বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

নারী দিবসের কবিতা

দিবসকে পাশে রেখে আমি খুঁজি তরল আকাশ
যে আকাশ চিরদিন ছায়া হয়ে থেকে যাবে পাশে,
পাখিদের গানে গানে, পুষ্পদের
স্বতন্ত্র বিন্যাসে
এ জীবন সম্মিলিত- এ জীবন
প্রেমের প্রকাশ।

তোমাকেই ধ্যানী জেনে, পাপড়িগুলো দেবো প্রিয়তমা
অক্ষরের অনুরাগে যে ঋতু অপেক্ষায় থাকে
বসন্তে সুবাস ছড়ায়, বর্ষায় ঢেউচিত্র আঁকে
জলাচলে এই প্রেম চিরদিন রেখে দিও জমা।

নির্মাণের আদিকলা, সৃষ্টির এই যে পেখম
সেজে আছে স্তরে স্তরে কল্যাণের
জন্মদ্যুতি হয়ে
মানুষই করেছে সব, শ্রম-ঘাম মাটিতে মিশিয়ে
নর-নারী, একে অন্যে মিশে মিশে
খুঁজেছে পরম।

ভূবনগ্রহিতা তুমি,তোমাকে নমস্য
মানি- নারী!
এই দেখ, রুয়ে যাচ্ছি জন্মাবধি
গোলাপের সারি।

#
নিউইয়র্ক √ ০৮ মার্চ ২০২৩

এই দেশের বুকে

শরীরে শরীর খেলা করে উন্মাতাল ঢেউয়ের ছন্দে।
হৃদয়ে হৃদয় খেলা করে মন খুশিতে নাচে,
মাছরাঙ্গা ডুব দিয়ে যায় মাছ পালিয়ে যায় জলে।
কলমি পাতা ছুঁয়ে প্রজাপতি বসে শর্ষেফুলের বুকে,
নদীর ঢেউ ছলাত ছলাত বৃষ্টিঝড়ে রিমঝিমিয়ে।
ডিমের কুসুমের মতো লাল সূর্য ডুব দেয় সাগরের বুকে,
মায়াবী জোছনায় আকাশ সেজেছে দারুণ।

সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে যেন রংতুলিতে আলপনা আঁকে,
সলতের মতো আলো এসে ঠিকরে পরে প্রেয়সীর গালে।
এই মাঠ সেই মাঠ ঘুরে, এই ফুল সেই ফুল খেয়ে,
মৌমাছি উড়ে এসে বসে মধু দেয় চাকে।
বুনো শিয়াল ডেকে ডেকে চারপাশ কাঁপিয়ে,
জানান দিয়ে যায় রাত হয়েছে ঢের।

রাজত্ব এখন তাদের ঝোপঝাড়ে,
রাত গত হয়ে আবার দিন ফিরে আসে।
বাঁশঝাড়ের মাথা ডিঙ্গিয়ে প্রভাতের সূর্যটা হাসে,
দীঘির জলে রোদ নামে পানকৌড়ি ডাকে গলা উঁচিয়ে।
গরুর পাল লয়ে রাখাল ছুটে চলে ধুলো মাড়িয়ে …

ফিরিয়ে দিলে প্রিয়া

তোমাকে ভালোবাসি বলে
ফিরিয়ে দিয়েছিলাম তারে
জানিনা আজ কোন ভুলে
তুমি ফিরিয়ে দিলে মোরে।
এখন আমি মুক্ত বিহগ শূন্য গগনে
উড়তে পারি দিকবিদিক দিগন্তে।
ঘরছাড়া পাখির মতো নেই পিছু টান
আজ হলো ভালোবাসার অবসান।

পরবাসী ভালবাসা

tyui

আমি গরম দেশের মেয়ে
এপ্রিল থেকে আগস্ট পেরিয়ে
যখন চৌচির হতে শুরু করে মাটি
তখনও থাকতে জানি
নির্বিকার- জল কাদায় হাঁটাহাঁটি।

আমার ছেলেও তেমন
অথচ দূরদেশ ওকে বার্তা পাঠালো,
এই দেশে আয়, আয় ছেলে আয়-
অমন হিমের ভেতরে ও’ নির্দ্বিধায় হেঁটে গেল
আমাদের ছেড়ে কেমন নিরুপায়, ভবিতব্য সনাতন।

