বিভাগের আর্কাইভঃ সমকালীন

কলির কালে আবির্ভাব করোনা কালের শেষ কোথায়?

717_134947

শুনেছি কাল তিন প্রকার। এই তিন প্রকার কাল হলো: অতীতকাল, বর্তমানকাল, ভবিষ্যৎকাল। কাল অর্থ সময়। মানে ক্রিয়াপদ যে সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়, সেই সময়টাকেই কাল বলা হয়। অর্থাৎ ক্রিয়া সম্পাদনের সময়কে ক্রিয়ার কাল বলে। তবে আমার মনে হয় এই কাল কিন্তু শুধুই ক্রিয়ার কালই নয়। এই কাল আরও অনেক রূপে, অনেক নামে প্রচলিত।

তাই আমি এই লেখায় অন্তত ২৩ প্রকার কাল’র নাম-সহ কাল’র বিশদ বিবরণও উল্লেখ করেছি। কারণ কেউ কেউ এই কালকে অন্যরকমও মনে করে থাকে। তবে হ্যাঁ, কালে কালে এই মানবজাতির অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। যেমন: বনমানুষ থেকে এপর্যন্ত মানুষ এখন সভ্যজগতে পদার্পণ। সেইসাথে সেসময় থেকে এসময় পর্যন্ত পৃথিবীর অনেককিছুই বদলে গেছে। তাই আবারও উল্লেখ করেছি, কাল কিন্তু একটা সময়। তা হোক সুসময়, দুঃসময়।

আর এই সময়ের কালগুলো হলো: ক্রিয়াকাল, আদিকাল, মহাকাল, শিশুকাল, বাল্যকাল, যুবককাল, অকাল, বয়সকাল, বৃদ্ধকাল, মরণকাল, চিরকাল, গতকাল, আগামীকাল, আজকাল, আধুনিককাল, সকাল, বিকাল, রাত্রিকাল, এযাবতকাল, একাল সেকাল, কলিকাল, করোনাকাল। উল্লেখিত এই ২৩ প্রকার কালগুলো কিন্তু একটা সময়।

আর এই সময়টা হতে পারে দীর্ঘ সময় বা অল্প সময়। যেমন: “গানে আছে, “কতকাল দেখিনি তোমায়”! এখানে একমাসও হতে পারে, আবার একযুগও হতে পারে। যা বারোমেসে একবছর। আবার বারো বছরে একযুগ গণনা করা হয়।

আবার অন্য মতে কাল হলো বিষাক্ত বা জম বা বিপদ! যেমন: কথায় আছে, “সাপের মুখ লাল, মানুষের মুখে কাল”। যদি কারোর উপর কুনজরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কেউ কিছু বলে থাকে, সেটা নাকি কাল হয়ে দাঁড়ায়। মানে জম হয়ে সম্মুখে উপস্থিত হয়।

যার কারণে কারোর শখের একটা নতুন গাছে ফল ধরলে, গাছের মালিক গাছের সাথে ছেঁড়া-ফাঁড়া জুতা বেঁধে রাখে। যাতে কারোর কুনজর শখের গাছের উপর না পড়ে।

আবার ভারতে দেখেছি অনেক গাড়ির মালিকরা তাদের গাড়ির সামনে পেছনে জুতা ঝুলিয়ে রাখে। যাতে কুদৃষ্টি থেকে গাড়িটাকে রক্ষা করা যায়। কিন্তু কেউ রক্ষা পায়, আবার কেউ রক্ষা পায় না। তা পাক আর না পাক তাতে অন্য কারোর কিছুই যায়-আসে না। আমারও না। আমি বরং উপরোল্লিখিত ২৩ প্রকার কালগুলো নিয়ে আলোচনায় আসি। আমার ধারণা থেকে ২৩ প্রকার কাল গুলো নিম্নরূপ:

১. ক্রিয়াকাল: ক্রিয়ার কাল বা ক্রিয়াকাল লেখার প্রথমাংশে উল্লেখ করেছি। এই কাল তিন ভাগে বিভক্ত। যথা: অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। ক্রিয়াপদে এই তিন কাল মিলে ক্রিয়াকাল। ক্রিয়াপদ যে সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হয়, সেই সময়টাকেই বলা হয় কাল।

২. আদিকাল: আদিকালে আমার বাবার জন্মও হয়নি। তবে ইতিহাস পড়ে কিছু-না-কিছু জেনেছি। আর যারা আদিকালের ইতিকথার ইতিহাস লিখেছিলেন, তারাও মনে হয় একটু-আধটু আনুমানিক ধারণা থেকেই লিখেছিলেন। যা আমরা বর্তমানে ইতিহাস পড়ে জানতে পারছি।

৩. মহাকাল: যে কালে কোনও মহাপুরুষ, মহামানব ও মহামুনিগণ জন্মগ্রহণ করে, সেই কাল’কে মহাকাল বলতে পারি।

৪. শিশুকাল: আমার নিজেরও একসময় শিশুকাল ছিলো। শিশু কালে মা-বাবা, বড়দা’র হাতে কতো চড়থাপ্পড় খেয়েছি, তার কোনও হিসাব-নিকাশ নেই। তবে এখনো বেশ মনে আছে। এই শিশুকাল পেরিয়ে একসময় আমিও বয়স্কদের কাতারে এসে লাইন ধরেছিলাম। বর্তমানে আমি বৃদ্ধদের কাতারে।

৫. বাল্যকাল: জন্মের পর সবাই শিশুকাল অতিক্রম করে বাল্যকালে উত্তীর্ণ হয়। শিশুকালে সবারই মুখে চুষনী থাকে। আর বাল্যকালে ফুটে ওঠে মুখের বুলি।

৬. যুবককাল: যুবককালে সবাই এক অন্যরকম দিন অতিক্রম করে। কেউ হাসিতে মাতে। কেউ মাতে খেলায়। কেউ মনোনিবেশ করে লেখাপড়ায়। কেউবা আবার কাজে কর্মে। কেউ আবার অকালেই ঝরে পড়ে।

৭. অকাল: অকাল অর্থ অসময়। যা সময়তে হয় না, অসময়ে হয়। হঠাৎ কোনও সুস্থ মানুষ মৃত্যুবরণ করলে, লোকে বলে, “লোকটা অসময়ে চলে গেলো”। কোনও দুর্ঘটনায় কোনও যুবকের মৃত্যু হলে লোকে বলে, “অকালমৃত্যু” আবার অনেকেই বলে, “অকালে ঝরে গেলো”। কারোর দুর্দিনেও বলে, “অসময়ে আছি”। এটাও কিন্তু একটা সময়।

৮. বয়সকাল: যুবককাল পেরিয়ে বয়সকালের হাতছানি। এই বয়সকালে কেউ-না-কেউ খেলাধুলা, লেখাপড়ার পাশাপাশি কাজকর্ম ও সংসার গড়ার পালায় পড়ে। তারমধ্যে আমি নিজেও একজন ছিলাম।

৯. বৃদ্ধকাল: এই বৃদ্ধকালে প্রত্যেক মানুষেই নিজের জীবনের কর্মফলের হিসেব-নিকেশ নিয়ে সময় কাটায়। এই বৃদ্ধকালে সব মানুষের দেহ-মনে শেষ বিদায়ের বার্তা অনুভূত হয়। যেমন: কারোর মাথার কালো কুচকুচে চুল সাদা হয়ে যায়। যাকে বলে পাকা চুল। আসলে কিন্তু শেষ বিদায়ের বার্তা। আবার কারোর মুখের ভেতরে থাকা ৩২টি দাঁতই পড়ে যায়। কারোর অবশিষ্ট দু’একটা আটকে থাকে। তা-ও নড়বড়ে অবস্থায়। এইরূপ অবস্থা কিন্তু শেষ বিদায়েরই বার্তা। এই বৃদ্ধকালে শরীরের টাইট চামড়া বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিবিহীন খড়ায় কাঠফাটা রোদে চৌচির হয়ে যাওয়া কৃষকদের ফসলী জমির মতো হয়ে যায়। যাকে বলে, শরীরের চামড়া মরে গেছে। এর মানেই হচ্ছে মরণের হাতছানি।

১০. মরণকাল: বৃদ্ধকাল মানেই জীবনের শেষকাল। আর বৃদ্ধকাল শেষে মরণ কালের মরণকামড় সবারই সইতে হয়, মরতে হয়। জীব মানেই মরণশীল। এই সুন্দর পৃথিবীর সকল জীবকেই একদিন-না-একদিন মরণকে বরণ করতে হয়। সে থাকুক রাজা, নাহয় বাদশা। হোক সে ফকির, হোক গুণধর সাধু অথবা কোনও হিংস্র প্রাণী। এই পৃথিবীতে যাকিছু আছে, সবকিছুই অনিশ্চিত, কেবল জীবের মরণই নিশ্চিত। মরণকালে অনেক মানুষের মুখের জবান বন্ধ হয়ে যায়। চোখের আলো নিভে যায়। পানাহার বন্ধ হয়ে যায়। অনুভব অনুভূতি হ্রাস পায়। কেউ কেউ প্রিয়জনের কাছে কিছু কথা বলার জন্য ছটফট করতে থাকে। কিন্তু কেউ বলে যেতে পারে, কেউ পারে না। না বলা কথা মরণের সাথে মিশিয়ে দেয়। মরণকালে কারোর প্রাণপাখী উড়ে যায় শান্ত স্বভাবে। কারোর প্রাণপাখী যাওয়ার সময় সমস্ত দেহটা ভেঙেচুরে তচনচ করে ফেলে। তখন মরণকে বরণকারী মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। তারপর একসময় প্রাণপাখী উড়ে যায়। দেহটা নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে। সেই দেহটাকে বলে লাশ বা মরদেহ।

১১. চিরকাল: চিরকাল মানে ‘অনন্তকাল’। আর অনন্তকাল মানে চিরকাল, নিত্যতা, যুগযুগান্ত, অপরিমেয়, চিরস্থায়ী। অর্থাৎ যা ছিলো, তা থাকবে। যেমন: আকাশ, বাতাস, চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র এমন। কিন্তু আমি থাকবো না। হয়তো আমার বংশধর কেউ থাকবে না।

১২. গতকাল: যে দিন গত হয়। দিন গত রাত শেষে আজও গতকাল হবে। সবার জীবনের কতকিছুই না গত হয়ে গেলো। তবুও মানুষ বেঁচে থাকে আগামী দিনের আশায়। কেউ আগামী দিনের নাগাল পায়, কেউবা হারায়। তবে এই নশ্বর ভবসংসারে কেউ আগামী দিন হারাতে চায় না। সবাই আশায় বুক বেঁধে রাখে আগামী দিনের আশায়।

১৩. আগামীকাল: রাত শেষে সূর্যোদয়ে সাথে শুরু হয় আগামীকাল। আজ নাহয় হলো না দেখা। তাতে কী! দেখা হবে আগামীকাল। তবে আজ যেই কাজটা শেষ করা যাবে, সেই কাজটা যেন কেউ আগামী কালের আশায় ফেলে না রাখে। কারণ, আগামী কালের নাগল পাওয়াটাই অনিশ্চিত!

১৪. আজকাল: আজকাল যা হচ্ছে তো হচ্ছেই। আজকাল মেয়েরা পরে ছেলেদের পোশাক। ছেলেরা পরে মেয়েদের গহনাগাঁটি। কানে ঝুলিয়ে রাখে কানপাশা। হাতে পরে চুড়ি। গলায় ঝুলিয়ে রাখে বড় সাইজের মুতির মালা। আজকাল কেউ কারোর কথা শুনে না। স্ত্রী শুনে না স্বামীর কথা। স্বামী শুনে না স্ত্রীর কথা। রাজা শুনে না প্রজার কথা। প্রজা শুনে না রাজার কথা। আর আজকাল তো ছেলেমেয়েদের কিছু বালাই যায় না। ওরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাই আজকাল’কে আধুনিককাল বলে।

১৫. আধুনিককাল: “আধুনিক” শব্দটির অর্থ এইমাত্র। আর কাল শব্দটির অর্থ সময়। দুটে মিলিয়ে হয় এইসময়। যা বর্তমান বা সাম্প্রতিক সময়কে নির্দেশ করার জন্য ব্যবহিত হয়। একসময় বুড়ে-বুড়িরা বলতো, “সামনের দিনগুলোতে আরাস্তা (রাস্তার উপযোগী নয় এমন) রাস্তা হবে। আঘাট (ঘাটের উপযোগী নয় এমন) ঘাট হবে। এই আধুনিককালে কিন্তু তা-ই হচ্ছে। তা শহর, বন্দর, গ্রামেও লক্ষনীয়। যেখানে নর্দমা ছিলো, সেটা এখন রাস্তা। যেসব জায়গা দিয়ে মানুষ হেঁটে যেতে ভয় পেতো, সেসব জায়গায় এখন দিনরাত ২৪ ঘণ্টা লোকে লোকারণ্য। এই আধুনিককালে শিল্প কলকারখানা তথা সমগ্র বাংলাদেশের যেমন উন্নতি সাধিত হয়েছে, তেমনি মানুষের জীবনধারণেরও উন্নীত হয়েছে।

১৬. সকাল: শুভ সকাল। আবার কথার কথা “সাতসকাল”। কিন্তু সকাল সাতটা নয়, একটাই। মানে সকাল। যা সূর্যোদয়ের সাথে সাথে আরম্ভ। কিন্তু সকালের সময় আছে। এর সময় সূর্যোদয় হতে ১১.৫৯ মিনিট পর্যন্ত। এই আধুনিককালে আমরা অনেকেই সকালবেলা হাতমুখ ধুয়ে মহান সৃষ্টিকর্তাকে শুভেচ্ছা না জানিয়ে ফেসবুকে থাকা সকল বন্ধুদের শুভ সকালের শুভেচ্ছা জানাই। না জানালে ফেসবুকে থাকা সকল বন্ধুদের মনে কষ্ট পাবে, তাই। যাইহোক, সকালের সময় পেরিয়ে তারপর দুপুর। যাকে বলে শুভ দুপুর। তারপর বিকাল।

১৭. বিকাল: এই বিকাল শুরু হয় দুপুর পেরিয়ে। আমারা কেউ-না-কেউ দুপুরবেলা খাওয়া-দাওয়া সেরে বিশ্রাম নিই। তারপর বিকাল হতে-না-হতেই কেউ-না-কেউ প্রিয় মানুষকে সাথে নিয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে পড়ি। উদ্দেশ্য একটু হাওয়া-বাতাস গায়ে লাগানোর জন্য। কেউ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে। কেউ চিত্তরঞ্জন পুকুর পাড়ে। কেউ রাস্তায়। কেউবা আবার মার্কেটে থাকা নামীদামী রেঁস্তোরায়। সকলেই মেতে ওঠে আড্ডায়। সেই আড্ডা চলে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতদুপুর পর্যন্ত।

