বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

জীবন জিজ্ঞাসা

মানুষটা যে ছিল-কি তার প্রমাণ?
প্রমাণ আছে ওর ঘরের প্রতিটি দেওয়ালে।
নিত্য আসা-যাওয়া সময়ের ব্যবধান
তারও তো দরকার-শুধু সময়ের তালে তালে।
কি নাম? বাপ-মায়ের আদরের ডাকা
স্নেহ ভালোবাসা, নয় সে তো অবাঞ্ছিত কারো,
কর্মের বন্ধনে বেঁচে থাকা, তা না হলে ফাঁকা।
শূণ্যতার আঁচলে বাঁধা বুঝি গেরো-
তবুও তো তাকে বেঁধে রাখা দায়,
পশ্চিম আকাশে দে’খ আবছা আঁধার
পায়ে পায়ে ধেয়ে সময় কি চলে যায়?
ওই সুর্য অস্তাচলে; হাসা কাঁদা সবই সার।

ইরাবতী (একজন হত্যাকারীর গল্প)

ঐ যে বিল্ডিংটা দেখছেন, ওখানে একটি ছেলে থাকে। আমি প্রতিদিন বিকালে ছাদে যাই ওকে দেখার জন্য। ওর সাথে আমার প্রেম নয়, আমার ভাল লাগা। এ ভাল লাগার কথা ছেলেটি জানেও না, হয়তো কোনদিন জানবেও না। ও যখন জানালার পাশে এসে দাড়ায়, আমি দেখি, ওর চোখ, ওর চুল, ওর মুখ।
ওর মুখ দেখলে মনে পরে রবিঠাকুরের কবিতা-

যদি প্রেম দিল না প্রাণে
কেন ভোরের আকাশ ভরে দিলে এমন গানে গানে?কেন তারার মালা গাঁথা,কেন ফুলের শয়ন পাতা,কেন দখিন হাওয়া গোপন কথা জানায় কানে কানে?।
যদি প্রেম দিলে না প্রাণে
কেন আকাশ তবে এমন চাওয়া চায় এ মুখের পানে?তবে ক্ষণে ক্ষণে কেন
আমার হৃদয় পাগল হেন,তরী সেই সাগরে ভাসায় যাহার কূল সে নাহি জানে?।

আরে! আমার নামই তো বলা হল না।
আমি ইরা। আমার বাবার ইরাবতী। প্রতিটি বাবার কাছে তাদের মেয়ের একটি নিজস্ব নাম থাকে। ইরা নামটি সম্ভবত আমার মায়ের দেয়া। এ নামের কারন আমার জানা নেই তবে ইরাবতী নামের অর্থ আমি জানি। ইরা অর্থ -দক্ষের কন্যা, কশ্যপের স্ত্রী, এবং ইরাবতী – উত্তরের কন্যা, পরীক্ষিতের স্ত্রী ।
হুম…পরীক্ষিতের স্ত্রী!!
আমিও স্ত্রী, তবে পরীক্ষিত কিনা তা জানি না। আমার বর জামান চৌধুরী। এক সময় আমার মায়ের বন্ধু ছিলেন। আমার মায়ের বন্ধু শুনে অবাক হচ্ছেন?
ঠিক, মায়ের বন্ধু না বলে আমার বাবার পত্নীর বন্ধু বললে যথার্থ হবে। কারন আমার মা মারা যাবার পরে বাবা যাকে বিয়ে করেন তাকে আমাদের সামাজিক ভাষায় সৎ মা বলে। তাহলে বলা যেতে পারে জামান চৌধুরী আমার সৎ মায়ের বন্ধু ছিলেন ।
জামান চৌধুরী আর আমার বয়সের ব্যবধান বছর ত্রিশেক হবে, ধরুন আমার বয়স ২২ হলে তার ৫২। তাতে কি? আমার সৎ মায়ের ভাষ্য মতে, আমার ভাগ্যটা অনেক ভাল। কারন অনেক ধনাঢ্য প্রানীর সাথে বিয়ে হয়েছে আমার। এত বড় ব্যবসা! আচ্ছা প্রানী বললাম রাগ করেননি তো? পুরুষ কি প্রানী হতে পারে? মেয়েদের পুরুষকে দেখে সর্বদা সামলে চলতে হয়। পুরুষ বলে কথা!! না হলে রক্তাক্ত হতে হবে। হোক সেটা শারীরিক অথবা মানসিক।
আর রক্ত? ওতো প্রতি মাসেই ঝরে। সে যাই ঝরুক পুরুষের জৈবিক চাহিদা মেটাতেই হবে, ওসব রক্ত-ফক্ত কিছু না।

তাহলে কিছুটা পুরনো কথা দিয়ে শুরু করি-
আমার মা মারা যাওয়ার বছর খানেক পরে আমার বাবা আরেকটা বিয়ে করেন। তার কিছুদিন পরে জামান চৌধুরীর আগমন ঘটে। উদ্দেশ্য ছিল বাবা ডুবে যাওয়া ব্যবসাকে সফল করা। এ নিয়ে আমার সৎ মায়ের হট্টগোলের শেষ ছিল না। অনেকবার বাবাকে শুনতে হয়েছে -“আজ আমার বন্ধু না থাকলে তোমাকে রাস্তায় ভিক্ষা করতে হত “
দিন দিন জামান চৌধুরীর আসা যাওয়া বাড়তে থাকে। বাবা বাসায় না থাকা অবস্থায়ও দেখতাম তিনি বাসায় আসতো কিন্তু কিছু বলার সাহস ছিল না আমার।

একদিন বাবা এবং সৎ মা কোন এক অনুষ্ঠানে যায়, আমাকে এসব যায়গায় নেয়া যায় না বলে একা বাসায় থাকতে হয়। এমন সময় বাসায় আসে জামান চৌধুরী। আমি তাকে ড্রইং রুমে বসতে দিয়ে আমার রুমে চলে যাই। হঠাৎ জামান চৌধুরী আমার রুমে আসে, চেপে ধরে হিংস্র বাঘের মত, তার ক্ষিপ্ত বাসনা পূরণ করে, বিশ্বাস করুন সেদিন আমার অসহায় মুখ যদি আপনাকে দেখাতে পারতাম! আমার মর্ম, আত্মা, আমার চিত্ত, চেত সেদিনই মারা গিয়েছিল। আমার মায়ের মুখটা অনেক মনে পড়ে, মা থাকলে এমন হত?
চলে যায় জামান চৌধুরী, শুধু বলে যায়- কাউকে কিছু বললে বাবাকে হারিয়ে ফেলবো!
পড়ে থাকি আমি, পরে থাকে আমার দেহ, আর কিছু রক্ত …
মাস ছয়েক পরে একদিন জানতে পারলাম, জামান চৌধুরীর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। আমার বাবার সম্মতি না থাকলেও তার কিছু করার ছিল না, কারন বাবার ব্যবসার অবস্থা ছিল শোচনীয়। বাবার ব্যবসা বাঁচাতে আমাকে বলির পাঠা হতে হয়।
এক বৃষ্টি বিকেলে আমার বিয়ে হয়। সেদিন প্রথম বাবার চোখে পানি দেখেছিলাম। আমার মায়ের মৃত্যুর দিনও বাবা কাদেঁনি। তবে আজ কি হল বাবার?

