বিভাগের আর্কাইভঃ ব্যক্তিত্ব

রবীন্দ্র শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাসের জন্মদিন

239055

ইতিহাসে পড়েছি যে তানসেন গান গাইলে নাকি বৃষ্টি নামতো! আর দেবব্রত বিশ্বাস গাইলে? মন প্রাণ জুড়িয়ে যেতো। আজ এই প্রিয় কণ্ঠশিল্পীর জন্মদিন। আজ সারাদিন আমি তাঁর গাওয়া গান শুনছিলাম। যেমন- ‘আবার এসেছে আষাঢ়’ অথবা ‘বহুযুগের ওপার হতে আষাঢ়’- তাঁকে শুনছি আর আকাশ জুড়ে মেঘের আনাগোনা কিছু পরেই বৃষ্টি। খুব অবাক হয়েছিলাম। মুগ্ধ হয়ে শুনছি গানের জগতের এই আপোষহীন সম্রাটের গান। তারপর মনে হল “আষাঢ়” শব্দটি কি আমরা নির্ভুল উচ্চারণ করতে পারি? তিনি ‘আষাঢ়’ শব্দটি যেভাবে উচ্চারণ করলেন মনে হয় না আমরা কেও সেইভাবে উচ্চারণ করতে পারি।

পল রবসনের তথাকথিত ‘চ্যুতি’ যেমন ইতিহাসের মাত্রা পায়, তেমন ভাবে জর্জ বিশ্বাস কে খোঁজার জন্য জাতীয় চৈতন্যের গহন শিকড়ে নেমে যেতে হয়। পল রবসনের কথা মনে হল কারণ – দেবব্রত বিশ্বাসও শেষপর্যন্ত একজন আমাদের অতি প্রিয় আশ্রমিক গীতিকার ও সুরকারকে আমাদের সামনে নতুনভাবে নিয়ে আসার প্রয়াস করেছিলেন। রবসন যেমন নিগ্রো আধ্যাত্মিকতাকে ক্রমশ মুক্তি দিতে চাইছিলেন মার্কিনি শ্রমজীবীর মূল সংস্কৃতিতে তেমনই দেবব্রত বিশ্বাস তাঁর পূজা পর্যায়ের গানে রক্ষণশীলতাকে মুক্তস্রোত করে দিয়েছিলেন। সেই সময় রবীন্দ্রসংগীতের মৌলবাদ তাকে ব্রতভ্রষ্ট মনে করেন কিন্তু জর্জ বিশ্বাস রবীন্দ্রচর্চা সীমানার বাইরেও জনসমর্থন পেয়ে যান; অনেকটাই রবসন যেমন কালো সমাজের।

দেবব্রত বিশ্বাস যখন সক্রিয়, তখনও আমরা বুঝিনি সংস্কৃতির নির্দিষ্ট ফ্রেমের বাইরে কীভাবে চলে যাওয়া যায়। আজ হয়ত দেবব্রত বিশ্বাস রবীন্দ্রগানের একটি উপসংস্কৃতিও হয়ে উঠতে পারেন, যেমন হয়ত বিটল ঘরানায় পল ম্যাকার্টনি। নিগ্রো স্পিরিচুয়াল ও ব্রাহ্ম উপাসনারীতি আসলে উপলক্ষ ছিল। বিপ্লবী হয়ে ওঠা ছিল এদের নিয়তি।

শোকাবহ ১৫আগস্ট

440830_n

আমি ভাষা আন্দোলন দেখিনি
আমি দেখিনি 71
আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি
আমি তার জীবনকে উপলব্ধি করতে পেরেছি
ইতিহাসের মর্মর ধ্বনিত পাতা থেকে…

৭ ই মার্চের রেসকোর্স ময়দানের সেই
মুক্তি সংগ্রামের অমর বাণী

“এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”

স্বাধীনতার সেই অমর বাণী আমাকে উদ্বুদ্ধ করে
মহানায়কের সেই নক্ষত্র পতনে আমরা যেভাবে শোকাহত যেভাবে পিছিয়ে পড়েছি সেভাবেই আবার জাগিয়ে উঠেছি।

আমরা এদেশের সেই হায়েনাদের চিনেছিলাম
তাঁদের অপরাধ আমাকে ব্যথিত
কিন্তু আমাদের হৃদয়কে দুর্বল করতে পারেনি।

আমি’ 75 দেখিনি;
বঙ্গবন্ধুর সেই আত্মাকে
ধারণ করা অসমাপ্ত আত্মজীবনী সাক্ষী
তার মধ্যে তাকে দেখেছি।

আজ 15 ই আগস্ট শোকাবহ
এক জাতির বুকে যেভাবে অস্ত্র চালিয়েছে
একদল হায়েনা।

আমি বাংলার মানচিত্রে
একদল কাপুরুষকে দেখেছি
রাতের অন্ধকারে
একটি স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে
১৮টি বুলেটের আঘাতে
ক্ষতবিক্ষত করতে দেখেছি।

পুরুষের শরীরে কাপুরুষের প্রবাহিত রক্ত
যখন সিঞ্চিত করে অপরাধ
তাঁদের প্রতি একরাশ ঘৃণা থেকে
নিজেকে মজবুত করেছি।

১৫ আগস্ট এক শোকাবহ ইতিহাস
বাংলা ও বাঙালির হৃদয়ে যে রক্তক্ষরণ
তা কোনোদিন মুছে যাবার নয়
হে পিতা, আমাদের ক্ষমা করো
তোমাকে বিশ্বাস দিতে পারিনি
তোমার বিশ্বাস এর মর্যাদা যাঁরা অবিশ্বাসে পরিণত করে
তাঁদের আমরা ক্ষমা করিনি।

মুজিব মানে মুক্তির স্লোগান

23523

মুজিব মানে সতেজ তাজা প্রাণ,
মুজিব মানে চিরসবুজ বাংলার ঘ্রাণ।
মুজিব মানে অমর মৃত নয় এমন,
মুজিব মানে প্রতিবাদ বজ্র যেমন।

মুজিব মানে বাঙালির মুক্তির মহানায়ক,
মুজিব মানে বাঙালির দুঃসময়ের সহায়ক।
মুজিব মানে বাংলার লাল-সবুজের পতাকা,
মুজিব মানে মুক্ত আকাশে উড়ন্ত বলাকা।

মুজিব মানে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর বজ্রাঘাত,
মুজিব মানে সোনার বাংলার সুপ্রভাত।
মুজিব মানে কৃষকের মাঠে পাকাধান,
মুজিব মানে স্বাধীনতা মুক্তির শ্লোগান।

মাঙ্গলিক রবীন্দ্রনাথ …

মাঙ্গলিক রবীন্দ্রনাথ …

প্রেমিকদের মূল মন্ত্র হল ‘প্রেম’। উপনিষদে এই ‘প্রেম’ শব্দটির সমার্থক শব্দ হল ‘আনন্দ’। এই প্রেম আর আনন্দের মধ্যে এক নিবিড় যোগ আছে আর তা হল সত্য। প্রেমের যা দুঃখ একজন প্রকৃত প্রেমিকের কাছে তা পরম আনন্দ। এর সঙ্গে সৌন্দর্যকেও যোগ করে নিতে হবে। কেননা সৌন্দর্যের আশ্বাস মনে প্রেমের জন্ম দেয় আর তার থেকেই আসে আনন্দ আর সেই আনন্দই চিনিয়ে দেয় পরম সত্যকে। এবং এই ভাবের থেকেই ‘মঙ্গল’ শব্দটি মনে আসে। কিন্তু গভীর মরমী চেতনায় সৌন্দর্য, প্রেম, আনন্দ, সত্য এই সমস্ত ভাবের স্তরই একটি পূর্ণতা নিয়ে সৃষ্টি হয়। কিন্তু ‘মঙ্গল’ শব্দটির মধ্যে পূর্ণতা থাকে না। কারন মঙ্গল মানেই অমঙ্গলের অস্তিত্ব। আমরা পরম করুণাময় ঈশ্বর কে মঙ্গলের অধীশ্বর বলে মনে করি তাহলে তো অমঙ্গলের অধীশ্বর হিসেবে শয়তানকে মানতে হয়। তবে তো ‘মঙ্গল’ পূর্ণতা পেল না। তবে প্রকৃতপক্ষে যিনি যেমন মানুষ তার ঈশ্বরকেও তেমনই রূপ দেন। তাই যিনি মানব সত্যের সাধনায় স্বয়ং পূর্ণসত্তায় উত্তীর্ণ হচ্ছেন একমাত্র তাঁর পক্ষেই জগতের পরম একক সত্তাকে উপলব্ধি করা সম্ভব।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আমরা মঙ্গলময় ঈশ্বরের প্রতি তাঁর বিশ্বাসের কথা জানতে পারি।
১. “সত্যমঙ্গল প্রেমময় তুমি, ধ্রুবজ্যোতি তুমি অন্ধকারে।
তুমি সদা যার হৃদে বিরাজ দুখজ্বালা সেই পাশরে-
সব দুখজ্বালা সেই পাশরে।।“

২. “আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর।।
…… বহে জীবন রজনীদিন চিরনূতনধারা,
করুনা তব অবিশ্রাম জনমে মরনে।।
স্নেহ প্রেম দয়া ভক্তি কোমল করে প্রাণ,
কত সান্ত্বন কর বর্ষণ সন্তাপহরনে।।“

৩. “চিরবন্ধু, চিরনির্ভর, চিরশান্তি
তুমি হে প্রভু-
তুমি চিরমঙ্গল সখা হে তোমার জগতে,
চিরসঙ্গী চিরজীবনে।।“

আমরা এই কবিতাগুলি থেকে তিনটি সিদ্ধান্তে আসতে পারি-
১. কবি এখানে সত্য ও পূর্ণের পাশেই ‘মঙ্গল’ কে স্থান দিয়েছেন, সুতরাং তাঁর কাছে সত্য, মঙ্গল সমার্থক।
২. ঈশ্বর শুধু মঙ্গলময় নন, তাঁর করুনা শুধু জীবনে নয় মরনের মধ্যে দিয়েও বর্ষিত হচ্ছে। ঈশ্বর ইহজীবনে নানানভাবে হৃদয়ে সান্ত্বনা বহন করে আনছেন এবং প্রতিনিয়ত দুঃখ হরণ করছেন।
৩. ঈশ্বর সর্বময়ই মঙ্গল। তাঁর মধ্যে ‘অমঙ্গলের’ কোন স্থান নেই ।

আমরা জানি পার্থিব যন্ত্রণার চূড়ান্ত ঘটনা হল মৃত্যু। প্রতিটি মানুষের মধ্যে চেতনালাভের প্রথম দিনটি থেকেই মৃত্যু নামের মধ্যে দিয়ে একটা ভয় কাজ করে। নিজের অহং বিনাশের ভয়, প্রিয়জনের সাথে চিরবিচ্ছেদের ভয়। কিন্তু কবি এই মৃত্যুকে ভয় বলে মানতে রাজি নন। তিনি মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই অমৃতের কাছে পৌঁছতে চেয়েছেন। তাই তো তিনি বলেছেন-
“ দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে তব মঙ্গল-আলোক
তবে তাই হোক।
মৃত্যু যদি কাছে আনে তোমার অমৃতময় লোক
তবে তাই হোক।।“

‘বৃহহদারন্যক’ উপনিষদে যে শাশ্বত বানী আছে।–
“অসতো মা সদ-গময়
তমসো মা জ্যোতির্গময়
মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়।।“

এখানে যেমন মৃত্যু থেকে অমৃতে উত্তরনের কথা বলা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঔপনিষদিগের ঋষিদেরই সার্থক উত্তরসুরি হিসেবে উপলব্ধি করেছেন। তাই তিনিই বলতে পারেন-
“আমি ভুলবো না সহজেতে, সেই প্রানে মন উঠবে মেতে
মৃত্যু মাঝে ঢাকা আছে যে অন্তহীন প্রাণ।।“

রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই মঙ্গলকে প্রত্যক্ষ করতে চেয়েছেন। পাশাপাশি ব্যবহারিক জগতের অমঙ্গলকে তিনি সহায়ক রূপে গ্রহন করেছেন। কবির নিজের জীবনও নানান দুঃখ, বেদনায় জর্জরিত ছিল। এতো দুঃখ জ্বালার মধ্যেও তিনি স্থির বিশ্বাসে অবিচল থেকেছেন। ব্যাক্তিগত দুঃখের দিনে, সমাজের অবক্ষয়ের দিনে, অমঙ্গলের জয়ডঙ্কার দিনে কবি ‘সত্যমঙ্গল প্রেমময়’কেই শুধু স্মরণ করেছেন। তিনি বলেছেন-
“হিংসায় উন্মত্তপৃথ্বী, নিত্য নিষ্ঠুর দ্ধন্দ্ব;
ঘোর কুটিল পন্থ ইহার, লোভজটিল বন্ধ ।।……
ক্রন্দনময় নিখিল হৃদয় তাপদহনদীপ্ত
বিষয়বিষবিকারজীর্ণ খিন্ন অপরিতৃপ্ত।
দেশ দেশ পরিল তিলক রক্তকলুষগ্লানি,
তব মঙ্গলশঙ্খ আন, তব দক্ষিনপানি-
তব শুভসঙ্গীতরাগ, তব সুন্দর ছন্দ।
শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য,
করুনাঘন, ধরনীতল কর কলঙ্কশূন্য।।“

“অমৃত’ কে জীবনের সার্থকরূপে ছেনে তোলবার সাধনাই ছিল কবি রবীন্দ্রনাথের কর্মযোগের প্রধান লক্ষ্য। কর্মের ক্ষেত্র দুটি; একটি মানস ক্ষেত্র, অপরটি বাস্তবক্ষেত্র। মানসক্ষেত্রের পরম সত্তার সাথে কবির প্রেমের যোগ আর বাস্তব ক্ষেত্রের পরম সত্তার সাথে তাঁর কল্যাণের যোগ। তাই তো সমাজের কল্যাণের মধ্যে দিয়েই পূর্ণের সুসমঞ্জস্য রূপটি কবি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই তো তিনি বলেছেন,- “ জগতের মধ্যে সামঞ্জস্য তিনি শান্তম, সমাজের মধ্যে সামঞ্জস্য তিনি শিবম, আত্মার মধ্যে সামঞ্জস্য তিনি অদ্বৈতম।।“

যে মানুষ সমাজের মঙ্গলের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন তিনি যদি পরমেশ্বরকে চান তবে তিনি ব্যাক্তিগত ভাবে তাঁর দিকে অগ্রসর হতে পারেন। এখানে তিনি যেমন ব্যাক্তিসাধনায় পরমের দিকে অগ্রসর হন, তেমনি তাঁর একটি বিশ্বগত সাধনার দিকও থাকে আর সেই সাধনার ক্ষেত্র হল সমাজ। সর্বমানবের মধ্যে আপন আত্মার মিলন না হলে নিখিলাত্মা তাঁর মধ্যে প্রস্ফুটিত পদ্মের মতো বিকশিত হতে পারে না।

বিবেকানন্দও এই কারনেই শুধু নিজের মুক্তি চান নি। সমাজের প্রতিটি মানুষের মন মুক্ত না হলে বন্ধন দশা কাটবে না বলেই স্বামীজি মনে করতেন। কবিও এই ধারাতেই ভেবেছিলেন’-
“যারে তুমি ফেল নীচে সে তোমারে বাঁধিবে যে নীচে
পশ্চাতে রেখেছ যারে সে তোমারে পশ্চাতে টানিছে।
অজ্ঞানের অন্ধকারে
আড়ালে ঢাকিছ যারে
তোমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘোর ব্যবধান।।“

সুতরাং মানবাত্মার মুক্তি খুঁজতে হবে সাধারন মানুষেরই মধ্যে। এখান থেকে ছাড়পত্র না পেলে ‘নিখিল’-এর শতদলের পাপড়ি বন্ধই থেকে যাবে। তাই কবি সমাজের শ্রমজীবী মানুষের কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে মুক্তির রাস্তা খুঁজে পেতে চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন।–
‘তিনি গেছেন যেথায় মাটি কেটে
করছে চাষা চাষ-
পাথর ভেঙ্গে কাটছে যেথায় পথ
খাটছে বারোমাস।
রৌদ্র জলে আছেন সবার সাথে,
ধুলা তাহার লেগেছে দুই হাতে;
তারি মতন শুচি বসন ছাড়ি
আয়রে ধুলার ‘পরে।
মুক্তি?

ওরে কোথায় পাবি,মুক্তি কোথায় আছে।
আপনি প্রভু সৃষ্টি বাধন প’রে
বাঁধা সবার কাছে।।“

সমাজ ও মানব কল্যানের জন্য একমাত্র হাতিয়ার হল নিঃস্বার্থ কর্ম। তিনি লিখেছেন।– “আনন্দের ধর্ম যদি কর্ম হয় তবে কর্মের দ্বারাই সেই আনন্দস্বরূপ ব্রহ্মর সঙ্গে আমাদের যোগ হতে পারে। গীতায় একেই বলে কর্মযোগ।“

গীতায় কর্মযোগে বলা হয়েছেঃ
“তস্মাদসক্তঃ সততং কার্যং কর্ম সমাচর।
অসক্তো হ্যাচরন্ কর্ম পরমাপ্নোতি পুরুষ।।“

অর্থাৎ আসক্তি শূন্য হয়ে কর্ম সম্পাদন করলে পুরুষ পরমকে প্রাপ্ত হন। এখানে কবি গীতার কঠিনতা কে অনেকটাই মাধুর্য দিয়ে পূর্ণ করেছেন।‘অনাসক্তি’র প্রকৃত যে তিক্ততা নয় তা যে শুধু ভোগাকাঙ্খা ত্যাগ, সেই কথাটা রবীন্দ্রনাথের আনন্দ মিমাংসার দ্বারা আমরা স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারি। তাঁর কবিতার মধ্যে দিয়েই সেই তত্ত্ব উপলব্ধির সজীবতা প্রকাশিত হয়েছে-
“কর্ম করি যে হাত লয়ে কর্মবাঁধন তারে বাঁধে,
ফলের আশা শিকল হয়ে জড়িয়ে ধরে জটিল ফাঁদে।
তোমার রাখী বাঁধো আঁটি- সকল বাঁধন যাবে কাটি,
কর্ম তখন বীনার মতো বাজবে মধুর মূর্ছনাতে।।“

“আনন্দরূপমমৃতং যদ্বিভাতি’, মানব কল্যান- সমাজ সেবা- কর্মযজ্ঞ- রবীন্দ্রনাথের ‘ব্যাক্তি আমি’তেই সমস্ত উপলব্ধির মূল শিকড় কিন্তু এই মঙ্গলময় ‘পরম আমি’র মধ্যেই নিহিত আছে।

লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প

Floren

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ১২মে ১৮২০ সালে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মদিনকে সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তিনি জাতিতে ব্রিটিশ ছিলেন। জন্মের সময় পরিবার ইতালির ফ্লোরেন্সে অবস্থান করছিল, তাই ওই শহরের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছিল তার। পিতা উইলিয়াম এডওয়ার্ড নাইটিঙ্গেল একজন প্রচন্ড বিদ্যানুরাগী মানুষ ছিলেন। ভিক্টোরিয়ান রক্ষণশীলতার যুগেও তিনি মেয়েদের গণিত, দর্শন, ক্ল্যাসিকাল সাহিত্য এবং বিভিন্ন ভাষা শেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। মা ফ্রান্সিস নাইটিঙ্গেল অভিজাত পরিবারের মানুষ ছিলেন।

ছোটবেলা থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় পরিবারের সাথে ঘোরার সুযোগ হয়েছিল তার। এরকম এক ভ্রমণের সময় প্যারিসে পরিচিত হয়েছিলেন ম্যারী এলিজাবেথ ক্লার্ক এর সঙ্গে। নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ম্যারী প্যারিসের বুদ্ধিজীবিদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ম্যারী বিশ্বাস করতেন নারীরা পুরুষের সমকক্ষ। প্রকৃতপক্ষে তিনি ব্রিটিশ অভিজাত পরিবারের মেয়েদের এড়িয়ে চলতেন। ঘটনাক্রমে ফ্লোরেন্সের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়েছিল। এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক টিকে ছিল প্রায় চল্লিশ বছর। ধারণা করা হয় ম্যারীর ব্যক্তিত্ব ও আদর্শ নাইটিঙ্গেলকে খুব বেশি অণুপ্রাণিত করেছিল। এরপর নাইটিঙ্গেল গ্রীস ও মিশর ভ্রমণে যান। এথেন্সে অবস্থান কালে একটি ছোট ঘটনা তার মনকে খুব নাড়া দেয়। কিছু বাচ্চা দুষ্টুমির ছলে একটা ছোট প্যাঁচাকে নিষ্ঠুর ভাবে কষ্ট দিচ্ছিল। নাইটিঙ্গেল পাখিটিকে উদ্ধার করে তার কাছে রেখে নাম দিয়েছিলেন এথেনা। এরপর ১৮৩৭ সালে মিশরের থিবেসে ভ্রমণের সময় তার অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়- মনে হতে থাকে সৃষ্টিকর্তা যেন তাকে ডাকছেন! তার নিজের ভাষায়-“God called me in the morning and asked me would I do good for him alone without reputation.”।

একজন অভিজাত পরিবারের মেয়ে কিভাবে এই সিদ্ধান্তে আসলেন তা নিয়ে আরো অনেক গল্প আছে। ফ্লোরেন্সে জন্মালেও বেড়ে উঠেছিলেন লন্ডনের নিকটবর্তী ডার্বিশায়ারের গ্রামাঞ্চলে। ওই এলাকায় রজার নামে এক দরিদ্র রাখাল ভেড়ার পাল নিয়ে বসবাস করত। ভেড়ার পাল পাহারা দেয়ার জন্য ছিল পালিত কুকুর ক্যাপ। একদিন গ্রামের ডানপিটে ছেলের দল পাথর ছুড়লে ক্যাপের এক পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। রজারের পক্ষে একটি অকর্মণ্য আহত কুকুরকে পালার মতো আর্থিক সক্ষমতা ছিলো না। সে কুকুরটিকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়! অন্যদিকে ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল কুকুরটিকে খুব ভালোবাসতেন। মাঝে মাঝে বাইরে বের হলে ক্যাপের সাথে খেলতেন। সেদিন রাস্তায় বের হয়ে রজারের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন সব ঘটনা। মর্মাহত হয়ে স্থানীয় এক পাদ্রীকে সাথে নিয়ে ক্যাপকে দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করলেন, ক্যাপের হাড় ভাঙ্গেনি! স্রেফ জখম হয়েছে চামড়ায় কিছুটা। পাদ্রীর নির্দেশনায় গরম পানি, ব্যান্ডেজ দিয়ে তার শুশ্রূষা করলেন দুইদিন। এরপর কুকুরটি ভালো হয়ে যায়। পরদিন রাতে ৭ ফেব্রুয়ারী, ১৮৩৭ সালে স্বপ্ন দেখলেন অথবা এটা তার নিজস্ব অন্তর্দৃষ্টি ছিল যে- যেন তিনি ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলেন। তিনি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করা শুরু করলেন তার জীবনের বিশেষ লক্ষ্য রয়েছে। সৃষ্টিকর্তার তরফ থেকে এসবই তার জন্য ইশারা! হয়তো সেবা দিয়ে একজন মৃত্যু পথযাত্রীকে ফিরিয়ে আনা যায়, এই ঘটনায় এই বিশ্বাস তার মনে গড়ে উঠেছিল।

