বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

লেখা চুরি এবং আজকের পত্রিকার একটা খবর

ফেইসবুকের কল্যাণে লেখা চুরি বা নকলবাজির ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। কেউ হুবহু নকল করে, কেউ বিদঘুটে কিছু শব্দ যোগ করে মূল লেখায় একটু পরিবর্তন এনে অন্যের লেখাকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়। কেউ আবার থিমটা চুরি করে। এসব প্রতিদিনই দেখছি। এদের আবার গ্রুপ আছে; ভক্তগ্রুপ। কিছু বলতে যাবেন তো ভক্তকুল নাকানি চুবানি খাওয়ায়ে ছাড়বে; নানান রকমের যুক্তি দিয়ে চুরির সংজ্ঞা বদলে দেবে।

বহু পুরানো একটা গল্প; যারা স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা দিয়েছেন তারা সবাই হয়ত সেটা জানেন। গল্পটার সারাংশ মোটামুটি এমনঃ প্যারেন্টের ট্রাঙ্কের ভিতর মূল্যবান কিছু আছে এই লোভে সন্তানেরা ফন্দি আঁটে এবং শেষে ওতে আত্মার সম্পদ ছাড়া বৈষয়িক কিছুই খুঁজে পায়না। এমন অতি পরিচিত একটা গল্পকেও অল্প বদলে নিজের করে ফেলেছে এমন একটা “চুরি-মাল” ফেবুতে জাস্ট দেখে এসেই এই কথাগুলি লিখছি। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ঐ চুরি-মালের ভূয়সী প্রশংসা করে এখন অবধি হৃৎপিণ্ড চাপড়াচ্ছে! কী লজ্জার!

এই লজ্জাজনক চুরির ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হল, এদের ভক্তের অভাব নেই। কেউ না জেনে এদের ভক্ত হয়; কেউ জেনে। দ্বিতীয় জনেরা এই চোরদের মতই পাপী।

ওপরে যা বললাম তা আসলে কিছু প্রাসঙ্গিক কথা মাত্র। মূল বিষয় হল, কালের কন্ঠ পত্রিকায় আজ প্রকাশিত একটা খবর। “একজনের লেখা চুরি করে আরেকজন প্রকাশ করলেন আস্ত বই”। পত্রিকার এই সংবাদ এবং ফেবুতে একটু আগে দেখা চুরির মালটার কারণে আমার পুরানো প্রশ্নের একটা আপাতঃ জবাব পেয়েছি, “ফেবুতে চোর-চোট্টার সংখ্যা নেহায়েত কম না।“ এদের কেউ আবার ভক্তদের কাছে “জিনিয়াস” হিসেবে স্বীকৃত। ফেবুতে এখন যাকে দেখে এলাম এবং পত্রিকায় যার কথা উল্লেখ আছে তারা দুজনই দেখলাম তাদের নিজ নিজ ভক্তদের কাছে খুব সমাদৃত।

কোন সন্দেহ নেই, লেখা চুরির দায়ভার মূলত চোরের। কিন্তু পুরোটাই কী? যারা জেনে শুনে এইসব চোরকে সাধু সাধু বলছে তারা কী এই দায় এড়াতে পারবে?

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ হয়েছে ‘স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়’

বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলায় চলন্তিকা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে শেখ সাদী মারজানের ৩য় কাব্যগ্রন্থ ‘স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়’।

তিন ফর্মার বইটিতে ৪০টি কবিতা স্থান পেয়েছে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন কবি নিজেই। ভুমিকা লিখেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান কবি তাজিমুর রহমান।

তারুণ্যের নানা ঘাত-প্রতিঘাত, বাধা-বিপত্তি, আনন্দ-বেদনা, দেশ ও ভাষা প্রেম ইত্যাদি বিষয়গুলো সহজ-সাবলীল ভাষায় ফুটে উঠেছে ‘স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায়’ গ্রন্থের কবিতায়।

বইটি পাওয়া যাচ্ছে ৬৭১ নং স্টলে। গা‌য়ের মূল্য ৮০ টাকা। ২৫% ছা‌ড়ে ৬০ টাকা।

বসন্ত এলো আজি…….. নব বসন্তের গান গীতি কবিতা-৩ তৃতীয় পর্ব

বসন্ত এলো আজি…….. নব বসন্তের গান
গীতি কবিতা-৩ তৃতীয় পর্ব।

তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শীতের বিদায়ের সাথে সাথে বসন্তের আগমনে প্রকৃতির জড়তা কেটে যায়, চারিদেকে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। কোকিলের কন্ঠে কুহু রব ফিরে আসে। বসন্ত শুরু হলেই নাকি সাপের শীত নিদ্রা ভাঙ্গে। বসন্তের হাওয়া লেগে গেলে ঘুমন্ত গাছে কুঁড়ি ফোঁটে ও নব নব পাতা দেখা দেয়। চারদিকে চলে সবুজের সমারোহ। কৃষ্ণচূড়ায় যেন ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। আহা ফোঁটে ফুল ছোটে অলি- তোলে কতোই গুঞ্জন। আর সবার মনে মনে কতো না গানের কলি জেগে ওঠে। বসন্ত মানে রঙ। প্রেমিক প্রেমিকার মনে লাগায় যৌবনের রঙ। ভালোবাসা জাগায় উভয়ের হৃদয়ে। বসন্ত মানে মাঠে মাঠে সুগন্ধি মৃত্তিকা ছেয়ে জেগে ওঠে সবুজ পল্লব ও রং বেরংয়ের ফুল। ভালোবাসা আর চির যৌবনের সঙ্গে তুলনা করা হয় এই বসন্তকালকে। বসন্তে উদযাপিত হয় শ্রী কৃষ্ণের দোলযাত্রা।