বিয়ের রাত। মানে বাসর রাত। জামান মদ খেয়ে এসেছিল সেদিন, ঘরে ঢুকে তার প্রথম কথা ছিল- “তারাতারি কাপড় খুলে বিছানায় আয় মাগী, এত ঢং করার কি আছে? সবতো দেখে নিয়েছি “
জানেন, ঐদিন থেকে আর কখনো কাঁদিনি, কারন প্রতিটিদিন ছিল একই রকম নরক যন্ত্রণার। আমাকে সব সময় তৈরী থাকতে হত নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার জন্য। কে বলে, মেয়েদের সৌন্দর্য তার চুলে, চোয়ালে, ঠোঁটে? সেটাতো আমার আঘাতের স্থান। এ ঘরের প্রতিটি দেয়াল জানে আমার আর্তনাদ, আমার চিৎকার!
কিন্তু আজ থেকে আর শুনতে হবে না সেগুলো। ঐ যে দেখেন জামানের নিথর দেহ পড়ে আছে!
হ্যাঁ আমি!!! আমি একটু আগে জামানকে খুন করেছি! আজ আমার প্রথম বিবাহ বার্ষিকী ছিল। আমি জানি এসব জামানের মনে থাকার কথা নয়। আজও জামান মদ খেয়ে এসেছিল। এখনো তার গন্ধ আমার শরীরে লেগে আছে। রান্না ঘরের বড় ছুড়িটা এনে রেখেছিলাম। জামান যখন ঘুমালো, আমি ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম। একবার শুধু ওর মুখটা দেখেছিলাম তারপর নিজেকে থামাতে পারিনি, চোখ খুলে দেখি শুধু রক্ত, অনেক রক্ত!
এ রক্ত আমার নয়! এ রক্ত একজন পুরুষের! এ রক্ত একজন মানুষের!

অনেক কথা বললাম, ঐ সিলিং ফ্যানের দড়িটা আমার জন্য অপেক্ষা করছে, আমি মায়ের কাছে যাব। যেতে আমাকে হবেই, ঐ যে মা আমাকে ডাকছে …..

কথোপকথন -০৪

ক্রিং… ক্রিং… ক্রিং……….

–হ্যালো … কি বলবে বলো?

–কি বলবো মানে? সেই কখন থেকে কতবার ফোন
দিয়েছি হিসেব করছো? তুমি ফোন রিসিভ করোনি
কেন? কি হয়েছে তোমার? কিছু বলোনি কেন?

–কই না তো কিছু হয় নি। এমনই।

–তাহলে আমার সাথে কথা বলোনি কেন? কোনো এস এম এসও করোনি?

— এমনই। মন চায় নি তাই।

— ও…. মন চায়নি নাকি তুমিই কথা বলবা না। কোনটা?
কথা বলবা না সেটা তো বলে দিলেই পারো।

— কি বলার আছে?

— তাই না, কি বলার আছে।
তুমি কি আমার সাথে এই রিলেশনটা রাখতে চাও না?

–না চাই না! এই কথা বলার সাহস নেই বলেই তো এত
অভিনয়।

— চয়ন, তুমি কি সত্যি বলছো? কথা বলবা না, রিলেশন রাখ বা না?

— হুম সত্যি ই বলছি…..।

— চয়ন তুমি তো ঠিক আছো। এমন কেনো করছো।
কি হয়েছে তোমার, বলো আমাকে, প্লীজ বলো।

— কিছু হয়নি। আমি ঠিক আছি।

— না চয়ন, তুমি ঠিক নেই। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, তুমি এমন করবা,আমাকে এভাবে ঠকাবে তুমি কখনো ভাবিনি।
আমি কখনো ভাবিনি চয়ন, কখনো না….।

— হ্যালো –হ্যালো–হ্যা—লো। নিশ্চুপ…..।

০৭/০৭/১৯

দেখা হইয়াছে চক্ষু মিলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া – ২

১। ‘How to change your life’ বইটি একবার দ্বিতীয় সংস্করণে নামের বানান ভুল করে ‘How to change your wife’ হয়ে বের হয়েছিলো, তারপর সেটা সাথে সাথেই বেস্ট সেলার! পরে সেটা তারা কারেকশন করেছিল। তাতে কি? ব্যাপক বিক্রিই প্রমান করে সবাই এরকম একটা বই অনেক দিন থেকে খুঁজছিল।

>আহা এরকম যদি সত্যি একটা বই থাকত!

২। কয়েকদিন আগে ক্রিকেটার নাসির আর তার প্রেমিকা শোভার অডিওর কয়েকটা ভার্সন রিলিজ পেয়েছিল। বিশেষ করে শোভার কিছু অডিও। যারা বাংলা ভাষার সব ধরনের গালগালীর সংকলন চান তাদের জন্য আমি এটা চোখ বন্ধ করে সাজেস্ট করলাম। একবার শুনলে আপনার মনে হবে বাংলা ভাষার সব ধরনের গালীর উপর PhD করে ফেলেছেন। YouTube এ আছে।

>কষ্ট করে খুঁজে নিন। কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না! আর এই কেষ্ট যা তা কেষ্ট না।

৩। আপনি কি জানেন গুয়ামের আইন অনুসারে কোন কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারেনা!! তাই কিছু লোক আছে যারা পয়সার বিনিময়ে কুমারিত্বের অভিশাপ মুক্ত করার কাজ করে!! মেয়ের বাবা-মা সাধারনত এই কাজের জন্য অনেক টাকা খরচ করেন!! মজার বিষয় হলো এরা কাজ শেষে সার্টিফিকেটও দেয়!!

>সেইদিন খুব ইয়ার দোস্ত টাইপের একজন উপরের নিউজটা শেয়ার করে খুব দুঃখ করে আমাকে বললঃ কেন যে এই দেশে জন্ম নিলাম! এত দিন কি সব উল্টা পাল্টা চাকরী করছি! আমি এর আক্ষেপ শুনে একদম বাক্যহারা!

৪। বর্তমানে আমরা কেবল পোশাকে আধুনিক হচ্ছি, মানসিকতায় না। মেয়েদের স্লিভলেস পরা, সর্ট ড্রেস পরা বা স্কুটি চালানোই কেবল যদি আধুনিকতা হয় তবে সেটা ভুল, অবশ্যি ভূল। আমরা অনুকরণ করেই দ্রুত বড় হতে চাই, একবারে গাছের মগডালে ওঠার স্বপ্নের মতো, সিড়ি বাদ দিয়ে লিফটে উঠার মতো! এদিকে যে পাছার কাপড় খুলে কখন সবার অজান্তেই পড়ে গেছে সেদিকে কোন খবর নাই। আধুনিক হবেন সমস্যা নেই, বেঁচে থাকতে হলে আধুনিক হতে হবে এটা কে আপনাকে বলল?

>আপনি এই অদ্ভুত ধ্যান ধারনা নিয়ে আধুনিক না হয়ে আদিম হয়ে যাচ্ছেন। পাশ্চাত্যের ন্যাংটো সংস্কৃতি আমাদের এত সুন্দর সংস্কৃতির সাথে মিশিয়ে এটাকে আরও ন্যাংটো করে দিয়েছেন, সেটা কি জানেন?