১৮৪৪ সালে তিনি যখন প্রথম প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন নার্সিংকে পেশা হিসেবে নিবেন, পরিবারের তরফ থেকে তীব্র আপত্তি ছিল। বিশেষ করে তার মা অভিজাত ব্রিটিশ হওয়ায় বিষয়টা মেনে নিতে পারছিলেন না। কিন্তু নাইটিঙ্গেল সেই সময়ের নারীদের মতো কারো স্ত্রী বা কার মা হয়ে কাটাতে রাজী ছিলেন না। এটা সুস্পষ্ট বিদ্রোহ ছিল এবং তিনি প্রত্যয়ী ছিলেন! সোশ্যাল কগনিটিভ থিওরী তে ভাবলে বোঝা যায়, সেই সময়ের নারীদের জন্য রক্ষণশীল পরিবেশে তার এই আচরণের কারণ ছিল তার বাবার দেওয়া উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার পরিবেশ এবং বাবার সাথে মেয়ের সম্পর্ক। কারণ পরিবেশ মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে, বদলাতেও পারে। এরিকসনের সাইকোসোশ্যাল থিওরী মতে মানুষের ব্যক্তিত্ব গঠনে বড় নিয়ামক হলো তার শৈশব, পিতা মাতার ভূমিকা, আর সমাজ। এক্ষেত্রে ধারণা করা যেতে পারে নাইটিঙ্গেলের এই সিদ্ধান্তের পিছনে হয়তো ছিল সেই সময়ের সামাজিক রীতি নীতি, নারীর প্রতি রক্ষণশীলতা ও উচ্চবিত্তের জীবনাচরণের প্রতি প্রতিবাদ।

এরপর ১৮৫০ সালে জার্মানিতে প্রটেস্টান্ট ধর্মযাজক থিওডর ফ্লেডনারের হাসপাতালে অসুস্থ ও বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তার সেবামূলক কাজ দেখার সুযোগ পান। এই অভিজ্ঞতা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তিনি সমস্ত সংশয় ঝেড়ে ফেলে মানুষের সেবায় জীবন উৎসর্গের ব্রত নিলেন। এখানেই চার মাস নার্সিং ও মেডিকেল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন যা তার পরবর্তী জীবনের বুনিয়াদ হিসেবে কাজ করেছিল।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের সবথেকে বড় অবদান ছিল ক্রিমিয়ার যুদ্ধে আহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করা। ১৮৫৪ সালে সাথে আঠারো জন স্বেচ্ছাসেবী তৎকালীন অটোমান সাম্রাজ্যের কৃষ্ণসাগরের নিকটবর্তী একটি অংশে কাজ করা শুরু করলেন। সেখানে তখন ভয়াবহ ঝুঁকি পূর্ণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিরাজমান ছিল! যতো রুগী যুদ্ধে আহত হয়ে মারা যাচ্ছিল তার চেয়ে দশ গুণ বেশি মারা যাচ্ছিল কলেরা, টাইফয়েড, টাইফাস এইসব রোগে। না ছিল পর্যাপ্ত ঔষধ, পরিচ্ছন্ন গজ ব্যান্ডেজ, সর্বোপরি ড্রেইনেজ বা সুয়ারেজের কোন ব্যবস্থাপনাই ছিলনা। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে কারো কোন ধারণা ছিলনা। আনুমানিক দুই হাজার সৈনিকের জন্য ছিল মাত্র চোদ্দটি গোসলখানা! মানুষের শরীরে উকুন, চারপাশে মাছিদের বাজার! আবর্জনায় পরিপূর্ণ ছিল চারিপাশ!

নাইটিঙ্গেল সব দেখে এইসব দেখে সিদ্ধান্তে পৌছালেন সমস্যা মূলত তিনটি জায়গায়- খাবারে, আবর্জনা ও ড্রেইনেজ ব্যবস্থাপনায়। তিনি ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ করে এইসবে আমূল পরিবর্তন আনেন। তার সব থেকে বড় অবদান এটা যে তিনি পরিচ্ছন্নতা ও মৃত্যহারের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পেরেছিলেন। দিন রাত অবিশ্রান্ত খেটে গভীর রাতে মেডিকেল অফিসাররা চলে যাওয়ার পর হাতে আলো নিয়ে ঘুরতেন এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে! কোন আহত সৈনিক কষ্ট পাচ্ছে কিনা নিজে গিয়ে শুনতেন। আর এই মানুষ গুলো তাকে নাম দিয়েছিল- “the Lady with the Lamp”!

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ছিলেন একজন সুলেখিকা ও পরিসংখ্যানবিদ। ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড ধর্মভীরু ছিলেন। এই যে জীবন ব্যাপী কর্মযজ্ঞ- নার্সিং কে আধুনিকীকরণ, সমাজ সংস্কার, পরিচ্ছন্নতার ধারণা পরিবর্তন, যাকে অনেকে বলেন নাইটিঙ্গেল পাওয়ার। একে বুঝতে হলে তার নিজস্ব বিশ্বাসকে বোঝা প্রয়োজন। তিনি আধ্যাত্মিক মানুষ ছিলেন। চিরাচরিত আধ্যাত্মিকতার কিছু মত মানুষকে সমাজ সংসার থেকে একদম দূরে নিয়ে আত্মমুক্তির কথা বলে। আবার কিছু মত আধ্যাত্মিকতায় উদ্বুদ্ধ মানুষকে প্রেরণা দেয় তাদের আত্মোপলব্ধি সমগ্র মানব জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল অনেক লেখা লিখেছেন আধ্যাত্মিকতার উপর। লিখেছেন- “Where shall I find God? In myself”। অতিন্দ্রীয়বাদ, সুফিবাদের মতো শোনায় কথাগুলো। এইযে পরার্থপরতার উদাহরণ নাইটিঙ্গেল দেখিয়েছিলেন তার উদাহরণ আগে থেকেই খ্রিস্টিয়ান মিস্টিকদের মধ্যে ছিল। ক্যাথেরিন অফ সিয়েনা, ক্যাথেরিন অফ জেনোয়ার নাম বলা যায় উদাহরণ হিসেবে। এই সেবা করার তাড়না, মানুষের ভালোর জন্য কিছু করার আগ্রহ ও মানসিক শক্তির পিছনে হয়তো কাজ করে তাদের বিশ্বাস। হয়তো তাদের উপলব্ধি এমন যে এই শক্তি চলে আসে অলৌকিক উৎস থেকে, যার জন্য তাদের কোন প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়েনা, স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে আসে! হয়তো এরকম বিশ্বাসই নাইটিংগেলকে অনুপ্রাণিত করেছিল কিশোরী বেলা থেকেই।

তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য তার বিশ্বাস কে মাদার তেরেসার মানব সেবার বিশ্বাসের সাথে মিলানো যাবেনা। মাদার তেরেসা ভাবতেন যন্ত্রণা, দুঃখ মানুষের প্রতি সৃষ্টিকর্তার সুন্দর দান, যাতে তারা যীশুর যন্ত্রণাকে বুঝতে পারে, সমব্যাথী হতে পারে। কিন্তু নাইটিঙ্গেল ভাবতেন উপশমের কথা। ভাবতেন কিভাবে মানুষের যন্ত্রণা কমে, কিভাবে তার রোগ হচ্ছে, আর তা ঠেকানোর উপায় কি! তিনি ছিলেন আধ্যাত্মিকতায় উদ্বুদ্ধ বিজ্ঞানমনস্ক সংস্কারক!

তৎকালীন সময়ে নাইটিঙ্গেলের জন্য অনেকে অনুরক্ত থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তার মানব সেবা বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে এই আশংকায় আজীবন অবিবাহিতই ছিলেন। এই যে অদৃশ্য মানসিক শান্তি, তৃপ্তি যার জন্য অনেকেই বেছে নেয় এই জীবন, এই যে তাড়না তৈরী হয় মানুষের মনে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা, করুণা ও ভালোবাসা দিয়ে সেবা দিয়ে যাওয়ার, তাকে আলবার্ট ফিনি ১৯৮২ সালে উল্লেখ করেছিলেন ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল সিন্ড্রোম’ নামে। অনেকে আবার বলেন ‘নাইটিঙ্গেল এফেক্ট’! তবে সুস্পষ্ট ভাবেই এটা কোন রোমান্সের উপর গড়ে উঠেনা। এই সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা, দয়াশীলতা এবং পেশাদার ইতিবাচক মনোভাব। এই সবগুলোই অসুস্থ মানুষের সেরে উঠার জন্য খুব জরুরী। তবে এখানে পেশাদারিত্বের সীমারেখা থাকে। যার ভিতরে থেকে একজন মানুষ আরেকজন মানুষের দুঃখ দুর্দশা কমানোর জন্য সর্বোচ্চটা করতে পারেন। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল নিজে নার্সিং বিষয়ে পেশাদারিত্বের চরম উৎকর্ষতা দেখিয়েছিলেন।

দায়িত্বের প্রতি ছিলেন অত্যন্ত যত্নশীল। সার্বিক পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় তখনকার দিনের পুরুষদের সমকক্ষ ছিলেন। এই গুণ তাকে সবকিছু বদলাতে আর পরিবর্তন আনতে সাহায্য করেছিল। অনেকের মতে জনসাধারণ তাকে নিয়ে ভাবত- “woman with a strong “man’s” character”।

পরবর্তী জীবনের পুরোটা সময় নার্সিং পেশার উন্নয়নে, প্রশিক্ষণ প্রদানে পার করেছেন। তিনি ১৮৬০ সালে প্রথম সেইন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিং স্কুল উদ্বোধন করেন। এছাড়া তিনি আমেরিকার প্রথম প্রশিক্ষিত নার্স লিন্ডা রিচার্ডস এর প্রশিক্ষক ছিলেন। ১৮৫৭ সালের পর থেকে মাঝেমাঝেই শয্যাশায়ী থাকতেন। অনেকে মনে করেন ব্রুসেলোসিস আর স্পন্ডাইলিটিসে আক্রান্ত হয়ে পরেছিলেন তখন। ডিপ্রেশন ও আসতো মাঝে মাঝে। ১৩ আগস্ট, ১৯১০ সালে লন্ডনে ঘুমের মধ্যে শান্তিতে মৃত্যুবরণ করেন আজীবন মানুষের যন্ত্রণা লাঘবের জন্য কাজ করে আসা এই মহীয়সী নারী।

ছবি ও লেখা কৃতজ্ঞতাঃ ইন্টারনেট।

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (তৃতীয় পর্ব)

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (তৃতীয় পর্ব)
তথ্য-সংগ্রহ ও প্রবন্ধ রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বিবিধ বিষয়ে অগাধ পাণ্ডিত্যের পাণ্ডিত্যের জন্য ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি লাভ করেছিলেন।পিতার নাম ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মায়ের নাম ভগবতী দেবী। স্ত্রীর নাম দীনময়ী দেবী। তাঁর পিতামহের নাম রামজয় তর্কভূষণ। পণ্ডিত হিসাবে রামজয়ের সুনাম থাকলেও, তিনি অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন। ভাইদের সাথে মনমালিন্য হওয়ার জন্য রামজয় গৃহত্যাগ করলে, তাঁর স্ত্রী দুর্গাদেবী (বিদ্যাসাগরের পিতামহী) পুত্রকন্যা নিয়ে দুরবস্থায় পড়েন এবং তিনি তাঁর পিতার বাড়ি বীরসিংহ গ্রামে চলে আসেন। এই কারণে বীরসিংহ গ্রাম বিদ্যাসাগরের মামার বাড়ি হলেও পরে সেটাই তাঁর আপন গ্রামে পরিণত হয়। আর্থিক অসুবিধার কারণে দুর্গাদেবী জ্যেষ্ঠ সন্তান ঠাকুরদাস কৈশোরেই উপার্জনের জন্য কলকাতায় চলে আসেন এবং সেখানে তিনি অতি সামান্য বেতনে চাকুরি গ্রহণ করেন। পরে তেইশ-চব্বিশ বৎসর বয়সে তিনি গোঘাট নিবাসী রামকান্ত তর্কবাগীশের কন্যা ভগবতী দেবীকে বিবাহ করেন। আর্থিক অনটনের জন্য তাঁর পক্ষে সপরিবার শহরে বাস করা সাধ্যাতীত ছিল। তাই শৈশব ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামেই মা ভগবতী দেবী ও ঠাকুরমা দুর্গাদেবীর কাছেই প্রতিপালিত হন।

