বিভাগের আর্কাইভঃ প্রবন্ধ

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (প্রথম পর্ব)

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও প্রবন্ধ রচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর (১২ আশ্বিন, ১২২৭ বঙ্গাব্দ), মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন হুগলি জেলার (অধুনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আমরা এমন এক অন্ধকার সময় যাপন করছি, এই নিশিযাপনকালে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতোন মেরুদণ্ড সম্পন্ন মানুষদের, জীবন দার্শনিকদের উপস্থিতি প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি তীব্রভাবেই অনুভব করছি। কঠিন সত্যকে যুক্তিবাদে-বিবাদে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান নি:সন্দেহে স্মরণীয়।

পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রাতঃস্মরণীয় মনীষী। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে অনেক যুগ প্রবর্তক মহাপুরুষের জন্ম হয়েছিল; ঈশবরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অসামান্য। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্ম ও মহাপ্রয়াণের পর দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে কালের ধুলোয় বহু ব্যক্তিত্ব, বহু ঘটনা ঢাকা পড়েছে। কিন্তু বিদ্যাসাগর আজও আমাদের জীবনে ধ্রুবতারার মতো উজ্জ্বল। বাঙালির জীবনলোক ও মননলোক জুড়ে তাঁর সজীব, আলোকিত উপস্থিতি। বাঙালির শিক্ষা, নারী জাগরণ, ভাষা ও সাহিত্যের নিরলস সাধক এই মানুষটি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন যুক্তিবাদী মন নিয়ে। সময়ের এই দীর্ঘ ব্যবধান সত্ত্বেও বিদ্যাসাগরকে নিয়ে তাই আজো আমাদের ভাবনা-চিন্তায় ছেদ পড়েনি। প্রতিটি বাঙালির উচিত বিদ্যাসাগরের জন্ম ও প্রয়াণ দিবসকে স্মরণ করে তাঁর মননশীল মানবিক যুক্তিবাদী চেতনাকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে অন্ধকারের সমাজকে আলোকিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা। বিদ্যাসাগরের জন্মদিনে তাই কেবলি মনে পড়ছে কবিগুরুর মহান বাণী – ‘রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি’।

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সহজ সরল জীবনযাপন করতেন। সাদাসিদে পোশাকে গায়ে মোটা চাদর এবং চটিজুতা ছিল তাঁর একমাত্র পরিচ্ছদ। বিরল গুণের অধিকারী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, ‘আমি যে দরিদ্র বাঙ্গালী ব্রাহ্মণকে শ্রদ্ধা করি তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।’ বিদ্যাসাগর ছিলেন পরের দুঃখে অতি কাতর। মহকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তকে তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রচুর অর্থ সাহায্য করেন। কবি নবীনচন্দ্র সেনও যৌবনে বিদ্যাসাগরের অর্থে লেখাপড়া করেছিলেন।

বিদ্যাসাগরের একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল সমাজ সংস্কারমূলক কাজ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি দুঃস্থমহিলাদের সেবা সহায়তা দিয়ে বাঁচানোর জন্য জন্য “হিন্দু ফ্যামিলি গ্রাচুয়িটি ফাণ্ড” গঠন করেন। তিনি চিরদিন কুসংস্কার, গোড়ামি আর ধর্মন্ধতার বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে লড়াই করে গেছেন। বাঙালি জাতি সর্বপ্রথম বড় হবার, যোগ্য হবার, মানবিক হবার, আধুনিক প্রগতিশীল ও বিশ্বজনীন হবার সর্বপ্রথম দৃষ্টান্ত খুঁজে পেয়েছিল বিদ্যাসাগরের মধ্যে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন তিনি হিন্দু ছিলেন না, বাঙ্গালী বা ব্রাহ্মণ ছিলেন না, ছিলেন ‘মানুষ’। এই মন্তব্যের তাৎপর্য অতলস্পর্শী। কারণ কারো যথার্থ “মানুষ” হওয়া অত সহজ কথা নয়। তিনি আরো বলেছেন, ‘তাহার মহৎ চরিত্রের যে অক্ষয় বট তিনি বঙ্গভূমিতে রোপণ করিয়া গিয়াছেন, তাহার তলদেশে জাতির তীর্থস্থান হইয়াছে।’

https://trshow.info/watch/Hc8MfqGxZF8/i-baracandra-bidy-s-gar-ra-j-ban-biography-of-Ishwar-chandra-vidyasagar-In-bangla.html

