বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

প্রিয়তমার সমীপে

CL_16

হাসপাতালের শক্ত বিছানায় জবুথবু হয়ে,
দূরের প্রকাণ্ড হিজলের ডালে,
কোকিল দম্পতির খুনসুটি অবলোকনে-
ভাবোদয় হয় পৃথিবীতে এখনো প্রেম আছে।

রুটিন করে ডাক্তারের দেখাশোনা,
আত্মীয়ের বেদনাহত মুখের দর্শনে,
বুঝতে বাকি নেই-
পৃথিবীর সময় ফুরিয়ে এসেছে।

মৃত্যুর অপেক্ষায় আমি,
ঐ পাড়ে অসংখ্য স্বজনের ভিড়ে,
চোখ যুগল জ্বলজ্বল করছে-
তুমি যে নির্ঘুম রাতের অবসান করছো।

পৃথিবীর বুকে গল্প রচাতে কত চেষ্টা,
কত রাতের নির্ঘুম কাটানোর ফলে-
স্বপ্ন সাজানো যেত পৃথিবীর আস্তরণে,
বোবা স্বপ্ন গুলো হারিয়ে যাবে।

তোমার সমীপে,
আজকের অব্যক্ত কথাগুলো,
মরণের বিছানায় তোমায় বলতে পারছি-
এই হলো সুখানুভব।

ত্রিশ বছরের যাপিত জীবনে,
শত অনুযোগ, অনাহার-
এক সাথে বাঁচার স্বপ্ন বোনার ক্ষণে,
তোমার সাহচর্য শক্তি দিয়েছিলো।

জানি বোধহয় শেষ নিঃশ্বাস গুনছি,
আত্মীয়ের চোখে বিষাদ চিহ্ন,
তোমার হাতে হাত রেখে বলছি-
ভালোবাসি।

তুমি বেঁচে থেকো সুখে-
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে দেখো-
ঠিক জারুল তলায়,
মাটির বুকে মিশে রবো তোমার অপেক্ষায়।

গন্ধ

tty

বাতাসের গায়ে যখন
সোনালি দিনের গন্ধ পাই!
তখন কারেন্ট শট খায়;
মৃদু কথা হয়, ঘোর পূর্ণিমায়,
চাঁদ আপনায় চলে আসে- আসে-
যত আনন্দ, চোখের পাতায়
পাতায় খেলা করে করে- একাকার
কোন ক্লান্তবোধ নাই গন্ধ ফুরায় না
শুধু দুর্বলা ঘাসের মাঠে ঘাসফড়িং,
জোনাকিরা মাতোয়ারা নাচে নাচে।
বাতাসের গায়ে যখন সোনালি
দিনের গন্ধ পাই- গন্ধ, গন্ধ।

২৭ ফাল্গুন ১৪২৯, ১২ মার্চ ২৩

শীর্ষমঞ্জরী

বিদেশী ফুল সহজাত মৃত্তিকায় প্রস্ফুটিত
হতে চেয়ে সুবাতাস পেল এক গুচ্ছ ফুলের
শীতের হাওয়ায় কবিতার মৃদু ছোঁয়ায় যে
পূর্ণায়িত সকাল, দুলিয়ে গেল শীর্ষমঞ্জরী
কোকিলের কুহু তান ভরিয়ে দেয় আকাশ
সোপানে নেমে যাওয়া ঘাটের নিচে তরী
আঁধার নেমে আসে আলোকোজ্জ্বল বাগানে
শিশুতোষ বুকে নেওয়া ম্লানমুখ রমণীর।।

মার্চের অসুখ

মনে আছে, সে-বছর তোর ভীষণ অসুখ?
দিবারাত্র কষ্ট, খিদে নেই ঘুম নষ্ট –
এক অসহ্য সুখে তোর পুড়ে যেত বুক।

শোনিত মধ্যে ফুলে ভরা আস্ত একটা মার্চ গাছ
মাথা দোলাত হঠাৎ হঠাৎই হাওয়ায়
হাওয়ারও বিরাম ছিল না দু’বাড়ি আসা-যাওয়ায়