১৮. রাত্রিকাল: সূর্যাস্তের পর সন্ধ্যা ঘোর হতেই নেমে আসে রাতের আঁধার। তবে শহরাঞ্চলের মানুষ কিন্তু রাতের আঁধার টের পায় না। কারণ এই আধুনিককালে বৈদ্যুতিক বাতির ঝলমল আলো শহরাঞ্চলের রাতের আঁধার কেড়ে নিয়েছে। তাই আমাবস্যা রাতের ঘোর অন্ধকারও কেউ টের পায় না। মোটকথা কেউ বুঝেও না পূর্ণিমা কী আর আমাবস্যা কী? কিন্তু গ্রামাঞ্চলের মানুষ ঠিকই বুঝে, জানে। সন্ধ্যা হতেই তারা তড়িঘড়ি করে বাড়ির সকলের সান্নিধ্যে পৌঁছায়। কারণ গ্রামাঞ্চলে চোর-ডাকাতদের উপদ্রব বেশি। চোর-ডাকাতদের কামাই রোজগারই হয় রাত্রিকালে।

১৯. এযাবতকাল: এ পর্যন্ত সময়ে। মানে শুরু থেকে এ পর্যন্ত। যেমন: “বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাশাপাশি বাংলাদেশের ইতিহাসে এযাবতকালের মধ্যে সর্ব্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৭.২৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে”। আর আমরা দেশবাসী আছি এযাবতকালের সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে। না পারি বলতে, না পারি সইতে, না পারি মরতে।

২০. একাল: এ সময়ে। একালে যার কিছুই নেই, তার একটা মোবাইল ফোন আছে। অনেকের আছে এন্ড্রয়েড টাচস্ক্রীন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির তৈরি স্মার্ট ফোন। এ সময়ে এই অত্যাধুনিক স্মার্ট ফোনের সাহায্যে হাতের মুঠোয় দুনিয়াদারী নিয়ে ঘোরাফেরা করে। মুহূর্তেই পৃথিবীর সব খবরাখবর জেনে যায়। এই অত্যাধুনিক ছোট যন্ত্রটার সাহায্যে সবকিছু দেখা যায়, শোনা যায়। কিন্তু সেকালে এসব কিছুই ছিলো না।

২১. সেকাল: যে কাল গত হয়েছে, তাকেই বলে সেকাল। সেকালে ঘরে ঘরে কালার টেলিভিশন ছিলো না। যা ছিলো, তা-ও সাদাকালো ছোট একটা টেলিভিশন। তা-ও ছিলো দশ গ্রামের ভেতরে দু’একটা বাড়িতে। সবার হাতে হাতঘড়ি ছিলো না। যাদের হাতে হাতঘড়ি থাকতো, তারা ছিলো বড় শিক্ষিত লোক। সবার গলায় ট্রাই বাঁধা ছিলো না। ছিলো রাষ্ট্রপ্রধান ও মন্ত্রীদের গলায়। আর আদালতে থাকা বিচারকের ও অ্যাডভোকেটদের গলায়। আর এখন রাস্তার টোকাইদের গলায়ও ট্রাই বাঁধা থাকে। হাতঘড়ির তো মানসম্মান আরও অনেক আগেই চলে গেছে।

২২. কলিকাল: কলিকাল বা কলির কাল বা করিরযুগ। এই কলিযুগ হিন্দু ধর্মে চার যুগের মধ্যে এক যুগ। যথা: সত্যযুগ, ত্রেতাযুগ, দ্বাপরযুগ, ও কলির যুগ বা কলিযুগ। সত্য যুগের আয়ু ছিলো, ১৭.২৮.০০০ বছর। এই যুগে কোনও পাপ ছিলো না।
ত্রেতা যুগের আয়ু ছিলো, ১২.৯৬.০০০ বছর। এই যুগে পুণ্য ছিলো তিনভাগ, পাপ ছিলো একভাগ।
দ্বাপর যুগের আয়ু ৮.৬৪.০০০ বছর। এই যুগে পুণ্য অর্ধেক, পাপ অর্ধেক।
কলি যুগ বা কলির যুগ বা কলিকাল আক্ষরিকভাবে কলির যুগ, বা “পাপের যুগ।

এই কলির যুগ বা কলির কাল বা কলিকাল হলো হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী চার যুগের শেষ যুগ। এই কলি যুগের আয়ু হলো, ৪,৩২,০০০ বছর। কলি যুগে পুণ্য এক ভাগ, পাপ তিন ভাগ। মানুষের আয়ু প্রায় একশ বছর । মানুষের শরীরের দৈর্ঘ্য নিজের হাতে সাড়ে তিন হাত । প্রাণ বাঁচে ডালভাতে। তীর্থ গঙ্গার জলে। এই যুগে ধর্ম সংকোচিত। মানুষ তপস্যাহীন, সত্য থেকে দূরে অবস্থানরত। রাজনীতি কুটিল। শাসক ধনলোভী। ব্রাহ্মণ শাস্ত্রহীন। পুরুষ স্ত্রীর অনুগত। সৎ মানুষের কষ্ট বৃদ্ধি। দুষ্টের প্রভাব বৃদ্ধি। এই যুগে মানুষের ইচ্ছা পূর্ণ করা প্রায় অসম্ভব। মোটকথা পাপে অনুরক্ত। তাই এতো এতো রোগব্যাধি। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে একপ্রকার প্রাণঘাতী ভাইরাস। বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের নাম রেখেছে করোনাভাইরাস।

২৩. করোনাকাল: সব কালের শেষকাল করোনাকাল। হিন্দু ধর্মে চার যুগের শেষ যুগ হলো কলির যুগ। অনেকেই বলে কলিকাল। আর কলি কালেরও শেষকাল হতে পারে করোনাকাল। এই করোনা কালের আবির্ভাব গণচীনের উহান শহরে। সময়টা ছিলো ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে। এই করোনাকালের আয়ু হবে কেয়ামত বা প্রলয় পর্যন্ত।এই প্রাণঘাতী ভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায়। মানুষের শরীরে প্রবেশ করে হাত-মুখ, চোখ ও নাককান দিয়ে। লক্ষ্মণ সর্দি-জ্বর,কাশি, মাথাব্যথা-সহ আরও কিছু উপসর্গ।

এই করোনাকাল আমাদের সামনে কবে থেকে কবে হাজির হয়েছে, তা এদেশের একটা মাসুম বাচ্চাও জানে। তবে কবে নাগাদ করোনাকাল শেষ হবে তা আর কেউ জানে না। এই করোনাকালে সারা বিশ্বই এখন বিপদগ্রস্ত। এই করোনাকালে সারাবিশ্বে কতো কতো মানুষ যে প্রাণ হারিয়েছে, তা প্রতিদিন খবরে প্রকাশ হচ্ছে। তবে কতো ব্যবসায়ী যে তার পূঁজি বাট্টা সহায়সম্বল শেষ করে দিয়েছে, তার কোনো হিসাব-কিতাব নেই। কতো শিশু যে লেখাপড়া ছেড়ে জীবন বাঁচানোর ধান্দায় রাস্তায় নেমেছে, তারও কোনও হিসাব নেই।

কতো গৃহিণী মা যে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে দিনের পর দিন না খেয়ে আছে, তারও কোনও হিসাব নেই। কতো বৃদ্ধ বাবা যে অবুঝ সন্তানের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেয়ার জন্য হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করছে, তারও কোনও হিসাব নেই। হিসাব আছে শুধু মহামারি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা যাচ্ছে, তার হিসাব। কিন্তু কোটি কোটি অসহায় মানুষ যে জীবিত থেকেও নিজেকে মৃত ভাবছে, তার হিসাব কারোর কাছেই নেই।

১৬/১৭ কোটি মানুষের দেশে এই হিসাব রাখাও তো সম্ভব হয়ে পরছে। তবে বর্তমান সরকার এই সময়ে এই করোনাকালে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, যাতে কেউ যেন না খেয়ে থাকে। পাশাপাশি এই করোনাকালে করোনা সংক্রমণ থেকে মানুষ বাঁচতে সরকার নিরুপায় হয়ে একের পর এক লকডাউন ঘোষণা দিচ্ছে। তবুও কিছুতেই এই করোনা কালটাকে সামলাতে পারছে না। দিনদিন নতুন করে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেই। জানি না এই করোনা কালের শেষ কোথায়?

বাঁশের বাশি এবং

কী দুরন্তপনায়ই না কেটেছে আমাদের শৈশব! স্পষ্ট মনে আছে, একবার বাঁশের গুলতির বায়না ধরেছিলাম বাবার কাছে। বাঁশঝাড় থেকে বাঁশ কাটা হলো, বাঁশ থেকে খাপ বানানো হলো। তিন সূতার পাটের দড়ি পাঁকানো হলো। খাপের দুই পাশে দড়ি টানিয়ে ধনুক আকৃতির গুলতি তৈরি করা হলো। অতঃপর রঙ-বেরঙের মার্বেলের গুলিতে পাখি শিকার বেড়িয়ে পড়া ! আহা কি আনন্দ!

স্কুল থেকে বাসায় যাওয়ার পথে একটা রিকসা ফ্যাক্টরী ছিলো। স্কুল ছুটি হলে এর সামনে দাঁড়িয়ে রিকসা বানানো দেখতাম। সেই বাঁশ কেটে খাপ বানানো, দড়ি টানা দিয়ে বাঁকানো খাপে হুড বানানো, হুডের ঢাকনায় রঙ করা, ব্যাকপ্লেটে নীতিবাক্য লেখা ইত্যাদি। আমার খুব ভালো লাগতো।

তখন বর্ষাকাল। আমরা প্রায় প্রতিদিন ছাতা মাথায় পায়ে হেঁটে স্কুলে যাই। একবার আমার এক সহপাঠী এঁটেল মাটির রাস্তায় পা পিছলে আলুর দম। হাড় দু’টুকরা হয়ে গেলো। আমরা তাকে কোলে করে বাড়ি নিয়ে গেলাম। কবিরাজের ডাক পরলো। তিনি এসে গাছের শিকড় প্যাচিয়ে পায়ে শক্ত ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলেন। কিছুদিন পর হাড় জোড়া লেগে গেলো। কিন্তু হায়! সে সোজা হয়ে হাঁটতে পারলো না। শহরে বড় ডাক্তারের কাছে নেয়া হলো। এক্সরে করা হলো। দেখা গেলো, জোড়া খাপে খাপ হয়নি, হাড়ের উপর হাড় পাশাপাশি জোড়া লেগে গিয়েছিলো। ব্যাপারটা অপারেশনে গড়িয়েছিলো। তারপরও কি এই পা সেই পা হয়!

আমাদের গ্রামে প্রতি শনি ও বুধবারে হাট বসতো। হাটবারে রাস্তার পাশে একটি কুঁজো ছেলে ভিক্ষে করতো। আমরা স্কুলে যাওয়া আসার সময় দেখতাম, সে সুর করে ভিক্ষা চাইতো। একদিন পাশের গ্রামে ফুটবল খেলতে গিয়ে দেখলাম, আসলে ছেলেটি কুঁজো নয়। কিন্তু সে এই ব্যবসা চালিয়ে গেলো। আমি মাধ্যমিক পাশ করে কলেজে, কলেজ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি। বহুদিন আর ছেলেটির সঙ্গে দেখা নেই। হঠাত একদিন দেখি সত্যি সত্যি সে কুঁজো হয়ে গেছে …

আজ প্রায় শেষ বয়সে উপনীত হয়েছি। চাকুরী থেকে অবসরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। হাতে সময় জমা হলে বসে বসে অতীত রোমন্থন করি আর ভাবনার সমুদ্রে হাবুডুবু খাই – টেনে বেঁধে রাখলে কেমন করে বাঁশ বাঁকা হয়ে যায়, হাড় অসমানভাবে জোড়া লাগে, অভ্যাসে পিঠ কুঁজো হয়, এমনি আরো কত কি?

আমাদের শিশুরা বড়ই অনুকরণপ্রিয়। তাদেরকে আপনি যা শিখাবেন তাই শিখবে। শিখন অভ্যাসে পরিণত হবে একদিন। আর তারা যখন পুর্ণাংগ মানব/মানবী হয়ে উঠবে তখন আর অভ্যাস বদলানো যাবে না। তাই আমাদের এখনই ভাবতে হবে, আমাদের সন্তানদের আমরা কি শেখাবো; সত্যি না মিথ্যে? অভিনয় না বিনয়? নির্বিচারে বাঁশ ঢোকানো, বাঁশের কেল্লা বানানো, নাকি বাঁশ দিয়ে বাঁশি বানানো?

আমাদের ছেলে মেয়েরা কি শিখছে ? কি অভ্যাস করছে ? ভালো কিছু শিখলে/ অভ্যাস করলে, আলহামদুলিল্লাহ্। কিন্তু আল্লাহ না করুন, নেগেটিভ কোন অভ্যাস গড়ে উঠলে, সেটা পারমানেন্ট কুঁজে পরিণত হবে – এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

নারী চরিত্রের ব্যারোমিটার মদ্যপান এবং বিচারপতি মা প্রধানমন্ত্রীর কাছে নারী’র আর্তনাদ

Scree

এবার বাংলাদেশে বর্ষা শুরুর আগ থেকেই আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে বৃষ্টি নেমেই চলেছে; ঢাকার রাস্তা যখন কাদায় আর পানিতে পরিপূর্ণ তখন শহুরে জনতার টক অফ দ্যা দেখনো হচ্ছে মুনিয়া, কখনো পরিমনী আবার কখনো আবু ত্ব-হা আদনান। সোস্যাল মিডিয়ার ওপর কখনও মেঘ আবার কখনো বৃষ্টির মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে খবর গুলো; তার চাইতেও অধিক গতিতে নারী ভিকটিমের চরিত্রের ওপর চড়াও হচ্ছে কতিপয় ফেসবুকার, এদের সংখ্যা কম নয়।

এমন ঘটনা বাংলাদেশে নতুন না, তবে আমাদের স্বভাব হচ্ছে আমরা নতুন কোন ইস্যু পেলে পুরনো অনেক ঘটনাই বেমালুম ভুলে যাই অনেকে। মূল আলোচনায় ফিরে আসছি, তার আগে জেনে নেই মদ অর্থাৎ অ্যালকোহলের উৎপত্তি এবং এ সম্পর্কে দু’টো হাদিস।

Nobody knows exactly when humans began to create fermented beverages. The earliest known evidence comes from 7,000 BCE in China, where residue in clay pots has revealed that people were making an alcoholic beverage from fermented rice, millet, grapes, and honey. So how did alcohol come to fuel global trade and exploration? Roderick Phillips explores the evolution of alcohol.
-Rod Phillips

মদ বা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এক ধরনের পানীয় যাতে ইথাইল অ্যালকোহল (ইথানল) থাকে। এটি অল্প পরিমাণে গ্রহণ করলে মনে উৎফুল্ল ভাব সৃষ্টি হয়, দুঃশ্চিন্তা কমে যায় এবং সামাজিকভাবে মেলামেশা করার ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে কেউ যদি মদ মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করে তাহলে তার নেশা হয়, মোহ বা ঢুলুঢুলু ভাব ধরে এবং জ্ঞানও হারাতে পারে। গবেষকেরা বলছেন, ১৫-৪৯ বছর বয়সী মানুষের ১০টি মৃত্যুর মধ্যে একটি ঘটে মদের কারণে। নিয়মিত মদ্যপান শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও টিস্যুতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