বসন্তকালে ‘কুহু কুহু’ স্বরে ডাকে কোকিল। তখন তো নব পরিনীতা বঁধূ’র মন হয় উতলা। মন আনচান করে, করবেইনা কেন, স্বামী বাসর রাতের পরের দিনই চলে গেছে দূর পরবাসে বহু দূরে সৌদি আরব নয়তো মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোনো দেশে। তখনতো নববধূটি গুনগুন করে গায়- ‘বনের কোকিল আর ডাকিস না তোর কুহু কুহু ডাক শুনিয়া পরান আমার রয় না ঘরে’ নয়তো ‘ও কোকিল ডাইকো না ডাইকো না ঐ কদম্ব ডালে শীত বসন্ত সুখের কালে।’ ফাল্গুন-চৈত্র নিয়েই বসন্তকাল এই ষড় ঋতুর বাংলাদেশে। যৌবনকে বসন্তের সঙ্গে তুলনা করে ‘গরমিল’ ছবির জন্য গীতিকার প্রণব রায় লিখলেনঃ ‘আমার ও ভুবন হতে বসন্ত চলে যায়……. হারানো দিনের লাগি প্রেম তবু রহে জাগি’। আর এই গানে কন্ঠ দিয়ে নায়ক- গায়ক রবীন মজুমদার অমর হয়ে রইলেন। এই রবীন মজুমদার-ই ‘শাপমুক্তি’ ছবিতে সুপ্রভা সরকার ও শৈল দেবীকে নিয়ে বসন্তের ছোঁয়া জাগায়ে গেয়েছিলেন

‘ফাল্গুনের ঐ অশোক পলাশে তারি হিয়া বুঝি রাঙ্গা হয়ে হাসে/ কোকিলের গানে সুখের বেদনা সহিতে পারেনা বালা/ কিবা যেন চায় কহিতে না চায় চন্দনে বাড়ে জ্বালা……….।’ বসন্ত ও যৌবনকে একই সূত্রে বেঁধে দিয়েছে বহু গান, এমনি কয়েকটি গান হলো – ‘ দু’টি হিয়া বাঁধল আবার ভালবাসার কুঞ্জুরে/ আবার বসন্ত এলোরে’; ‘ প্রজাপতির গায়ে হলুদ ফাগুন গেলে চইতে/ দক্ষিণ হতে মলয় ছুটে এলো খবর কইতে’; ‘আমি চেয়েছিনু দুটি ফুল দাও আমারে / তুমি চেয়েছিলে মোর পানে ক্ষণিক হেসে’; ‘বসন্ত রাগ বাজলে যেনো দেহের বীনাতে ‘; ‘এই তো প্রথম কুহু কাকলী তোলে নতুন ফাগুন তারই আবেশে দোলে’; ‘ফাগুণের এক মুখরিত সাজে তুমি আর আমি প্রিয়া/ একই বন্ধনে বেঁধেছিনু হায় মোদের এ দুটি হিয়া/ মোর রিক্ত ভূবন ঘিরে সেই ফাল্গুন এলো রে ফিরে’; ‘কৃষ্ণচূড়া, আগুন তুমি আগুন ঝরা প্রাণে……. ডাক দিয়েছি তোমায় নব শ্যামল সম্ভারে কৃষ্ণচূড়া তুমি আমার প্রেমের পরিচয়’ ইত্যাদি কতো কি। এই বসন্তেই প্রিয়তম তার প্রেমিককে গানে গানে শুনাতো- ‘আমি গোলাপের মতো ফুটবো জানি পাপিয়া দূরে রয়/ আমি স্বপনের কথা বলিয়া স্বপনে ভাসিয়া যাই/ আমি চাঁপার কুঞ্জে কুহু আমি কেতকী বনের কেকা’ কিংবা ‘আমি দেখেছি নয়ন মেলে পাখির কুজনে সুষমা জাগায়ে/ স্বপন মোহন এলে তব আঁখির নিবিড় নীলে/ মোর নীল নব এ দিনে মলয়ার কাছে মৃদুল আভাসে ।

মায়াময় বসন্ত সবাইকে কেড়ে নেয় নিজের ভালবাসার মোহে। যেন প্রেমিকা তার প্রেমিককে মায়া বন্ধনী দিয়ে আবদ্ধ করে রাখে, তেমনি নব ফাগুন সবাইকে নিজের মায়ামন্ত্রে আচ্ছন্ন করে রাখে। নব বসন্ত বাঙালির প্রাণে নতুনত্বে প্রাণ সঞ্চার করুক এটাই হোক বসন্ত বরণের অভিপ্রায়। আসুন, আমরা সবাই নব বসন্তের রঙে রাঙিয়ে তুলি নিজেদের। সাথে থাকুন, পাশে রাখুন। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!

নব বসন্তের গান – ৩
কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

বসন্ত আসিল আজি, এই বসুধায়,
তরুশাখে পাখিসব সুরে গীত গায়।
ফুটিল কুসুম কলি ধেয়ে আসে অলি,
ফুলেফুলে শোভে তরু পলাশ শাল্মলী।

অজয় নদীর ঘাটে হাটে জমে ভিড়,
জন কোলাহলে ভরে অজয়ের তীর।
অজয়ের নদীপাড়ে আম্রের বাগান
প্রভাতে উঠিয়া শুনি কোকিলের তান।

অজয়ের নদীঘাটে আসে যত মেয়ে,
জল নিয়ে চলে ঘরে রাঙা পথ বেয়ে।
দিবসের শেষে দেখি সূর্য বসে পাটে,
সাঁঝের আঁধার নামে অজয়ের ঘাটে।

