বিভাগের আর্কাইভঃ কবিতা

সৌজন্য চাউনি

খুব করে একটা ঝুমসন্ধ্যার তর্কোন্মাদ
নিয়ে প্রবেশ করছি। অবসরে-দূর থেকে
ভেসে আসে ছিঁড়ে পড়া উড়োজাহাজের
-আলো, চানাচুরে লুকোনো ধূসর জটা-
গানের ফিতেয় অবিন্যস্ত-রাত্রি। জন্মাচ্ছে-

সুফি অভিধানে মুঠোভরতি পরিণাম
বহুপুরাতন দাগ মুছে-চাউনি। একটা
সৌজন্য সংখ্যায় আসন্ন রঙিন ব্যানার
খুঁজে পায় ফসলি বিস্ময়।

এখানে সাইবার-চাঁদ, এইসব আদল
চিয়ার্সে বয়ে যায় সবুজ দ্রাক্ষারস,
তীব্র গম্ভীরতা পেরোয়ে কয়েদি কবিতায়…

শর‌তের আকা‌শে মেঘ ‌নেই

300

ভাদ্র মা‌সের গরম এ‌সে ছু‌ঁয়ে দেয় দেহ,
কড়া ‌রোদ্দুর দে‌হে বুলায় উষ্ণতায় স্নেহ;
আকা‌শে নেই মেঘ আজ সা‌রি সা‌রি,
উষ্ণতায় বিতৃষ্ণা উফ অস্ব‌স্তির হাওয়া ম‌নের বা‌ড়ি।

নদী কিংবা পুকুর ঘা‌টে
ই‌চ্ছে হয় ব‌সে থা‌কি ই‌তি দি‌য়ে কর্মপা‌ঠে
চ‌লো পা ডু‌বি‌য়ে ব‌সি জ‌লে,
আকাশ দে‌খি সু‌খে থাকার ছ‌লে।

‌কেমন যেন হাঁসফাঁস ক্ষণ, বিতৃষ্ণা ম‌নের কো‌ণে,
এই একটু যাও তো শু‌নে,
আকা‌শের কিনা‌রে চোখ রে‌খে দে‌খো মেঘ নেই
এমন দি‌নে কাট‌ছে না ক্ষণ আন‌ন্দেই।

‌‌রিক্সায় ঘুর‌বে না‌কি?
কর্ম ব‌্যস্ততা‌কে দি‌য়ে ফা‌ঁকি,
খোলা আকা‌শের নি‌চে বস‌লে হয়‌তো সুখ আস‌বে ফি‌রে,
বড্ড গরম বই‌ছে এই ছোট্ট নী‌ড়ে।

আ‌মি আকা‌শের ‌মে‌ঘে রাখ‌তে চাই চোখ
য‌দি এক টুক‌রো মেঘ চ‌লে আ‌সে সম্মুখ
মুগ্ধতায় ভু‌লে যা‌বো গর‌মের উষ্ণতা,
কে‌টে যা‌বে যত বিতৃষ্ণার দৈন‌্যতা।

আকা‌শে মেঘ নেই অথচ শরত এ‌সে হা‌জির,
নে‌য়ে ঘে‌মে কাপ‌ছি গর‌মে থির‌থির;
চ‌লো আকা‌শের নি‌চে গি‌য়ে দাঁড়াই
আনমনায় কিছুটা ক্ষণ সু‌খে‌তে হারাই।

.
(স‌্যামসাং এস নাইন প্লাস, পীঁরেরগাঁও মিয়াবাড়ী চুনারুঘাট)

দিনলিপি

3

মন মন্দিরে
আজন্ম সন্ন্যাসের বাস
নির্ঘুম
দীঘল রজনী — ভবঘুরে দিবস
রোজ ফোটে ঘাস ফুলের আদলে
রোজ
ঝরে যায়…
রোজ কাঁদে মন..
বুকফাটা কটকটে তৃষ্ণায়!

ঘোর তপস্যায়
পেরুচ্ছি কণ্টকময় পথ
উপেক্ষা করে
জগত সংসারের তাবৎ নিয়ম নীতি
মোহগ্রস্ত দিনলিপি শেষে
ফিরি
নিরবতায়, অশ্রুত কবিতায়।.