৫। সেদিন যেন কোথায় ইন্টারনেটে পড়েছিলাম, এয়ারটেলের অ্যাড দেখে বন্ধুত্ব শিখো না, তাহসান এর নাটক দেখে প্রেম শিখো না। এগুলোতে হাজারটা জ্ঞানের কথা থাকতে পারে, তবে সবার অভিভাবক টাকা কিংবা অবস্থানের কথা কখনো লেখা থাকে না।

বাস্তবতা হলো, তোমার কাছে যখন মধু থাকবে তখন অসংখ্য শুভাকাংখী তোমার খোঁজ খবর নিবে, ভালো মন্দ জানতে চাইবে। এগুলোর অ্যাটিওলজী তুমি না, তোমার কাছে থাকা মধুটা। তাই নিজের কাছে থাকা এই মধুর ডিব্বাটার যত্ন নিও। মনে রেখ, ভোমরার অভাব না থাকতে পারে পৃথিবীতে, মধূ কিন্তু সবার কাছে থাকে না। কষ্ট করলে ঐ মধু সংগ্রহের জন্য করো, আশে পাশের ভোমরা গুলাকে আটঁকে রাখতে করো না।

>কথাটা দারুন বাস্তব এবং সত্য মনে হলো আমার কাছে । আপনার কি মনে হয়?

৬। অবশেষে সিভিতেও…সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ব্যক্তির স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘গ্র্যাজুয়েশনের পর স্বাভাবিক ভাবেই চাকরি খোঁজা একটা নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই এই অফিস ঐ অফিস ঘুরে ঘুরে সিভি ড্রপ আর ইন্টার্ভিউ দিতে দিতে এখন আমি বেশ বিরক্ত। গতকাল এক অফিসে গেলাম সিভি জমা দিতে, সেখানে এক আপুর সিভি নিয়ে একটা কথায় আমি বেশ অবাক হলাম। উনার মতে আমার দেয়া সিভি সেক্সি না। এখন মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরছে… আপা সিভি সেক্সি হয় কেমনে? সিভিতে দেয়া ছবিতে ক্লিভেজ দেখায়, নাকি লিখাগুলোয় আমার চাকরীর এক্সপেরিন্সের বদলে কারো সাথে শুয়ে জব পাওয়ায় পার্রদশী কিনা তা দেখিয়ে? অবাক লাগে যখন প্রফেশনাল কোনো সিভির বদলে আজকাল মানুষ সেক্সি সিভি খুঁজে। হায়রে মানুষ!! এখন সিভিকেও সেক্সি হতে হবে!!! নাহলে জব কাছে আসবে না!’

>ভাষাটা সুমধুর হলেও যা লিখেছে সেটা পড়ার পর থেকে আমি বাক্যহারা। এই বিষয়ে আমার কিছু বলা সম্ভব না। আপনাদের কি মন্তব্য?

৭। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ নিয়ে বিতর্ক কিংবা সমালোচনার শেষ নেই। গতবছর ফাইনালের মঞ্চের নাটকীয়তাকে ঘিরে কম বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। আর এবার অনুষ্ঠানটির ফাইনাল পর্ব শেষ হতে না হতেই সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে ফাইনালিস্টদেরকে নিয়ে। জনপ্রিয় মডেল এবং বিজ্ঞাপনের অভিনেত্রী ফারিয়া শাহরিন সম্প্রতি শেষ হওয়া ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানটি নিয়ে তার অভিমত শেয়ার করেছেন। দেশের একটা দৈনিক পত্রিকা এটা তুলে দিয়েছে। তিনি লিখেনঃ-
“আমরা কেন এই মেয়েগুলাকে নিয়ে হাসতেছি? ওদের কী দোষ। ওরা তো জেনেই আসছে যে ওদের চেহারাটাই আসল। ওদের কি শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হয়েছিল নিবন্ধনের আগে? আমার এ নিয়ে সন্দেহ আছে। আর যদি নাই দিয়ে থাকে ওদের কী গ্রুমিং করাইছে বা কারা করাইছে যারা ‘হাউ আর ইউ’ বলার পর ‘আই এম ফাইন’ পর্যন্ত বলা শিখাই নাই?
এতো ক্ষ্যাত মেয়েরা কীভাবে ফাইনালিস্ট হয় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে? বিচারকরা কীভাবে ওদের এতো দূর আনলো? যতদূর জানি যে প্রতিযোগিতায় অনেকগুলো রাউন্ড থাকে। তাহলে এতোগুলো রাউন্ড কীভাবে এই মেয়েগুলা শেষ করে ফাইনালে আসলো? এই দেশে সবসময় ক্ষমারই মূল্যায়ন হয়, যোগ্যতার না। তাই এসব মেয়ে ওইটা জেনেই আসছে। ব্যর্থতা এসব সংগঠকদের যারা এত বড় একটা প্ল্যাটফর্মকে কমেডি শো বানানোর সুযোগ করে দেয়”!

>মেয়েটার কথার খুব যৌক্তিক তাৎপর্য আছে আর তাই এটা এখানে তুলে দিলাম।

৮। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর বুকে হাত দেয়ার জন্য আটক করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে। তিনি রোববার বিমানে চড়ে হিউস্টন থেকে আল বাকার্কি যাচ্ছিলেন। এ সময় তার সামনের সারিতে বসা একজন নারীর বুকে দু’বার হাত দেন। এ অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম ব্রুস আলেকজান্ডার। তিনি বলেছেন, ‘নারীদের অঙ্গ স্পর্শ করা দোষের কিছু না। কারণ, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নিজে এ কথা বলেছেন’। এবিসি নিউজকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। ঘটনার শিকার নারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। তিনি কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন প্রথমবার হঠাৎ করেই তার বুকে ব্রুসের হাতের স্পর্শ লেগে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার একই ঘটনা ঘটার সময় বিপত্তি বাধে। আদালতের তথ্য অনুযায়ী, ফ্লাইট চলাকালীন ওই মহিলার ঝিমুনি এসে গিয়েছিল। তখন ব্রুস আলেকজান্ডার আবার তার বুক স্পর্শ করেন। এ সময় ওই নারী ঘুরে দাঁড়ান। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তিনি এ কাজ করছেন? এবং তাকে অবশ্যই এসব কাজ বন্ধ করতে হবে। এ নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে বিমানের স্টুয়ার্ডরা ওই নারীর সিট বদল করে দেন। বিমানটি আলবাকার্কিতে অবতরণের পর পুলিশ ব্রুস আলেকজান্ডারকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে বলেন, যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন মেয়েদের গোপন স্থানে হাত দিলে কোন দোষ নেই। পুলিশ তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছে। মঙ্গলবার দিনের আরো পরের দিকে তাকে আদালতে তোলার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারাভিযানের সময় একটি অডিও টেপ প্রকাশিত হয়। সেখানে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়ে ছিল যে, সেলেব্রিটিরা চাইলে নারীদের অঙ্গ তাদের অনুমতি ছাড়াই খামচে ধরতে পারে। তার এই মন্তব্যের জন্য তার নিজের দলসহ সারা দেশে প্রবল সমালোচনা হয়।

>লেখাটার পড়ার পর আমাদের দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের কথা কেন যেন খুব করে মনে পড়ে গেল!

