বিভাগের আর্কাইভঃ সমকালীন

মে দিবস

মে দিবস

মে দিবস” —-সাধারনত এই দিবস”পালন /দিবস”নিয়ে আমার একটু আ্যলার্জি আছে। মেহনতি মানুষদের জন্য কোন দিবস” উদযাপনের দরকার বলে মনে করি না! সাধারন খেটে খাওয়া মানুষদের সারাজীবন র প্রতিটি দিন ই “মে দিবস”?

দিবস উদযাপন আমেরিকার লন্ডনের ইটালীর লোকেদের মানায় /ভারত গরিব দেশ তিনশো পঁয়ষট্টি দিন ই তাঁদের কাছে মে দিবস! পরিশ্রমের দিন/ একটা দিন বসে থাকলে পেটের ভাতে টান রুজি রোজগারের টান পড়ার সম্ভাবনা। ভারতে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা হয় ফিল্ম লাইনে! তাও কিন্তু আমরা গরিবীতে জর্জরিত!

“মে দিবস” উদযাপন ঠিক কিরকম বোধগম্য নয়! দিবস উদযাপনে সাজগোজ”কিসের জন্য সেটা বুঝতে পারি না/মানে দেখাতে হয় আমরা সেজে থাকি”– না খেয়ে থাকি” “আমরা সবাই রাজা ” শুধু পকেটে রাখি ব্যাঙভাজা”! এক দুজন ধনী বলে পুরো ভারতকে /পশ্চিমবঙ্গকে ধনী বলা যায় না?

মে দিবস” “মেয়ে দিবস” না হয়ে দাঁড়ায় ছুটির দিন/রাস্তা ঘাট জনশূণ্য/বিকেলে আড্ডা/মেয়দের টোন্টিং ইভটিজিং/

“মেয়ে দিবস” না হয়ে দাঁড়ায় / নুসরাত দাঁড়িয়েছেন/ ভোট/দিদি দাদাদের প্রচার/ তুমুল পদক্ষেপ/দোষারোপের মিডিয়া। কিছু পোতিবাদী” কনসেপ্ট উঠলেই“ তসলিমা নাসরিন” বলে যে গলা ফাটায় –এটা খুব ই বিরক্তিকর//—পৃথিবীতে কথা বলার জন্য তসলিমা ছাড়া আর কোন মহিলার মুখ” কি নেই? তুলনা” মিডিয়ার দোষারূপ রাস্তার বাম্পার হয়ে দাঁড়িয়েছে–সবাই শুনছেন আর একবার করে “নেচে আসছেন। অনেকের কৌশলটা ঠিক এরকম“ চল খবর চালা একটু নাচি—মশলা পাবি গরমে!”

জনগণ” নাচতে খুব ভালোবাসেন/ নাচা গানা আর নাচানো —খুব প্রিয়—চোখ” দিয়ে নাচান— মোটামুটি একটুখানি “মশলাদার চা পেলেই জমিয়ে রসালো আড্ডা–আখের রস কমলার রস যেখানে যত রস আছে নিঙড়ে খাই–খেতে ভালোবাসি–

মিডিয়া দেখাচ্ছেন —“ অমুক খাচ্ছে বেশী বল হচ্ছে ভয়েতে বাথরুম করার আগে ভোট দেবেন”

সেলিব্রিটিরা কতবার খাচ্ছেন? কতবার শুচ্ছেন ?কোথায় শুচ্ছেন? কেমন স্টাইলে শুচ্ছেন ?কি কি পারফিউম শোয়ার সময় লাগে ? শুতে গেলে কেমন ফিটনেস লাগে? শোয়ার পর কেমন ফিলিংস ?“আপনি বলতে পারবেন প্রেমেতে কেমন ফিলিংস আসছে?

১) ভার্জিনে কেমন ?
২) বিবাহিতদের সংগে কেমন অনুভূতি?
৩) ডিভোর্সিদের সংগে কেমন অনভূতি?
৪) ফ্যান দের কেমন সেবা দেন?

সেবা” দিতে কোন কোন সার্ট পরেন? কেমন কেমন আর্টে সেবা দেন?

টয়লেট কেমন? টয়লেটে ঠিক ঠিক কোন আর্টে বসেন?

দেখুন এইগুলো হচ্ছে মিডিয়ার টি আর পি! এগুলো বড় খবর !

মে দিবসে —কোন নেতা কি করছেন? বৌ র সংগে না রাখেয়ালের সংগে আছেন? শুয়ে আছেন না বসে আছেন? মেয়েদের সংগে প্রেম করছেন কিনা?

দিদি মানে মমতা দিদি কোথায় কেমন আছেন? জল খাচ্ছেন কিনা?

একটা প্রচার দশবার “রিয়াকশানে” দেখাচ্ছেন”

“আমি খাব না নানানানানানানানাননাধাধানানাননানাননানাননানানননানাননানাধাধাধধাধাধাধনান
“কেন দিদিদদিদিদদিদিিদদিদিদিদদিদিদদিদিিদদিদিদিদিদি”

“সর্পোপরি” মে দিবসের শুভেচ্ছা??

ডানকানা মাছ

ঘুমিয়ে যাও। হারিয়ে যাও স্বপ্নে। তোমার মাটিকাটা মজুরী রোজ ৩০০টাকা। স্বপ্নে ভাত খাও। চালের কেজি ৩২টাকা, ডালের ৮২, পামওয়েল৬০, ফিনফিনে লবন সস্তা ভীষণ। বিড়িটা জেগে জেগেই ফুঁকো।

তিন ছেলে ইশকুলে যায় না। রেল লাইনে মারবেল খেলে। মাল টানে। এটা সেটা টোকায়। আধটানা সিগারেটের ফিল্টারে টান দেয়। খুকখুক কাশে। তাদের এড়িয়ে রাজপুত্তুর আর বার্বি ডলের দল ইশকুলে যায়।

বউ অন্য ভাতারের সাথে ভেগেছে। নতুন ভাতার রিকশা চালায়, ছয়শো টাকা কামায়। মোটা চালের ভাত নরম তেলেপিয়া আর বেগুনের ঝোলে মাখায়। প্রতি গ্রাসে ফেলে আসা সন্তানদের কথা মনে পড়ে কি পড়ে না!

মাটিকাটা শ্রমিক, তুমি ঘুমিয়ে যাও। স্বপ্নে হারিয়ে যাও। ছেলেবেলার পুকুরে ডানকানা মাছ ধরো। এক দুপুরে সারাজীবনের জন্য ডানকানা মাছ হয়ে যাও। তারপর ভেসে ভেসে বালি খাও, মাটি খাও, শ্যাওলা খাও।

মন ভিখারী

মন ভিখারী

“মন ভিখারী” বলতে যারা মন থেকেই ভিখারী যেটা সাধারণত লজিক্যালি অনেক দিক থেকে হয়ে থাকে/ লজিক্যালি বিষয় গুলি বলছি একটু দেখে নেবেন—-

১) গরিব মন থেকে হওয়াটা একধরনের নেগেটিভ রোগ বলা যেতে পারে/কিপট্যামি মানুষকে সম্মান না দেওয়া আর ও নানারকম নোংরামো যাকে বলে ছোট মন / “আমার আছে আমি আমার টা দেখব কেন লোকের সুবিধা দেখতে যাব”?
স্বার্থপর” বলা যেতে ও পারে।

তাই ভিখারী হলেও মন বড় থাকা অত্যন্ত জরুরি।

২) অনেকরকম হৃদয়ঘটিত আঘাতের কারণে অনেককে ছোট মন” হতে বাধ্য হতে হয়/ সবকিছু উজাড় করে মানুষকে আপন করলে মানুষ তাঁর মূল্য দেয় না/“ যে কুকুর উদারপরায়ণ তাঁর কপালে দিনের শেষে মাংস জোটে না”
আমাদের সমাজে “সাকসেস থেকে পেটের ভাত” একপ্রকার কেড়ে ই খেতে হচ্ছে/কেউ কারোর মুখে তুলে দিতে বাধ্য নয়/

যুবক ছেলে মেয়েদের ব্রেক আপ ”জিনিসটা তাঁদের জীবনের “ সবুজ মন”কে বিষিয়ে দিচ্ছে ভালোবাসাটা এখন কতকগুলি “গিফট আর বাপের টাকা” র উপর নির্ভর করে চলছে/

ভালোবাসি” কথাটা নর্দমার নোংরা তে পরিনত হচ্ছে/ ভালোবাসা বলে কিছু নেই উদার বড় মনের মানুষ বলেও কিছু নেই“ দেওয়া নেওয়া সিস্টেম সবজায়গায় কাজ করেছে” –
“ তুমি আমাকে দিতে পারবে অনেককিছু তবেই ভালোবাসব” এইরকম একটা “চুক্তির মধ্যেই ভালোবাসা সীমাবদ্ধ /তারপর তো পণপ্রথা আছেই/

৩) মন বড় সহজ সরল মানুষদের বরাবরই সমাজে ঠকতে হচ্ছে?

কটা সম্পাদক আছেন লেখককপি পাঠান বলতে পারবেন? সব জায়গাতেই “বিজনেস মাইন্ড”কাজ করছে!
৪) তরুন প্রজন্ম র মন কখনো উদার হওয়া সম্ভব নয়/লেখিকাদের প্লাশ পয়েন্ট প্রচারের বড্ড “বেশী খাই খাই রব”–লেখকদের স্পিরিট টাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?

৫) প্রচারমুখী ব্যক্তিত্ব আর “পুরস্কার”নামক ভাঁওতাবাজী যার ফলে লেখার প্রতি আস্থা উঠে যাচ্ছে/বড় মন” অনেক পরের?

৬) তা সত্ত্বেও বড় মনের মানুষ আছেন থাকবেন/ যারা প্রচারবিমুখ হয়ে চুপচাপ নিজের কাজ করে যাচ্ছেন করে গেছেন জীবনানন্দ দাস
মনীন্দ্র গুপ্ত এনারা কিন্তু কবিতাপাঠে হুড়োহুড়ি করতে যেতেন না?

কৃষ্ণয় দিলা রাধার গলে, রাধায় দিলা কৃষ্ণের গলে…

কৃষ্ণয় দিলা রাধার গলে
রাধায় দিলা কৃষ্ণের গলে…

পাঠান সাহেব ছিলেন এরশাদ আমলের একজন প্রতিমন্ত্রী। খণ্ডকালীন বললে ভুল বলা হবেনা। কারণ বেশীদিন স্থায়ী হয়নি উনার মন্ত্রীত্ব। ভদ্রলোককে চিনি তারও আগে। পল্লী বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশে সদ্য ইন্ট্রিডিওস করা হয়েছে কেবল। খুব বেসিক পর্যায়ে হলেও একসময় আমিও যোগ দেই সে প্রকল্পে। কর্মস্থল ঢাকার কালিয়াকৈর, সাভার ও ধামরাই। পাঠান সাহেব বিদ্যুতের সাব-স্টেশন বসানোর ঠিকাদার। গায়ে গতরে ফিটফাট মধ্যবয়সী একজন মানুষ। চলাফেরায় কেতাদুরস্ত ভাব। আমাদের অফিসে আসেন এক হাতে গাড়ির চাবি আর অন্যহাতে বেনসন সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে। সব বিবেচনায় একজন সফল ও সুখী মানুষ। মাঝখানে দেশে না থাকায় পাঠান সাহেবের ব্যবসা ও ব্যক্তিগত জীবন কোন পথে প্রবাহিত হয়েছে জানার সুযোগ হয়নি। বিদেশ পর্ব চুকিয়ে দেশে ফিরতে নতুন করে পরিচয় হয় পাঠান সাহেবের সাথে। এ যাত্রায় তিনি আর ঠিকাদার নন, সরকারের একজন মন্ত্রী।

ফারাক্কা বাধের অভিশাপের মত এরশাদের ক্ষমতায়ও একসময় অভিশাপ লাগে। দিনের বেলার মন্ত্রী রাতে ফেরারী হতে বাধ্য হন। পাঠান সাহেবের মন্ত্রীত্ব অবশ্য এর আগেই দফারফা হয়ে যায়। তিনি ফিরে যান ময়মনসিংয়ের আপন ডেরায়।

কালের চক্রে নতুনকরে পরিচয় হয় প্রাক্তন ঠিকাদার ও মন্ত্রীর সাথে। এ যাত্রায় ওনার মতিঝিলের শ্রীহীন অফিসে। এরশাদের বেশকজন পরিত্যাক্ত মন্ত্রীকে নিয়ে একটা ব্যবসা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি আমরা। ব্যবসা সংক্রান্ত আলোচনা শেষ হওয়ার পর পাঠান সাহেব টেনে আনলেন নিজের মন্ত্রীত্ব অভিজ্ঞতার সোনালী সময়। রোমন্থন করলেন এবং আমাদের সাথে শেয়ার করলেন।

‘আহ! সে-কি সময়! চাইলেই কি ভুলা যায়! রাস্তার ট্রাফিক লাইটে গাড়ি থামলে ট্রাফিক পুলিশের লম্বা সালাম…এসপি ডিসিদের পোংগায় বাঁশ দেয়ার অঢেল স্বাধীনতা…বাড়ি গেলে রেলষ্টেশনে পুলিশের অপেক্ষা! – আরও অনেক কিছু রোমন্থন করে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অভিযোগ করলেন, ট্রাফিক পুলিশ এখন তাকে শালা বলে গালি দিতেও কার্পণ্য করেনা।

ছবিরজন এ সময়ের একজন মন্ত্রী। সোনালী সময় পার করছেন তিনি। কিন্তু হায়, যখন এ সময় চলে যাবে তিনিও হয়ে যাবেন একজন পাঠান সাহেব। যাদের কাঁধে চড়ে মোবাইল মসনদের ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন তারাই হয় শুয়রের বাচ্চা গালি দিতে দ্বিধা করবেনা।

সময় বড় কঠিন চীজ!

