসা। এমনকি আমাকে বিদ্রুপ করলেও। যাই হোক আমার বায়োডেটা দিতে এখানে বসিনি। কিছু ভাবনা তাড়া করে প্রতিনিয়ত বাস্তবের মাটিতে পা রাখলেই, সেগুলোই ভাগ করে নিতে এলাম।

‘কেমন আছেন?’ – এই প্রশ্ন করলেই জবাব ত্বড়িৎগতিতে ছুটে আসে – ‘নাহ, একেবারেই ভালো নেই’। প্রত্যেকেই মনে করেন তাঁর মতো সমস্যা আর কারো নেই। প্রত্যেকেই মনে করেন তিনিই সবচেয়ে বেশি কর্মগত কিম্বা সাংসারিক চাপে আছেন। তাঁরই আর্থিক, সামাজিক, মানসিক অবস্থান বিপন্ন। অনেক সময় সমস্যায় আক্রান্ত হবার আগেই অনাগত সমস্যার ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েন। আসলে এই পুরো ব্যাপারটার জন্যেই যে দেশ কাল জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বর্তমান আর্থ-সামাজিক কাঠামোই দায়ী, এতোটা তলিয়ে দেখেন না কেউ। যারা মুখে বলেন, তাঁরাও আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস করেন না। তাই, সমস্যার বেড়াজালে বন্দী থেকেই কাটিয়ে দেন সারাজীবন।

একটা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, মাথা ঠান্ডা রেখে মোকাবিলা করা, আর সারাদিন শুধু সমস্যার কথাই না ভেবে চোখ মেলে পরিপার্শ্ব কে দেখা, উপভোগ করা। আবার যথাসময়ে নিজের কাজটা সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করা। এটাই এই রোগের দাওয়াই।

অনেকে রোগের কথা বলতে খুব ভালোবাসেন। সর্বদা পকেটে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে ঘোরেন। তাঁরা প্রত্যেকেই নাকি সবসময় সেরা ডাক্তার কে দেখান আর সেইসব উৎকৃষ্ট চিকিৎসকেরা সেই মহামূল্যবান প্রেসক্রিপশনে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ওষুধ তাঁদের লেখেন। আমার মনে হয় এও এক ধরনের স্টেটাস সিম্বল বলে তাঁরা মনে করেন। কিন্তু সারাদিন রোগের কথা বলতে বলতে যে তাঁরা নিজেরাই মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছেন, তা খেয়াল করেন না।

হামেশাই দেখি প্রেম নিয়ে সাঙ্ঘাতিক হাহুতাশ। সত্যি কথা বলতে কি প্রেম ব্যাপারটা আমার বেশ পছন্দসই। কেউ একটু ফিক করে হাসলেই আমি তার প্রেমে পড়ে যাই। কিন্তু তাই বলে সবসময়ই প্রেমকে ধর ধর – গেলো গেলো আর তারপরে হাপুস কান্না, নাহ এতো ব্যর্থ প্রেমিক বা প্রেমিকা সেজে আলটিমেট রেজাল্ট জিরো। আসল তো কিছু সৃষ্টির প্রত্যাশা। সেই সৃষ্টি যে কোনো মাধ্যমেই হতে পারে। চোখ খুলে প্রতিমুহূর্তে চারপাশকে দেখলেই অনন্ত উপাদান খলবল করে সাঁতরে বেড়াচ্ছে। সেগুলো মনের ক্যামেরায় তুলে পালিশ করে ফেলে দিলেই ঝকঝক করে মাতিয়ে দেবে, এটাই আমরা ভাবিনা।

আচ্ছা! এই এতো এতো কাঁড়ি কাঁড়ি রাজনৈতিক দল আর সেগুলোর নেতাদের মধ্যে মোদির বিরাট সাফল্যের কারন কি? অনেকে হাঁ হাঁ করে বলে উঠবেন কোনো একটা নির্দিষ্ট কারন নেই। তারপরেই সাড়ে তিনশো পাতার বিশ্লেষণ হাজির করবেন। কিন্তু একজন আম ভোটার, যে কিনা সরবৈব ভুক্তভোগী আর বিপর্যস্ত, যার কাছে ২০০২ এর গুজরাত কিম্বা গোধরা নারণিয়ার মতই কোনো রূপকথার দেশ যার নামই সে শোনেনি (কারন এইসব ঘটনা আমাদের অপদার্থ রাজনীতিকদের জন্যে কিছু শহুরে পড়াশোনা জানা মানুষের বাইরে পৌঁছায়নি), সে ওই হাজার চিৎকৃত কণ্ঠস্বরের মধ্যে মোদির গলাকেই পজিটিভ মনে করল। সারা ভারত জুড়েই এটা হয়েছে। আর অতীতেও সব সাফল্যের প্রাথমিক কারন কিন্তু ইতিবাচকতা, এটা আমরা ভুলে যাই।