বর্তমান এবং সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আমার মতো একজন অতি তুচ্ছ আমজনতা কি ভাবে আর মন কি চায় সেটাই তুলে ধরার এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। পুরো লেখাটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত। নিজের জীবনের কাছ থেকে যে ঘটনা গুলি দেখে মনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে সেগুলি ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরে যাব যদি সময় ও সুযোগ থাকে। এই এক্সপেরিমেন্টের এটাই দ্বিতীয় লেখা পোষ্ট। আমার মাথায় সারাক্ষনই এরকম উল্টা পাল্টা লেখা ঘুরে……

এর আগের পর্ব পড়ুন:-
দেখা হইয়াছে চক্ষু মিলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া – ১

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুলাই ২০১৯

বৃষ্টি কাব্য – দ্বিতীয় খণ্ড

বৃষ্টি কাব্য – দ্বিতীয় খণ্ড

কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারীর কবিতাগুচ্ছ
বৃষ্টিতে ভেজা বৃষ্টির কবিতা
……………………………………

ভূমিকা

কবিতা হোক প্রকৃতির অপরূপ, মানবতা, সামাজিক মূল্যবোধ, বৈষম্য, অধিকার, নৈতিকতা, অধিকার, শোষণ-বঞ্চনা, আদর্শ, অবক্ষয়, আর ঘটনা প্রবাহ নিয়ে ছন্দের অভিবন্দনা। কবিতার মুক্তবাণী ডানা ছড়াবে দিগন্তে। মানবিক বিবেক জাগ্রত করে এগিয়ে যাওয়ার আশার আলো দেখাবে।

কবিতা মানুষের কথা বলে, কবিতা জীবনের কথা বলে। কবিতা প্রকৃতির কথা বলে। কবিতা বৃষ্টির কবিতা বলে। কবিতাগুচ্ছে নিয়ে এবার প্রকাশিত হলো বৃষ্টিকাব্য দ্বিতীয় খণ্ড। কবিতাগুলি ইতিপূর্বে শব্দনীড় ও বাংলা কবিতার আসরে প্রকাশিত হয়েছে। আশা করি প্রথম খণ্ডের মতো বৃষ্টিকাব্য দ্বিতীয় খণ্ডও পাঠকের দরবারে সমাদর পাবে। প্রত্যাশা রাখি।

কবিতার বিপ্লবে আজ যোগ দিয়েছেন বহু নাম জানা অজানা কবি।
তাদের সবাইকে জানাই শব্দনীড় ব্লগের
পক্ষ থেকে সংগ্রামী অভিনন্দন।
জয়গুরু!

বিনীত কবি
নারায়ণা বিহার
নতুন দিল্লী-১১০০২৮
……………………………………

বৃষ্টি কবিতা-১
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা
ঘন মেঘ গরজায়,
কালো মেঘের অন্তর হতে
বিজুলি চমকি চায়।

আকাশ জুড়ে আলোর খেলা
চারিদিক অন্ধকার,
অজয় ঘাটে নৌকাটি বাঁধা
বন্ধ খেয়া পারাপার।

খেয়ার ঘাটে নাই কো মাঝি
চলে গেছে মাঝি ঘরে,
দূরের গ্রামে বাদল নামে
অঝোরে বরিষা ঝরে।

গাঁয়ের পথে সকাল হতে
লোকজন নাহি চলে,
অঝোর ধারে ঝরিছে বৃষ্টি
পথ ঘাট ভরে জলে।

বর্ষায় ভেজা সরস মাটি
মাটিতে সবুজ ঘাস,
চাষীরা খেতে লাঙল চষে
সারাদিন করে চাষ।

দিনের শেষে ক্লান্ত চাষীরা
ফিরিছে আপন ঘরে,
বৃষ্টি নেমেছে মুষল ধারে
অজয় নদীর চরে।

……………………………………

বৃষ্টি কবিতা-২
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আষাঢ়ের কালো মেঘ ঘন বরষায়,
ঘন কালো মেঘ ভাসে আকাশের গায়।
গুরু গুরু ডাক শুনি আসে কোথা থেকে,
জ্বলিছে বিজুলীধারা মেঘে এঁকে বেঁকে।

আষাঢ়ে বাদল নামে আমাদের গাঁয়ে,
সীমানায় নদী ঘাট রাঙা পথ বাঁয়ে।
নদী মাঠ ভরে যায় বরষার জলে,
কাদাপথে চাষীভাই হাল নিয়ে চলে।

খেয়াঘাটে মাঝি নাই কেহ নাই কূলে,
নদীতে প্রবল বন্যা নদী উঠে ফুলে।
দুরন্ত বরিষা নামে আমাদের গ্রামে,
আসিল প্রলয় বুঝি আজি ধরাধামে।

মুষল ধারায় নামে বাদলের ধারা,
অজয় ছুটিয়া চলে পাগলের পারা।

……………………………………

বৃষ্টি কবিতা-৩
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আষাঢ় মাসে
বাদলা দিনে
আজও বৃষ্টির দেখা নাইরে, বৃষ্টির দেখা নাই।

বাদল দিনে
মেঘের কোণে
কালো মেঘের দেখা নাই রে, মেঘের দেখা নাই।

গুরু গম্ভীর
ডাকে না দেয়া
ঘন মেঘের গর্জন নাই রে, মেঘের গর্জন নাই।

আকাশ পারে,
ভরা আষাঢ়ে,
বিজুলির আলো নাই রে, বিজুলির আলো নাই।

কড়া রোদ্দুরে
জীবন পুড়ে
শীতল জল কোথায় পাই রে জল কোথায় পাই।

অজয় পারে
নদীর ধারে
অজয় নদীতে বান নাই রে নদীতে বান নাই।

দিনের শেষে
পাহাড় ঘেঁষে
পশ্চিমেতে সূর্য ডুবে যায় রে সূর্য ডুবে যায়।

সাঁঝের বেলা
জোনাকি মেলা
চাঁদের আলো কোথাই পাই রে আলো কোথায় পাই।

আঁধার হলো
ফুটলো তারা
রাতে নীল আকাশের গায় রে নীল আকাশের গায়।

রাত ফুরালো
সকাল হলো
আজও বৃষ্টির দেখা নাই, তাই বৃষ্টির দেখা নাই।
আসছে বৃষ্টি, তাই বৃষ্টির পদধ্বনি শুনতে পাই।

……………………………………

বৃষ্টি কবিতা-৪
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

কালো মেঘ আকাশটাকে
রেখেছে আজকে ঢেকে,
রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টি পড়ে
আজকে সকাল থেকে।

বৃষ্টি পড়ে মুষল ধারায়
অজয় নদীতে বান,
একতারাতে মধুর সুরে
বাউল ধরেছে গান।

পথের বাঁকে কলসী কাঁখে
বৃষ্টি ভেজা রাঙাপথে,
রাঙা বধূ জল নিয়ে আসে
অজয়ের ঘাট হতে।

বৃষ্টিতে ভিজে পাখিরা সব
তরুর শাখায় বসে,
বৃষ্টিতে ভিজে চাষীরা সব
মাটিতে লাঙল চষে।

বৃষ্টি নামের মিষ্টি মেয়েটা
বৃষ্টিতে ভিজতে চায়,
না নিয়ে ছাতা বৃষ্টির দিনে
ভিজে ভিজে ঘরে যায়।

