আজ আকা‌শে উ‌ড়ে শুভ্র মেঘ

ch

জন্ম‌দি‌নের বার্তা নি‌য়ে মে‌ঘেরা উ‌ড়ে আকা‌শের সীমানা ঘে‌ঁষে
আ‌মি আজ গি‌য়ে‌ছি মানু‌ষের ভা‌‌লোবাসায় ফে‌ঁসে,
ফিসফিস, চু‌পিচু‌পি শু‌নি ব‌সে চুপচাপ
আকা‌শে বা‌জে জন্ম‌দি‌নের দফ ধুপধাপ।

শুভ্র ‌মে‌ঘের মত মন, ম‌নের অ‌লিগ‌লি‌তে মেঘ উ‌ড়ে
কতই না সু‌খের ক‌লি উ‌ঠে আজ বক্ষ ফু‌ঁড়ে;
নেই মন আকা‌শে একটুও কা‌লো মেঘ
ক‌বিতায় রে‌খে দিলাম ছ‌ন্দে তাল ল‌য়ে ম‌নের আ‌বেগ।

মন আকা‌শে নেই নী‌লের ‌ছোঁয়া
আজ মন উ‌ঠো‌নে যেন কাশফু‌লের চারা রোয়া
‌সে চারায় ফুল ফু‌টে, হাওয়া এ‌লে পাপ‌ড়িগু‌লো উ‌ড়ে যায়
‌কে রে, কে এ‌সে ম‌নের তা‌রে সু‌খের বাজনা বাজায়?

ভু‌লে‌নি কেউ আমায়, ভু‌লি‌নি তো ক‌বিতার ছন্দ
ভা‌‌লোবাসায় আচ্ছন্ন আ‌মি, নেই কা‌রো সা‌থে আজ দ্বন্দ্ব;
আ‌মি যেন আকাশ, মন যেন মেঘ
মন উ‌ড়ে স্বাধীনতায় পে‌লেই সুখ হাওয়ার বেগ।

থাকুক স্মৃ‌তিগু‌লো ক‌বিতার ছ‌ন্দে, অক্ষ‌রে অক্ষ‌রে
থাকুক সুখগু‌লো সাজা‌নো মন ঘ‌রে থ‌রে থ‌রে;
থাকুক মন আকাশটা আজ শুভ্র মে‌ঘে ভরা;
আজ নেই মন উ‌ঠো‌নে ‌চৈ‌‌ত্রের খরা।

‌কে যেন ব‌লে যায় এ‌সে কা‌নে কা‌নে
শুভ জন্ম‌দিন……..সু কামনা গা‌নে গা‌নে;
মন আকা‌শে তাই উ‌ড়ে মে‌ঘের কণা
কী যে সুখ ম‌নে আ‌মি ছাড়া কাউ‌কে বল‌বো না।
.
(স‌্যামসাং এস নাইন প্লাস, ভিস্তারায় আকাশ পথে)

আত্মহুতি

dau

আমি চলে যাচ্ছি প্রস্থানের পথ ধরে, নিজেকে নিয়ে যাচ্ছি বাধ্যতামূলক অবসরে…
তুমি থাকো… দিগ্বিজয়ের নেশায় বুদ হয়ে আরো কিছু স্বপ্ন আঁকো…। তুমি একা নও জৌলুস ভরা জলসায় ; তোমাকে রেখে যাচ্ছি ভীড়ের নিভৃতে!

অনেকেই ফিরে গেছে আঁধার বনে, কেউ কেউ বেছে নেয় নির্বাক-ধূসর শূন্যতা ; কেউ কেউ অগ্নিপথ কিংবা খরস্রোতা নদী, জানো নিশ্চয়ই বেচে থাকা মৃত্যুর মতো সহজ নয় ; কষ্টের দুর্গম পারাপারে কখনো কখনো খুইয়ে যায় আজন্ম কালের স্বপ্ন!