বৈশাখের রবি চির অস্তমিত… অশ্রুঝরা ২২শের শ্রাবণ সন্ধ্যায়

বৈশাখের রবি চির অস্তমিত
অশ্রুঝরা ২২শের শ্রাবণ সন্ধ্যায়

তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

চির উদ্ভাসিত রবি অস্তমিত প্রায়।
অশ্রুঝরা ২২শের শ্রাবণ সন্ধ্যায়।
আবার এসো হে কবি! এই বসুধায়।

রবীন্দ্রনাথ আমাদের বাইশে শ্রাবণ। রবীন্দ্রনাথ আমাদের পঁচিশে বৈশাখ। বাংলা ক্যালেন্ডারের দুটো মুখস্থ করা দিন, বাইশে শ্রাবণ, কবির প্রয়াণতিথি। পঁচিশে বৈশাখ জন্মতিথি। রবীন্দ্রনাথ বাঙালি ব্যক্তিমননে আবদ্ধ থাকেন বিশেষ করে আবদ্ধ থাকেন এই দুটি দিনই। তাঁর মৃত্যু প্রায় সাতদ শক পার করে এসেছে তাঁর প্রয়াণ দিবসটি। তবু এ কথা বলা যায়, তাঁর সার্ধশততম জন্মবর্ষের পর থেকে রবীন্দ্রনাথ বঙ্গজীবনে যেন প্রবাদের মতো বেশি করে ঢুকে পড়েছেন।
জন্মদিনের আড়ম্বর নিয়ে কবি নিজেই ১৩৪৩ সালে প্রবাসী পত্রিকায় লিখেছিলেন, ‘‘খ্যাতির কলবরমুখর প্রাঙ্গণে আমার জন্মদিনের যে আসন পাতা রয়েছে সেখানে স্থান নিতে আমার মন যায় না। আজ আমার প্রয়োজনে স্তব্ধতায় শান্তিতে।’’
আবার নৈবেদ্য কাব্যগ্রন্থে ‘মৃত্যু’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখছেন—

‘‘মৃত্যু অজ্ঞাত মোর
আজি তার তরে
ক্ষণে ক্ষণে শিহরিয়া কাঁপিতেছি ডরে
এত ভালোবাসি
বলে হয়েছে প্রত্যয়
মৃত্যুরে আমি ভালো
বাসিব নিশ্চয়’’

রবীন্দ্রনাথের আত্মউন্মোচনগত নিজস্ব এক প্রত্যয় ছিল যা তার সৃষ্টির ক্রমবিবর্তনের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। কবির অকাল স্ত্রী-বিয়োগ এবং রবীন্দ্রনাথের ‘স্মরণ’ কাব্যগ্রন্থটি কবি স্ত্রীর মৃত্যুর অব্যহতি পরেই রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিজীবনে মৃত্যুকে বড় গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছিলেন মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে কবির স্ত্রী বিয়োগ হয়। কবি যখন দূরে থাকতেন স্ত্রী মৃণালিণীদেবীকে ‘ভাই ছুটি’ সম্বোধন করে চিঠি লিখতেন।

কবির সেই ‘ছুটি’ যখন সংসার জীবন থেকে সত্যিই একদিন ছুটি নিয়ে চলে গেলেন তাঁর বয়স তখন মাত্র ঊনতিরিশ। তাঁদের উনিশ বছরের দাম্পত্য জীবনে পাঁচটি সন্তানের জনক হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁদের জীবনে একে একে এসেছে—বেলা, রথী, রানির, মীরা ও শমি। তবে ‘স্মরণ’ কবিতাগুলি পড়ে মনে হয়, স্ত্রী চলে যাওয়ার পরই কবি যেন নতুন করে মৃণালিনীদেবীকে আবিষ্কার করেছিলেন। কবি তাঁর মিলন কবিতায় লেখেন—