নিশ্চুপ মন

index

অনেক দূরের যে পথটা এঁকেবেঁকে চলে যায়
তার পাশ দিয়ে বয়ে যায় একটা পাহাড়ি ঝর্ণা।
কুলুকুলু জলের শব্দ, একরাশ ফেনিল উচ্ছ্বাস
তারই মাঝে মাঝে থোকা থোকা বেগুনি ফুল।

এলোমেলো বাতাসে পাইনের পাতা তিরতির
সারি সারি দেবদারু পথের ধারটি ঘিরে থাকে।
বাহারি সব পাখিরা এদিকে ওদিকে গেয়ে যায়
তাদের গানের সুর বহুদূর অবধি ভেসে আসে।

সূর্য্যের আলোয় ঝিকমিকিয়ে ওঠে ঝর্ণার জল
দুহাতে আঁজলা ভরে বেঁচে থাকে নিশ্চুপ মন।।

দীর্ঘ পথ … একটি ব্যর্থতার কবিতা

image_2

মানুষ আপনাকে
আপনার পাশে দীর্ঘ পথ চলতে প্রতিশ্রুতি দেবে
দরজার প্রথম পদক্ষেপ থেকে
অজস্র মানুষের ভিড় ঠেলে,
স্বতঃসিদ্ধ নির্জনতা পেরিয়ে অদৃষ্টের গন্তব্য পর্যন্ত।

কেউ কথা রাখে আবার কেউ রাখে না
আপনি কি পেয়েছেন
আপনি কি পাননি তা আপনার হৃদয় জানে।

মানুষ তার এক জীবনে ভেতরের কষ্ট
পরিচিত মানুষের ভিড় ঠেলে
গোপন করতে পারলেও একদিন জনসম্মুখে আসবে
আপনার প্রতি কেউ সহানুভূতি দেখাবে
আপনার প্রতি কেউ ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দেবে
আসলে তারাই প্রকৃত মানুষ
যারা কথা রেখেছে কথা রাখে কথা রাখবে।

তারা যদি কথা রাখতো তাহলে
তাদের জীবনী অন্য ভাবে লেখা হতো
আজ হয়তো বিদ্রোহ হতো না
হৃদয়ের ভেতরে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতনা
তাইতো কারও স্মৃতি লেখা হয়
কষ্টের দাবানলে জ্বলতে জ্বলতে
কারও জীবন পেয়ে হয়তো ঘরেই কেটে যায়।

দয়া মায়া স্নেহ ভালবাসার বিপরীতে
কারও জীবন হয়তো এভাবেই কেটে যায়
কারও জীবন হয়তো প্রকাশ হয়
প্রকাশিত সেই জীবনের গল্প মানুষের সামনে আসে
হয়তো তখনই কেবল জানা যায়
সেই জীবনের গল্প।

কেউ একজন
জীবনের দীর্ঘ পথে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো
বলেছিলো আমাদের শরীর ফুটে বেরিয়ে আসবে অন্য শরীর।

প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ক্ষণস্থায়ী এই জীবনে
হাতে হাত ধরে পৃথিবীর শেষ গন্তব্যে পৌছাবো
এই ঘর থেকে এ রাস্তা থেকে
মাতৃভূমির এক পথ থেকে আরেক পথে
মানুষের জনসমাগম থেকে নির্জনতা পর্যন্ত।

বিশ্বাস তো করতেই হয়
কথা দিয়েছিলাম তার সময়ের সঙ্গী হবো
অসময়ের সঙ্গী হব জীবন থেকে পর জীবনের সঙ্গী হব।

এই সংক্ষিপ্ত জীবন আজ বড্ড একা
এই একাকী জীবন নিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর শেষ উপত্যকায়।

এই দীর্ঘ পথের পরে
জীবনের কোন বিশ্রাম ছিল না
পায়ের নরম কোমল পৃষ্ঠদেশ ফোস্কা পড়েছে
কিন্তু অন্তহীন পথ একাই চলেছি
কিন্তু গন্তব্য জানা নেই।

হুম, হয়তো ঈশ্বরকে দেখিনি
শুনেছি ঈশ্বর মানুষের হৃদয়ে বাস করে
মন্দিরে মসজিদে ঘোরাঘুরি করে
কিন্তু যে মানুষ ভালোবাসায় বিশ্বাসী
তার হৃদয়ে বাস করে কি?
আমার কাছে ঈশ্বর নামের অস্তিত্ব যেভাবে
এখন ধোকা বলে মনে হয়

পথ চলা পায়ের মতোই হৃদয়টা পাথর হয়েছে
চোখ হয়েছে ঝাপসা, ক্ষুধা দারিদ্রতা
এসব আমার কাছে উপভোগের ব্যাপার নয়
অনুন্নত পৃথিবীর দেশে দেশে মানুষ মরতো না অন্নহীন।

যদি প্রশ্নই করতে হয় প্রকৃতিকে কর
মিথ ঈশ্বরকে নয়
যদি প্রশ্ন করি শয়তান যখন শয়তান হয়নি
তবে তাকে কোন শয়তান প্ররোচনা দিয়েছিল?

