বিভাগের আর্কাইভঃ অন্যান্য

সাহিত্য আড্ডা-৫ (আবৃত্তিঃ নির্মলেন্দু গুনের কবিতা)

তোমার চোখ এত লাল কেন ?

প্রথম কয়েক পর্ব কয়েকটি গান আপনাদের সাথে শেয়ার করার পর মনে হল এবার কবিতার সময় । গান শোনার ক্ষেত্রে মানুষের রুচির তারতম্য অনেক বেশি । আমার প্রিয় গানের মধ্য থেকে আমি কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে শব্দনীড়ের জন্য গান নির্বাচন করতে যেয়ে নিজেই যেন সাগরে পড়ে গিয়েছিলাম। শব্দনীড়ে যেহেতু কবিতাই বেশী প্রকাশিত হয় সেহেতু কবিতা বন্ধুরা অনেক বেশী পছন্দ করবেন বলে আমার ধারনা।

কবি নির্মলেন্দু গুন, যাকে তার কাছের মানুষেরা গুন দা বা গুন্ডা বলে ডাকেন। বাংলাদেশের বর্তমান কবিদের মধ্যে নির্মলেন্দু গুন’কে আমারা জানি সময়ের সেরা কবি হিসেবে। তার অন্যান্য অনেক পরিচয়ের মধ্যে নারীপ্রেমের বিষয়টা মুখ্য । এই সময়ের সেরা ও জনপ্রিয় আবৃত্তিকারদের একজন মাহিদুল ইসলামের কণ্ঠে আমরা শুনবো তার সম্ভবত এই সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় প্রেমের কবিতা – তোমার চোখ এত লাল কেন ?

তোমার চোখ এত লাল কেন ?

www.youtube.com/watch?v=JzqQy5tDgCQ

আমি বলছি না ভালবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক ,
শুধু ঘরের ভিতর থেকে দরজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।

আমি বলছি না ভালবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য ভিতর থেকে দরজা খুলে দিক
কেউ আমাকে খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গি না হোক
কেউ অন্তত আমাকে জিজ্ঞেস করুরঃ
“তোমার চোখ এত লাল কেন ?”

-নির্মলেন্দু গুন

সাহিত্য আড্ডার আগের পর্ব গুলোঃ
সাহিত্য আড্ডা-১
সাহিত্য আড্ডা-২
সাহিত্য আড্ডা-৩
সাহিত্য আড্ডা-৪

বৃষ্টির দিনের কৌতুক

১।
নদীর দিকে যাওয়ার পথে বকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল কচ্ছপের। জানতে চাইল বক, কোথায় যাচ্ছ?
কচ্ছপ বলল, নদীতে। কী গরমটাই না পড়েছে দেখেছ? ভাবছি নদীর পানিতে শরীরটা জুড়িয়ে আসি।
বক বলল, এখন তো গ্রীষ্মকাল। এক ফোঁটা পানি নেই নদীতে। এখন গিয়ে কী করবে?
কচ্ছপ হাসতে হাসতে জবাব দিল, আমি যেতে যেতেই বৃষ্টির দিন চলে আসবে।

২।
গ্রামের ছোট্ট এক ক্লাব ঘরে বসে তাস পেটাচ্ছে কয়েকজন। একজন উঠে বলল:
—এক মিনিট! ছোট কাজ সেরে আসি।
—সে ফিরে এলে দেখা গেল, তার সারা পোশাকে পানির ছিটা। সবাই জিজ্ঞেস করল:
—বাইরে বৃষ্টি?
সে বলল:
—না, প্রচণ্ড বাতাস!

৩।
এক বৃষ্টির দিনে মালিক তার কাজের লোককে বলছে-
মালিক : রহিম, বাগানে পানি দিতে যা।
কাজের লোক : হুজুর আজকে তো বৃষ্টি হচ্ছে।
মালিক : বৃষ্টি হলে ছাতা নিয়ে যা!