বসন্তের ছোঁয়া লাগে সবার হৃদয়ে,
অজয় আপন বেগে শুধু চলে বয়ে।

জ্ঞান ও তথ্য

বহু লোক তথ্য সংগ্রহকারী কিন্তু জ্ঞানী নয়। আসলে তথ্য সংগ্রহ করে তাকে জীবন চিত্রের সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে নিজস্বতা গড়ে তোলার নাম জ্ঞান।
তাই ক্লাসে বহু ছেলে মেয়ে ফার্স্ট হয় কিন্তু জ্ঞানী হতে পারে না। কেন না জ্ঞানী হতে হলে আপনার মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি গড়ে তুলতে হবে। ক্লাসে যা পড়ানো হয় তার মধ্যে বেশিরভাগ তথ্যমূলক। তাই স্কুলের পড়াশুনার সাথে সাথে যদি নিজস্ব ভাবনার পরিসর থাকে তবেই সেই ছাত্রছাত্রীর মধ্যে তথ্যের মধ্য থেকে জ্ঞান সে সংগ্রহ করতে পারবে।
আমাদের দেশে বহু ছেলে মেয়ে পরীক্ষায় নম্বরের খেলায় শুধু তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে গড়ে উঠছে। কেন না বাংলা ইতিহাস ভূগোল বিজ্ঞান এবং অঙ্কে যদি ঠিক মত তথ্য সংগ্রহ করতে না পারে তাহলে সেই ছেলেমেয়ে অঙ্কে বিজ্ঞানে ইতিহাসে নম্বর কম পাবে।
স্কুলে কিংবা বাড়িতে কোথাও প্রকৃত শিক্ষা পাচ্ছে না ফলে ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞান অর্জন হচ্ছে না। অথবা কম হচ্ছে।

আহবান…….

এই ব্লগের সবার লেখাই আমাকে বেশ মুগ্ধ করে। তার মাঝে কিছু লেখা আছে যেগুলি সমাজ, দেশ তথা দেশের বর্তমান পরিস্থিতির উপর উপস্থাপন করা হয়। খুব ভাল লাগে চমতকার তথ্যবহুল এই সব পোষ্ট।
আমি অনেক চিন্তা করে দেখলাম একটা অনলাইন পত্রিকার সম্পাদকীয় নির্দিষ্ট একজনের না হওয়াই উত্তম। একেক সময় একেক জনের সর্বোত্তম আর্টিক্যালটাই সম্পাদকীয় হিসাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে।
সেই জন্য আমি আমার জানাও ডট কম এর জন্য তিনটা ক্যাটাগরিতে নিয়মিত লেখা আশা করছি।
১. সম্পাদকীয়
২. সাহিত্য ও সংস্কৃতি
৩. শিক্ষা
আশা করি আমার এই আহবানে আপনারা সাড়া দিবেন এবং সযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন। সাথে আপনাদের মূল্যবান লেখাগুলি আমার জানাও ডট কম এ পুনঃপ্রকাশের সুযোগ করে দিলে ধন্য হব।

ধন্যবাদ সবাইকে।

অঘটঘটন-পটিয়সী

অনেক গুলো বছর নিষুপ্তি আঁখি ক্রান্দনে পাথর,
পাহাড়ি ঝর্না নেমে এসেছে যেন গাল বেয়ে;
কার শোকে ঝরে অবিরাম?
শোকাবহ অশ্রু গড়িয়ে পড়ে প্রিয়তমার ফুলশয্যার বালিশে!
আমার বক্ষের কাছে কষ্টের সূচনা
প্রাণজুড়ে অভিমান,
অলংকারে সজ্জিত দেহ তোমার-
লুটিছে আজ কোন জন?
তিমির কালো নয়নে এঁকেছ মেঘপুঞ্জ কাজল!
আমি ভাঁসি দুঃখে স্বরিৎ জলে ধরিতে তোমার আঁচল।

সুখ-দুঃখ , আনন্দ বেদনার অতীত কিছু স্মৃতি-
প্রতিবাক্য ছুড়িছে কেবল স্বৈরাচারী নীতি;
আমরা এখন আমাদের মত নিত্যশত্রুর ন্যায়-
আকাঙ্ক্ষা মোদের অন্যান্য সংকেতে খাঁদে পড়ার ভয়।

বদলে গেছো

বদলে গেছো
প্রেয়সী বড় বদলে গেছো তুমি!
অন্য রকম ভাবে অসময়ে,
যে হৃদয়ে ছিলো আমার বসবাস!
আজ সেথায় দেখি অন্য মানুষের আনাগোনা,
এতোটা বদলে যাবে তুমি!
আমার মোটেই জানা ছিলো না!

তুমি ছিলে আমার স্বপ্ন রাজ্যের মহারাণী
তোমার হাতে হাত রেখে কত পথ হেটেছি
কত সাইক্লোন জড় তুফান মাড়িয়েছি
আজ সব কিভাবে ভুলে গেলে?
কিভাবে হঠাৎ হয়ে গেলে অচেনা?
অসীম ব্যথা হৃদয় গহীনে,বিধেছে বিষের দানা!!

তোমার মায়াবী হাসিতে ফুটতো শত শত ফুল
নরম হাতের স্পর্শে গাছেরা হতো সবুজ শ্যামল,
আজ তুমি সুখের তরে অন্যের ঘরনি
আমার কথা একবারও ভাবোনি!
কিভাবে বেচে আছি! কি সুখে আছি তুমিহীনা!!
জানি, হয়তো বলে বুঝানো যাবেনা।

তুমি ছিলে আমার ফুল কাননের মধুবালা
তোমার মিষ্টি কথা আর গান শুনে
হয়ে যেতাম আমি আত্মভোলা!
আজ কি একটুও মনে পড়েনা তোমার?
নাকি সব বেমালুম ভুলে গেছো!?
কত যে ছিলো তোমার আমার নিষিদ্ধ কামনা।?