সর্বদা নেতিবাচক হলে তা দু একদিন চর্চার বিষয় হয়, তারপর তা একঘেয়ে হয়ে যায়। সমস্যা থাকবেই। কিন্তু তার সমাধানও আছে। মাঝরাতে অসম্পূর্ণ রান্নার মাঝে যদি গৃহিণী দেখেন জ্বালানী শেষ, তাহলে তিনি প্রথমেই ছোটেন কর্তার কাছে। এবার কর্তা যদি দাঁত মুখ ছরকুটে চুল ছিঁড়তে বসেন কিম্বা হাহুতাশ, গালমন্দ করতে থাকেন, তাতে খাবার ব্যবস্থা হবে কি? না কি তারচেয়ে ঠান্ডা মাথায় ভেবে নিকটতম প্রতিবেশীর অতিরিক্ত জ্বালানী ধার নিয়ে আপাত কাজ চালানোই ভালো।

আসল কথা সদর্থক হতেই হবে। আর যেকোনো ঘটনাকে বাঁকা দৃষ্টিতে না দেখে সোজা তার গভীরে ঢুকতে হবে। তারপরে ব্যর্থ হলেও সান্ত্বনা তো থাকবে, যে আমি চেষ্টা করেছিলাম। দুই মহা মহা মানুষের দুটো কথা বলেই শেষ করি। প্রথম বিদ্যাসাগর – ‘কাউকে অবিশ্বাস করে ঠকার চেয়ে বিশ্বাস করে ঠকা ভালো’। দ্বিতীয় সেই বর্তমান বহুল চর্চিত মোদি – ‘একটা গ্লাসে কেউ বলেন অর্ধেক জল, কেউ বলেন অর্ধেক খালি। আমি বলি পুরোটাই ভর্তি। অর্ধেক জল আর অর্ধেক হাওয়ায়’।

