মাসুদুর রহমান (শাওন) এর সকল পোস্ট

মাসুদুর রহমান (শাওন) সম্পর্কে

মাসুদুর রহমান (শাওন) এর জন্ম ১৯৯৭ সালে, টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার সবুজে ঘেরা ছায়াঢাকা পঞ্চাশ গ্রামে। পিতার নাম মোঃ মজনু মিয়া, মাতা মোছাঃ খুকুমণি। প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, বর্তমানে আনন্দমোহন কলেজ'এ (ময়মনসিংহ) বাংলা সাহিত্যে অনার্সে অধ্যায়নরত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় ছড়া লেখার মাধ্যমে সাহিত্যে প্রবেশ। কবিতা ছাড়াও ছোট গল্প লিখে থাকেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ দ্বারা প্রভাবিত।

তোমার আমার হিসেব

একজন আমাকে কতটা দেখেছো তুমি…? কতটা জেনেছো আমায়…?
কেবল দেখেছো ঠোঁটের হাসি, জেনেছো আমার শরীরে বাষ্পের ঘ্রাণ,
অথচ দেখোনি ভিতরে গভীর কান্নার স্রোত, জানোনা শরীর জুড়ে কতটা অভিমান।
কতটা ছুঁয়েছো আমায়…? কতটা হাতের তলে ধরেছো আমার পশমের বুক…?
কেবল ছুঁয়েছো আমার যাকিছু ধবল সুন্দর, কেবল নিয়েছো শরীরের উষ্ণ ভাব,
হাওয়ার মতো দেখোনি ছুঁয়ে পঁচা গলা কোনকিছু, নাওনি তোমার শিরায় আমার রক্তের উত্তাপ।
কতটা মেলেছো চোখ কতটা কাছে এসে…? কতটা নিয়েছো ভিতরের বোধ…?
মেলেছো চোখ ফুল দেখবার মতো শুধু, নিয়েছো রোদের মতো সরল আদরটুকু,
অথচ রাখোনি ভিতরের ক্ষতে চোখ, নাওনি সেখানে জমে থাকা সুখের খরা, বিষাদের শোক।।
.
একজন আমাকে কতটা চেয়েছো তুমি…? কতটা রেখেছো তোমার মাঝে…?
কেবল চেয়েছো রাত্রির যাত্রায় দেহের টানে, কেবল রেখেছো শীতে জড়ানো চাদরের মতো কাছে,
অথচ চাওনি তৃষ্ণার জলের মতো তীব্র টানে, পুষে রাখোনি হৃদপিন্ডের মতো ভাজে।
কতটা পেয়েছো আমায়…? কতটা শুনেছো তোমাকে চাওয়ার স্লোগান…?
কেবল পেয়েছো হাসির মতো সহজ ভাষায়, শুনেছো অতীত মিছিলের মতো দাবী,
পাওনি নেশার গভীরে যেমন থাকে ঝিম, শোননি নিঃশ্বাসে কেবল তোমাকে চাওয়ার দ্রোহ।
একজন আমাকে কতটা বেসেছো ভালো…? কতটা দিয়েছো যাকিছু তোমার নিজের…?
বেসেছো কেবল মানুষের মতো ভালো, দিয়েছো কেবল বেঁধে দেয়া অধিকার,
বাসোনি ভালো জীবনের মতো করে, দাওনি যাকিছু একান্ত গোপন তোমার।।
.
০১/০৪/২০২০
#StayAtHome #StaySafe