তুমি বড়ো বদলে গেছো!
বদলে গেছো অন্যরকমভাবে অসময়ে!
জানি সময়ের সাথে সাথে বদলে যায় সব কিছু
তবে বদলে যায় কি ভালবাসা ?
বদলে যায় কি পবিত্র প্রেমের চাওয়া পাওয়া?
জানি নিশ্চুপ! এসবের উত্তর তোমার নেই জানা।

হুমায়ূন হিমু

পেছনের গল্পঃ সর্বপ্রথম ২০১২ সালে একটি কবিতা লিখেছিলাম। প্রথম কবিতাটি খুব বেশি ভালো ছিলো বলে আমার মনে হয় না। তবুও কেন যেন সেই ভুলে ভরা কবিতাটি ‘মুসফিকা স্মৃতি পাঠাগার’ আয়োজিত মেঠোপথ ম্যাগাজিনে প্রকাশ পায়। তখন অবশ্য প্রকাশ পাওয়ার আনন্দ কেমন হয় সে বিষয়েও বোধগম্য ছিলো না।
২০১২ সালের পর থেকে উপন্যাস জগতে ঢুঁ মা-রা। তখন থেকেই উপন্যাস, গল্পের বইয়ের প্রতি আলাদা একটা টান, সম্পর্ক এসে মনের অলিগলির চিপায় চাপায় বীজ বুনতে শুরু করে।
শুরু থেকেই হুমায়ূন আহমেদ স্যারের উপন্যাস দেহ জগতের ভিটেমাটিতে বসবাস করতে শুরু করে। যতই পড়তে থাকি ততই প্রেমে পড়ে যায়। আসলে, হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লেখায় আলাদা একটি আত্মা আছে। যে আত্মার পিঠে ভর করে নিমিষেই উপন্যাসের গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো সম্ভব।
২০১৭ সালে কর্মজীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর সাথে সাথে কবিতা, অণুগল্প, গল্প লিখতে শুরু করি। দুই একটি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ম্যাগাজিনসহ পত্রিকার পাতায়ও জায়গা করে নেয়।
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লেখায় ভক্ত এবং আমার লেখা প্রকাশ পাওয়ার আনন্দে উৎসাহ পাই। এবং বারবার মনে হতো, ইস্! আমার নামে যদি একটি বই থাকতো।
অবশেষে ২০১৯ সালের শেষের দিকে বই প্রকাশের উদ্যোগটা নিজে থেকেই নিয়েই ফেলি। যেহেতু আমি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের চরম ভক্ত। সেহেতু তাঁর রচিত, জনপ্রিয় চরিত্র ‘হিমু’ নামটি নিয়েই গল্প লিখতে শুরু করা।
তারপর…। অবশেষে হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে “হুমায়ূন হিমু” গল্পগ্রন্থ আমার স্বনামে।

বইয়ের গল্পঃ প্রত্যেকটি মানুষের মনের চিলেকোঠায় লুকানো কিছু জানা অজানা গল্প থাকে। সে গল্পে নায়ক থাকে নায়িকা থাকে। থাকে কিছু হৃদয় পোড়া আর্তনাদ কিংবা হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার গপ্পো।
আবার প্রত্যেকটি মানুষের মন পাড়ায় চলনবিলে কিছু চরিত্র থাকে। যাকে ভেবে ভেবে মিষ্টি মিষ্টি হেসে দিনরাত পার করা যায়। আবার ভেবে ভেবে ক্লান্ত পথিকের বেশে চোখ বেয়ে বেয়ে অশ্রু ভ্রমর ভিজিয়ে দিয়ে যায়। তবুও মানুষ গল্প আর চরিত্রের দীর্ঘশ্বাসে দীর্ঘকাল রাজপুত্রের মতো বাঁচতে চায়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমি নিজেও ‘হিমু’ নামের সাথে যুক্ত হয়ে বাঁচতে চাই।

হুমায়ূন হিমু
ধরনঃ গল্পগ্রন্থ
লেখকঃ নৃ মাসুদ রানা
প্রচ্ছদঃ নবী হোসেন
প্রকাশনীঃ এক রঙ্গা এক ঘুড়ি
স্টল নং – ৫৮৭
একুশে বইমেলা ২০২০।

আশাকরি বইটি সকলেই সংগ্রহ করবেন।

দুই দু’গুণে তিন

(এক)
‘একটি বিশেষ কারণে আপনাকে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে আজ থেকে বিশ বছর পূর্বে অর্থ্যাৎ ২০২০ সালে ক্লোনিং করে পূণর্জন্ম দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৬ সাল যখন আপনার বয়স ছিল মাত্র ষোল; তখন সেই বয়সে আপনি একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে আত্মহত্যা করেন।; তবে ঠিক কি কারণে আপনাকে ক্লোনিং করা হয়েছে সে বিষয়টি আমারও ভালমত জানা নেই। আমাকে বলা হয়েছে আপনাকে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে জানানো হবে। অত:পর ক্লোনিং করার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আপনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। অন্যদিকে যে মেয়ের কারণে আপনি আত্মহত্যা করেন তার বয়স এখন ষাট। ষাট বছরের সেই নারী একই সাথে ষোল ও ষাট দুইজনই যিনি একজন পুনুরুত্থিত সৌন্দর্য্য অন্যজন বিদ্যমান সৌন্দর্য্য নিয়ে যুগপৎ ভাবে পৃথীবিতে বিরাজ করছে।’ বিদ্যমান সৌন্দর্য্যরে মেয়েটি হারানো সৌন্দর্য্যরে নারীর কোষ থেকে স্বযত্নে ২০২৫ সালে একজন কন্যা শিশুকে ক্লোনিং করে জন্ম দেওয়া হয়, যার নাম দেওয়া হয়, না নামটিও আপনাকে না জানানোর জন্য বলা হয়েছে। আপনার মত সেই শিশুটিরও জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে এবং তা ক্লাউড স্টোরেজে রাখা হয়েছে। যদিও বর্তমান শাসক শ্রেণী সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী কয়েক বছররের মধ্যে সকল নবজাতকের অটোমেটেড সিস্টেমের মাধ্যমে জিনোম সিকুয়েন্সিং করে ক্লাউডে তা সংরক্ষণ করা হবে। এটা বলাই বাহুল্য যে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে অতি গোপনে ক্লোনিং করে আপনাদেরকে জন্ম প্রদান করা হয়েছে।