“জয় চেরনোবগ”

ইউরোপের অনেক রেস্টুরেন্টের বারে ফানবোর্ডে লেখা থাকে “ড্রিংক বিয়ার সেভ ওয়াটার”। এই লেখাটা প্রথমবার দেখে বেশ হাসি আসলেও বারটেন্ডার যখন বললো আফ্রিকার অনেক দেশে বিশুদ্ধ পানির দাম বীয়ারের চেয়ে বেশী, তখন হতাশা পেয়ে বসে। যেকোনো পরিমানের এলকোহলই হোক, যকৃত কিডনির জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু সেসব দেশে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য হলেও সবাইকে বীয়ার পান করে বাঁচতে হবে। তারা কৈশোর থেকেই এলকাহলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। আমরা যেখানে কেটো ডায়েটের নামে একটা বীয়ার পান করলে ৭ টা পাউরুটির সমান কিলোক্যালোরী গ্রহন করবো এই ভয়ে তার ধারে কাছে যাই না, সেখানে কালো দরিদ্র মানুষগুলো নিজের জীবন বাচাতে বীয়ার তথা এলকোহলে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।

একটা সময় মনে হতো আর কতটা ক্ষতি হলে মনে হবে অনেক হয়েছে, এখন আমাদের থামা উচিত। সমাজ থেকে সকল কলুষিত চিন্তা ভাবনা, অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা উচিত। শুনেছি বিশ্বের ৮০ টি শহরে যুবক যুবতীরা মিছিল করে রাস্তা বন্ধ করছে শুধু একটা দাবী নিয়ে, পৃথিবীর জলবায়ু রক্ষা করতে হবে। অথচ নেতাদের কথাবার্তা শুনলে ছোটবেলার আজব একটা চিন্তার কথা মনে পড়ে যায়।

তখন বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলেই লম্বা ছুটিতে নানু বাসা চলে যেতাম। সকাল বেলা উঠেই সুবর্ন বাসে উঠে ঢাকার দিকে যাত্রা করা, দৌলতদিয়ার ঘাটে লঞ্চ ধরা, পদ্মার থৈ থৈ ঢেউয়ে ভয় লাগলেও একটা রোমাঞ্চ অনুভব করতাম নানু বাড়ি যাচ্ছি। আমি আবার সাতার জানতাম না। পদ্মার প্রমত্তা ঢেউ আমার মনে ভয় জাগাতো, ভাবতাম এটাই বুঝি শেষ যাত্রা আমার। কিন্তু দেখো! তারপরও দিব্যি বেচে আছি। পদ্মা এখন দেখতে কুমার নদীর মতো মজা কোনো খাল। সে যাই হোউক, ঢাকায় এলে নানুকে দেখতাম বিশাল একটা এলুমিনিয়ামের ট্রেতে চালের খুঁত বাছতেন। মামারা ছিলো যৌথ পরিবার, তার ওপর দু তিনজন বিয়ে করে সবাই একসাথেই থাকতো, সে এক বিশাল হুলস্থুল ব্যাপার স্যাপার। নানু কাজের মেয়েদের নিয়ে দিনের একটা বড় অংশ কাটাতেন চাল বাছতে বাছতে। ছুটির সময় সব কাজিনরা এলে বাসা পুরো গরম হয়ে যেতো। নানু সব পিচকি পাচকাদের ধরে চাল বাছতে বসিয়ে দিতেন আর আমরা স্বানন্দে পুরো ড্রাম ভরে দিতাম।

চাল বাছতে বাছতে মনে হতো এই যে একটা দুটো তিনটি খুত বেছে নিলাম এতে কি চালের পরিমান কমবে? এত গুলো চালের মধ্যে দুটো চাল নিলেও তাতে কোনো পার্থক্য হবে না। এমনকি আরো দুটি, আরো দুটি, প্রগমনিক ধারায় চলতে থাকলেও সে চাল ফুরোবে না। নানুকে বুঝিয়ে না বলতে পারলেও তিনি ঠিকই বুঝে নিয়ে একটা লাইন বললেন,”কোন সে ব্যাপারী গুনতে পারে এক থাল সুপারী?” রাতের বেলা আকাশের তারা গুনতে গিয়েও একই সমস্যায় পড়লাম। ঠিক যেখান থেকে তারা গুনতে শুরু করেছি, আমি সেখানেই আটকে থাকি। কোথা থেকে কোন তারা কোথা দিয়ে উকি দিচ্ছে, বোঝা মুস্কিল। তারা গোনাটা একটা গোলক ধাঁধাঁ। তবু আমার দুঃসাহস থামেনি। জ্ঞান অর্জন করলাম, বুঝতে শিখলাম কিভাবে অসংখ্য জিনিসকে মাপতে হয়, তাকে কাজে লাগাতে হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্ব নেতারা নাছোড়বান্দা। তারা ছোটবেলার সেই চাল গোনার হিসাবেই পড়ে আছে। মনে করে এতটুকু কার্বন নিঃসরনে কিছু হবে না। হলেও প্রকৃতি ঠিকই সামলে নেবে। অথবা যদি হয়ও তাহলে সেটা অবশ্যম্ভাবী। ঠেকানো যাবে না। তারা যেনো ছোটবেলার সেই ভ্রান্ত দর্শনে আটকে আছে।

স্লাভিক গড চেরনোবগ ছিলেন একজন অপদেবতা। সে অভিশাপ দেবার পয়মন্ত ছিলো, হাস্যজ্বল উৎসবে মৃত্যুর ছায়া ডেকে এনে বিষাদের বন্যা বইয়ে দিতে তার মুন্সিয়ানা তুলনাহীন। ওডিনের গুংনীরের মতো তার ছিলো কাঠের তৈরী বিশাল হাতল ওয়ালা হাতুড়ী। উৎসর্গের গরুর মাথায় এক আঘাতে ফাটিয়ে হত্যার প্রিয় অস্ত্র ছিলো সেই হাতূড়ি, যেনো তরমুজের মতো ফেটে চূরমার। আমাদের নেতারা হলো সেই চেরনোবগের ছায়া। তাদের কলমের খোঁচা গ্রীমনিরের গুংনীড়।

আমরা সেই উৎসর্গের গরু, বলা যায় বলির পাঠা। যদিও প্রহেলিকার জগতে বাস আমরা নিজেদেরকে মহান হুবালের বিশ্বাস ধারন করা সাহসী ছায়াসঙ্গী ভাবতে ভালোবাসি অথচ এ সবই মায়া, মিথ্যা। আমাদের বিশ্বাসের মোহরে তারা বেঁচে থাকে, ঈশ্বর হয়ে আমাদের ভাগ্য নিয়ে হাস্যকর খেলা খেলে।

আমাদের দরকার ছিলো একজন প্রমেথিউস অথবা ফ্রান্সের আধুনা “ভলতেয়ার” পল সাঁত্রে, যারা আমাদের চোখের পর্দা সরিয়ে ইউটোপিয়ার জগতকে ভেঙ্গে দেবেন! যদিও ভয় হয়, আমাদের বিপ্লব হাতছাড়া হয়ে মধ্যযুগীয় হুবালের হন্তারক ডাকাতের অনুসারীদের হাতে না চলে যায়! আজ তাই ইরান, আফগানিস্তান, সিরিয়ার লাখোকোটি মানুষ নীরবে কাঁদছে, সে কস্ট গুলো আসলেই কাউকে স্পর্শ করে না, না হুবাল, না আজুরা মেহতা, না ওডিন অথবা আখেনাতেনের সেই আদি পরাক্রমশালী “আতেন”!

হ্যাপী ব্লগিং!!

অফিসে বা কলকারখানায় কাজের সময়

can-stock-photo_csp11379154

আমাদের এই বেকারের দেশে নিজের ক্ষুধা নিবারণের জন্য, পরিবারের ভরন পোষণের জন্য, সাময়িক সুখের সন্ধানের জন্য লক্ষ লক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা নেয়া বা এক কথায় বলা যায় দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত যুবক যুবতী একটি কর্ম সংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে না। হ্যাঁ এ কথা আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমাদের দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষের অভাব রয়েছে বা কেহই এই কারিগরি শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী নয়। তারচেয়ে অফিসে বসে কলম ঘষাঘষি করাতেই তৃপ্তি। হাতের কাজ? সেতো ভাবতেও ঘেন্না করে!

আবার আর এক দিকে যারা বিশেষ কোন ভাবে, সে পিতার সম্পত্তির জোরে কিংবা আত্মীয়তার জোরে কিংবা চাটুকারিতার জোর যেভাবেই হোক কর্মক্ষেত্র তৈরি করে নিতে পেরেছে বা অন্যের কর্মক্ষেত্রে বস হয়ে বসেছে তারা নিজেরা না জুটিয়েছে শিক্ষা না পেয়েছে দীক্ষা। এমনকি ভদ্রতা সভ্যতা বা আদব-কায়দা বলতে কি বোঝায় তাই শিখতে পারেনি! কার সঙ্গে কি ভাবে কী কথা বলতে হয় জানে না। তারা উপযুক্ত কাজের জন্য অপ্রাসঙ্গিক জনকে নিয়োগ দিয়ে কাজের বারোটা বাজিয়ে দেন। মালিক বা বস নিজেই জানে না এই কাজের জন্য উপযুক্ত কর্মী কে? তার কি যোগ্যতা প্রয়োজন। যেমন ডাক্তারকে নিয়োগ দিচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারের পদে, ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়োগ দিচ্ছে পরিবহন কাজের এস্টিমেট করার কাজে আবার প্রশাসনিক কাজ দেখার জন্য নিয়োগ দিচ্ছে হিসাব বিজ্ঞান পড়া লোককে আবার ট্রাক মালিকের সুপারভাইজারকে নিয়োগ দিচ্ছে জাহাজ পরিচালনার কাজে। এর ফলাফল কি হচ্ছে তা আমরা চারিদিকেই দেখতে পাচ্ছি। বিশেষ করে ব্যাক্তি মালিকানার অফিসগুলিতে মালিক কোন রেকর্ডপত্র রাখা বিপদজনক বা তার নিজের অপকর্ম ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ে রাখে না। তাই যখন যা সুবিধা মনে হয় তাই, সত্যকে মিথ্যা বা মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে নেয়ার ইচ্ছা বলেই এমন করে।

একজনকে দিয়ে ৫ জনের কাজ আদায় করে নেয়া একটা যোগ্যতা এবং শিল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে। মালিকের মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষে একজনকে দিয়ে যদি পাঁচ জনের কাজ আদায় করিয়ে নেয়া যায় মন্দ কি? আল্লাহত’আলা কাজকর্ম কিংবা জীবন ধারণ কিংবা খেয়ে পরে জীবন বাঁচাবার জন্য দিনকে নির্ধারণ করেছেন আর বিশ্রামের জন্য রাত। এই বিধান কি জন্য করেছেন? এমনিতেই ধীরে ধীরে মানুষের মন, মানসিকতা, বিবেক, ধৈর্য-সহ্য অর্থাৎ মানবিক গুণের পচন ধরছে। এগুলি দেখার মত বা উপযুক্ত বিচার করার মত ব্যবস্থা থাকলেও তা মানা হয় না। শ্রম দপ্তর নামে একটি দপ্তর নামে থাকলেও কাজে এর কোন অস্তিত্ব নেই সম্ভবত তাহারা সরকারি অর্থের সদ্ব্যবহারে ব্যস্ত থাকেন। প্রতিদিন একজন কর্মচারীকে মাত্র এক ঘন্টা (বাস্তবে এর চেয়েও অনেক বেশি হয়ে থাকে) বেশি কাজ করিয়ে নিলে মাসে ২৬ ঘন্টা আদায় করে নেয়া যায়। অর্থাৎ মাসে ৩ দিনেররও অধিক সময় বিনে পয়সায় কাজ আদায় করে নিচ্ছে এই সব মুনাফা লোভীরা। বিনিময়ে হয়তবা কেও কেও (সবাই না) ৫*২= ১০ টাকার দুইটা সিঙ্গারা খাইয়ে দিলেই হলো। বাহ! কি মজা! তাকধিনা ধিন ধিন!

যিনি কাজ করবেন তাকে দিয়ে কাজ করাতেই থাকবে, লাথি গুঁতা, চোটপাট সবই তার প্রাপ্য কিন্তু প্রমোদে মন ঢালিয়া যারা অফিসে বসে facebook চালাইবেন বা you tube এ সিনেমা দেখিবেন তিনিই উত্তম এবং যোগ্য কর্মচারী বলে বিবেচিত হবেন, সবসময় বাহবা পাবেন, এমনটাই কি রীতি?

সরকার যখন তার কর্মচারীদের পে-স্কেল বাড়িয়ে দিচ্ছেন তার ফলে সারা দেশে সমস্ত কিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু সরকার শুধুমাত্র ২০/২৫ লক্ষ মানুষের কথা ভেবে অস্থির অথচ বেসরকারি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করে তাদের বেতন স্কেলের কথার কোনও উল্লেখ থাকে না তাহলে কি চাকুরীজীবী বলতে ওই সরকারি কর্মচারীদেরকেই বোঝায়? এমনিতেই বেসরকারি কর্মজীবীরা নিয়মিত ভাবে বেতন তো পায়ই না বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট তো দূরের কথা। ৫/৭ বছর চাকরি করেও ইনক্রিমেন্টের কোন দেখা নেই। তাহলে তারা সরকারি চাকুরেদের সাথে তাল মিলিয়া সংসার কি ভাবে ম্যানেজ করছে? এর জবাব কি কেও কোনদিন ভেবে দেখেছে না ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করেছে?
কর্মক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করাটাও যেমন যোগ্যতা আবার সময়ের কাজ সময়ে করতে না পারাটাও অযোগ্যতা এমন করে কি কেও ভাবেন? দিনে কাজ করবে রাতে বিশ্রাম নিবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু যারা সন্ধ্যার পর অফিসে বাতি জ্বালিয়ে কাজ করে তারা কারা? কেন করে এমন? টেবিলে ফাইল, কাগজপত্র এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে চিঠিপত্র নির্দিষ্ট ফাইলে না রেখে যেখানে খুশী সেখানে রেখে সময়মত খুঁজে না পাওয়াকে মালিক বা বস মনে করে এরাই ব্যস্ত মানুষ, এরাই ভাল কাজ করছে! ইহা কি যথেচ্ছাচারিতা নয়?

অফিসে রাতে বাতি জ্বালিয়ে কাজ করে কে?
১। যারা সময় মত নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করতে পারে না।
২। যার ঘরে শান্তি নেই অর্থাৎ সহজ কথায় স্ত্রীর সাথে বনিবনা নেই।
৩। যারা নিজের কাজ কি এটাই বুঝতে পারে না।
৪। যারা কাজের সময় আড্ডা দিয়ে সময় কাটিয়ে সময় নষ্ট করে।

সময়মত অফিসের কাজ শেষ করে সময়মত বাড়িতে ফিরে এসে নিজের পরিবারকে সময় দেয়া, তাদের সাথে সুখ দু:খের কিংবা কোন স্বপ্ন দেখা বা কোথাও বেড়াতে যাওয়া, বাড়ির বাজার বা প্রয়োজনীয় কেনা কাটা করে, চিকিৎস্য করে, প্রয়োজনীয় ওষুধ-পথ্য কিনে এনে পরিবারের স্ত্রী-সন্তানদের ভালবাসা স্নেহ-মমতা নিয়ে রাতে ভাবনা হীন একটা সুখ নিদ্রা দিয়ে ভোরে এক্কেবারে তরতাজা হয়ে উঠতে পারে তাহলে যে সে কতখানি কর্মশক্তি যোগাতে পারে তা কেই এই মহাপন্ডিত জন মালিক বা কথিত এই বস সম্প্রদায়ের রোবটগুলি বুঝতে পারে না সে প্রশ্নের জবাব কে দিতে পারে?