তোর মাথার ভেতর, নিঃশ্বাসে তখন একটাই নাম
বললাম, ভালো নয়, অহেতুক এ মর্ষকাম –

রক্তে পোঁতা অমনি দুলে উঠল চিরকালীন গাছ
আমার চোখে শেকড় চারিয়ে গেল
বললি, মার্চ! ও মার্চ! মার্চ – ভালোবাসলাম
তুই দিয়েছিলি এই নামের ইনাম

তথাপি কখন তোর সেরে গেল সব অসুখের সুখ
ইদানীং আর মাটিতে পড়ে না পা –
আজ লালফুলী মার্চ, কাল শুধু ঝরাপাতা

কষ্টের অসহযোগ

002_n

আফসোস!
যদি একবার বিশ্বাস করতে
যদি একবার হাত বাড়িয়ে দেখতে…
কেন বুঝোনি?
তুষের অনল নিভৃতে জ্বলে
জ্বলতে
জ্বলতে
পুড়তে
পুড়তে
ছাই হয়ে উড়তে উড়তে
আমি
সুযোগ পাইনি তোমাকে বোঝাতে!

আফসোস!
যদি একবার পড়তে
সহস্র কবিতার যে কোন একটি!
তবে-
নিজের অস্তিত্ব আবিষ্কার করতে পারতে;
বুঝতে
আমার অজস্র রাত… বিনিদ্র যন্ত্রণা…
এক একটি মুহূর্ত
ছুঁতে পারতে-
বেদনা বিগলিত কান্না আর সম্যক উপহাস!…

আমার মত নিরীহ কবির কি করার থাকে?
একটা দীর্ঘশ্বাস!
আর তেপান্তরে মিলিয়ে যাওয়া অবধি
যে যায় তার দিকে চেয়ে থাকা;
যতক্ষণ না থামছে অন্তঃপুরের ধড়পড়…
অশ্রু গড়া দাগ
তারপর…..
বিহ্বল চিত্তে এক আকাশ গ্লানি আকণ্ঠ হতে হতে বরণ করি নিত্যকার সর্বনাশ!

….. আর কুয়াশার ধোঁয়াশায় ঘিরে উঠা নিকষ অন্ধকার, আরাধ্য দুর্ভোগ
অদৃষ্টের মর্মরে চলতে থাকে কষ্টের অসহযোগ!

.
২/২/১৪ (প্রথম রচনাকাল)

চিরকুট

3289

তোমার জানালায় এক ফালি মেঘ
শুয়ে থাকে এই হেমন্তের শেষ বিকেলে।
কোথাও কোথাও শীত নামে,
বৃষ্টি নামে, শিশির ঝরে পড়ে।

অথচ, তোমার চোখে আমার শতেক খানি
কবিতা নিবিড় ভালোবাসায় স্বপ্ন দেখে।
শীতল ছায়ায় ব্যাকুল চেয়ে থাকে ঝরে পড়া
সব শুষ্ক ফুলের দল।
হেমন্তের ঝরা পাতা বেজে যায়
মর্মর সুরে।

তোমার নীরব সন্ধ্যা আমি যতনে তুলে রেখেছি
আমার বুক পকেটে বেদনার নীল খামে।

দরজার চৌকাঠে রেখেছি “চিরকুট” লিখেছি,
অচেনা চার অক্ষর,
“ভালোবাসি”।

শীত আসার আগেই পড়ে নিও তুমি।

__________________________-
#কাব্যগ্রন্থ_ফেরিওয়ালা_থেকে
প্রকাশ কাল – ২০২১ বইমেলা

কর্পোরেট

কার দেহ তুমি, মুখ ফসকে বলা
জাদুকাটা দুপুর-বসন্ত কোকিল
সাঁকোর ওপারে অন্য গ্রাম, নদী-
সবুজ আঙুরে অনার্য পাহাড়
ফণাহীন জল দূর মেঘে পথচলা

ফুল থেকে বনভাত সুহৃদ আধুলি
আমাকে চিনতে পারো, কর্পোরেট
দ্বীপমান নক্ষত্র, পাতার ইসকুল
আঁধারের পোকা জ্যোৎস্না কারিগরি
নূপুরের কল্লোল তোর পায়ে ঘুরি।