‘সেটা আপনাদের কাছ থেকে নিশ্চয় প্রত্যাশিত ব্যাপার নয়, বিশেষত: দেশ ও পৃথীবির কাছে যাদের দাবি ও দায়বদ্ধতা রয়েছে’ অর্ণব তার পাশের ছেলেটি ভাবলেশহীন ভাবে বল্ল।

‘কথা সত্য, কিন্তু মি. অর্ণব আপনি কতটা সৃষ্টিশীল তার প্রমাণ পাওয়া যায় আপনার ভাঙ্গা-গড়ার ক্ষমতা কতটুকু তার মাধ্য দিয়ে, শুধু সৃষ্টির মাধ্যমে নয়, আর তাছাড়া পৃথীবিতে দ্বিতীয়বার আসতে পেরে আপনার খারাপ লাগার কথা নয়।’

‘পৃথীবিতে এসে বিদায় নেওয়ার পর আমার কাছে আমার কোন অস্তিত্ব ছিলনা, যেমনটি আগামিতে যারা আসবে এই মূহুর্তে তাদের কাছে তাদের কোন অস্তিত্ব নেই, তবে যে কোন কারণেই হোক না কেন কারও না কারও কাছে আমার অস্তিÍত্ব ছিল, বিশেষ করে পূর্বে আমি যাদের সংস্পর্শে ছিলাম’।

(দুই)
জেনেটিক্স ডিকোডিং এই বিলাসবহুল সেন্টারটিতে অর্ণবকে আর কতক্ষণ বসে থাকতে হবে অর্ণব তা বুঝতে পারছে না। অর্ণবের সুপার স্মার্টফোন থেকে আসা নোটিফিকেশন তাকে বারবার জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘You have exceeded your patience limit, you should walk outside or keep listeing your favorite song, প্রায় দশ ঘন্টা যাবৎ অর্ণব রুমটি মধ্যে একা একা হাঁটছেন এবং গান শুনছেন। মোবাইল ফোনের চার্জ কমে গেলেই তার মোবাইলেও ওভার দ্যা ইয়ার চার্জিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ফোনে চার্জ দিয়ে নিচ্ছেন।

অর্ণবের সামনে কিছু খাবারে প্যাকেট রাখা হয়েছে। প্রত্যেক প্যাকেটেই মূলত: শুকনো খাবার রয়েছে যেখানে খাবারে ক্যালরি ও পুষ্টিগুণ তথ্যসমৃদ্ধ কিউআর কোড দেওয়া আছে। অর্ণব খাবারের একটি প্যাকেট তুল্ল, প্যাকেটের গায়ের উপরে লেখা রয়েছে ‘জৈব প্রোটিন’। খাবারের কিউআর কোডটি স্ক্যান করা মাত্রই অর্ণবের মোবাইলে নোটিফিকেশান চলে আসলো, You have to three kilomiters walk after havings this meal. সঙ্গত কারণে অর্ণব অন্য একটি খাবারের প্যাকেট তুলে নিল, যথারীতি কিউআর কোড স্ক্যান করা মাত্রই বাংলায় নোটিফিকেশন আসল ‘এটি আপনার জন্য এমন একটি খাবার যা এই মুহূর্তে খাবার পর আপনাকে আগামী ছয় ঘন্টা না খেলেও আপনি সম্পূর্ণরূপে সুস্থ্য থাকবেন’।

বিশেষত কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসি কম্পিউটার আবিস্কারের পর থেকে ব্যবহাকারীর gesture, Posture, emotion, mood, passion ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে মোবাইল তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে স্বয়ংক্রীয় ভাবে ভাষা, আলো ইত্যাদি পরিবর্তন করে নিতে পারেন এমনকি কোন নাম্বারের কলটিও এই মূহুর্তে ব্যবহারকারী ধরতে চাইবেন না তা বিশ্লেষণ করে unreachable মুডে নিয়ে যায় অত:পর ব্যবহারকারীর মুডের পরিবর্তন হলে তাকে নোটিফিকেশান দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়।

‘মি. অর্ণব আমরা এখন মানুষের সমস্ত অনুভূতি, ভালোবাসা তার আবেগ সবকিছু যান্ত্রিক ভাবে বুঝে থাকি আর যন্ত্রকে কিভাবে আরও যৌক্তিক করে তোলা যায় সেটা হৃদয় দিয়ে ভাবি, এই রুমে আপনার কাছে রক্ষিত ডিভাইসটির সংরক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা নিয়ে সরি ভুল বল্লাম, বলতে পারেন অসুবিধা নিয়ে দশ ঘন্টা আপনাকে আটকে রাখা হয়েছে। আপনাকে দশ ঘন্টা আটকে রাখা হয়েছে এইটা বোঝার জন্য যে, আপনার পূণর্জন্ম ও পুর্ববর্তী জন্মের মধ্যে এর emotional behavioral এর মধ্যে কোন পার্থক্য তৈরী হয়েছে কিনা

সেটা বোঝার জন্য’ ।

‘কিন্তু আমার পূর্ব জন্মের যদি সেটা হয়ে থেকে থাকে, তাহলে তার কোন ডেটা আমার জানামতে সংরক্ষণ করা নেই তাহলে এই দুইটা সময়ের emotional behavioral -এর পার্থক্য কিভাবে বুঝবেন?’

