বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

জীবনের অনু পরমানু-২

অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন ছিল কিছু লেখা লেখি করব কিংবা গঠন মূলক কিছু করব। বিশেষ করে যখন একটা বৃটিশ কোম্পানির জাহাজে ডেক ক্যাডেট হিসেবে জয়েন করে হুট করে একেবারে বাংলাদেশের বাইরে এক দেশের বন্দর ছেড়ে আর এক দেশে যেতাম, আসা যাওয়ায় পথে সমুদ্রের নানা রূপ কখনও রুদ্র আবার কখনও শান্ত রূপ দেখতাম, ঢেউ এর তান্ডব, উদাসী বালুকাবেলার সম্মোহনী রূপ দেখতাম, আবার এই বালিয়ারীতে নানা রঙ এর, নানা বর্ণের মানুষের আনন্দ উচ্ছাস দেখতাম। ওদিকে আবার নানা শহরের বিচিত্র মানুষের আনাগোনা রঙ ঢং দেখতাম সেই তখন থেকে।

অনেকদিন এই স্বপ্ন লালন করলেও তখন কিন্তু লেখার সুযোগ পাইনি! সুযোগ পেলাম বা বাস্তবায়ন শুরু করলাম যখন আটলান্টিকের দ্বিপ বৃটেনের জীবন কাটাতে শুরু করলাম তখন। হাতে প্রচুর সময় ছিল। সাথে ছিল চারিদিকে সবুজ আর সবুজের সমারোহ আর ছিল তুষার ঝরার স্বপ্নীল মোহনীয় পরিবেশ।
এদিকে লিখে ফেললাম ৫/৭টি গ্রন্থ। গল্প, গীতকবিতা, উপন্যাস এবং নানা কিছু আবোল তাবোল।

দেশে ফিরে এসে এর মধ্যে থেকে কয়েকটা গ্রন্থ আকারে নিজের গাইটের টাকা খরচ করে কয়েকটা বই মেলায় প্রকাশ করলাম।

স্বপ্নের ধারা বদলে গেল সময়ের চাহিদা/ইচ্ছার বহুরূপী চাহিদা/ মনের সুপ্ত বাসনার কারণে। শুধু শুধু বই গুলি ঘরের কোণে ফেলে রেখে কি হবে? কে জানবে এই কাহিনীর কথা, আমার এত বছরের সঞ্চিত তিলে তিলে জমানো অভিজ্ঞতা সবাইকে না জানালে এটা কি ব্যর্থ হয়ে অন্ধকার বাক্সের ভিতর বা বইয়ের শোকেসের ভিতরে শুধু গুমরে কেদে এক সময় উই পোকার খাদ্যে পরিণত হবে? এখন মনে হচ্ছে দুইটা উপন্যাস “মম চিত্তে নিতি নৃত্যে” নিটোল এক প্রেমের কাহিনী এবং “নক্ষত্রের গোধূলি” পৃথিবীর ৫টা মহাদেশের পটভূমিকায় নানা শ্রেনীর চরিত্র এসেছে এই উপন্যাসে। এই কাহিনী দুইটি নিয়ে মনে একটা বাসনা জন্মাতে চাইছে নাটক বা সিনেমা করতে পারলে মানুষের মনে সাহিত্যের একটা নতুন দিগন্ত ছড়িয়ে দেয়া যেতো। মানুষ ভ্রমন কাহিনীর ছলে সামাজিক নিত্য ঘটা কাহিনীর সাথে আবার নতুন করে জেনে নেয়ার প্রচেষ্টা হতে পারে। মনে মনে নায়িকা এবং নায়কের চেহারাও একে রেখেছি। কিন্তু নিরালায় একা একা বসে বসে ভাবি এত টাকা কোথায় পাব?? এই একটা প্রশ্নের জন্যেই মনটা থাকে বিষণ্ন।

আবারো শব্দনীড়ে!