যেমন ভালোবাসা চাই

আমার উন্মুক্ত ভালোবাসা চাই,
বেহায়া, নির্লজ্জ ভালোবাসা।
হাজারো মানুষের ভীরে চাই,
কেউ আমার কান কামড়ে দিক।
লাল করে দিক ঠোঁটের লিপস্টিকে,
আমার চিবুক, গাল, কপাল।।
.
কেউ আমার হাত ধরে জ্যাম ঠেলে,
পার হোক শহরের ব্যস্ত সড়ক।
আমার চোখে চোখ রেখে ডুবাক আমায়,
সুর তুলুক নতুন গানের, কবিতার।
কলার চেপে ধরে লাল মুখ করে বলুক,
“অন্যকারো দিকে কখনো তাকাবিনা।।”
.
আমার এমনি অসীম ভালোবাসা চাই,
কার্পণ্য ছাড়া নিখাদ ভালোবাসা।
আমি চাই কেউ আমার ঘাড়ের চুল ধরে,
চোখের সামনেই দম বন্ধ করুক টানা চুম্বনে।
কেউ আমাকে জড়িয়ে নিক প্রতিটি মুহূর্তে,
তার নরম দেহের মাঝে শয়নে জাগরণে।।
.
এমনি উন্মাদ রমণীর পুরোটা,
অধিকার চাই স্পর্শ করবার, গন্ধ নেবার।
ইচ্ছে হলেই মাঝরাতের অভিসারের,
কেউ আমাকে সঙ্গী করুক।
খামচে ধরুক আমার বাহু, পিঠ, গলা,
কেড়ে নিক আমার সর্বস্ব, হাড় অবধি।।
.
আমার বুকে এমনি ভরাট তৃষ্ণা,
একালের মামুলি ভালোবাসায় তা মিটবেনা।
আমি চাই কেউ শুধু আমার বেলাতেই,
হোক পৃথিবীর সবথেকে বেহায়া মানবী।
তার দেহের প্রতিটি ভাজ আমি গুণতে চাই,
আঙুলের নখের দরদহীন দাগ কেটে।
আমার বুকের দগ্ধ আগুনের নরক,
কেবল এমনই ভালোবাসায় নেভানো সম্ভব।।
.
২৮-১১-২০১৮
#StayAtHome #StaySafe

তুমি চলে যেতেই

তুমি চলে যেতেই বিকেলগুলো কত যে বিষণ্ণ হলো,
ধূসর সন্ধ্যার মতো হলো হৃদয়ের স্বপ্ন ক্যানভাস।
ক্রন্দনে ভারী হলো ভোরের আকাশ, সাদা কুয়াশা,
দলে দলে উড়ে যাওয়া পাখিরা হলো পরাধীন, খাঁচার পুতুল।
তুমি চলে যেতেই নক্ষত্রহীন হলো প্রতিটি রাত, তীব্র অন্ধকারের মূর্তি,
জলের স্রোতেরা হলো আবদ্ধ বৃক্ষের ছায়া, জমাট বরফ।।
.
তুমি চলে যেতেই বুকে ভিড়লো শ্মশানের ধোঁয়া,
ঘাসেরা সব মৃত পালকের মতো ঝরলো নীরব দ্বিধায়।
মধ্য দুপুর জুড়ে নামলো ক্লান্ত দেহের অচল অবসাদ, স্থির আলস্য,
ব্যর্থ ঠোঁটে জমলো অস্পষ্ট বাক্য সংলাপ, বুকে অভিমানের পাহাড়।
তুমি চলে যেতেই চেনা উল্লাস, আবেগী হৃদয় এতটা বদলে গেলো,
যেন সকল আকাশ আর পৃথিবীর পথে নেমেছে শোকের মিছিল।।
.
২৬/১২/২০১৯
#StayAtHome #StaySafe

স্মৃতি ও বিস্মৃতি

স্তব্ধ অন্ধকারে ছায়া ফেলে চাঁদ কুয়াশার পরে,
উড়ে যায় বরফের মেঘ পাখির মতো সীমান্ত শেষে।
কত ঘুমহীন চোখ জেগে থাকে মধ্যরাত্রির বেলকনি ধরে,
কত দূর পথ বেয়ে উড়ে আসে হীম বাতাস।
তারপর কিছু পাতা ঝরা শিশিরের মৌন পতন,
চুপচাপ পায়ে চলে নদীর বুকে শামুকের দল।।
.
আঙিনায় মরে পরে রয় কিছু সন্ধ্যা ফুলের থোকা,
কখনো শব্দ বাড়ে দু-একটা শালিকের ডানায় ডানায়।
আকাশে জ্বলে নক্ষত্রেরা জোনাকির আলোর মতো,
শান্ত স্রোতের মতো বয়ে যায় কত গভীর সময়।
দীর্ঘ প্রতিক্ষায় কাঁটে অবসরে জমা অপেক্ষারা,
মিথ্যে আশ্বাসে ভাঙ্গে স্বপ্ন দুয়ার, কাটে ঘুমের নেশা।
জেগে উঠি-
সহসাই মনে পড়ে যেন কাকে ভালোবেসে,
এমনই গোপন সময়ে লিখেছিলাম কত সহস্র কবিতা;
কারো চোখ ছুঁয়ে,
কল্পনায় ডুবে কারো বুকের ভিতর।।
.
১১/০১/২০২০
#StayAtHome #StaySafe