সময়ের দুয়ারে কড়া নাড়ছে নতুন রেনেসাঁ

লেখকঃ হোসাইন মোহাম্মাদ সেলিম, এমাম, হেযবুত তওহীদ।
অন্যায়ের দুর্গ যতই মজবুত হোক সত্যের আঘাতে তার পতন অবশ্যম্ভাবী। আল্লাহ ইব্রাহিম (আ.) কে দিয়ে মহাশক্তিধর বাদশাহ নমরুদের জুলুমবাজির শাসনব্যবস্থার পতন ঘটালেন। সেটা ছিল প্রাচীন ব্যবিলনীয় সভ্যতা যার নিদর্শন আজও হারিয়ে যায়নি। তৎকালে সেটাই ছিল বিশ্বের শীর্ষ সভ্যতা। তারা অহঙ্কারে এতটাই স্ফীত হয়েছিল যে উঁচু মিনার তৈরি করে তারা আল্লাহর আরশ দেখতে চাইত। তারা ঝুলন্ত উদ্যান নির্মাণ করেছিল। কিন্তু যখনই সেখানে মানবতা ভুলুণ্ঠিত হয়েছে তখনই তা অর্ধম হিসাবে সাব্যস্ত হয়েছে। তখন মহান আল্লাহ ইব্রাহীম (আ.) কে পাঠালেন পুরাতন জীর্ণ পরম্পরার জাহেলিয়াতের বিনাশ সাধন করে আল্লাহর তওহীদের ভিত্তিতে একটি নতুন সভ্যতা গড়ে তোলার জন্য। তিনি সেটা করলেন। আল্লাহ তাঁকে মিল্লাতের পিতা বলে অভিহিত করলেন (সুরা ইব্রাহিম ৭৮)। তিনি আল্লাহর তওহীদের শিক্ষা দান করলেন তাঁর পুত্রগণকে। পুত্র ইসমাইল (আ.) কে নিয়ে তিনি মিল্লাতের ঐক্যের কেন্দ্র হিসাবে কাবাগৃহ পুনর্ণিমাণ করলেন। প্রবর্তন করলেন হজ্বের। সমস্ত শেরক কুফরের মূলোৎপাটন করলেন তিনি। বললেন, আমি আমার পূর্ণ মনোযোগ একনিষ্ঠভাবে (হানিফ) তাঁরই দিকে নিবদ্ধ করেছি, যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মোশরেকদের অন্তর্ভুক্ত নই (সুরা আন’আম ৮০)।

কিন্তু তাঁর সাড়ে তিন হাজার পর এসে সেই তওহীদভিত্তিক দীন আবারও শেরক ও কুফরে সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়ে গেল। যেই মূর্তি ভাঙার দরুন ইব্রাহিম (আ.) কে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল আবারও বনি ইসমাইল কাবা প্রাঙ্গণে ৩৬০ টি মূর্তি স্থাপন করল। তারা ধর্মের নামে অধর্ম আর ধর্মান্ধতার চর্চা শুরু করল। উলঙ্গ হয়ে মানুষকে হজ্ব করতে বাধ্য করা হলো। ধর্মের নামে হাজার রকমের বিধিনিষেধ আরোপ করল ধর্মব্যবসায়ী আবু জাহেলরা। মানুষ যখন অন্ধত্বে ডুবে গেল তখন ন্যায় অন্যায়ের আর কোনো পার্থক্য থাকল না। সভ্যতা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা থেকে তারা ছিটকে গেল।

ওদিকে গড়ে উঠল রোমান সভ্যতা, পারস্য সভ্যতা, চৈনিক সভ্যতা। কিন্তু আরবরা সেদিকে গেল না, তারা পরিচিত হলো মারামারি আর কামড়া-কামড়িতে ব্যাপৃত একটি বিশৃঙ্খল জনগোষ্ঠী হিসেবে। তাদের যুগের নাম দেওয়া হলো আইয়্যামে জাহেলিয়াত বা অজ্ঞতার যুগ। যে জাহেলিয়াতকে ইব্রাহীম (আ.) দূর করেছিলেন সেই জাহেলিয়াত যখন আবার পুনর্বাসিত হলো আল্লাহ তাঁর শেষ নবীকে পাঠালেন। সেই জাহেলিয়াতকে নির্মূল করার জন্য তাঁকে সকল অজ্ঞতার মস্তকে প্রচ- বেগে আঘাত করতে হয়েছে।

তিনি বাল্যকাল থেকেই সমাজ সম্পর্কে সচেতন ছিলেন, চিন্তাশীল মানুষ ছিলেন। যুক্তির বাইরে তিনি কোনো কিছু ভাবতে পারতেন না। চিন্তা না করে কিছু বলতেন না। তাঁর উপর প্রথম যে আয়াতটি নাজেল হলো সেটা হচ্ছে – ইক্বরা অর্থাৎ পড়। তিনি বললেন, ‘আমি তো পড়তে পারি না’। তিনবার তাঁকে পড়তে বলা হলো, তিনি প্রতিবার বললেন, ‘আমি তো পড়তে পারি না’ (আয়েশা রা. থেকে বোখারি)। কিন্তু তাকে ছাড় দেওয়া হলো না, তাঁকে পড়ার জ্ঞান দান করলেন আল্লাহ। সেই হেরাগুহার পাদদেশ থেকে নতুন ইতিহাসের সূচনা হলো। মানুষ জানি না বললে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না। আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বলছেন, “আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে। (সুরা বনি ইসরাইল ৩৬)।

সাফা পর্বতের পাদদেশে যেদিন তিনি প্রথম প্রকাশ্যে তওহীদের আহ্বান জানালেন সেদিনই শুরু হলো পাথর নিক্ষেপ। বর্ষিত হলো গালি। তিনি সত্যের মশাল নিয়ে এগিয়ে চললেন। বজ্রনিনাদে ঘোষণা করলেন – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা নেই। তখন ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীটি ঐ সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছে। শোষণ করছে জোঁকের মতো। গোত্রপতিরা শাসন করছে নিজেদের মর্জিমত। রসুলাল্লাহর চাচা আবু তালিবের কাছে প্রস্তাব দেয়া হলো তাকে থামানোর জন্য। এজন্য তাকে সম্পদ, ক্ষমতা, নারী সবকিছুর লোভই দেখানো হলো। কিন্তু তিনি কোনো প্রলভোনের দুর্বল হলেন না, আত্মসমর্পণ করলেন না। পাহাড়ের মতো অটলভাবে বললেন, “যদি আমার এক হাতে চাঁদ, আরেক হাতে সূর্যও তুলে দাও তবু আমি আমার এ পথ পরিত্যাগ করব না। এতে হয় আল্লাহ আমাকে বিজয়ী করবেন নয়তো মোহাম্মদ (সা.) ধ্বংস হয়ে যাবে।” (সিরাতে রসুলুল্লাহ সা.- ইবনে ইসহাক)।

পরিশেষে আল্লাহর বিজয় হলো মানবতার বিজয় হলো। আল্লাহর বিজয় কীসে? মানবতার বিজয়ের মধ্যেই আল্লাহর বিজয়। আল্লাহর রসুল এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করলেন যেখানে এমন নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হলো যে একজন নারী একটা শত শত মাইল পথ দিনে রাতে হেঁটে যেতে পারত। তখন একা একটা মেয়ে মানুষ রাতের বেলায় হেটে যেতে পারত। যে বেলালদের মানবেতর জীব বলে গণ্য করা হতো, হাটে বাজারে বিক্রি করা হতো, সেই বেলালকে তিনি কাবার উপরে ওঠিয়ে আল্লাহর বিজয়ের ঘোষণা প্রচার করলেন। ধর্মব্যবসা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল। ক্রমান্বয়ে বিক্ষুব্ধ বঞ্চিত অবদমিত মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেল। ঐশী নেতৃত্ব পেয়ে গেল আল্লাহর পক্ষ থেকে। একটি রেনেসাঁর সৃষ্টি হলো। একটি মহাজাগরণ বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিল। সেই রেনেসাঁর প্রথম আঘাতে শেরক আর কুফরের মস্তক মরুর বালুতে লুটিয়ে পড়ল। মূর্তির হুকুমত ধ্বংস হয়ে গেল।

আরবের মানুষগুলো ঐক্যবদ্ধ হলো। যারা অপরিচ্ছন্ন থাকত তারা পাঁচ ওয়াক্ত ওজু করতে শিখল। যারা বিশৃঙ্খল ছিল তারা এক কাতারে দাঁড়িয়ে সালাহ কায়েম (নামাজ) করতে শিখল। বিবদমান মানুষগুলো ভাই ভাই হয়ে গেল। যারা ছিল চিন্তাহীন, কাঠ পাথরের মূর্তির সামনে মাথা নোয়ানোর জাতি, তারা চিন্তায় ও কর্মে, বিজ্ঞানে ও প্রযুক্তিতে, আবিষ্কারে ও গবেষণায়, ধনে ও শক্তিতে বিশ্বের সকল জাতির শীর্ষে চলে গেল। তাদের সমাজ থেকে সকল অন্যায় দূরীভূত হয়ে গেল। সেই রেনেসাঁর ঢেউ আছড়ে পড়ল বাকি দুনিয়ায়। গোটা মানবজাতিই সমৃদ্ধ হয়ে উঠল ইসলামের উদ্বোধনে (সুবাহানাল্লাহ)।

কিন্তু সব সভ্যতার ধারকদেরই পদস্খলন হয়। রসুলাল্লাহর সামনে বসে যে সাহাবিরা ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছিলেন সেই সাহাবিরা যখন একে একে ধরাপৃষ্ঠ থেকে বিদায় নিলেন তখন প্রকৃত ইসলামের আকিদা বিকৃত হতে শুরু করল। রসুলাল্লাহর বিদায়ের ৬০/৭০ বছর পর জাতি তার লক্ষ্য ভুলে গেল। জাতির নেতৃত্ব উম্মতে মোহাম্মদীর নীতি আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলো। তাদের উপর দায়িত্ব ছিল সমগ্র পৃথিবীকে এই শান্তি-সুখের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। তারা সেই সংগ্রাম ত্যাগ করল। ফলে জাতি শক্তি হারিয়ে ফেলল। তারা অন্তর্কলহে খ- বিখ- হয়ে গেল। ওদিকে শত্রুরা হয়ে উঠল শক্তিশালী, সুযোগসন্ধানী ও প্রতিশোধ-পরায়ণ। তারা হামলা চালাতে লাগল একটার পর একটা। তাদের সঙ্গে পেরে উঠতে না পেরে মুসলিম জাতি ইউরোপীয় জাতিগুলোর দাসে পরিণত হলো।

দুইশ বছর দাসত্বের পর এ জাতি আবারও মূর্খের জাতিতে পরিণত হলো। আবারও তারা ধর্মান্ধ হলো। তাদের কাছে কোন পীর কী বলল, কোন দরবেশ কী বলল, কোন মৌলভি কী বলল সেটাই ধর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার তাদের কাছে মানবতার চেয়ে মাসলা-মাসায়েল বড় হয়ে দাঁড়ালো। মানুষ নিষ্পেষিত হলে লাগল ধর্মের যাঁতাকলে। তিন কোটি ভারতবাসী রাস্তাঘাটে না খেয়ে মারা গেল। এভাবেই দিন যাচ্ছে। ইজ্জত হারাচ্ছে নারীরা, অগ্নি সংযোগে প্রাণ হারাচ্ছে নুসরাতরা। একটি বৃক্ষ যখন অতি বৃদ্ধ হয় তখন তার পতন হয়। এই সভ্যতারও পতনের সময় এসে গেছে। এখন তাকে মরতে হবে। এই মৃত্যুর প্রাক্কালে নতুন সভ্যতার বীজ আল্লাহ ধরাপৃষ্ঠে রোপণ করেছেন। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন রেনেসাঁ।

সুখবর এই যে, আজ দিকে দিকে সেই নতুন রেনেসাঁর ঢেউ লেগেছে। আবারো লাখো কণ্ঠে মানুষ বলছে, এই অন্ধত্বের দেওয়াল ভাঙতে হবে। এই কূপম-ূকতার চর্চা, ধর্মের এই অপব্যবহার আমরা আর চাই না। আমরা চাই ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা ও যুক্তি-বুদ্ধি, জ্ঞান ও মানবতার প্রতিষ্ঠা। আল্লাহ যা বলেছেন রসুল যা করেছেন, সেটাই হবে ইসলাম। এখানে আর কারো খবরদারি চলবে না। আমরা ধর্মব্যবসায়ীদের দেখেছি, তাদের কথা শুনেছি। তোমরা এখন আর আল্লাহর খেলাফত করছ না। তোমরা শয়তানের খেলাফত করছ। তোমরা ধর্মকে স্বার্থের কল বানিয়ে নিয়েছ। তোমরা যা বলো মিথ্যা বলো। তোমাদের ধবধবে লেবাসের অন্তরালে যে কুৎসিত চেহারা লুকায়িত আছে, আমরা তা দেখেছি। আমরা আর তোমাদের মানব না। আমরা সবাই বলব, আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা নাই – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মোহাম্মাদুর রাসুলাল্লাহ (সা.)। আল্লাহর হক সত্য, তার হুমুকও হক সত্য। কিন্তু তোমরা সত্য নও। আমরা তোমাদের প্রত্যাখ্যান করলাম। এখন সত্যকে ধারণ করে আমরা হবো মো‘মেন, আমরা হবো উম্মতে মোহাম্মদী।

বাঁধ ভাঙ্গা আলো

অখ্যাত হবার সুবিধা নিয়ে কিছু লেখা-লেখি করা যেতেই পারে। সমস্যা হলো অ-স্পর্শকাতর মানুষজনদের স্পর্শকাতরতা নিয়ে। অন্যভাবে বলতে গেলে কিছু অনুভূতিহীন লোকের অতি-অনুভূতি নিয়ে। সাধারণত: সমাজে কিছু মানুষকে দেখা যায় যারা যাদের অসুবিধাগুলোকে সুবিধামত সময়ে সুবিধাজনক ভাবে ব্যবহার করে দীর্ঘ মেয়াদী সুবিধা ভোগ করে থাকে। অনুরুপভাবে অখ্যাত হওয়া সুবিধা নিয়ে বিখ্যাত হবার সুবিধা নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অসুবিধা হলো ভয়ের।

অখ্যাত হবার সুবিধা নিয়ে হয়তো কখনও কখনও বিখ্যাত হওয়া যেতে পারে, ক্ষেত্র বিশেষে অ-স্পর্শকাতর মানুষের অতিস্পর্শকাতরতার সুবিধা নিয়ে পরিচিতি পাওয়া যেতে পারে, আবার কিছু অসুবিধাকে সুযোগমত ব্যবহার করে দীর্ঘ মেয়াদী সুবিধা পাওয়া, সবই হতে পারে। শুধুমাত্র ভয় কখনও সাহসের কারন হয়না। বরং এক্ষেত্রে উপরের বৈশিষ্ট্যগুলোর বিপরীত ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ ভীতু লোক ভীতু লোক দেখেও ভীতু হয়ে থাকে।

আমি মানুষ হিসাবে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের শেষ বাক্যের বৈশিষ্ট্য বহনকারী ব্যক্তি। আমি সবসময়ই মাত্রারিক্ত ভীতু লোক দেখেও অতিমাত্রায় ভীতু হয়ে থাকি। এখন প্রশ্ন আসতে পারে সাহসী লোক দেখে তাহলে কি করি? উত্তরটা খুব সহজ, সাহসী লোক দেখে ভীতু হবার কোন সুযোগ থাকেনা। এই ভীরুতা থেকে কখন কখনও সাহসী হবার চেষ্টা করি বটে কিন্তু সেই চেষ্টাও ভীতির কারণ হয়ে থাকে।
উপরোক্ত তিনটি অনুচ্ছেদকে অর্থহীন মনে করছেন? না, ব্যাপারটা আমার প্রেক্ষাপটে অর্থহীন নয়। উপরোক্ত অনুচ্ছেদগুলোর মাধ্যমেইতো এতক্ষণ ধরে নিজেকে সাহস দিলাম দেখি তাতে কোন সাহস হয় কি না? প্রথম অনুচ্ছেদের প্রথম বাক্যে ফিরে যাই। অখ্যাত হবার সুবিধা নিয়ে কিছু লেখা যেতেই পারে।