এক সময়কার অনেক প্রিয় ব্লগ শব্দনীড়ে আবারো এলাম। পরিচিত অনেককেই দেখতে পাচ্ছি। আশা করি সবার সাথে আবারো কথায়-গল্পে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। সবার জন্যে একটা ছবি পোস্ট দিয়ে শুরু করলাম। :)

পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মেঘের আনাগোনা। বান্দরবান শহরের কাছেই নীলাচল পাহাড়ের ছবিটি আমার বাড়ির ব্যালকনি থেকে তোলা।

একটি কবিতার মৌলিকতা

জীবন সম্পর্কে
আমার বেশ অদ্ভুত কিছু ধারণা তৈরি হয়েছে।
তাইতো, আমার হৃদয়ের ধমনিতে
তোমার পায়ের শব্দ শুনতে পাই।
গভীর রাতে ঘুমের মধ্যে শুনি তোমার ডাক।

কখনও কখনও নুপূরের ধ্বনিতে
শুনতে পাই তোমার ফিরে আসার প্রতিবিম্বিত রূপ।
আহ্ সেকী সৌন্দর্যের বিভা
বাতাসের উষ্ণ ছোঁয়ায় আমার দেহের বিবর্তন হয়
মনের বোধিসত্ত্বা পরিবর্ধনের আভাস দেয়।

যেভাবে নদীপ্রণালীতে তোমার জলছবি দেখি প্রতিদিনের রোজনামচা তোমার।
তোমার ভাবনায় থমকে যাওয়া স্রোতের গতিপথ
পাল্টে হয় গতিশীল সে কীভাবে বুঝাবো তোমায়!

তুমি আছো দৃশ্যের মাঝে
দৃ‌ষ্টির সীমানা জুড়ে তুমি।
তুমি আছো অন্তরে আবদ্ধ যৌবনের সঞ্চালক তুমি!
তুমি আছো তুমুল উচ্ছ্বাসে মনের গভীরতায়।
তুমি আছো গল্পে,কবিতায় আনন্দে হাসিতে
পথের নিরন্নতায় তুমি
তুমি আছো আনন্দে আনমনে নিরানন্দে সুন্দর সৌহার্দ্য।

তুমি আছো বাঁশির সুরে
দোয়েলের কণ্ঠে প্রাণের প্রত্যুষে তুমি।
চাঁদের উপমায় তুমি।
তুমি সমুদ্রের গভীর তরঙ্গে আলোঝলমল
বিমোহিত লাখো মানুষের চাওয়া।
তোমাকে কি হাত বাড়াতেই আমার হবে পাওয়া;

সৌন্দর্যের অসীমে তুমি;
তোমাকে পাওয়া কার সাধ্বী না পাওয়ার
অসীমতটীয় হাত তোমার,
নক্ষত্রের অপার সুন্দর তুমি।

যেখানে আমি নশ্বরের মাঝে অনশ্বর।
তোমাকে পাওয়া আমার কী দায়।
তবুও হতবুদ্ধি মন তোমাকে চায়
তোমাকে ফিরে পাই কবিতার সারাংশে
তোমাকে পাই গল্পের শুভ্রতায়।

তুমি ছিলে হৃদয়ের গোপন আঙিনায়
নিশ্চিত হাজার বছর।
তবুও জানলে তুমি;
কদিন আগেও তুমি ছিলে কল্পনাপ্রসূত
অথচ আজ তুমি আমার।

প্রকৃতির মতোই সুন্দর তুমি
তুমি আর আমি মিলে যা হয় অসীম।
তবুও আমি ক্ষুদ্রতর নগন্য নগরীর মানুষ
যদি ভালোবেসে কাছে টেনে নাও
আপন করে আপন মাঝে ভালোবাসা দাও
আমিই হবো আজীবন তোমার।

জীবনের অনু পরমানু-১

আমিতো ভালই ছিলাম, উচু দেয়ালের পাশে দিয়ে হেটে যাবার সময় আশেপাশের ইট জড় করে তার ওপরে উঠে দেখার চেষ্টা করতা ওপাশে কি আছে দেখতে। সেই দিনগুলি কি নেহায়েত খারাপ ছিল?
তারপর একদিন বাবা ইস্কুলে নিয়ে রেখে আসলেন। এক গাদা বই খাতা পেন্সিল ইত্যাদি কিনে দিলেন। সকাল সন্ধ্যা সময় করে পড়াতে বসতেন। পড়তাম লিখতাম আবার পরদিন ইসকুল যেতাম। ইসকুলে বন্ধুদের সাথে গল্প করতাম, মার্বেল খেলতাম, খেলার তালিকায় ডাঙ্গগুলিও ছিল। খেলতাম আর ইচ্ছে ডানা মেলে উড়ে যেতাম ময়ূরপঙ্খি চেপে। বেশ চলছিল।