পুরোটা শূন্যতা

আমার মুঠোভরতি শূন্যতা,
দেহের উপর, নিচ, চারপাশ,
প্রবলভাবে ঘিরে রেখেছে শূন্যতা।
আমার ডান, বাম, এপাশ ওপাশ পুরোটাই,
আবদ্ধ রেখেছে শূন্যতার দেয়াল।।
.
মাথার উপরের ছাদ, পায়ের নিচের জমি,
আমার অবস্থান, প্রস্থান,
পুরোটা জুড়েই মাতম করছে শূন্যতা।
এখানে ওখানে যেখানে আমার আঙুল রাখি,
সেখানেই জন্ম নেয় শূন্যতার বিষফোঁড়া।।
.
আমার চোখজোড়া ভরতি শূন্যতার দৃষ্টিতে,
আমার কবিতার পঙক্তি, শব্দ আর কাগজে,
শূন্যতার ছন্দময় উথান পতন।
জাগরণ, স্বপন, ভালোবাসা, আবেগ, অনুভব,
সবটুকু হিসেব বেহিসেব জুড়ে কেবলই শূন্যতা।।
.
৩০/১০/২০১৮
#StayAtHome #StaySafe

ভালোবাসি বলতেই

তোমার একটু অবহেলা আমাকে যতটা কষ্ট দেয়,
ঠিক ততটা কষ্ট সাত কোটিবার যন্ত্রণাময় মৃত্যুতেও নেই।
তোমার একটু মন খারাপ আমাকে যতটা বিষণ্ণ করে তোলে,
ঠিক ততটা বিষণ্ণতা মেঘজমা আকাশেও জমে না কখনো।
তোমার একটু নীরবতা আমাকে যতটা নিথর করে দেয়,
ঠিক ততটা নিথর পৃথিবীর সমস্ত মৃতদেহেও নেই।
তোমার একটু অভিমান একটু দূরে থাকা আমাকে যতটা দূরত্বে ঠেলে দেয়,
ঠিক ততটা দূরত্ব পৃথিবীর জন্ম আর ধ্বংসের মাঝেও নেই।
আর তুমি যদি কখনো ভুল করেও ভালোবাসি বলো,
আমি ঠিক যতটা উৎফুল্ল হই; তার উদাহরণ এই পৃথিবীতে একটিও নেই।।
.
২৩/০৭/২০১৯
#StayAtHome #StaySafe