জানি সময় ঈশ্বর সম্পর্কে ধারণা রাখেনা
আর সময় ঈশ্বর সম্পর্কে
দীর্ঘ পথ দীর্ঘ জীবন আর সংক্ষিপ্ত সময়
আমাদের ভেতরের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি
ঈশ্বরের অস্তিত্ব না হলেও বাস্তবতায়
সেই প্রিয় মানুষটিকে যতই ভুলে যেতে চেয়েছি
ততই ভালোবেসে ফেলেছি;

ঈশ্বর চাইলে সেই জায়গাটা দখল করতে পারত
সেই অভাবটা পূরণ করতে পারত
তার কারিশ্মাটিক ক্ষমতা বলে
ঈশ্বর হয়তো জানান দিতে পারতো
হে আমার বান্দা আমি আছি এমনটা কিছুই হয়নি সেখানেও ঈশ্বর ব্যর্থ

নাকি ঈশ্বর এসব কোন কিছুই চান না?
নাকি ঈশ্বর সৃষ্টির পরে সবকিছু ত্যাগ করেছেন?
কি প্রয়োজন ছিল এই পৃথিবীতে আসার?
কি প্রয়োজন ছিল এত কষ্ট
এত দুঃখ এত জ্বালা এত যন্ত্রণা সহ্য করার?

প্রকৃতি যদি নিয়ন্ত্রণ করতে হয়
তাহলে আমি বলব ঈশ্বর নয়
প্রকৃতি আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছে
এই মহাবিশ্ব প্রকৃতির অবয়ব
প্রকৃতি এই মহাবিশ্বের আশ্রয়দাতা
এখানে যা কিছুই ঘটে তাতে কারো হাত নেই।

চলছি একা
পৃথিবীর এই পথে পথে
দীর্ঘ পথ
অনন্ত পথ
এক আলোকবর্ষ থেকে অন্য আলোকবর্ষের অভিমুখে
এক গন্তব্য থেকে অন্য গন্তব্যের অভিমুখে
এক জীবন থেকে অন্য জীবনের পথে।

দীর্ঘদিন
দীর্ঘ সময়
আর দীর্ঘ ক্লান্তি শেষে
হয়তো এভাবেই হারিয়ে যাব
পৃথিবী স্মরণ রাখবে অন্য নামে অন্যভাবে।

বলতে পারো
এই মানুষটা এতটা ভালো না যে
খারাপ থাকলেও বলবে ভালো আছি
প্রকৃতি মানুষকে ভালো রাখতে জানে
কিন্তু মানুষ মানুষকে তার ভালো থাকার জায়গাগুলোকে নষ্ট করে দেয়

দীর্ঘ পথ
দীর্ঘ সময়
আর দীর্ঘ জীবন জুড়ে আমি সেই
আমি হয়তো সেই প্রিয় মানুষের দ্বারা নষ্টের শিকার।

বিরহী বধু

সূর্যের শেষ রশ্মি বাড়ির পথে হাঁটলে
হিমফুল ভাবে বেড়িয়ে আসি;

হিমের সাথে পাল্লা দিয়ে ছোট নদী
শুকিয়ে যায়। মাঝির নৌকা অলস
চরে আটকে গেলে বিরহী বধু অপেক্ষার
প্রহরে শেষে মূর্ছা যায়।

কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে সূর্য পুনরায় ফিরে আসে
হিমফুল হারিয়ে যায় সুদূরে। নদীর যৌবন
ফিরে এলে মাঝি বাইতে থাকে নাও।
জ্ঞান ফিরেও বধুর অপেক্ষা ফুরোয় না,
সমতলের মাটি ভরাট হয় তবু
আসে না তার প্রেমের প্রহর।

একটি ভালো থাকার গল্প

শিশুরা আছাড় খেতে খেতে হাঁটতে শিখে
আমি হাঁটতে হাঁটতে আছাড় খেতে শিখেছি
পাথর্ক্য কেবল সীমাহীন সময় অথবা অসময়!