সাধারণ লক্ষ্য করে দেখি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তি বক্তব্য দিয়ে থাকেন। যারা বক্তব্য দিয়ে থাকেন তাদের নামের শুরুতে প্রথিতযশা, বিখ্যাত বক্তা ইত্যাদি অমূলক শব্দগুলো না বসালেও বোঝা যায় তারা বিখ্যাত বা প্রতিথযশা হয়ে থাকতে পারেন। কারন সেটা বোঝা যায় তাদের বক্তৃতায় বলা বাক্য শুনে নয়; বক্তৃতায় না বলা বাক্য জেনে বা অনুধাবন করে। যেহেতু তারা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারগুলো অলংকৃত করে থাকেন সেহেতু তাদের এমন কিছু বলতে নেই যা বল্লে তাদের সমাজ কলঙ্কিত হবে। বিখ্যাত হওয়া যেহেতু বিরাট জ্ঞানের ব্যাপার সেহেতু জ্ঞানী হিসাবে সমাজের প্রতি বিরাট একটা দায়বদ্ধতা থাকতেই হয়। তা না হলে জ্ঞানী কিসের? সেই দায়বদ্ধতা থেকেই বক্তৃতায় অনেক কিছু না বলতে হয় বা বলা থেকে বিরত থাকতে হয়।এই জন্যই তো বলা হয়ে থাকে জ্ঞানী লোকে কথা কম বলে। আমার বলার ক্ষেত্রে বিখ্যাত হবার বিড়ম্বনা নেই কিন্তু ভীরুতার চরম সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

মাঝে মাঝে আপনি যদি আমার মত স্থুল বুদ্ধির মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে এই পরামর্শ অনেক শুনে থাকবেন যে, সব কথা সবখানে বলতে নেই। আমাকে এই পরামর্শ খুব বেশি শুনতে হয়না। শুনতে হয় তখন যখন জ্ঞানীমানুষগণ আমার প্রতি স্নেহপরবশ হযে সামান্য ভুল করে থাকেন অর্থাৎ স্নেহপূর্ণ ভুলবশত: কোন জ্ঞানী ব্যক্তি যদি আমাকে সামান্য কিছু বলার সুযোগ দিয়ে থাকেন তখনই আমাকে উপরোক্ত পরামর্শ শুনতে হয়।
জ্ঞানীলোকজন জ্ঞানের কারণে বলা থেকে বিরত থাকছেন আর আমার মত স্থুলবুদ্ধিসম্পন্ন লোকজন ভীতির কারণে বলা থেকে বিরত থাকছে। অনেক কিছু বলা হচ্ছে কিন্তু বলা হচ্ছেনা কিছুই। বলা হচ্ছেনা বলেই মানুষের শ্রবণ শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বধির লোকগুলো যখন অন-অভ্যস্ততার কারণে উচ্চ আওয়াজী কথা শুণে থাকে তখন সেগুলো সহ্য করা হয় না। যারা বলে তাদের কেউ সহ্য করা হয়না। জ্ঞানী ব্যক্তিগণ না বলে বলে শ্রবণকারীদের বধীরতা বাড়িয়ে চলিয়েছেন, ভীত ব্যক্তিরা না বলে বলে তাদের বলার সাহস একদিকে যেমন নষ্ট করেছে অন্যদিকে তেমনি শ্রবণকারীদের বধীরতাও বাড়িয়ে চলেছেন।

একটা সময় আমার বিশ্বাস ছিলো এই সমাজে যারা আলোকিত মানুষ বলে পরিচিত তাদের দায়িত্ব হলো অন্ধকারগামী মানুষদেরকে আলোর পথ দেখানো, এখন দেখি তারা তাদের আলোগুলো নিভিয়ে অন্ধকারগামী মানুষের অন্ধকারে যাওয়া নেতৃত্ত্ব দিয়ে থাকেন। যে ব্যক্তি কখনও আলো দেখেনি তাকে হঠাৎ করে আলোয় নিয়ে আসলে আলোক রশ্মি তার রেটিনা গ্রহণ করতে পারবে না সেটাই স্বাভাবিক। একটু ধৈর্য্য ধরিয়ে তাকে আলোয় রাখলে দেখবেন তিনি চমৎকারভাবে আলোয় হাটছেন। কিন্তু সমাজ আজ জ্ঞানী ও ভীতু লোকের ভারে নূজ্য, জ্ঞানীরা সব সত্য কথা সবখানে বলতে নেই বলে বলেনা, ভীতুরা জানলেও ভয়ে বলেনা। জ্ঞানী ও ভীতু লোকের এই অর্থবহ ভূমিকায় সমাজে বধীর ও অন্ধকারগামী মানুষের সংখ্যা দিন দিনি ভয়াবহ গতিতে বেড়ে চলেছে।

সমাজে অনেককে দেখা গেছে যারা আলোর পথযাত্রী, অন্ধকারগামীরা তাদেরকে টিকতে দেয়নি। আলোকিত মানুষগুলোর নীরবতার নির্মমতা তাদেরকে টিকতে দেয়নি, তাদের বাঁচতে দেয়নি। ভীতুদের সম্পর্কে কিছু বলার নেই।

এখন সময় এসেছে না বলা কথা গুলো বলে বধীর মানুষের বধীরতা ঘোঁচানো, এখন সময় এসেছে আলোর বাঁধ ভাঙ্গার। যে আলোয় অন্ধকারগামী মানুষ চলতে শিখবে। আমি ভীতু, আমার গলার স্বরও নরম। আমি বলতে সাহস করবনা বললেও কেউ শুনতে পাবেনা। যাদের সাহস আছে, যাদের গলা উঁচু আছে তাদেরকে সমবেত স্বরে বলতে হবে। আলোর বাঁধ ভেঙ্গে দাও! অন্ধকারকে হটাও!

বেশ পুরাতন লেখা–

ব্লগ নিয়ে ব্লগিং

ভূমিকা :
সংখ্যা তত্ত্বের আলোকে শিল্প ও সাহিত্য বিষয়ক ব্লগিং বিশ্বে ও বাংলাদেশে কতটা জনপ্রিয় সেটা আমার জানা নেই। জানা খুব একটা জরুরীও নয়। তবে ব্লগিং নিয়ে আমি যা কিছু এই লেখাটাতে লিখছি তা বেশ কিছুদিন ধরেই লেখার প্রয়োজন বোধ করছি। কারণ একজন ব্লগার হিসেবে ব্লগিং-এর নানান বিষয় আমার কাছে কু-দৃষ্টিগোচরীভূত হয়েছে। যার কিছু অংশ নিম্নে অতি সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরার প্রয়াস চালাচ্ছি।

ব্লগে পাঠকের চেয়ে লেখক সংখ্যা বেশি :
আমাদের দেশের অনেকেই একটা কথা বলে থাকেন, সেটা হলো ‘এদেশে পাঠকের চেয়ে লেখকের সংখ্যা বেশি’। অবশ্যই কথাটা আমার কাছে কম বেশি সত্য মনে হয়। আমি এমন দু’একজন মানুষকে জানি যারা কখনই কোন বই পড়েন না যদিও তারা নিয়মিত ভাবে সংবাদপত্র পাঠ করেন। অবশ্যই সংবাদপত্রও সেই কারণে পাঠ করেন যে কারণে আমাদের দেশে টিভিতে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের মধ্যে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের চেয়ে সংবাদই বেশি জনপ্রিয়। উনারা আবার হয়তোবা যৌক্তিক কারণে নিয়মিত ভাবে আঞ্চলিক, জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রেও লেখেন। এক্ষেত্রে দুঃখটা হলো তারা কোন প্রকার বই না পড়েও শুধুমাত্র সংবাদপত্র পড়ে পত্রিকা বা সংবাদপত্রগুলোতে শিল্প ও সাহিত্য বিষয়ক লেখা লেখেন। আবার এইরকম দু’একজন পেয়েছি যারা পড়ার ব্যস্ততার কারণে লেখার সময় পান না। আর ব্লগিং নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি এখানেই। ব্লগ পড়তে গিয়ে যেটা যথেষ্ট পরিমাণ লক্ষ্য করি সেটা হলো, অনেক লেখক আছেন যারা তেমন পড়া লেখা করেন না কিন্তু লেখা-লেখি করেন। আমার ঐ পরিচিতনজনদের মতই। হ্যাঁ অবশ্যই কিছু ভাল লেখক বা লেখা পাওয়া যায় যেগুলো পড়তে ভাল লাগে। মুশকিল হলো প্রচুর লেখকদের ভীড়ে ভাল লেখক বা ভাল লেখা খুঁজে পাওয়া। সুতরাং এ থেকেই বোঝা যায় ব্লগে পাঠকের চেয়ে লেখক বেশি।

ব্লগে লেখার ভাল ও মন্দ দিক :
ব্লগে লেখার সবচেয়ে ভাল দিক হলো লেখা বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাঠকদের প্রতিক্রিয়া জানা যায়। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়ার মধ্যে আবার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত ব্যক্তির আত্মকেন্দ্রিক বা প্রতিক্রিয়াশীল মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। যেটা কিছুটা ফেসবুকী কৌশল। আর সেটা হলো ব্লগে যারা পড়েন তারা মুলত ব্লগার, উনারা অন্যের ব্লগ পড়ুক বা না পড়ুক অন্যের ব্লগে নিয়মিত ভাবে মন্তব্যও করেন। তারা অন্যের লেখায় মন্তব্য করেন এই কারণে যে, তিনি যদি কারোর লেখায় মন্তব্য করেণ তাতে তিনিও তার লেখায় মন্তব্য পাবেন বা হিট পাবেন। অবশ্যই এর ব্যতিক্রম আছে। ব্লগার হিসাবে এর অনেক প্রমাণ আমি অনেক বার পেয়েছি। এইতো কয়েক দিন আমি একটা গল্প ব্লগে প্রকাশ করলাম লেখাটি বড় করার অনিচ্ছা সত্ত্বেও বড় হয়ে গেলো। লেখার সাইজ ইউনিকোড ১১ ফন্ট, প্রায় ৮ পৃষ্ঠা, অথচ আমার লেখায় আমি প্রথম যে মন্তব্যটি পায় তা হলো-আপনার গল্পটি পড়ে খুব ভাল লাগল, উক্ত মন্তব্যটি লেখা প্রকাশের ১/২ মিনিটের মধ্যেই পেয়ে যায়। ওনি ৮ পৃষ্ঠা লেখা ১/২ মিনিটের মধ্যে পড়ে কেন মন্তব্য করলেন সেটা বুঝতে সমস্যার হবার কথা নয়। আরেকবার আমি সংশ্লিষ্ট ব্লগ সাইটের নিয়মের মধ্য থেকে কবিগুরুর শেষের কবিতা স্বীকারোক্তি দিয়েই নিয়মিত ভাবে শেয়ার করছিলাম। সেই শেয়ারে কয়েকজন ব্লগার মন্তব্য লিখে বসলেন এই রকম- আপনি কঠিন কিছু লেখা লিখে ফেললেন, খুব চমৎকার একটা লেখা লিখেছেন, আপনি এত সুন্দর ভাবে লেখেন যা আমি কখনই পারিনা, আপনার লেখা বরাবরই ভাল।

এরকম মন্তব্য পাওয়ার একমাত্র কারণ হলো উনারা লেখক, অবশ্যই পাঠক নন। যেহেতু তাদের লেখায় হিট ও মন্তব্য পাওয়া দরকার সেহেতু তারা অন্যের লেখা না পড়েই ভাল মন্তব্য করেছেন। সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিবিদদের থেকে ব্লগারদের বোধহয় এই পার্থক্যটুকু আছে। সাধারণ মানুষজন ও রাজনীতিবীদ কোন কিছু না দেখে, না জেনে, না শুনে সহজেই বলতে পারেন ওটা একদম ঠিক হয়নি বা ভাল হয়নি, আর ব্লগারগণ না পড়েই বলতে পারেন লেখাটি খুব সুন্দর হয়েছে। যেটা পূর্বেই বলেছিলাম ব্লগিং-এর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো লেখার সাথে সাথেই মন্তব্য পাওয়া। কিন্তু মন্তব্যগুলো যদি এত বেশি ভাল হয়ে যায় তাহলে তো মুশকিল। এত ভাল মন্তব্য নিশ্চয় ভাল লেখক তৈরীতে বড় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে।

ব্লগের পাঠ বিষয়ে কিছু সমস্যা :
ব্লগের যারা পাঠক তাদেরকে মুলত কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনে পড়তে হয়। একটু বড় লেখা এখানে পড়া খুবই মুশকিলের ব্যাপার হয়ে যায়। স্ক্রীনের আলো খুবই বিরক্ত তৈরী করে বা পড়ার ব্যাপারে মনসংযোগ ব্যাপক ভাবে ব্যহত করে। এর কোন সমাধান আছে কিনা আমার জানা নেই। আবার বড় লেখাগুলি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করার সমস্যা হলো যেহেতু অনলাইনে প্রকাশের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে স্ট্রিমিং হয়ে থাকে সেহেতু ধারাবাহিক লেখাগুলোর সবগুলো পর্বের স্ট্রিমিং আপনার সামনে পড়বে না সেটাই স্বাভাবিক। তাহলে বড় ধারাবাহিক লেখাগুলো কিভাবে পড়া সম্ভব সেটাও আমার জানা নেই। যেহেতু ব্লগের যারা পাঠক তারা মুলত লেখক পাঠক নন সেহেতু এখানের পাঠের চেয়ে লেখাটায় অধিংকাংশের কাছে মুখ্য সেহেতু এটাও একটা বড় সমস্যা। এর সমাধান কি সেটাও আমার জানা নেই।

উপসংহার :
সবশেষে এ বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই যে শিল্প ও সাহিত্য বিষয়ক ব্লগগুলিতে যারা বিচরণ করেন তারা অপেক্ষাকৃত মনন চর্চায় অন্যান্য ব্লগ-গুলিতে বিচরণকারীদের চেয়ে একটু এগিয়ে থাকবেন। সুতরাং মনন চর্চার জন্য সহায়ক লেখক ও পাঠকগণ এখানে তাদের মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করবেন এবং ভালবাসা উজার করে দিয়ে তাদের লেখাগুলো লিখবেন অতঃপর ব্লগে প্রকাশ করবেন এবং ভাল করে পড়ে অন্যের লেখায় সুন্দর সমালোচনামূলক মন্তব্য লিখবেন ব্লগার হিসেবে সেটাই আপনাদের কাছে আমার প্রত্যাশা। এতে কোন সন্দেহ নেই যে লেখক বা ব্লগারের লেখায় যে মন্তব্যটি করা হয় সেটা সংশ্লিষ্ট ব্লগার বা লেখকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সব সময় তো নয়ই, কোন সময়ই ভাল হয়েছে, সুন্দর হয়েছে জাতীয় মন্তব্য এড়িয়ে লেখার ত্রুটি বিচ্যুতিসহ সুন্দর দিক তুলে ধরে সত্যিকার অর্থেই সমালোচনামূলক মন্তব্য লেখা উচিৎ। তাহলে এইসব নবীন লেখকগণ তাদের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো এড়িয়ে ভাল ভাল লেখা উপহার দিতে পারবেন বলে আশা করছি।