‘মিলন সম্পূর্ণ আজি
হল তোমা-সনে
এ বিচ্ছেদ বেদনার
নিবিড় বন্ধনে’

রবীন্দ্রনাথ স্ত্রীর স্মৃতিতে ১৩০৯ সালের অঘ্রাণ মাসের বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রতীক্ষা, শেষকথা, প্রার্থনা, আহ্বান, পরিচয় ও মিলন কবিতাগুলি লেখেন। মৃণালিনীদেবীর শেষ বেলার বিদায় মুহূর্তের কথা মনে করেই পরবর্তীতে কবি লেখেন

‘‘দুজনের কথা দোঁহে
শেষ করি লব
সে রাত্রে ঘটেনি
হেন অবকাশ তব’’

‘শেষ কথা’ কবিতায় কবি লিখেছেন,

‘‘তখন নিশীথরাত্রি,
গেলে ঘর হতে
যে পথ চলেনি কভু,
সে অজানা পথে
যাবার বেলায় কোনো
বলিলে না কথা
লইয়া গেলে না কোনো বিদায়বারতা’’

প্রার্থনা কবিতায় স্ত্রী-হারা কবি লেখেন

‘‘আজ শুধু এক প্রশ্ন
মোর জাগে মনে
হে-কল্যাণী, গেলে যদি, গেলে, মোর আগে,
মোর লাগি কোথাও
কী দুটি স্নিগ্ধ করে
রাখিবে পাতিয়া শয্যা চিরসন্ধ্যা-তরে।’’

স্ত্রীর প্রতি কবির অশ্রুসজলে
লেখনী আমাদের বিহ্বল করে
‘‘মৃত্যুর নেপথ্যে হতে আরবার
এলে তুমি ফিরে নতুন বধুর
সাজে হৃদয়ের বিবাহমন্দিরে
নিঃশব্দ চরণপাতে’’
রবীন্দ্রনাথ ভাষাগত ভাবে ততটা আধুনিক হয়তো ছিলেন না, কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে আজও মনে হয় সমকালীন। এক এক আধুনিক মানব। তাঁকে যতই কুক্ষিগত করে ফ্রেমবন্দি করে রাখার চেষ্টাপ্রসূত পরিকল্পনা চলুক—এই ২২শে শ্রাবণ দিনটিতে মনে করায় তিনি যথেষ্ট আধুনিকমনস্ক ছিলেন সেই গত শতকেও।
রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর সত্তর দশক পার হয়েও যেন মৃত্যুহীন অনন্ত জীবনের সাক্ষর বয়ে চলেছে আজও। সেই ১৯৪০ সালের কথা। পুত্রবধূ প্রতিমাদেবী পাশেই আছেন। অসুস্থ শরীরেই কবি লেখার ঘরে কবিতার খাতা নিয়ে এসে বসলেন। মংপু থেকে মৈত্রেয়ীদেবীও কালিম্পং-এর বাড়িতে চলে আসাতে কবি তাঁকে খুশি হয়ে কয়েকটি কবিতা শোনালেন। দুপুরে শরীর খারাপের মাত্রা আরও বাড়ল। চেতনাও আচ্ছন্ন। কাউকে তেমন করে চিনতে পারছেন না। সেই ঘোরের মাঝেও রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘‘আমার কী হল বল তো’’।
প্রথম তিন চার দিন হাতের কাছে হোমিওপ্যাথি ঔষধ যা ছিল, তাই দিয়েই কোনও রকমে কবির চিকিৎসা চলছিল। অবশ্য তার চেতনা পরদিনই ফিরে এসেছিল। তিন জন চিকিৎসক নিয়ে কলকাতা থেকে কালিম্পং চলে এলেন শ্রীপ্রশান্ত মহালনবিশ। রবীন্দ্রনাথকে অসুস্থ অবস্থায় সবাই কলকাতায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে ফিরে এলেন। জোড়াসাঁকোর দোতলার পাথরের ঘরে তিনি অসুস্থ অবস্থায় ক’দিন কাটিয়ে কিছুটা সুস্থ হলেন।
জীবনের শেষ নববর্ষের সময় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তাঁর সাধের শান্তিনিকেতনে। সে দিন তাঁর কলমে রচিত হয়েছিল ‘সভ্যতার সংকট’ নামের অমূল্য লেখাটি। তারও ক’দিন পর ১৯৪১ সালেরই ১৩ মে লিখে রাখলেন, রোগশয্যায় শুয়ে—‘‘আমারই জন্মদিন মাঝে আমি হারা’’
এই সময়গুলোতে রবীন্দ্রনাথ অত্যন্ত কাহিল, কখনও রোগশয্যায় আচ্ছন্ন। নিজে হাতে লেখার ক্ষমতাও তার আর নেই। তিনি তখন যন্ত্রণাকাতর অবস্থায় কখনও শুয়ে শুয়েই বলে যাচ্ছেন, তাঁর মুখনির্সিত বাণী কবিতার ছন্দে লিখে রাখছেন রানী চন্দ। কবি কখনও রানী চন্দকে বলছেন লিখে রাখতে, ‘‘আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবন—
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিনগুলোতে কখনও তিনি শয্যাশায়ী, কখনও ওরই মধ্যে কিছুটা মন্দের ভাল। শেষের দিকে, ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই, শান্তিনিকেতনের আশ্রম বালকবালিকাদের ভোরের সঙ্গীত—অর্ঘ তিনি গ্রহণ করলেন তাঁর উদয়ন গৃহের পূবের জানলার কাছে বসে। উদয়নের প্রবেশদ্বার থেকে ছেলেমেয়েরা,