‘ঠিক ধরেছেন, সেটা মেসিন দ্বারা কোন ভাবেই বোঝা সম্ভব নয়, কিন্তু আমাদের কাছে এমন একটি জিনিষ আছে যা আপনার emotional behavioral -এর পার্থক্য বোঝার জন্য কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসির চেয়েও কার্যকর, এই জন্মে আপনার কাছে তার খুব একটা মূল্য আছে বলে আমার কাছে মনে হয়না। মি. অর্ণব কোন কথা বলছেন না যে, আপনার কি জানতে ইচ্ছে করেনা সেই জিনিষটা কি?’

‘না আমার জনার ইচ্ছেটা যথেষ্ঠ সংযত, আমার যা জানার প্রয়োজন নেই তা আমার জানার ইচ্ছে করেনা।’
‘আপনারকি আপনার বিষয় কাউকে জানাতে ইচ্ছে করে?’
‘যদি আমার কাছে মনে হয় আমার বিষয়টি কাউকাকে জানালে কোন ফল পাওয়া যাবেনা তা জানায়না’
‘কিন্তু আপনি যদি না জানান, তাহলে তো আপনি জানতে পারবেন না যে, আপনি জানালে ফল পাবেন কি পাবেন না’
‘সেটা হয়তো ঠিক কিন্তু আমার ফল পাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ হলে আমি জানায়না’
‘তারমানে আমাদেরকে কোয়ান্টাম সুপ্রিমেসির চেয়েও কার্যকর যে জিনিষটা ছিল তার আর প্রয়োজন নেই ’।
———চলবে

পৌষমাসে টুসু পূজা…….. টুসুর বন্দনা লোকগান দ্বিতীয় খণ্ড- অষ্টম পর্ব

পৌষমাসে টুসু পূজা…….. টুসুর বন্দনা লোকগান
দ্বিতীয় খণ্ড- অষ্টম পর্ব।

তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনা আর সম্পাদকীয় কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
(তথ্য সহায়তা ফেসবুক থেকে)

★ টুসু পরব ★
———————
টুসু পার্বণ (টুসু পরব বা টুসু পুজো নামেও পরিচিত) গ্রাম বাংলা, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা ও আসামের এক উপজাতিক পার্বণ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়া প মেদনিপুর ও বাঁকুড়া জেলা এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমা এবং ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সাঁওতাল পরগণা, ধানবাদ, রাঁচি ও হাজারিবাগ,সিংভূম-সেরাইকেলা জেলার, উড়িষ্যা রাজ্যের কেওয়নঝর, রাউলকেল্লা, সুন্দরগড়, ময়ূরভঞ্জ প্রভৃতি জেলা এছাড়া আসামের চা-বাগান কেন্দ্রীক কৃষিভিত্তিক উৎসব।যেখানেই কুড়মী-মাহত সেখানেই টুসু::

অগ্রহায়ণ মাসের শেষ থেকে শুরু হয়ে যায় টুসু পরবের প্রস্তুতি, টুসু কোনো দেবী নয়। নতুন ধানের তুষ দিয়ে ভরা হয় মাটির সড়া। আকন্দ ও গাদা ফুলের মালা, গারুলি আটা, বাছুরের গোবর রেখে দেওয়া হয় তুষের সাথে। প্রতি সন্ধ্যায় কথায়, সুরে, গানে বন্দনা করা হয় সরাটিকে। দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনা, চলমান ঘটনা নিয়ে মহিলারাই মুখে মুখে গান রচনা করেন। সমস্ত মহিলারাই তখন যেন টুসু হয়ে ওঠে। টুসু পরবের অন্যতম প্রাণশক্তি হলো টুসু গান।

★ নামকরণ ★

টুসুর নামকরণ সম্বন্ধে সর্বজনগ্রাহ্য কোন মত নেই। ডঃ বঙ্কিমচন্দ্র মাহাতোর মতে, তুষ থেকে টুসু শব্দটি এসেছে। দীনেন্দ্রনাথ সরকারের মতে তিষ্যা বা পুষ্যা নক্ষত্র থেকে অথবা উষা থেকে টুসু শব্দটি এসেছে, আবার কখনো তিনি বলেছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যের প্রজনের দেবতা টেষুব থেকে টুসু শব্দটি তৈরী হয়েছে। আবার অনেকেই বলে থাকেন পুরুলিয়ার কাশিপুরের রাজার দুই মেয়ে ছিল ভাদু ও টুসু। সেই টুসুর জন্ম দিবস স্মরণ করা হয় টুসু পরবে।

★ পালনরীতি ★

টুসু উৎসব অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি থেকে পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত এক মাস ধরে পালিত হয়। ধানের ক্ষেত থেকে এক গোছা নতুন আমন ধান মাথায় করে এনে খামারে পিঁড়িতে রেখে দেওয়া হয়। অগ্রহায়ণ মাসের সংক্রান্তির সন্ধ্যাবেলায় গ্রামের কুমারী মেয়েরা একটি পাত্রে চালের গুঁড়ো লাগিয়ে তাতে তুষ রাখেন। তারপর তুষের ওপর ধান, কাড়ুলি বাছুরের গোবরের মন্ড, দূর্বা ঘাস, আল চাল, আকন্দ, বাসক ফুল, কাচ ফুল, গাঁদা ফুলের মালা প্রভৃতি রেখে পাত্রটির গায়ে হলুদ রঙের টিপ লাগিয়ে পাত্রটিকে পিড়ি বা কুলুঙ্গীর ওপর রেখে স্থাপন করা হয়। পাত্রের এই পুরো ব্যবস্থা প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে টুসু দেবী হিসেবে পূজিতা হন। পৌষ মাসের প্রতি সন্ধ্যাবেলায় কুমারী মেয়েরা দলবদ্ধ হয়ে টুসু দেবীর নিকট তাঁদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক অভিজ্ঞতা সুর করে নিবেদন করেন ও দেবীর উদ্দেশ্যে চিঁড়ে, গুড়, বাতাসা, মুড়ি, ছোলা ইত্যাদি ভোগ নিবেদন করেন।