৪।
একদিন বৃষ্টি হচ্ছিলো। ঝিরিঝির বৃষ্টিতে প্রেমিক-প্রেমিকা ঘুড়তে বেরিয়েছে।
ট্যাক্সি ক্যাব ভাড়া নিয়ে ঘুড়ছে লাভ বার্ডস। ট্যাক্সি নিজ গতিতে চলছে। কিন্তু হঠৎ ট্যাক্সি আস্তে চলতে লাগলো !
প্রেমিক ট্যাক্সি ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলো
প্রমিক : হঠৎ আস্তে চালানোর কারন কী?
ড্রাইভার : আপুমণি যে বললেন আস্তে…আস্তে…আস্তে…

৫।
বর্ষা কাল, অহরহই বৃষ্টি হয়। তখন অনেক রাত, বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। অনেকক্ষন বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তা ঘাটে প্রচুর পানি জমে আছে। এর ভিতর আমাদের পলাশ ভাই চিৎকার করে কেদে কেদে বলছে, কে আছো ভাই? একটু ধাক্কা দাও।
তানিয়া তার স্বামী রাশেদকে ডেকে তুলে বললো- “আমার মনে হয় তোমার যাওয়া উচিত।”
– কিন্তু বাইরে অনেক বৃষ্টি। রাস্তায় অনেক কাদা। :-<
– তোমার গত বছরের কাহিনী মনে নাই?
– আছে মনে আছে। কিন্তু এই ব্যাটার গলা শুনে ত মনে হচ্ছে পুরা মাতাল।
– তোমার গলা শুনে সেদিন কি অন্যরা মাতাল ভাবে নি?
গত বছর তানিয়ার বাচ্চা হবে। রাতের বেলা হাসপাতালে নিয়ে যাবে। সেদিনও এমন বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট ভেসে যাচ্ছিল। তাদের গাড়িটা আটকা পড়ে গিয়েছিল কাদায়। অনেকক্ষন ঠেলে ঠুলেও রাশেদ গাড়িটা গর্ত থেকে বের করতে পারছিল না। এদিকে বউয়ের বাচ্চা প্রসবের সময় হয়ে যাচ্ছে। বার বার ধাক্কা মারছিল। কিন্তু গাড়িটা বের করে আনতে পারছিল না। একসময় হতাশায় সে চিৎকার করে কাদা শুরু করেছিল । ধাক্কা দাও। কেউ একজন এসে ধাক্কা দাও। আশেপাশের বাসা থেকে দুইজন সহৃদয় মানুষ বের হয়ে এসেছিল। নিজেরা ভিজে, কাদায় মাখামাখি হয়ে গাড়িটা বের করে দিয়েছিল ধাক্কা মেরে। আর সেদিন রাতেই তাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছিল।
আজকে, বছরখানেক পর, আরেক বৃষ্টির দিনে এক লোক চিৎকার করে বলছে, ধাক্কা দাও। আমাকে ধাক্কা দাও।
রাশেদ বের হয়ে আসল। রাস্তার পাশের লাইটগুলাও নিভে আছে কেন জানি। বেশ অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শুধু চিৎকার শোনা যাচ্ছে, ধাক্কা দাও।
রাশেদ বলল, ভাই আপনি কই?
– এদিকে আসেন।
রাশেদ সামনে এগিয়ে যায়।
– বাগানের ভিতর আসেন।
রাশেদ বাগানে ঢুকে পড়ে। ভাই, আপনাকে দেখছি না তো।
– ভাই, টবগুলার পাশে আসেন।
রাশেদ টবের পাশে এসে দাঁড়ায়।
– ভাই, আপনার মত মানুষ হয় না। আসেন, একটু ধাক্কা দেন তো। অনেকক্ষন ধরে দোলনায় বসে আছি। এত ডাকছি, কেউ ধাক্কা দিতে আসে না।

পুনশ্চঃ সবগুলা কৌতুক আমি গতকাল রাতে ঘুমের মধ্যে লিখছি। দুনিয়ার মানুষ বেজায় ভাল। আমার কৌতুক গুলাম আমারে না জিগায়া বছরের পর বছর ধইরা এখানে সেখানে ছড়ায়া ছিটায়া রাখছে।

সাহিত্য আড্ডা-৪ (বৃষ্টি কথন)

বৃষ্টি কথন

আজ বৃষ্টি বিলাসের দিন !!!