তবুও কবিতা রচিত হয়
অনেক পাখিরা তাদের উষ্ণীষ বগলে আগলে রাখে অবহেলিত কবির কবিতা! অনেক রাখাল ক্লান্ত দুপুরে বাঁশির সুরে ফিরিয়ে আনে নির্লিপ্ত বাউলের মন। এমন উদাস যাপনে আরো কিছুকাল অতিবাহিত হোক তোমার নিঃসঙ্গ জীবন!..

আমার প্রস্থান তোমাকে ভেঙে যাওয়া মৌচাকের রানী মৌমাছির মতো উত্তেজিত করুক
আমি চাই.. পৃথিবীর তাবত কবিরা জানুক –
সর্বভুক একটি গ্রাস তছনছ করে দিয়েছে আমাদের যৌথ উদ্যান….
যেই ইতিহাসের মর্মরে গুঞ্জরিত হচ্ছে অজস্র ঘাসফুলের করুণ আত্মহুতি!….

মাথায় ঋণের বোঝা

ni

এই জীবনে করিনি ঋণ তবুও আমি ঋণী,
মাথায় ঋণের বোঝা চেপে দিলেন যিনি।
তিনি আর কেউ নয় স্বয়ং আমার রাষ্ট্র,
দেশে ঋণের বোঝায় এখন আমি পথভ্রষ্ট।

এক নয় দুই নয় পঁচানব্বই হাজার টাকা,
তাইতো দেখি আমার পকেট হচ্ছে ফাঁকা।
এমনিতে চলে না সংসার দুর্মূল্যের বাজার,
সামান্য বেতন আমার মাত্র কয়েক হাজার।

কী করে চলি এখন কোথায়-ই-বা যাই,
কী করি ভেবে মরি পথ খুঁজে না পাই।
স্বল্প বেতন অল্প টাকায় চলি কী করে,
যদি হয় রোগ-ব্যধি যেন যমে টেনে ধরে।

মরি মরি করেও মরণ কেন হয় না,
বলি বলি করেও দুঃখ বলা হয় না।
যার কাছে বলবো সে-ও একজন দুখী,
ঋণের বোঝা মাথায় সবার কেউ নয় সুখী।

নিতাই বাবু
১৭/০৮/২০২৩ইং।

ছোট্ট গাড়িটা

CL_1692278062355

জ্যামের শহরে আটকে আছি,
ক্লান্তিতে চোখের পাতা লেগে আসছে,
অসুখী মেঘের বুকফাটা আর্তনাদ-
বৃষ্টিতে এ শহর সয়লাব হবে।

ছোট্ট গাড়িটা থেমে যায়,
প্রকাণ্ড পেশিবহুল যন্ত্রের চিৎকারে,
গতরাতের ঘুমহীনতা জ্বালাচ্ছে বড্ড বেশি-
চোখের পাতা খোলা রাখা দায়।

সহসা গগনবিদারী চিৎকারে বৃষ্টির আগমন,
জরাজীর্ণ একখানা কাপড়ে,
ব্যর্থ চেষ্টায় অসফল-
শরীরটা ভিজে জবুথবু অবস্থা।

ছোট্ট গাড়িটা দু’কদম চলে,
এখন ঘুমের লেশমাত্র নেই,
জরাজীর্ণ কাপড়ে নিজেকে ঢেকে রেখে-
জ্যামের শহরে মুখোমুখি যানজটে।

অন্ধকার চারপাশে বিষণ্নতা,
আকাশের গর্জনে ভয়ার্ত জনাকয়েক আমরা,
ছোট্ট গাড়িটা থেমে যায়-
বেরসিক যানজটে বৃষ্টির কি আসে।

চার ঘন্টার অসহ্য যন্ত্রণার অবসান,
মেঠোপথ ধরে চলছে গাড়িটা,
দু’পাশের সারি সারি গাছ ভয়ানক দৃষ্টিতে-
ছোট্ট গাড়িতে দোয়ায় মশগুল আমরা।