কিছু দিও

ধরো, তোমার হাতে আমি একটা নীল কাগজ দিলাম,
তাতে কিচ্ছু লেখা নেই, একদম কিচ্ছুনা।
তুমি কী করবে ? ভাববে কেন দিলাম ?
“কিছু লিখতে দিলাম নাকি আঁকতে ?”
এইতো দ্বিধা ?
আচ্ছা ধরো, তোমার ফোনে একটা টেক্সট পাঠালাম,
তাতে কিচ্ছু লেখা নেই, একদম কিচ্ছুনা।
তুমি কি প্রশ্ন করবে কেন দিলাম ?
অথবা অনুযোগ করবে একটা শব্দওতো লিখতে পারতাম,
“কেমন আছো ? ঘুমে না জেগে ?” সে প্রশ্নও করতে পারতাম।।
.
আচ্ছা বাদ দাও, এবার না হয় কিচ্ছু দিলাম না,
অহেতুক ভুল ধরলাম “টিপটা ঠিকমতো লাগানো হয়নি”,
কী করবে ? আগে আয়না দেখবে নাকি ঠিক করে দিতে বলবে ?
ধরো, হঠাৎ করেই তোমার সামনে দাঁড়িয়ে হাত বাড়ালাম,
কী করবে ? হাত রাখবে না দূরে সরে যাবে ?
আচ্ছা এসব বাদ দাও, অনর্থক কিছু দেবোনা, কোন মিথ্যে অভিযোগও নয়,
এবার কিছু চাইবো, যাকিছু ইচ্ছে হয় তোমার,
কী দেবে আমায়? জোৎস্না নাকি জোনাকির আলো ?
অথবা প্রত্যাখ্যান, নতমুখী কিছু অশ্রাব্য অভিশাপ নাকি ভালোবাসা ?,
বিষাদ, অনুরাগ যাই দাও, তবে তোমার ইচ্ছে মতো কিছু দিও,
অসমাপ্ত রেখোনা এই অনির্দিষ্ট চাওয়াটুকু, কেবল শূন্যতা হলেও দিও।।
.
২৭/১২/২০১৮
#StayAtHome #StaySafe

হয়ে যাও শুদ্ধ প্রেমিক

ভালোবেসে কষ্ট পেয়ে হও নষ্ট এবার,
বিরহের আগুনে পুড়ুক সবটা হৃদয়।
পচে যাক ভিতর জমিন,
সেখানে ফুটুক একটি গোলাপ,
ভালোবাসার একটি গোলাপ।।
.
ভালোবেসে ভেঙ্গে চুড়ে যাও,
গভীরে জমাও তুমি নগ্ন বিষাদ।
ভিতরে জমুক এক পৃথিবী অন্ধকার,
সেখানে জ্বলুক শুধু একটি জোনাক,
ভালোবাসার একটি জোনাক।।
.
ভালোবেসে শেষ হয়ে যাও,
নরকে পুড়ুক তোমার কফিন।
পৃথিবী না জানুক তুমি প্রেমিক পুরুষ,
ইতিহাস না হোক তোমার এ প্রেম সবটা শেষে,
তবু ভালোবেসে হও শুদ্ধ প্রেমিক কষ্ট পুষে।।
.
১৬/০২/২০২০
#StayAtHome #StaySafe

জীবনের মানে

উষ্ণ আঁধারের তলে কেঁদেছি ভীষণ,
বুকের ভিতর পুষেছি ব্যথিত নির্জন।
কেউ সে আঁধার দূরে ঢেলে আসেনি কাছে, মুছে দিতে জল,
কেউতো বুকে বুক চেপে ধরে দেয়নি প্রবল কোলাহল।।
.
গন্ধময় স্মৃতি ধরে কত যে কেটে গেছে শূন্য বিকেল,
কত যে সন্ধ্যা নেমেছে প্রত্যাখ্যাত ফুলের পরাজিত গন্ধ শুকে।
সেসব কথা কেবলই গোপন, কেউ দূর থেকেও ছুঁয়ে দেখেনি স্মৃতির পাথর,
কেউ আসেনি গোলাপ হাতে, বয়ে গেছে সময়ের স্রোত শুধুই তীব্র শোকে।।
.
বড্ড দুঃসময় কেটেছে আমার নেশার ঘোরে উন্মাদনায়,
কেবল চলেছি একা পৌষের ঘন কুয়াশার মতো অস্পষ্ট হয়ে আরও দূরে।
তারপর অবশেষে বুঝে গেছি; জীবন মানে কেবলই দুঃখভোগ,
বুঝে গেছি সুখের স্বপ্ন দেখা দুঃখের চেয়ে আরও বেশি দুঃখময়।।
.
১৮/০২/২০২০
#StayAtHome #StaySafe