ভিডিওকলে ফারের টুপি চিত্রিতমুখ
আর অভিনয়ের হাসিমাখা ছবি দেখে
ঠিকই টের পাই
শীতের দেশের উত্তাপহীনতা,
কিছুই করার থাকেনা, এপারের দীনতা।

মাঝরাতে কুকুরের কান্না শুনি কান পেতে
মায়ের মন অনুবাদ করতে চায় যাবতীয় ভাষা,
অকল্যাণকর সব ইশারা
ছেলেটা কাজ সেরে ক্লান্ত বিছানায় শুন্য বেসমেন্টে
কি নিয়ে বাঁচি? দুরাশার দোলাচলে এক ফোঁটা আশা।

বালাই ষাট, বালাই ষাট
ছেলে আমার পরদেশ
মনে হয় সবাইকে বলি,
ও’ আমার ভীষন ভালো
রক্ত কথা বলে, নির্ঘাত।

কেবল একটু ছেলেমানুষ
নেই কোনো মন্দ অভ্যাস
ও পরদেশ, ভুল বুঝে কষ্ট দিওনা
মায়ের চোখহারা ছেলে-
আহারে পরবাস।

এই গরমেও দেখো, পায়ে মোজা আমার
সব শীত, সব তুষার বুকে জমুক নিরাকার
ছেলে, ও ছেলে, কেন তোরা পরদেশে যাস!
মেনে, বুঝে, জেনে নিস- পাথরেই কল্পিত ঘাস,
এদিকে আছি আমরা চার প্রাণ, আমরাই তোর নিঃশ্বাস…

শূন্য মুখাবয়ব

দিনে দিনে কমনীয়তা শূন্য মুখাবয়ব
আয়নায় প্রচ্ছন্নভাবে প্রকট হয়ে ওঠে
সবাইকে লুকোনো যায় আয়নাকে নয়
কোথায় গেল সেই সরল নরম মুখশ্রী ?

শীতের রক্তাক্ত আঁচড় মিলিয়ে যাচ্ছে
আকাশ বাতাস জুড়ে রৌদ্রের খরতা।
আজ কে জিতলো, কাল কে হারলো
তারই হিসেব করতে করতে উন্মুক্ত হয়
এক কারাগার, যেখানে তার বন্দীদশা।

একটা সবুজ বনিবনা

এই সন্ধ্যাপথে, একটা সবুজ বিকেল নিয়ে
বুকের বাহাসে বেঁধে রাখি আর অন্তর রঙ
যেমনি হোক সকল দূরত্বকে জানা হবে
কেন ঝরে গিয়েছিল সব সুন্দর, লজ্জামান-
কাঁচের গ্লাস থেকে জলটুকুর বনিবনা এবং

একটু পর পরই ভাত ফুটতে থাকার মতো
গাঢ় হয় সেসব ভাপ, এমন প্রস্থান মুহূর্ত
কেবল পালটে দেয় কামনা রূপ, কাকাতুয়া;
ফলে তোমার মধ্যে ঢুকে পড়ছে
অন্ধ বিশ্বাস-আয়ুর্বেদি জীবন, দীর্ঘ হাইফেন-

কিন্তু এসবের কিছুটাই আটকানো যায় না
দূর হাটে, একা। হাঁটছি-সামনেই। একটু পর পর…
তুমি যে রয়েছ বেঁচে, মৃতপ্রায় নদীর মতো!

সুখ মগ্ন অন্তর্যামী

325

নাই হলাম তোমাদের মত সুশীল
তথাকথিত ভদ্র,মননে অশ্লীল
আর নিচ্ছিদ্র মুখোশ ধারণে-
নাইবা হলাম লোলুপ অন্ধ!
আমার দারিদ্র আমারই থাক,
চাইনা সেই ধন, অর্থকড়ি
বিগলিত মনুষ্যত্বের বিনিময়ে;
কে কবে হয়েছে মহান
আমার এক চারণ কবিত্ব সমান!

জীবনের দামে কিনেছি স্বপন,
সহস্র রজনীর বিসর্জনে-
অর্জন করেছি আমার দুঃখী পদাবলীর জয়
নাইবা পেলাম রাজ সিংহাসন, যেখানে
মিথ্যের ছড়াছড়ি; উলঙ্গ নৃত্যের প্রলয়!
আমার পদ্য আমার অহংকার
সদ্য ফোটা করবীর মতন নৈবদ্য অলংকার,
তোরা থাক তোদের ক্ষুধা,মদ্য দুর্গে
রোজকার প্রেমিক বদলে; লাশ কাটার মর্গে!
লাশই তো!
মন দহনের উন্মত্ত বিভীষিকাকে
লাশের সঙ্গে তুলনা করলেও কম হয়!