খুব দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম হলেও বিদ্যাসাগর ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। গ্রামের পাঠশালায় শুরু হয় তার শিক্ষাজীবন। তিনি ছিলেন লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী ও সচেতন। পাঁচ বছর বয়সে ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামের কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের পাঠশালায় ভর্তি হন। এই পাঠশালায় তিনি সেকালের প্রচলিত বাংলা শিক্ষা লাভ করেছিলেন। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে কলকাতায় আসেন। কথিত আছে, পদব্রজে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসার সময় পথের ধারে মাইলফলকে ইংরেজি সংখ্যাগুলি দেখে সংখ্যাচিহ্ন শিখেছিলেন। এই সময় ঠাকুরদাশ এবং বিদ্যাসাগর কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলের বিখ্যাত সিংহ পরিবারে আশ্রয় নেন।

১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুন সোমবার, কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীতে তিনি ভর্তি হন। ঈশ্বর চন্দ্র সন্ধ্যার পর রাস্তার পাশে জ্বালানো বাতির নিচে দাঁড়িয়ে গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করতেন ছাত্রাবস্থায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সংস্কৃত কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে। এই কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন মুক্তারাম বিদ্যাবাগীশ ও নদিয়া নিবাসী মদনমোহন তর্কালঙ্কার। বিদ্যাসাগরের আত্মকথা থেকে জানা যায় মোট সাড়ে তিন বছর তিনি ওই শ্রেণীতে অধ্যয়ন করেছিলেন। ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের ইংরেজি শ্রেণীতেও ভর্তি হন। ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য মাসিক পাঁচ টাকা হারে বৃত্তি পান এবং ‘আউট স্টুডেন্ট’ হিসেবে একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ ও আট টাকা উপহার পান। উল্লেখ্য তৎকালীন সংস্কৃত কলেজে মাসিক বৃত্তিপ্রাপ্ত ছাত্রদের ‘পে স্টুডেন্ট’ ও অন্য ছাত্রদের ‘আউট স্টুডেন্ট’ বলা হত। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কাব্য শ্রেণীতে ভর্তি হন। এই সময় তিনি শিক্ষক হিসাবে পেয়েছিলেন বিশিষ্ট পণ্ডিত জয়গোপাল তর্কালঙ্কার। ১৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘পে স্টুডেন্ট’ হিসেবে মাসিক ৫ টাকা পেতেন।

১৮৩৪-৩৫ খ্রিষ্টাব্দের বার্ষিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের জন্য তিনি ৫ টাকা মূল্যের পুস্তক উপহার পান। ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অলঙ্কার শ্রেণিতে ভর্তি হন। এখানে তিনি শিক্ষক হিসাবে পান পণ্ডিত প্রেমচাঁদ তর্কবাগীশকে। এই শ্রেণিতে তিনি এক বৎসর শিক্ষালাভ করেন। ১৯৩৫-৩৬ বৎসরের বাৎসরিক পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ সংখ্যক নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এই কারণে তিনি কলেজ থেকে রঘুবংশম্, সাহিত্য দর্পণ, কাব্যপ্রকাশ, রত্নাবলী, মালতী মাধব, উত্তর রামচরিত, মুদ্রারাক্ষস, বিক্রমোর্বশী ও মৃচ্ছকটিক গ্রন্থসমূহ উপহার পান। ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভর্তি হন বেদান্ত শ্রেণিতে। সেই যুগে স্মৃতি পড়তে হলে আগে বেদান্ত ও ন্যায়দর্শন পড়তে হত। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্রের মেধায় সন্তুষ্ট কর্তৃপক্ষ তাঁকে সরাসরি স্মৃতি শ্রেণীতে ভর্তি করে নেন। এই পরীক্ষাতেও তিনি অসামান্য কৃতিত্বের সাক্ষর রাখেন এবং ত্রিপুরায় জেলা জজ পণ্ডিতের পদ পেয়েও পিতার অনুরোধে, তা প্রত্যাখ্যান করে ভর্তি হন বেদান্ত শ্রেণীতে। ১৮৩৮ সালে সমাপ্ত করেন বেদান্ত পাঠ।

১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ এপ্রিল মাসে হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দেন ঈশ্বরচন্দ্র। এই পরীক্ষাতেও যথারীতি কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে, ১৬ মে ল কমিটির কাছ থেকে যে প্রশংসাপত্রটি পান, তাতেই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিটি ব্যবহৃত হয়। এরপর তিনি কৃতিত্বের সাথে ‘ন্যায় শ্রেণী’ ও ‘জ্যোতিষ শ্রেণী’তে শিক্ষালাভ করেন। ১৮৪০-৪১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘ন্যায় শ্রেণী’তে পাঠ করেন। এই শ্রেণীতে দ্বিতীয় বার্ষিক পরীক্ষায় একাধিক বিষয়ে তিনি পারিতোষিক পান। ন্যায় পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে ১০০ টাকা, পদ্য রচনার জন্য ১০০ টাকা, দেবনাগরী হস্তাক্ষরের জন্য ৮ টাকা ও বাংলায় কোম্পানির রেগুলেশন বিষয়ক পরীক্ষায় ২৫ টাকা – সর্বসাকুল্যে ২৩৩ টাকা পারিতোষিক পেয়েছিলেন।

বাংলাদেশের উন্নয়নের এক ‘রোল মডেল’ বিশ্বনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ( পর্ব : ২ )

CF838019-279E-4BC8-B0C3-F2B05D1AD33E

দেশরত্ন শেখ হাসিনা তিনি এখন শুধু একজন প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার একটি আদর্শের নাম, একটি চেতনার নাম, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের একটি অনুভূতির নাম। তিনি তাঁর সততা, দেশপ্রেম, মানবিক মূল্যবোধ ও কঠিন পরিশ্রমে নিজেকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। সেখানে শেখ হাসিনার বিকল্প একমাত্রই শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার বড় শক্তি তিনি মহান জাতির পিতার সন্তান। ছোট বেলা থেকেই দেখেছেন পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিব এদেশের মানুষের মুক্তির জন্য কত সংগ্রাম, কত ত্যাগ স্বীকার করেছেন। দেশের প্রতি, দেশের মানুষের এই ভালোবাসা তিনি পিতার কাছ থেকেই পেয়েছেন।

শেখ হাসিনা শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি তৃতীয় বিশ্বের একজন মানবিক নেতা হিসেবে বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছেন। অসাম্প্রদায়িকতা, গণতন্ত্র, আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা ভাবনা,তাঁকে করে তুলেছে এক অনন্য রাষ্ট্রনায়ক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে তিনি আস্থার প্রতীক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মধ্যে একটা বিশ্বাস তৈরি হয়েছে যে শেখ হাসিনাই পারে, শেখ হাসিনাই পারবে।শেখ হাসিনা নির্লোভ, জনগণের কল্যাণ ছাড়া কোন চাওয়া পাওয়া নেই। জনগণের কল্যাণ প্রশ্নে কোন আপোস করেন না। কঠোর পরিশ্রম ও সময়োপযোগী সিন্ধান্তের কারণে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়।

তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী দল এবং পাকিস্তানের দোসর যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিলেন। সব থেকে বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তাঁর বেঁচে যাওয়া রক্তের উত্তরসুরী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহেনাকে বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত করে রেখেছিল ওই সময়ের জেনারেল জিয়ার সামরিক শাসন। বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকে দীর্ঘদিন নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয় দেশের বাইরে। 

আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসুরী শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে সম্মেলনের মাধ্যমে। তিনি দলের দায়িত্ব নিয়েই জেনারেল জিয়ার সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরেই বাংলার মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যুক্ত হোন। শেখ হাসিনা মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির বুকে চেপে বসা জগদ্দল পাথরের মত সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন এবং মানুষের ভোট অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বার বার বুলেট ও গ্রেনেডের মুখ থেকে বেঁচে ফেরা বহ্নিশিখা। তিনি তাঁর জীবন বাংলার মেহনতী দুখি মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন। রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণই তার রাজনীতির দর্শন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে যেমন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি উদার গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেরও প্রতিচ্ছবি। তার রাজনীতির মূলমন্ত্র হলো জনগণের জীবনমান উন্নয়ন। আর তাই বার বার স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তি তার উপর বুলেট ও গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাকে শেষ করে দিতে চেয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই জনগণের বিপুল ভালোবাসা ও আশীর্বাদে তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন।

বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা অপরিহার্য এবং একই সাথে এই কথাও সত্য যে সরকারের ধারাবাহিকতা ধাকলে উন্নয়ন বেশি হয়। এই দুটি কারণ যখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়কালে ঘটেছে তাই বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার পর এমন নজিরবিহীন উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করতে পারছে। সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছেন জীবনভর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু।

তার রক্তের যোগ্য উত্তরসূরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই পথের যাত্রী। পরম করুণাময় হয়তো তাকে বার বার বুলেট ও গ্রেনেডের মুখ থেকে জীবিত ফিরিয়ে এনেছেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। বাংলার মানুষের ভালোবাসার প্রতিদানও প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এক বিস্ময় বিশ্ববাসীর কাছে। বর্তমানে বিদেশীরাও বাংলাদেশের সাফল্যের  উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে থাকেন। দেশে ও দেশের বাইরে ভিশনারী লিডার হিসেবে শেখ হাসিনার যে ঈর্ষণীয় সাফল্য তা এক কথায় অনন্য ও অসাধারণ।
যেকোন সংকট, দুর্যোগ এমন কি করোনামহামারির সময় জনগণ তাকিয়ে থাকে শেখ হাসিনার দিকে। জনগণ মনে করে তিনিই জাতির আলোকবর্তিকা……

— ফারজানা শারমিন
২৩ – ১১ – ২০২০ ইং

বাংলাদেশের উন্নয়নের এক ‘রোল মডেল’ বিশ্বনেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ( পর্ব : ১ )

D24E38BD-A839-4914-970B-5AF431763C86

শেখ হাসিনা মানেই এই বাংলাদেশ। আজকের এই গণতন্ত্রের বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা মানেই উন্নয়নের বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা মানেই জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ, শেখ হাসিনা মানেই সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।

বাঙালি জাতির অস্তিত্বের উৎস হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা দ্বিতীয়বার পেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাঝে আমরা খুঁজে পাই বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি, খুঁজে পাই বাঙালি জাতির অস্তিত্বের উৎস।

মহান মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মণিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বৈরশাসকের কবল থেকে বাংলার মানুষকে মুক্ত করার লক্ষ্যে জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর। পরম একাগ্রতা এবং নিষ্ঠার সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যান বাংলার মানুষের জন্য।
বর্তমান সরকারের সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, ক্রীড়া, পরিবেশ, কৃষি, খাদ্য, টেলিযোগাযোগ, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এমন কোনো খাত নেই যে খাতে অগ্রগতি সাধিত হয়নি। এ ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি, মাতৃত্ব এবং শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। যা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে প্রশংসিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলেও।