বৃষ্টি কাব্যের কবিতারা সব
বৃষ্টির দিবসে ভিজে।
বৃষ্টিকে নিয়ে কবিতা লিখে
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী নিজে।

……………………………………

বৃষ্টি কবিতা-৫
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

সেদিন দেখি বাদল নামে
আমার মাটির ঘরে,
সকাল হতে বৃষ্টির ধারা
অবিরত পড়ে ঝরে।

ভাঙা পাঁচিলে বসেছে কাক,
আমার বাড়ির পাশে,
মুষলধারে বাদল নেমেছে
মেঘ কালো হয়ে আসে।

কালো মেঘে বিজুলি আলো
ঘন ঘন চমকায়,
গুরু গম্ভীর মেঘ ডাকে ঐ
দূর আকাশের গায়।

মোর বাড়ির উঠোনটাতে
জমে এক হাঁটু জল,
বৃষ্টির জলে ব্যাঙের দল
করে কত কোলাহল।

বর্ষা প্রবল পথে জলকাদা
পথ চলা হলো দায়,
জলে কাদায় মাটির পথে
ভিজে ভিজে সবে যায়।

সকাল হতে সারাটা দিন
অবিরাম জল ঝরে,
বর্ষার দিনে বৃষ্টির কাব্য
লিখে কবি প্রাণভরে।
……………………………………

বৃষ্টি কবিতা-৬
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আকাশ ঘিরে কালো মেঘের
গুরু গম্ভীর গর্জন,
সকাল হতে নেমেছে আজ
অতি প্রবল বর্ষণ।

অজয় নদে এসেছে বান
বইছে প্রবল ঢেউ,
ছাড়েনি নৌকা গাঁয়ের মাঝি
নাই আজ কূলে কেউ।

বর্ষায় ভিজে রাঙী গাইটি
ঘন ঘন ডাক ছাড়ে,
মরাল আসে মরালী পাশে
নয়ন দিঘির পাড়ে।

বর্ষায় ভিজে ইস্কুলে যায়
এ গাঁয়ের যত ছেলে,
বর্ষায় আজ ময়ুরী নাচে
আপন পেখম মেলে।

বর্ষার দিনে গাঁয়ের চাষী
লাঙল চালায় মাঠে,
বৃষ্টিতে ভিজে লাঙল চষে
সারাদিন মাঠে কাটে।

সকাল হতে বর্ষা নেমেছে
জল ঝরে অবিরাম,
ভেঙেছে বাঁধ ঢুকছে জল
কেঁদে ওঠে সারাগ্রাম।
……………………………………
বৃষ্টি কবিতা-৭
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আষাঢ়ে নেমেছে বৃষ্টি অঝোর ধারায়,
অজয়ে এসেছে বান গ্রাম ভেসে যায়।
পথ ঘাট দিঘি খেত ডুবে আছে জলে,
রাঙাপথে লোকজন ভিজে ভিজে চলে।

ওপারে বাদল নামে, এপারেও নামে.
ভেঙে গেছে নদীবাঁধ জল ঢুকে গ্রামে।
অবিরাম জল ঝরে কালো মেঘ ডাকে,
কালো মেঘ অন্ধকারে চারদিক ঢাকে।

তরুর শাখায় বসে বিহগের দল,
নীড়হারা পাখি সব করে কোলাহল।
গাঁয়ের চাষীরা সব মাঠে করে চাষ,
অবিরত বারি ঝরে আষাঢ়ের মাস।

কালো মেঘ চারদিকে ছাইল গগন,
বৃষ্টি কাব্য লিখে কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।
……………………………………

বৃষ্টি কবিতা-৮
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আষাঢ়ের মাসে
কালোমেঘ ভাসে
আকাশের আঙিনায়।

মেঘের গর্জন,
প্রবল বর্ষণ,
চারিদিকে বসুধায়।

বরষা নেমেছে
পুকুর ভেঙেছে
জল ঢুকে মোর গাঁয়।

ছিঁড়ে গেছে পাল
মাঝি ধরে হাল
আনে তরী কিনারায়।

ঘাটে কেউ নাই
মাঝি ঘরে যায়
আঁধারে গগন ছায়।

বৃষ্টি থেমে যায়
রাতের বেলায়
চাঁদতারা হাসে গায়।
ফুটফুটে জোছনায়।

……………………………………

বৃষ্টি কবিতা-৯
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

জল ঝরে সারাদিন সারা রাত ধরে,
পথ ঘাট নদী মাঠ জলে আছে ভরে।
থেকে থেকে শোনা যায় মেঘের গর্জন,
রিম ঝিম সারা দিন প্রবল বর্ষণ।

অজয়েতে এলো বান কানায় কানায়,
বাড়িঘর ভেঙে পড়ে জল ঢুকে গাঁয়।
অজয়ে এসেছে বান কূলে নাই কেউ,
নদীজলে ভেসে চলে কূল ভাঙা ঢেউ।

অবিরত বারি ধারা ঝরে অবিরল,
পথেঘাটে জল কাদা হয়েছে পিছল।
রাখাল বালক আসে নিয়ে গরুপাল,
ফিরিছে গাঁয়ের চাষী কাঁধে নিয়ে হাল।

অবিরাম বারি ধারা হয় বরিষণ,
কবিতায় লিখে কবি শ্রীমান লক্ষ্মণ।

……………………………………

বৃষ্টি কবিতা-১০
-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

আকাশ জুড়ে মেঘ করেছে
সারা আকাশ কালো,
গর্জন করে মেঘ অবিরল
চমকে বিজলি আলো।

আষাঢ় মাসের বাদলা দিনে
অবিরত বৃষ্টি ঝরে,
গাঁয়ের পথে জল জমেছে
মাঠঘাট জলে ভরে।

অজয় নদে বান নেমেছে
নাইকো ঘাটে মাঝি,
নদীর ঘাটে নাইকো কেহ
বাদল ঝরে আজি।

ঝম ঝমা-ঝম বৃষ্টি পড়ে
আজকে সকাল হতে,
সবেগে বয়ে যায় জল
রাঙা মাটির পথে।

ধান খেত জলে আছে ভরে
শূন্য গরুর বাথান,
বেণু মাধব একতারা নিয়ে
গাইছে বাউলগান।

রিম ঝিম-ঝিম বৃষ্টি পড়ে
নামল এবার জোরে,
সকাল হতে অঝোর ধারায়
বাইরে বৃষ্টি পড়ে।

আমার ভাবনা – ০৩

বর্ণ প্রথা বলে ধর্মগ্রন্থ সমূহে কোন শব্দ বা টার্ম নেই। তবে কেন সেটাকে আমি স্বীকার করবো ?