লেখাটা বেশ পুরোনো…

আইডিয়া

এক
গুলশানের এই বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টটিতে একবার খাবারের ব্যয় মেটানোর পর সাধারণত ঐ ব্যক্তিকে এখানে দ্বিতীয়বার আসার ব্যাপারে যথেষ্ঠ সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। যদিনা এইরকম হয়ে থাকে যে পরের বার তার খাবারের ব্যয় ভার অফিস বা তার সাথে আগত ব্যক্তিই তা বহন করছে।
আরিন সাহেব খাবারের মেনুকার্ড-এ খাবারের ছবি দেখেই তা অর্ডার করে দিলেন । ক্যালরি বা মূল্য বিবেচনাবোধে আনলেন না। নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাংঙ্গালীদের আত্মমর্যাদা প্রদর্শনের একটি উপায় হলো এই ধরনের রেস্টুরেন্টে গিয়ে কোনমতে খাবারের দাম মেটানোর সামর্থ্যটুকু থাকলেই তিনি কোন ভাবেই বুঝতে দেবেন না যে, আজকের এই খাবারের দাম মেটানোর পর মাসের অবশিষ্ট দিনগুলো চলার জন্য তাকে অপেক্ষাকৃত কোন ধনী বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে চলতে হবে। অবশ্যই আরিন সাহেবের তা করতে হবেনা। আরিন সাহেবের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও ব্যবসায়ীক ধারনা ও তার নেতৃত্বদানের অসচরাচর গুণবালী তিনি নিজেকে উচ্চ বেতনের একজম কর্মী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়েছেন। রেস্টুরেন্টে ঢুকেই আরিন সাহেব যেখানটিতে খাবার অর্ডার করতে হয় সেখান থেকে মেনুকার্ডটি হাতে নিয়ে খাবার অর্ডার করলেন।

বার কোর্ড স্ক্যানের মাধ্যমে আরিন সাহেব খাবারগুলো গ্রহণ করলেন। পে-ফাস্ট রেস্টুরেন্ট হওয়ায় পকেটের থেকে ডেবিট কার্ডটি বের করে খাবারের বিল মেটালেন। ওয়ালেটটি জিন্সের পকেটে রাখা মাত্রই মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা আবির্ভাবের ভাইব্রেশন হলো। আরিন সাহেব সাধারণত: তার স্মার্ট ফোনটিতে যেকোন ধরনের নোটিফিকেশন এ্যালার্ট আসা মাত্রই তিনি তা পড়ে নেন কিন্তু দুই হাতে খাবারের পাত্র থাকার কারণে তিনি এখন তা করতে পারলেন না।

আরিন সাহেব সব সময় দ্রুত আহারকার্য সম্পন্ন করলেও সাধারণত উনি যখন তথাকথিত বিলাসবহুল রেস্টুরেন্টে খেতে বসেন তখন একটু বেশি সময় নিয়েই খেয়ে থাকেন। তবে এখন স্মার্টফোনের ক্ষুদ্রে বার্তা পড়ার তাগিদেই তিনি একটু দ্রুত খাচ্ছেন। খাওয়া শেষ করার ধৈর্য্যটুকু তিনি ধরতে পারলেন না। আরিন সাহেব লক্ষ্য করে দেখেছেন যখন তিনি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে গান বা কবিতা শুনতে শুরু করেন তখনই ফোনে কল বা ক্ষুদে বার্তা এসে তা বিঘ্ন ঘটায়। এখনও তিনি শেষ করলেন না দ্রুত খাওয়া শেষ করে টিস্যু দিয়ে হাত মুছে পকেট থেকে সুপার স্মার্টফোনটি বের করে তিনি ক্ষুদে বার্তা পড়তে শুরু করলেন।

‘এ মাসের খাদ্য তালিকা থেকে প্রাপ্ত ক্যালরি হিসাব করলে বিশ দিনে আপনি প্রায় বিশ হাজার উদ্বৃত্ত ক্যালরি গ্রহণ করেছেন, এই উদ্বৃত্ত ক্যালরি আপনার ওজন তিন কিলোগ্রামের মত বৃদ্ধি করতে পারে, আপনাকে আরও একটু বয়সস্ক মনে হতে পারে। আপনি প্রতিদিন গড়ে চারশত পঞ্চাশ টাকার মত খাবারে পেছনে অতিরিক্ত ব্যয় করেছেন। যা এদেশের এদেশের একটি সাধারণ পরিবারের পুরোদিনের খাবারের ব্যয়ের সমান।’

ক্ষুদে বার্তাটি পড়া শেষ করা মাত্রই আরিন সাহেবের ফোনে আবার ইনকামিং কলের ভাইব্রেশন শুরু হলো :
‘জ্বি স্যার বলুন, আমি একটু রেস্টুরেন্টে আছি’
‘আপনার আসতে কত সময় লাগবে? আরিন সাহেবের বস উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই বল্লেন, তবে আপনাকে সর্বোচ্চ বিশ মিনিটের মধ্যেই অফিসে এসে পৌঁছাতে হবে’

‘স্যার আমি যতটা সম্ভব দ্রুত আসার চেষ্টা করছি’ কথা শেষ করা মাত্রই আরিন সাহেবের মোবাইলে আবার ক্ষুদে বার্তা আসল।
‘রাস্তায় এই মুহূর্তে তীব্র যানজট শুরু হয়েছে, আর ঘন্টা দুইয়েক পরেই মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বিমান বন্দর থেকে তার কার্যালয়ে যাবেন, তাই কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে; সঙ্গত কারণেই তীব্র জ্যাম শুরু হয়েছে। আপনি যদি গাড়ীতে যান আপনার রাস্তা ঘুরে অফিসে যেতে সময় লাগবে এক ঘন্টা তের মিনিট, আর হাঁটতে থাকলে আপনার সময় লাগবে সতের মিনিট’।
আরিন সাহেব দুপুরের এই তীব্র রোদে হাঁটতে শুরু করেছেন। মোবাইলে আবার ভাইব্রেশন
‘ইয়েস’
অটোমেটেড এইআই কল থেকে আরিন সাহেবকে শোনানো হলো
‘আপনি যে গতিতে হাঁটছেন তাতে আপনার অফিসে যেতে সময় লাগবে আঠার মিনিট’; রোদের তাপ ও আদ্রতা বিবেচনায় আপনাকে ত্রিশ মিনিটের মাধ্যে আঁধা লিটার পানি পান করতে হবে’।

অফিসের কোন একটা সমস্যা হওয়ার কারণে আরিন সাহেবের অফিসে পান করার যোগ্য কোন পানি নাই। সাধারণ আরিণ সাহেবের সুপার ইনটেলিজেন্ট স্মার্ট ফোনটি নিউজপোর্টাল থেকে তথ্য নিয়ে বা বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে পূর্ব থেকেই লোডশেডিং বা পানি বা গ্যাস সমস্যার কথা জানিয়ে দিয়ে থাকে কিন্তু আজকের পানির সমস্যাটি এতটাই অনির্দেশ্য ছিল যে, আরিন সাহেবের সুপার ইনটেলিজেন্ট ফোন তা জানাতে পারেনি।

‘ভাই এক লিটার পানি দেন তো’ আরিন সাহেব দোকানীর হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে ওয়ালেট থেকে বিল পরিশোধের জন্য এক হাজার টাকার একটি নোট বের করে দিলেন।
‘স্যার এত টাকা ভাংতি হবে না’
ভাংতি টাকা না থাকার কারণে আরিন সাহেব পানি না নিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলেন। কয়েক মিনিট হাঁটার পর আরিন সাহেব প্রচন্ড তৃষ্ণার্ত অনুভব করতে শুরু করলেন। গলা শুকিয়ে গেছে। পানির অভাবে মাথায় তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে। সূর্য সামান্য পশ্চিম দিকে হেলে গেছে। এই মূহুর্তে অনুভূত তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি। আরিণ সাহেব আবার পাশে দোকানে গেলেন।
‘ভাই এক বোতল পানি দেনতো’
পানির বিল পরিশোধ করার জন্য আরিন সাহেব পকেট থেকে এক হাজার টাকার একটি নোট বের করে দিলেন।
‘স্যার ভাংতি টাকা দেন’
আরিন সাহেব বোতলের মুখ খুলে পানি পান করতে লাগলেন। পানি পান করার পর খুব আরাম বোধ করলেন। শারিরীক আরামে তিনি দোকানের সামনে রাখা চেয়ারটিতে বসে পড়লেন।
‘দেন টাকা ফেরত দেন’ আরিন সাহেব দোকানী কে বল্লেন।
‘স্যার আমার কাছে ভাংতি হবে না, আপনি ভাংতি দেন’
সুপার স্মার্ট ফোনটিতে আবার এসএমএস আসলো।
আপনাকে আর মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে অফিসে পৌঁছাতে হবে কিন্তু জিপিএস তথ্য বলছে আপনি এখনই হাঁটতে শুরু করলে আপনাকে অফিসে যেতে এখনও ১১ মিনিট সময় ব্যয় করতে হবে।
‘ভাংতি হবে না, পানি নিচ্ছেন ৩০ টাকার, নোট দিচ্ছেন ১ হাজার টাকার, আপনার পানি নিতে হবেনা, আপনি আপনার টাকা নেন’
‘কিন্তু আমিতো পানি খেয়ে নিয়েছি, তো?
‘যান টাকা ভাংতি করে নিয়ে এনে দেন’
‘আমি কোত্থেকে টাকা ভাংতি করব?
‘সেটা আমি কি করে বলব?
‘আচ্ছা আপনি এই নোটটি রেখে দেন, বাকি টাকা আমি আপনার কাছ থেকে পরে নিয়ে যাব’
‘আমি আপনার টাকা রাখতে পারবনা’
আবারও এআই থেকে কল, ফোনটি কানে ধরা মাত্রই আরিন সাহেব শুনতে পেলেন-‘জামিল সাহেবের ভয়েস ইমোশোনাল এ্যানালাইসিস অনুযায়ী, আপনি যদি আজ দশ মিনিটের বেশি দেরী করে অফিসে পৌঁছান তাহলে আজকে আপনাকে কাঠোর শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’।
দোকানীর কাছ থেকে টাকা ফেরত না নিয়েই আরিন সাহেব হাটতে শুরু করলেন।
‘স্যার টাকা ফেরত নিয়ে যান’
আরিন সাহেব বুঝতে পারছেন না তিনি অফিসের দিকে দ্রুত হাঁটতে শুরু করবেন নাকি টাকাগুলো ফেরত নিয়ে যাবেন। এতগুলো টাকা ফেলেও যেতে ইচ্ছে করছে না। দ্রুত দোকানীর কাছে আরিন সাহেব আবার আসলেন।
‘ভাই দেন আমার টাকাগুলো ফেরত দেন’ দোকানী আরিন সাহেবকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই একটি মেয়ে বলছে-আপনি দ্রুত আমার টাকাগুলো ফেরত দেন, আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে।
আরিন সাহেব লক্ষ্য করলে কিশোরী বয়সের একটি মেয়ে ১০-১২ ইঞ্চির খাকি কাগজের একটি প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
‘আরিন সাহেব দোকানীকে জিজ্ঞেস করলেন মেয়েটিকে কত টাকা ফেরত দিতে হবে?’ আরিন সাহেব লক্ষ্য করলেন মেয়েটি বেশ বিব্রত বোধ করছে।
‘আচ্ছা নেন টাকাগুলো নেন, মেয়েটাকে টাকাগুলো আগে ফেরত দেন, আমার টাকাগুলো পরে ফেরত দিলেই হবে’
ধন্যবাদ আঙ্কেল-বলেই মেয়েটি দ্রুত চলে গেলো।
আরিন সাহেব মনে মনে বলেলন- আমি তোমাকে টাকাগুলো ফেরত দিলাম আর তুমি আমাকে আঙ্কেল বলে প্রতিদান দিলে?
আরিন সাহেবের সুপার স্মার্ট ফোনের আবার নোটিফিকেশান-আপনার অফিসে পৌঁছাতে বিশ মিনিট দেরী হবে।
‘স্যার দাঁড়ান, আমি আপনাকে টাকাগুলো ভাংতি করে ফেরত দিচ্ছি’ বলেই আরিন সাহেবকে কোন কিছু বলার অবকাশ না দিয়েই দোকানী টাকা ভাংতি করার জন্য দোকান ছেড়ে হাঁটতে শুরু করলো।
আরিন সাহেব বুঝতে পারছেন না যে, ৯৭০ টাকার জন্য আজ তাকে কত টাকার মুল্য চোকাতে হবে।
প্রায় পাঁচ মিনিট পরে দোকানী ফিরে এসে আরিন সাহেবকে হাজার টাকার নোট ফেরত দিয়ে বল্ল
‘সরি স্যার আপনি নোটটা নিয়ে চলে যান, আমার টাকা আপনি পরে দেবেন, আমরা লোক দেখলেই বুঝতে পারি কে কেমন মানুষ, আপনি আমার টাকাটা পরে দিয়ে দেবেন’।
আরিন সাহেব দোকানীর উপর প্রচন্ড বিরক্ত হলেন। দোকানীকে বাজে ভাষায় একটি গালি দিতেও ইচ্ছা করলো কিন্তু তারপ্রতি আস্থা রাখার কৃতজ্ঞতা বোধের কারণেই কিছু বল্লেন না।
আরিন সাহেবের সুপার স্মার্ট ফোনে আবার এইআই থেকে অটোমেটেড কল ‘জামিল সাহেবে গত ৫ বছরের ভয়েস ডেটার ইমোশনাল এ্যানালাইসি বলছে, আজকে আপনার শঙ্কার চেয়েও বড় ধরনের শাস্তির হতে হবে’।