তবু এখনও পাথরের উপর বেনিয়া রাস্তার
ল্যাম্পপোষ্টের নিচে দাঁড়িয়ে আছি….
কখনো ভগ্নাংশ মানুষ আবার কখনও শিম্পাঞ্জি!

আমার কাছে এই দাঁড়িয়ে থাকাও কম কিছু নয়
অতিকায় হস্তিও বরই গাছে ভয় পায়
বিশালাক্ষি তালগাছ সেও…..
আমি তো সেই তুলনায় ঢের ঢের ভালো আছি!

এই ভালো থাকা নিয়ে বেশ কিছু মহাকাব্য
হতে পারে, হতে পারে কিছু জীবন্ত উপন্যাস,
ইদানিং আমার কাছে নগদ আলোকেই আঁধার
ঠাহর হয় —সবখানে পোকামাকড়ের চাষ
বুঝতে পারিনা কে করলো আমার এই সর্বনাশ?

বৃষ্টি জল

307

বৃষ্টি মানে জানা হয়নি কোন দিন
তবুও বৃষ্টিতে মন হয় উতলা
বৃষ্টি মানে খোলা জানালায় দূর দৃষ্টি
আর কদম ফুলের ঘ্রাণ।

বৃষ্টি মানে বিরক্তিতে ভরা উদাস দুপুর
বৃষ্টি মানে বই হাতে গুনগুন গান
বৃষ্টিতে জেগে ওঠে বনবীথি
জেগে ওঠে সকল বৃক্ষের প্রাণ।

বৃষ্টিতে জাগে মনের কোণে
চুপি চুপি প্রেমের দোলা
রাশি রাশি ইচ্ছেগুলোর আনন্দে ভাসা।

বৃষ্টি মানে নীল পরীর ছাদ গোসলে
মাতাল হাওয়ায় কোমর দোলা
সেই দোলার ছন্দে ছন্দে নিজেকেও হারিয়ে ফেলা।

বৃষ্টি মানে গাও গেরামে নকশি কাঁথায় সুই সুতা
বৃদ্ধ মায়ের পান সুপারির কষ্টের এক গল্প কথা।

ঠিকানা

imag

পশু জবাই রক্ত জানি
সুখের উড়া পায়রা!
কালমেঘের আাকাশ জানি
কষ্টের ধোয়া আয়না;
আইল পাথারে খুঁজে পাই
সবুজ ঘ্রাণের মুখ!
মাটির বুকে ফুটেছে সব
রক্ত জমার সুখ
ভাসায় যত রক্ত জলে
মাটির কান্না দুখ
দুর্বঘাসের নিচে মাটির ঠিকানা
ডাকি কত শুনে না।

৩১ ভাদ্র ১৪২৯, ১৫ সেপ্টেম্বর ’২২

কবিতা

306

আমি জানি সূর্যের গতিপথ কখনোই বদলানো যায় না
তবুও প্রতিদিন স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখি…
কংক্রিটের এই আভিজাত্য শহর ভুলে সবুজ সরল পল্লীর
গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছের দাড়িয়াবান্ধা খেলা
মাচানে ঝুলে থাকা লাউয়ের অপলক দৃষ্টি আর পুই ফলের হোলী খেলা।

স্বপ্ন দেখি কৃষক হবো,
চৈত্রের তাপদাহে চৌচির হওয়া মৃত্তিকাকে তৃষ্ণা মেটাবো
বিশুদ্ধ বাউরা বাতাসে দোল খেলবে সবুজ ফসল
ক্লান্ত কৃষক বাড়ি ফিরে কৃষাণীর আঁচলতলে খুঁজে নিবে মাটির সুখঘ্রাণ

অতঃপর,
একদিন কংক্রিটের এই নির্মম জীবনের অবসান ঘটিয়ে
সুজলা-সফলা শস্য শ্যামলা গ্রামে চারচালা ঘরে করবো বসবাস…

প্রিয়

306

আলিঙ্গনের আকাশ ছুঁইয়ে
হয়তো চেয়ে দেখা
এখন আমার বৃষ্টি ভেজা দিন
বই হাতে সে দিনের পরে
মুখ ডুবিয়ে থাকা

স্বপ্ন গুলো বৃষ্টি নিয়ে
ঝরিয়ে যাবার মতো
নোনতা জলে ভিজিয়ে তোলা মুখের ছবি আঁকা
হৃদয় টা ওই দূর আকাশের প্রেমের উপত্যকা।