টিভি চ্যানেলগুলোর সাংবাদিকদের অতিরিক্ত ‘স্মার্টনেস’ আমজনতার বিরক্তির কারণ

টিভি চ্যানেলগুলোর সাংবাদিকদের অতিরিক্ত ‘স্মার্টনেস’ আমজনতার বিরক্তির কারণ।

সাংবাদিকতায় আসার পরে আমি আমার দুই বাবু এবং বউয়ের সাথে সেভাবে সময় দিতে পারি না। নিউজ এডিটিং এ আমার সারা রাত কেটে যায়, দিনে অর্ধ দিবস ঘুমাই, এরপর ফিল্ডে নিউজের কাজে সময় পার হয়।

তবে ঈদের সময় চারজন একত্রিত হয়ে ঈদের নাটক দেখি আমরা। আর শুধু এই সময়গুলিতেই আমার টেলিভিশনের সামনে যাওয়ার সুযোগ। এছাড়া নিউজের জন্য কিংবা বিনোদনের জন্য টেলিভিশনের দ্বারস্থ হইনা আমি। অনলাইন পোর্টাল আর ইউটিউব আমার নিউজ এবং বিনোদনের খোরাক মিটায়।

এরকম এক ঈদে দুই কন্যা আর মেকুরাণীকে সাথে নিয়ে টিভি দেখছিলাম। হাতে রিমোট কন্ট্রোল… উদেশ্য বিহীন একের পর এক চ্যানেল পাল্টানো। ঈদে বাড়ী ফেরা মানুষদেরকে নিয়ে প্রতিটি চ্যানেলেই কিছু না কিছু নিউজ করছে। GTV নামের একটি চ্যানেলে এসে থামলাম। খবর পাঠিকা আমাদেরকে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি যিনি গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে রয়েছেন, তার মাধ্যমে আমাদেরকে সেখানের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানানোর জন্য সাথে থাকতে বললেন। আমরা চারজন সাথেই রইলাম। ইনসেটে সেই প্রতিনিধিকে দেখছি… কানে ব্লু-টুথ হেডফোন। খবর পাঠিকা বলে চলেছেন, ‘…আপনি কি আমাকে শুনতে পাচ্ছেন?’ আমরা সাভারের বাসায় বসে তার কথা টিভি সেটের ভিতর দিয়ে স্পষ্ট শুনতে পেলাম। অথচ গাবতলীতে GTV’র নিজস্ব প্রতিনিধি কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না!

প্রায় মিনিট দুই-আড়াই এর মত ইনসেটে ওই প্রতিনিধি কানের ব্লু-টুথ চেপে দাঁড়িয়ে থাকলেন… খবর পাঠিকা বেকুবের মতো এই সময়টা বার বার , ‘আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?’ বলে যেতে থাকে। আমার দুই কন্যা খুব মজা পায়। আর ওদের আনন্দ দেখে আমরা দু’জনও :) ::

এরপর আর একটি চ্যানেলের একজন প্রতিনিধির কথা বলার স্টাইল দেখে আর একবার হাসির পর্ব। সেই লোক কথা বলার সময় দুটি শব্দ বলার পরই ‘অ্যা’ … উম্ম… ইয়া’ এভাবে কথা বলছিলেন। মনে হচ্ছিল ছাগল প্রজাতির কোনো একজনের নিবিড় তত্ত্বাবধানে কিছুদিন কাটিয়ে এসে ‘ম্যা’ এবং ‘ব্যা’ ভাষায় সুদক্ষ হয়েছেন তিনি।

আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলো দেখতে বসে এ ধরণের বিভিন্ন হাস্যরসে মাখামাখি হতে হয়। অনেক সময় নিজের কাছে খারাপও লাগে। সেই বিটিভির আমলে কত সুন্দর সুন্দর নাটক দেখতাম… ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানগুলোতে সত্যিকারের বিনোদনের ছোয়া থাকতো। নাটকের কলাকুশলী এবং নির্দেশনার মান অনেক উন্নত ছিল… নাটকের বিষয়বস্তু ছিল রুচিকর ও জীবনধর্মী। এখনো যে যাচ্ছেতাই নাটক বানানো হচ্ছে তা নয়। তবুও সেই অ্যানালগ যুগের নাটকগুলিতে আনন্দ কেন জানি বেশী পেতাম। আজ এই ডিজিটাল যুগের কারিগরী উৎকর্ষতায় নিয়ন্ত্রিত সকল সুযোগ সুবিধার মধ্যেও নির্মিত নাটক-সিনেমাতে কেন জানি প্রাণ নেই।