‘‘এদিন আজি কোন
ঘরে গো খুলে দিল দ্বার
আজি প্রাতে সূর্য
ওঠা সফল হল আজ’’

কবির মন বলেছিল, ‘‘সবার শেষে যা বাকি রয় তাহাই লব।’’
রবীন্দ্রনাথের মানসিকতা তাঁর বৌদ্ধিক দৃষ্টির রেশ থেকে গেছে সমস্ত রচনায়। ‘গীতাঞ্জলি’ র শেষ পর্যায়ে ১৫৭তম কবিতায় কবি বলেন,

‘‘দিবস যদি সাঙ্গ হল
না যদি গাহে পাখি
ক্লান্ত বায়ু না যদি আর চলে
—এ বার তবে গভীর করে ফেলো গো মোরে ঢাকি’’
কিশোর বয়সে বন্ধুপ্রতিম বৌদি কাদম্বরী দেবীর অকালমৃত্যু ও আরও পরে স্ত্রীর মৃত্যু এবং একে একে প্রিয়জনদের মৃত্যুর নীরব সাক্ষী ও মৃত্যুশোক—রবীন্দ্রনাথের এক অনন্য অভিজ্ঞতা লাভে সহায়ক হয়েছিল। কবি জীবনস্মৃতিতে ‘মৃত্যুশোক’ পর্যায়ে অকপটে লেখেন, ‘‘জগৎকে সম্পূর্ণ করিয়া এবং সুন্দর করিয়া দেখিবার জন্য যে দূরত্ব প্রয়োজন, মৃত্যু দূরত্ব ঘটাইয়া দিয়াছিল। আমি নির্লিপ্ত হইয়া দাঁড়াইয়া মরণের বৃহৎ পটভূমিকার উপর সংসারের ছবিটি দেখিলাম এবং জানিলাম, তাহা বড়ো মনোহর।’’
বিরহের সঙ্গে মিলনের, মৃত্যুর সঙ্গে অমৃতের, বেদনার সঙ্গে আনন্দের যে সম্পর্ক, সেই সৎ-চিৎ-আনন্দময় পরম ব্রহ্ম তথা আধ্যাত্মলোকের সন্ধান দেয় তাঁর সমূহ সৃষ্টি। বিশ্বপিতার অপার মহিমাকে মননে অনুধাবন করে কবি লিখেছিলেন,
‘‘হে সুন্দর হে সত্য, তুমি আমায় এ মোহ বাঁধন থেকে মুক্ত করো শূন্য করে দাও আমার হৃদয় আর এই শূন্যতার মাঝে আমার হৃদয় আসনে তুমি সুপ্রতিষ্ঠিত হও। দুঃখের অনলে দহনে মধ্য দিয়ে শোধন করে আমায় সুন্দর করো, গ্রহণ করো।’’
মৃত্যুকালীন সময় পর্বে অর্থাৎ অসুস্থ অবস্থায় রচিত রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু কবিতা ছিল মৃত্যুচেতনাকে কেন্দ্র করে সৃজিত কিছু অবিস্মরণীয় পংক্তিমালা।