শ্রাবণের এমন ইলশে গুড়ি খিচুড়ি বৃষ্টির দিনে আমার মত যারা অফিস করছেন তাদের প্রতি সমবেদনা ! গান শুনতে ভীষণ ইচ্ছে করছে, কিন্তু অফিসে বসে নয়। তাহলে কোথায় ? ভাবতে ভাবতে মনে হল নদীতে ছৈ ওয়ালা নৌকায় চুপটি করে বসে বসে গান শুনতে পাড়লে ভালো লাগতো ভীষণ । আফসোস, কি আর করা ?

আপনাদেরও কি আফসোস হচ্ছে আমার মত ? কে কিভাবে বৃষ্টি উপভোগ করলেন আড্ডায় সবার সাথে শেয়ার করতে পারেন। জানাতে পারেন বৃষ্টি দিনে আপনার দুর্ভোগের কথা। অথবা বৃষ্টি দিনে আপনার পছন্দের খাবারের কথা। অথবা যে কোন কিছু !

আর বাড়তি কথা শুনতে নিশ্চয় কারো ভালো লাগছে না। তাহলে আসুন কিঞ্ছিত বিনোদিত হই বৃষ্টির গানে।

শ্রাবণী সেন- এর কণ্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত এমনও দিনে তারে বলা যায় !

www.youtube.com/watch?v=6vYJeMqhMZ0

বিশিষ্ট লেখক খালিদ উমর চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত

শব্দনীড়ের বিশিষ্টজন, ব্লগার ও কথাশিল্পী খালিদ উমর দ্বিতীয়বারের মত চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। বর্তমানে তিনি নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন আছেন। খালিদ উমর শব্দনীড়ের মহাপ্রাণ ব্লগারদের একজন। এই ব্লগের সূচনাথেকেই এখানে প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, অজস্র কবিতা ও গান। এছাড়া তিনি নানা সময়ে আমাদের জন্য শব্দনীড় রঙ্গমঞ্চ – এইসব দিনরাত্রি নামে ধারাবাহিক চালু রেখেছিলেন।
বর্তমানে তাঁর অসুস্থ্যতার জন্য সিরিজটি বন্ধ আছে।

সবাই আমাদের এই প্রিয় ব্লগারের জন্য দোয়া করবেন। মহান রব্বুলআলামীন যেন ওনাকে দ্রুত সুস্থতা দান করেন।

খালিদ উমরের ব্লগ

বৃষ্টি আর তুই

বৃষ্টি আর তুই

অবশেষে শহরে বৃষ্টি নেমে এলো, যেইরকম মুষলধারা আমি চাই, ঠিক সেই বৃষ্টি হলো! কতোদিন! কতো যে মুখ ভেসে ওঠে চোখে! কতো স্মৃতি! তুমুল বৃষ্টিতে বাড়ির উঠোনে জল জমলে দৌড়ে গিয়ে কাগজের নৌকো ভাসিয়ে দিয়ে আসতাম। বৃষ্টির শব্দ আমাকে পাগল করে দেয়। ঘরে থাকতে না পেরে উঠে যেতাম ছাদে। বৃষ্টির জল মেখে নিতাম ইচ্ছেমত।অবশেষে এলো একটানা বৃষ্টি। আজও জমা জলে দুটো কাগজের নৌকা ভাসিয়েছি। একটা তোর আর একটা আমার। দুটো নৌকো চলুক পাশাপাশি।

বাইরে বৃষ্টির শব্দ বাড়ে। অনেকক্ষণ শুয়ে থেকে একসময় জানালায় গিয়ে দাঁড়াই। বৃষ্টিতে ধুয়ে-মুছে যাচ্ছে শহুরে রাস্তা। এই শহরের সমস্ত ক্লান্তি, জঞ্জাল, পাপ, বেদনা, আর হাহাকার কেন ধুয়ে মুছে যায় না? কী তুমুল, অহংকারী, একরোখা, জেদী এই বৃষ্টি। আজও আমাকে ছাদে নিয়ে ভিজিয়ে দিলো! আমি কেবল একাই ভিজতে থাকি। আজ তুই থাকলে তোকেও ভেজাতাম। তুই যতই বলতিস, উফ ..ছাড়, আমি ভিজবো না, আমি কি অতোই বাধ্য? যে তোর কথা শুনবো? ঠিক টেনে নিয়ে তোকে ভেজাতাম। এইসব ভাবি আর মন চলে যায় উদাসপুর -আমার আজ বড্ডো তোর কাছে যেতে ইচ্ছে করছে।