মদ ইসলামী শরিয়তে নিষিদ্ধ। কোনো মুমিনের জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ নয়। কোরআন ও হাদিসের একাধিক বর্ণনায় মুমিনদের মদপান থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন—আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, পূজার বেদি ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর হচ্ছে শয়তানের অপবিত্র কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা কল্যাণ প্রাপ্ত হও।’ (সুরা : মায়িদাহ, আয়াত : ৯০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর অভিশাপ মদের ওপর, তা পানকারীর ওপর, যে পান করায় তার ওপর, যে বিক্রি করে তার ওপর, যে তা নিষ্কাশন করে এবং যার আদেশে নিষ্কাশন করে তার ওপর আর যে ব্যক্তি তা বহন করে এবং যার কাছে পৌঁছে দেয়, সবার ওপর।’ (সুনানে আবি দাউদ)

আমার আলোচনা শুরু করছি উপরে বর্ণিত হাদিসের শেষ লাইন দিয়ে। মদ ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে কেবলমাত্র যিনি গ্রহণ করছেন তার জন্য নয়, যিনি উৎপাদন থেকে আরম্ভ করে বহন করা এবং বিক্রি করার ক্ষেত্রেও ভুমিকা রাখছেন তাদের ওপরও সমান নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বহুল আলোচিত ঘটনায়, বাংলাদেশের অতি পরিচিত নায়িকা পরিমনী’র ওপর মদ গ্রহণের দায়ে ফেসবুকে অসংখ্য আল্লাহওয়ালা মুমিনদের বক্তব্যে আমার কেবল এটাই মনে হয়েছে যে মদ খাওয়া নারী’র জন্য নিষিদ্ধ বা হারাম।

গেল ১০ জুন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে বোট ক্লাবের চেয়ারম্যান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ অভিনেত্রী পরিমনীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করেন, ঘটনার চারদিন পর পরিমনী তার বাড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তার ওপর ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য তাৎক্ষনিক ভাবে বাংলাদেশ পুলিশ উদ্যোগ নেয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে নাসিরুদ্দিন এবং ব্যবসায়ী অভিকে আটক করা হয়।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদ, তিনি বড় ব্যবসায়ী হয়েও গ্রেফতার এড়াতে পারেন নি, যদিও এর আগে আমরা মুনিয়া হত্যার / আত্মহত্যার পর দেখেছি বসুন্ধরার এম ডি সায়েম সোবহানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক ডজন তথ্য প্রমাণ থাকা স্বত্ত্বেও তার নাম অব্দি কোন পত্রিকা বা নিউজে দেখা যায় নি প্রথম দিকে, তাকে ধরা তো অনেক দূরে, কয়েকদিন আগেই ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন তাকে ফুল দিয়ে আসছে, তার আগে সে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। একটা হত্যা মামলার আসামী ক্যামেরার সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পুলিশ তারে ধরছে না।

অপর দিকে, পরিমনী ইস্যুতে দেখলাম আইন শৃংখলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর ছিলেন। পরিমনী ঘটনার চারদিন পর অভিযোগ করেছেন; কোন প্রমাণ দিতে পারেন নি, তাতেও শুধুমাত্র মোখিক অভিযোগের ভিত্তিতে কিন্তু নাসিরুদ্দিনকে আটক করা হয়েছে, এমন ঘটনা এইদেশে বিরল। এটা কি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী বরাবর পরিমনীর’র মা মা করে লেখা ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে, নাকি পরিমনী যথেষ্ট জনপ্রিয় নায়িকা নাকি নাসিরুদ্দিন জাতীয় পার্টি করেন, আওয়ামী লীগের কোন বড় পদে তার নাম নেই।

আসলে কারণ যাই হোক, এইটুকু নিশ্চিত যে শারীরিক লাঞ্চনার স্বীকার হলে ফেসবুকে লেখা বেশি কার্যকরী থানায় মামলা করবার চাইতেও। কিছু অতি পাকনা জনতা ঘটনার সুবিচার দেখার চাইতে নারী ভিকটিমকে উলঙ্গ করতেই বেশি উদ্যত অনলাইনে, তাই কেন এতো কম সময়ে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিনকে এবং অভিকে ধরা হলো সেটা না ভেবে ভাবছেন, কেন পরিমনী মদ খেল ? কিভাবে খেল ? বারে কেন গেল ? কেন স্বল্প পোশাক পড়লো ? কেন তিনটা বিয়ে করলো ? কেন সিনেম করলো ? কেন দুবাই গেল ? এমন অনেক অনেক কেন দিয়ে তারা ফেসবুকের পাতা ভরিয়ে ফেলে যেখানে একটা মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। নুসরাতের মতো পর্দানশীল নারীও এমন ট্রলের শিকার হয়েছেন তার গায়ে আগুন দেওয়ার পরো, মুনিয়া মরে যাবার পরো তার নাচ লোকে ভাইরাল করেছে, আনুস্কা বা তনু কেওই এই ধরণের নোংড়া ট্রল থেকে রেহাই পায়নি।

ধর্ষিতা হবার পর তার জন্য একমাত্র দায়ী করা হয়েছে নারীর চরিত্রকে এবং এই প্রথা আগেও ছিল এখনো চলছে, ভবিষ্যতে চলবে না এমন কোন গ্যারান্টি নেই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কোন নারীর ওপর যখন আক্রমণ করা হয়েছে এমন সংবাদ আসে, তখন অধিকাংশ পাঠক বিশাল সাইজের গবেষক হয়ে যান। উক্ত নারীর চরিত্র নিয়ে তারা থিসিস করতে আরম্ভ করেন, তার লেখা পড়া থেকে শুরু করে বিয়ে অব্দি পুরো বায়োগ্রাফি পাঠকের হাতে চলে আসে চোখের পলকে। এতে করে অপরাধী চলে যায় সবার নজরের বাইরে, তার অপরাধ যেন ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকে যদি কোন ভাবে প্রমাণ করা যায় উক্ত নারী রাত করে বাড়ি ফিরেন অথবা বাইরে কাজে যান। আর পরিমণির বেলায় বিষয়টা খুব সহজ ছিল।

পরী একজন ফোর্বস ম্যাগাজিনের লিস্টেড নায়িকা, তিনি কী পড়বেন কোথায় ঘুরবেন, কার সাথে ঘুরবেন তার জবাবদিহি দর্শককে দেবার কথা না যে দর্শক শত টাকা খরচ করে হলে তাকে দেখতে যায়, সেই দর্শক কী করে আশা করেন যে পরি বোরখা পড়বেন, আর নায়িকা বোরখা পড়ে অভিনয় করলে কি দর্শকের পয়সা উশুল হতো ? পরিমনী মদ খান ব্যস এই জায়গায় মদ একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পরিমনী যেহেতু মদ খেতে বারে যান তাহলে তাকে যে কোন পুরুষ যে কোন সময় ধর্ষণ করতেই পারে। মদ কেবল পরিমনী খাচ্ছেন তা কিন্তু না, ক্লাবে মদ সাপ্লাই করা হচ্ছে, সেখানে অভিনেত্রীর পাশাপাশি বসে পুরুষ সম্প্রদায় মদ খাচ্ছেন, যিনি আক্রমণ করেছেন এবং তাকে সহায়তা করেছেন তিনিও মদ্যপ ছিলেন। তবুও তাদের অপরাধ কোনভাবেই আলোচনায় উঠে আসেনি ফেসবুকারদের অতর্কিত মন্তব্যের তীব্র বানে।

পরিমনী রাত করে বাইরে থাকেন এবং মদ খান এবং তার তিন বিয়ে, এই বিষয় গুলো বেশি আলোচিত হয়েছে আর নারী’র মদ্য পান অন্যতম ভাবে দায়ী। অবস্থাদৃষ্টে বোঝা যাচ্ছে, সমাজ পুরুষদের মদ খাওয়াটাকে খুবই স্বাভাবিকভাবে নিয়েছে। পাপ পূণ্যের যে হিসাব অনলাইন হুজুররা প্রতিনিয়ত তাদের বক্তব্যে দিয়ে আসছেন তার মধ্যে মদ্যপ নারীর ক্থা উঠে আসলেও মদখোর পুরুষদের জন্য কোন বয়ান নেই যদি এলকোহল দুই জাতির জন্যই হারাম বলেছে ইসলাম।

বনানী থানায় কেন মামলা নেওয়া হয়নি, এমন প্রসংগে ওখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তা বলেছেন ‘পরিমনী মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন, তাই তাকে বাসায় যেতে বলা হয়; পরে মামলা নেওয়া হবে।’ এখন কথা হচ্ছে একজন লোক যদি মদ্যপ অবস্থায় কোন নারীকে ধর্ষণ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন কি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে না, নাকি মাতাল বলে ক্ষমা করে দেবে। শহরের রাস্তায় কেও যদি মাতাল অবস্থায় হেঁটে যায় সেখানে দাঁড়িয়েও পুলিশ মামলা করে দেয় তাৎক্ষনিক, তাহলে এই মামলা হয় কোন ভিত্তিতে সেটা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। মাতালের নিরাপত্তা তো রাষ্ট্রের দায়িত্ব বলেই আমি বিশ্বাস করি।

পরিমনী অভিযোগ করেছেন তাকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে, তবে অভিযুক্তদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে মাদক আইনে। তার মানে এখনো পরিমনী তার অভিযোগের সঠিক বিচার পান নি। এই পরিমনী ইস্যুতে বাংলাদেশে কিছু নব্য মুসলিমদের বিরা্ট উপকার হয়েছে, তারা আবু ত্ব-হা আদনানের জন্য তাদের চোখের জল দেখাতে পেরেছেন রাষ্ট্রকে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিন রাত একত্র করে তাদের ত্ব-হাকে হাজির করেছেন তাও আবার আজ; তার শ্বশুর বাড়ি থেকে। কোথায় ত্ব-হাকে গুম করা হয়েছে বলে বলে ফেসবুক গরম করে ফেলেছে একদল, তাদের আশায় এমন জল ঢেলে দেওয়া ত্ব-হার একদম উচিৎ হয় নি। আরো কিছুদিন প্রথম পক্ষের শ্বশুরবাড়িতে কাটালে দ্বিতীয় স্ত্রী’র কাছে গুরুত্ব আর এক ধাপ বাড়তো, আরো কিছুদিন আদনানের ভিডিও শেয়ার হতো, আরো কিছু নারী বিদ্বেষী বক্তব্য ভাইরাল হতো, তারপর আবু ত্ব-হার জন্য জাতি মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামতেন, ব্যাপারটি কতো দূর চলে যাচ্ছিল। আইন শৃংখলা বাহিনীর জন্য আমার মায়াই হয়, এই বৃষ্টির মধ্যেও তাদের অযথা হয়রানি !

যাই হোক, প্রধানমন্ত্রী বরাবর কান্নাকাটি করলে যে অনেক কাজ হয় সেটাই আমি উপলন্ধি করেছি বেশ কয়েক বছর ধরে। সেই যে নোয়াখালীর নুসরাতকে পুড়িয়ে মারা হলো, তাদের পরিবার যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুবিচার না চাইতেন তাহলে তো অপরাধীদের শাস্তি হতো না (যদিও নুসরাত মেয়েটিকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি বীভৎস ভাবে)

{ বিএনপি ঘরের ভেতর সেমিনার না করে এই ফর্মুলায় এগুলে এতদিনে বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসা পেয়ে যেতেন সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। }

এটা পরিমনীর বেলায়ও দেখলাম। কিন্তু মুনিয়া বা আনুস্কাদের বেলায় তা দেখিনি, মুনিয়ার বড় বোন বা আনুস্কার মা তাহলে মনে হয় ঠিকঠাক করে কান্না করতে পারেন নি। মা সম্বোধনে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটা চিঠিও পাঠাতে পারেন নি, আমি অন্তত শুনিনি। মুনিয়া বা আনুস্কা দুই জনেরই সম্ভাব্য খুনি তাদের বয়ফ্রেন্ড, তাদের অপরিণত বয়সের প্রেম। এই দুইটি ঘটনার কোন সমাধান আজো আইন শৃংখলা বাহিনী করতে পারেনি। তেমনি তনু হত্যার বিচার করতে পারে নি, আদিবাসী বাচ্চা মেয়েটি বাবা সহ আত্মাহূতি দিল, বিচার হয়নি, ঘরের ভেতর প্রবেশ করে গাজিপুর ছোট শিশুকে রেপ করা হয়, বিচার হয়নি, আশুলিয়ার বাসে দুই নারী শ্রমিককে ধর্ষণ করা হয়, কোন বিচার নাই; এমন শত শত নারী দৈনিক শারীরিকভাবে লাঞ্চনার শিকার হয়।

বিচার পায়না এরা, উলটো এদের চরিত্র নিয়ে কথা ওঠে সোস্যাল মিডিয়ায়, এদেরকে বেশ্যা উপাধি দেওয়া হয় আর এই দেশে বেশ্যাদের ধর্ষণ করা খুবই নেক কাজের মধ্যে অন্যতম একটি বলেই বিবেচিত। আজ সুপ্রিম কোর্টের বড় বিচারপতি কে তাঁকে আমি চিনি না, তাঁকে চেনার আমাদের কোন দরকার নেই। আমরা চিনি আমাদের মা’কে; আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে, আপনাকেই বলছি; ‘মা, আপনার মেয়েগুলো বড় অসহায় আপনার রাষ্ট্রে। তাদের ইচ্ছে করলেই হাঁটুজল বৃষ্টিতে পা ডুবিয়ে খেলতে পারে না, তারা খোলা ছাদে চুল এলিয়ে দাঁড়াতে পারে না মা, তাদের ইচ্ছে করে সাইকেল নিয়ে এই শহর ঘুরে বেড়াতে, খোলা পুকুরে ডুব সাঁতার দিতে। মা, তাদের জন্য একটি নিরাপদ জায়গা দিন, তাদের অবাধে কাজ করার সুযোগ করে দিন, তাদের বেঁচে থাকার নিরাপত্তাটুকু দিন মা।

মা, আপনি কি এই নারীদের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছেন ? মা, আপনিই এই অসহায় মেয়েদের একমাত্র আশ্রয়স্থল, আপনিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত, একমাত্র প্রধান বিচারপতি।‘

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা (৯)

31655

পরিবার, দায়বদ্ধতা ও অন্যান্য।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক রিক্সাচালক বাবা তার মেয়েকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে–। ছিঃ কেমন বিশ্রী কথা ও কেমন বিশ্রী বাবা। নিজের মেয়ে তার লালসার স্বীকার। পেপার পত্রিকায় প্রায় দেখি এমন বাবাদের খবর, চাচাদের খবর, মামাদের খবর কিংবা ভাইদের খবর। কিন্তু কেনো এই বিকৃত পুরুষত্বের স্বীকার মেয়েরা। এখন হতে ভাবতে হবে সমাজ বিজ্ঞানীদের, না হয় এইটি মহামারী আকার ধারণ করবে এবং সমাজে ভদ্রতা নষ্ট হবে, সভ্যতা নষ্ট হবে, সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়বে। একটা মানুষের জন্য ঘরটাই সবচেয়ে নিরাপদ অথচ সেই ঘরে বাবা, চাচা, ভাইরূপি জানোয়ারদের বাস। তাহলে একটা মেয়ে কাকে বিশ্বাস করবে, কোথায় নিরাপদ থাকবে। কথায় কথায় আমরা বলি পৃথিবীতে বহু খারাপ লোক আছে কিন্তু একটা খারাপ বাবাও নাই। কথাটা আজ মিথ্যায় পরিণত হতে চলেছে। তাই মেয়ের মা’দেরকে সচেতন হতে হবে, বিচক্ষণ হতে হবে। মেয়ের সাথে বন্ধুভাব রাখতে হবে যাতে কেউ কিছু বললে কিংবা করলে মাকে বলতে দ্বিধা না করে। প্রত্যেককে কয়েকটি বিষয় মেনে এবং খারাপ বিষয় পরিহার করে চলতে হবে।