১) মরণের মুখে রেখে দূরে .যাও দূরে যাও চলে
২) মরণ বলে, আমি তোমায় জীবনতরী বাই
৩) আবার যদি ইচ্ছা করে
আবার আসি ফিরে
৪) পেয়েছি ছুটি বিদায়
দেহো ভাই
সবারে আমি প্রণাম করে যাই
ফিরায়ে দিনু ঘরের চাবি
রাখি না আর ঘরের দাবি
সবার আজি প্রসাদ বাণী চাই
৫) আবার যাবার বেলাতে সবাই জয়ধ্বনি কর
৬) জানি গো দিন যাবে
এ দিন যাবে
একদা কোন বেলা শেষে
মলিন রবি করুণ হেসে
শেষ বিদায়ের চাওয়া
আমার মুখের পানে চাবে
মৃত্যুর মাত্র সাত দিন আগে পর্যন্তও কবি সৃষ্টিশীল ছিলেন। জোড়াসাঁকো রোগশয্যায় শুয়ে রানী চন্দকে লিখে নিতে বলেছিলেন। কবি বলে গেছেন, ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন কবিতাটি বলতে বলতে। দিনটা ছিল কবির শেষ বিদায়ের দিন কয়েক আগে চোদ্দো শ্রাবণ। রানী চন্দ সে দিন সূত্রধরের মতো লিখেও নেন—রবীন্দ্রনাথ উবাচ কবিতাটি
‘‘তোমার সৃষ্টির পথ
রেখেছ আকীর্ণ করি
বিচিত্র ছলনাজালে,
হে ছলনাময়ী—’’

এর পর কবি তাঁর পুত্রবধূ প্রতিমাদেবীকেও চিঠি লিখতে বলেছিলেন। রানী চন্দ সেই চিঠি লিখে দেবার পর কবি অশক্ত হাতে কাঁপা কাঁপা অক্ষরে সইও করে দিয়েছিলেন, ‘বাবামশাই’। প্রতিমাদেবী নিজেও সে সময় খানিক অসুস্থ ছিলেন। শান্তিনিকেতন থেকে অসুস্থ শরীরেই তিনি রবীন্দ্রনাথের কাছে এসেছিলেন। কবির শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে কবির কানের কাছে মুখ এনে বলেছিলেন, ‘‘বাবামশাই, বাবামশাই, আমি এসেছি, আপনার মামণি। জল খাবেন?’’ রবীন্দ্রনাথ খুবই অস্পষ্ট স্বরে পুত্রবধূকে করুন ভাবে তখন বলেছিলেন, ‘‘ কী হবে কিছুই বুঝতে পারছি না।’’
২২শে শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথের তিরোধান দিবসটিকে স্মরণ করে নতুন ‘বৃক্ষরোপণ উৎসব’ প্রচলিত শান্তিনিকেতনে। ১৯২৫ সালের ২৫শে বৈশাখ শান্তিনিকেতন উত্তরায়ণ বাসভবনের উত্তরপূর্ব কোণে নিজে হাতে কবি অশত্থ, আমলকি, অশোক, বেল ও বট—পাঁচটি বৃক্ষ চারারোপণ করে প্রথম বৃক্ষরোপণ উৎসবের আয়োজন করেন। আশ্রমকন্যা-সহ উপস্থিত সকলে কবির বৃক্ষবন্দনা গানটি গেয়ে মাঙ্গলিক আচারে পালন করেন সে দিনের বৃক্ষরোপণ উৎসব।