তোমার তুমি

যখন শীত ছিল তখন তুমি আমাকে গ্রীষ্মের গল্প শুনিয়েছিলে!
যখন গ্রীষ্ম ছিল তখন তুমি আমাকে আষাঢ়ে গল্প শুনিয়েছিলে!
এখন আষাঢ় এসেছে, তুমি আমাকে বৃষ্টির গল্প শোনালে!
তুমি শ্রাবণের, তুমি আষাঢ়ের!
আষাঢ়ের তুমিই তোমার,
তোমার তুমিই; তুমিই তোমার
শ্রাবণের তুমিই তুমি!
আষাঢ়েরই তুমিই তুমি!
এখনকার তুমিই তুমি!

আত্মচিন্তন-১০

সময়ের স্রোত

বহু জ্ঞানী গুনী মহারথীকেও দেখা যায় স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে ! ভেবে অবাক হই যে স্রোত সবাইকেই কোন না কোন সময় ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে ভাটিতে ! স্রোতের প্রতিকুলে এমনকি অনুকুলেও কারো শক্তিই সকল পরিস্থিতিতে পরিক্ষীত নয় ! উহা আপেক্ষিক !!!

অসাধারণ সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও সাধারণের সাহিত্য

অসাধারণ সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও সাধারণের সাহিত্য

হুমায়ুন আহমেদ-এর একটা বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শুরু করি ।

“পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।”

আর এই খুব কম মানুষদের মধ্যে তিনি একজন। তিনি পেরেছেন। শুধু পেরেছেনই না, তিনি অনেক ভালোভাবেই পেরেছেন। কারন তিনি শুধু নিজের মধ্যকার ঘুমন্ত দৈত্যকেই জাগিয়ে তুলেননি। জাগিয়ে তুলেছেন সাহিত্য বুঝেন না এমন সাধারণ মানুষের মনে সাহিত্যের বোধ। হুমায়ূন পূর্ববর্তী যুগে বাংলা সাহিত্য ছিল উচ্চ শিক্ষিত ও বোদ্ধা শ্রেণীর মানুষদের দখলে। সাহিত্য চর্চা ছিল একই সাথে অহংকার ও বিলাসিতা করবার মত বিষয়। হুমায়ূন সাহিত্যকে তুলে দিয়েছেন স্বল্প শিক্ষিত ও সাধারণ মানুষের হাতে। এই দখল মুক্তির প্রচেষ্টা সহজ ছিল না নিশ্চয়। কিন্তু এই কঠিন কাজটাই হুমায়ূন করেছেন অত্যন্ত সহজ ভাবে। কারন তিনি ছিলেন জাদুকর। সাহিত্যের জাদুকর। তিনি যেমন সাহিত্যকে করে তুলেছেন সাধারণ মানুষের মানবীয় অনুভূতিতে পরিপূর্ণ তেমনি অতি সাধারণ মানুষকেও করে তুলেছেন সাহিত্যের রস আস্বাদনে উন্মুখ, আলোচক ও সমালোচক। মোট কথা সাহিত্যকে তিনি সাহিত্য হিসেবে নয় বরং মানুষের জীবনানুভূতি হিসেবে তুলে ধরেছেন।

আমার মতে হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একজন অনুভূতি কেন্দ্রিক দার্শনিক। কোন দার্শনিকের প্রশংসায় হয়তো “অনুভূতি কেন্দ্রিক” এমন বিশেষণ ব্যবহার করা হয় না। তবে আমি এখানে একটু ভিন্ন ভাবে বলছি কারন দর্শন বলতে যা বুঝায় সেই মাপকাঠিতে তিনি ব্যতিক্রম। তার দর্শন, জীবন দর্শন। জীবনকে তিনি শুদ্ধতা ও নৈতিকতার আলোকে ব্যাখ্যা করেননি শুধুমাত্র। দায়িত্ব ও কর্তব্য ভাঁড়ে জর্জরিত করেননি জীবনের স্বল্প সময়কে। উন্নতির মাপকাঠিতে জীবনকে যান্ত্রিক ও নিষ্প্রাণ করে তুলেননি তার লিখনিতে। বরং জীবন যেমন, জীবন আসলে তেমন ভাবেই সুখের এই কথাই আড়ম্বর করে বুঝিয়েছেন বারংবার তার লিখনিতে। বুঝিয়েছেন জীবনকে আসলে মূল্য দিতে হয়। উপভোগ করতে হয় নিজের মত করে। সাজাতে হয় সাধ্যের মধ্যে পছন্দের উপকরন দিয়ে।