ধর্মীয় ও পারিবারিক শিক্ষাঃ
সাধারণত পুরুষ হতে মেয়েরা বেশী ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। তাই মেয়েকেও ধর্ম মেনে চলতে বাধ্য করে। কিন্তু অনেক বাবাই ধর্ম হতে অনেকটা দূরে থাকে কারণ পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য রোজগারে ব্যস্ত থাকার অজুহাত। তাই প্রত্যক স্ত্রীর উচিত উনার স্বামীকেও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করা। যাতে স্বামীর মনে আল্লাহর ভয় থাকে, সমাজের ভয় থাকে। মেয়েদেরকে আবার শাসনের নামে মনে এমন ভয় দেওয়া যাবে না যাতে সে সহজ কথাও বলতে ভয় পায়। নিজেরা সত্য কথা বলতে হবে এবং সন্তানদের সত্য কথা বলতে বাধ্য করতে হবে। যৌথ পরিবার হলে সন্তানকে পরিবারের সবার সাথে সত্য-সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণে বাধ্য করতে হবে। আশেপাশে কারো আচরণ কিংবা নজর কুরুচিকর হলে সন্তানদের তাদের হতে দূরে রাখতে হবে।

রাজনীতি ও মাদকঃ
আমার মনে হয় সমাজের এবং পরিবারের সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণটা এখন রাজনীতি ও মাদক। ইয়াবা এখন গ্রাম মহল্লায় অতি সহজে পাওয়া যায় আর এর যোগান দাতা রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী। সন্তান দশম শ্রেণী কিংবা দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠলে তার দিকে সতর্ক নজর দেওয়া দরকার। কারণ তখন তাদের কাছে সব কিছু রঙ্গীন রঙ্গীন মনে হয়। মোবাইল, বাইক, একা রুম এবং ক্ষমতা তাদের কাছে আকর্ষণীয় লাগে। বন্ধুদের সাথে ঘুরলে রাজনীতি করতে হয় আর রাজনীতি করলে মোবাইল ও বাইক লাগবেই। এইসব থাকলে রাজনীতি তাকে ক্ষমতাবান করবেই আর ক্ষমতা থাকলে টাকা আসবেই টাকা আসলে মাদক গ্রহণ করবেই। মেয়েদের মনে রাখা উচিত ছেলেদের বেশীর ভাগ প্রতারক হয়। সেটা ভালোবাসার, সেটা ক্ষমতার, সেটা কথার, সেটা অন্যান্যও বটে। তাই মুখে মিষ্টি অন্তরে অনিষ্ট অতএব সাবধান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমঃ
মাঝে মাঝে সন্তানদের মোবাইল চেক করে দেখা উচিত। কারণ মদ, জুয়া, বাটপারি, চিটিংবাজি সব এখন মোবাইলে হয়। একা রুমে কী করে দেখা উচিত, সন্দেহ হলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ফেসবুক, টুইটার নেশাগ্রস্ত হলে দ্রুত পরিহার করতে হবে কারণ এইসব মাদক হতেও ভয়ংকর। কোনোমতেই মোবাইল গেইম খেলতে দেওয়া উচিত নয়। গেইমে আসক্ত হলে কঠিন শাসনের আওতায় আনতে হবে। টিকটক এবং লাইকি কোনোমতেই করতে দেওয়া যাবে না। শত শত নারী পাচার হয়েছে এবং সংসার হারা হয়েছে এই টিকটক এবং লাইকির কারণে। যেইসব নারী এইসবে অভ্যস্ত ওরা বিকারগ্রস্ত মানুষ। ভারতের ব্যাঙ্গালোরে এক নারীর উলঙ্গ ছবি ভাইরাল এই টিকটকের কারণে। বাংলাদেশ হতে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যে শত শত নারী যৌন ব্যবসায় বাধ্য হয়েছে এই টিকটকের নেশায় পড়ে। সরকারকে অচিরে এইসব বন্ধ করা উচিত।

পরিশেষে বলবো সবাইর জীবন সুন্দর হোক। মেয়েরা নিরাপদ হোক ঘরে, হাটে, বাজারে ও শহরে। অতিরিক্ত ভালোবাসার কারণে সন্তান বখাটে হওয়া কাম্য নয়। পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপে সন্তান জীবনহারা হোক কাম্য নয়। বৃদ্ধ মা-বাবা ঘর ছাড়া হোক কাম্য নয়। পরিবার হোক যৌথ আর যৌথ পরিবার হোক স্বর্গ। রাজনীতি হোক কল্যাণময়।

এলেবেলে -৩৮

592

অনেকের ধারণা করোনা ভ্যাকসিন তৈরির মেধাস্বত্ব তুলে দিলে যে কোন দেশে টীকা তৈরি করা সম্ভব। আসলে এই ধারনাটা ভুল। পারমাণবিক বোমা তৈরির সুত্র জানলে যেমন পারমাণবিক বোমা তৈরি করা যায় না।

টীকা তৈরির জন্য অবকাঠামো, টীকা তৈরির উপকরণ, দক্ষ জনশক্তি সহ আরো অনেক কিছু প্রয়োজন।

আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে করোনার টীকা তৈরির অবকাঠামো নেই বললেই চলে। করোনার টীকা তৈরি করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। ফাইজার এর টীকা তৈরির জন্য কমপক্ষে ষাট দিন সময় প্রয়োজন। টীকার গুনগত মান সংরক্ষণও জরুরী।

করোনা ভাইরাস এর টীকা তৈরির মেধাস্বত্ব তুলে দিলে রাশিয়া, চীনের মতো দেশগুলো ফাইজার বা আষ্ট্রাজেনিকার মতো কোম্পানির টীকা তৈরিতে আগ্রহী হবে। চীন রাশিয়ার করোনা টীকার প্রতি বেশিরভাগ মানুষেরই নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। করোনার টীকার মেধাস্বত্ব তুলে দিলে ঔষধ কোম্পানি গুলো কোন নতুন ধরনের টীকা বা ঔষধ আবিস্কারের উৎসাহ হারাবে। টীকা বা ঔষধ তৈরির গবেষণায় প্রচুর আর্থিক বিনিয়োগ করতে হয় তাদের।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা (6,7,8

20210

মিলিয়ে দেখবেন, কথা সত্য হয় কিনা!
@ নমুনা টপিকসঃ
# শ্রমিক হত্যা।
# গরিব ও লকডাউন।
# টোকাই মারুফ।
# ঝর্ণা, মুনিয়া, মিথিলা ও মিডিয়া।

যেখানে বিল গেটসের সন্তানেরা নানা ধরনের মানব সেবায় ব্যস্ত, সেখানে আমাদের বসুন্ধরার সন্তানেরা নানা ধরনের অপকর্ম আর খুন খারাবি নিয়ে ব্যস্ত।

যেখানে আম্বানীর সন্তানেরা নিজেই গাড়ি চালিয়ে অফিসে যায়, সেখানে আমাদের এক এমপি পুত্র রাস্তায় জ্যাম দেখে রাগে পাখির মত গুলি করে ২ জন মানুষকে হত্যা করে।

যেখানে ব্রিটিশ রাজপুত্ররা সেনাবাহিনীতে ট্রেনিং নেয় দেশ সেবার জন্য, সেখানে হাজির পুত্র ইরফান থাপ্পর দিয়ে সেনাসদস্যের দাঁত ফেলে দেয়। আবার অল্প দিনে জেল হতে বের হয়ে মাল্যভূষিত হয়।

যেখানে টাটা বিড়লার ব্যাংক থেকে এক রুপিও আত্মসাৎ করার নজির নাই, সেখানে সিকদার ব্রাদার্সরা ব্যাংক লোনের জন্য ব্যাংকের এমডিকে গুলি করতেও দ্বিধা করে না।

যেখানে ইস্পাহানি বাওয়ানী পরিবার তাদের নিজস্ব জায়গায় দেশে একটার পর একটা স্কুল হাসপাতাল নির্মাণ করে যাচ্ছে, সেখানে যমুনা গ্রুপ হাজার হাজার একর জমি দখল করে যাচ্ছে, দেখার কেউ নাই।

যেখানে রতন টাটা বলে করোনায় দেশের প্রয়োজনে সে তাঁর সমস্ত সম্পদ দিয়ে দিতেও রাজি, সেখানে আমাদের শিল্পপতিরা মদ ও রক্ষিতা নিয়ে আমোদ ফুর্তিতে মত্ত।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে শাসন-শোষণ করার জন্য উঠে আসছে এক নিষ্ঠুর, ভয়ংকর, পিশাচ টাইপের ধনী প্রজন্ম। ওদের বাবারা তো আমাদের অন্তত বাঁচিয়ে রেখেছে, কিন্তু তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের মানুষগুলা আমাদের সন্তানদের জাস্ট পিষে মারবে। মিলিয়ে দেখবেন, কথা সত্য হয় কিনা।

নোয়াখালি নিয়ে চুপ, হেফাজতকে টাইট এবং বাঁশ, এই হলো বাংলাদেশ।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (৭)

টুকরো টুকরো স্মৃতিতে অতীত ও কয়েকজন স্যারঃ
কেমন আছেন হাজ্বি সাহেব। এই কথাটা বলেই আমার বাবাকে জড়িয়ে ধরতেন লেমুয়া বাজারে। আমি সালাম দিয়ে পাশে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতাম আর দেখতাম উনাদের কথায় একে অপরকে শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং মার্জিত ভাব। উনি আমার বাবার সিনিয়র তবে লেমুয়া স্কুলের ছাত্র দুইজনে। মীর স্যার করৈয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। যার ব্যক্তিত্ব আগুনের মত, এখনকার এই ছাইপাঁশ মাতব্বরদের জন্য উনার ব্যক্তিত্বটাই যথেষ্ট ছিলো। স্কুল বন্ধ হলেই আমি বাড়ি চলে যেতাম আর আমার বাবা প্রতি শুক্রবার চিটাং হতে আসতেন এবং স্যারও প্রায় শুক্রবার বাড়ি যেতেন। এই কারণে প্রায় সময় দেখা হতো বাজারে, কিন্তু স্যার যখন বাবাকে হাজ্বি সাহেব ডাকতেন তখন মনে খটকা লাগতো। উনি হজ্ব করেন নাই আর কেউ এটা ডাকেও না, তাহলে মীর স্যার কেনো ডাকে। তবে তারচেয়েও ভয়ে থাকতাম আমার পড়াশোনার কথা জিজ্ঞাসা করবে, তাই চুপ থাকা ।

মীর স্যারের সততা, প্রজ্ঞা, মেধা, মহানুভবতা এবং দক্ষতা আমার চেয়ে জ্ঞানী গুণী লোকেরা বলবে। উনার বিচার বিশ্লেষণ করতে গেলে এই মহান লোকের মানবিকতার সাগরে ডুবতে হবে আমাকে। শুধু এইটুকু বলবো মীর স্যার নিজেই একটা করৈয়া স্কুল। আমি, আমার স্ত্রী এবং বাবা ফেনী ট্রাংক রোড়ে বড় মসজিদের সামনে দাড়ানো, স্যার আসরের নামাজ পড়ে মসজিদ হতে বের হলেন আমি দেখেই সালাম করতে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কারণ অনেক বছর পরে দেখা। সেই আগের মত বাবাকে হাজ্বি সাহেব ডাকতেছেন। সেই আগের মত শ্রদ্ধা ভালোবাসা ।

আমি স্যারকে কোথাও বসতে বললাম উনি বসলো না। আমি স্কুলের কথা জানতে চাইলাম, উনার কথা জানতে চাইলাম, বাবাকে বলেন হজ্ব করতে যেতে উনি যাচ্ছে না । স্কুলের কথা বলায় প্রদীপটা টপ করে নিভে গেলো। আমি কথা পাল্টাতে চাইলাম তারপরও উনি বলেন সাজেদুল্ল্যা স্যার দায়িত্বে আছেন। তবে স্বাধীনতা নাই। বুঝতে আর বাকি রইলো না প্রিয় স্কুল এখন লংষ্কা আর শাসন করে রাবণ। তবে রাবণ সীতার রূপে মুগ্ধ হয়ে অপহরণ করলেও ইজ্জতে হাত দেয় নাই। সব আমলে রাজনীতিক রাবণেরা মসজিদ, মন্দির, স্কুল ,কলেজ মাদ্রাসার ইজ্জত নিলামে তুলে আর এতে কিছু শিক্ষক নামের মানুষ সহায়তা করে।

বাড়ি গিয়ে ধরলাম বাবাকে মীর স্যার আপনাকে হাজ্বি কেনো ডাকে। উনি ফিরে গেলেন দেশ স্বাধীনের আগে স্কুল জীবনে। স্মৃতি মানুষকে কাতর করে, আবেগী করে। লেমুয়া স্কুলে পড়ার সময় নাটক করেছেন আর সেই নাটকে অভিনয়ে চরিত্রের নাম হাজ্বি ছিলো। তাই স্যার আমার বাবার সিনিয়র হলেও নাম ধরে ডাকে না।

টি ইসলাম হতে বাসে উঠে দেখি ভিতরে গোপাল স্যার বসা। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। ডেকে পাশে বসতে বললেন। আমি নানার বাড়ি হতে ফেনী যাচ্ছি,তখন ফেনী কলেজের ছাত্র আমি। স্যার আমার পুরো খবর নিবে, উপদেশ দিবে ভালো কেমন করে লাগবে! তবে মনে মনে খুশি আমি ভাড়া স্যার দিবে বলে। কথায় কথায় বললেন এক বেয়াদব ছাত্র দেলোয়ার স্যারের সাইকেল ভেঙ্গে ফেলেছে। দেলোয়ার স্যার খুব অপমানবোধ করেছে। এমন হলে শিক্ষকতা ছেড়ে দিতে হবে। আমি বললাম আপনার সাথে কেউ এমন করবে না, স্কুলের সব ছেলে নিয়ে গিয়ে ওই ছেলেকে ধরে নিয়ে আসা উচিত, তাকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। স্যার হাসলেন কিছু বললেন না। বেয়াদব আগেও ছিলো এখনো আছে তবে পার্থক্য এখন বেয়াদবি রাজনৈতিককরণ করা হয়েছে যার কারণে বেয়াদব কালো চমশা পরে বাপও চিনে না।

তুমি এত আগে আগে হাটছো কেনো। আমি তাকে বলি।
তুমি আরো পিছনে থাকো তাই ভালো, মেয়েটা বলে।
আমি দশ/বার হাত পিছনে আর কত পিছনে থাকবো।
কারণ এই সময় নেপাল স্যার স্কুল হতে বাসায় যায়। নেপাল স্যার তখন ছাগলনাইয়া পাইলট হাই স্কুলের শিক্ষিক। স্যারের বাসা মেয়েটার বাসার পাশে আবার স্যার আমার বাবার সহপাঠী এবং এক গ্রামের আমরা । ভালো করে চিনে দুইজনকে এবং একসাথে দেখলে বেকায়দায় পড়তে হবে। একদিন ঠিক দুইজনকে রাস্তায় পেয়ে গেলো স্যার। দুরে দুরে দেখে কিছু বললো না শুধু বললো কেনো এসেছি ছাগলনাইয়া।