___________
সৌমিত্র চক্রবর্তী।

একজন মফিজ এর সমসাময়িক সাক্ষাৎকার-০১ পর্ব

হায় মফিজ, কেমন আছিস? কি লিখছিস? গল্প না কবিতা?
-নারে দোস্ত! গল্পেরাতো সেই কবেই মিশে গেছে সাম্যহীনতার যাঁতার তলে আর কবিতা সেতো আকাশচারী কেবলি নীঁলাকাশে বাহারী রং খুঁজে বেড়ায়।
-কিছু একটাতো এখন করিস, তাই না!
-হ’তুলিটা হাতে নিয়ে ব্লাক জমিনে ব্লাক রঙে কেবলি আঁকছি! বার বার আঁচড়গুলো বড় অচেনা মনে হয়।
-তোর সব কথায় খালি হতাশা! এতো হতাশায় থাকিস কেন তুই?
-কি করব আমার জন্মটাই যে হয়েছিলো ১৯৭১ এ এক দূর্বিষহময় হতাশার মাঝে, যুদ্ধের ময়দানে।
-তবুওতো মাঝে মাঝে এ সব মানুষের জীবনেও রসকষ বলে সামান্য কিছু হলেও থাকে। তোর তো কোন কালেই দেখলাম না।
-জীবনের মানি বুঝিস! অবশ্য তোর না বুঝার কথা। কারন তোর জন্মতো সোনার চামচ মুখে নিয়া। তুই যদি আমার জায়গায় থাকতি তবে বুঝতে পারতি। যাকগে এ সব কথা, এখন বল, আমার এখানে এতো বছর পর কেন এলি?
-এসেছিলাম আমাদের টিভি চ্যানেলের জন্য একটি সাক্ষাৎকার ধারণ করতে।
-আমার সাক্ষাৎকার!
-হ, তুইতো বা তোরাতো এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ পপুলার বলা যায় সেলিব্রেটি। সাম্প্রতিক সময়ে যে সব টপ নিউজগুলো ভাইরাল হচ্ছে তাতো তোর তোদের মতন ব্লগার, ইউটিউবার, ফেবুকার- টুইটারের বদলতেই হচ্ছে।
-তা যা কইছস আবাইল্লা (আবুল কাসেম আবুল)। সব ফালতু কথা! যা হচ্ছে তা সব পাপের ভারে হচ্ছে, বুঝলি। এই যে…..
-দাঁড়া দাঁড়া, ক্যামেরাটা একটু অন করে নিই, আর হ্যা-ক্যামেরা চালু হলে কিন্তু তুই আর আমাকে কিংবা আমি তোকে-তুই তোকারি শব্দ করে উচ্চারণ করতে পারব না, ঠিক আছে?।
-আইচ্ছা!
-এই যে পুরুষ শাষিত ঘূণে ধরা সমাজে নারীদের প্রতি একের পর এক ধর্ষণ, অত্যাচার-এ সম্পর্কে আপনার মতামত কি? সর্বশেষ রাফি হত্যাকাণ্ডের আলোকে যদি কিছু বলতেন।
-দিলেন’ তো কলিজায় আঘাত কইরা। এখন এ সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে, হয় আমি কূপ খাবো নতুবা জেল খাটবো।
-মানে! একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?
-রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি কিন্তু এক দিনে ঘটেনি অথবা শুধু যে তার সাথেই হয়েছে তা কিন্তু নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছিল ঠিকই কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ কখনো চলতে পারেনি এখনো পারছে না। পাকিস্থানের কিছু জারজকে দোসরদের এ দেশে রাজনীতি করার সুযোগ দেয় এ দেশের কিছু রাজনৈতিক কুলাঙ্গার নেতা। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছে একশ ভাগ পাকিপ্রেমিরা। তাদের প্লান পরিকল্পিত। লাল সালুর মতন কিছু কুলাঙ্গার নিজ স্বার্থলোভী গজিয়ে উঠার চেষ্টা করলেও অবশেষে সফল হতে পারেনি তাই তাদের আরেকটি প্লান হল দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদ্রাসা তৈরী করে সহজ সরল অভিভাবক লোকগুলোকে আল্লাহর উপর ভয় দেখিয়ে তাদের সন্তানদের বিনা বেতন ও ফ্রি খাওন দাওনের কথা বলে মাদ্রাসায় ভর্তি করায় অথচ খোঁজ নিয়ে দেখেন মাদ্রাসায় ভর্তিকৃত ছাত্র ছাত্রীর অভিভাবকদের নিকট হতে মাসিক এক প্রকার ভাল টাকাই তারা আদায় করে নিচ্ছে কিন্তু মাদ্রাসা বা এতিম খানা নামক লক্ষ কোটি অনুদানের টাকা যায় কোথায়..?? অবশ্য দেশের সব মাদ্রাসা যে একই রকম চিত্র তা আমি বলব না, দেশে কিছু মাদ্রাসাতো আছে যেখান হতে প্রকৃত ঈমানদার হয়ে বের হয়ে আসছেন, সমাজে ভাল ভাল কাজের সাথে যুক্ত হচ্ছেন আবার কিছু হচ্ছেন আত্মঘাতী ইসলামের নামে জিহাদকারী জঙ্গি সন্ত্রাসী। যে ধর্মে স্পষ্ট লেখা আছে মানুষ হত্যা পাপ তাই তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে করে যাচ্ছে।

এ সম্পর্কে আমার এক দিনের এক ঘটনা বলি যদি অনুমতি দেন? আবুল সাহেব মাথা নেড়ে অনুমতি দিলেন। মফিজ বললেন- এক দিন বেশ কয়েক জন হুজুর টাইপের লোক তাদের মাদ্রাসার দানের টাকা তুলতে আমার অফিসে এলেন। তখন আপাতত বস না থাকায় আমি তাদের সাথে কিছু এ সম্পর্কিত বিষয়ে কিছু আলোচনা শুরু করলাম। এক জনকে বললাম-আচ্ছা হুজুর যতটুকু জানি এ মাদ্রাসাটা আপনিই প্রতিষ্ঠা করেছেন? তিনি খুব গর্বের সহিত বললেন- হ্যাঁ আপনাদের দয়ায়, ওমুক ওমুক জেলায়ও আরো তিনটা মাদ্রাসা আমিই প্রতিষ্ঠিত করেছি।