আসতে চাইলে আসতে পারো
জমে যাবে নুনের জলে
হয়তো হবে খুব বাতাসে মেঘের ছবি আঁকা।
তারপরে ওই মুখ ডুবিয়ে তোমায় হবে দেখা।

বাইসাইকেল

সাবধান হতে হতে এক মধ্যবিত্ত শরীরে
পাহারা বসিয়েছি। ত্বকের ঘ্রাণমাখানো
ঘামটুকু বিসর্জনের ছবি না হয়ে যায়
এই ভেবে ভেতরে আলাদা হচ্ছে নিয়ম-

বরষার রোদ, তার তলে প্রচুর-প্রচুর সুখ
হালনাগাদে সমানবয়েসী বাইসাইকেল
আক্রান্ত হতে থাকে সরল নিমগ্ন সুর
যেন মৌসুমপাখির গান, রোজ নিজের
গায়কী গলা কেটে নাচায়-

গোলকয়েনের মতো; ধানফুলের শীষ-
বাতাস ফেরানো শহরে অধিকার যেন
লিখে নিচ্ছে তার সার্বভৌম মায়াগাছ
আমি ঋণী, রাস্তা থেকে রাক্ষস সরাও
ঠোঁটের খোলে উৎসুক খেয়াতরী-এনেছি!

অন্তর্ধান

307

সৌমিক একজন পুরনো চিলেকোঠার মানুষ
সে বলল, জানো সৌরভ দা
কষ্টের পরতে পরতে জীবনের দুঃখগুলো
খুব জোরে সোরেই আঘাত দিয়ে যায়
তারপর, তারপর ঠিক যেখান থেকে এসেছিলাম
সেখানেই প্রত্যাবর্তন।

তুমি কি জানোনা এখানে যে বৃষ্টি হয়
শহরেও সেই একই বৃষ্টি, তবে শহরের বৃষ্টির সাথে মিথেন গ্যাসের সংখ্যাটা একটু বেশি থাকে
মানুষগুলোর মধ্যে যেমন ভেজাল বৃষ্টিতেও

কিন্তু যেখানে ভিন্ন মাটি,
ভিন্নরূপ, ভিন্ন কাদাও ভিন্ন পথ
কোথাও তো এক নয়। যদি তা হতো
তাহলে হয়তো কিছুটা শান্তি পেতাম
এই ভেবে যে, সবাই একই কষ্টে জর্জরিত
সবাই একই ব্যথায় কাতর
আর সবাই একই বেদনায় নাজেহাল।

বুঝলে সৌরভ দা,
কেউ কি তা জানে জীবনের শেষ বসন্ত
কোথায় গিয়ে থামবে
অবনত শীর কোথায় দাঁড়াবে কেউ কি তা জানে জেনেছে কী কেউ কখন, কোথায় জয় হবে
কোথায় পরাজয় হবে
কোথায় গিয়ে ভিন্নখাতে মোর নেবে জীবনের গতিপথ।

এসব যদি জানা যেত তাহলে হয়তো
অনেকটা সহনশীল হয়ে জীবনের পথটাকে শক্তপোক্তভাবে গেঁথে নিতে পারতাম।
পৃথিবীর এই রঙ্গমঞ্চে তোমাদের সামনে দাঁড়াবে না।

বেলা বয়ে যাওয়া সেই দিনগুলোর
কষ্টের ঘানি টানতে টানতে শরীর হয়েছে ভারী
আজ মনে হয় শরীরে বার্ধক্য এসেছে
জীবন যেন এক তরতাজা যুবকের পড়ন্ত বিকেল।

বন্ধুরা যার যার কর্মে ব্যস্ত;
যার যার সময়ে তাঁরা আজ সেরা
তবে, ওরা শিক্ষিত হলেও চিন্তাশীল নয়।
নীতিবান হলেও বিচারিক বোধ অত্যন্ত দুর্বল
সমাজ ও পরিবারের কট্টর নিয়মগুলো দেখতে দেখতে এইসব এখন তাদের কাছে যেন খুবই সহজ।

অজস্র দায়বদ্ধতার মাঝে থেকেও
তারা যেন সুখী; এই এক জীবনে
প্রত্যাবর্তনের অসমভাণ্ডার ছিল
পাহাড়ের বুক চিরে গর্ভপাত ঘটিয়ে
জল বের করার দৃঢ়তা ছিল;
কোন এক দুর্ঘটনা, কোন এক বিশ্বাসঘাতকতা
তৈরি করেছে জীবনের এই অন্তিম পথ
যেখান থেকে লেখা হয় চারপাশের জীবনের গল্প।