আর ৫ মিনিট নাটক বা অন্য কিছু দেখালেই দশ মিনিট যদি অ্যাড দেখতে হয়, তবে সেরকম অনুষ্ঠান দেখার জন্য আমি কখনোই লালায়িত ছিলাম না। এক সময় শুধুমাত্র ষ্টার মুভিজে হলিউডের ফিল্ম দেখে সময় কাটাতাম। এর প্রধান কারণ ছিল তখন এই চ্যানেলটিতে একটানা ফিল্ম দেখাতো। কোনো ব্রেক ছিল না। আর এখন সেটাও গতানুগতিকতার বৈতালিক প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিয়েছে।

ইদানিং ভারতীয় চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধে বিষোদগার দেখতে পাচ্ছি। এই চ্যানেলের দ্বারা এই ক্ষতি হচ্ছে, ওটার দ্বারা সেটা হচ্ছে। তাই সেগুলো বন্ধ করে দেবার পক্ষে ফেসবুকে জনমত গড়ে উঠেছে… বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এটা একটা ভালো দিক নিঃসন্দেহে। কিন্তু ওগুলোর সাথে সাথে আমাদের দেশীয় চ্যানেলগুলোর মান আরো ভালো করার জন্য… সিনেমা হলগুলোতে দর্শক টানার মতো মানসম্মত ছবি বানানোর জন্যও একটা আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন। হুমায়ুন আহমেদ পরবর্তী সময়টিতে হুমায়ুন আহমেদ এর মতো না হোক, তাকে অনুসরণ করে একই মানের কিছু তো দর্শকদেরকে উপহার দেয়া যেতে পারে।

জানি না সামনের দিনগুলোতে কি অপেক্ষা করছে। কিন্তু ভালো কিছুই আশা করছি… সবসময় এটাই করা উচিত।

বঙ্গবাসীর পুস্তক প্রীতি

সকল বঙ্গবাসী কবি বলিয়া অত্যন্ত দক্ষতার সহিত নিজেদের পরিচিত করিয়াছেন এমনকি তাহাদের কেও কেও কবিদের কাকের সহিত গণনা করিতেও কুণ্ঠা বোধ করেন নাই। তবে একথা সত্য যে এই বঙ্গ কবিই একদিন বিশ্বখ্যাত নোবেল পুরস্কার আয়ত্ত করিয়া সকল বঙ্গবাসীকে কবির আসনে বসাইয়া দিয়াছেন। ইহাতে সকলের মনে কবি হইবার বাসনা অত্যন্ত প্রকট রূপে দেখা দিয়াছে এমন করিয়া ভাবিলে দোষের কিছু দেখা যায় না।
একজন কবি বা লেখক কিংবা ঔপন্যাসিক যাহাই বলেন না কেন তিনি লিখতে বসিবার পূর্বে বহুকাল ধরিয়া ভাবিতে থাকেন। ভাবনার বৃক্ষ যখন কিছুটা বিস্তৃত হয় তখন তিনি হাতে কলম ধরিয়া কাগজ পত্র লইয়া বসেন। আজকাল অবশ্য কাওকে কালি কলম বা কাগজের বোঝা বহন করিতে হয় না কেবল একখানা কম্পিউটার হইলেই কর্ম সম্পাদন করা অতি সহজ। ইহা যশবান বৈজ্ঞানিক বৃন্দের কর্মফল বলিয়া তাহাদের অন্তত এক কুড়ি ধন্যবাদ জানান উচিত।
আচ্ছা ঠিক আছে ধন্যবাদ ইত্যাদি পরে দিলেও তেমন ক্ষতি হইবে না এই সময় যাহা বলিতেছিলাম, লেখক মহাশয় লিখিতে বসিলেন। ঘণ্টা, দিন মাস, বছর ব্যাপিয়া লিখিয়া এবং অন্তত দুই কুড়ি দফায় পাঠ করিয়া (এডিট) অবশেষে একখানা গ্রন্থ রচনা করিলেন এবং যেহেতু আজকালের পুস্তক প্রকাশক অত্যন্ত বুদ্ধিমান বলিয়া নিজের টাকা খরচ করিয়া লেখকের হাবিজাবি লেখা প্রকাশ করিতে চাহেন না বলিয়া শতেক পুস্তক প্রকাশকের দুয়ারে ঘুরিয়া ঘর্মাক্ত হইয়া নিজ গাঁইটের টাকা খরচ করিয়া সত্যি সত্যি এক খানা গ্রন্থ ছাপাইয়া ফেলিলেন। নিজের লেখা গ্রন্থখানা সুন্দর ছবিওলা মলাটের ভিতরে ছাপার অক্ষরে দেখিয়া যারপরনাই পুলকিত হইলেন।
লেখক মহাশয় পুলকিত হইলে কি হইবে তাহার পুস্তকের প্রতি কাহারো কোন আগ্রহ নাই কারণ সকলেই জানে এই গদাধর মিয়া বা মশাই আবার কি লিখিতে জানে? ইহার লেখা মূল্য দিয়া ক্রয় করা মানেই হইল স্বেচ্ছায় নিজ পকেটের টাকা গঙ্গায় ফেলিয়া দেওয়া। আচ্ছা বলুন তো আজকাল কি আর এইরূপ আহাম্মক দেখা যায়?
লেখক মিয়া একে বলে ওকে বলে জান আমার লেখা একটি বই ছাপা হইয়াছে, দেখ কি সুন্দর তাই না?
বাহ! বেশ সুন্দরতো আমাকে একটা সৌজন্য কপি দিয়ে দাও তাহলে! তুমি একান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুজন তাই একটা সৌজন্য কপি আমার অধিকার!
ইহা শুনিয়া লেখকের লেখার ইচ্ছা কর্পূরের মত সপ্ত আকাশে উড়িয়া গেল কিন্তু বন্ধু জনের সৌজন্য কপি না দেয়ার মত ক্ষমতা অবশিষ্ট রহিল না। ওদিকে বন্ধু জন উক্ত সৌজন্য কপি বগলদাবা করিয়া বাড়িতে লইয়া গেল এবং যথারীতি বসার ঘরের তাকে সাজাইয়া রাখিল। কিছুদিন পর লেখক বন্ধু জিজ্ঞাসা করিল
ওহে বন্ধু আমার পুস্তক খানা পাঠ করিয়া তোমার অনুভূতি কেমন হইল?
হা হা আমি অত্যন্ত মনযোগ দিয়াই পাঠ করিয়াছি কিন্তু বন্ধু তোমার হাত এখনও ঠাকুর মশাইর মত পাকিয়া উঠেনি!