-ভাল কথা! খুব ভাল কথা- তা হুজুর বলবেন কি আপনার জেলাটা কোথায়? তিনি বললেন ওমুক জেলায়। আমি বললাম- আপনি আপনার জেলা রেখে এ জেলা সহ আপনি যা বললেন অন্যান্য জেলায়ও এমন মাদ্রাসা তৈরী করেছেন। আমার কথা হল আপনার নিজ এলাকায় মাদ্রাসা করার সাথে জড়িত না থেকে এখানে এসে তা করার চিন্তাটা কেন করলেন? তিনি বললেন দেখুন মুসলমান হিসাবে এটা আমার দায়িত্ব। আমি বললাম- তাহলে এখানে আরো যারা স্থানীয়রা আছেন তারা কি তাহলে অমুসলিম? তিনি অনেকটা রেগে গিয়ে বললেন, আরে আপনি তো দেখছি মসজিদ মাদ্রার বিপক্ষে কথা বলছেন! এ সব হওয়ার সুবাদে মৃত্যু কালে আপনার জানাযা তো পড়াবে পারবে, তাই না?! আমি বললাম- শুধু মাত্র আমার জানাযা পড়ার জন্য আপনাদের এ সব অন্যায় আমাকে মেনে নিতে হবে? তিনি বললেন- এ সব আল্লাহওয়াস্তে কাজকে আপনি এ ভাবে মনে করছেন কেন? আমি বললাম-মনে করতাম না যদি না আপনাদের এ অর্থ কালেকশন পুরোটা না হউক অন্তত সেভেনটি/এইটটি পারসেন্ট ঐ সব আল্লাহ ভক্ত এতিমদের মাঝে ব্যাবহার করা হত। ঐ সব এতিমদের নামে টাকা সংগ্রহ করতে আপনাদের মতন লেবাসধারী মোল্লারা জর্দা দিয়া পান চিবাইতে চিবাইতে নেশার ঘোরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এটা কি ঠিক? লোকটি ইতস্তত হয়ে তার মুখে লেগে থাকা পানের পিক রুমালে মুছলেন এবং মনে হল লোকটি খুব লজ্জায় পড়ে গিয়ে বললেন- কি যে কননা ভাই আপনি! আমার এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিতে ঠিক যেন কিছুক্ষণ আমতা আমতা নামতা পড়তে লাগলেন। বুঝে নিলাম এ সব হল তাদের লাল সালুর আধুনিক রূপ। এরই মধ্যে আমার বস এসে যাওয়াতে আমি চুপ হয়ে গেলাম। বস আমাকে তাদের বিশ হাজার টাকার একটি চেক দিয়ে দিতে অর্ডার করলেন।

আবুলের চ্যানেলে এ সব বিষয়ে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে রাগে আমার মাথা গরম হয়ে গেল। যদিও আবুল বার বার প্রসঙ্গ এড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছিল তবুও যেন আমি আমার আবেগকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না-কথা যখন উঠেছে তখন কথা শেষ না করতে পারলে মন আমার শান্ত হয় না আর আমার কথা বলার মাঝে শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্য কারো কথা বলার সুযোগ আমি দেই না। এটা বলতে পারেন আমর বদ অভ্যাসের একটা।

আমি অনবরত বলে যাচ্ছি।
তা যাই হোক এ ভাবেই কিছু সহজ সরল লোকদের ছেলে মেয়েরা বন্দি হচ্ছেন বাস্তবতার সাথে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কয়দিন আগেও যেখান থেকে পাশ করলে অফিসার পদতো পরের কথা সামান্য পিয়নের চাকুরীও পেত না আর দেশ ও দশের স্বার্থে মহাজ্ঞানী বা আবিষ্কারক হওয়াতো কল্পনাতীত তাহলে সেখানে কি শিখাচ্ছেন? সেখানে যা শিখাচ্ছেন তা হল-কেবলি আল্লাহর ভয়, বেহেস্তের লোভ নরকের আগুন, নবী ও রাসূলগণের বাণী-যা সৎ পথে চলার মানব জীবনের জন্য বেশ জরুরী এবং কোরানে হাফেজ। মুলতঃ এ শিক্ষায় শিক্ষার্থীর বাস্তব জীবনের কি লাভ হয় তা কিন্তু একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়। সাধারণতঃ পূর্বে একজন মাদ্রাসার ছাত্র তার পড়া লেখার বিষয় ভিত্তিক অনুযায়ী বড় জোর কোন মসজিদে ইমামতি, কোন মাদ্রাসায় মাষ্টারী আর এখানে-সেখানে কেউ হেলিকপ্টারে, কেউ বা হেটে হেটে গিয়ে ওয়াজ নসিহত করতেন।