সেখানে গল্প ছাড়া আর অন্য কিছু নেই;
সেখানে একাকীত্ব ছাড়া আর কিছু নেই;
সেখানে প্রতারণা আর প্রতারণা
সমবেত মানুষেরা যার যার লাভের আশায়
ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে তাদের অনৈতিক কর্মের সাথে।

এটাই বুঝি পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ যে যেভাবে পারে
একে অন্যকে আঘাত করছে
এখানে জয়ীরাই টিকে থাকে
পরাজয়ের দাবানলে পুড়তে পুড়তে যে মানুষ জয়ী হয়।

সৌরভ দা, একটি কথা মনে রেখো
এভাবেই হয়তো শেষ অন্তর্ধান
পুরনো রা কেউ জানবে না-
জানবে না যে শহরের দাপিয়ে বেড়ানো
পথ ঘাটের মানুষেরা, পরিচিত-অপরিচিত
বন্ধুরা জানবে না কোনদিন!

একদিন তাদের মাঝে এই মানুষটি ছিল
মানুষ হেরে যায় সময়ের কাছে
বয়সের কাছে, অর্থের কাছে, অসুস্থতার কাছে
আর হেরে যায় প্রতারণার কাছে।
যারা অর্থের পিছে ছুটতে ছুটতে নষ্ট করে জীবন।
প্রলোভনের চাদরে মোড়া চোখ, অন্তরের বিষ বৃক্ষ লালন করে যে মানুষ রাখে হাতে হাত
সে মানুষ ও অবিশ্বাস ছাড়া বিশ্বস্ত নয়।

নৈবেদ্য বিলাস

3049

ভুলে যাই
দমের পরতে পরতে তলিয়ে দিই উদ্বেগ
হারিয়ে যেতে দিই স্বপ্ন, বিপুলা আবেগ
দূরে বহুদূরে
সীমানা ছাড়ায়ে উড়িয়ে দিই দৃষ্টি
নামিয়ে আনি
মেঘের গভীরে লুকানো বৃষ্টি!…

প্রাণের উদ্যানে সবুজ মখমল
পুস্পিতার শিথান
নিঝুম মস্তকে
এঁকেবেকে বয়ে চলে নদী
কলকল ধ্বনি…
শুনি
পরিযায়ীর গান, নৃত্য মুখর ধ্যানী মুনি
তলাচ্ছি
ঝড়াচ্ছি
সুরের লহরে
ছন্দের জঠরে….
বিমোহিত ঘূর্ণিপাক রূপোলী হাতছানি!…

আহ….. প… র…মা..
আহ.. উৎসের উৎস নিরুপমা ঝর্ণা
তারও উর্ধ্বে
না তারও গভীরে
ডুব সাঁতারের ইতিহাস
উৎসের উৎসে রয়েছি মিশে
সেটাই আমার আদি নিবাস।

শেকড়ে আমি
শিখরে আমি
শান্ত সকালে কুয়াশা বিলাস,
দহনে আমি
নিপুণে আমি
উজ্জ্বল দিনের শৌর্য নির্যাস,
আমি রণবীর
আমিই হিমাদ্রীর
গভীর ঘুমার্চ্ছন্ন তৃপ্ত পিয়াস।

আলোর অভিসারে
বুনছি নৈবেদ্য মালা
তাহার জন্য গুনছি প্রহর বিশুদ্ধ লীলা
তাহার পাণে বাড়াচ্ছি হাত
একবিন্দু কৃপার আশায় জাগছি অনন্ত রাত!

রিস্কি

সবাই নিজের স্বার্থ দ্যাখে
মানছে মনে মনে
স্বীকার করতে বলো – ওদের
কিল-ঘুষি কে গোনে!
নিজের সুখের ব্যস্ত খোঁজে
তোমার ভালো দেখছে না
চোট-ধাক্কা দিনের মেনু
হও গে’ যতই মুখচেনা
লোকাল ট্রেনের চতুর্থ সিট
হিসেব- বহির্ভূত
তেমনি সবাই সবার কাছে
রুক্ষ হওয়ার ছুতো

এই জনতাই ব্রহ্ম, জান-এ
সাপটে নিতে হবে
নিলেই চোরা ছুরি বুকের
বাইপাস-উৎসবে
কিশোর, তবু হোক না তোমার
গঠিত উচ্চাশা
ভালোবাসা, ভালোবাসা
রিস্কি ভালোবাসা

.
[“ছোটলেখকি” বই থেকে]