হালকা বৃষ্টিতে বাতাসকে সরিয়ে,
গন্তব্যে ছুটছে গাড়ি,
জ্যামের শহর থেকে ঢের ভালো-
বৃষ্টিও সুখকর এখানে।

গাড়িটা শেষবারের মতো থামলো,
আত্মীয়ের হাঁক-ডাক,
ভয়ের অবসান শেষে বিজয়ের হাসি-
কত পথ পিছনে ফেলে এসেছি জানিনা।

সমগ্র আকাশ

mok

আমাদের জমানায় মুজিব ছিলেন না। যখন বড় হচ্ছি সানগ্লাস মেজরের রমরমা অবস্থা, চারদিকে প্রচুর খাল খনন কুমির আনা হচ্ছে। ঘোষক প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে, প্রথম বাংলাদেশ শেষ বাংলাদেশে পরিণত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু তিরোহিত; তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, কেউ তাঁকে খুঁজছে না।

খাল কাটা বিপ্লবীর করুণ অন্তের পরে বিশ্ব বেহায়ার আগমন, এসেই পূর্বমুখী সেজদা করা শুরু করে দিয়েছে। স্যাটেলাইট মেজর উল্টো পথে হাঁটার যে প্রথা শুরু করেছিল; লেজোহোমো সে পথে রকেট গতি লাগিয়ে নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু উচ্চারিত হন না, তিনি ছিলেন বলে মনে হয় না।

বঙ্গবন্ধু ঘাতকের হাতে নিহতের সময় আমার বয়স পাঁচ, আওয়ামীলীগ পুনরায় ক্ষমতা আরোহণের সময় ২৬। বঙ্গবন্ধু বিহীন বাংলাদেশে আমরা বড় হয়েছি, বঙ্গবন্ধু ছাড়া বড় হয়েছি।

আমরা খালকাটার অনুসারী হতে পারতাম; অথবা বিশ্ব বেহায়ার, অনেকেই হয়েছে। বিষয়টা সহজ ছিল, রাবণের সহযাত্রী হওয়া সহজ কিন্তু সূর্যকে সবাই ধারণ করতে পারে না, পারে না বলে অন্ধকারের সহযাত্রী হয়।

কিন্তু আমরা সূর্যের অস্তিত্ব জানতাম, তাই কোন অন্ধকার আমাদের প্রভাবিত করতে পারেনি। কৃষ্ণ অন্ধকার কালে আমাদের বুকে বঙ্গবন্ধু সূর্য আলো দিয়েছিল। আমরা সেই আলোক ধারণ করেছি, করে আছি, থাকবো।

আমরা নিজেদের প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে খুঁজেছিলাম, নিজেদের চিনবো বলে তাঁর ঠিক ঠিকানার প্রয়োজন ছিল। যখন তাঁকে পেয়ে গেলাম দেখলাম আমাদের আত্মায় তার ঠিকানা, তিনি ছেয়ে আছেন আমাদের মন-মগজ।

অন্ধকারে বঙ্গবন্ধু চিনেছিলাম। তখন তিনি আকাশের তারা হয়ে ছিলেন, এখন তিনি সমগ্র আকাশ হয়ে আছেন।

অহংকারী

ri

তোমাকে দেখিনি অনেকদিন। অনেকদিন কতদিনে যে হয়! সব অংক ভুল হয়! হিসেবের আঙুলে গরমিল! দূর থেকে ভেসে আসা রাতজাগা পাখিদের গান। কান পেতে থাকি। বাইরে শ্রাবণ বৃষ্টি, ঘরে বাজছে গজল।

কতদিন দেখিনা তোমায়। এইসব গান বড্ডো মন কেমন করা। ভালোবাসার গান। রাতজাগা চোখের মণিতে ঘুমের হলুদ রঙবাহার! বারান্দায় বিড়ালের অলস চলাফেরা।সেও ভালোবাসে আদর সময়! আমার মতোই কি তবে আহ্লাদী স্বভাব?