দুই
জামিল সাহেব চেয়ারে বসে স্মার্ট ফোনটি ট্যাপ করায় ব্যস্ত আছেন। আরিন সাহেবকে তিনি মোটেই বকা-ঝকা করছেন না। আরিন সাহেবের ভয় সেখানেই। জামিল সাহেব কিছু জিজ্ঞেস করলে তাকে মিথ্যা কোন উত্তর দেওয়া যাবেনা; কারণ জামিল সাহেব প্রত্যেক এ্যাম্পøয়ির হাতের কব্জিতে Wirless Emotional Detector Sensor (WEDS) বসিয়ে দিয়েছেন। মিথ্যা কথা বলার মজা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে বহু কর্মী শহরের অন্যতম উচ্চতম বেতনভোগী এই চাকুরী ছেড়ে স্বল্প বেতনে অন্য প্রতিষ্ঠানের চাকুরী নিয়ে চলে গেছেন। এইতো কয়েকদিন আগের কথা’ একটি ছেলে চাকুরীতে সবে মাত্র যোগদান করার পর তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে ঘুরে-ফিরে অফিসে পৌঁছাতে দেরী হয়, জামিল সাহেব তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি অফিসে আসতে কেন দেরী করলেন? ছেলেটি মিথ্যা না বলতে পেরে রিতীমত মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল, পরবর্তীতে মিথ্যা বলার ঝুঁকির চেয়েও মাত্রারিক্ত ঝুঁকি নেওয়ায় জামিল সাহেব তাকে চাকুরী থেকে অব্যাবহিত দেন।
আরিন সাহেব কেমন আছেন? অতি নমনীয় ভাবে জামিল সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।
জিজ্ঞাসার ধরন আরিন সাহেবের ভয় বাড়িয়ে দিল। জামিল সাহেব যদি কখনও তার কোন এ্যাম্পøয়িকে তার ভুলের জন্য বকা-ঝকা করেন তাহলে বুঝতে হবে তার এই ভুলের কারণে তাকে আর কোন সমস্যায় পড়তে হবে না।
‘জ্বি স্যার ভাল আছি’
‘আপনার কি মনে হয় আপনার ভাল থাকা উচিৎ?’
‘জ্বি স্যার?’
‘আপনার কি মনে হয় আপনার ভাল থাকা উচিৎ?
আরিন সাহেব কি বলবেন বুঝতে পারছেন না, তাই চুপ করে বসে রইলেন।
‘আপনি কি জানেন আপনার জন্য প্রতিষ্ঠানের কতবড় ক্লায়েন্ট হাতছাড়া হয়ে গেছে? আপনার মূল্যবোধের সমস্যা নেই, তবে আপনার মূল্য নিয়ে বোধ হয় আপনার বোধের সমস্যা আছে’
আরিন সাহেব চুপ করে রইলেন।
‘আমি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আপনি ভুল করেও আমার সামনে আসবেন না’
‘স্যার তাহলে কি এখন চলে যাব?’
‘আপনার কি মনে হয়? আপনি আমার সামনে বসে থাকবেন আর আমি আপনাকে যামাই আদর করব?
‘সে সুযোগ আছে স্যার, আপনি চাইলেই তা করতে পারেন।’
আরিন সাহেবের কৌতুকরসবোধ অত্যান্ত সাহসি মানের, সাহসী রসবোধের কারণেই আরিন সাহেব প্রায়সর্বজগ্রহণযোগ্য একজন মানুষ। অবশ্যই উল্টো চিত্রও আছে, যেখানে সেখানে কৌতুক করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে তাকে অনেক মূল্যও দিতে হয়েছে।
জামিল সাহেব অতিবিরক্তিতে হেসে ফেল্লেন।
‘আচ্ছা আমি যে আপনার উপর এখন মহা বিরক্ত সেটাও কি বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি?’
‘না স্যার, তবে আমি আপনার বিরক্তি কমাতে সমর্থ হয়েছি’
‘আপনার কি মনে করছেন যে, আপনার এই অতি নি¤œমানের রসিকতার কারণে আপনার প্রতি আমার বিরক্ত কমে গেছে?
‘জ্বি স্যার, শুধু রসিকতা নয়, স্যার নানান কারণে আপনি আমাকে পছন্দ করেন’
‘আপনাকে একথা কে বা কারা বল্ল যে, আমি আপনাকে পছন্দ করি?’
‘আমাকে একথা বলার জন্য আমিই যথেষ্ঠ, অন্যকোন পক্ষ বা সম্প্রদায়ের দরকার নেই, আর আপনি তো জানেন স্যার আমি খুব অসাম্প্রদায়িক, আর আপনি এটাও জানেন স্যার, Problem is the mother of invention’
‘না, তা তো জানি না, আমি তো জানি Necessity is the mother of invention’
‘এটা স্যার পুরোনো দিনের ফুরানো কথা আর আমারটা হলো নতুন দিনের নতুন কথা, নতুন ইনোভেশন, আজকে দেরীতে আসার কারণেই আমি আপনাকে ভাল কিছু আইডিয়া দিতে পারব, তবে আইডিয়াটা একদমই নতুন নয়, আপনিও সেটা জানেন, আর পৃথীবিতে নতুন বলতে কিছু নেই, তবে স্যার আইডিয়াটা পুরোনো হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নতুন করে তাগিদ অনুভব করলাম’
জামিল সাহেব রীতিমত ভুলেই গেছেন তিনি আরিন সাহেবের উপর রাগ করেছেন।

তিন
‘আমাদের দেশে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে নানান অস্থিরতা আছে! এখানকার অনেক সমস্যার অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো আয় বৈষম্য! আর আয় বৈষম্যের কারণেই এক দল শোসক ও অন্যদল শোষিত শ্রেণীতে পরিণত হচ্ছে। আয় বৈষম্যের কারণেই মূলত: মানুষের মধ্যে এক ধরনের ধনকেন্দ্রিক শ্রেণী বৈষম্য তৈরী হচ্ছে। এই বৈষম্যে এগিয়ে থাকা শ্রেণী এতটাই এগিয়ে রয়েছে যে, তাদের একবছরের আয়ের সমান আয়, পিঁছিয়ে থাকা শ্রেণী এক হাজার বছরেও করতে পারবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, এগিয়ে থাকা শ্রেণী আলোর গতিতে অন্ধকার পথে সম্পদ বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন আর পিছিয়ে থাকা শ্রেণী কচ্ছপ গতিতে আলোর পথে সম্পদ অর্জন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা মানুষগুলো আর পিছিয়ে থাকতে চাইছে না, তারাও চাইছে যেভাবেই হোক তারাও টাকা কামাবে, তারাও আলোর গতিতে এগুবে। মানুষের মধ্যেই এই বিশ্বাস তৈরী হয়েছে যে, একমাত্র অধিক টাকার মালিক হতে পারলেই কেবল সুখি হওয়া যায়। কথাটা এক অর্থেও সত্যিও। কারণ আপনারা জানেন যে, এখানে যদি আপনি ভাল চিকিৎসা নিতে চান, যদি সন্তানকে ভাল শিক্ষা দিতে চান তাহলে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে টাকার মালিক হতে হবে।’ আরিন সাহেব কথাগুলো বলতে বলতেই পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন ওপেন করতে শুর করলেন।

‘কিন্তু এগুলোর সাথে আপনার আইডিয়ার সম্পর্ক কি?’ জামিল সাহেব জানতে চাইলেন।

‘স্যার সম্পর্ক এই যে, উপরোক্ত যে সকল সমস্যা বল্লাম আপনাদের সবারই তা ভালমত জানা আছে এবং এগুলোর কারণও আপনাদের কাছে দিনের আলোর মত স্পষ্ট। যারা আলোর গতিতে সম্পদ অর্জন করে যাচ্ছে তারা কিন্তু তা অন্ধকার পথেই করছে এবং এই সম্পদগুলোও থেকে যাচ্ছে অন্ধকারে। এতে করে এই সম্পদ থেকে প্রতি বছর দেশ যেমন হাজার হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অন্য দিকে সম্পদগুলো পরিচালন মূলধন হিসেবে কাজে না লাগানোর ফলে সাধারণ জনগণও আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং যেগুলোর ট্র্যাক করাও সম্ভব হয়না বা হচ্ছে না। আর এই অসম্ভবের কারণেই দেশে ঘুষ-দূর্ণিতি পরিস্থিতি একধরনের অলিখিত প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়ে যাচ্ছে। আপনি যদি নগদ লেনদেন বন্ধ করে ট্র্যাকিংযোগ্য কোন লেনদেন প্রক্রিয়া চালু করতে পারেন তাহলে এইসব অন্ধকার পথগুলো রাতা-রাতি ব্লাকহোলে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব।

‘নগদ অর্থ লেনদেন বন্ধ করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?’

‘স্যার সব সমস্যার সমাধান হবে কি না এখনই বলা সম্ভব নয়, তবে স্যার আপনি এইটুকু ধরে নিতে পারেন যে, অবৈধভাকে হোক বা বৈধ ভাবে হোক যে সকল নগদ অর্থ লেনদেন করা হয় তার আন্ত:গমন বা বহি:গমন কোন গমনই রেকর্ড থাকে না, ফলে দূর্ণীতিবাজগণ দূর্ণীতি করে পার পেয়ে যান, অন্যদিকে এই সর্ব দুর্ণীতিবাজদের পার পাওয়া দেখে মধ্যবর্তী অবস্থানকারী মানুষগুলো দূর্ণীতি করতে উৎসাহী হয়ে উঠে’

‘তারমানে বুঝতে পারছি, আপনি এমন আইডিয়ার কথা বলছেন যেখানে অর্থ লেনদেনসমূহ ট্র্যাক করা যাবে কিন্তু আমরা সবাই জানি আপনি যদি এখনই অনলাইনে অর্থ লেনদেন করেন তাহলে সেটা তো ট্র্যাক করা যাবে।’

‘স্যার ঠিকই বলেছেন, স্যার আপনি জানেন যে, স্যার জানেন যে যারা দূর্ণীতি করে থাকে তারা অনলাইন লেনদেন করে না, স্যার আমি এমন এক ধারনার কথা বলছি যেখানে বাংলাদেশের সমস্ত লেনদেন, এমনকি ১০ টাকার বাদাম ও বিক্রি হবে ক্যাশলেস লেনদেনের মাধ্যমে’

‘সেটা কি বাস্তবে আদৌ সম্ভব? যেখানে এদেশের বিরাট একটা অংশ মানুষ পড়তেই পারেনা এমনকি তারা জানে না যে কিভাবে লিখতে হয়, তারা জানেনা যে, কিভাবে মোবাইল চালাতে হয়, সেখানে এই চিন্তা কি খুবই অমুলক না?’

‘স্যার ধরুন, আপনার শরীরে একটি কম্পিউটার বসিয়ে দেওয়া হলো, যে কম্পিউটার ব্রেইন ওয়েভ রিড করতে পারবে, যার মাধ্যমে চীপের সুপার আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্ট আপনার চাওয়া না চাওয়া বুঝতে পারবে। কোন প্রকার শব্দ বা কোন প্রকার বাটন না চেপেই ব্রেণ ওয়েভের মাধ্যমে আপনি আপনার কাঙ্খিত পরিমাণ অর্থ লেনদেন করতে পারবেন। আপনার সমস্ত লেনদেন ক্লাউডে জমা থাকলো, আজীবনই আপনার ১০ টাকার বাদাম ক্রয় থেকেই সমস্ত দশ কোটি টাকার বাড়ী ক্রয়ের সমস্ত তথ্যই ক্লাউডে থাকবে।’

‘তার মানে সবার মাথার উপর একটি করে কম্পিউটার বসিয়ে দেওয়া হবে, এবং লোকটি টানতে থাকবে, তাইতো?’

দর্শকসারির একজনের এই মন্তব্য শুনে সকলেই হো হো করে হাসতে লাগলেন।

আরিন সাহেব একটুও বিচলিত না হয়ে বল্লেন ‘ঠিক সেরকমটাই, তবে এই কম্পিউটারটি সবার মাথায় চড়ে থাকবে না তবে শরীরের মধ্যে প্রবেশ করানো থাকবে, যা আকারে খুবই ছোট হবে এবং মানুষ আজীবন ধরে এটি খুব সহজেই বহন করতে পারবে’

‘কিন্তু ষোল কোটি চিপ বসাতে কত খরচ হবে?’ দর্শক সারী থেকে আর একজন প্রশ্ন করলেন।
‘খরচ কত হবে সেটা ঠিক এই মূহুর্তে বলতে পারবনা, তবে এই টুকু বলতে পারি, এদেশে একটি সেতু তৈরী করা হচ্ছে যার ব্যয় প্রায় ত্রিশ হাজার কোটি টাকা, বিজ্ঞানের উন্নয়নের ফলে সেতু চালুর দশ বছর পরে এই সেতুর প্রয়োজন থাকবে কিনা সেটা সময় বলে দেবে। আমি যদি বলি এ দেশে বছরে প্রায় দূর্ণীতি হয় ৫০ হাজার কোটি; আপনি নিশ্চয় এ বিষয়েও দ্বিমত পোষণ করবে না, দ্বিমত পোষণ করলেও এই কারণে করবেন যে এই টাকা ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। স্যার জানেন, প্রতিনিয়ত টাকা ছাপাতে বছরে কোটি টাকা খরচ করা হয়ে থাকে। আমি শুধু এইটুক বলতে পারি যে, এই প্রকল্পের খরচ এসবের চেয়ে বেশ কম।’

চার (শেষ)
প্রায় দুই মাস পূর্বে আরিন সাহেবের আইডিয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছিল। যেখানে বলা হয়েছিল আরিন সাহেবের কোম্পানি ইন্টেল ইন্টারন্যাশানাল থেকে চিপ সেট আমদানী করবে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠান দিয়ে সফ্টওয়্যার ডেভেলপ করবে এবং বাংলাদেশে সফল ভাবে বাস্তবায়ন করার পর পৃথীবির বিভিন্ন দেশে এটি ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে। ইন্টারন্যাশনাল পেটেন্ট নেওয়ার পর এটি বিশ্বের যে দেশেই বাস্তবায়ন হোক না কেন সেখান থেকে সেই বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান আরিন সাহেবের প্রতিষ্ঠানকে রাজস্ব শেয়ার করতে বাধ্য থাকবে। সুতরাং সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর থেকে আইডিয়াটা বাস্তবায়নের জন্য যে খরচ হবে সেটা খুব সহজে মন্ত্রণালয়কে ফেরত দেওয়া যাবে। যদিও ইনোভেটিভ আইডিয়া হিসেবে এটি বাস্তবায়ন করার জন্য মন্ত্রণালয় প্রকল্পের খরচ অনুদান হিসেবে দিতে পারে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, আরিন সাহেবের কোম্পানি ও ইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল এর মধ্যে গড়ট স্বাক্ষরের প্রস্তুতি হিসেবে মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এর আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, সচিব, ইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল এর সিনিয়র একজন কর্মকর্তা এবং আরিন সাহবে ও জামিল সাহেবের উপস্থিতে প্রেজেন্টশন উপস্থাপন করা হয়েছে। আরিন সাহেবের প্রেজেন্টেশনকে সকলকেই খুব প্রশংসা করলেন এবং তার সমস্ত আইডিয়া বাস্তয়নের জন্য মাননীয় মন্ত্রী নিজে দায়িত্ব নিলেন এবং সব ধরনের সহযোগতিার প্রতিশ্রুতি দিলেন এবং সকলকে জানিয়ে দেওয়া হলো এটি বাস্তবায়নের জন্য খুব শিঘ্রই সকলকে আনুষ্ঠানিক ভাবে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। জামিল সাহেব আরিন সাহেবের উপর প্রচন্ড খুশি হলেন এবং তাকে প্রাপ্য সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন কিন্তু আরিন সাহেব সব সমই খুশি প্রকাশে সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন বলা যেতে পারে রক্ষণশীল নীতি অনুসরণ করে থাকেন এখনও তাই করলেন।

প্রায় দুই মাস পরে প্রতিষ্ঠানের সিইও হিসেবে জামিল সাহেব বরাবর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের খাম দেখেই জামিল সাহেব প্রচন্ড উত্তেজনা অনুভব করলেন। তিনি উচুস্বরে আরিন সাহেবকে ডাকলেন। খামটি খুলতে শুরু করলেন। চিঠিটি নিয়ে জামিল সাহেব পড়তে শুরু করলেন। হঠাৎ করে জামিল সাহেবের মুখ দেখে মনে হলো এইমাত্র তার নিতম্বে কেউ আলপিন ঢুকিয়ে দিয়েছে। হাসি উধাও হয়ে গেছে। আঞ্চলিক ভাষায় একটি গালি দিয়ে তিনি চিঠিটা আরিন সাহেবকে পড়তে দিলেন।