জ্যোৎস্না বিষয়ক লেখকের দুটি লেখাংশ দিয়ে এই বিষয়টাকে আমার মনে হয়েছে আপনাদের কাছে সবচেয়ে সহজ ভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব।

“প্রতি পূর্ণিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই। গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে? বালিকা ভুলানো জোছনা নয়। যে জোছনায় বালিকারা ছাদের রেলিং ধরে ছুটাছুটি করতে করতে বলবে – ও মাগো, কি সুন্দর চাঁদ। নব দম্পতির জোছনাও নয়। যে জোছনা দেখে স্বামী গাঢ় স্বরে স্ত্রীকে বলবেন – দেখো দেখো চাঁদটা তোমার মুখের মতই সুন্দর। কাজলা দিদির স্যাঁতস্যাতে জোছনা নয়। যে জোছনা বাসি স্মৃতিপূর্ণ ডাস্টবিন উল্টে দেয় আকাশে। কবির জোছনা নয়। যে জোছনা দেখে কবি বলবেন – কি আশ্চর্য রূপার থালার মত চাঁদ। আমি সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি। যে জোছনা দেখা মাত্র গৃহের সমস্ত দরজা খুলে যাবে। ঘরের ভিতর ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর। প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব আর হাঁটব- পূর্ণিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে। চারদিক থেকে বিবিধ কণ্ঠে ডাকবে-আয় আয় আয়।”

এখানে কবি এক গভীর জ্যোৎস্না বিলাশে মগ্ন। জ্যোৎস্নার মত এমন একটা বিমূর্ত সৌন্দর্যের বিষয়কে লেখক তার অতি প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনার মধ্য দিয়ে এমন মূর্ত করে তুলেছেন যেন একমাত্র গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নাই পারে একজন মানুষকে তার জীবনের প্রকৃত সুখের সন্ধান দিতে। যে সুখ জীবনে একবার পেলে একজন মানুষ গৃহত্যাগী হয়েও পেতে পারে ত্রিভুবনের সমগ্র সৌন্দর্য ও সুখের দেখা। তার আর জীবনে চাওয়ার বা পাওয়ার কিছুই যেন অবশিষ্ট থাকেবে না যেন। যদিও এমন হয়তো কেউ কোনদিন পায়না। তবুও সেই গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার জন্য অপেক্ষার যে অনন্ত সময় তা সত্যি সুখের নিশ্চয়ই !

অন্য আরেকটি লেখাংশে সেই অপূর্ব জোছনায় সাড়া দিতে না পাড়ার কষ্ট থেকে তিনি লিখেছেন-

“কোন কোন রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে। ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হতো। আবার চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরের উথাল পাথাল চাঁদের আলোর সঙ্গে আমার কোন যোগ নেই। মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে শব্দ। আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জাম গাছের পাতার সর সর শব্দ হয়। সব মিলিয়ে হৃদয় হা হা করে উঠে। আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কি বিপুল বিষণ্ণতাই না অনুভব করি। জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।”

এখানে লেখকের বিষণ্ণতা পাঠকের মনকে নাড়া দেয়। কিন্তু কি এক জাদুকরী শক্তিতে পাঠক তার নিজের অনুভুতিগুলিকে হারিয়ে অথবা নিজের মধ্যে জমে থাকা কষ্ট গুলিকে হারিয়ে ধারন করেন জ্যোৎস্নার মত মায়াময় এক অপার্থিব সৌন্দর্যের অধরা হাতছানি এবং শূন্যতার অনুভূতি। এবারও পাঠক ভুগতে থাকেন ভিন্ন রকম এক সুভ্র সৌন্দর্যের সুখের অসুখে। এটাকে পাঠক যেভাবেই উপলদ্ধি করুক না কেন, তা প্রকৃত অর্থে সুখেরই।