তোমাকে দেখিনা কতদিন হয়? ক্যালেন্ডারের পাতায় ঝিমানো সময়। রাতের আঁধারে একাকী অপেক্ষায় থাকি। কল্পনায় তোমার হাত ঘরে হেঁটে যাই দূর থেকে দূর! ঘুম নামে চোখে তবুও অপেক্ষায় থাকি যদি আসো! যদি বৃষ্টির মতো ঝমঝমিয়ে আসো। প্রার্থনার নীরব চাওয়ায় প্রতিদিন তোমাকে এভাবেই খুঁজে বেড়াই! তোমাকেই ভালোবাসি, শুধুমাত্র তোমায়। তুমি এলে তোমার ভালোবাসায় অহংকারী হই আমি।

কতোদিন তোমাকে দেখি না। ঘড়ির কাঁটায় থমকে আছে সময়। হয়তো আসবে না আর, তবুও তোমারই আসার অপেক্ষায় থাকি রোজ।

উত্তর পুরুষ

হামাগুড়ি না দিয়েই যে শিশু হাঁটে সে কতোটা শিশু?
বাবা বলতেন, কালের আগে আগে চলতে শিখো
সবকিছুর মতো কালও নাকি রুপান্তরিত শিলাস্তর!

আমার পাললিক প্রেম মাঝেমধ্যে পথিক হয়
তখন পৌষের চিরকেলে কেবল চাকার শ্লোগান
দাদা বলতেন, সাদ্দামের প্রতিটি আঙুলই এক একটি
স্টেনগান!

আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মতোন শুনে যেতাম উত্তর পুরুষ
অতঃপর পুরো মাঠ একাই খেলে গেলো নির্মম বুশ
আমি নতমুখে শাস্তিগুহার কথা ভাবি
অবরোহী হবো নাকি আরোহী হবো.. ভাবতে ভাবতেই
দেখি শেকড় ছাড়াই শিখরে আরোহনের ধ্রুপদী গল্প
মা বলেন, খোকা বাগাড়ম্বর করে হালে পানি পাওয়া
যায় না; মধ্যমপন্থাই উত্তম পন্থা; সবকিছুতেই অল্পস্বল্প!

স্বাধীনতা

সরকারি অকর্মণ্যতা আর রাজনৈতিক দলগুলোর উস্কানিতে ১৯৪৬-‘৪৭ সালে ঐ সরকারি হিসেব মতই পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা গেছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়।
আমরা একবারের জন্যও সেই হতভাগ্যদের কথা স্মরণ করিনা।

স্বাধীনতা দিবস এল, চলে গেল ফের। আমরা মাংসভাত খেয়ে, শপিংমলে গিয়ে, আর ভুল সুরে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে একটা পতাকা তুলে একটা ছুটির দিন কাটালাম। অপদার্থ নেতাদের দোষ দিচ্ছি না, মুখে জয়হিন্দ, বন্দেমাতরম্ বললেও এর মানে মুষ্টিমেয় জানে।

ক্রমশঃ আমরা ইয়াংকি কালচারের অকর্মন্য নকলনবীশ হচ্ছি। ফাঁকিবাজ, অর্থলোলুপ, ঘুষখোর, চোর জাতি হচ্ছি আমরা। নিজের মুখের সামনে একটা জাতীয় পতাকার ছবি লাগালেই জাতীয়তাবাদী হওয়া যায় না। দেশ কে সত্যিকারের ভালোবাসতে হলে নিজের মন ও কাজ পরিষ্কার করতে হয়।

খেতু বাগদি ও গোপাল কাহার বেঁচে আছ! সেই যে পতাকা তোলা দেখতে গিয়ে হারিয়ে গেছিলে নির্বীজ জন অরণ্যে, তারপর দীর্ঘ ছিয়াত্তর বছর তোমাদের কথা উচ্চারিত হয় বছরের মাত্র দুটো দিনে। তোমার পরনের সেই ছেঁড়া ফাটা গামছাটা আজও জীবিত আছে খেতু? আর গোপালের তার একলৌতা জীবনের মতই আধময়লা ফ্যাকাশে ধুতি?