সেবা

তুমি যদি সেবাই করতে চাও তাহলে মানুষের কাতারে পৌঁছে যাও; মানুষের দ্বারে না পৌঁছে তুমি যদি সেবা করার কথা বলো সেটাতো শুধু বাহানা মাত্র।

মানুষের সেবা বড়বড় বক্তৃতায় হয়না চেয়ারে বসে সেবার ধর্ম পালন করা যায়না। দেশের সেবা করতে আগে জনগণের সেবা করতে হবে। আর জনগনের সেবা করতে চাইলে মানুষের দরজায় পৌছাতে হবে।

ভালোবাসা পেতে যতটুকু কষ্ট সহ্য করতে হয় সেবা করতেও সেই একই ব্যথায় কাতরাতে হয়।

সেবায় কোনো ক্ষমতার উৎস থাকেনা। সেবা দিতে কোনো গদিতে বসতে হয়না। সেবা করতে যদি গদির প্রয়োজনববোধকরি তাহলে সেটাকে আরামের জন্য।

সেবায় কোনো আরাম নেই, সেবায় ভালোবাসা পাওয়া যায়, মানুষ মন থেকে যতটুকু ভালোবাসবে সেবাতে সেটাই তৃপ্তি, সেটাই আরাম, সেটাই শক্তি, সেটাই সাহস আর সেটাকেই আনন্দ বলা হয়।

সেবা কোনো ক্ষমতার রাজত্ব কায়েম করেনা। সেবা কোনো খুনের অসীহত করেনা। সেবার পথ জোরপূর্বক হাসিল করতে পারেনি কেউ।

আজ পর্যন্ত যাঁরা সেবার নামে গদিতে বসেছে তাঁরা নিতান্তই ক্ষমতার লোভী। পৃথিবী কোনো ক্ষমতা লোভীকে পছন্দ করেনা। ক্ষমতা লোভীরা বরাবর মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়।

যতক্ষণ সেবাকে সঠিকতর গুরুত্ব না দিবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেবার অপব্যবহার হবে। একজন দলান্ধ একজন গদিলোভী, একজন ক্ষমতালোভী ককখনও জাতির বিবেক ছুঁতে পারেনা।

জাতির ভাষাজ্ঞান যতক্ষন পর্যন্ত একজন ব্যক্তি না বুঝতে পারবে সে কোনোদিন মানুষের সেবায় নিয়োজিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেনা।

সেবার নামে দেশ দখল সেবার নামে লুটপাট সেবার নামে মানুষ হত্যা বন্ধ হোক। জোরপূর্বক কেউ সেবা দিতে চাইলে বুঝবে সে বিশেষ শ্রেণীর মতলববাজ যে সবকিছু গ্রাস করার জন্য যথেষ্ট সুত্র রেখে যায়।
জুলাই। ১৯,২০১৮ রাত,১:২০মি.