আমার স্বর্গ আমার বুকে
হৃদয়ের সমস্ত অর্ঘ উজাড় করে-
যে নৈবদ্যে নিমগ্ন আমি,
আলোর সুরম্য পথ বেয়ে, পেয়ে যাই
সুখ মগ্ন অন্তর্যামী।

হে অতীত, হে মেঘের ভবিষ্যত

হে অতীত, হে মেঘের ভবিষ্যত
তুমি উড়ে যাবে বলো না—
ধীর ছায়ার মতো সাথে থাকো এবং
রাখো এই লোকালয়ে পদছাপ, কররেখা, তর্জনী
তালুতে জমে থাকা জলের মতো
টলটলে বারুদ, বিস্ফোরণ-
রাখো সবকিছু সাথে।

আমি আলো জ্বালাবো বলে যেদিন পথে নেমেছিলাম
সেদিন থেকেই তোমাকে বলছি—
আমার চোখ পাহারা দেয়া তোমার কাজ নয়।
তুমি বরং শিরদাঁড়া উঁচু করে দাঁড়াতে শিখো।

কী সুন্দর ভোরের আলো

332

লাল বেনারসি রঙ শাড়ি পরে আকাশ
দাঁড়িয়ে থাকে ঠায় ভোর হতে সকালে
কী মিহি হাওয়া! দেহ ভেসে যায় শান্তির সমুদ্দুরে
আলহামদুলিল্লাহ বলে হয় আমার দিনের শুরু।

আকাশে তাকিয়ে বলি নিঃশ্বাস ছেড়ে
নিতে পারছি নিঃশ্বাস
আল্লাহর করুণা না হলে পারতাম কী করতে
ভোরের আলোয় নিজেকে সুখী আবিষ্কার।

লাল বেনারসি আকাশের কপালে লাল সূর্য টিপ
পাখিদের ওড়াউড়ি আর হাওয়ায় আস্ফালন
জানিয়ে দেয় শীতের মৃত্যু আসন্ন
বইবে রঙ্গের হাওয়া বাংলার আকাশ জুড়ে।

নিজেকে সুখি ভেবে পার হই সকালের পথ
ব্যস্ততার ভার কাঁধে
দুপুরের আকাশে কী রঙের মেঘ উড়ে কে জানে
কর্মের ভিড়ে হারিয়ে হারাই আকাশ দেখার স্বপ্ন।

তবুও বেঁচে আছি এক পাহাড় সন্তুষ্টি নিয়ে
প্রভুর কৃপায় দৃষ্টি জুড়ে স্বচ্ছ শুভ্র মেঘের মত আলো
সে আলোয় জীবন হাঁটে তাঁর করুণা মাথায় নিয়ে
শোকর গুজার করি প্রভুর হাজার।

আকাশের বুকে হাঁটে স্বপ্ন আমার
আমি আল্লাহর নিয়ামত বুকে পুরি হরদম
কেবল চাই তাঁর দয়া, রহমত আর নিয়ামত,
জীবন পথে চাই অথৈ ধৈর্য।

.
((স্যামসাং এস নাইন প্লাস, ঢাকা)

ভোর গঞ্জনা

ভোর গঞ্জনা

রাত এলে দেহের কুঞ্জ বনে
শৈশবের ধান চাষের ঘন্টা বেজে উঠে;
ঘুম এলে স্বপ্ন ডাঙ্গার প্রেম
প্রেম ভাব-যেনো দীর্ঘশ্বাস নাকের ডগায়
ভেসে যায় মেঘ- পানকৌড়ি
সাঁতার কাটার জল কিংবা বুনোহাঁস!
এভাবেই যাচ্ছে সরগম সব
চাপটা আঘাত, রক্তপাত, ভোর গঞ্জনা-
স্বার্থপর দিনের আলো বুঝে না
গড়ে আসে সন্ধ্যা অথচ শৈশব ফিরে না।

২২ ফাল্গুন ১৪২৯, ০৫ মার্চ ২৩

পলাতকা সময়ের হাত ধরে

আজ আবার একটা তরতাজা প্রেম এইমাত্র বাসি হলো,
এখন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নতুন প্রেমিকা,
আমিও স্মিতহাস্যে ওদের অদল-বদল করে নিয়েছি;
যেভাবে অদলবদল হয় নতুন-পুরাতন লাল-নীল
কোর্তা ঠিক ঠিক সেভাবে; তবে এবার সে ধরা খাইছে,
ধরা খাইছে পলাতকা বেদুইন বেদিল সময়ের হাত ধরে!