আমিও আর পতাকা তোলা দেখতে যাই না এখন। আমি এখন এলইডি বাহাত্তর ইঞ্চি জুড়ে ঘরজোড়া গমগমে হাততালির বুক চিরে সটান পৌঁছে যাই লালকেল্লার চওড়া পাঁচিলে। তোমাদের কথা আমাদের মনেও পড়ে না বিশেষ।

কতদিন যেন না খেয়ে সেদিন মানুষের জঙ্গলে গেছিলে তোমরা? আমরা এখন সকালে পাস্তা, দুপুরে ভুরুভুরে বাসমতী, সন্ধ্যেয় ব্ল্যাক ডগ আর রাতে বিরিয়ানি – রেশমি কাবাব। এখন আর কেউ না খেয়ে মরে না গো হাড়হাভাতে বোকা মানুষের ঝুন্ড।

পেটভর্তি হয়ে গেলে অবসর অবর সময় আমরা দেশ ভক্তির ভজন গাই। আমরা নিজেরাই নিজেকে দেশিকোত্তম উপাধি দিয়ে গলায় পরে নিই তেরঙা চাদর। সেই চাদরে এক এক রঙ এক এক সময়ে উজ্জ্বল হয়ে ছলকে উঠে রাজপথ, মাঠ আল, মাটির কুটির কিম্বা ঝকঝকে খিলান ওয়ালা বাড়ীর মেঝেতে লোহিত কণা আঁকে এন্তার। রাত গভীর হলে নেশার দমকে আমার গলা ভেঙে যায়। দুরকম গলায় চেঁচিয়ে উঠি – হর হর মহাদেও – আল্লাহু আকবর! আমার দুহাত আমার নিয়ন্ত্রণ ছুঁড়ে ফেলে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে যায়। ওহে বুদ্ধু গোপাল – খেতু, আমরা এখন চাঁদে উপগ্রহ পাঠাই।

শুধু রাত্তির ঝুম হয়ে এলে নেশার প্রথম প্রহর জমে উঠলেই তোমাদের দুজনের কুৎসিত কাটা মুণ্ডু চোখের সামনে দোলে, ঠাঠা করে হাসে, আমাকে বিদ্রুপ করে।

গোপাল কাহার – খেতু বাগদি আজকাল আমি রাতে ঘুমোতে পারি না যে!

রঙ বদলানো জীবন

298

জীবন যখন তার অস্তিত্ব ভেঙ্গে
অভেদ্য দুর্গ গড়ার সময় রচনা করেছে
তখনই প্রতারিত হয়েছে।
কেউ হয়েছে প্রিয়জনের দ্বারা;
প্রিয় মানুষের দ্বারা
এমনকি পরিবার পরিজনের দ্বারা।

তবুও জীবন থেমে যাওয়ার কথা নয়
যে মানুষ দ্বারা আপনি অমূল্যায়িত হয়েছেন
তারা কখনও আপনার আপন নয়
সময়ের দূরত্ব আসার সাথে সাথে মানুষ তার রঙ বদলায়।

কেউ অহংকারী হয়
কেও নিষ্ঠুর হয়
কেউ ভুলে যায়
পরগত সময়ের সেই স্মৃতি
তাইতো মানুষ পর হয়
পড়ন্ত বিকেল শেষে রক্ত ঝরায়।

জীবনতো আলকেমিস্ট এর গল্প নয়
এই জীবন এক পৃথিবীর ভ্রমণ ক্ষেত্র
যেখানে সবার সমান আনন্দ
সমান অধিকার।

জীবন নিজের প্রবৃত্তিকে অতিক্রম করে
গুরুত্বপূর্ণ হতে যাওয়া সঞ্চয়
অন্তহীন সময়ের পথ বেয়ে ছুটে চলেছে
আন্দালুশিয়ার পথে পথে
কোন এক বিশ্বস্ত জীবনের খোঁজে
জীবনের এই চারণভূমি
আজ কষ্টের মহাসাগরে ভাসমান।