আমি বিয়ের দাওয়াত দিতে গিয়ে দেখি স্যার প্রধান শিক্ষক। দাওয়াত দিলাম পরিবারের সবাইকে। সেই পুরাতন রাস্তায় হাটতে ৯২/৯৪ সালের স্মৃতি এসে পা জড়িয়ে যাচ্ছে। জানি না মেয়েটা তার স্বামীর হাত ধরে এখন হাটে কিনা। এই কয়েক বছর আগেও নেপাল স্যারের সাথে দেখা করতে গিয়েছি উনি বাঁশপাড়া হাসপাতালের (নাম মনে নেই) দায়িত্বে আছেন । আমি সাথে নিয়ে চা পান করতে চাইলাম। হোটেলে গেলেন কিন্তু কিছুই খেলেন না কারণ উনার ডায়াবেটিস, আমার বিল দিয়ে দিলেন। একটা কার্ড দিয়ে বললেন তোর বাবাকে ফোন দিতে বলিস। এখন আমারও ডায়াবেটিস। মীর স্যার শেষ বয়সে, গোপাল স্যার নেই, আমার বাবা শেষ বয়সে। এইসব স্যারের কথা ভুলা যাবে না জীবনের শেষ অবদি। শিক্ষালয়ও আজ শেষ বয়সে ছাত্র, শিক্ষক এবং পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে। দেখে হৃদয় রক্তক্ষরণ হয় তবে কিছু বলতে মানা কারণ আমি আপনি এবং আমরা দয়াহীন, বিবেকহীন ।

মুহুরীগঞ্জ হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোশারফ স্যার আমার নানা হয় বলে মজা করেই কথা বলতেন। মুহুরীগঞ্জ ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল কলেজে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়ে ছিলো উনাকে। আমার স্ত্রী দুই বছর কলেজের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু কলেজ টিকে নাই কারণ স্থানীয় রাজনীতি। স্যারই কলেজ বন্ধ করে দিতে বলেন। কতো কষ্ট, কতো টাকা সব জলে গেলো। অতীত জীবনে স্যারের উপদেশ এই মেয়ের চেয়েও আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করাবো ভুলতে পারিনি। ভুলতে পারবো না মুহুরীগঞ্জ কলেজে আমার স্ত্রীকে অনেক সহযোগিতা। কিন্তু এই সমাজে ভালো কাজ মূল্যহীন।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (৮)

ফেলে আসা দিনের কিছু গল্প কিছু স্মৃতি।
বছরে একবার খেলাধুলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্কুলের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। নবম শ্রেণীতে উঠে নাটকে অংশ নিয়ে নিজেকে অভিনয়ের পাঠশালায় হাজির করি। খেলাধুলায় বরাবর আমার অনীহা তাই কোন দিন তার ধারেকাছে যাওয়া হয়নি।এই জন্যই মনে হয় নাটকের পিছনেই পড়ে ছিলাম। ফেনী থিয়াটার এবং লেমুয়ার নাটক এখনো আমাকে স্বপ্নে অভিনেতা করে তুলে। আগে যাত্রা, পালাগান, নাটক শীতকালে মানুষকে বিনোদন দিতো সাথে সাথে মানুষের মনকে নরম করতো, প্রশস্ত করতো ও মানবিক করতো। এখন রাজনীতি রাজনীতি নাটকে মানুষ মনকে শক্ত, লোভী ও লিপ্সু করার দৌড়ে যুবসমাজকে ব্যবহারে লিপ্ত। আর যুবসমাজ বাইক, মোবাইল এবং ক্ষমতার কাছে নিজেকে সপে দিয়ে পুতুল হয়ে যেমন খুশি তেমন সাজে ব্যস্ত।

নাটকের রিহার্সাল চলার সময় কখনো কখনো এক মানবীর দুইটা চোখ জানালার ওপাশ হতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতো। এতে আমার বুকে কাঁপন হতো আমি বুকে হাত দিয়ে হৃদয় খুজতে চেষ্টা করতাম। সাদা সাদা চোখের মিষ্টি মিষ্টি নজরে আমার হৃদয় বাতসে উঠতো আমি তখন মুকুটহীন সম্রাট হয়ে নাটকের ডায়লগ বলা শুরু করতাম। “বাংলা বিহার উড়িয়্যার শেষ অধিপতি নবাব———”। সেই দুই চোখের যাদুর টানে আজও আমি শুনি “আকাশের ওই মিটিমটি তারার সাথে কইবো কথা নাইবা তুমি এলে।” আবার কখনো কখনো শুনি “ ইন আখোকি মাস্তি মে” তারপর ইউটিউবে খুজি মোগল-লে আজম কিংবা পাকিজার নরম নরম সুরের ঠান্ডা ঠান্ডা গান। লাল লাল কৃষ্ণচূড়ার ঝরে যাওয়া কলির জন্য আমি গাছ তলায় নীরব পথিক। লোকে বলে ঝরে যাওয়া ফুলে মালা হয় না অথচ ঝরে যাওয়া ফুলেই সুঘ্রাণ বেশী। যদি কখনো পেয়ে যাই তাহলে ঘন কালো রেশমী চুলের খোঁপায় গুজে দিবো বকুল ফুলটা।

দেয়ালে দেয়ালে, সিড়িঁতে, উপরে-নিচে সব জায়গায় একটা স্লোগান “নাটক চাই নাটক চাই”। কিন্তু কারা লিখছে আর তারা কিভাবে জানলো এবার নাটক হবে না বুঝতে পারলাম না অথচ আমি তখন দশম শ্রেণীতে। রোজার পর ২৬শে মার্চ এখনো অনেক দেরী স্বাধীনতা দিবসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে খেলাধূলার পুরষ্কার বিতরণ হবে, নাটক হবে, যা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এবার স্যারেরা চুপ থাকায় সরব ছাত্র সমাজ, নাটক চাই নিয়ে। হাজ্বি স্যার, হুজুর স্যার নাটক করা নিয়ে কখনো প্রকাশ্য বিরোধিতা করতো না। খায়ের মোল্লা স্যার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে বলতেন না। তবে সাজেদুল্লা স্যার খুবই উদ্যমী ছিলেন কারণ উনি খুবই সাংস্কৃতিক মনের মানুষ তাই প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের সাথে মিলে সমস্ত সাংস্কৃতিক কাজ সমাধানে সহযোগিতা করতেন।

নাটক হবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষকমণ্ডলী। শুনে সমস্ত স্কুলে শিক্ষার্থীদের ভিতর আনন্দ আনন্দ ভাব। ৯০ সালে ২৬ শে মার্চ উপলক্ষে নাটক হবে। একদিন কয়েক ঘন্টা হওয়ার পরে সব ছাত্রছাত্রীর ডাক পড়লো উত্তর পাশে দালানের দ্বিতীয় তলায়। প্রাইমারী স্কুলের শাহ আলাম স্যার যথারীতি পরিচালনার দায়িত্বে। নাটকের নাম “দুই ভাই”। সব স্যার মঞ্চে বসেছেন অভিনয়ের জন্য পার্থী নির্বাচন করবে তাই। আমি নিলাম গ্রাম্য মাতব্বের বখাটে ছেলের (তারা) অভিনয়। পার্থী নির্বাচন শেষ কিন্তু মাতব্বর কে হবেন তা ঠিক হলো না। তখন স্কুলে নতুন একজন স্যার সদ্য যোগ দিয়েছেন, রফিক আহম্মদ সেলিম। পরে সিদ্ধান্ত হলো উনিই হবেন গ্রাম মাতব্বর। শুরু হলো রিয়ার্সেল শাহ আলাম স্যারকে কখনো ভোলা স্যার কখনো সাজেদুল্লা স্যার কখনো শ্রীধাম স্যার সহযোগিতা করেন। মাতব্বরের অভিনয় দাপটে আমি অসহায়, ডায়লগে আব্বাজান বলতে হয় অনেক বার। সিংহনগরের সেলিম স্যার এখনো আমাকে ছেলের মত আদর করেন। কিন্ত তখন প্রথম প্রথম আব্বাজান বলতে খুব লজ্জা লাগতো।

আগের নাটকের রিহার্সালের সময় সাদা চোখের পরির যে নজর লেগে ছিলো তা যেন আরো প্রকট হয়ে আমাকে আড়ষ্ট করেছে। আমি এখন শমশের গাজীর রাজ্য দখলে ব্যাকুল তাই অভিনয় আমার কাছে মৃত কিৎসা। সবার সাহসী এবং হৃদয়গ্রাহী অভিনয়তে আমি পদ্মফুলের শিশির মাত্র। গ্রাম্য মাতব্বরের বাচনভঙ্গি, অভিনয়, শব্দ উচ্চারণে আমি তাঁর ছেলে মিলাতে পারি না। অথচ ওই মানবীর জন্য ঘোড়ায় চড়ে চাঁদের ওপারে যেতে মরিয়া আমি।

নেওয়াজ আলির অসীমিত সত্য কথা। (৯)

পরিবার, দায়বদ্ধতা ও অন্যান্য।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে এক রিক্সাচালক বাবা তার মেয়েকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে–। ছিঃ কেমন বিশ্রী কথা ও কেমন বিশ্রী বাবা। নিজের মেয়ে তার লালসার স্বীকার। পেপার পত্রিকায় প্রায় দেখি এমন বাবাদের খবর, চাচাদের খবর, মামাদের খবর কিংবা ভাইদের খবর। কিন্তু কেনো এই বিকৃত পুরুষত্বের স্বীকার মেয়েরা। এখন হতে ভাবতে হবে সমাজ বিজ্ঞানীদের, না হয় এইটি মহামারী আকার ধারণ করবে এবং সমাজে ভদ্রতা নষ্ট হবে, সভ্যতা নষ্ট হবে, সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়বে। একটা মানুষের জন্য ঘরটাই সবচেয়ে নিরাপদ অথচ সেই ঘরে বাবা, চাচা, ভাইরূপি জানোয়ারদের বাস। তাহলে একটা মেয়ে কাকে বিশ্বাস করবে, কোথায় নিরাপদ থাকবে। কথায় কথায় আমরা বলি পৃথিবীতে বহু খারাপ লোক আছে কিন্তু একটা খারাপ বাবাও নাই। কথাটা আজ মিথ্যায় পরিণত হতে চলেছে। তাই মেয়ের মা’দেরকে সচেতন হতে হবে, বিচক্ষণ হতে হবে। মেয়ের সাথে বন্ধুভাব রাখতে হবে যাতে কেউ কিছু বললে কিংবা করলে মাকে বলতে দ্বিধা না করে। প্রত্যেককে কয়েকটি বিষয় মেনে এবং খারাপ বিষয় পরিহার করে চলতে হবে ।

ধর্মীয় ও পারিবারিক শিক্ষাঃ
সাধারণত পুরুষ হতে মেয়েরা বেশী ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। তাই মেয়েকেও ধর্ম মেনে চলতে বাধ্য করে। কিন্তু অনেক বাবাই ধর্ম হতে অনেকটা দুরে থাকে কারণ পরিবারের ভরণপোষণের জন্য রোজগারে ব্যস্ত থাকার অজুহাত। তাই প্রত্যক স্ত্রীর উচিত উনার স্বামীকেও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করা। যাতে স্বামীর মনে আল্লাহর ভয় থাকে, সামাজের ভয় থাকে। মেয়েদেরকে আবার শাসনের নামে মনে এমন ভয় দেওয়া যাবে না যাতে সে সহজ কথাও বলতে ভয় পায়। নিজেরা সত্য কথা বলতে হবে এবং সন্তানদের সত্য কথা বলতে বাধ্য করতে হবে। যৌথ পরিবার হলে সন্তানকে পরিবারের সবার সাথে সত্য-সুন্দর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণে বাধ্য করতে হবে। আশেপাশে কারো আচরণ কিংবা নজর কুরুচিকর হলে সন্তানদের তাদের হতে দুরে রাখতে হবে।

রাজনীতি ও মাদকঃ
আমার মনে হয় সমাজের এবং পরিবারের সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণটা এখন রাজনীতি ও মাদক। ইয়াবা এখন গ্রাম মহল্লায় অতি সহজে পাওয়া যায় আর এর যোগান দাতা রাজনৈতিক ক্ষমতাশালী। সন্তান দশম শ্রেণী কিংবা দ্বাদশ শ্রেণীতে উঠলে তার দিকে সতর্ক নজর দেওয়া দরকার। কারণ তখন তাদের কাছে সব কিছু রঙ্গীন রঙ্গীন মনে হয়। মোবাইল, বাইক, একা রুম এবং ক্ষমতা তাদের কাছে আকর্ষণীয় লাগে। বন্ধুদের সাথে ঘুরলে রাজনীতি করতে হয় আর রাজনীতি করলে মোবাইল ও বাইক লাগবেই। এইসব থাকলে রাজনীতি তাকে ক্ষমতাবান করবেই আর ক্ষমতা থাকলে টাকা আসবেই টাকা আসলে মাদক গ্রহণ করবেই। মেয়েদের মনে রাখা উচিত ছেলেদের বেশীর ভাগ প্রতারক হয়। সেটা ভালোবাসার, সেটা ক্ষমতার, সেটা কথার, সেটা অন্যান্যও বটে। তাই মুখে মিষ্টি অন্তরে অনিষ্ট অতএব সাবধান।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমঃ
মাঝে মাঝেে সন্তানদের মোবাইল চেক করে দেখা উচিত। কারণ মদ, জুয়া, বাটপারি, চিটিংবাজি সব এখন মোবাইলে হয়। একা রুমে কী করে দেখা উচিত, সন্দেহ হলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ফেসবুক, টুইটার নেশাগ্রস্ত হলে দ্রুত পরিহার করতে হবে কারণ এইসব মাদক হতেও ভয়ংকর। কোনোমতেই মোবাইল গেইম খেলতে দেওয়া উচিত নয়। গেইমে আসক্ত হলে কঠিন শাসনের আওতায় আনতে হবে। টিকটক এবং লাইকি কোনোমতেই করতে দেওয়া যাবে না। শত শত নারী পাচার হয়েছে এবং সংসার হারা হয়েছে এই টিকটক এবং লাইকির কারণে। যেইসব নারী এইসবে অভ্যস্ত ওরা বিকারগ্রস্ত মানুষ। ভারতের ব্যাঙ্গালরে এক নারীর উলঙ্গ ছবি ভাইরাল এই টিকটকের কারণে। বাংলাদেশ হতে ভারত ও মধ্যপাচ্যে শত শত নারী যৌন ব্যবসায় বাধ্য হয়েছে এই টিকটকের নেশায় পড়ে। সরকারকে অচিরে এইসব বন্ধ করা উচিত।

পরিশেষে বলবো সবাইর জীবন সুন্দর হোক। মেয়েরা নিরাপদ হোক ঘরে, হাটে, বাজারে ও শহরে। অতিরিক্ত ভালোবাসার কারণে সন্তান বখাটে হওয়া কাম্য নয়। পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপে সন্তান জীবনহারা হোক কাম্য নয়। বৃদ্ধ মা-বাবা ঘর ছাড়া হোক কাম্য নয়। পরিবার হোক যৌথ আর যৌথ পরিবার হোক স্বর্গ। রাজনীতি হোক কল্যাণময়।