সাধারনতঃ আর কি কি শিক্ষা এ সব অনেক প্রতিষ্ঠানে হয় না বললেই চলে, -তা হল-যে মাটিতে তার জন্ম ও বসবাস সেই মাটি জন্মের ইতিহাস বলেন না তাদেরকে দেশপ্রেম শেখান না, লক্ষ জনতার রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকা ভাল করে তারা চিনেন না, জাতীয় সঙ্গীত গায় না এর মহত্বও কি তাও জানেন না, নিজ সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখকে ভ্রান্ত ধারণায় ইসলাম বিরোধী করে তুলেন, জীবনের প্রয়োজনে কারিগরি শিক্ষার ধার ধারে না, মহাকাশের গ্রহ নক্ষত্র বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আরহণ করা তাদের জন্য যেন মহা পাপ। তবে হ্যা তাদের এ শিক্ষায় তাদের অভিভাবকরা পাবেন পরকালে বেহেস্ত পাবার আশ্বাস আর মৃত্যুকালে তথা কথিত তার জানাজা পড়ার নিশ্চয়তা।

আমার হঠাৎ কেন যেন মনে হল আমি কথার লাইন ছেড়ে অন্য লাইনে চলে যাচ্ছি। যা বলছি বা বললে এ দেশে অনেকে আমাকে পাগল ভাববে! ভাববে আমি ইসলাম বিরোধী। আসলে কি তাই? যদি কেউ বা কোন গোষ্ঠি আমাদের শান্তি প্রিয় পবিত্র ইসলাম ধর্মটিকে কলংকিত করতে চায় তাকে নিয়ে ব্যাবসা করে ধান্দাবাজী আর কূপাকূপিতে ভাই ভাইকে হত্যা করতে চায় তাহলে সে সবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা কি ইসলাম বিরোধী? প্রতিটি ধর্মেই কিছু লোকতো আছেই যারা ধর্মীও গুরুদের কোন ধরনের সমালোচনা শুনতে নারাজ। তেমনি একটি সমসাময়িক উদাহরণ ফেনীর সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে। হত্যাকাণ্ডের মুল হোতা অধ্যক্ষ বলতেও লজ্জা লাগে, তিনিই সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাহ। তার নিকট প্রতিষ্ঠানের সকল ছাত্র-ছাত্রী সন্তান তুল্য হবার কথা অথচ তিনি কি করলেন তা আজ আমাদের নিকট স্পষ্ট। সেই অমানুষটার পক্ষেও মানুষ নামের স্বার্থ লোভী অ-মানুষগুলো রাস্তায় নামে। এই অমানুষটার মুক্তির পক্ষে এবং রাফিকে পুড়িয়ে মারার পিছনে সহজ সরল নারীরাও শামিল হন। এবার ভাবুক সিরাজের মত মোল্লা লেবাসধারী তথাকথিত আল্লাহ ভক্ত লোকগুলো সমাজের সহজ সরল মানুষগুলোর মগজ কতটা সুক্ষ্ণ ভাবে ধোলাই করেছে। এরা দেশের শত্রু ইসলামের কলঙ্ক দশের আতংক। আমি পাপী হুইন্না মুসলমান,আমার অপরাধ হয়তো ক্ষমার যোগ্য কিন্তু তারাতো আল্লাহ ভক্ত হাদিস কোরানের বিধি নিষেধগুলো তাদের মুখস্ত তারা এমন জগণ্য অপরাধ করে কি করে? তাও আবার পুড়িয়ে মারে।