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন যথার্থই বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার দুটি গুণকে আমি বিশেষ গুরুত্ব দিই। একটি তাঁর সাহস, প্রতিকূল পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার দৃঢ় মনোবল ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের দৃঢ়তা। অন্যটি গণমানুষের প্রতি ভালোবাসা। গ্রামেগঞ্জে ঘুরে টের পেয়েছি হতদরিদ্র মানুষরা তাঁকে ভালোবাসে তাঁর কাছেই তাদের প্রত্যাশা। মনে করে, তাদের যা কিছু চাওয়ার জায়গা এক জায়গাতেই। তিনি বোঝেন জনগণের সুখ-দুঃখ, বোঝে তাদের নাড়ির টান। তাঁর হাজার রকমের কর্মের প্রয়াস জাতি হিসেবে আমাদের মাথা উঁচু করে দেয়। সারা পৃথিবীর মানুষ একজন মানবিক প্রধানমন্ত্রী মানেই শেখ হাসিনাকেই জানেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কাজটাই বড়। দেশের সকল জনের কাজ, জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে কাজ। আমজনতা নিশ্চিত করে বলতে পারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের, শেখ হাসিনার কাজ আমাদের কাজ। শেখ হাসিনার বাংলাদেশের দিকে উন্নত দেশের নেতারা অবাক হয়ে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনি তো উন্নয়ন বিস্ময়কর জন্ম দিয়েছেন।

এই সাহসী নারী আলোকবর্তিকা হিসেবে সারা বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছেন। সত্যিইতো শেখ হাসিনার জীবন কর্মবহুল ও বৈচিত্র্যে ভরপুর। এখন এটা শুধু একটি নামই নয়, এটা একটি প্রতিষ্ঠান। Work is worship যার জীবনের মূলমন্ত্র। কর্ম-জ্ঞান ও ভক্তির অপূর্ব সমন্বয়ে গঠিত এক অসাধারণ জীবন তার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতির ralling point, cementing bond. জননেত্রী শেখ হাসিনা এদেশের জনগণের কাছে মুক্তিযুদ্ধের একটি রূপক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্যাটার্নেও সাদৃশ্য খুব বেশি। ত্যাগ, প্রজ্ঞা, ঐক্যচেষ্টা, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা, ভাবাদর্শেও যুগোপযোগী সমন্বয় ইত্যাদি সবকিছুর দিক দিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে পিতাপুত্রীর মধ্যে অদ্ভুত মিল রয়েছে।

কলকাতার এক সাংবাদিক বন্ধু বলেছিলেন, “তোমাদের হাসিনা যেন দশভুজা। দশ হাতে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ছে।” তার কথা সত্য। এক সময় যে বাংলাদেশ ছিল দরিদ্র ও অনুন্নত সেই বাংলাদেশ এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দৃপ্ত পায়ে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলেছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম সফল ও আলোচিত নেত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সাথে আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক দেশ গড়ে তুলতে একের পর এক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সাফল্যের সাথে তা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। তার অধ্যবসায়ী মনোভাব এবং পরিশ্রমী উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আজ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন দেখে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রসমূহের কর্ণধাররাও বিস্মিত। দেশ আজ আধুনিক অবকাঠামোগত প্রক্রিয়া সমৃদ্ধ…

— ফারজানা শারমিন
১৮ – ১১ – ২০২০ ইং

শব্দনীড় ব্লগের প্রিয় ব্লগারবৃন্দ লক্ষ্য করুন!

একসময় যখন এদেশে মোবাইল ফোনের আগমণ ঘটে, আমি তখন টেক্সটাইল মিলে কাজ করি। মিলটা ছিলো গোদনাইল পানির কল এলাকায়। মিলের নাম গাজী টেক্সটাইল মিলস্। মিল মালিকের নাম ছিলো, সামছুল হক গাজী। উনাকে এলাকার সবাই গাজী সাহেব বলে ডাকতো। সময়টা তখন ২০০৬ সাল। তবে এর আগে থেকেই মনে হয় এদেশে মোবাইল ফোন এসেছিল। কিন্তু আমার দেখা ২০০৬ সালে গাজী টেক্সটাইল মিলের মালিক গাজী সাহেবের হতে। তাই আমি এদেশে মোবাইল ফোনের আগমণ ২০০৬ সালই উল্লেখ করেছি।

সে-সময় মিলের মালিক ঢাকা থেকে একটা নতুন মোবাইল ফোন কিনে আনে। মোবাইলটা প্রায় এক মুঠুম হাত লম্বা ছিল। মোবাইলটার কালার ছিলো কালো। উনি সময় সময় বাসা থেকে বের হয়ে মিলের গেইটের সামনে এসে মোবাইল ফোনটা কানে চেপে ধরে কথা বলতো। ঘরের বাইরে এসে কথা বলার কারণও ছিলো! কারণ হলো, তখনকার সময়ে নেটওয়ার্ক সমস্যা বেশি ছিলো। যদিও উনার মোবাইলের সিমকার্ড গ্রামীণ ফোন ছিলো, তবুও তখন ঘরের ভেতরে বসে নেটওয়ার্ক পাওয়া যেতো না। তাই তিনি মোবাইল ফোন কানে চেপে ঘরের বাইরে এসে বকবক করতো। আর মিলেই সব শ্রমিকরা হা করে তাকিয়ে থাকতো! অবাক হয়ে দেখতো! কান পেতে উনার কথা শুনতো। সবার সাথে আমিও মিল মালিকের সামনে গিয়ে উঁকি মেরে দেখতাম। আর ভাবতাম! মনে মনে আক্ষেপ করে বলতাম, ‘ঈশ! যদি আমি একটা কিনতে পারতাম!’

আমার মনের সেই আক্ষেপ মনে হয় মহান সৃষ্টিকর্তা সেসময়ই শুনে ফেলেছিল। তাই মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় মাসেক দুইমাস পর পরিচিত এই দোকান থেকে ২০০৬ ইংরেজি সালেই Nokia-1110 মডেলের একটা মোবাইল কিনতে সক্ষম হই। তাও অর্ধেক নগদ, অর্ধেক বাকিতে। সেইসাথে একটা বাংলালিংক সিমকার্ডও কিনলাম। মোট দাম হলো, ৩,৬০০+৫০০= ৪,১০০/=টাকা। দোকানদারকে নগদ দিলাম ২,০০০/=টাকা। আর বাদবাকি টাকা মাস শেষে বেতন পেলে পরিশোধ করবো বলে কথা দিলাম। এরপর থেকে শুরু করলাম, নেটওয়ার্কে যুক্ত থাকা অপরের সাথে কথা বলা এবং মেসেজের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে বার্তা পাঠানো। পরের মাসে মিলে বেতন পেয়ে মোবাইলের বাকি টাকা পরিশোধ করলাম।

ওই মোবাইলটা বেশকিছু দিন ব্যাবহার করার পর আর ভালো লাগছিলো না। কারণ, Nokia-1110 মডেল মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যেতো না, তাই। তারপর ২০০৭ ইংরেজি সালে Nokia N-73 মডেলের পুরাতন একটা মোবাইল কিনলাম। সেই মোবাইল দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে থাকি, মনের আনন্দে! কিন্তু তখনকার সময়ে মোবাইল ইন্টারনেট ছিলো স্লো-মোশনে। মানে ধীরগতিসম্পন্ন 2G স্প্রিরিট। মানে, “গাড়ি চলে না চলে না, চলে না রে– গাড়ি চলে না” এমন অবস্থা!

সে-সময়ে নেটওয়ার্ক ভিত্তিক ইন্টারনেটের সুবিধা ছিল GPRS সার্ভিস। GPRS এর পূর্ণরূপ হলো, General Packet Radio Service. সে-সময় নোকিয়া বাটন মোবাইলের সেটিং থেকে কনফিগারেশন সেটিং করে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হতো। নিজেও সে-ভাবেই সেটিং করে ইন্টারনেট ব্যহার করতাম। অনেক সময় নিজে নিজে কনফিগারেশন সেটিং করেও ইন্টারনেট সংযোগ পেতাম না, তখন সরাসরি ব্যবহার করা নেটওয়ার্ক কোম্পানির হেল্পলাইন 121- এ কল করে কনফিগারেশন সেটিং পাঠাতে বলতাম। তখন তাঁরা অটোমেটিক কনফিগারেশন সেটিং পাঠালে, তা মোবাইলে সেভ করে নিতাম। এরপর বুকেরপাটা টান করে অনলাইনে থাকা বিভিন্ন সাইটে প্রবেশ করতাম। এটাই ছিলো আমার তখনকার সময়ে নিয়মিত অভ্যাস।

কিন্তু দীর্ঘদিন Nokia-N-73 ব্যবহার করার পর মোবাইলটি আর ভালো লাগছিল না। ভালো না লাগার করণ ছিলো শুধু একটাই। তাহলে Nokia N-73 মডেল মোবাইলে বাংলা লেখা যেতো না। আবার মোবাইল স্ক্রিনেও বাংলা লেখা প্রদর্শিত হতো না। এটাই ছিল ভালো না লাগার কারণ!

এরপর ২০১১ সালে আমার একমাত্র ছেলে খুব শখ করে Nokia c-3 একটা মোবাইল কিনে। তখনকার সময়ে Nokia মোবাইলের ছিলো, মোবাইল জগতে সেরা মোবাইল। মানে Nokia’র জয়জয়কার সময়। তারপর আবার নতুন মডেল Nokia c-3। সেই মোবাইলটা আমার ছেলে বেশিদিন ব্যাবহার করে যেতে পারেনি। বিধাতার ডাকে সাড়া দিয়ে ছেলেটা ২০১১ সালের ২০ জুলাই পরপারে চলে যায়। রেখে যায়, ওর শখের Nokia c-3 মোবাইলটি।

ছেলের রেখে যাওয়া মোবাইলটা আমি বেশকিছু দিন ঘরে রেখে দিয়েছিলাম। একদিন দেখি মোবাইলের ব্যাটারি ফুলে গেছে। তখন মোবাইলটা মেকারের কাছে নিয়ে গেলাম। মোবাইল মেকার বললো, ‘এতো দামী মোবাইল ব্যবহার না করে ঘরে ফেলে রাখলে একসময় মোবাইলটাও নষ্ট হয়ে যাবে।’ মোবাইল মেকারের কথা শুনে নতুন ব্যাটারি সংগ্রহ করে আমি নিজেই ব্যাবহার করতে থাকলাম। যাতে ছেলের রেখে যাওয়া মোবাইলটা সবসময় ভালো থাকে। (তা এখনো ভালো আছে।)

এরপর থেকে Nokia C-3 মোবাইল দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করা শুরু করি। কিন্তু Nokia c-3 মোবাইলেও বাংলা লেখা যেতো না। মনের আক্ষেপ আর আফসোস শুধু মনেই থেকেই যেতো। তারপরও বিশ্ববিখ্যাত সার্চ ইঞ্জিন গুগলে সার্চ করা ছিল আমার প্রতিদিনের রুটিন মাফিক কাজ। সে-সব কাজের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ব্লগে উঁকি মারা। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া-সহ আরও অনেককিছু। তবে বেশকিছু অনলাইনভিত্তিক দিনলিপি বা ব্লগে সময়টা বেশি ব্যয় করতাম। বিভিন্ন ব্লগ সাইটে ব্লগারদের লেখাগুলো পড়তে খুবই ভালো লাগতো। এই ভালো লাগা থেকে নিজেরও লিখতে ইচ্ছে করতো। কিন্তু সমস্যা ছিলো, একমাত্র মোবাইল।

তারপরও একসময় Nokia c-3 মোবাইল দিয়ে অনলাইনে থাকা একটা ব্লগে রেজিস্ট্রেশন করে ফেললাম। কিন্তু Nokia C-3 মোবাইলে তো বাংলা লেখা যায় না! তবুও খামোখেয়ালিভাবে কোনরকম ইংরেজি বর্ণ দিয়ে স্বল্পসংখ্যক শব্দের একটা লেখা জমা দিলাম। ব্লগে লেখা জমা দিয়ে বেশকিছুদিন আর ব্লগে লগইন করিনি, লজ্জায়! লজ্জার কারণ হলো, আমার লেখা পড়ে ব্লগের সবাই যদি হাসাহাসি করে, তাই। সেই লজ্জা মনে রেখেই বেশকিছু দিনের জন্য ব্লগ থেকে লাপাত্তা ছিলাম।