মুদ্রিত জীবনের অমুদ্রিত তৃষ্ণাগুচ্ছ

‘ইহা একটি মুদ্রিত ছোটকাগজ’- শব্দগুলো দেখার পরই আমি জেনে যাই
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে এই গঞ্জে অনলাইন ভার্সনের কোনো অস্তিত্ব
ছিল না। ডিজিটাল ধ্বনি কন্ঠে নিয়ে কোনো কোকিল এখানে গাইতো না
গান। রিমিক্সড গীটার বাজিয়ে কেউ রুদ্ধ করে দিত না সানাইয়ের অপূর্ব
মিলনসন্ধ্যা। পরস্পরকে ভালোবেসে যারা হাত ধরাধরি করতো, তারা পরতো
না প্লাস্টিকের হাতমোজা। অথবা মাস্ক পরে আঁকতে চাইতো না নিভৃতের
চুম্বনদৃশ্য। অনেক কিছুই তখন মুদ্রিত ছিল। চাইলেই স্পর্শ করা যেতো
কাগজ ও কালির প্রকাশ। তাকালেই দেখা যেতো নিঃশ্বাসের নিঃশব্দ ওঠা-নামা।

আমরা যারা ঐ গঞ্জে পাহারাদারের দায়িত্বে ছিলাম, তারা বাঁশি বাজিয়েই
হটিয়ে দিতে পারতাম রাতের তস্কর। এখন এখানে বহুমুখি শক্তির মহড়া হয়।
শান্তি কায়েমে নিয়মিত রাজসিক ঢাক-ঢোল বাজে। মুদ্রিত জীবনের অমুদ্রিত
তৃষ্ণাগুচ্ছ বুকে নিয়ে অসহায় কবি ভাবে, তাহলে কী আমি আরও বেশি
একাকী হয়ে যাবো !

তুমি মুক্ত প্রিয়া

আগ্নেয়গিরির তপ্ত শীশা জ্বলে জ্বলে
এক সময় হয়ে যায় জমাট শীলা
নীলকণ্ঠী মন শত বিষ কন্ঠে নিয়ে
বেঁচে আছে সয়ে কত ব্যথার জ্বালা।

হৃদয় যেখানে খুঁজেছে তোমার প্রেম
তুমি খুঁজেছো সর্বদা আমার ভ্রম
আমি পেলাম না ভালোবাসার মন
তুমি খুঁজে পেয়েছো আমার অগুণ।

নিরবে সয়ে যাবো বিষবৃক্ষের মত
আমার দোষের সাজা দিবে তুমি যত।
ভালোবাসার পাখি তুমি মুক্ত গগনে
তোমার ছবি এঁকে রেখেছি এই মনে।

আমার হয়ে থাকো যদি আসবে ফিরে
কোন দিন ছিলেনা যদি না আসো নীড়ে।

ব্যস্ততা কেড়ে নেয় কবিতার প্রহর

33

ভেবে ভেবে লিখবো,
সাজাবো কবিতার খাতা শব্দে শব্দে,
কিছু মানসম্মত কবিতা বেরোবে কলম হতে
হয় না এমন হয় না আর, আমার কবিতার প্রহর
কেড়ে নেয় সময়।

মানহীন কবিতায় ভরে রেখেছি হৃদয় খাতা;
তুচ্ছ তাচ্ছিল্যতায় পড়ে থাকে কষ্টে বোনা সব শব্দ
কবে জানি পাবো ফিরে আমার কবিতা লিখার প্রহর
হয়তো পাবো না আর তবুও নিরাশায় বাঁধিনি বুক।

কবিতা নিয়ে বসলেই হু হু করে বয় বৈরী হাওয়া
মানুষ এসে দেয় গল্প জুড়ে,
কত কাহিনী, কত যন্ত্রণা শেষে এক তিল অবসর
সেই অবসরে লিখে ফেলি হাজার কবিতা।

কবিতা পড়ে না কেউ হয়তো,
কেউ দেয় না প্রশংসার ছোঁয়া;
তবুও কবিতা নিয়েই কাটিয়ে দেই আর দু’দন্ড অবসর
একদিন আসবেই আমার সেই মহেন্দ্র ক্ষণ।