নিজের মত বাঁচা

কারো কথায় কান না দিয়ে নিজের মত বাঁচা উচিত। কিন্তু নিজের মত বাঁচা অত সোজা না।
নিজের মত যা মনে হবে তাই করব, যা বলতে ইচ্ছে করবে তাই বলব, যা দেখতে ইচ্ছে হবে তাই দেখব, যা শুনতে ইচ্ছে হবে তাই শুনব, যা করতে ইচ্ছে হবে তাই করব তা কিন্তু নয়।
মানুষ মাত্রেই সমাজ বদ্ধ জীব। সমাজের সঙ্গে মানিয়ে বলা দেখা শোনা বা করা উচিত। তবে সমাজের মধ্যে অনেক সংস্কার কুসংস্কার বাসা বেঁধে বসে আছে। সে সব কিছুকে পরোয়া না করে বাঁচা যায়।
তবে তার জন্য একটা পর্যায় পর্যন্ত আপনাকে যেতে হবে। নিজের মধ্যে সেই পর্যায় তৈরি করতে হবে। শিক্ষা দীক্ষা জ্ঞান বোধ বুদ্ধি ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে নিজেকে উন্নিত করতে হয়। তারপর আপনি বলতেই পারেন ‘আমি আমার মত চলব।’
না হলে কারো কথা না শুনে নিজের মত চলতে গিয়ে সেই যদি পিছলে পড়েন তখন কিন্তু আপনার পাশে কেউ থাকবে না।
কেন না মানুষের জীবন এমনই প্রতি পদে পদে নিজে পিছলে পড়ে কিংবা পেছন থেকে কেউ আপনাকে পিছলের ফেলে দিতে পারে। সে সব কিন্তু পার করার এবিলিটি যদি আপনি নিজের মধ্যে প্রস্তুত করতে পারেন তাহলে কারো কথায় কান না দিয়ে আপনি আপনার মত চলতেই পারে।
কিন্তু আমাদের সমাজে বহু মানুষকে দেখেছি শুধু সমাজকে লণ্ডভণ্ড করার জন্য, সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্য, সামগ্রিক বাদ দিয়ে নিজেকে নিজে উপভোগ করার জন্য নিজের মত বাঁচে।
তাই নিজের মত বাঁচা বর্তমানে অনেকটা উৎশৃঙ্খল জীবন যাপনের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। কিছুটি না জেনে না বুঝে নিজের মত বাঁচতে গিয়ে নিজের এবং সমাজের পতন ডেকে আনছে। লোকের কথায় কান দেওয়া যেমন উচিত নয় তেমনই চোখ কান খোলা রেখে জীবন যাত্রায় এগিয়ে যাওয়া উচিত।
তুমি বলছ তাই মানব না, লোকে চলছে তাই চলব না অতএব আমি নিজের মত চলব তাহলে তা এ তরফা জীবন যাত্রায় একক চলা হয়ে যায়।

নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যকে নিরাপদ রাখুন

15914

কোভিড পরীক্ষার দীর্ঘ লাইন। সামাজিক দূরত্ব নামক নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়ানোর চেষ্টায় লাইন আরও দীর্ঘ। গরমের কারণে অনেকেই অল্প সময়ের জন্য মাস্ক নাকের নিচে নামিয়ে শ্বাস নিচ্ছেন, আবার মাস্ক ঠিকমত পরছেন। এই আবহাওয়ায় লাইনে দাঁড়ানো বয়স্ক এবং শিশুদের কষ্ট অবর্ণনীয়। এরই মাঝে দুজন যুবক এসে লাইনের মধ্যে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছে। একজনকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “করোনা হলে কি করতে হয়?” বাঙালি এসব ক্ষেত্রে সাহায্যে দ্বিধা করে না, তাদের জানালো হলো আগে পরীক্ষা করতে হবে, তারপর চিকিৎসা। পরীক্ষার জন্য কিভাবে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে সেটাও জানানো হলো। কিন্তু আরও দুই তিনজনকে তারা জিজ্ঞেস করলো, “করোনা হলে কি করতে হয়?” তারাও রেজিস্ট্রেশনের কথা বললো। এসব জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে ওই দুই যুবক লাইন ঠেলে কাউন্টারের সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– করোনা হইলে কি করতে হইবো?
– আগে টেস্ট করাতে হবে।
– টেস্ট করছি, পজেটিভ আসছে।

কাউন্টার থেকে জানতে চাওয়া হলো,
– রোগী কই?

যুবকদের একজন উত্তর দিলো,
– আমরা দুইজনই রোগী। করোনা টেস্টে পজিটিভ আসছে।

কাউন্টার থেকে তিনজন চেঁচিয়ে উঠলেন,
– আপনাদের মাস্ক কই?
– দমবন্ধ লাগে, পরি নাই।
– আপনারা বাইরে ক্যান?
– বাড়িতে ভাল্লাগে না।

উপরের ঘটনা কল্পনা নয়, শতভাগ বাস্তব। সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে সক্ষমতা থাকলে হয়তো তাদের ট্রেস করে সবাইকে পরীক্ষা করা হত। কিন্তু চিকিৎসকদের ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। করোনা পরীক্ষায় পজেটিভ এসেছে এমন লোক বাইরে ঘুরে বেড়ানোর ঘটনা বিরল নয়, আমাদের চারপাশেই আছে। আবার কে করোনা ভাইরাস বহন করছে আর কে করছেনা সেটাও পরীক্ষার আগে বোঝা সম্ভব নয়। তাই যারা লাইনে দাঁড়াচ্ছেন তারা কষ্ট হলেও নিজের নিরাপত্তার স্বার্থেই মাস্কটা খুলবেন না, আর যারা কোভিড পজেটিভ কিন্তু খুব অসুস্থ হননি তাদের ঘরের ভিতর থাকতে ভালো না লাগলেও ঘরে থাকুন। জনে জনে করোনা ভাইরাস দান করায় কোনো কৃতিত্ব নেই।

জনস্বার্থে- নিজে নিরাপদ থাকুন, অন্যকে নিরাপদ রাখুন।

করোনায় আক্রান্ত প্রবাসী ছেলের মা‘কে চিঠি

3993

প্রিয় আম্মা,
কেমন আছেন আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে। মোবাইলটা হাতে থাকলে ফোন করতে পারতাম কিন্তু হাসপাতাল এর নিয়ম সকাল এবং বিকাল এই দুই সময় মোবাইল রোগীকে দেওয়ার, শৃঙ্খলিত জীবনের এইটিই নিয়ম। একটু একটু কাশি আর জ্বর নিয়ে বাসা ছেড়ে আসলাম আজ ১৫ দিন, প্রথম প্রথম চলার শক্তি ছিলো, মনেরও শক্তি ছিলো এখন কাশি আর জ্বর বাড়ার সাথে সাথে চলার শক্তি আর কথা বলার শক্তিও লোপ পাচ্ছে। নার্স ও ডাক্তার নিয়ম করে আসে দেখে ঔষধ দেয় তা খেয়ে আমি যেন আরো কবরের কাছাকাছি যাচ্ছি। কী যেন এক অদৃশ্য শক্তি আমাকে মাটির নিচে বন্ধ ঘরে আদর করে ডাকছে। সাদা সাদা পোশাকের চোখ মুখ বন্ধ করা ডাক্তার নার্সকে সেই কবরের দূত মনে হয়। তখন আরো বেশী মনে পড়ে মায়ের মুখ, কচি কচি দুই ছেলে আর আপনার বউমার নিষ্পাপ মুখটা। আমি শিশুকালে পিতৃহীন হয়েছি এখন মনে হয় আমার দুই ছেলেও তাই হবে। এগার বছর আগে ঘর ছেড়ে, দেশ ছেড়ে প্রবাসী হয়ে মুক্ত কারাগারে বন্দী হই।

দেশে যাবো যাবো বলেও কোনো এক অদৃশ্য পিছুটানে যেতে পারিনি। আপনি কী এখন বয়স্ক নারী দেখতে কেমন মা আপনার মুখটি, ছেলে দুইটাও বড় হয়েছে তাদের মা ভালোবাসার অপ্রাপ্তিতে বিরক্ত হতে হতে এখন কথাও বলা ছেড়েছে। মারে, কষ্টটা দিন দিন আরো যেন বাড়ছে সেই কষ্ট সহ্য হয় না মা, তাই মনে হয় শরীর হতে দম পাখি উঠে গেলেই বাঁচি। এইটি কেমন হাসপাতাল বুঝে আসে না মাছি মশা তো দূরের কথা এক জটলা হাওয়াও আসার পথ নাই, যেন এটা আরেক কবর দুনিয়ার উপর। এখন হতে আর কথা বলার সুযোগ হবে না, কী করে বলবো আমি তো শক্তিই পাচ্ছি না। আজ সকালে কষ্ট করে উঠে দাড়ালাম বড্ড ইচ্ছে করলো আকাশ দেখতে। সাদা পর্দা সরাতে গিয়ে আমার গায়ে জড়িয়ে যায় পর্দাটা, দেখলাম অবিকল একটা লাশ দাড়িয়ে আছে আলো বাতাস পাওয়া এই স্বার্থময় দুনিয়ায়।

আকাশে কোথাও একটু মেঘ নাই কোথাও একটা উড়ন্ত পাখি নাই জমাট বাঁধা বরফের মত শীতল পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে খুব মন চায় মা। এখন আমার দালান বাড়ি আছে, চাষ করার জমি আছে, বসে বসে খাওয়ার জন্য ব্যাংকে টাকা আছে। অথচ প্রবাস নামক এই যাযাবর জীবনে শেষ মুহূর্তে এসে করোনা নামক এক শক্তি বলছে চলো যাই মাটির ঘরে। মাগো মরণকে যদিও খুব ভয় লাগে তারপরও মরতে খুব ইচ্ছে করে তোমার কোলে। আমার এই রুমটায় এখনো কোন রোগী সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরতে দেখি নাই অথচ রোজ মরে দুই একজন। এই মরণ দেখে দেখে বুকটা ভেঙ্গে যায় ভয়ে, না জানি কখন আবার আমার ডাক আসে। “ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, রইবো না আর বেশী দিন তোদের মাজারে।” অতিদূরে রোগীটা আফ্রিকার কোন দেশের হবে হয়তো, রোজ কান্না করে বুক ভাসায় তার বুক-ফাটা কান্দনে আমিও কান্নায় চিৎকার করে তোমায় ডাকি মা-জননী ।

(প্রথম কিস্তি)
উৎসর্গঃ করোনায় মৃত প্রবাসী এনামকে।

কর্তৃপক্ষের করোনা চিন্তা ও আদু ভাই তৈরি

2338

দেশের সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলতে পারবে, অফিস-আদালত, ব্যাংক, হাট-বাজার ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি…
কেবল মাত্র বন্ধ থাকবে শিক্ষাকার্যক্রম কারণ এক গবেষণায় দেখা গেছে শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হলেই করোনা ভাইরাস ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে এবং ইহা মহামারি আকার ধারণ করবে। আর তাই আমাদের দেশের শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা কর্তৃপক্ষ এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর তা হলো ঢা.বি‘র অধিভুক্ত সাত কলেজ এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান সকল পরীক্ষা পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে অন্য স্তরের শিক্ষাকার্যক্রমও যথারীতি এক বছর ধরে টানা বন্ধ থাকার কথা আপনারাতো জানেনই। উল্লেখ্য যে, কর্তৃপক্ষের ঘুমের সুযোগে অনার্স ৪র্থ বর্ষের প্রথম কিস্তির লিখিত স্থগিত পরীক্ষা কিন্তু ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে শেষ হয়ে গেছে, কর্তৃপক্ষ আবার জেগে উঠায় নতুন এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
.
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এভাবেই সুরক্ষিত থাকবে, ঘরে ঘরে তৈরি হবে শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত আদু ভাইরা, বেকারত্বের উল্লাসে মেতে উঠবে অগনিত তরুণ-যুবক, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে এক অপ্রতিরোধ্য গতিতে, দেশের আগামী প্রজন্মকে নিয়ে কর্তৃপক্ষের এমন সুচিন্তিত তামাশাকে আমি সম্মান জানাই এবং কর্তৃপক্ষকে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা…
.
শুভেচ্ছান্তে
-মাসুদুর রহমান (শাওন)
২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের একজন প্রবীণ ছাত্র, অনার্স ৪র্থ বর্ষের ভাইভা পরীক্ষার জন্য লটকে যাওয়া একজন সৌভাগ্যবান আদু ভাই…
২৩/০২/২০২১

করোনা কালের ইতিহাস

download-1-30

২০১৯ সালের শেষদিকে প্রাণঘাতী নভেল করোনা ভাইরাস যখন গণচীনে আবির্ভূত হয়েছিল, তখনো এ-দেশের কোটি মানুষের মতো আমিও ছিলাম নির্ভয়ে। ভয়টা বেড়ে গিয়েছিল, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে। সে-সময় নিজের সহধর্মিণী জ্বর-সর্দি- কাশিতে ভুগতে ছিল। এই ডাক্তার, সেই ডাক্তার, এটা-ওটা করতে করতে কেটে গেলো, দিনেক ৭ দিনের মতো। তারপরও যখন সহধর্মিণীর শরীরের জ্বর-সর্দি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলাম না, তখন আমি রীতিমতো আমার সহধর্মিণীর আশা ছেড়ে দিয়ে নীরবে কাঁদতে লাগলাম। কারণ, সে-সময় গণচীনের করোনা ভাইরাস গণচীন থেকে উড়তে- উড়তে পৃথিবীর অনেক দেশে বিরাজ করছিল। কিন্তু আমাদের দেশে তখনো করোনা ভাইরাসের আগমনের খবর ছিলো না।

যদিও তখন আমাদের দেশে ঘাতক করোনা ভাইরাসের আগমন ঘটেনি, তবুও সহধর্মিণীর শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে আমার মনে শুধু করোনা ভাইরাসের করুণ সুর বাজতে ছিলো। আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম, হয়তো আমার সহধর্মিণীকে গণচীনের করোনা ভাইরাসে আক্রমণ করেছে। নিজের মনে এইরকম ভাবনা থেকে আমি নিজেও একরকম কাহিল হয়ে পড়লাম। কিন্তু নিজের চেনা-জানা ছাড়া অন্য কারোর সাথে এব্যাপারে কোনও কথা বলতাম না। না বলার কারণ ছিলো করোনা ভাইরাস। মনে মনে ভাবতাম! যদি কারোর কাছে সহধর্মিণীর জ্বর-সর্দির কথা বলি, তাহলে মানুষ মনে করবে আমার সহধর্মিণী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সেই ভয়ে আমি মহল্লার অপরিচিত কারোর কাছেই এ-বিষয়ে কোনও আলাপ করতাম না।