উচ্চ বর্ণ ও নিন্ম বর্ণ নিয়ে পৌত্তলিক ধর্মে যে ভেদাভেদ রয়েছে আমি সেটাকে স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর মনগড়া কেচ্ছা ছাড়া কিছুই বলে মনে করি না।

বর্ণ প্রথা বলে ধর্মগ্রন্থ সমূহে কোন শব্দ বা টার্ম নেই। আছে ‘বর্ণাশ্রম’। শাব্দিক অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ‘বর্ণ’ শব্দটি এসেছে ‘Vrn’ থেকে; যার অর্থ ‘to choose’ বা পছন্দ করা অর্থাৎ পছন্দ অনুযায়ী আশ্রম বা পেশা নির্ধারণ করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের সমাজে এখন তা জন্মসূত্রে বিবেচনা করা হয়।

সর্বহারার প্রার্থনা

যে মেয়েটা একবার বিক্রি হয়ে যায়, সে যেন হঠাৎ জ্বলন্ত কয়লায় ডুবে যায়। চাপিয়ে দেয়া ধর্মকর্মও নরক মনে হয়, আর এটা তো জোর করে মহাপাপে ডুবিয়ে রাখা, সারাক্ষণ। এখানকার মাসী, দালাল, খদ্দের সবাই নির্দয়, লোভী। সবাই চেষ্টা করে যত ঠকানো যায়, যত কম দিয়ে যত বেশি লুটে নেয়া যায়।

নিজের উপরে এতো নির্মমতা, কঠোরতা কার সহ্য হয় মন থেকে? শুধু আদর মমতার লোভই না, বাবা-মা ভাই-বোনের জন্যও মায়া লাগে। সে বাড়ি ফিরে যেতে চায়। তবে স্বাভাবিক বাড়ি ফিরে যাওয়া, সমাজের মেনে নেয়াটা একেবারে অসম্ভব। ফিরতে পারলে দেখতো, এখনো কিছুটা মান বাঁচানোর জন্য বাবা কিভাবে গরুর ডান্ডা বা চাবুক দিয়ে পিটিয়ে চৌকাঠ থেকে নামিয়ে দেয়।

সে তো ইচ্ছা করে বিক্রি হয় নি, যে বিক্রি করে দিয়েছে সে তার মালিকও নয়। কিন্তু তারপরেও এই সমাজ আর তাকে মেনে নিবেনা। তাই সে প্রার্থনা করে, “সবার মেয়েই একবার করে বিক্রি হয়ে যাক, তখন সমাজ ঠিকই গ্রহণ করবে।”

যে ছেলে সমাজবিরোধী কাজে চিহ্নিত হয়েছে বা মাদকের ছোবলে সমাজে নিজের সন্মান খুইয়েছে। সেও জানে এই মানুষ বা সমাজ একবার খারাপ পেলেই মুখ ঘুরিয়ে নিবে। নিজের খুব কাছের আত্মীয় মামা-চাচা, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, এমনকি বন্ধুর ছোটভাইও। যে আগে শ্রদ্ধা ও ভয়ে নিচু হয়ে থাকতো, সেও এড়িয়ে চলে যাবে, দূরে সরিয়ে দিবে।

একটা দরিদ্র ছাত্রকেও রাস্তায় দেখা হলে বন্ধুর মা বলে, “বাসায় এসো কিন্তু।” একটা কেরানী বা পিওনকেও মানুষ বিশ্বাস করে, খবর নেয়াটাও একটা ভালো কাজ মনে করে।

কিন্তু সমাজ বর্জিত সর্বহারাদের দেখেও, “দেখিনি ভাই” ভান করে। কেউকেউ সোজা বলে দেয়, “বেরিয়ে যাও”। এতো অসম্মান, প্রতিকূলতা নিয়ে এই সমাজে চলা খুব কঠিন। তখন সেও চায় সবার ছেলেই একবার করে অপরাধে জড়াক, মাদকের নেশায় বন্ধুর বাসা থেকে ক্যালকুলেটর চুরি করে পালাক। তাহলে সমাজে সে আবার “সাধারণ” হিসাবে প্রমোশন পাবে।

এরা তখন এরা প্রচার করে, “সবাই এইসব পারেনা, সাহস থাকা লাগে। পুরুষ হওয়া লাগে, ভদ্র ছেলেরা তো হাফলেডিস। এতো পড়া লেখা করে কি হবে বোকার দল? চাকরী করে একমাসে যে টাকা উপার্জন করে, বুদ্ধি আর সাহস থাকলে, একদিনেই সেটা করা যায়। একঢোক মদ খেলেই এদের হুঁস থাকবেনা, আমার তো এক বোতলও কিছু হয় না। ফিটনেস, পুরুষালী বিষয়, বুঝতে হবে।”

সর্বহারা ছেলেমেয়েদের সংখ্যা আজ কম না। এরা সংঘটিত হয়ে, সর্বনাশে ঝাঁপ দেবার আহবান করছে সব গলি থেকেই। “সবার সর্বনাশ হোক” চাইছে সাংকেতিক ভাষায়।

মুগ্ধ চোখে দেখি আমার ঢাকা

ঢাকা মানেই চরম মাত্রার নগরায়ন। শুধু বাংলাদেশ না, পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকটি মেগাসিটির (জনসংখ্যা যেখানে কোটির উপরে) একটি। হতে পারে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল শহর এই মুহুর্তে ঢাকা। দিগন্তজোড়া কনক্রিটের স্থাপনার মাঝেও বেশ কিছু গাছগাছালী আছে, কোন কোন রাস্তার পাশে সামান্য মাটিতে কি চমৎকার সবুজ সতেজ ঘাস হয় এখানে। বোঝা যায় জায়গাটা এখনো খুবই উর্বর সুফলা। এমন সবুজ সতেজ এলাকা আমার খুবই ভাল লাগে।

আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তরবঙ্গতে। সেখানেও এইরকম সবুজ কিছু কিছু এলাকা আছে, যেমন নাটোরের বনপাড়া। কিন্তু সেটা খুবই কম। রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জুরে চলছে মরুকরণ প্রকৃয়া। প্রায় সব সময় নদী পুকুর শুকিয়ে থাকে, টিউবয়েলে পানি উঠেনা। শীত ও খরায় অসহ্য ধুলা, রাস্তার পাশের গাছের পাতাগুলো সবুজ রঙ দেখাই যায়না পুরু ধুলার স্তুপের কারনে। খেলার মাঠে খরের মত ধুসর দুর্বাঘাস, গাছেপালাগুলোও কেমন প্রাণহীন রুক্ষ। শীতে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডা, গরম কালে অসহ্য গরম। হ্যাঁ বর্ষায় অনেক বৃষ্টি হয়, তবে ঢাকার বর্ষা ভোলার মত না।

একবার সাভার যেতে যেতে গাবতলি বা আমিন বাজারের জলাভূমির উপরে দেখেছিলাম কি ঘনকালো মেঘ উঠেছে। নিচে জলাভূমি দূরে টিনের ঘরবাড়ি কিছু গাছপালা, ঝিরঝির বৃষ্টিতে সব ভিজে চিকচিক করছে। সেই সন্মোহনী সৌন্দর্যের বর্ণনা দেবার ক্ষমতা আমার নেই। নিরাশাবাদী আমার শুধু মনে হয়েছিল, একদিন দৃষ্টিও ঝাপসা হয়ে যাবে, এমন দৃশ্য সারাজীবন দেখতে পাবো না। মাস চারেক আগে আশুলিয়া থেকে উত্তরায় আসছিলাম বাসে করে। আবারো রাস্তার দুইপাশে বহু কিলোমিটার জুড়ে জলাভূমির উপরে মেঘ, তখন মনে হয়েছিল জীবনটা কত সুন্দর! আজ ভাবি দৃষ্টি ঝাপসা হোক স্মৃতিতে ঠিকই থাকবে ঢাকার সৌন্দর্য।