‘‘মরুবিজয়ের কেতন
ওড়াও শূন্যে
হে প্রবল প্রাণ। ধূলিরে ধন্য করো করুণার পুণ্যে
কে কোমল প্রাণ।
মৌনী মাটির মর্মের গান কবে উঠিবে ধ্বনিয়া মর্মর তব রবে,
মাধুরী ভরিবে ফুলে ফলে পল্লবে হে মোহন প্রাণ।’’

১৯২৮ সালে ১৪ জুলাই বর্ষা উৎসব দিন থেকে কবি বৃক্ষরোপণ উৎসব মহা সমারোহে শুরু করেন। গাছের চারা সুন্দর করে সাজিয়ে চতুর্দোলায় নিয়ে যাওয়া হয় রোপণ স্থানটিতে। সেটি ছিল বকুল চারা। এই উৎসব উপলক্ষে কবি ক্ষিতি-অপ-তেজ-মরুৎ-বোম এই পঞ্চভূতের উদ্দেশ্যে পাঁচটি কবিতা এবং বকুল চারাটির জন্য একটি মাঙ্গলিক রচনা করেছিলেন। মাঙ্গলিক মন্ত্রোচারণের মাধ্যমে রোপণ হয়েছিল সেই বকুল চারাটি। সেই চতুর্দোলার চার বাহকদের একজন ছিলেন শিল্পী নন্দলাল বসু। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা ও আয়োজকের গুরুদায়িত্ব ছিল পণ্ডিত বিধুশেখর শাস্ত্রী ও ক্ষিতিমোহন সেন এবং সঙ্গীত পরিচালনায় দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। উপস্থিত ব্যক্তিরা ছিলেন প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, অনাথ বসু, সতেন্দ্রনাথ বিশী, সুধীর খাস্তগীর, মনোমোহন দে ইত্যাদি বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। সে দিন অনুষ্ঠান শেষে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং তাঁর বলাই নামে গল্পটি পাঠ করেছিলেন। ‘বনবাণী’ কাব্যগ্রন্থে উঠে এসেছে বৃক্ষের নামে কবিতা। ১৯৩৮ সালে শ্রীনিকেতনে বর্ষামঙ্গল হলকর্ষণ ও বৃক্ষরোপণ উৎসব এক সঙ্গে পালিত হয়েছিল। বৃক্ষরোপণ নিয়ে একটি কবিতা সেই অনাগত মৃত্যুচেতনার আভাষ দেখা যায় কবির লেখনীতে,

‘‘হে তরু, এ ধরাতলে
রহিব না যবে
সে দিন বসন্তে
নব পল্লবে পল্লবে
তোমার মর্মরধ্বনি
পথিকেরে কবে
ভালোবেসে ছিল কবি বেঁচেছিল যবে’’

আগস্টের প্রথম দিন দুপুরবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের হিক্কা শুরু হয়। কবি কাতর স্বরে তখন উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন, ‘‘একটা কিছু করো, দেখতে পাচ্ছো না কী রকম কষ্ট পাচ্ছি পরের দিন হিক্কা থামানোর জন্য ময়ূরের পালক পড়িয়ে খাওয়ানো হলেও তাতে কিছুমাত্র লাঘব হল না। আগস্টের ৩ তারিখ থেকে কিডনিও নিঃসাড় হয়ে পড়ল। ৬ আগস্ট রাখি পূর্ণিমার দিন কবিকে পূবদিকে মাথা করে শোয়ানো হল। পরদিন ২২শে শ্রাবণ, ৭ অগস্ট—রবীন্দ্রনাথের কানের কাছে মন্ত্র জপ করা হচ্ছে—ব্রাহ্ম মন্ত্র