এর কয়েক মাস পর অনেক কষ্ট করে মনের স্বাদ মেটানোর জন্য Symphony W-82 মডেল-এর একটা নতুন মোবাইল কিনলাম। মোবাইলটা কিনেই, সেইদিনই ঐ ব্লগে লগইন করলাম। উদ্দেশ্য হলো, আমার জমা দেওয়া লেখাটার অবস্থা দেখা। লগইন করে দেখি সম্মানিত ব্লগ মডারেটর লেখার শিরোনাম বাংলায় লেখার জন্য বলছে। Symphony W-82 এন্ড্রোয়েড মোবাইলে বাংলা লেখা যেতো। তারপরও গুগল প্লে স্টোর থেকে একটা বাংলা Keyboard অ্যাপ ডাউনলোড করে লেখার শিরোনাম লিখলাম, “আমিও মানুষ”। লেখার শিরোনাম বাংলায় লিখে, ব্লগে জমা দিয়ে আবার কিছুদিনের জন্য ব্লগ থেকে গা-ঢাকা দিলাম। গা-ঢাকা দেওয়ার প্রায় কয়েকমাস পর আবার ব্লগে লগইন করলাম। লগইন করে দেখি আমার লেখা প্রকাশ হয়েছে। লেখার নিচে মন্তব্যের বক্সে কয়েকজন সম্মানিত লেখক মূল্যবান মন্তব্যও করেছে। সেসব মন্তব্যের উত্তর দিতে গেয়েই, আজ অবধি ব্লগ আর ব্লগিংয়ের মাঝেই আটকা পড়ে আছি। ব্লগে লিখছি, পড়ছি, দেখেও যাচ্ছি।

এরপর থেকে অনেক সম্মানিত লেখক/লেখিকাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গড়েছি। অনেক লেখক/কবিদের বাড়িতে গিয়েছি। সেই থেকে এপর্যন্ত ব্লগ, ব্লগিং এবং ব্লগের পোস্টের মন্তব্য বিষয়ে সামান্যতম ধ্যানধারণাও মোটামুটি অর্জন করতে পেরেছি। একসময় ঐ ব্লগের সবার মন জয় করে একটা সম্মাননাও পেয়েছি। তা থাকুক ছোট সম্মাননা, হোক বড় কোনও সম্মাননা। কিন্তু সম্মাননা পেয়েছি। পেয়েছি ব্লগে নিয়মিত লেখালেখি করে। আর নিয়মিত সবার পোস্টে মন্তব্যের বিনিময়ে। আর আমাদের নারায়ণগঞ্জ শহরবাসীর সমস্যা নিয়ে লেখার কারণে।

যাক সে কথা, আসল কথায় আসা যাক! আসল কথা হলো, স্বনামধন্য শব্দনীড় ব্লগের ব্লগারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলা।

প্রিয় সম্মানিত শব্দনীড় ব্লগের ব্লগারবৃন্দ, একটু লক্ষ্য করুন! আপনারা যারা আমার আগে থেকে এই শব্দনীড় ব্লগে লিখেন, তাঁরা অবশ্যই ব্লগ বিষয়ে আমার চেয়ে ভালোই জানেন। তা আর নতুন করে নতুন কিছু উপস্থাপন করার কোনও দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। তবে আমরা যারা এই স্বনামধন্য শব্দনীড় ব্লগে লেখালেখি করছি, সবাই জানি যিনি ব্লগে লিখেন; তাকে “ব্লগার” বলে। তবে সহ-ব্লগারগণ একে অপরকে লেখক/লেখিকা/কবি বলেই বেশি সম্বোধন করে থাকে। যা আমি নিজেও করে থাকি। যেহেতু একই প্লাটফর্মে একে অপরের সাথে লেখা শেয়ার করছি, তাই। তারপর পছন্দ অপছন্দের মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেও যাঁর যাঁর মনের ভাব জানান দিচ্ছি।

কেউ আবার কারোর লেখায় কোনও বানান ভুল হলে তাও মন্তব্যের ছোট বক্সে লিখে জানাচ্ছি। লেখা কেমন হয়েছে, তাও অনেকে মন্তব্যের মাঝে জানিয়ে দিচ্ছে। এসব কিন্তু একজন ব্লগারের প্রতি সহ-ব্লগারের দায়িত্ব কর্তব্যের খাতিরেই হচ্ছে। আর ব্লগে খাতির বা সুসম্পর্কটা কিন্তু একে অপরের পোস্টের মন্তব্যের খাতিরেই তৈরি হয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ ব্লগে ব্লগিংয়ের মানেই হচ্ছে, নিজের লেখার পাশাপাশি সহ-ব্লগারদের লেখা বা পোস্ট পড়ে লেখার বিষয়ে গঠনমূলক মন্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা করা। সহ-ব্লগারকে আরও সুন্দর করে লেখার উৎসাহ দেওয়া।

এভাবেই আস্তে আস্তে একে অপরের লেখা পড়তে আগ্রহ বাড়ে। লেখা পড়ে লেখার ভালো মন্দ বিস্তারিত আলোচনা মন্তব্যের মাঝে প্রকাশ করে। এতে একজন সহ-ব্লগারের লেখার যেমন পরিবর্তন ঘটে, তেমনি মন্তব্যকারীদের লেখা পড়ে মন্তব্যও করতে আগ্রহ বেড়ে যায়।

আমি মনে করি, যেকোনও ব্লগের ব্লগার অথবা লেখক/লেখিকার লেখায় মন্তব্য হলো একরকম চুম্বকের আকর্ষণের মতন। চুম্বক যেমন লোহাকে কাছে টানে, তেমনিভাবে মন্তব্যকারীকে পোস্টদাতা বা লেখক/লেখিকা ভালোবেসে ফেলে, একমাত্র মন্তব্যের বিনিময়ে। সেই ভালোবাসা দিনে দিনে এতোই গভীরে চলে যায় যে, উদাউট কয়েকটা লেখায় একজন প্রিয় মন্তব্যকারীর মন্তব্য না দেখলে আর ভালো লাগে না। এমনকি ব্লগেও লিখতে মন চায় না। কারণ অনলাইন ভিত্তিক ব্লগ, বা দিনলিপিতে যে যেভাবেই লিখুক-না-কেন, লেখা প্রকাশের পর যদি কেউ লেখার নিচে মন্তব্য না করে, তাহলে ব্লগার বা লেখক/লেখিকাদের লেখাই যেন মাটি হয়ে যায়।

তাই একজন ব্লগার খুব পরিশ্রম করে লিখে লেখা ব্লগে প্রকাশ করে এবং গুটিকয়েক মন্তব্যের আশায় বার বার ব্লগে লগইন করে দৈনিক মন্তব্যের তালিকায় চোখ রাখে। নিজের লেখায় কেউ মন্তব্য করেছে কিনা তা খুব মনোযোগ সহকারে দেখে। যদি একজন সহ ব্লগারদের সুন্দর একটা মন্তব্য দেখে, তাহলে লেখক/লেখিকা বা ব্লগার ব পোস্টদাতার মনটা আনন্দে ভরে উঠে। তারপর নিজের পোস্ট বা লেখায় যিনি মন্তব্য করেছে, তার লেখা পড়ে সেও একটা মন্তব্য জুড়ে দেয়।

এভাবেই তৈরি হয় একজন ব্লগারের প্রতি আরেকজন ব্লগারের ভালোবাসা বা আন্তরিকতা। তারপর একে অপরের সাথে গড়ে উঠে সুন্দর সুসম্পর্ক। এটা আমরা অনেকেই বুঝি! আবার অনেকে বুঝেও সহ-ব্লগারের লেখা বা পোস্ট তো পড়েই না, বরং সহ- ব্লগারের পোষ্ট করা লেখা দুরছাই বলে উপেক্ষা করে মন্তব্যও আর করে না।

এতে কি হয় জানেন? এতে নিজের লেখায়ও কেউ মন্তব্য করতে চায় না, করেও না। আমি মনে করি এটা একরকম হিংসা, কৃপণতা, আর নিজেকে অহংকারী হিসেবে পরিচয় দেওয়া। এতে ক্ষতিটা অহংকারী ব্যাক্তিরই বেশি হচ্ছে বলে আমি মনে করি। কারণ নিজে যেমন অহংকারী হিসেবে নিজেকে খ্যাতিমান মনে করছেন, তেমনই নিজের পোস্টের পাঠক সংখ্যা-সহ মন্তব্যের ছোট বাক্সটাও পড়ে থাকছে খালি।

ব্লগপোস্টের মন্তব্যের বাক্স তো খালি থাকবেই! এর কারণ হলো, শুধু নিজের পোস্টে অন্যের করা মন্তব্যেগুলোর কোনরকম দায়সারা মন্তব্য “ধন্যবাদ, শুভকামনা, সাধুবাদ, ভালো থাকবেন” ইত্যাদি লিখেই সরে যাচ্ছেন। কিন্তু অন্যের পোস্টে একটিবারও চুপি দিয়ে দেখছেন না। আর মন্তব্য তো দূরেরই কথা! কারণ, আপনি একজন অহংকারী ব্লগার বা লেখক/লেখিকা, তাই।

ইদানিং দেখতে পাচ্ছি স্বনামধন্য শব্দনীড় ব্লগে মন্তব্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। আজ থেকে কয়েক দিন যাবত লক্ষ্য করছি, যদি কোনও ব্লগারের পোস্টে মন্তব্য করে, সেই মন্তব্যেরও সময়মত জবাব দেওয়া হয় না। অনেকে তো মন্তব্যের জবাব দেয়ই না। তা কি ঠিক?

শব্দনীড় ব্লগের সম্মানিত প্রিয় ব্লগারবৃন্দ,
আমি একজন সময়হীনা। মনে খেটে খাওয়া মানুষ। তাই হাতে অজস্র সময় থাকে না। তারপরও আমি নিজের পোস্টের মন্তব্যের জবাব একটু দেরি করে দিলেও, আপনাদের সকলের পোস্ট পড়ি। পারলে অল্পসংখ্যক শব্দে ছোট একটা মন্তব্যও করে থাকি।

কিন্তু দুঃখের কথা দুঃখের সাথে বলতে হয়, অন্যের পোস্টে করা মন্তব্যগুলোর জবাব বা রিপ্লাইও কেউ যথাশীঘ্র দেয় না। এটা কি ঠিক? এটা কি ব্লগিং করার নিয়ম? এটা কি সহ-ব্লগারদের নীতি?

জেনে রাখুন শব্দনীড় ব্লগের ব্লগারবৃন্দ,
আপনি নিজের পোস্ট ছাড়া সহ-ব্লগারদের পোস্টে যাচ্ছেন না। সহ-ব্লগারদের লেখা পড়ে মন্তব্য করছেন না। এতে কিন্তু আপনার নিজেরই ক্ষতিটা বেশি হচ্ছে। মানে আপনার লেখা বা পোস্ট সহ-ব্লগাররাও পড়বে না, মন্তব্যও করবে না। আমি মনে করি একটা মন্তব্য মানে একরকম দেনা বা ঋণের মতো। এই ঋণ শুধাতে হয়। সহ-ব্লগারদের পোস্ট বা লেখা পড়ে একটা মন্তব্য করে সহ-ব্লগারকে ঋণী করতে হয়। তবেই যার লেখা পড়ে মন্তব্য করে ঋণী করলেন, তিনি আপনার ঋণ পরিশোধে বাধ্য হয়ে আপনার লেখা পড়ে একটা সুন্দর মন্তব্য লিখে সেই ঋণ পরিশোধ করবেই করবে। তাই আমি নিজেই মনে মনে বলে থাকি, ‘কেউ যখন আমার পোস্ট বা লেখা পড়ে মন্তব্য করে না, তাহলে আমি কেন সময় নষ্ট করে অন্যের লেখা পড়ে মন্তব্য করবো?’ এটা অনেকের মতো আমারও ব্যক্তিগত ভাবনা!