(পোস্টের কলেবর বড় হয়ে যাওয়ায় এই লেখাটা এখানে অসম্পূর্ণ, আরও পর্ব হতে পারে)

হুমায়ূন আড্ডা

হুমায়ূন কিংবদন্তী লেখক। তাঁর ভক্ত যেমন অজস্র তেমনি সমালোচকও কম না। ভক্ত হোক আর সমালোচক হোক সবাই তাঁর পাঠক। না পড়লে সমালোচনা করব ক্যামনে? আজ তাঁর মৃত্যু বার্ষিকী। শব্দনীড়ের পক্ষ থেকে হুমায়ূনকে অন্যভাবে স্মরণ করতে চাই। আসুন তাঁকে নিয়ে আড্ডা দিই।

১। তাঁর কোন বইটি ভাল লাগে তা লিখুন। কোন গল্প বা উপন্যাসের বিশেষ উক্তি যদি পছন্দ হয়ে থাকে সেটা উল্লেখ করুন। ভাললাগাগুলো কেন ভাল লাগে সেটাও বলতে ভুলবেন না।
২। হিমু ও মিসির আলী নিয়েও আলোচনা করি। কার কাকে বেশি ভাল লাগে?হিমু না মিসির আলী?
৩। কথা চলুক তাঁর চলচ্ছিত্র ও নাটক নিয়েও। আলোচনায় আসুক বাকের ভাই।
৪। বারবার পড়া কোন গল্প বা উপন্যাস যদি থাকে সেই নিয়েও কথা বলি।
৫। আলোচনা চলুক ব্যক্তি হুমায়ূনকে নিয়েও। তাঁর ব্যক্তি জীবন, বিভিন্ন সাক্ষাৎকার।
৬। তাঁর বইয়ের সমালোচনাও করতে পারেন। বুঝিয়ে বলুন কেন আপনি হুমায়ূনের লেখার কঠোর সমালোচক।
৭। বিভিন্ন ইস্যুতে তাঁর যে দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেগুলো নিয়ে আলোকপাত করা যায়।
৮। কারো যদি হুমায়ূনের সাথে ব্যক্তিগত কোন স্মৃতি থাকে সেটাও জানতে চাই।
৯। সর্বশেষ হুমায়ূনের পড়া বই নিয়েও কথা বলতে পারেন। অথবা এই মুহূর্তে যদি কোন বই পড়ছেন সেটাও আলাদের জানান।
এক কথায় হুমায়ূনকে নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই। মনখুলে যে কোন কথা, যে কোন আলোচনা। তো আসুন শুরুকরি হুমায়ূনকে নিয়ে আজকের আড্ডাবাজি।

কিছু মােটিভেশনাল কথা

*👉“ আমি ব্যর্থতা কে মেনে নিতে পারি কিন্তু আমি চেষ্টা না করাকে মেনে নিতে পারিনা॥* ” –—মাইকেল জর্ডান।

*👉“ যে নিজেকে অক্ষম ভাবে, তাকে কেউ সাহায্য করতে পারে না॥* ” –—জন এন্ডারসন।

*👉“ আমি বলবনা আমি ১০০০ বার হেরেছি, আমি বলবো যে আমি হারার ১০০০ টি কারণ বের করেছি॥ ”*
—টমাস আলভা এডিসন।

*👉সফলতা সুখের চাবিকাঠি নয় বরং সুখ হল সফলতার চাবিকাঠি। আপনার কাজকে যদি আপনি মনে প্রানে ভালবাসতে পারেন অর্থাৎ যদি আপনি নিজের কাজ নিয়ে সুখী হন তবে আপনি অবশ্যই সফল হবেন॥* __মাইকেল জর্ডান