ছেলেটিও মেয়েটিকে ভালোবাসে

মেয়েটি শুধুই খুঁজে ফিরে কারুর
প্রশস্তত বুক, নির্ভয়ে মুখ লুকাবে,!
ছেলেটি খুঁজে ফিরে হয়ে দিশেহারা
শহরের পথে পথে নেশারা আঁখড়া,!

যেখানে গেলে ছেলেরা মেয়েটিকে ভুলে
বৃদ্ধরা ভুলে থাকে তাদের ভুল নারীদের,!
মেয়েটি শুধই খুঁজে ফিরে কারুর দুটি হাত
বিশস্তত দশ আঙুল থাকবে রাতের পর রাত,!

মেয়েটি পেলো না প্রশস্তত বুক, আর হাত,
ছেলেটি কিন্তু ঠিকই পেলো সেই আঁখড়া,
মেয়েটি এখন রোজ কাঁদে গোপনে মুখ লুকিয়ে,
ছেলেটি এখন মেয়েটি ভুলে নেশায় গেছে হারিয়ে,!

মেয়েটি পথ চেয়ে থাকে রোজ রোজ আসবে সে,
ছেলেটি পথ গেছে ভুলে তাইতো আর ফিরে না সে,!
ছেলেটি জানে মেয়েটি তাকে অনেক ভালোবাসে,
ছেলেটি ও মেয়েটিকে(!) শুধু পারেনা বলতে সে,,!

২২/০৭/১৮

কিশ- মিশ-ডে

সেবার ১৩ই ফেব্রুয়ারি এ্যডিলেডে আছি।

সপ্তাহান্তিক কেনাকাটায় শাশুড়ি – বৌমা গেছি। সেদিন একটু তাড়া ছিল। তাই মৌমা (ওর নাম মৌ) আমাকে ড্রাইফ্রুটস্, বিস্কিটস্, দুধ এর দিকে পাঠিয়ে নিজে আনাজ, ফল, মাছ, মাংসের দিকটায় গেল। উদ্দেশ্য, সময় সংক্ষেপ।

নতুন তো নই। মাস তিন-চার তো এই কাজ করছি। সানন্দে। এবারে কিন্তু মৌমার হাজারটা জিনিষ নেওয়া হয়ে গেলেও বিলিং কাউন্টারে আমাকে না পেয়ে, খুঁজতে চলে এলো, – কি গো, এ্যতো দেরি?
আমি আমার বোঝাই ট্রলি দেখিয়ে বললাম,
– আর বোলোনা, সবই তো পেলাম, কিন্তু কিশমিশ কই?
– সে কিগো, পেলেনা?
– তবে আর বলছি কি! নিজে পেলাম না বলে তো ওদের হেল্প চাইলাম। ক- ত্তো করে বুঝিয়ে বললাম,- রেইজিন, ক্যারান্ট্, ড্রায়েড গ্রেপস্, – বোঝে আর না। হাবার মতো খালি এপাশ-ওপাশ ঘাড় হেলায়।
অবাক হলো মৌমা, – ওসব কেন বলতে গেলে? বলবে তো, ‘সুলতানা’। বলেই একটা প্যাকেট তুলে এনে দেখালো,- এই দ্যাখো ছবি, আর সঙ্গে কি লেখা।
– ওমা! কিশমিশ হঠাৎ ‘সুলতানা’ কেন?
মৌমা মুখে হাসি টেনে বললো, – ও: মা। বুঝে দেখো, এসব রাজা- রানী, সুলতান- সুলতানাদের জন্যেই তৈরি যে!
-সে যাহোক, ইংরিজিই যদি না বলবে, তবে আমাদের কিশমিশ কি দোষ করলো?

এবার হাসিতে ফেটে পড়ে মৌমা ( শাশুড়ি বলে একটু রাখঢাকও নেই) – আরে তুমি যে কিছু চোখে চেয়েও দেখছো না। আসতে- যেতে, রাস্তায়-ঘাটে, পার্কে- মাঠে, ব্যাঙ্কে- হসপিট্যালে যার যখন ‘কিশি’ পাচ্ছে, তক্ষুনি জোড়ে দাঁড়িয়ে পড়ছে। আমাদের দেশের মতো যত্রতত্র হিসি না করলেই হলো। কিশি অলওয়েজ এন্ড্ এভরিহোয়্যার স্পনটেনিয়াসলি এ্যলাউড। তা, এ্যতো যে ‘কিশ’ – এর চাষ, এর একটাও কিন্তু মিশ্ হয়না মা, সব একেবারে ঠিকঠিক জায়গায় গিয়ে পড়ে। এদেশে তুমি কিশমিশ কোথায় খুঁজে পাবে বলো?