টুসু উৎসব পালনের সময় পৌষ মাসের শেষ চারদিন চাঁউড়ি, বাঁউড়ি, মকর এবং আখান নামে পরিচিত। চাঁউড়ির দিনে গৃহস্থ বাড়ির মেয়েরা উঠোন গোবরমাটি দিয়ে নিকিয়ে পরিস্কার করে চালের গুঁড়ো তৈরী করা হয়। বাঁউড়ির দিন অর্ধচন্দ্রাকৃতি, ত্রিকোণাকৃতি ও চতুষ্কোণাকৃতির পিঠে তৈরী করে তাতে চাঁছি, তিল, নারকেল বা মিষ্টি পুর দিয়ে ভর্তি করা হয়। স্থানীয় ভাবে এই পিঠে গড়গড়্যা পিঠে বা বাঁকা পিঠে বা উধি পিঠে ও পুর পিঠা নামে পরিচিত। বাঁউড়ির রাত দশটা থেকে টুসুর জাগরণ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মেয়েরা জাগরণের ঘর পরিষ্কার করে ফুল, মালা ও আলো দিয়ে সাজায়। এই রাতে কিশোরী কুমারী মেয়েরা ছাড়াও গৃহবধূ ও বয়স্কা মহিলারাও টুসু গানে অংশগ্রহণ করেন। এই রাতে টুসু দেবীর ভোগ হিসেবে নানারকম মিষ্টান্ন, ছোলাভাজা, মটরভাজা, মুড়ি, জিলিপি ইত্যাদি নিবেদন করা হয়।

পৌষ সংক্রান্তি বা মকরের ভোরবেলায় মেয়েরা দলবদ্ধভাবে গান গাইতে গাইতে টুসু দেবীকে বাঁশ বা কাঠের তৈরী রঙিন কাগজে সজ্জিত চৌডল বা চতুর্দোলায় বসিয়ে নদী বা পুকুরে নিয়ে যান। সেখানে প্রত্যেক টুসু দল একে অপরের টুসুর প্রতি বক্রোক্তি করে গান গাইতে দেবী বিসর্জন করে থাকেন। টুসু বিসর্জনের পরে মেয়েরা নদী বা পুকুরে স্নান করে নতুন বস্ত্র পরেন। ছেলেরা খড়, কাঠ, পাটকাঠি দিয়ে ম্যাড়াঘর বানিয়ে তাতে আগুন লাগান।

★ টুসু গীত ★

টুসু উৎসবের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ টুসু সঙ্গীত। এই সঙ্গীতের মূল বিষয়বস্তু লৌকিক ও দেহগত প্রেম। এই গান গায়িকার কল্পনা, দুঃখ, আনন্দ ও সামাজিক অভিজ্ঞতাকে ব্যক্ত করে। কুমারী মেয়ে ও বিবাহিত নারীরা তাঁদের সাংসারিক সুখ দুঃখকে এই সঙ্গীতের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন। গানের মাধ্যমে মেয়েলি কলহ, ঈর্ষা, অভীপ্সা, দ্বেষ, ঘৃণা স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করা হয়। এছাড়া সমকালীন রাজনীতির কথা ব্যাপক ভাবে এই গানে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এই সমস্ত গানে পণপ্রথা, সারক্ষরতা সম্বন্ধে সচেতনতা, বধূ নির্যাতনের বিরুদ্ধতা প্রভৃতি সামাজিক দায়িত্বের কথাও বলা হয়।

টুসু গীতকে ভনিতাযুক্ত ও ভনিতাবিহীন এই দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। ভনিতাবিহিন টুসু গীতকে মূল টুসু পদ এবং টুসু পদের রঙ এই দুইটি অংশে ভাগ করা যায়। টুসু পদের রঙ অংশটি কখনো মূল পদের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে রচনা করা হয়, কখনো বা স্বতন্ত্র ভাবে রচিত হয়। ভনিতাবিহীন টুসু পদ মূলত চার চরণে বাঁধা থাকে, যার মধ্যে রঙের জন্য মাত্র দুইটি চরণ নির্দিষ্ট থাকে।
পৌষ সংক্রান্তির দিন রঙিন কাগজ দিয়ে তৈরি চৌউল বা চতুর্দোলায় সেই তুষ ভর্তি সরাকে বসি‌য়ে মাথায় নিয়ে নতুন বস্ত্র পরিধান করে বাড়ির মহিলারা টুসু গান গাইতে গাইতে স্থানীয় কোনো নদী বা জলাশয়ে যান এবং জলে ভাসিয়ে দেন। টুসু ভাসানের দিন তাই কান পাতলেই শোনা যায় টুসু গান

****
ঝাড়খণ্ড রাজ্য ও পুরুলিয়া জেলার অধিকাংশ স্থানে পুরাতন প্রথা অনুযায়ী টুসু উৎসবে কোন মূর্তির প্রচলন নেই সাধারনত পাট কাঠিতে রংবেরঙের কাগজ, রঙিন কাগজের কারুকার্য করা হয়। কিন্তু পুরুলিয়া জেলার বান্দোয়ান থানা এবং বাঁকুড়া জেলার খাতড়া থানার পোরকুলের টুসু মেলায় টুসু মূর্তির প্রচলন রয়েছে।