আমরা এই পৃথিবীর মহাসমুদ্রে
সমুদ্রগামী নাবিক ও ভ্রাম্যমান ফেরিওয়ালা
কেউ প্রকৃত জীবনের খোঁজ করতে করতে
অবশেষে নোঙ্গর ফেলে থিতু হয়।
হয়তো সে জীবনই প্রকৃত জীবনের আলোয় উদ্ভাসিত।

এখন যেমন

কিছু তাস গোছানোই থাকে, অল্পে কিছু আশা,
অভিমুখী অবিরত হাত মুন্সিয়ানা ছানে,
এই আছি এই নেই, আজকের নিঃশ্বাসের মানে,
পরিস্থিতিগতভাবে বদলে যায় কুশীলবী ভাষা।

চোখ তো দেখেছে রূপ-তেষ্টা-প্রেম-উচ্চাশা,
স্থাপত্য বৈভবে তবু অহংকারী মৃত বৃক্ষডাল–
কাকে যে ডোবাবে তুমি, কাকে দেবে বুকের আড়াল,
ভুলেগেছো সংগোপনী রোদ-বৃষ্টি-শিশির-কুয়াশা।

আজ রোদনের দিন

3

আজ রোদনের দিন
অশ্রুত কজ্জলে শোকের সাগরে ভাসার দিন
প্রাণের বাঁকে সহস্র ‘রাব্বির হাম হুমা’…
কামনার দিন!
ইস্পাত কঠিন চেতনায় পুনঃশপথে লীন হবার দিন!..

স্মরণ করো সেই ধ্বনি,
চিৎকার- বুকে ছিলো রক্তের জোয়ার
স্মরণ করো সেই তর্জনী, দরিয়ার গর্জন
আরক্ত হুংকার-
ভিড়ছে তরঙ্গ উর্বশী ফণায়, জনস্রোত ;
প্রকম্পিত আসমান জয় বাংলার গানে
সোনালী বয়ানে উদ্বেলিত জনতা
রেসকোর্স ময়দানে পিতার কণ্ঠে রচিত মহান স্বাধীনতা!

স্মরণ করো তীক্ষ্ণ ধার
স্মরণ করো সেই তৃষ্ণা, উষ্ণীষ আঁধার –
চব্বিশ বছর পূর্বে প্রাণের মননে লালিত
স্বাধীন বাংলার বুননকৌশল..
যার ফলিত পুষ্পোদ্যান ছারখার করেছে
দুধকলায় পোষিত সাপ
পনের আগষ্ট পচাত্তরে, শিখরের সিড়ি রুদ্ধ করে
জাতির কপালে এঁকে গেছে কলঙ্কের ছাপ!
স্মরণ করো সেই অশোধিত ঋণের ভার
রক্তে ডুবা তৃণের শীৎকার!..

আরো করো স্মরণ, আরো শ্রদ্ধা
দাও অঞ্জলি জাতির পিতার চরণে
যার ঋণ শোধানো অসম্ভব
তাকে শ্রদ্ধা স্বরণের ছেয়ে বেশি কিইবা দেয়ার আছে…
পৃথিবীর কাছে যার বেহিসাব পাওনা
রেখে
দিয়ে গেলো স্বাধীন শিরোস্ত্রাণের অধিকার
তাঁকে অমর্যাদা করার স্পর্ধা তাদেরই আছে
যারা নিজের জন্মকে করে অস্বীকার!..