ভাগ্য একদিন হবে সুপ্রসন্ন
আমি কবিতার প্রহর পাবো হাতের মুঠোয়
সেদিন কী আর ভাবনাতে পারব কবিতা সাজানোর শব্দ
হয়তো হারিয়ে যাবে সেদিন আমার কবিতারা।

যখন উচ্ছাস প্রাণে, হাজার শিরোনাম ঠোঁটে
অথচ লিখতে না পারার যন্ত্রণা ধরে রাখে আমায়
আমার মূল্যবান সময়গুলো হারিয়ে যায় ব্যস্ততার সাগরে
আমি মানহীন কবিতাই তবে লিখে যাবো অনন্তকাল।

অট্রালিকা

অট্রালিকা

অট্রালিকার সামনে
দাঁড়িয়ে পাগল, দেখো তো
কোন পাগল; গন্ধ
সামাল যেনো ঝড় তুফান
ভয়, ক্ষয়, জয় সব
থাক- জীবন মৃত্যুর খেলা;
ভাবতে কি পারো?
অট্রালিকার কোণায় কবর
পাগলামি নয় কো
পাগল, অহমিকার পাগলী।

২৪ ফাল্গুন ১৪২৯, ০৯ মার্চ ২৩

নারী

s

নারী দিবসে সকল নারীকে সম্মান জানিয়ে…

শান দিয়ে রেখো
মরচে ফেলো না,
ঝলমলে তরবারী
কোন দিবসের
সুতো বাঁধা নয়
উজ্জ্বল তাই নারী।।

নারী নয় কোনো
দেয়ালের ছবি
দিন যাওয়া
কোন মতে
পদরেখা তার
ছড়িয়ে গিয়েছে
মরু নদী পর্বতে।।

ইতিহাস ঘেঁটে
পৃথিবীকে দেখ
হাজার লক্ষ প্রমাণ
পুরুষের সাথে
পাল্লা দিয়েছে
নারীও সমান সমান।।

সে এখন না নদী, না নারী

গল্পহীন নদীটার কথা অনেক অনেকদিন বলা হয়নি
সে এখন না নদী আর না নারী
অথচ একদিন সে কতো লাবণ্যময় কবিতা ছিলো!

শীতলপাটির মতো প্রাণের উপর প্রাণ বিছিয়ে দিতো
তার শব্দেরা মৌমাছির আজন্ম গুনগুন হতো
সেও ছিলো টুকটাক কোনোএক অলৌকিক জীবন;
সেখানেও তামাশার রাত কোনোদিন শেষ হতো না
অবলীলায় হারিয়ে যেত নদী অথবা নারীর মন!

আর আজকাল নাবিক ছাড়াই দিনকাল চলে যায়
সেই রাতের কথা আজ আর তোমায় নাই বা বলি
জানো, রাজনীতি এখন সবাই কম-বেশি বুঝে..বিষ
অথবা খোলা জানলার ধারের দোয়েলের শিস।

তবে সবাই আমার মতোন রাতকানা, দিনকানা,
ডানকানা, বামকানা নয়… দৈনিক হিসাবের মিল
কোনটা চিল আর কোনটা শকুন অন্তত বুঝতে পারে;
কেবল আমিই শুধু থেকে গেছি সে-ই বোকা বোকা
কবিতার রাজ্যপাট অনেক আগেই চুকিয়ে দিয়েছি
তবুও বিনিময়ে বিনিয়োগ যা পেয়েছি সবই ধোঁকা!!

নারীর রূপ বোরকাবন্দি

নারীর রূপ বোরকাবন্দি
বোরকার অন্ধকার জেলে করে বাস,
নারীর রূপ মুক্ত পৃথিবী
দেখতে পারে না
বোরকা জেলে করে হা-হুতাশ।

নারীর রূপ বোরকাবন্দি থাকবে
মুসলিম ধর্মকোর্টে পাশ,
নারীর রূপ মুক্তি পাচ্ছে না
বোরকার অন্ধকার জেলে হচ্ছে নাশ।

নারীর রূপ বোরকাবন্দি
থাকবে কৃতযুগ,
জেগে উঠো নারী
নিজের রূপ উন্মোচন করে
ধর্মান্ধদের আইনের ধরিয়ে দাও অসুখ….