পরিশেষে:
শব্দনীড় ব্লগের প্রিয় সম্মানিত ব্লগার/লেখক ও লেখিকাবৃন্দ, আমি আগেও বলেছি, এখনো বলি, ‘আমি এক সময়হীনা অধম ব্যক্তি। নিয়মিত ব্লগে সময় দিতে পারি না। তাই যথাসময়ে আপনাদের মূল্যবান লেখায় বা পোস্টে আমি মন্তব্য করতে পারি না। এজন্য আমি নিজে থেকে আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আপনারা যারা শব্দনীড় ব্লগে নিয়মিত আছেন, তাঁদের আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করবো, সহ-ব্লগারদের লেখা পড়ুন! সুন্দর একটা গঠণমূলক মন্তব্য করুন। মনে রাখবেন, সহ-ব্লগারদের পোস্টে আপনার করা একটা মন্তব্য মানে, আপনার নিজের লেখা বা পোস্টে দশটা মন্তব্য পাওয়া। শব্দনীড় ব্লগের সবাইকে ধন্যবাদ!

ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। সবার জন্য অফুরন্ত শুভকামনা থাকলো।

স্মরণে নজরুল

নজরুল তুমি কই ? বাজাও বিষের বাঁশি,
সত্য ন্যায়ের পাল তুলে দাও অসত্যেরে ফাঁসি।
দারিদ্রে পিষ্টে যে জন মরে দাও তারে সুখ আনি,
নিষ্পাপ জনের লৌহ কবাটে দিয়ে যাও আঘাত হানি।।
.
মুছে দাও তুমি বিভেদ মানুষে সকলে করো একজাতি,
ঘৃণার দেয়াল ধুলায় লুটায়ে দিয়ে যাও প্রেমের খ্যাতি।
অত্যাচারে ঘাতে ঘাতে আজ মরিছে অবুঝ শিশু,
সকলের হিয়ায় বাঁধিতে দরদ এসো হয়ে আজ যিশু।।
.
নীতির মঙ্গায় ঘৃণিত হচ্ছে দেশ ললাটের নেতা,
সাম্যের গান আবার শুনায়ে প্রীতি দিয়ে যাও যথা।
দূরে তুমি থেকোনা আজি এই বঙ্গ হারায় প্রাণ,
তাবেদারী রোধে বিদ্রোহ করে সার্বভৌম করো দান।।
.
২৭/০৮/২০১৬

রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আমার কথা


রবীন্দ্রনাথের কোন এক জন্ম বার্ষিকীতে আমার এক বন্ধুকে বলেছিলামঃ দোস্ত, আমার তো টু-জি নেটওয়ার্ক আর তোর তো থ্রি-জি নেটওয়ার্ক আছে, কয়েকটা রবীন্দ্র সঙ্গীত ডাউনলোড করতো শুনবো।
বন্ধুটি বলেছিলোঃ কিরে হঠাৎ ঠাকুরের গান কেন ?
আমি বলেছিলামঃ আরে হঠাৎ না, আমি মাঝে মাঝেই রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনি। তাছাড়া আজ তাঁর জন্মদিন তাই কিছু নতুন কালেকশন শোনতাম আরকি। আর উনি সম্মানিত মানুষ নামটা ভালোভাবে নিতে পারিস না ?
আমার বন্ধু উত্তরে বলেছিলোঃ রাখ তোর নাম, তুইও কি বাংলা সাহিত্য পড়ে পড়ে ঠাকুরের মুরিদ হয়ে গেলি নাকি ? আর শালায় বছরে কয়বার জন্ম নিছে ? কয়দিন আগেও না টিভিতে শোনলাম ভ্যাঁ ভ্যাঁ করতেছে। (জানিনা ও টিভিতে কী দেখেছিলো, সম্ভবত রবীন্দ্র সঙ্গীতের অনুষ্ঠান দেখেছিলো।)
তারপর আমি আর ওর সাথে এই বিষয়ে কোন কথাই বলিনি কারণ ওকে রবীন্দ্রনাথ বুঝানো আমার কাজ না আর ও জানেও না যে, এক রবীন্দ্রনাথ ছাড়া শুধু বাংলা সাহিত্য পুরোটা অপূর্ণই থাকেনা বরং বিশ্বসাহিত্যও ষোল কলায় পূর্ণ হয়না।
.
এরপর একদিন রবীন্দ্রনাথের জন্ম বার্ষিকী আসলো (২০২০ এ), দেখি আমার ওই বন্ধু রবীন্দ্রনাথের “অনন্ত প্রেম” কবিতাটি পোস্ট করে তার বিশেষ কাউকে ট্যাগও করেছে। (গভীর ভালোবাসা বুঝানোর জন্য অথবা তাকে মুগ্ধ করবার জন্য।)
আসলে রবীন্দ্রনাথের প্রতি এমন লোক দেখানো প্রেমিক/প্রেমিকা হাজারো আছে। সমান্য স্বার্থের জন্য এরা রবীন্দ্রনাথের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে পারে আবার ধর্মান্ধতার বসে তাঁকে গালিগালাজও করতে পারে। এদের আমি এড়িয়ে চলি কারণ যারা রবীন্দ্রনাথের মতো মহান ব্যক্তিত্বের ভালোবাসা নিঃস্বার্থভাবে বুকে ধারণ করতে পারেনা তারা কখনোই নিঃস্বার্থ প্রেমিক/প্রেমিকা হতে পারেনা।
.
অনেক আগে রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করে একটি কবিতা লিখেছিলামঃ
.
তোমার সৃষ্টি ধারায় খুঁজে পাই প্রেমের ঐকতান,
তুমি প্রেমে বেঁচে আছো, প্রেমেই হয়েছ মহান।
দিয়েছ তুমি ব্যথিত হিয়ায় প্রেমের চির সুর,
করেছ তুমি শানিত প্রাণ করে হিংসা দূর।।
.
আজও তুমি আছ সবার স্মরণে একই নামে,
চলে যাওনি রয়েছ মিশে ‘অনন্ত প্রেম’ শিরোনামে।
যেখানে ভুলের সয়লাব, আপন হতে চায় পর বারেবার,
সেথায় জাগাও উদার মানস আনন্দ সুখাধার।।
.
তোমাকে তাই রেখেছি মনের গহীন অন্দরে,
তুমি রবীন্দ্র, প্রেমের গান গেয়েছ ভুবন জুড়ে।
এ আমার যত প্রেমের সুর, দিলাম তোমার তরে,
‘সোনার তরী’তে মহাকাল পরে তুলে দিও থরে থরে।।
.
প্রেমে রবীন্দ্র রবীন্দ্রে প্রেম
০৬/০৮/২০১৬
.
আসলে রবীন্দ্রনাথের অংকিত নায়িকা চরিত্রের মতো শাড়ি পড়ে, কপালে ইয়া বড় টিপ পড়ে অথবা পাঞ্জাবি আর ধুতি পড়ে রবীন্দ্রনাথের নায়ক সাজলেই রবীন্দ্রনাথের প্রতি প্রকৃত সম্মান বা ভালোবাসা প্রমাণ হয়না বরং হঠকারিতারই প্রমাণ হয়। রবীন্দ্রকে ভালোবাসতে হলে রবীন্দ্র পড়তে হবে, জানতে হবে এবং বুঝতে হবে। আর তার পৃথিবীময় প্রেমের দর্শণকে অন্তরে ধারণ করতে ও তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
.
বিঃদ্রঃ রবীন্দ্রনাথের জন্ম বার্ষিকীতে পোস্টটি লেখা…
০৭/০৫/২০২০

শেখ মুজিব

আমি আমার মা কে অসংখ্য বার বলতে শুনেছি যে দিন- যে সময় শেখ মুজিব হত্যার খবর এলো সেদিন সে সময় মা আমার উঠোনে ধান মাড়ানির কাজে ব্যাস্ত, অথচ তখনো তিনি দশ মাসের গর্ববতী আমিই ছিলাম আমার মায়ের গর্ভে। স্বভাবতই তার কয়েকদিন পর আমি ভূমিষ্ট হই, জন্ম নিই বঙ্গবন্ধু হারা শোকার্ত বাংলাদেশে। আমার বাবা ষাটের দশকের ছাত্রলীগ নেতা এবং পরবর্তীকালের আওয়ামীলীগ নেতা ফলে সেই সময়কার ভয়ার্ত পরিস্থিতিতে তিনি আমাকে নিয়ে খুব ভীত সন্ত্রস্ত থাকতেন। কিন্তু মায়ের কাছে শুনেছি বাবা নাকি যখন আমাকে আদর করতেন আদরের ছলে শ্লোগান দিতেন এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে…।

এই জন্যই হয়তো পরবর্তী কালে আমারো ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠার পেছনে জেনেটিকেলি প্রভাব রয়েছে। ৯০এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় আমি নবম শ্রেনীর ছাত্র, তখনকার আন্দোলনের কথা আমার স্পষ্ট মনে থাকার কারণ হলো আমরা তখনকার আন্দোলনে বিশেষ করে বড় ভাইদের সাথে মিছিলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশ নিতাম এবং পরবর্তী কালে ৯৬ এর অসহযোগ আন্দোলন এবং তার পূর্বের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলনের ইতিহাস তো অসংখ্য রক্ত, ঘাম মাখা!…

এই যে আমার তারুণ্য আমার উদ্দাম ছুটে চলার এক অদম্য স্পৃহা এসব কিছুর পেছনে যে শক্তি কাজ করেছে সেটাই বঙ্গবন্ধুর চেতনা- বঙ্গবন্ধুর প্রভাব। বাবার মুখে বারবার শেখ মুজিবের নাম, শেখ মুজিবের ইতিহাস, তিনি ছাত্র জীবনে স্কুলে কি করেছেন, কিভাবে দাবী আদায়ের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সামনে দাঁড়িয়েছেন, কি ভাবে নানান আন্দোলনে শ্লোগান দিয়েছেন, কখন জেলে গেছেন, কখন কেন আহত হয়েছেন এসব শুনে শুনে বড় হওয়া আর সেই সাথে টুক টাক বই পড়ার নেশা তো ছিলই।

পরাধীন বাংলা বা স্বাধীন বাংলা, হাজার বছরের ইতিহাসে তারুণ্যের ঔজ্জ্বল্যে এক ব্যতিক্রমী কিংবদন্তির ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষ আর কেউই নাই। ১৯৪০ থেকে ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট দীর্ঘ ৩৫ বছরের কিছু বেশি সময়ের রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুকে একটি মহা শক্তিতে বলিয়ান হতে দেখা গেছে সেটা হচ্ছে তার তারুণ্যের শক্তি… যৌবন উদ্দীপ্ত এক বলিষ্ঠ শক্তি! …তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাস, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এবং চিন্তা-চেতনার পরিধি স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী রাজনীতি বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা বা যোগ্যতা আমার মত ছাপোষা মানুষের কক্ষনো হবেনা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন মনেপ্রাণে তরুণ বাঙালি। এ কারণে মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি ক্ষেত্রে দলের আদর্শ, বিশ্বাস ও নিজের জীবনদর্শনকে একীভূত করে নিয়েছেন তিনি। তাঁর স্বপ্ন ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক শোষণহীন রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলা। এবং ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে প্রথম পা রেখেই তিনি উচ্চারণ করেছিলেন `বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি কোনো ধর্মভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ‘যার যার ধর্ম তার তার `ধর্মনিরপেক্ষতার এই অনন্য ব্যাখ্যা বঙ্গবন্ধুই প্রথম উপস্থাপন করেন।

তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা এদেশের তরুন সমাজের মধ্যে নতুন এক উদ্দীপনা এক অসম্ভব কর্ম চঞ্চলতা দেখতে পাচ্ছি, তরুনরা আজ উদ্যোক্তা, তরুনরা আজ কেবল চাকুরীর জন্য হন্য হয়ে ছুটে না, তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও বাস্তবায়নে এবং এর যথাযথ মর্যাদা দিতে নিজেদেরকে তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলছে, বিদেশ না গিয়ে উপার্জন করছে বিদেশী মুদ্রা, শুধু তাই নয়- তরুণ’রা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন কে গবেষনা করে নিজদের জীবনে কাজে লাগাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সে দিন বলেছিলেন …
”যার যা আছে তা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে” আজ এদেশের তরুণ’রা সেই মন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে যার যা আছে তা দিয়ে পথে নামছে নিজের পায়ে দাঁড়াতে, জীবিকার সন্ধানে আর কোন অপেক্ষা নয় যা আছে তা দিয়ে শুরু করছেন কাজ। আমি নিজেই সেই মন্ত্র ( যার যা আছে তা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে) জীবনে কাজে লাগিয়েছি বহুবার।

বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদের নাম শেখ মুজিব। শেখ মুজিব মহা গ্রন্থ, একটি মহা হাতিয়ার, শেখ মুজিব একটি মহা বিদ্যালয়, একটি মহা স্পন্দন যা ধারণ করতে পারলে জীবনের পরতে পরতে উন্মোচিত হবে বিজয়ের শিখা! … অপূর্ব বিস্ময়কর এক আবেগের নাম শেখ মুজিব। শেখ মুজিবকে না জানলে না বুঝলে না মানলে জীবনের কিছুই বুঝা হবেনা কিছুই জানা হবেনা, মানা হবেনা।

অনেক প্রজন্ম বিগত হয়েছে আরো অনেক প্রজন্ম আসবে – যাবে কিন্তু শেখ মুজিব থেকে যাবে। কারণ শেখ মুজিব চিরকালের তরুণ। তিনি তারুণ্যের জন্য বেঁচেছিলেন তারুণ্যের জন্য লড়েছেন, তারুণ্যের জন্য শত্রুর বুলেটের আঘাতে শাহাদাত বরণ করেও অমর হয়ে আছেন। কারণ তারুণ্যের মৃত্যু নাই। তরুণ’রা যুগে যুগে কালে বেঁচে থাকে, লড়াই করে। আর শুধু বাংলা নয় পৃথিবীর যেখানে লড়াই সেখানেই শেখ মুজিব, সেখানেই বঙ্গবন্ধু…। যেখানে দাবী আদায়ের মিছিল সেখানেই শেখ মুজিব। সেখানে স্বাধীনতাকামীদের তর্জনী উঠবে সেখানে জেগে উঠবে শেখ মুজিব।

কবি মোহাম্মদ ইকবাল এর জন্মজয়ন্তী আজ

কবি মোহাম্মদ ইকবাল এর জন্মজয়ন্তী আজ
.
সুপ্রিয় কবি মোহাম্মদ ইকবাল এর জন্মজয়ন্তীতে
কবির নামে কবিতাটি উৎসর্গ করা হলো।
.
তিনি একজন কবি ( গদ্য কবিতা )………………

তিনি একজন কবি
মোহাম্মদ ইকবাল সুনিপুণ শব্দের শৈল্পিক কারিগর শব্দের গাঁথুনিতে বানান কল্পনার ঘর,
নদী আকাশ অরন্য পাখি চাঁদ জোছনা কেউ নয় কবির পর,
শব্দ বিন্যাসে কবি বানান নিজস্ব পৃথিবী সময় কথা বলে যায় নিরবধি,
কবির কবিতার শব্দ উচ্চারণ করা মাত্রই
মনের ভেতর এসে ভর করে অদ্ভুত শিহরণ,
আমরা উপলব্ধি করি মমতায় আঁকা কোমল কোনো মূর্তিকে যাকে অনুভব করে তিনি লিখেন,
তাঁর কলমের শব্দ গড়ে উঠে কবিতার বিস্তীর্ণ ভূমি,
তাঁর চিন্তায় শব্দের স্রোত নিত্য বহমান,
যাঁর চেতনায় পৃথিবীর বিচিত্র রঙ লীলা রূপ রস বৈচিত্র্য খেলা করে এবং
তাঁর জন্য সাধারণ মানুষের ভালোবাসা অপরিমেয়।
.
তিনি একজন কবি ——
তাঁর কাব্য প্রতিভার সাহিত্য চর্চার জোরেই তিনি চিরকালের হাসি-কান্না, জীবনবোধ, বিন্যাস, প্রেম-বিরহ, ক্ষোভ-আক্ষেপকে
শব্দের নান্দনিক স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে কবিতা গড়ে তুলেন।
তিনি কেবলই কবিই নন তিনি একাধারে সত্য ও সুন্দরের পূজারী, দার্শনিক, ভবিষ্যতদ্রষ্টা, বিজ্ঞানীও বটে,
তিনিই পারেন নিজের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, বিশ্বাস, উপলব্ধি ও অনুভবগুলো
দেশকালের সীমানা পেরিয়ে বহুদূর ছড়িয়ে দিতে,
তিনি সীমানা মানেন না, তিনি নিয়মে-কানুন, তাঁবেদারির তোয়াক্কা করে না,
তিনি নিরন্তর ছুটে চলেন কবিতার জন্য,
কবিতার অন্বেষণে তাঁর দিন-রাত কাটে,
কবিতার সৌন্দর্য আবিষ্কার নেশায় মত্ত তাঁর ঘুম কেড়ে নেয়,
তাঁর চিন্তার জগতে তখন দ্বিতীয় কোনো বিষয় থাকে না কবিতাই তাঁর তৃপ্তির নিঃশ্বাস।
.
তিনি একজন কবি ——
যার রয়েছে অলৌকিক ক্ষমতা,
তিনিই পারেন শব্দ দিয়ে বুকের মধ্যে অনুভূতির নতুন নতুন নহর সৃষ্টি করতে,
পৃথিবীর বিচিত্র ভাব কবি হৃদয়কে আন্দোলিত অভিভূত করে তোলে,
কবির চেতনা করে তোলে তীক্ষ্ণতর স্পর্শকাতর।
মানব জীবন ও প্রকৃতির ক্ষিপ্ত-বিক্ষিপ্ত সৌন্দর্যবোধ, বেদনাসিক্ততার যখন মনে-মননে ভর করে
তখন কবি শব্দের গাঁথুনীকে গড়ে তোলেন তার কবিতা,
কবি জীবনের প্রতিভা আঁকেন, কান্না হাসির অনন্ত জীবন ভাবেন, ভালোবাসা দেন, জীবন দেন,
দর্পনে শত মুখ দেখেন কবিতা লেখার সময় কবি রাষ্ট্রপতির চেয়ে বড়।
.
তিনি একজন কবি ——
কবি মাত্রই বেখেয়ালী, আনমনা, ঘোরগ্রস্ত, কল্পনাবিলাসী মানুষ,
তিনি বলেন আমি লিখি আত্মার নির্দেশে কবি কখনো মিথ্যা বলে না,
কবি প্রতিনিয়ত আবিষ্কার করে চলেন জীবনের গূঢ় রহস্যকে, উন্মোচন করেন সত্যকে,
সৃষ্টির আনন্দে উল্লাসিত কবি উন্মাদনা পান, কবিতায় খুঁজে পান আপন ঠিকানা,
এ কথা সত্য যে,
সাহিত্যে কবির সম্মান অনেক উপরে,
একজন কবি যখন হেঁটে যান আমাদের উচিত তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাওয়া।
শত শত বছর আয়ু কী কবির প্রাপ্তি নয় ??
কাব্যিক বোধ মানুষের মন কে রাঙায় নাড়া দেয় উপলব্ধি করা যায় পৃথিবী কত রূপময় ছন্দময়,
যদি কবিতা লেখা না হতো তাহলে নিরসে নির্বাসিত হতো পৃথিবী,
পাখিরা গান গাইতো না কোনো প্রেমের চিঠি লেখা হতো না, ফুটতো না কোনো ফুল,
আর এই ফুল ফোটানো আর সুন্দর পৃথিবী গড়ার কাজই করেন তিনি।
.
তিনি একজন কবি ——
তাঁর কবিতায় ফুঠে উঠে তাঁর দেশ, কবি তাঁর ঐতিহ্যের ধারক,
কবি তাঁর মাটি ও মানুষের কথা বলেন, সুন্দর আর মুগ্ধতার কথা বলেন,
তিনি সত্য আর ন্যায়ের কথা বলেন, তাঁর স্বদেশকে সারা বিশ্বে তুলে ধরতে,
কবিতার বিনিময়ে তিনি বেঁচে থাকবেন শত শত বছর,
তিনি একজন কবি এক কিংবদন্তি একটি জাতির জন্য এটি গৌরবের একটি দেশের জন্য সম্পদ,
তিনি নিজেকে নির্মাণ করেছেন তিলে তিলে
তার নির্মিত কাব্যিক প্রাসাদ বেশ উঁচু,
তিনি কেবলই কবিই নন তিনি একাধারে সত্য ও সুন্দরের পূজারী, দার্শনিক, ভবিষ্যতদ্রষ্টা, বিজ্ঞানীও বটে, এবং একজন অসাধারণ মানুষ।
তিনিই কবি মোহাম্মদ ইকবাল…………..

— ফারজানা শারমিন মৌসুমি
০৩ – ০১ – ২০২০ ইং

সম্মান

মানুষ যদি চেয়ারকে সম্মান করে তবে আমি মানুষ অতিপ্রাকৃত জ্ঞানকে সম্মান করি। কারণ চেয়ার একধরনের জড় পদার্থ চেয়ার জড়পদার্থ হলেও ওই চেয়ারে একজন খুনিও বসে আবার একজন মানব ও প্রকৃতি প্রেমিকও বসে কিন্তু জ্ঞান যখন ৭০ হইতে ৭ বছরের একজন বালকের মধ্যে বাসা বাঁধে তাকে শ্রদ্ধা সম্মান দুটোই দেয়া যায়।

করবিন

করবিন

ইতিহাস হয়তো লিখবে
বিভ্রান্ত জমানাতে
একজন করবিন ছিল

কিংবা লিখবে একজন
মানুষ ছিল, এমন মানুষ

যে নির্দ্বিধায় মানুষের মাঝে
হেঁটে যেতে পারতো
যার বুকে মানুষের হৃদয়
ছিল, যার প্রচেষ্টা ছিল
মানুষের চোখের কান্না মুছে দেয়া
মানুষের বুকের কান্না মুছে দেয়া

যার প্রচেষ্টা ছিল
প্রতিটি মানুষের অন্ন নিশ্চিত করা
প্রতিটি মানুষের বস্ত্র নিশ্চিত করা
প্রতিটি মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করা

যার প্রচেষ্টা ছিল
মানুষ তার প্রাপ্য সম্মান পাবে

ইতিহাস হয়তো একদিন লিখবে
বিভ্রান্ত জমানাতে একজন মানুষ ছিল
যে মানুষের কথা বলেছিল

ইতিহাস হয়তো একদিন সাক্ষ্য দেবে,
আমরা করবিনকে মানুষের কথা বলতে শুনেছি

Corbyn

History will probably write
In confused times
There was Corbyn

Or will write
There were a person, such person

In the midst of a poor people he walked
Whose heart is the heart of pure human being
whose effort was
To wipe away the tears of human eyes
Eliminating the cry of the human heart

Whose efforts were
Ensuring the food of every human being
Ensuring clothing for every human being
Ensuring the accommodation of every human being

Whose efforts were
People will get the respect they deserve

Maybe history will one day be written
There was a man in the confused world
The man who always spoke for humanity

History may one day testify,
We’ve heard Corbyn talk about people