‘‘শান্তম, শিবম, অদ্বৈতম….’’
‘‘তমসো মা জ্যোতির্গময়…..’’
রবীন্দ্রনাথঠাকুর তখন মৃত্যু পথযাত্রী। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন ২২শে শ্রাবণের বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিট।
তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

https://www.youtube.com/watch?v=i2DTMnK-bL8

প্রয়াণের অষ্টম বার্ষিকীতে শিল্প সাহিত্যের জাদুকর হুমায়ুন আহমেদ…

আজ (১৯ জুলাই) বাংলার নন্দিত কথাশিল্পী ও চিত্রনির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। দেখতে দেখতে কেটে গেল জন নন্দিত এই কথাশিল্পীর প্রয়াণের ছয় ছয়টি বছর। ২০১২ সালের আজকের এই দিনে ক্যান্সার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি নিউইয়র্কের বেলভ্যু হাসপাতালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জোছনার গল্প কথক কিংবা হিমু-মিসির আলির এই স্রষ্টা। তার মৃত্যু শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপী সব বাঙালির হৃদয়ে গভীর শোকের অন্ধকার ছড়িয়ে দিয়েছিল।

মাত্র ৬৪ বছরের জীবনে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর কীর্তি রেখেছেন শিল্প-সাহিত্যর প্রায় প্রতিটি শাখা প্রশাখায়। বাংলা সাহিত্য, নাটক, চলচ্চিত্র ও গান পালাবদলের এ কারিগর ১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়ে নিজের অস্তিত্বের সাক্ষর রাখেন। তার ‘নন্দিত নরকে’ আর ‘শঙ্খনীল কারাগার’ পাঠ করে আবিষ্ট হয়েছিলেন, সেই আবেশ আজও কাটেনি বাংলা ভাষার পাঠকদের। তিনি তাঁর সাহিত্য দিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ রেখেছেন বাংলার মানুষকে, তিনি জয় করে গেছেন একেবারে সাদামাটা বাঙ্গালীর মন কে, আবার উন্নত ঐশ্বর্যিক বাঙ্গালিয়ানাকে। নিজেকে তিনি যেভাবে বাংলা কথাসাহিত্যের অঙ্গনে, টেলিভিশন নাটক আর চলচ্চিত্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন তা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক বিরল । তিনি এদেশের সৃজনশীল সাহিত্য প্রকাশনাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন বিপুল পাঠকপ্রিয়তা সৃষ্টির মাধ্যমে। ভারতীয় বাংলা গল্প, উপন্যাসে নিমগ্ন পাঠকদের বাংলাদেশি লেখকদের বই পড়তে বাধ্য করেছিলেন তার আশ্চর্য জাদুকরী গল্পের জালে জড়িয়ে। মোহাবিষ্ট পাঠক হুমায়ূন আহমেদের রচনায় মধ্যবিত্ত জীবনের হাসি-কান্নার এমন নিবিড় পরিচয় পেয়েছেন, যেখানে তাদের নিজেদেরই জীবনের ছবি প্রতিবিম্বিত। এক হুমায়ুন আহমেদের পথ ধরে এগিয়ে এসেছেন অসংখ্য প্রতিভা, অসংখ্য মানুষ তার হাত ধরে হয়েছেন অনন্য, একেবারে সাদামাটা মানুষকে তিনি বানিয়ে দিয়েছেন নন্দিত চিত্রতারকা!তাদের অনেকেই হয়েছেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিল্পী। আমরা তাঁর সৃষ্টিতে খুঁজে পাই অসাধারণ সব নৈপুণ্য, অনন্য নৈসর্গিক দৃশ্য, জোছনা, খুঁজে পাই আমাদের জীবনের নানান সব ব্যঞ্জনা।
হুমায়ূন আহমেদের অনন্য সৃষ্টি হিমু! সে এক অসাধারণ চরিত্রের নিরন্তর পথ চলা… এক ভিন্ন মেজাজ, ভিন্ন স্টাইল, ভিন্ন রঙ রূপ এর অপূর্ব সমন্বয়, যা আমাদের দেশের বেশিরভাগ তারুণ্য কে ছুঁইয়ে গেছে, আজো ছুঁইয়ে আছে আর আগামী দিনে একিই প্রভাব নিয়ে এই চরিত্রটি টিকে থাকবে।