‘মি. জামিল সাহেব আমরা আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রোপোজালটা ভালভাবে স্টাডি করেছি। তাতে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, দেশের আর্থিক দূর্নীতি দমনের নামে আপনাদের যে আইডিয়া তা বাস্তবায়ন হলে আমাদের দেশের সমস্ত আর্থিক লেনদেনের তথ্য অন্যের হাতে চলে যেতে পারে এবং দেশের আর্থিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে সুতরাং এহেন কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় যে কোন প্রকার সহযোগিতা করার অপারগতা প্রকাশ করছে। শুধু অপরাগতা প্রকাশ করছে তাই নয় এহেন কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন যদি কোন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক করার চেষ্টা করা হয় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানকে দেশবিরোধী হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং তাদের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে সেই প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

পরের দিন—
আরিন সাহেব গতকাল সন্ধ্যায় আমার কাছে ফোন আসে, সেই ফোনের প্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত। আমি খুবই দু:খিত, এটা বল্লে খুবই কম বলা হবে যে এই প্রতিষ্ঠানকে আপনি অনেক কিছু দিয়েছেন বরং বলব আমাদের এই প্রতিষ্ঠান যে এত বড় হয়েছে তারজন্য আপনার অবদানই প্রধান ভূমিকা রেখেছে। তাই আপনাকে খুব কষ্টের সাথেই বলতে হচ্ছে যে, আপনি আগামীকাল থেকে আর অফিসে আসবেন না। অবশ্যই আপনাকে এখান থেকে যাওয়ার সময় ছয় মাসের বেতন ও আপনার সমস্ত পাওয়না মিটিয়ে দেওয়া হবে। আশাকরি গ্রামে গিয়ে সেই টাকা দিয়ে আপনি ভালমত চলতে পারবেন।

গ্রামে গিয়ে আমি ভাল থাকব সেটা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই কিন্তু স্যার আপনি আমাকে গ্রামে চলে যাওয়ার কথা কেন বলছেন? আমি কেন বলছি সেটা বুঝতে আপনার মত বুদ্ধিমান লোকের সেটা বুঝতে একদম সমস্যা হবার কথা নয়। আরিন সাহেবের বুঝতে কোন সমস্যা হলো না যে, আজ তার কোন সেন্স অফ হিউমার কোন কাজে আসবে না।

-সমাপ্ত–

মানবতা মুক্তিপাক

মানবতা মুক্তি পাক।
নিউজিল্যান্ডের
মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের পাহারা দিচ্ছেন মানবতার সেবা করা মানুষ। আসলে সেবাই পরমধর্ম” এই শব্দ থেকে অনেককিছু শেখার আছে” ধর্ম যার যার প্রকৃতপক্ষে সবাই মানুষ। মানবতা মুক্তিপাক সকলের নষ্ট চিন্তা থেকে কট্টরপন্থী মনোভাব থেকে সকল প্রকার বৈষম্য থেকে সকল প্রকার বিশ্বাস অবিশ্বাস থেকে এই হোক কামনা।

এখন আসল কথায় ফেরা যাক….
ধর্ম যার যাঁর আসলে সবাইতো মানুষ- সেবাইতো প্রকৃতির পাওয়া শ্রেষ্ঠ ধর্ম এখন মানুষ যার আশ্রয়ে প্রার্থী হোক না কেন যাঁর সেবাই করুক না কেন। যাঁর ইশারায় চলুক না কেন। মানুষের সাথে মানুষের কোনো পার্থক্য আছে কি। চামড়ার চেহারার পার্থক্য কোনো পার্থক্য নয় বর্ণ কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করার কথা নয়

কারো শরীরের চামড়া সাদা কিম্বা কালো তাতে কি? তাঁর ভিতরের হাড় মাংস রক্ত শিরা উপশিরা সবইতো এক। সবার রক্তের রং তো একই। পার্থক্য থাকতে পারে কর্মে ধর্মে বিশ্বাস থাকতে পারে একেক রূপ তাতে কি পার্থক্য থাকতে পারে পোশাকের অর্থের বাড়ি গাড়ির কিন্তু কেউ তো ছোট নয়। কেউ তো মানুষ থেকে অন্য কোন প্রজাতির নয়। মানুষের কর্মে পশুর আচরণ থাকতে পারে বৈষম্য থাকতে পারে সেটিই প্রকৃত সমস্যা। চিন্তা চেতনা আর শ্রেষ্ঠত্বের দৌড়ে যে মানুষ নিজেকে উজানে নিয়ে যাওয়ার সাধনা করে সেই আসলে সেই বৈষম্যের প্রথম উত্তরসূরী।

মানুষের কর্ম ঘৃণিত হতে পারে তবে মানুষ ঘৃণিত নয়। পৃথিবীর সকল মানুষ সমান সেখানে জাতিভেদ থাকতে পারে সম্প্রদায়ের ভেদ থাকতে পারে কিন্তু দিনশেষে সবাই তারা মানুষ। সবার রক্তের দাগ এক। কেউ কাফের না কেউ মোনাফেক না সন্ত্রাসী না খুনি না এরা সবাই তাঁর কর্মের তাঁর নিজ নিজ কর্মের প্রতিশব্দ নিয়ে এগিয়েছে। প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয় আছে তাঁর প্রপার ব্যবহার যখন হয় তখনই মানুষ শ্রেষ্ঠ হয় সুন্দর হয় সনামধন্য হয়।

মানুষ কজন মানুষকে চেনে মানুষ তাঁর নামে পরিচিত হয়। মানুষ তাঁর কর্মে পরিচিত হয়। ধনি গরিবের এই শব্দের ব্যবধান মানুষকে ছোট করতে পারেনা। অর্থসম্পদের বৈষম্যের জন্য মানুষ দারিদ্র্পিড়ীত হতে পারে একজন ক্ষুধার্ত মানুষও মানুষ- আবার একজন ধার্মিক ও মানুষ।মানুষ মানুষকে পার্থক্য করতে পারেনা। জাতপাতের আবরণ মানুষকে পার্থক্য করতে পারেনা ধর্মের দোহাই দিয়ে কোনো ধার্মিক মানুষের পার্থক্য করতে পারেনা। শক্তিশালী মানুষও যেমন মানুষ দুর্বল রোগভোগে থাকা মানুষও মানুষ। হাজার কোটি টাকাওয়ালাও মানুষ আবার দিনমজুর ভিক্ষুকও মানুষ।

মানুষ তাঁর কর্মের জন্য শব্দের তর্জমায় বিভক্ত বলেই তারা তাদের মনুষত্যবোধের বোধিসত্ত্বায় আবর্তিত বোধিধর্মকে ভুলে যায়। যাঁর ফলপ্রসূতঃ আমরা এই আজকের পৃথিবীতে নিসংশয় নৃশংসতা বর্বরতা সাদাকালোয় ভেদাভেদ ধনি গরীবের ভেদাভেদ জাতপাতের ভেদাভেদ। যা কিছু ভেদাভেদ তাঁর সবই জাহির করে শ্রেষ্ঠত্ব। এই শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই যেদিন থেকে মানুষের ভিতরে আর থাকবেনা সেদিন থেকেই মানুষ মানুষকে মানুষ বলেই অনুসন্ধান করবে। সেদিন থেকেই আর কোনো দেশ থাকবে না। জাতি ও বর্ণের পার্থক্য থাকবে না। মানুষ মানুষের জন্য এই সত্যিটাইই পৃথিবীর বুকে ফলাতে পারেন নতুন এক আলোর দিগন্ত।

______________________
মার্চ ১৯, ২০১৯ বিকালঃ ৪:১৫ মি.

জাগো মুসলিম

জাগো মুসলিম জাগো, জাগো মুসলিম জাগো
এসেছে সময়ে ডাক এসো হাতে হাত রাখো।

ওয়াদার নামে ওরা করে আয়না বাজি
টাকার জোরে ওরা করে শুধু কারসাজি।
ওরা দালাল ওরা ভন্ড,
ওরা দেশটাকে করেছে নষ্ট।

ইসলাম নয় জঙ্গি ইসলাম নয় সন্ত্রাস
ইসলাম মানে শান্তি নেই কোন ত্রাস।

মনে মনে এই বিশ্বাস শুধু রাখো।

মুখোশের আড়ালে ওরা ছদ্মবেশী দানব
হিংস্রের ন্যায় মেরে যাচ্ছে অসহায় মানব।
ওরা হিংস্র ওরা দুষ্টু,
ওরা করছে এই বিশ্ব রাজত্ব।

ইসলাম নয় সাদা ইসলাম নয় কালো
ইসলাম মানে ভ্রাতৃত্বের এক আলো।

মনে মনে এক প্রভুর ছবি আঁকো।

বিঃদ্রঃ এটা ইসলামী জাগরণ সংগীত। তবে হয়েছে কি না জানি না, আপনাদের পরামর্শ কামনা করছি।

১৭/০৩/১৯

অনুভূতিগুলোর বিশ্রাম- “জন্ম থেকে জ্বলছি”

জন্ম থেকে জ্বলছি! হ্যা তাইতো আগুনের সৃষ্টি হল সব কিছু সবাইকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারা। বহু কাল আগে তখন অবশ্য খুব ছোট একবার আমার এলাকায় এক বাড়ীতে আগুন লাগে। কিছুটা স্মরণে আছে আমরা ভয়ে আমাদের বাসা হতে যতটুকু সম্ভব জিনিসপত্র গুছিয়ে অন্যত্র সরে গিয়েছিলাম। তখন মনে এক আতঙ্ক কাজ করেছিলো। বিশাল বাড়ীটি প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জ্বলে। তখন যোগাযোগের খোলা মাঠ থাকলেও দ্রুত আগুন নেভাতে সক্ষমতা ছিলো না ফায়ার সার্ভিসগুলোর। এর পর শীতলক্ষ্যা নদীর ওপারে পারটেক্স গ্রুপের একটি ফ্যাক্টরী পুড়েছিলো এপাড় হতে দেখেছি আগুনের লেলিহান শিখা। আরেক বার বর্তমান এ ইপিজেড পূর্বে এশিয়ার বৃহত্তম আদমজী জুট মিলস এ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আদমজীর ভিতরে রোডের দুই সাইটের বড় বড় গাছগুলোতে আগুন জ্বলে উঠে। দূর হতে দেখেছি আগুনের তীব্রতা।কি ভয়ংকর ভাবে শব্দ করে জ্বলছিলো গাছগুলো।

আজকাল বাসা বাড়ীতে আগুন লাগার ঘটনা তেমন একটা শুনতে পাই না। তবে দেশের বস্তিগুলোতে কয়েক দিন পর পর শুনতে পাই আগুন লাগার বীভৎস কাহিনী। বস্তিগুলোতে আগুন লাগার বেশীর ভাগ কারনগুলো সু-স্পষ্ট কিন্তু কিছুই বলার নেই। এ দেশে কারনে অকারনে বিনা নোটিশে বস্তি পুড়িয়ে দেয়া এখন সবার কাছে একটি স্বাভাবিক ঘটনা। দেশে বর্তমানে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে গার্মেন্টস ও বিভিন্ন শিল্প কল কারখানাগুলোতে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে দেশের প্রধান অর্থকারী সেক্টর গার্মেন্টগুলোতে আগুন লাগা যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।

ইউরোপের জঙ্গলগুলোতে আগুন লেগে বন উজার হয়ে যায় তার অবশ্য তাদের পরিবেশ বা আবহাওয়া নষ্টের কারন থাকতে পারে কিন্তু আমাদের নাতিশীতষ্ণ ষড় ঋতু দেশে যখন বনে আগুন লাগে তখন এখানে পরিবেশ নয় নিজ স্বার্থ হাসিলের কারন থাকে। প্রায় সময় নিউজ আসে সুন্দর বলে আগুন লেগেছে। আসলে কি তাই? নাকি কেউ আগুন লাগিয়ে দেয় বা দিয়েছে।

দেশে উল্লেখযোগ্য বা আলোচিত আগুন লাগার কিঞ্চিৎ আলোকপাত করার চেষ্টা করছি।
@১৯৯০ সালের ১৭ ডিসেম্বর সারেকা গার্মেন্টে আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন।
@১৯৯৫ সালে রাজধানীর ইব্রাহিমপুরের লুসাকা অ্যাপারেলসের কারখানায় নিহত হন ১০ গার্মেন্টকর্মী।
@১৯৯৬ সালে ঢাকার তাহিদুল ফ্যাশনে ১৪ জন এবং সানটেক্স লিমিটেডের কারখানায় ১৪ জন আগুনে পুড়ে মারা যান।
@১৯৯৭ সালে ঢাকার মিরপুরের তামান্না গার্মেন্ট এ রহমান অ্যান্ড রহমান অ্যাপারেলস কারখানায় নিহত হন ৪৯ জন।
@২০০০ সালে ২৫ নভেম্বর নরসিংদীর চৌধুরী নিটওয়্যার লিমিটেড গার্মেন্টস নিহত হন ৫৩ জন।সেই বছর বনানীর চেয়ারম্যান বাড়িতে গ্লোব নিটিং ফ্যাশন লিমিটেড গার্মেন্ট এ ১২ নিহত হন।
@২০০১ সালে ৮ আগষ্টে মিরপুরে মিকো ফ্যাক্টরীতে শুধু আগুন লাগার গুজবে কান দিয়ে পায়ে পিষ্ট হয়ে নিহত হন ২৪ জন তার সপ্তাহখানেক আগে মিরপুরের কাফরুলে অগ্নিকাণ্ডে ২৬ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিল।
@২০০৪ সাল এ ডিসেম্বরে নরসিংদীর শিবপুরে গার্মেন্ট কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৪৮ শ্রমিক নিহত হন।একই বছর ৩ মে মিসকো সুপার মার্কেট কমপ্লেক্সের এ নিহত হন ৯জন।
@ ২০০৫ সাল এ নারায়ণগঞ্জের সান নিটিং নামের একটি গার্মেন্টসে নিহত হন ২০ জন।
@ ২০০৬ সালে চট্রগ্রামে কে টি এস অ্যাপারেলস নিহত হন এ ৬৫ জন,একই বছরে ৯ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের যমুনা স্পিনিং মিলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হন ৬ জন।এছাড়াও মার্চ মাসে সায়েম ফ্যাশন লিমিটেডে আগুনে ৩ জন শ্রমিক নিহত হন।
@ ২০১২ সালে তাজরীন গার্মেন্টসে আগুন লেগে নিহত হন ১১১ জন।একই বছরে গাজীপুর সদরে গরীব এন্ড গরীব সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে ২১ জন নিহত।একই বছরে গাজীপুর আশুলিয়ায় হা মীম এ নিহত হয় ৩০ জন।
@ ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে ৭৮ হাজার ৯৫টি, নিহত হয়েছেন ১১২৫ জন, আহত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৩৩৫ জন।
@২০১৪ সালে ১৭ হাজার ৮৩০টি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নিহত হন ৭০ আর আহত হয়েছিলেন ২১০ জন।
@২০১৫ সালে ১৭ হাজার ৪৮৮টি অগ্নিকান্ডে নিহত ৬৮ জন, ২১৬ জন
@২০১৬ সালে ১৬ হাজার ৮৫৮টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে এতে নিহত হন ৫২ জন, আহত হন ২৪৭
@২০১৭ সালে ১৮ হাজার ১০৫টি অগ্নিকান্ড ঘটে, এতে নিহত হন ৪৫ জন, আহত হন ২৬৯ জন,
@ ২০১৮ সালেই দেশে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে ১৯ হাজার ৬৪২টি।তাতে নিহত হয় ১৩ জন,আহত হয়েছেন ৬৬৪ জন।
আলোচিত আগুন লাগার ঘটনাগুলোর মধ্যে নীমতলীর ট্র্যাজেডি ও বর্তমান আলোচিত পুরান ঢাকার চকবাজার ট্র্যাজেডি।