বলছিনা গেলো বছরটা জলে গেল, একটাও পাণ্ডুলিপি
প্রস্তুত হয়নি, কবিও কবিতার মতো আমিও বর্ণবাদের শিকার;
অবশ্য বড়ো প্রেমের কাছে বুক আর পিঠ
এদের কোনোটাই কম বা অতিমুল্য নয়; ফেসবুকে
কবিতার এত প্রসব দেখে কোন এক বেরসিক পাঠক
মাথাটাই কেটে দিলে, পরে কিছু হিসেব-নিকেশ করে দেখলাম,
এই তো বেশ বেঁচে আছি বজায় আছে ঠাট
না হয় ভুলে গেছি দু’একটি অবুঝ নামতার পাঠ…!!

আমরাও না হয় রোজই একটু একটু করে বদলে যাবো
যেমন করে খোলস বদলে ডোরাও কাল কেউটে হয়
আমরাও বদলে যাবো তেমন করে অথবা
অক্টোপাস হবো, পলাতকা বেরহম সময়ের হাত ধরে!

যুদ্ধ মানে সভ্যতা ধ্বংসের খেলা

সাজানো ঘরে স্বপ্নরা বেড়ে ওঠে,
বেড়ে ওঠে প্রজন্ম, গড়ে তোলে মায়াজালের সংসার।
মায়ার জঞ্জালে পূর্ণ এ ঘরে হঠাৎ আঁচড়ে পড়ে ক্ষেপণাস্ত্র!
মুহুর্তে বিষাদের কাল ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় আকাশ,
অমাবস্যার মধ্যরাতে আকাশের চাঁদ যখন কালঘুমে
সাঁজোয়া পদাতিক তুমুল গর্জনে রাইফেল, কামান সমেত ছুটে চলে।

ওরা গড়তে নয় ভাঙ্গতে আসে,
বাঁচাতে নয় মারতে আসে।
ওরা কাড়ে শিশুর উদ্যোম হাসি, মায়ার বন্ধন
ভূমিহীন করে বানায় শরনার্থী।

তোমরা একে যুদ্ধ বলে নিন্দা জানিয়ে কর্তব্য পালন করো,
ওরা অস্ত্র বিক্রির ডলারে আধিপত্য কায়েম করে সভ্যতা ধ্বংসের খেলায় মাতে।
সাজানো ফুলের বাগানে বাংকার খুঁড়ে ক্ষতবিক্ষত করো আমাদের স্বপ্ন,
আমাদের বেঁচে থাকার সম্বল, আমাদের ঘর স্বজন।
কোলের শিশু ভয়ার্ত শব্দে যখন জেগে ওঠে
তখন ঈশ্বরের কাছে ঘৃণার নালিশ জানায়।

বেকুব ঈশ্বর নীরবতার ভং ধরে ঊর্ধ্ব গগনে বসে শান্তির গান শুনিয়ে আমাদের আফিমে মজিয়ে রাখে,

ঘটনার মৌলিকতা

মূলত স্মৃতিলেখাই মৌলিক মেঘের ছায়া। যেসব ঘটনা
আত্মজীবনীর সাক্ষী হয়ে থাকে, তার পাশাপাশি উড়ে
যায় শাদা শালিকের ঝাঁক। তারা বলে যায়- আমরাও
সাথী ছিলাম বিগত সকল মৃৎশিল্পের। ঝিনুকের
বুকে লুকিয়ে থাকা মুক্তোর মতন, উজ্জ্বল ছিল বেশ-
আমাদের সংসার।

লিখিত আখ্যান নিয়ে যে গোলাপ রৌদ্র সাজায়, মূলত
সেই পর্বই মানুষের মৌলিক প্রেম।
ছাদহীন, ছায়াহীন যে বাক্যজাল মোহ ছড়িয়ে যায়
তাকে ভালোবাসার নামই জীবনের রত্ন পরম্পরা।