ভালোবাসাহীন

ভালোবাসাহীন কেটে গেছে পৌষের কত নির্জন সন্ধ্যা,
কত পাখি হারিয়ে গেছে এমনই সন্ধ্যায় কুয়াশার অন্ধকারে।
চোখ মেলে দেখেছি দূরের আকাশে কত নক্ষত্রের নিভে যাওয়া,
এমনই পৌষের সন্ধ্যায়, কুয়াশার মৃদু মৃদু অন্ধকার হয়ে গেলে ঘন।।
.
ভালোবাসাহীন কেটে গেছে কত বিষণ্ণ দুপুর বেলা,
কত ক্লান্তিরা ভর করে নেমেছে সোনালী রোদের শরীর।
দেখেছি কত চৈতির হাওয়া উড়ে যেতে দূরে দিগন্তের পরে,
কত ভাঁটফুল ঝরে গেছে অজানায় অনাদরে ভালোবাসাহীন।।
.
কত মাঝরাতে বর্ষা ছুঁয়ে গেছে তোমার ছোঁয়াহীন এই অতৃপ্ত ঠোঁট,
মৌন কান্নার জল জমেছে বুকের ভিতর কালো মেঘের মতন।
বুঝে গেছি কত একা এই হাত, বিষাদের স্রোতে ঠাসা এই যন্ত্র দেহ,
ভালোবাসাহীন কেটে গেছে কত কদমের ঘ্রাণ, আহত আষাঢ়।।
.
কেবল তুমিহীনা আলোর সকাল চলে গেছে কত যে একলা নিথর হয়ে,
ঘুমের নেশায় প্রজাপতির ডানা, শালিকের গান থেমেছে কেবল।
দেখেছি স্পর্শ করে সহস্র দূর্বার বুকে নামেনি শিশির,
ভালোবাসাহীন এমনই সহস্র ভোরে, ভেঙ্গেছে কেবল ব্যাকুল স্বপন।।
.
তুমিহীনা কেটে গেছে পলাশ আর পাতা ঝরা কত বসন্ত বিকেল,
হাওয়ার বুকে শুকেছি কত পোড়া গন্ধ, ছুঁয়েছি প্রত্যাখাত দুটি হাতে।
শূন্য হাতে তোমাকে ছোঁবার ক্লান্ত নেশায় ঘুরেছি কেবল কত যে পথ,
ভালোবাসাহীন এমনই আগুন বুকে ধরে জ্বলছি কেবল দগ্ধ হয়ে।।
.
২২/০২/২০২০
#StayAtHome #StaySafe

ফিরে এসো

সেখানেই ফিরে এসো, কেটে গেলে পৃথিবীর এই অভিশাপ,
যেখানে কড়ই পাতার ফাঁকে নেমেছিলো বিকেলের রোদ।
যেখানে বিছানো ছিলো সাদা ভাঁট ফুলের শুভ্র মাদুর,
সেখানেই ফিরে এসো, পাবে আমাকে স্থির আগের মতোই।
রাত্রির অন্ধকারে আবার নেমে এলে নবমীর চাঁদ শান্ত পাড়ায়,
ফিরে এসো সেই লাউয়ের মাঁচার পাশে মৃদু পায়ে হেঁটে।
দেখবে সেখানে আলো আঁধারের চাদর জড়িয়ে আমি,
হাতের তালুতে আলতো ধরে থাকা কয়েকটি জোনাকি।।
.
০৭/০৪/২০২০
#StayAtHome #StaySafe