বছর দশেক আগে এক বড় ভাইয়ের কাছে একটা ঘটনা শুনেছিলাম। কোন একটা এলাকার পানি ভাল, লোকজন স্বচ্ছল, ফসল হয় খুব ভাল। জনশ্রুতি আছে কোন একজন ধর্মপ্রচারক সুফি মুগ্ধ হয়ে প্রার্থনা করেছিলেন সেই এলাকার জন্য। নারায়ণগঞ্জেও কোন এক এলাকায় একজন অলিকে নিয়ে এমন জনশ্রুতি শুনেছিলাম, এলাকায় নাকি কোন গরীব লোকই নাই। ঢাকা নিয়ে আমি এমন কোন জনশ্রুতি শুনিনি, তবে মাঝেমাঝে মনে হয় কোন সাধু হয়তো মুগ্ধ হয়ে বারবার প্রার্থনা করেছিলেন “এই জনপদই যেন কেন্দ্র হয় দেশটার”।

আসিফ আহমেদ
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬

নিঃস্ব ধনকুবের

জীবন আমাকে যত সুখ দিচ্ছে ততই সুখ অনুভব করার ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে। যত প্রভাব দিচ্ছে তত অসহায়বোধ বাড়ছে। যত জনপ্রিয়তা দিচ্ছে তত নিঃসঙ্গতা বাড়ছে। যত দামী গাড়ি দিচ্ছে তত বসে থাকার ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে।

একজন অপারেশনের রুগীকে যে পরিমাণ বেদনানাশক দেয়া হয় তার বহুগুণ Crystal Ice (মাদক) আমাকে নিতে হয় “স্বাভাবিক থাকতে”। আমি যে পরিমাণ মাদক নিয়ে স্বাভাবিক হই সেটা কোন সাধারণ মানুষ কে দেয়া হলে সে নির্ঘাত মারা যাবে। যে পরিমান মাদক একবারে নিলে একজন মানুষের মৃত্যু ডেকে আনবে সেই Lethal Dose এর চেয়েও অনেক বেশি মাদক নিতে হয় প্রতিবার, দিনে একাধিকবার।

আমার শরীরের সব অঙ্গ ধীরে ধীরে অনুভূতিহীন অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। ব্রেন সেলগুলো মরে যাচ্ছে, ফুসফুসে পানি জমে গেছে, হার্ট অকেজোর শেষ ধাপে। পাকস্থলী, লিভার, কিডনি কোনটাই ৪০% এর বেশি কার্যকর নাই। আরো আগেই মারা যাবার কথা আমার, এখনো বেঁচে আছি এটাই বিস্ময়। তবে দুই-এক মাসের বেশি সময় বাঁচার কোনই সম্ভাবনা নাই সেটা পরিষ্কার। আমি সেটা চাইও না, জীবন এখনই বিভিষীকা হয়ে উঠেছে আমার কাছে। মাথায় যন্ত্রণা, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনি, রক্তবমি, কিডনির মারাত্মক ব্যাথায় সত্যিই দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে জীবনটা। এর সাথে আছে হেলুসিনেশন। কখন নিজেকে অজেয় দেখি, মাঝেমাঝে দেখি নরকে। দ্বিধা-দন্দে পড়ে যাই, ঠিক দেখছিতো না হেলুসিনেশনে আছি।

আমার গাড়িটা এই মুহূর্তে বনানীর জ্যামে আটকে আছে, কবরস্থানের কাছে। এই রাস্তাটা সব সময়ই জ্যামে আটকা থাকে মহাখালী পর্যন্ত। আমি প্রায়ই রাস্তার আশেপাশের মানুষগুলোকে দেখি। জ্যামের মধ্যে অনেকে নিরুপায় হয়ে, ফুটপাতের উপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যায়। কেউ কেউ অতিষ্ঠ হয়ে বাস থেকে নেমে হাঁটা দেয়। রাস্তার পাশের নোংরা চা স্টলে বসে চা-সিগারেট খায় কত মানুষ।

মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, টোকাই কি অবিশ্বাস্য জীবনীশক্তি এদের। খেয়ে না-খেয়ে সারাদিন রোদবৃষ্টি মাথায় করে কাজ করতে পারে এরা। অসহ্য গরম, ভিড়ের মধ্যেও গাদাগাদি করে নোংরা বাসে আসা-যাওয়া করতে পারে সারাবছর। এরপরেও কদাচিৎ অসুস্থ হয়, অসুস্থতা নিয়েও অফিস বা ভারি কাজ করতে পারে মানুষগুলো। নামমাত্র চিকিৎসায় বা চিকিৎসা ছাড়াই সুস্থ হয়ে আবার ফিরে আসে।

এরা কোন কিছুর সাহায্য ছাড়াই আনন্দিত হয়, ভালবাসে, ভালবাসা অনুভব করে। এদের মধ্যে এমন লোকও আছে সিগেরেট এমনকি চা পর্যন্ত খায়না অথচ কি তীক্ষ্ণ স্মৃতি, অনুভুতি। বহুবছর আগের শতশত পরিচিত, বন্ধু, আত্মীয়ের সব ঘটনা, সব কথা মনে রাখে। মানুষের চেহারা, কথাবলা, হাঁটার ধরন দেখেই অনেক কিছু বুঝে নিতে পারে। কি আশ্চর্য ক্ষমতা এদের।

একসময় ডাক্তার আমাকে ছাড়তে বলতো এসব। বলতো কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো। এখন আর বলেনা, মানেটা আমি বুঝি। এই শেষ বেলায় মৃত্যুর দিকে দ্রুত এগিয়ে যাবার জন্য যে স্বপ্নবিলাসে ডুবে থাকি সেটা মোটেই ধনী বা সফল হবার কোন স্বপ্ন না। কল্পনা করি সাধারণ মানুষে “উত্থান” ঘটেছে আমার। রিকশাওয়ালা, সুইপার, বাসের হেল্পার, কুলি মজুর যেকোন একটা জীবন। অনেক ভাল, অনেক সুন্দর, অনেক সন্মানের সেটা।

জীবনের বিনিময়ে আমি উপলব্ধি করেছি শৈশবের সেই প্রথম শিক্ষা, শরীর বা “স্বাস্থ্যই সম্পদ”। কোন পণ্ডিত বা সাধু জীবনের শেষ বেলায় কথাটক মনে হয় লিখেছিলেন। একটা শক্তিশালী পরিশ্রমক্ষম সুস্থ শরীরের বিনিময়ে আমি সব সম্পদ দিতে রাজি। বিনিময়ে নিপীড়িত কৃতদাস বা শ্রমিক জীবন পেলেও আমার স্বপ্ন, পরম মনোবাসনা পুর্ন হবে।

আসিফ আহমেদ
২৮ জানুয়ারি, ২০১৭

জীবন নামের মঞ্চনাটকে

একটা পার্কে বসলে, এক পলকে, সারাটা জীবন দেখে ফেলা যায়। এই যে, ডায়াবেটিসের রোগীর হাঁটা, হার্টের রোগীর হাঁটা, কৌতূহলী কিশোরী চঞ্চল হাঁটা।