তবে যাই হোক মেয়েটি এ ঘূণে ধরা পুরুষ শাষিত সমাজের নারীদের একটি বার্তা দিয়ে গেল তা হল-বঙ্গ নারী নিজেকে আর ভেবো না অবলা, গর্জে উঠো যার যার অবস্থান থেকে, তাতে যদি মৃত্যুও হয়, তুমি বেচে থাকবে অত্যাচারিত নিপীড়িত নারীদের জাগরিত হৃদয়ে।

ক্যামেরার লাইট হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেল। মফিজ অবাক হয়ে বললেন-কিরে দোস্ত আর ইন্টারভিউ নিবিনা? সাক্ষাৎকার ধারণকারী দোস্ত বলল- নারে দোস্ত ইন্টারভিউ বন্ধ করিনি, একটু বিরতিতে যাবো- তুই যে ভাবে থলের বিড়ার বের করে বলেই যাচ্ছিস! তাতে আমার মনে হল একটু বিরতি দিয়ে আসা ভাল।
– ঠিক আছে দোস্ত…. ঐ কইরে ময়নার বাপ-আমারে এক গ্লাস জল দে।

চলবে…

বিদ্যাসাগর বনাম ভোট/অরুণিমা মন্ডল দাস

বিদ্যাসাগর বনাম ভোট

কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে মিডিয়া থেকে বাইরে ভোট নিয়ে রণক্ষেত্র ব্যাপার চলছে—কেন চলছে? কি কারনে চলছে? সবাই জানেন?

ভোট” কি? কেন? কিভাবে?
আমরা কেন ভোট দিচ্ছি ? প্রার্থীকে জিতিয়ে কি পাচ্ছি? এবিপি আনন্দে “এক ঘন্টা” র সুমন বনাম বুদ্ধিজীবিদের দাঁত কষাকষি —স্পিকারের সামনে চেয়ার বেঞ্চি ছোঁড়াছোঁড়ি–?

কতকগুলি লজিক্যাল দিক ভেবে দেখুন—

১) ভোট দেওয়া আমাদের অধিকার ! ভোট দিচ্ছি আমাদের জনগনের সুবিধার জন্য / উন্নয়নের জন্য /উন্নয়ন হচ্ছে না বলা যাবে না কিন্তু কাদা ছোঁড়াছোঁড়া বন্ধ রেখে মোদি ও মমতা মিলেমিশে উন্নয়নটা হোক/আমার মনে হয় উন্নয়নটা আরো জোরালো হবে –তাই নয় কি?

“বিদ্যাসাগরের”মূর্তি ভাঙা খুবই লজ্জাজনক বললেও বা দুকলম ছি ছি ছিৎকার দেওয়া ভুল / এটা “আন্তর্জাতিক নীচ লজ্জা দিবস” পালন করা উচিত /হয়তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকলে গান কবিতা সম্মান সবকিছুই ত্যাগ করতেন/

এখনকার বুদ্ধিজীবিরা কি ত্যাগ করছেন বোঝা যাচ্ছে না! মূর্তি বানাচ্ছেন না কিভাবে জুড়বেন তাঁর চেষ্টায় আছেন— কিছুই বোঝা যাচ্ছে না /

বিদ্যাসাগর” র মূর্তি কে ভাঙলো কোন দল? সেটাই কি বড়? ভাঙা হল এর মতো নিদারুন ঘৃণার কাজ আর কি হতে পারে /

২) ভোট জনগন দিচ্ছে? ভুগছেও জনগন? কাদা বালি লোহা ছুঁড়ছে ও পাবলিক?

উপরের লোকেদের মানে নেতারা শুধু দল বদলাচ্ছেন মাত্র? চেয়ার অনেকটাই উপরে থাকে সেখানে আঁচড় লাগানোর ক্ষমতা কারোর নেই/

৩) বিদ্যাসাগর সারাজীবনটাই আমাদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন /অবিলম্বে যে ভেঙেছে তাঁর চরম শাস্তি বাঞ্ছনীয় / আপনি বিজেপি করুন বা তৃণমূল করুন বিদ্যাসাগর সবার আমার তোমার ভাই বোনেদের এই বাংলার —উনাকে নিয়ে রাজনীতি না করা ই ভালো /বাঙলা র রক্ত শরীরে বইলে বা তাঁর গন্ধ থাকলে বিদ্যাসাগর কে ভালোবাসেন নি এরকম বাঙালী থাকতে পারে না, হতে পারে না!