মা মাটি বাংলা

এখানে রাত্রির পর রোদ্দুর মাখা সোনালি সকাল,
দুয়ার পেরুলে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি হাওয়ায় চঞ্চল।
উঠোনে মাচার উপর শিম ফুলেদের কথকতা,
পৌষের কুয়াশায় উড়ে আসে ক্লান্ত বকের দল হিম সন্ধ্যায়।
এখানে দীঘির শ্যাওলা জলে হাঁসের তুমুল সাঁতার,
বিলের জলে জেগে উঠে শাপলার লাল সাদা মুখ তলে শালুক জমা।
এখানে বেগুনের নরোম পাতার ছাউনিতে বাঁধা টোনা-টুনির ছোট্ট সংসার,
তালের শক্ত পাতার তলে বাবুইয়ের অদ্ভুত কারুকাজ।
এখানে জোনাকিরা ঢেউয়ের মতো ভেসে বেড়ায় অন্ধকারে,
চাঁদের রাতে প্রাণ ফিরে পায় শেওড়া গাছে শাঁকচুন্নির গল্পেরা।
.
এখানে তপ্ত দুপুরে দেখা মেলে মাছরাঙার চৌকশ চোখ,
একই ফুলে বসে কালো ভ্রমর, মৌমাছি আর ধূসর ফড়িং।
চৈত্রের রোদে পথের ধারে জ্বলে উঠে সারি সারি ভাঁটফুল,
হিজল, অশথের পাতায় পাতায় লেগে থাকে শিশিরের চুমু।
কদমের হলুদ বুকে ঝরা বৃষ্টির বসবাস আষাঢ়ের দিনে,
এখানে সাদা মেঘের মতো শরতের কাশফুল হাওয়ায় মাতাল।
বটের ছায়ার তলে জমে উঠে ক্লান্ত দেহের সাজানো বিশ্রাম,
এখানে মাটির গন্ধে উল্লাসে ভরে যায় দেহের সবকটি কোষ।
এখানে নীল আকাশের তলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জমি উৎকর্ষতায়,
এখানে দরিদ্র কৃষকের ভালোবাসায় বাঁচে ফসলের প্রাণ।
তুমি যাও পৃথিবীর আর সব দেশে, পাবেনা এইসব, সবুজ আঁচলের মাঠ,
এমন মায়ের মতো করে পাবেনা তুমি বাংলার মাটির আদর।।
.
১৯/০৪/২০২০
#StayAtHome #StaySafe