.
১৫/৮/২৩

কবিতা

5c

লাল কলসে ধান রেখেছি
নীল পারিজাত ফুল
সোনা বন্ধু কোথায় গেলি
বাঁধি এলো চুল
গাঙের জলে ভরা ভাদর
নৌকা দেব পাড়ি
ভয়ে কাঁপে মনটা আমার
কেমনে যাব বাড়ি ?
বিজলি হানা আকাশ তলে
কালো মেঘের পাল
আয় বন্ধু ফিরে আয়
আজ নয় ত’ কাল।

মানুষের দিকে তাকালেই

মানুষের দিকে তাকালেই, আমার চোখের দিকে
উড়ে আসে একগুচ্ছ ছাই,
বৃক্ষের দিকে কান পাতলেই, বেজে ওঠে
একটি পুরনো করাতের ক্রন্দন ধ্বনি-
আর নদীর দিকে!
না, কী দেখি তা আর বলা যাবে না।

বলতে পারছি না অনেক কিছুই,
দেখতে পাচ্ছি না কবি কিংবা চিত্রশিল্পীদের
মুখ। যারা বাঁশি বাজায়, কিংবা যারা একান্তই
একলা থাকতে ভালোবাসে, তাদের জন্য আমি
সাজাতে পারছি না গাঁদাফুলের হলুদ সৌরভ।

ঢাকার যে সড়কগুলোকে নিরাপদ করার জন্য
আজ সন্তানেরা আন্দোলন করছে-
তাদের মনে করিয়ে দিতে পারছি না, প্রজন্ম হে!
ভাবো – ‘আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে’

অনর্থক এই বেঁচে থাকা নিয়ে যে আমরা
ভুলে যাচ্ছি ক্ষোভ,
তারা কি কখনও পরখ করেছিলাম মোমবাতির
মন! জানতে চেয়েছিলাম লাইটভালবের
বিবর্তন ধারা!

আমাদের জনপদে সূর্যগুলো আলোহীন হয়ে পড়ছে,
এই দুঃখ-গল্প আর কাউকে বলতেও চাই না।
অনেক আগেই কমেছে আমাদের বক্তাসংখ্যা,
এখন আমরা একে একে গুনছি,
কমে যাওয়া স্রোতাসংখ্যার সর্বশেষ স্রোতগুলো।

.
[ ১১ আগস্ট হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুদিনে ]
√ নিউইয়র্ক @ ১১ আগস্ট ২০১৮

ভাবতে পারি না

images ধূলি

ভাবতেই পারি না
তুমি নেই- না ফেরার দেশে
কি অভিমান করে
চলে গেলে- চলে গেলে,
সারা আঙ্গিনা জুড়ে
খুঁজে ফেরি- মা গো- মা;

তোমার রান্না ঘর-
ধান শুকনো উঠান,
পায়ের চটি- থাল গ্লাস
সবই দাগ লেগে আছে!
স্মৃতির ভেলা যাই ভেসে;

দুচোখে বর্ষার ভেজা
খই ফুটানো নোনা জল;
এভাবে ক্যান্সারের কাছে
পরাজয় হবে, মা গো- মা
আমরণ কষ্ট- সহ্য করা দায়-
ভাবতেই পারি না।

.
২৬ শ্রাবণ ১৪২৯, ১০ আগস্ট ২৩

সুড়ঙ্গে মাথা

মরলে একটু নাড়াচাড়া পড়ে
রিখটার স্কেল চার সাড়ে-চারে
চেপে যা এখন, লুকো শেলটারে

আমরা মিছিল-ঘেরাওয়ের জোট
নবযুগ আনা সেরা হুজ্জোত
চুমু ছিল যারা, গুটিয়েছে ঠোঁট

নেট প্র‍্যাকটিসে দেখে নিতে হয় —
জুনিয়ার ব্যাট। এক হিটে ছয়?
বিপ্লবী নল দৃঢ় নিশ্চয়!

এসব বোঝে না মধ্যবিত্ত
নিচু শির, ভয়পূর্ণ চিত্ত
বেঁচে থেকে ছেলে কীই বা ছিঁড়ত!

তাকিয়া সাজিয়ে উঁচু নম্বর,
হেলান দিয়েছি পয়গম্বর;
সুড়ঙ্গে মাথা, মুক্ত গতর

প্রশাসন আর রাজনৈতিক
টেবিলে বসেছে আধিভৌতিক
স্টেপ নেবে ঠিক স্টেপ নেবে ঠিক…