৪) মমতা -মোদি ইঁট পাটকেল মারামারি বন্ধ হোক! মিডিয়ার মশলা দিতে অনেক খবর ই আছে ! পাটকেল” দুটো মারলো ইঁট চারটে পড়ল জয় রাম বলে ইঁট ভাঙলো —সেগুলো একটু কম রিয়াকশানে রাখা মঙ্গল– হিংসাত্মক প্রচার আগুন জ্বালায় মাত্র /নেভায় না —–

৫) উন্নয়ন সবাই করুক মিলেমিশে—-চোর ও ভয়ে করুক আর চৌকিদার” ও দায়িত্বে করুক? একজন চৌকিদার ই হাঁড়ির খবর ভালো জানবে একটা স্মার্ট“চোরের” থেকেও?
৬) বিদ্যাসাগর র মূর্তি ঠিক করা হোক — অপ্রয়োজনীয় প্রচার বন্ধ হোক/ নেতারা “পাঁঠা” না খাসি খাচ্ছে না দেখানো ভালো / বৈশাখী র খাসি রান্না শোভনবাবু খাচ্ছেন না ফেলছেন —- সেগুলো ট্রাফিকে” এনে না ছড়ালেই মঙ্গল–!

৭) সর্বপরি রাজ্যে অনেক অনেক উন্নতির আইন পাশ হোক, অনেক যোজনা পাশ হোক, ধর্ষন রেপ খুন বন্ধ হোক, গ্রামে গ্রামে আরো বেশী উন্নয়ন কলকারখানা চাষজমি জলসেচ বিদ্যালয় হাসপাতাল গড়ে উঠুক।

রবি ঠাকুরের জন্মমাসে সবাই হাতে হাত রেখে ভোট দিতে যাই লালসুতো বেঁধে আগামী ভবিষ্যতের নেতা অভিবাদন জানাই চলুন/রাজনীতি” এটাই তৃনমূল বিজেপী কংগ্রেস সবাই মোরা “ভাই ভাই”

চলুন
সবাই মৈত্রীর গান গাই— এক পরিবারের তিন সদস্য –তৃণমূল,বিজেপি কংগ্রেস–? সবাই মোরা ভাই ভাই
এক ই দেশে র মাটিতে লালিত
এক ই রক্তে গড়া শরীর চালাই—”

৮) তীর বর্ষা লুকিয়ে কোলাকুলি করি / রাজীব গান্ধী ইন্দিরা গান্ধী” —ভারতের গর্ব— এদের নামে কলঙ্ক লেপে মোদীজি নিজেই পাঁকে পড়ে গেছেন–এখন উঠেছেন—তাও পাঁক ছোঁড়া বন্ধ হয় নি —???

একজন ভোটার হিসেবে সুন্দর সুস্থ সমাজ ই আমাদের মমতা দি র কাছে কাম্য /দোষারূপ নয়???

কৃষাণ বাঁচলেই দেশ বাঁচে

কতটুকু দুঃখ পেলে পুড়ে ফেলে
তার স্বপ্ন ফসল
কৃষাণ বাঁচলেই দেশ বাঁচে কৃষাণ
সে জাতির বল;

ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কৃষাণদের
মুখখানি কি করুণ
সরকার নয় পাশে দাঁড়িয়ে তবে
আজ কত তরুণ।

ফণী

ফণী তুমি যেন সাপের ফণা হয়ে এলে
কে জানে কাকে হারাবো তোমার ছোবলে;
কতই না প্রস্তুতি তবে বাঁচার, মানুষের
তুমি যে মারাত্মক এক আতন্ক সে ভয়ের।

সাপ যেমনটি ফণা তুলে আসে ধেয়ে
তুমিও তেমনটি যেন আসছো সাগর বেয়ে;
অস্থির উপকুল-বাসী ভারত বাংলাদেশ
যেই মাতাল তুফান, ভাবি এই বুঝি শেষ।

বৈশাখ এলেই কেন হও নিষ্ঠুর মাতাল
অথচ মানুষ বুনে স্বপ্ন গজাবে জীবনে ডাল;
ভয়ে গরিবেরা ছেড়েছে ছোট্র জীর্ণঘর
গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগীর মনেও কত ডর।

3rd May, 2019