একদিন এই কিশোরীও হাঁটতে আসবে ডায়াবেটিক বা হার্টের রোগের জন্য। তার আগে হয়তো সে কিছুদিনের জন্য কড়া লিপস্টিক ও গোলাপি শাড়ি পড়ে কোন পুরুষের সাথে হেঁটে যাবে পার্কটায়। কিছুদিন পরপর নতুন নতুন চরিত্রে অভিনয়ও করে যাবে। তারপর একদিন বেঞ্চ, গাছ, রাস্তাটা ঠিকই থাকবে। দেখা যাবে না অনেক আগের একটা দিনে প্রথম হাঁটতে আসা সেই কিশোরীকে। বহু বছরের নিয়মিত সেই কিশোরী অতীত হয়ে যাবে।

তবে সেই একই ভূমিকা গুলোতে অভিনয় করতে আসবে নতুন নতুন কুশীলবরা, জীবনটা এমনই। ড্যাফোডিল ফুল, হাস্নাহেনা বা T20 ম্যাচের মতই। দ্রুত কয়েকবার রঙ বদলিয়েই, নতুন কুশীলবদের অভিনয় করার সুযোগ করতে দিতে, পুরাতন শিল্পী বা খেলোয়ারের অবসর ঘোষণা।

সেই পুরাতন, চিরন্তন, বৈচিত্র্যহীন একই স্ক্রিপ্টের নতুন মঞ্চায়ন। তবে প্রতিবারই নতুন শিল্পীটা অসীম উচ্ছ্বাস আর কৌতূহল নিয়ে অভিনয় করে যায় এখানে।

মানুষের আদিম সহজাত প্রবৃত্তি

দেশপ্রেম এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাটা, মানুষের আদিম এবং মৌলিক প্রবৃত্তিগুলোর একটি। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই এটা সুস্পষ্ট। দেশের জন্য অথবা অরাজকতার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য, কোন দল বা নেতার সম্মতির দরকার হয়না এবং মানুষ কারো হুকুমের জন্য অপেক্ষাও করে না।

দেশপ্রেম বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর স্বভাবটা কোন দল বা নেতার কাছে বন্ধকও রাখা হয়নি। গর্জে উঠো বাংলাদেশ, রুখে দাঁড়াও বাঙালী আরো একবার।

সহযোদ্ধা

সে যখন বিপদটা আঁচ করতে পেরেছিল,
ইঙ্গিতটা আমাদের দিয়েছিল সাথেসাথেই।
আমি যখন আহত হয়ে পড়ে ছিলাম, আমাকে
রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল সে।
সে যখন আঘাতে অচেতন হয়ে পড়েছিল,
যন্ত্রনায় ছটফট করেছিলাম আমি।
আমার আঙুল থেঁতলে নীল হয়ে গেল যখন,
চিৎকার করে কেঁদেছিল সে।

তার অর্থকষ্ট নিয়ে দুশ্চিন্তা করতাম আমি,
আমার নিরাপদে বাসায় ফেরা নিয়ে সে।
আমার খাবার তারসাথে ভাগাভাগি করেছি,
সেও তার রক্ত আমাকে দিয়েছে, আহত হবার পর।
তাড়া খেয়ে পালিয়েছিলাম এক সাথেই,
ধরা পরা, জেল এমনকি মুক্তিও একই সাথে।

বিজয়ের খবরে যখন আমি উল্লাস করেছিলাম,
আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল সে।
যখন আমাকে সুখী জীবনে দেখলো, তৃপ্তির হাসি হাসলো সে।
একই আত্মা, একই মন কিন্তু শরীর আমাদের অনেকগুলো।
এইতো সহযোদ্ধা।

১৫-১১-২০১৮

জয়বার্তা আসবেই

চারিদিকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে
আর ওরা গোলাবারুদের উপরে দাঁড়িয়ে,
আর ছায়াগুলো মিলেমিশে একত্র হচ্ছে ।

এ জনপদ আজকে জনশুন্য হয়ে যাচ্ছে
শহর বন্দরগুলোও ঢেকে যাচ্ছে মুখোশে,
মানবতা সেও যেন ‍নির্বাসনে চলে যাচ্ছে ।

আজ পৃথিবীর সমস্ত অলিগলিতে জুড়ে
আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা চলছে,
উশৃঙ্খল ; সুদীর্ঘ তপ্ত দুপুরের মতো করে।

মনুষ্যত্বহীনতা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ শহরে
অলিতগলিতে মাদকের আড্ডাও বসছে,
মশা মাছির মতোই সন্ত্রাসী বাড়ছে শহরে ।

নির্জাতিত ধুলোর মতো দু’পায়ে জড়িয়ে
পড়ে থাকা নিথর সেই দেহগুলো ডিঙিয়ে,
একদিন প্রত্যাশিত বিজয় ঠিক ধরা দিবে ।

রক্তগুলো পিচঢালা পথে শিকড় ছড়াচ্ছে
সারিবদ্ধ লাশগুলো পথ রোধ করে থেকে,
মৃত্যুকে অস্বীকার জয়বার্তা বয়ে আনছে ।

মমতাময়ী মা; প্রিয়তমা স্ত্রী ;আদরের পুত্র
তোমরা আজ শোকবস্ত্র খুলে ফেলে দাও,
প্রতিটি অশ্রু দিয়ে তৈরি করো ক্ষীপ্র অস্ত্র ।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও গণতন্ত্র

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে জমে উঠছে আকর্ষণীয় দ্বৈরথ,
দুরন্ত পেস এটাক আর মায়াবী স্পিনের আক্রমণ সাজিয়ে
কখনো বোলারের ইনসুইং, কখনো আউট সুইং বা কাটার,
জবাবে ব্যাটসম্যানের বুক চেতানো অফ, অন ড্রাইভ, হুক, পুলের শৌর্য !
স্ট্যাম্পড, কট বা বোল্ড আউটের বিপরীতে সীমানা ছাড়ানো ছয় বা চার,
দর্শক উত্তেজনার পারদ চড়ায় প্রতি পলে পলে।
সম শক্তির দ্বৈরথে এইতো হয়, ঘাত প্রতিঘাতেই আসে সাফল্য,
শক্তির নিত্যতা সূত্রের মতো অমোঘ নিয়মের ব্যতিক্রম শুধু এই দেশে !

শব্দহীন স্বাধীনতার শঙ্খনীল কারাগারে বন্দি অহর প্রহর,
অনির্বাচিত শাসনে জব্দ সব ভিন্নমত, উচ্ছল কলকণ্ঠ I
প্রতিবাদী যৌবন পলাতক দেশের বিস্তীর্ণ পথ প্রান্তরে,
ক্ষমতাসীন রাজনীতির বাইশ গজে সমশক্তির কোনো দ্বৈরথ নেই I
প্রতিপক্ষের ধারালো বোলিং অস্ত্র নেই, আক্রমণ প্রতি আক্রমণের শংকা নেই,
তবুও ভয়াল কোন ইনসুইংয় শংকায় অষ্টপ্রহর কাপে সরকারি ব্যাটসম্যান !
শুভবাদের মিডিয়াম পেসেই একের পর এক সরকারি উইকেট পতন,
নীতি, ন্যায়, শুভ ও সত্যের উইকেট হারিয়ে ইনিংস চলে খুঁড়িয়ে… I

উদার গণতন্ত্র, সুশাসন আর উন্নয়নের শাসন প্রতিষ্ঠার কোন বিশ্বকাপে
এমন দল হয় কি কখনো বিজয়ী? পেতে পারে কি কোনো ফেয়ার প্লে ট্রফি ?