_______________
© রত্না রশীদ ব্যানার্জী।

স্বপ্ন

অন্ধকারগুলো নিঃশব্দে ঘিরে ধরেছে,
কোথাও কোন সুড়ঙ্গ নেই, নেই কোন আলোর খোঁজ!

আলোগুলো কোথায় যেন লুকিয়েছে;
অভিমানী মুখখানা তার, নিজেই নিজেকে খুঁজে মরে!

অন্ধকার আজ তার নিজের পথেই চলে,
সমস্ত আলোকে পদদলিত করে!

বোবা কান্নারা শব্দ খুঁজে মরে;
স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হবে বলে!

আশার স্বপ্নগুলো দু:স্বপ্ন হয়ে ,
হাতছানি দেয়, বিরহী হবার ভরসা নিয়ে!

বুকের ব্যথাগুলো আলিঙ্গন করে,
আশাহত স্মৃতিগুলোর সাথে!

বেঁচে থাকা মৃত মানুষেগুলো
ঘিরে ধরে জীবনের সমস্ত সোপান!

অনেক হয়েছে, অনেক হয়েছে,
এখানেই ক্ষান্ত দাও!!!!

এবার দাঁড়াও রুখে,
আলোর মশাল জ্বাল!

হাতুড়ি দিয়ে ভেঙ্গে ফেলো
আঁচলে লুকিয়ে রাখা সব অভিমানেরে!

চাপড় মার সব বোবা কান্নার গন্ডদেশে,
হয় বেঁচে থাকো মাথা উচু করে;
অথবা মর সব বীরের বেশে।

দু:স্বপ্নদের ভীড়ে রেখে এস আশার মশাল;
পুড়িয়ে দাও সমস্ত রাতের আঁধার!

তুমি স্বপ্ন হয়ে বেঁচে থেকো
সূর্যের আশে,
আমি সকল ধৃষ্টতাকে
টানেল দেখাবো।

স্বপ্নগুলো বেঁচে থেকো
প্রতিটি স্পন্দনে, স্পন্দনে!!

মানুষের গল্প-৩

প্রণয়ে মত্ত মানুষ ঠিকই জানে
মৃত সাপেরও লেজ ধরতে নেই,
মেহেদী-হলুদ কিংবা অগ্নি স্বাক্ষী
ধাপে ধাপে করে পার,
জড়ায় সেই মানুষই আবার
অচেনা এক আলোকিত অন্ধকারে !

আসে মিথ্যার ঝড়
ভাঙে খেলাঘর ;
স্বপ্নগুলো যায় রয়ে
সময়ের সব অপূর্নতায়।
তবুও সেই মানুষই
দেখে নতুন স্বপ্ন,
হাজার আশা-নিরাশার
দোলাচলে …

ঝড়

বৈশাখী ঝড়ে
ডাল পালা উড়ে।
ধমকায় বাজ
চমকায় তাজ।

সেই সাথে শীলাগুড়ি
পিষে শীলে নোড়ায় ।
বৃষ্টির বাণে
ভাসে বন্যায় ।

পাতা গুলোয় বিলি কেটে
সাফ করে জঞ্জাল।
ঠিক যেনো টেকো মাথা
সবুজ অঞ্চল।

অচেনা স্বপ্ন

এক অমাবস্যা রাতে গিয়েছিলুম স্বপ্নস্নানে
পথের মাঝে দেখতে পেলুম বেহুলারে
বলেছিলো সন্ধ্যা তারা নয়; স্বপ্ন আছে অমাবস্যার মাঝে
হতে পার যদি বিবাগী, আকাশ ছুঁয়ে দেব তোমাকে ।

বেহুলার কথায় পথ চলা আজো থামেনি আমার
পথের সাথে আমি যেন হয়ে যাচ্ছি একাকার;
সেথায় নয়; অন্য কোথাও! সন্ধান পাইনি আজো
বন্ধু হবে কি তুমি! চলো; সঙ্গে চলো ।

জান কি তুমি খুঁজো কারে? কোন সীমানায়
দেখা পেলে বলে দাও অবলীলায়; আমিতো চাইনি তোমায়,
তবে খুঁজি কারে! আজো জানা হয়নি আমার
বিশ্ব মাজারে চলি, শুধু চলি নিরন্তর ।