*👉সংগ্রহে…………*
*👉হাফেজ মাসউদ*

*🌹Thank You🌹*

সাহিত্য আড্ডা-৩


যেতে যেতে পথে হল দেরী

সাহিত্য আড্ডা‘র প্রথম দুইটা পোষ্টে এমন সাড়া পাবো এটা আমি কখনো ভাবিনি। নাম যদিও সাহিত্য আড্ডা কিন্তু এখানে আমরা ততোটা সাহিত্য বিষয়ক গুরুগম্ভীর আলোচনা করছি না। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে সাহিত্য আড্ডা নামকরন কি ঠিক হল ? আসলে আমার মনে হয় আমাদের সম্পূর্ণ জীবনটাই সাহিত্য । জীবনের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়ই সাহিত্যের উপকরন। শব্দনীড়ে তো সবাই অনেক গুরুগম্ভীর লেখা প্রকাশ করেন । কিন্তু মন্তব্যের ঘরে দেখি আড্ডাটা ঠিক জমে উঠছে না । কবিতা পড়তে পড়তে যখন মাথা ঝিম ধরে যায় তখন এই আড্ডায় যদি আমরা একটু প্রিয় কিছু গান শুনে নেই তবে কেমন হয় ? অথবা কবিতা আবৃত্তি ? অথবা যে কোন কিছু ? যে কোন কিছু, যা আমাদের নিজস্ব সাহিত্য রচনা নয় কিন্তু আমরা পড়তে বা শুনতে ভালোবাসি ?

তবে আপনারা চাইলে আমরা এখানে মৌলিক বাংলা সাহিত্য নিয়ে গঠনমূলক, বস্তুনিষ্ঠ ও বিশ্লেষণধর্মী আলোচনাও করতে পারি । সাহিত্য আড্ডা নামটা ঠিক রেখে এর ক্রম অনুসারে আপনিও আপনার মত করে আড্ডার আহ্বান জানাতে পারেন । অথবা আপনার মত করে অন্য কোন শিরনামে। অন্যের আড্ডায় সাড়া দিতে পারেন মন্তব্য করে। আর যদি এর কোনটাই আপনার ভালো না লাগে তবে শুধু দেখে যান, পড়ে যান, শুনে যান । তবুও সাথে থাকুন।

আমার বিশ্বাস এক সময় আপনারও ভালো লাগবে । লাগুক না ! একটু ভালো লাগলে দোষ কি ? ক্ষতি তো নাই তাতে কোন !

আপনাদের জন্য আমার আজকের নিবেদন সন্দীপন-এর কণ্ঠে বর্ষা দিনের গান যেতে যেতে পথে হল দেরী

www.youtube.com/watch?v=99awnc0IgfQ

যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো পারিনি যেতে পারিনি
যেতে পারিনি -যেতে পারিনি
ভুল বুঝে তুমি চলে গেছ দূরে
ক্ষমা পাব আশা ছাড়িনি
আশা ছাড়িনি
আশা ছাড়িনি -আশা ছাড়িনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো

আকাশ ভেঙে তখন
বৃষ্টি নেমেছিল
পায়ে যে পথ থেমে ছিল
থেমে ছিল -থেমে ছিল
আমি গিয়ে দেখি তুমি নেই একী
হার মেনে তবু হারিনি
হারিনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো পারিনি যেতে পারিনি
যেতে পারিনি -যেতে পারিনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো

চলে যে গেছ তুমি
আসিনি আমি দেখে
দাড়িয়ে থেকে থেকে ওগো
চলে গেছ -চলে গেছ
বুকে কাঁটা লয়ে
ব্যথা তবু সয়ে
মুখ থেকে হাসি করিনি করিনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো পারিনি যেতে পারিনি
যেতে পারিনি -যেতে পারিনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো

নচেৎ

তোমার পা জমিনে না পড়ুক,
অন্তত: অন্তর্বাসের হুকটা ঠিক-ঠাক খুলতে দিও,
নচেৎ, এটা নিছক প্রেমের গল্প হবে, প্রেম হবে না।

তোমার দৃষ্টি মাটিতে না দাও,
অন্তত: অধরের রংটা পালিশ করতে দিও,
নচেৎ, এটা আজ্ঞাবাহী হবে, অনুরক্ত হবে না।

তোমার চরিত্রে কালী লাগতে না দাও,
অন্তত: উত্তরীয়টা মুখে মাখতে দিও,
নচেৎ, এটা চরিত্র হবে, প্রেমের চরিত্র হবেনা।