আমাদের মায়েরা

তখন আমি একটা কোচিংয়ে জব করি, সংগত কারণেই কোচিংয়ের নাম এবং জায়গার নাম গোপন করছি। একদিন কোচিংয়ের নির্বাহী পরিচালক আমাকে ডেকে পাঠালেন, সন্ধ্যা পিরিয়ডের দুটো ক্লাস নিয়ে পরিচালকের সাথে দেখা করলাম। তিঁনি আমাকে বললেনঃ স্যার, একটা কাজে যেতে হবে। বললামঃ কিসের কাজ আর কখন ? তিঁনি জবাবে বললেনঃ আজ রাতেই ছুটির পরে এক ছাত্রের বাড়িতে যেতে হবে। ছাত্রের পরিচয় জানার পর বললামঃ আমিতো স্যার নতুন, তাছাড়া ওদের বাসাও চিনি না আর সেতো বেশ কয়দিন ধরে কোচিংয়েও আসেনা ঘটনা কী ? পরিচালক বললেন আমিও যাবো আপনার সাথে, ছেলেটার মা আমাকে কয়েকবার ফোন করেছে, আমাকে আর আপনাকে যেতে বলেছে বিশেষভাবে। ঘটনা কিছু বুঝতে পারলাম না, তবে আশ্চর্য হলাম এই ভেবে যে, পরিচালক নিজে যাবে তাও আবার এখনই যেতে হবে কী এমন কাজ! আর এও আন্দাজ করলাম ঘটনা হয়তো গুরুতর হতে পারে।।
.
ছুটির পর স্যারের সাথে ঐ ছাত্রের বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলাম, যেতে যেতে স্যার আমাকে নিয়ে গেলেন উপশহরের মূল এরিয়া থেকে একদম বাইরে একটা গ্রামের একদম শেষ প্রান্তে, আমি মনে মনে বললাম এতদূর থেকেও আমাদের কোচিংয়ে স্টুডেন্ট যায়। মূল রাস্তা থেকে অনেকটা নির্জন জায়গায় বাড়িটা, সেই বাড়ির আশেপাশে তেমন কোন বাড়ি নেই, ছিমছাম তবে অগোছালো একটা বাড়ি। বাড়ির ভিতরে ঢুকতেই মাছের বাসি উৎকট গন্ধ নাকে ভেসে এলো, দেখলাম বাড়ির উঠোনে মাছ ধরার জাল আর খাড়ি পড়ে আছে, বুঝতে বাকি রইলোনা এটা একটা জেলে বাড়ি। তারপর পরিচালকের ডাকে ছাত্র বেড়িয়ে এলো কুশল বিনিময় করতে করতে আমাদের একটা রুমে নিয়ে গিয়ে শক্ত একটা তক্তপোশে বসতে বলে ছাত্রটা গিয়ে তাঁর মাকে ডেকে আনলো। মধ্য বয়স্কা একটা রোগা মহিলা এলেন, দেখেই মনে হলো তখনও হয়তো কোন রোগে আক্রান্ত উঁনি। কুশল বিনিময়ের পর তিঁনি পরিচালককে বললেনঃ স্যার, আপনাদের ইংরেজির নতুন স্যারকে নিয়া আইছেন ? স্যার আমাকে দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তিনি আমাকে দেখে আরও আবেগ তাড়িত হয়ে পড়লেন। বললেন আপনার কথাই সজীব (ছদ্মনাম) সবসময় বলে, আপনাকে দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো আমার। আমার বিষয়ে আরও অনেক কথা বললেন যেগুলো এখানে বলা নিষ্প্রয়োজন।।
.
ভদ্রমহিলার সাথে মোটামুটি অনেক কথাই হলো কথার এক পর্যায়ে বললেন বাপে যা করে ছেলেরও তাই করতে হবে এমন কোন কথা আছে গো স্যার ? ওর বাপে না হয় জাইলা (জেলে) তাই কি ওরও জাইলা হতে হবে ? ওর বাপে ওরে পড়াবোনা তয় আমি পড়াবো। আমি কোচিংয়ে যেতাম অসুস্থ বলে ঘর থেকেই বের হতে পারিনা, না হলে আমি নিজে গিয়ে বলে আসতাম আপনাদের, তাছাড়া সব কথাতো আর ওখানে বলা যাবেনা তাই আপনাদের আসতে বলেছি। ভদ্রমহিলা আরও অনেক কথা বললেন যে কথাগুলোর সারমর্ম এটাই যে, ছেলেটার বাবা পড়াশোনা নিজেও করেনি ছেলেকেও করাবেনা। তিঁনি মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন, ছেলেকেও একই পেশাতে নিতে চান। মায়ের কথা হলো, না! ছেলে তাঁর পড়াশোনা করে বড় চাকরি করবে সরকারী অফিসার হবে। ভদ্রমহিলা আরও অনেক কথা বললেন, এক পর্যায়ে পারিবারিক নানা টানাপোড়েনের কথা বলতে বলতে কান্নাকাটিও করলেন। এও বললেন যদি ওর বাপে টাকা পয়সা না দেয় তবে তিঁনি নিজেই দিবেন সেটা যেভাবেই হোক। আর আমাদের টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করতে না করলেন। তিঁনি শেষমেশ বললেন দরকার হলে গয়না বেঁচবেন তবুও ছেলেকে পড়াবেন।।
.
ভদ্রমহিলা আমার হাত ধরে বললেনঃ বাবা, আমার পোলাডারে দেইখেন। আমি বললাম আপনার ছেলের প্রতি আমাদের নজর এমনিতেই বেশি, কারণ ও সবথেকে ভালো ছাত্র পি.এস.সিতে যেমন ভালো রেজাল্ট করেছে এবার জে.এস.সিতেও ভালো রেজাল্ট করবে আমরা আশা করি, ভদ্রমহিলা চোখ মুছলেন। বললেন আমি বাবা বড় অসুখে পড়ছি, জানিনা কতদিন বাঁচমু। আমি মরলেইতো ওর বাপে ওরে আর পড়াবোনা। আপনারা আমার পোলারে দেইখেন, ট্যেকা পয়সার চিন্তা করবেন না। আমি সব দিমু গত মাসের বেতন দিতে পারিনাই তাই ও কোচিংয়ে যেতে চায়না আপনেরা ওর কাছে কোন টাকা চাবেন না ও শরম পায়, এই বলে আমার হাতে কয়েকটা নোট গুজে দিলেন আমি টাকাটা পরিচালকের হাতে তুলে দিলাম, তিঁনিও টাকা দেখলেন না, উঠে আসার সময় তক্তপোশের উপর রেখে দিলেন আর বললেন ওর দায়িত্ব কোচিং এর, ও খুব মেধাবী ছাত্র নিয়মিত যেতে বলবেন আর ওকে ডেকে আমরা পরেরদিন থেকে নিয়মিত কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বললাম। খেয়াল করলাম ছেলেটা লজ্জায় মাথা নিচের দিকে দিয়ে চোখ মুছতেছে আর তখন ভদ্রমহিলা কিছুটা জোরেই কেঁদে উঠলেন।।
.
তখন রাত প্রায় ১০ টা বেজে গেছে, ছাত্রটা আমাদের উঠোন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলো তবে তখন আর প্রথমবারের মতো মাছের গন্ধবোধ করলাম না এতক্ষণ থেকে হয়তো গন্ধটা আমার সওয়া হয়ে গিয়েছে। আমরা বের হয়ে রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। বাড়ির বাইরে থেকে ছেলেটার পড়ার শব্দ শোনা গেলো সে জোরে জোরে পড়তেছে The national flag is the symbol of independence…
.
২৭/০৪/২০১৯
#StayAtHome #StaySafe