লিখেছেন: সুদীপ মাহাত
আদিবাসি কুড়মি সমাজ

ভাবনা

নিজের সাথে নিজে: আয়নায় আমি! আপনি কারও ব্যক্তিগত ঘড়ি নন যে সারাক্ষণ চলতেই থাকবেন, কিংবা নন কারও সেট করে দেয়া সফটওয়্যার এর প্রোগ্রাম! আপনি ইট, পাথর বা কোন নির্জীব বস্তু নন। আপনার সবচেয়ে বড় পরিচয় আপনি একজন মানুষ! এমন এক মানুষ, যার অভিধানে সফলতা এবং বিফলতা দুইটোরই জায়গা আছে । যে চলতে পছন্দ করে, যে চলায় গতি আছে, সত্যিকারের প্রাণ আছে। যে প্রাণ ভালোবাসার কথা বলে, স্বাধীনতার কথা বলে। যে প্রাণ সম্মান এর কথা বলে, প্রেরণা ও সাহস যুগিয়ে চলে, উৎসাহিত করে এবং সত্যিকারের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখায়..! নিজেকে নিজে ফেস করেছেন কখনও? দয়া করে নিজের সাথে নিজে একটু কথা বলুন, তখনই “আমার আমিকে” খুঁজে পাবেন..! আর কখন নিজেকে মোকাবেলা করতে ভয় পাবেন না। কারণ জানেনই তো, সবাইকে ফাঁকি দিতে পারলেও আমরা নিজেকে নিজে কখনও ফাঁকি দিতে পারি না, পারবোও না।

আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন সে যে আমার ভেতরই বাস করে!অন্ধকারে,বিপদে ,দুঃখে,দূর্দিনে সেই যে আমার হাত ধরে বলে এই তো আমি তোর পাশেই, ভয় কি?এবং অসীম তার শক্তি!একবার যদি সেই আমিত্বের সাথে কারো দেখা মেলে স্বার্থক জীবন তার!রবীন্দ্রনাথ থেকে লালন সবাই সেই ভেতরে থাকা নিজেকেই খুঁজে বের করার কথা বলেছেন নানাভাবে।নিজের সাথে নিজের সখ্যতাটাই মুখ্য এখানে। আনন্দ নিয়ে জীবনকে পরিচালিত করাটাই মুখ্য।দূঃখ,প্রতারণা,সবকিছুর মাঝেই নিজে নিজের হাতটা ধরে সামনে এগিয়ে চলাটাই জীবন।মঙ্গল হোক, কল্যাণ হোক সবার।

From # Facebook

আবার ফিরে এলাম!!!

শব্দ নীড় ব্লগের শ্রদ্ধেয় মুরব্বী ভাই সহ সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা রইলো।

চাকুরীগত ব্যস্ততার সাথে ব্যক্তিগত ব্যস্ততা মিলে প্রায় বেশ কিছুদিন শব্দ নীড় থেকে দূরেই ছিলাম।

এর সাথেই ছিল আসন্ন বইমেলা উপলক্ষে পান্ডুলিপির কাজ শেষ করার প্রকাশকের ভয়ংকর ডেডলাইন!!!

সব মিলিয়ে গত বছরের শেষ কয়েকটা মাস খুবই ব্যতিব্যস্ত হয়ে কাটাতে হয়েছে।

প্রিয় ব্লগটাকে সময় না দেবার ব্যর্থতার পুরো দায়ভার মাথায় চেপে নিয়ে আবারও ফিরে এসেছি নিজের লেখার ঘরে।

ইনশা-আল্লাহ এখন থেকে শব্দ নীড় ব্লগে আবারও নিয়মিত লেখালিখিতে ব্যস্ত থাকবো।

সবাই’কে ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা রইলো।

মাতৃত্বের ক্যান্সার

অ ঠাঁই রক্ত নদীর বুকে জেগে উঠা চর
নাম তার বাংলাদেশ !
রক্তের লাল, উত্তাল জোয়ার পেলে দুর্মর
বাঁধ ভেঙ্গে মিশে বিশাল সমুদ্রে
নাম তার বঙ্গোপসাগর!

ক্ষরণের যন্ত্রণা নিয়ে যে কিশোরী
নিজে ঢেকেছে সবুজের চাদরে
নাম তার সুন্দরবন!

মরণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
যে পাখিটি আজো উড়ে স্বাধীনতার নেশায়
তার নাম দোয়েল!

গর্জনে তর্জনে উত্তাল সাইক্লোনে
যে জননী অতন্দ্র প্রহর গুনে
তারায় তারায় খুঁজে যুদ্ধে যাওয়া সন্তানের মুখ
নাম তার রেসকোর্স ময়দান!

পূর্ণিমার মায়াবী জ্যোৎস্নায়
নাকের নোলক, কপালের টিপ, পায়ে আলতা সাজায়
দীর্ঘশ্বাসে বুকের গোপন ব্যথায় কুরে কুরে খায় যে নারীর
নাম তার বীরাঙ্গনা!

স্বাধীনতার ৪১ বছর পর ও
মিটেনি রক্তের তীব্র তৃষ্ণায় আকণ্ঠ রাজাকার!
বেজন্ম চেতনায় ফিরে এসেছে দস্যু হানাদার
মায়ের আঁচলে বেড়ে উঠা মানব সন্তান
মায়ের সম্ভ্রম লুণ্ঠনে কাঁপেনি দানবীয় হাত তার!

বিজয় বিজয় করে যতোই করো চিৎকার
শুনে রাখো হে বাংলার পতাকা
তোমার অস্তিত্বে বেড়ে উঠেছে নির্মম ক্যান্সার!