একদিন পরিচিত এক ব্যক্তি আমাকে জিজ্ঞেস করলো, “দাদা, দিদি কেমন আছে?” উত্তরে আমি বললাম, ‘বেশি ভালো না, দাদা।’ আমার কথা শুনে পরিচিত ব্যক্তি জানতে চাইলো, “দিদির কী এমন সমস্যা হয়েছে?” তখন পরিচিত ব্যক্তির কাছে সবকিছু খুলে বললাম। উনি আমাকে উনারই পরিচিত একজন বিজ্ঞ ডাক্তারের ঠিকানা দিলেন এবং খুব তাড়াতাড়ি সেই ডাক্তারের কাছে আমার সহধর্মিণীকে নিয়ে যেতে বললেন। উনার কথা শুনে আমি সেদিন সে-সময়ই ফোনের মাধ্যমে সিরিয়াল লিস্টে নাম লেখালাম। পরদিন বিকালে আমার সহধর্মিণীকে নিয়ে ওই বিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তারের চেম্বারে আরও আরও রুগীদের সাথে কিছুক্ষণ বসে থাকার পরই আমার সহধর্মিণীর নাম ডাক পড়লো। ডাক্তার সাহেব রুগীর মুখে বিস্তারিত শুনে তিনটে পরীক্ষা-সহ কিছু ঔষধ লিখে দিলেন। এক-এক করে পরীক্ষাগুলো করানো হলো। রিপোর্ট বের হবে এর পরদিন।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরুলাম। ঔষধের দোকান থেকে তিনবেলার ঔষধ কিনলাম। বাসায় এসে রাতে এক-এক করে দুই-তিন পদের ঔষধ খাওয়ালাম। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই জিজ্ঞেস করলাম, ‘এখন কেমন লাগছে?’ বলল, “কই, আগের মতনই তো!” কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি গতকালের চেয়ে আমার সহধর্মিণী চেহারা- সুরত একটু ভালো। মনে মনে প্রভুকে ডাকতে লাগলাম! সকালেও এক ডোজ ঔষধ খাওয়ালাম। দুপুরবেলাও খাওয়ালাম। বিকালবেলা আবার সহধর্মিণীকে বিজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে নিয়ে গেলাম। ডাক্তারের দেওয়া শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্টগুলো সংগ্রহ করে ডাক্তারের কাছে গেলাম।

ডাক্তার সাহেব পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে আবার ৭ দিনের ঔষধ লিখে দিয়ে বললো, “এই ঔষধগুলো ঠিকমত সেবন করে ৭দিন পর যেতে। প্রথমবারের ভিজিটের অর্ধেক মূল্য ভিজিট দিয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরুলাম। ৭ দিনের ঔষধ কিনে বাসায় ফিরলাম। রাতে ঔষধ খাওয়াল। পরদিন সকালবেলা দেখি আমার সহধর্মিণীর শারীরিক অবস্থা গত দুইদিনের চেয়ে অনেক ভালো। চলতে থাকলো ঔষধ। আস্তে-আস্তে সহধর্মিণীও সুস্থ হতে লাগলো। ৭ দিন গত না হতেই আবার বিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলাম। বিজ্ঞ চিকিৎসক আবার কিছু ঔষধ লিখে দিলেন। কিছু ১৫ দিনের, কিছু ১ মাসের। ঔষধ কিনে বাসায় আসলাম। দিন যতো গত হতে লাগলো, সহধর্মিণীও সেই আগের অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করলো। কেটে গেলো ফেব্রুয়ারি মাস।

একসময় মার্চ মাসের আগমণ ঘটলো। করোনা ভাইরাস নিয়ে দেশের চারদিকে শোরগোল শুরু হয়ে হলো। মার্চ ২০২০ দেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রুগী সনাক্ত হলো। মার্চের শেষদিকে করোনা ভাইরাসে প্রথম মৃত্যু ঘটলো। সরকার রেডিও, টেলিভিশনে ও জাতীয় পত্রপত্রিকায় করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে দেশের জনগণকে সতর্কতা অবলম্বন করে চলা-ফেরা করতে বললো। পাশাপাশি বিশ্ব রোগ বিশেষজ্ঞ ও দেশের রোগ বিশেষজ্ঞরাও নানারকম পরামর্শ দিতে শুরু করলো। তাতেও যখন করোনা ভাইরাসের উপদ্রব কমানো যাচ্ছিল না, তখনই শুরু হলো লকডাউনের চিন্তা। একসময় সারা দেশই লকডাউনের আওতায় নেওয়া হলো। ঐ লকডাউনের ফলে ধর্মীয় উপসনালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বানিজ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেলো। এমনকি সরকার দূরপাল্লার যানবাহন-সহ লোকাল যাত্রি পরিবহন ও বহির্বিশ্বের সাথে বিমান চলাচলও বন্ধ করে দিলো। মানুষের রুটিরুজির সংগ্রাম একেবারে থেমে গেলো।

তখন একদিকে শুরু হলো গরিব মানুষের হাহাকার ও ক্ষুধার্তের কান্না। অন্যদিকে বাড়তে লাগলো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার। তখন দেশের প্রায় ১৭ কোটি জনগণ হয়ে পড়লো একরকম কর্মহীন ঘরবন্দী। জনগণের মনে বিরাজ করতে লাগলো করোনা ভাইরাসের ভয়! আর রাত পোহালে খাবারের চিন্তা। সাথে ভাইরাসের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো দেশের সর্বত্র।

তখন করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে দেশের মানুষ এমন ভীত হয়ে পড়লো যে, কারোর সাধারণ সর্দি-জ্বর হলে, ওই সর্দি-জ্বরের রুগীর পরিবারের সাথে সমাজের আরও দশটা পরিবারের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যেতো। বুড়ো মা-বাবাকেও রাস্তায় ফেলে দেওয়া হতো, যদি সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হতো। দাদা-দাদি, ভাই-বোন কারোর জ্বর হলেই হতো সর্বনাশ। কোনোকোনো সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ফাটল ধরতে শুরু করছিল। তখন একদিকে মানুষের ছিলো না কাজকর্ম। অন্যদিকে ছিলো করোনা ভাইরাসের ভয় আর কর্মহীন মানুষের ক্ষুধার চিৎকার।

এমতাবস্থায় দেশে গণমানুষের সরকার সিংহভাগ কর্মহীন দরিদ্র জনগণ ও ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে ঘোষণা দিলো হাজার হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা। ওইসব প্রণোদনার মধ্যে ছিলো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য সুদ বিহীন ঋণ। গরিব সাধারণ মানুষের জন্য ছিলো রিলিফ-সহ নগদ অর্থের যোগান ও বিনামূল্যে করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম। যা এখনো দেশে কোথাও-না-কোথাও সেই কার্যক্রম চালু আছে। একসময় ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়া জনজীবনের সবকিছু আবার সচল হতে শুরু করলো। জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি নেমে আসতে লাগলো। করোনা ভাইরাসের আক্রমণও কিছুটা হ্রাস পেতে শুরু করলো। মৃত্যুর হারও কমতে লাগলো।

পরিবর্তন ঘটতে শুরু হলো মানুষের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস। যেমন- মুখে মাস্ক পড়া। নিয়মিত হাত ধোয়া। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। স্যানিটাইজার ব্যবহার করা। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা-রাতে গরম গরম লাল বা রং চা সেবন করা। ঘরের বাহির না হওয়া। দিনে অত্যন্ত দুই একবার ব্যায়াম করা। সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা-সহ আরও অনেক নিয়মকানুন। করোনা ভাইরাস থেকে দেশের জনগণকে বাঁচতে এসব নিয়ম দিক নির্দেশনাগুলো ছিলো দেশের বিজ্ঞ চিকিৎসকদের। এছাড়াও নির্দেশ ছিলো, কারোর সামান্য সর্দি-কাশি হলে সাথে সাথে নিকটস্থ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া। অমুক নাম্বারে কল করে যোগাযোগ করা। তমুক নাম্বার থেকে সাজেশন নেওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। করোনা ভাইরাস আক্রমণের ভয়ে দেশের জনগণও বিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলতে থাকলো সবাই। একসময় মার্চমাস পেরিয়ে এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই, আগষ্ট গত হতে লাগলো।

এরমধ্যেই শুরু হলো আমার বাম হাতের অনামিকা আঙুলে ব্যথা। প্রচণ্ড ব্যথা। মাঝেমধ্যে আঙুলের ব্যথায় পুরো হাতই অবস হয়ে যেতো। এভাবে দিন যায়, সপ্তাহ গড়ায়, কিন্তু আঙুলের ব্যথা নিরাময় হচ্ছিল না। বরং দিন-দিন বেড়েই চলছিল। তারপর নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে ব্যথার ঔষধ কিনে সেবন করতে লাগলাম। কিন্তু তাতেও যখন কোনও উপকার পাচ্ছিলাম না, তখন পরিচিত এক ব্যক্তির সাথে নিজের হাতের আঙুলের সমস্যার কথা বললাম। উনি নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে চাকরি করতেন। উনি আমাকে হারের (অর্থোপেডিক্স) ডাক্তার দেখাতে বললেন। কিন্তু হারের ডাক্তার সম্বন্ধে আমার তেমন ধারণা ছিলো না বলে, আমি উনার মাধ্যমেই নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে থাকা এক হারের ডাক্তারের কাছে গেলাম। ওই ডাক্তারের ভিজিটি ছিলো ৮০০/= টাকা।

সিরিয়ালে নাম ডাক পড়লে আমি-সহ পরিচিত ব্যক্তি ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকলাম। করোনা কালে বিজ্ঞ হারের ডাক্তারের চেম্বারে প্রবেশ করে মনে হচ্ছিল যে, আমি যেন চাঁদের দেশে অবস্থান করছি। আর বিজ্ঞ ডাক্তার সাহেবকেও দেখা যাচ্ছিল চাঁদের নভোচারী। ডাক্তারের শরীরে ধপধপে সাদা প্লাস্টিকের জামা। যেটাকে বলা হয় পিপি। হাতে ডাবল গ্লাভস। মুখে ডাবল মাস্ক। চোখে বড় আকারের চাঁদের দেশে যাওয়া নভোচারীদের মতো চশমা। সামনে দাঁড়ানো আছে ডাক্তারকে সাহায্যকারী পিয়ন বা উনার কর্মচারী। আমি সত্যি ভয় পেলাম! অবাকও হলাম। কিন্তু এ-বিষয়ে কিছু বলার সুযোগ না থাকায়, কিছুই বললাম না, জিজ্ঞেসও করলাম না। শুধু আমাকে সাথে করে নিয়ে যাওয়া পরিচিত লোকটাকে কানে-কানে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ডাক্তার সাহেবের এ-অবস্থা কেন?’ জবাবে উনি বললো, “ডাক্তার সাহেব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলো। গত একমাস আগে ডাক্তার সাহেব ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থেকে ভাইরাস মুক্ত হয়েছেন। তাই উনার এই পোশাক, এই ড্রেস। উনি এখনও করোনা ভাইরাসের ভয়ে ভয়ে আছেন।” শুনলাম সব কথা। বুঝলাম অনেককিছু।

আমি ডাক্তার সাহেবের সামনা-সামনি বসলাম। আমার সামনে দেখতে পেলাম সাদা চকচকা কাঁচের গ্লাসের বাক্স। দেখতে হুবহু সিনেমা হলের টিকেট কাউন্টারের বুকিং এর মতো। বসার উপরিভাগে হাত ঢুকানোর জন্য বড় আকারের ছিদ্র আছে। ডাক্তার সাহেব আমার সমস্যা জানতে চাইলে, আমি আমার সমস্যার কথা বললাম। উনি আমাকে হাতের আঙুল দেখাতে বললেন। আমি গ্লাস বক্সের সেই ছিদ্র দিয়ে নিজের হাত ঢুকাতেই ডাক্তার সাহেবের কর্মচারী আমাকে সরাসরি হাত ঢুকাতে বারণ করলেন। আমি আর হাত ঢোকালাম না। চুপচাপ বসে আছি। ডাক্তার সাহেবের কর্মচারী একটা বড় স্যানিটাইজারের বোতল আমার সামনে এনে আমাকে হাত বাড়াতে বললো। আমি হাত বাড়াতেই আমার বাম হাতে স্প্রে করা শুরু করলো। দুই-তিন বার স্প্রে করার পর হাত ঢুকানোর অনুমতি দিলো। আমি গ্লাসের ছিদ্র দিয়ে বামহাত ঢোকালাম। ডাক্তার সাহেব আমার বাম হাতের ব্যথাযুক্ত আঙুলটা টেনে-টুনে, আর নেড়ে-চেড়ে দেখলো। যেই আঙুলটা ব্যথা, সেই আঙুলে সিপ্টিপিন দিয়ে গাঁই মেরে বললো, আমি টের পাচ্ছি কি-না। আমি বললাম, ‘টের পাচ্ছি এবং ব্যথাও পাচ্ছি!’ আমার কথা শুনে ডাক্তার সাহেব উনার কর্মচারীকে উনার হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে স্প্রে করতে বললো।

কর্মচারী সাথে সাথে স্যানিটাইজারের বড় বোতল এনে প্যাঁচপ্যাঁচ করে ডাক্তার সাহেবের হাতে দুই-তিন বার স্প্রে করলো। এরপর ডাক্তার সাহেব উনার প্রেসক্রিপশন লেখার পেইড টেনে কলম দিয়ে লিখতে লাগলো। ডেসক্রিপশন লিখছে, আমি তাকিয়ে আছি। উনি বাম সাইটে দুই-তিনটে ঔষধ লিখে ডান সাইটে কী কী পরীক্ষা করতে হবে, তা লিখলেন। প্রেসক্রিপশন আমার হাতে ধরিয়ে দিলেন। আমি প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে সাথে যাওয়া লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী কী পরীক্ষা করতে হবে?’ সাথে যাওয়া লোকটি প্রেসক্রিপশন দেখে বললো, “প্রথমে করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। তারপর হাত ও আঙুলের রগের দুইটা পরীক্ষা করতে হবে।” সাথে যাওয়া লোকটিকে বললাম, ‘আমি করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষা করবো না। এতে আমার মরণ হলেও না। মোটকথা চিকিৎসার দরকারই নেই।’ আমার কথাগুলো ডাক্তার সাহেব শুনছিলেন, কিন্তু কিছুই বললো না। সাথে যাওয়া লোকটি আমার কথা শুনে একরকম অবাকই হলেন।

ডাক্তারের ভিজিট ৮০০/= টাকা বুঝিয়ে দিয়ে ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে বাইরে এলাম। দুইজনে চা-সিগারেট পান করলাম। আমি আমার সাথে যাওয়া লোকটিকে বললাম, ‘দাদা, আপনি দয়া করে আবার একটু ডাক্তারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন, করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষা ছাড়া চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র দেওয়া যায় কি-না।’ উনি আমার কথা শুনে ডাক্তারের কাছ থেকে ফিরে এসে বললো, “না দাদা, করোনা নমুনা পরীক্ষা করা ছাড়া উনি চিকিৎসা করবেন না।” সাথে যাওয়া লোকটির কথা শুনে আমি আর কিছুই বললাম না, সোজা বাসায় ফিরে এলাম।

এর দুইদিন পর পরিচিত লোকটার সাথে দেখা। জিজ্ঞেস করলো, “দাদা হাতের ব্যথার চিকিৎসার কী খবর? পরীক্ষা কবে করাবেন?” আমি বললাম, ‘না দাদা, আমি করোনা ভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করতে নারাজ! লোকটা জিজ্ঞেস করলো, “কেন?” বললাম, ‘যেই দেশে ঘাতক করোনা ভাইরাস নমুনা পরীক্ষা নিয়ে সর্বত্র দুর্নীতি আর তেলেসমাতি চলছে, সেই দেশে এই জটিল পরীক্ষার কী এমন গ্যারান্টি আছে? দেখতেই পারছেন প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই সবার চোখে পড়ে নমুনা পরীক্ষার তেলেসমাতির খবর। আর আমি নাহয় পরীক্ষা করালাম, দাদা। কিন্তু পরীক্ষা করার পর যদি ভুল রিপোর্টে আমার পজেটিভ আসে, তাহলে আমার গরিবের সংসার-সহ ভাড়াটিয়া বাড়ির সবাইকে লকডাউনে ফেলে রাখা হবে। তাই আর নমুনা পরীক্ষা অন্তত আমি করবো না। এতে আমার কিছু হলে হোক।’ আমার কথা শুনে লোকটা আর কিছুই বললো না, সোজা উনার কাজে উনি চলে গেলো। আমিও আমার সিদ্ধান্তের মাঝেই রয়ে গেলাম। ভাবেই গত হয়ে গেলো বেশ কয়েক মাস।

কিন্তু আমি আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি। আমার সহধর্মিণীও ভালো আছে। জানি না সামনের দিনগুলোতে কী হয়! আশা করি সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও যখন করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। তখন সামনের দিনগুলো ভালোভাবেই অতিবাহিত হবে। রোগ আসে। রোগ নিরাময়ের ঔষধও আবিস্কার হয়। দিন মাস বছর গত হয়। ফেলে আসা দিনগুলো শুধু ইতিহাস হয়ে রয়। এটাও আমাদের জীবনেরই একটা ইতিহাস। যার শিরোনাম করোনা কালের ইতিহাস।

শুভ নববর্ষ

নববর্ষ ২০২১

ঘুরতে ঘুরতে একুশ এলো
আবার তবে মোদের দ্বারে,
বরণ করো, সবাই দেখি
সালটি এবার কি দেয় কারে ?