সুন্দর এই বাংলাদেশটা

আফগান থেকে এক কাবুলিওয়ালা এদেশে বেড়াতে এসেছিল। এক মিষ্টির দোকানদার মিষ্টি সামনে নিয়ে বসে আছে অথচ খাচ্ছে না দেখে সে নিজেই দুই হাতে মুখে পুরতে লাগলো। দোকানদার ছুটে এসে তাকে ধরে ফেললো। লোকটি কাবুলী ভাষায় বলতে লাগলো, “নিজেও খাও না আবার অন্যকেও মিষ্টি খেতে দাও না, এ কেমন মানুষ তুমি ?”
কিন্তু দোকানদার তার ভাষা বোঝে না। সে হৈ চৈ করতে লাগলো। ছেলের দল জমা হয়ে পড়লো। সবাই তাকে নিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে দিল।
পুলিশ দেখলো, লোকটি একজন বিদেশী। এদেশের ভাষা এবং হাব-ভাব সে কিছুই বোঝে না। সুতরাং এই ছোট একটি ব্যাপারে তাকে হাজতে চালান দেওয়া ঠিক হবে না। বরং লোকটিকে মাথা ন্যাড়া করে একটি গাধার পীঠে বসিয়ে সারা শহর ঘোরাতে হবে। ছেলের দল পিছনে পিছনে ঢোলক বাজিয়ে মিষ্টি চোর বলে প্রচার করতে থাকবে।
সুতরাং বিপুল আয়োজনে ছেলের দল এইরূপই করলো।
লোকটি যখন দেশে ফিরে গেল তখন সবাই আসলো তাকে দেখতে, ‘বল ভাই, বাংলাদেশ কেমন দেখলা ?”
বললো, “বাংলাদেশ খুব ভাল দেশ। সেখানে বিনা পয়সায় মিষ্টি, বিনা পয়সায় চুল কাটা, বিনা পয়সায় গাধার পীঠে ভ্রমণ, বিনা পয়সায় ছেলেদের বাহিনী আর বিনা পয়সায় ঢোলের বাজনা বাজিয়ে সম্বর্ধনা। সুন্দর এই বাংলাদেশ।

……………
হাফেজ মাসউদ

শব্দনীড় এর পুরাতন বন্ধুরা নীড়ে ফিরুন আমাদের জন্য

আমার এবং আমাদের সবার প্রিয় সাহিত্য ব্লগ শব্দনীড়‘কে নিয়ে দুটি কথা-

শুরুতেই শব্দনীড়-এর সকল স্বনামধন্য ও নতুন ব্লগার, কবি, লেখক, গল্পকার, সাহিত্যিক, উপন্যাসিক সহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই শব্দনীড়ে’র প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং বিগত পোস্টগুলোতে স্ব স্বকীয় অবদানের জন্য। যথেষ্ঠ মেধা শ্রম মনন এবং রুচির যে অসাধারণ সম্মিলন ঘটিয়েছেন তার জন্য।

আমরা জানি শব্দনীড় বাংলাদেশে বাংলা সাহিত্যের বহুল পঠিত, পাঠক প্রিয় ও পুরাতন ব্লগ গুলোর একটি। যদিও এখন শব্দনীড় নতুন আঙ্গিকে নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে, কিন্তু শব্দনীড়ে’র পুরাতন ব্লগার, কবি, লেখক, গল্পকার, সাহিত্যিক, উপন্যাসিক সবাই শব্দনীড়’কে ভুলে যাননি, ভুলতে পারেন না এবং আবার শব্দনীড়ে ফিরে আসবেন বলে আমার বিশ্বাস। বিশ্বাসটি কে ধরে রাখতেও চাই।

একজন নতুন ব্লগার হিসেবে আমি আপনাদেরকে শব্দনীড়ে স্বাগতম জানাচ্ছি। আসুন আবার জমিয়ে তুলি শব্দনীড়’কে আমাদের নিজেদের স্বার্থে, আমাদের সবার স্বার্থে, সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসার স্বার্থে। শব্দনীড় থাকুক ভালোবাসায়।