২০১০ সালের ৩ জুনে পুরনো ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের কারখানায় আগুন ধরে নিহত হয় প্রায় ১২৪ জন। চলছিল বিয়ের আয়োজন। কনেরা চলে গেলেন পার্লারে। বরযাত্রীরা চলে এলেন সন্ধ্যার আগেই। হঠাৎ আগুন লেগে গেল। কেমিক্যালের কারনে আগুনের তীব্রতা এত বিকট ছিলো যে মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। সেই বিয়ে বাড়ীর প্রায় ৪১জন মেহমান অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হন।

বসত বাড়ীর আনাচে কানাচে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ কেমিক্যালের স্টক বিক্রয় এর কারনে আগুনের ভয়াবহতা বাড়ে। ঘটনাটার আট নয় বছর পরও সেখানের ক্ষত বা সেই সময়কার ভয়াবহতার চিহ্ন এখনো লেগে আছে অথচ সেখানকার বাসিন্দা ব্যাবসায়ীরা সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ সব কেমিক্যালস এর ব্যাবসা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার হাজার চেষ্টা করলেও জনগণের সহযোগিতা ছাড়া এ সব জীবনের ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যালের ব্যাবসা বানিজ্য অন্যত্র সরানো কষ্টকর। এ ক্ষেত্রে সরকারের কিছু গাফলতিও ছিল।

নীমতলির এ ভয়াবহ ট্র্যাজেডির কয়েক বছরের মাথায় যেন সিনেমা স্টাইলে ঘটে গেল পুরান ঢাকা চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। চকবাজার এমন একটি এলাকা যেখানে দেশের এমন কোন ব্যাবসা নেই যে, না আছে। বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের বিভিন্ন প্লাষ্টিকের খেলনা, বিদ্যুত ও অন্যান্য সরঞ্জামাদির তৈরীর কাঁচামাল, আতশঁবাজি, ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের ক্রয় বিক্রয়ের মুল কেন্দ্র। একই সাথে বসবাস করছেন অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে সেখানকার বাড়ীওয়ালারা এসব কেমিক্যাল রাখার জন্য বেশ উচ্চ মুল্যে বাসা ভাড়া দিয়ে থাকেন। অথচ ভাবলেন না এই লোভ তাদের জন্য একদিন না একদিন কাল হয়ে আসবে। সেই কাল রাতটি ছিলো ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ বুধবার দিবাগত রাতে তিন’শ বছর আগের মোঘল আমলের স্মৃতি বিজরিত পুরান ঢাকার চকবাজার এলাকার একটি চারতলা ভবন থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে যা পরবর্তীতে আশ পাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়ে খুবই দ্রুত।তবে আগুনের এ সূত্রপাত নিয়ে এখনো লোকজনের মাঝে সন্দেহের গুঞ্জন আছে।

প্রত্যক্ষদর্শীর মতে যতটুকু জানা যায়, পরদিন ২১ ফেব্রুয়ারী সহ সরকারী তিন দিনের ছুটি। স্বাভাবিক ভাবে ব্যাবসায়ীক, পথ চারীর বিভিন্ন পিকআপ ভ্যানগাড়ী সহ প্রায় শতাধিক গাড়ীর ভিড় ছিলো, ছিলো আগত, কর্ম শেষে ফেরত যাওয়া অসংখ্য মানুষজনের ভিড়। একটি সিলিন্ডারের গাড়ী বুধবার রাত প্রায় ১০টা ১০ মিনিটে নন্দ কুমার দত্ত সড়কের শেষ মাথায় মসজিদের পাশে ৬৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে এসে থামার সাথে সাথে হঠাৎ বিকট শব্দে একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে উপরে উঠে নীচে পড়ে আশপাশে ক্যামিক্যালের দোকানেগুলোতে তা ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্রতায় এতোই ছিলো যে নীচে যে সমস্থ গাড়ী ছিলো রিক্সা পিকাপ ভ্যান এবং সাধারণ জনগণ তৎক্ষণাত জ্বলে পুড়েঁ ছাইঁ হয়ে যায়। যতটুকু জানা যায় এ ঘটনায় প্রায় ৭০/৮০ জন নিহত হয়েছেন এবং অসংখ্য লোক আহত সহ ব্যাবসায়ীক ভাবে প্রচুর ক্ষয় ক্ষতি হয়।

সেদিন টিভিতে আমি ২১ ফেব্রুয়ারীর শোকাহত দিবসটির লাইভ দেখতে টিভি অন করতেই প্রথম আগুন লাগার লাইভ নিউজটি চোখে পড়ে। অবাক হয়ে শুধু দেখেই যাচ্ছি সেখানকার মানুষজনে ভয়াবহ পরিস্থিতি, দমকল বাহিনীর কষ্টকর উদ্ধার কাজ। সেই রাতে আর ২১ ফেব্রুয়ারীর শোকাহত রাতে অনুষ্ঠানগুলোর লাইভ দেখা আর হল না। হয়তো আমার মত আরো অনেকে সেই ভয়াবহ রাতটির কথা ভুলবে না যা কিনা একটি জাতীয় শোকাবহ রাতে আরেকটি শোকাহত রাতের জন্ম হল। অথচ দুঃখের বিষয় হল তবুও বাঙ্গালী মানুষ হল না। সরকার যখন সচেষ্ট চকবাজারে ক্যামিক্যাল স্থানান্তরে তখন সেখানকারই কিছু অবৈধ ব্যাসায়ী বাধা দেন মিছিল করে। যেন ভাবটা এমন যে তাদের কাছে অর্থই সব। অর্থের জন্য এ সব অকাল মৃত্যু যেন তাদের কাছে নগণ্য।

দেশটা জন্ম থেকেই জলছে, জ্বালানো পুড়ানোর মধ্যে দিয়েই একটি লাল সবুজ পতাকার জন্ম। কখনো বঙ্গবন্ধুকে স-পরিবারে হত্যায় জ্বলেছিলো স্বদেশ, কখনো কু্-স্বৈরশাসনে জ্বলেছে দেশ জনতা, কখনো বা সুবিবাদী রাজাকার আলবদরের হাতে ছিলো স্বদেশ জ্বালানোর মশাল। স্বাধীনের এতোগুলো বছর পরও যখন দেশের উন্নয়ণের শির উদিয়মান তখনো আমরা সরকারের জনকল্যায়ণকর বিভিন্ন উন্নয়নে করি অ-সহযোগীতা যা প্রক্ষান্তরে আমাদের ভাবায়-আমরা যেন কেবলি জ্বলতেই অভ্যাস্ত-ভালবাসি।

তথ্য ও ছবি
অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যম।

শিশুদের উপর চাপিয়ে দেয়া অতিরিক্ত বই প্রসঙ্গে

আর মাত্র কয়েকদিন পরই আমাদের কোমলমতি শিশুরা নতুন নতুন বই হাতে স্কুলে যাবে। আহা নতুন বইয়ের নতুন পাতার গন্ধ কতইনা অসাধারণ ! শৈশব কালের কথা মনে পড়ে যায়। এত আনন্দের ভেতরে নিরানন্দ এসে ভর করে যখন নিয়মের ব্যতিক্রম হয়। সরকারি প্রাইমারী স্কুল বাদে সারাদেশের স্কুল বা কিন্ডার গার্টেন গুলোতে শিশুদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয় শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলামের বাইরের বই অর্থাৎ স্কুল কর্তৃপক্ষের কারিকুলামের বই। অথচ শিক্ষা বোর্ড বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিবছরই প্রজ্ঞাপন জারি করে থাকে এজন্য যে, স্কুলে এনসিটিবি কর্তৃক অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অন্য কোন বই পড়ানো যাবে না। যথারীতি এবারও তাই করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবারের মতো এবারও ক্লাসে পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য কোন বই পড়ানো যাবে না মর্মে প্রজ্ঞাপন – প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখের স্মারক নং: ৩৮.০১.০০০০.১৪০.০৯৯.০২৫.২০১১-৩৩৭/৬৪৫(৩) জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপন সমূহের স্মারক নং ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, এ প্রজ্ঞাপন কেবল এবারই নয় আগেও এই কাজটি হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইতোপূর্বে যে প্রজ্ঞাপন সমূহ জারি করা হয়েছে তা নিম্নরূপঃ
(ক) প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখের স্মারক নং –৩৮.০০.০০০০.০০৮.৯৯.০২৮.১৮.৮৯৯

(খ) জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ও ৩১/১২/২০১৭ তারিখের স্মারক নং–প্র.শা.৫৫৮/০৯/১৯৬৪/১(৯) এবং (গ) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখের স্মারক নং: ৩৮.০১.০০০০.১৪০.০০৬.০১৩.২০১৩-১৫(৬৪৫)

এবার চলতি ২০১৮ সনে যা হয়েছে :

(ঘ) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ২০ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখের স্মারক নং: ৩৮.০১.০০০০.১৪০.০৯৯.০২৫.২০১১-৩৩৭/৬৪৫(৩)

কিন্তু ক’জনে তা মানছে। কোন একটি স্কুল বা কিন্ডার গার্টেন তা মানছে না। এর পেছনে একটি কারণ আছে অবশ্যই। আর তা হলো কমিশন। বই মান সম্মত হোক বা না হোক প্রতিবছর প্রকাশনীগুলো স্কুল গুলোর সাথে যোগাযোগ করে মোটা অংকের ডোনেশন দেয় যাতে তাদের বই পাঠ্য করে দেয়া হয়। সে বিষয়টি স্কুলের টিচারদের জন্য ভালো হলেও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য মোটেও ভালো নয়। এতে তাদের উপর বিশাল চাপের সৃষ্টি হয়। সরকারি পাঠ্যবইয়ের বাইরে সাত থেকে আটটি বই ব্যাগভর্তি নিয়ে যাবার সময় ছোট ছোট কোমলমতি ছাত্র–ছাত্রীরা কুঁজো হয়ে যায়। এত এত্ত পড়া তথা স্কুলের পড়া,হাউজ টিউটরের পড়া সব মিলিয়ে বাচ্চাদের উপর এতটাই শারীরিক ও মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় যে তারা খেলাধূলার সময়টুকু পায় না। অথচ পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধূলা অত্যন্ত জরুরী। শিশুদের শারীরিক মানসিক বিকাশে খেলাধূলা গুরুত্বপূর্ণ। আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ হলেও স্কুলগুলোর সুবিধার্থে অতিরিক্ত চাপদিয়ে তাদের মেধাকে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। ফলে বিপুল পরিমান ছেলে মেয়ে পড়াশুনার স্কুলগন্ডি পেরুবার আগেই ট্র্যাক থেকে ছিটকে পড়ে। যা জাতির জন্য খুব ক্ষতিকর। বিগত পিএসসি ও জেএসসি দুটি পরীক্ষায় দেখা গেছে প্রায় এক লক্ষ ষাট হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়নি। যা খুব একটা ভালো লক্ষন নয়।

এখনই সময় কোচিং সেন্টারগুলোর মতো কিন্ডার গার্টেন গুলোর দিকে নজর রাখা এবং বিগত সময়ের ভুলগুলো সংশোধন করা। এখনই সময় শিক্ষা সংশ্লিষ্ট এই সার্কুলার বা প্রজ্ঞাপনটির যথাযথ বাস্তবায়ন করা। একটি সুন্দর ও সুস্থ সমাজ ও দেশ গড়তে শিশুদের প্রতি নজর দেয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ আর এই কোমলমতি ছোট শিশুরাই একদিন এই দেশার হাল ধরবে।

পারমাণবিক মৃত্যুফাঁদ …

পারমাণবিক মৃত্যুফাঁদ …

আমাদের মত রাশিয়াও তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। মুখে, চেহারায় ও কাগজে কলমে সুপার পাওয়ায়ের তকমা থাকলেও ভেতরের খবর যারা রাখে তাদের কাছে রাশিয়া স্রেফ উন্নত ভার্সনে আমাদেরই কার্বন কপি। বিশেষ করে জোর করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করার মত সূক্ষ্ম কাজে। সেই রাশিয়ার সহযোগিতায় সমুদ্র বিজয়ের মত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের নব্য রাজতন্ত্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র! খবরটা পড়েই একদল মগজ-কানা দলীয় কিন্তা-কুন্তির দল উল্লাস শুরু করে দিয়েছে। অবৈধ রুটি-হালুয়ার জারজ মশা-মাছির দল ভন ভন করছে প্রকল্পের আশপাশে। দেশের খেটে খাওয়া কোটি কোটি সাধারণ মানুষ হয়ত কোনদিনও জানবে না কোন ভয়ংকর মৃত্যু-কুপে তাদের ঠেলে দেয়া হচ্ছে। চেরনোবিল অথবা ফুকুশিমা তাদের জন্য দিল্লি অনেক দূরের মতই রূপকথার গল্প। তাদের জানা থাকার কথা নয় অণু পরমাণুর ভয়াবহতা। হয়ত একদিন সকালে ঘুম হতে উঠে দেখবে তাদের মাথার চুল উঠে যাচ্ছে। চামড়া কুচকে যাচ্ছে। চেহারা বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। সন্তান জন্ম নিচ্ছে শরীরে ক্যান্সার নিয়ে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধেয়ে যাচ্ছে স্থায়ী বিকলাঙ্গ ও পঙ্গুত্বের দিকে। যেদিন বুঝতে পারবে তাদের সর্বনাশের ভয়াবহতা, ততদিনে রাজা-রানী, রাজপুত্র-রাজকুমারীর দল পালিয়ে যাবে নিরাপদ আশ্রয়ে।

পৃথিবীর সবচাইতে জনবহুল ও পা হতে মাথা পর্যন্ত চোর ও চুরির রাজত্বে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেহাতই আত্মহত্যা। দুর্ঘটনা দুরে থাক, কেবল টক্সিক ওয়েস্টই জাতির অস্তিত্বকে পৃথিবীর মানচিত্র হতে মুছে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া সহ পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলো যেখানে পিছিয়ে আসছে সেখানে আমরা, কেবল জয়ের তিলক কপালে লাগানোর লালসায় এগিয়ে যাচ্ছি গণহত্যার দিকে। জাতির অস্তিত্বকে ইনস্যুর করতে কিছু প্রস্তাব রাখছি যার মেরিট এ মুহূর্তে হাস্যকর মনে হতে পারে। কিন্তু যেদিন রূপপুর সহ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে কান্নার রোল উঠবে সেদিন বুঝতে সহজ হবে এসব প্রস্তাবের যথার্থতাঃ

– রাজতন্ত্রের রাজপ্রাসাদ পাবনার রূপপুর ও হেমায়েতপুরের মাঝামাঝি কোন এক জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে।
– রাজকুমার ও রাজকুমারীদের তাদের ভিনদেশি স্ত্রী-স্বামী সহ স্থায়ীভাবে ঐ রাজপ্রাসাদে বাস করার আইন করতে হবে।