দেখো সবে নতুন সুরুজ
নীল আকাশে ওই যে দূরে,
আজ যে তারি মিঠা রোদে
ভরেছে জগ উজ্জ্বল নূরে।

প্রেম প্রীতিতে ভরো সবে
গরীব দুখী সবার তরে,
কেউ যেন আর রয় না দুখী
মহামারির ভয়াল ডরে।

গত সালের কতো অসুর
কষ্ট দিলো সকল মনে,
এ সাল যেন কাটে ভালো
আনন্দ দেয় সর্ব জনে।

প্রভুর কাছে দোয়া মাগি
থাকি সবাই আরো ভালো,
সব হৃদয়ে জন্মুক অনেক
ভালোবাসা ও প্রেম আলো।

মাত্রাবিন্যাসঃ স্বরবৃত্তঃ ৪+৪ / ৪+৪

অসাম্প্রদায়িকতা নয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হোক আমাদের লক্ষ্য

223

সাম্প্রদায়িকতা এক দুরারোগ্য ব্যাধি। এই ব্যাধির জীবানু জাতির জীবনে গভীরে প্রোথিত। শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলার কঠোরতার মধ্যেই এর সমাধান-সূত্র নেই। তরুন শিক্ষার্থীরাই হল দেশের সবচেয়ে আদর্শপ্রবণ, ভাবপ্রবণ অংশ। ছাত্র-সমাজই দেশের ভবিষ্যৎ, জাতির কান্ডারী। তাদের মধ্যে অফুরাণ প্রাণশক্তি। পারস্পরিক শ্রদ্ধার মনোভাব, আন্তরিক মেলামেশা, ভাবের আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় হবে এক নতুন প্রজন্মের। এরই মধ্য দিয়ে ছাত্ররা নতুন করে অনুভব করবে মানবতার উদার মহিমা। গড়বে মহামিলনের মন্ত্র। ছাত্রাবস্থায়ই সাম্প্রদায়িকতার রাহু মুক্তির শফথ নিতে হবে। সম্প্রীতির মহাব্রত অনুষ্ঠানের তাদেরই হতে হবে প্রধান পুরোহিত। শুধু পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া নয়, সুকুমার বৃত্তিগুলো যথাযথ বিকশিত করতে হবে তবেই শিক্ষার পূর্ণতা, সার্থকতা। মনুষত্বের অধিকার অর্জনই হোক প্রতিটি শিক্ষানুশীলনের পরম প্রাপ্তি। শিক্ষার নিবেদিত প্রাঙ্গণে নতুন করে উপলব্দি করতে হবে সবার উপরে মানুষ সত্য, তবেই মানুষে মানুষে প্রীতি-বন্ধন সৃষ্টিতে হবে শেষ কথা।

সমাজবদ্ধ মানুষ নানা ধর্ম সম্প্রদায়ে বিভক্ত। কিন্তু ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা এক নয়। সকল ধর্মের মূল কথা – প্রেম, মৈত্রি, শান্তি ও সম্প্রীতি। কিন্তু বর্তমান সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত ছোবলে সৃষ্টি হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় উগ্রতা। আমরা সবাই জানি মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাই আমাদেরকে হতে হবে মানবতাবাদী। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা যেন সমাজের জন্য অমঙ্গল হয়ে দেখা না দিতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সমাজ প্রগতির পথকে রুদ্ধ না করতে পারে সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। কারণ কোনো ধর্ম, কোন আদর্শই পৃথিবীতে এ সর্বনাশা ভেদবুদ্ধিকে সমর্থন করে নি। পবিত্র কোরআনে বলা আছে” ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই”।

গতিশীল জীবনে সমাজ উন্নয়নের চাবিকাঠি প্রগতির পথ পাড়ি দিতে আমাদরকে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করে সামজিক জীব হিসেবে আমাদেরকে সর্বোৎকৃষ্ট সমাজ গঠনের দৃষ্টান্ত করতে হবে। আমাদের জাতীয় জীবনে গঠনমূলক কাজের উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করতে চাষি, জেলে, কামার, কুমার, মুচি, ডোম এবং ধনী-গরীব সকলকে কাঁধ মিলিয়ে দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ করে জাতির উন্নয়নের জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।

” জগৎ জুড়িয়া এক জাতি আছে/ সে জাতির নাম মানুষ জাতি।
এক পৃথিবীর স্তন্যে লালিত/ একই রবি শশী মোদের সাথী। ”

কবির এই ছন্দের ভাবার্থ সঠিক উপলব্দি করতে পারলেই তবে সমাজ থেকে বৈষম্য দূর হবে।

টমাস পাইল বলেছেন- ‘ পৃথিবীটা আমার দেশ, সমস্ত মানব জাতি আমার ভাই এবং সবার ভালো করাই আমার ধর্ম’। এই নীতি সৃষ্টি করুন দেখবেন আপনার সাথে সাথে সমাজের নীতিবাচক কোলাহলও পাল্টে গিয়েছে।

ধর্মভেদ, বর্ণবেদ, সাদা-কালোর দম্ভ ধ্বংস করে জীবনে সঠিক শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের মাধ্যমে সামাজিক সম্প্রীতি তথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করেই পৃথিবীতে শান্তি ও প্রগতি স্থাপন সম্ভব।

” হে চিরকালের মানুষ, হে সকল মানুষের মানুৃষ
পরিত্রাণ করো ভেদচিহ্নের তিলক পরা/ সংকীর্ণতার ঔদ্ধত্য থেকে”।

কবির উক্ত লাইনের মর্ম হৃদয়ের আঙিনায় রোপণ করে সর্বজনীন চেতনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে মজবুত করে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারলেই আমরা বিশ্বের বুকে একটি সভ্য ও আদর্শ জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাবো।

অবশেষে কবি নজরুলের কন্ঠে উচ্চারিত-
” হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞেস কোন জন
কান্ডারী! বলো, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মোর’।

বিজয়_দিবসের_প্রাক্কালে

index

দীর্ঘদিন এক দল ক্ষমতায় থাকলে আগ্রাসী মনোভাব চলে আসে, স্বৈরাচারী চিন্তা ধারণা প্রাধান্য পেতে শুরু করে। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও তাই দেখা যাচ্ছে। যেকোনো উপায়ে বিরুদ্ধমত দমন করতে আওয়ামী লীগের তোড়জোড় দেখে মনে হয় স্বৈরাচারে ঘায়েল হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নাই, আওয়ামী লীগ একমাত্র দল যারা এখনো কিছু পরিমাণ বাঙালি, বাঙালিত্ব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে, লালন করে।

তবু আমার মনে হয় বিরতির প্রয়োজন, কিছুদিন অবসর নিয়ে প্রত্যাবর্তন দেশের জন্য মঙ্গল হতে পারে। দীর্ঘদিনের একঘেয়েমি থেকে মুক্ত হয়ে পুনরায় শুদ্ধ পরিচর্যা নিয়ে হাজির হওয়া যেতে পারে। মুশকিল হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিরতিতে দায়িত্ব নেওয়ার মতো দল বাংলাদেশে নাই। আওয়ামী লীগ শত শতাংশ দেশপ্রেমিক দল এটা আওয়ামী লীগ দাবি করবে না কিন্তু এর বিপরীতে এক শতাংশ দেশ প্রেমিক দল বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। ক্ষুদ্র দল যারা আছে খুঁজলে হয়তো তাদের মধ্যে দেশের প্রেম পাওয়া যেতে পারে কিন্তু তারা এত ক্ষুদ্র যে দেশের ভার বহনে অক্ষম। মেজরের দল যখন এতিমে রূপান্তরিত, খাম্বা যখন পুরোপুরি রাজাকার মুখি তখন তাদের ঘাড়ে দেশের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া আত্মহননের শামিল হবে। একজন সুস্থ চিন্তার মানুষ সজ্ঞানে পুনরায় রাজাকারদের ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না।

আপাতত আওয়ামী লীগের কোন বিকল্প নাই, তবে তাদের স্বৈরাচারী মনোভাবের জন্য বিরুদ্ধ মত দমনে কঠোরতার জন্য দিনে দিনে অজনপ্রিয়তায় ধাবিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে আরো বেশি শুদ্ধতার চর্চা করতে হবে, শত মতে বিশ্বাসী হয়ে শত ফুট ফুটতে দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় এই একঘেয়েমির মন্দ থেকে কিছু ভাল জিনিস ও পরিস্ফুট হচ্ছে। আওয়ামীলীগের দীর্ঘ শাসনে রাজাকারের ছানাপোনা বশীভূত হয়ে যাচ্ছে, ভোল পাল্টে সুবোধ বালকের মতো হয়ে যাচ্ছে। এই সেদিনও যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে আজ সে বঙ্গবন্ধুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এই সেদিন যে মেশিনম্যানের ইজ্জত রক্ষা জান কোরবান করত আজ সে ফেসবুক লাইভে বিজয়ের কবিতা পড়ে, আজ সে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে।

যদিও জানি এসবই সাময়িক, সময় বদলে গেলে সাপের ছোবল ঠিকই মারবে। তবু তাদের আপাত বশীকরণ মন্দ লাগছে না। বগলে ছোরা নিয়ে মোস্তাক হাটে, সময়ের অপেক্ষায়। এখন তাদের নিচু মাথা দেখতে মন্দ লাগে না। রাজাকারের মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা আওয়ামী সাফল্য, দীর্ঘ ভ্রমণ জনিত একঘেয়েমি, ক্লান্তি ঝেড়ে আওয়ামী লীগ পুনরায় জেগে উঠুক। মানুষের মুক্তির কথা বলুক, মানুষকে মুক্তির পথ দেখাক।

তৈল মর্দন নয়: দেশকে ভালবাসুন

FB_IMG_1607

আবেগ দিয়ে সংগঠন হয় না, বাস্তবতা আর দেশপ্রেম দিয়ে একজন ব্যাক্তি হয়ে উঠে সাংগঠনিক। যার মাঝে দেশপ্রেম নেই, সেই সামান্য রাজনৈতিক পদবী নিয়ে অহংকার আর দেমাগে কর্মী কিংবা সাধারণ মানুষকে বিচ্ছিন্নকরণ করে। পদ বড় নয়, বড় ব্যাপার আমি বা আমরা দেশের জন্য কি করছি? ৫২’র ভাষা আন্দোলনে, ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলো তারা নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দেশ রক্ষা করেছে। তাদের কোনো রাজনৈতিক পদ ছিলো না, পকেট ভর্তি অর্থ ছিলো না। তাদের একটি পরিচয় “আমি বাঙ্গালী”।

বাঙ্গালি জাতির পিতা কি চেয়েছিলো? সাধারণ মানুষদেরকে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করে মুক্তি দিতে। অথচ ১৫ই আগস্ট ঘাতকরা তাঁকে নির্মম ভাবে খুন করলো। ১৪ই ডিসেম্বরে খুন হওয়া বুদ্ধিজীবীরা দেশের কথা ভাবতেন বলেই তৈল মর্দনে তৈলাক্ত রাজনৈতিক খেকরা তাঁদের বাঁচতে দেয়নি।

জহির রায়হান বা নুর হোসেন দেশের জন্য নিজের মায়া ত্যাগ করছেন। বছরে একটি দিন আসলে তাদের আমরা স্বরণ করি অথচ তাদের পরিবার বাকী ৩৬৩দিন ঠিক মত খাচ্ছে কি-না তা আমরা তলিয়ে দেখি না।

আমার জানাশুনা কিছু রাজনৈতিক কর্মী দেখেছি যারা সামান্য পদবী নিয়ে নিজেকে মনে করে স্বাধীন বাংলার প্রধান কিন্তু দেশের জন্য ঘোড়ার ডিম। তারা পদ পায় নেতার চামচি করে, দেশের জন্য নয়।

দেশকে যদি ভালোবাসতো তবে নিপীড়িত মানুষের পাশে, বস্তিতে, রেললাইনে, ফুটপাতে পড়ে থাকা মানুষকে নিয়ে ভাবতো। ধনীদের এক রাতের ডিনারের টাকা দিয়ে ১০জন বস্তির ছেলে মেয়েকে পড়ানো যায়। যে বস্তির ছেলেগুলো শিশু বয়স থেকে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে দেশ ও জাতির জন্য হুমকি হয়। এখন রাজনীতি পুরো তৈল মর্দনের রাজনীতি। তাই আমি রাজনীতি থেকে বহুদূরে। তবে মনের ভিতর কাঁদে নিপীড়িত, অবহেলিত মানুষের জন্য, তবুও কিছু করার নেই কারণ কিছু করতে গেলে তখন হাইব্রীড নেতাকর্মীদের ঘা জ্বলে যে এই ছেলে দেশের জন্য কিছু করতে গিয়ে আমাদের ডিঙিয়ো যাচ্ছে। ধিক্কার তোদের মত রাজনৈতিক কর্মীদের।

আমি বৃহৎ বাগানের কোনো এক কোণে পড়ে থাকা ছোট্ট একটি ফুল। সুঘ্রাণ হয়তো কেউ অনুভব করে, হয়তো কেউ করে করে না। আমার কেউ না থাকুক, কলম আছে।

আসুন, নেতাদের তৈল মর্দনের তৈল নর্দমায় ফেলে দিয়ে নিজগুণে দেশকে ভালবেসে দেশের নিপীড়িত আর অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়াই। আর নেতাদের বলছি, আপনারা যাদের দিয়ে নেতা হয়েছেন দৈনিক তাদের সাথে দেশের স্বার্থে আধ-ঘন্টা সময় দেন, দেখবেন দেশ কত দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।