লাশের গন্ধ

কোনো কিছুই ব্যক্তিগত নয়
আহাম্মকের মাথায় ভর্তি একের পর এক
গুনতির বস্তা এখন রাষ্ট্রের সম্পত্তি,
সমস্ত দ্বৈত ও অদ্বৈত দ্বন্দ্ব
ক্রমশঃ বেড়ে যাওয়া ধর্ষকাম
অন্ত্র থেকে জরায়ুমুখে সূচের বিছানায়
ছটপট করতে থাকা নাদান কিশোরী
আর বন্ধ এটিএমের খাঁজে
কাকুতি লুকোনো বলিরেখা
একদিন যারা বাঁচতে চেয়েছিল।

আরেকটা নির্ঘুম রাত পেরিয়ে গেলে
নিজের অজান্তে রাতচরা পাখি হয়ে যাই,
তৃতীয় প্যাকেট সিগারেট শেষ হয়ে গেলে
অ্যাশট্রেতে তাকিয়ে থাকে অন্ধ আগুন:
সেদিনের বৃষ্টি ভেজা মাসুল
একশো দুই তিন গুনতে গুনতে বোবা
থার্মোমিটারের হার্ডল টপকায়
জ্বরতপ্ত ঠোঁট চেপে ধরে বালিশের
শেষ ঠান্ডাটুকু শুষে নিতে চাইলে রক্তচোখ
রাত্রি ধমকায় কাঠফাটা বিকট আওয়াজে।

মেয়েটার ব্যাথাক্লান্ত শরীর পড়ে থাকে
লোহার খাটের এক পাশে প্রাচীন মমি হয়ে,
কামুক হাতের সংখ্যা কেবলই
গুনতিতে বেড়ে ব্যঙ্গ করে নিখুঁত ভোগব্যবস্থাকে
চন্ডীদাসের রজকিনী শতভোগ্যা হয়ে উলঙ্গ জ্ঞানহীন
পড়ে থাকে পুকুরের আগাছা আড়ালে।

রাত্রি গড়িয়ে যে সকাল আসে
সেখানে সূর্য আসে না, শুধু জলবাস্পের উনকোটি
চৌষট্টি ভয়াল ছায়া উড়ে বেড়ায়
অন্ধকার আরও জম্পেশ শিকড় ছড়ায়;
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে এঁটো বাসনা
পড়ে থাকে বন্ধ ভ্যাটের দুর্গন্ধী চৌহদ্দির বেড়ায়,
পার্লার ফেরত ফ্লুরোসেন্ট আলো অবজ্ঞায়
লাথি মেরে সরায় বিগত জন্মের
অকালে খুন হয়ে যাওয়া যাযাবরী প্রেম,
সূর্য ভয়ে পিছিয়ে যায়, রাত্রি জেঁকে বসে সকালের গায়ে।

কান্নার শেষ জলটুকু শুকিয়ে আসছে
চোখের কোল আর গাল বেয়ে
রেখে গেছে অন্তিম মিনতির রঙশূন্য দাগ
যুদ্ধের ক্ষতবিক্ষত উঠানে এক পাশ
ফিরে পড়ে আছে হার না মানা আন্তিগোনে
চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা অজস্র সহচরের
লাশের ঠোঁটে লেগে আছে না ফুরানো
একচিলতে বাদামী হাসির টুকরো
কান্নার শেষ অক্ষর দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে আন্তিগোনে
দ্রুত সেই জায়গার দখল নিচ্ছে ভিসুভিয়াসের রাগ

কোন দূরে টুই টুই ডেকে চলে একটানা
অলীক পাখিছানা নিবিড় একাত্মন্
মাঝরাতে প্যাঁচা, রাষ্ট্রনিয়ন্তা আর সুপ্ত বিবেক
ক্যাবিনেট মিটিংয়ে বসে, যুদ্ধ শুরুর আগে
খতিয়ে দেখে নেওয়ার অন্তিম চেষ্টা
মার্ডারার আর ভিকটিমের মধ্যে কার পাল্লা ভারী:
বুরবক পাখি দিন রাতের তফাৎ বোঝে না
জ্বর বাড়ে মৃত্যুর ফিতে ছোঁয়ার আকুল ইচ্ছেয়।