অঘ্রানের কিস্ সা শ্রাবণে

সেদিন বাড়ির বউটি নবানেরপুজো- আচ্চা- সেরে, ঘর- বর, ছেলে-পুলে, অতিথ্- পথিত্, পাখ- পাখালি সক্কলকে নবান্ নিবেদন করে পুকুরঘাটে জলকে – মাছকেও তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়ে এলো। মহানন্দে চিংড়িরানী পদ্মপাতায় হায় করে বসে মিষ্টি রোদে চুল শুকুতে শুকুতে নবান মুখে তুলতে যাবে, আর ওমনি যমকাক ওপোর থেকে হাঁক পাড়লো : ওলো, তোরে খাই।
এমনিতে চিংড়ির ভয় পেয়ে পদ্মপাতার তলায় লুকিয়ে পড়বার কথা। কিন্তু ভয়তো নয়, রাগ হলো ভীষন।
— হারামজাদা, তুই খাবি তো খাবি। কিন্তু ‘লো’ কেন বললি??
মূহুর্তের মধ্যে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে সাঁতরে চললো মাইলে র পর মাইল। যার তার কাছেতো আর সে প্রতিকার চাইতে পারেনা। একমাত্র ইলিশই তার সমগোত্রীয়। তার কাছে পৌঁছতে পৌঁছতে দিন তো কাবার। মাঝরাতে গিয়ে সে কড়া নাড়লো,
— ইলিশভাই, ইলিশভাই ঘরে?
— এতো রেতে কে বা ডাকাডাকি করে?
—আমি চিংড়ি রানী…
— দাও বোনকে পিঁড়ি পানী…
তারপর যথাবিহিত সম্মান সহকারে ইলিশ জানলো, তাকে সাহায্য করতে পারলে তো সে ধন্যই হতো। তবে কিনা এতোটা রাত… আর পথও অনেক। তুমি বোন রুই য়ের কাছে যাও। সে তোমার প্রতিবেশি।

মনঃক্ষুন্ন চিংড়ি ওই রাতে আবার উজিয়ে গেল মাছের সেরা রুইয়ের কাছে, :
—রুই দাদা, রুই দাদা ঘরে?
— এতো রেতে কে বা ডাকাডাকি করে?
— আমি চিংড়ি রানি….
— দাও বোনকে পিঁড়ি পানি…
খাতিরদানির পর রুই জানালো, :
—তোমাকে সাহায্য করতে পারলে তো বর্তে যেতাম। তবে বুঝছোই তো, বেপাড়ার কেস। তুমি বরং তোমার পাড়ার কই, মাগুরকে বলো…

ক্রমে ক্রমে কই,মাগুর, ল্যাঠা, চ্যাং, ছিমুরি ইত্যকার যতরকম মাছ সবার কাছেই চিংড়ি তার অপমানের বিহিত চাইতে যায়, আর অভিন্ন উপদেশ শুনে শুনে যখন হতাশ, কাঁকড়া তখন এগিয়ে এলো, :
—কাককে শাস্তি দিতে হবে তো! ও আর এমনকি বেশি কথা। তুমি বোন এক কাজ করো দিকি। দু পয়সার মুড়ি কিনে আমার গর্তের চারপাশে ছড়িয়ে দাও। তারপর পদ্মপাতার আড়ালে গিয়ে গা ঢাকা দাও। দ্যাখো কি হয়!

শোনামাত্র চিংড়ি কাজ করে ফেললো।

খানিক পর কাক ছড়ানো মুড়ি দেখতে পেয়ে খুঁটে খুঁটে খেতে লাগলো। অনবধায় একটা সময় কাঁকড়ার গর্তে পা পড়তেই, কাঁকড়া মরন কামড় বসালো পায়ে। কাক না পারে নড়তে, না পারে উড়তে। আর চিংড়ির উল্লাস দ্যাখে কে! সে নাচতে নাচতে হাত তালি দিয়ে গাইতে লাগলো:

আমার সকল দাদায় হারলো,
কেবল কাঁকড়া দাদায় জিতলো।

কাকের কানে এই গান যেতেই, শক্ত হলো ঘাড়। সে তার তীক্ষ্ণ চঞ্চু জোড়া গর্তে প্রবেশ করিয়ে এক ঠোকরে কাঁকড়ার পেট ফুঁটো করে তাকে তুলে নিয়ে ডানা মেলে দিল আকাশে।

(লোকগল্প)