নিশিভোর


ছবি সংগৃহীত।

আশ্রয় চাই আমি এক আল্লাতে,
বিতাড়িত সেই শয়তান হতে।
করিলাম শুরু, নামে আল্লাহ মহান,
করুণা আর দয়া যার পরম অফুরান।
.
বল হে নবি,
আমি আশ্রয় করি প্রার্থনা প্রভাতের রব কাছে,
এমন কিছু হতে যা অবাঞ্ছিত তার সৃষ্টি মাঝে।
যখন রাত্রি আসে ঘিরিয়া আঁধার অনিষ্ঠ সাথে লয়ে,
সেই ক্ষতি হতে আশ্রয় চাই যা করে যাদুকর ফুৎকার দিয়ে।।
.
আরও আশ্রয় চাই আমি মোর খোদা পরে,
হিংসুকের খারাপ হতে যখন সে হিংসা করে।।
.
০৪/০৩/২০১৭
(সূত্রঃ আল-কুরআন, সুরাঃ ফালাক, আয়াতঃ ০১-০৫)

মধ্যবিত্ত

মধ্যবিত্ত মস্তিষ্কের আত্মসম্মান বোধ বদলে দেয়,
পেটের ক্ষুধার দুপুর চোখের জোছনা বিলাসে।
ভিতরের অসহ্য ক্রোধের পাহাড় ছাপিয়ে,
চোখে মুখে ফোটায় চকচকে হাসির নক্ষত্র।
মধ্যবিত্ত প্রাণে নতুনের গোপন চাওয়া ঢেকে থাকে,
পুরনো জিনিসে ভালোবাসার চাদরের তলে।
মধ্যবিত্ত মাথার উপরে সূর্যের করুণ ঝলক,
নিমেষেই বদলে যায় শ্রাবণের কালো মেঘে।
মধ্যবিত্ত সংসারেও চাল ফুরায়, ডাল ফুরায়,
হিসেব করে করে গোপনে নিভে যায় চুলার আগুন।
ভিতরে অসহ্য যন্ত্রণা বাইরে সম্মানের ফুলঝুরি,
মধ্যবিত্ত জীবনের সাথে এইতো ঈশ্বরীয় জটিল উপহাস।
তবুও মধ্যবিত্ত মনে থাকে ঈশ্বরের গোপন প্রার্থনা,
অলৌকিক মদদে থাকে পূর্ণ বিশ্বাস।
মধ্যবিত্ত চোখ অন্ধকারে কাঁদতে শিখে গেছে,
আলোতে শিখেছে মেকি হাসিতে বাঁচার নির্মম কৌশল।।
.
১২/০৫/২০২০
#StayAtHome #StaySafe