এদেশে দর্শকনন্দিত নাটকগুলোর একটি বড় অংশ তার সৃষ্টি। তার ছায়াছবিও সমাদৃত হচ্ছে সমানভাবে। প্রয়াণের ছয় বছর পরও বাংলা শিল্প-সাহিত্যের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে চলছে তাঁরই আধিপত্য, তারই রাজত্ব, তারই জয়জয়কার! এখনো সমান তালে সমান ছন্দে বিরাজ করছে হুমায়ুন প্রভাব যা রবীন্দ্র নজরুলের পর আর কেউই খাটাতে সক্ষম হয়নি। হুমায়ূন আহমেদ এর পুস্তুক প্রকাশকদের মতে তার নতুন বা পুরনো সব গ্রন্থই সর্বোচ্চ বিক্রিত বইয়ের তালিকায় স্থান করে নেয়। এই হিসেব মতে হুমায়ুন আহমেদ কে আধুনিক শিল্প সাহিত্যের রিদম বলা ভুল হবেনা।
বাংলা টেলিভিশনের জন্য একের পর এক দর্শকনন্দিত নাটক রচনার পর ১৯৯০-এর গোড়ার দিকে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তাঁর পরিচালনায় প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমণি’ মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। ২০০০ সালে ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ও ২০০১ সালে ‘দুই দুয়ারী’ দর্শকদের দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। ২০০৩-এ নির্মাণ করেন ‘চন্দ্রকথা’।
এছাড়া ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন ছায়াছবি ‘শ্যামল ছায়া’ , ২০০৬ সালে ‘সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র’ বিভাগে একাডেমী পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে যেটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এবং বেশ কিছু আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। একিই বছর মুক্তি পায় ‘৯ নম্বর বিপদ সংকেত’। ২০০৮-এ ‘আমার আছে জল’ চলচ্চিত্রটি তিনি পরিচালনা করেন। ২০১২ সালে তাঁর পরিচালনার সর্বশেষ ছবি ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ মুক্তি পায়। যা দেশ-বিদেশে প্রচুর আলোচনায় আসে। তাঁর চলচ্চিত্রের মৌলিক গানগুলো তিনি নিজেই রচনা করেন, যার বেশিরভাগই পায় তুমুল জনপ্রিয়তা।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। ডাক নাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার ছোটভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।

তিনি ১৯৬৫ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে স্নাতক ও ১৯৭২ সালে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ৯০ দশকের মাঝামাঝি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে লেখালেখিতে পুরোপুরি মনোযোগ দেন।
১৯৭৩ সালে প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁর নাতনি গুলতেকিন খানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন হুমায়ূন আহমেদ । হুমায়ূন এবং গুলতেকিন দম্পতির চার ছেলে-মেয়ে। তিন মেয়ে নোভা, শীলা ও বিপাশা আহমেদ এবং ছেলে নুহাশ হুমায়ূন। দীর্ঘ ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২০০৫ সালে ডিভোর্সের মাধ্যমে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এরপর তিনি অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির দুই ছেলে- নিষাদ ও নিনিত হুমায়ূন।

লেখকঃ দাউদুল ইসলাম
কবি ও প্রাবন্ধিক।

যে হিসাব এখনও মিলাতে পারি নি- (০১)

কথা খুবই অল্প।
একটি ছোট বাচ্চাকে আজ যদি আপনি প্রশ্ন করেন, বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও? খুব সহজ এবং কমন কিছু উত্তর আসবে ডাক্তার/ ইঞ্জিনিয়ার/ পাইলট ইত্যাদি ইত্যাদি। হাইস্কুলের একটা বাচ্চাকে প্রশ্ন করুন, সে বলবে আমার অভিভাবক যা বলবে তাই হবো। ইন্টারমিডিয়েট লেভেলের একটা ছেলে/মেয়েকে জিজ্ঞেস করুন বলবে আগে দেখি অনার্সে কোন বিষয় পাই, তারপর চিন্তা করা যাবে। অতঃপর অনার্স পড়ুয়া একটি ছাত্র/ছাত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন। সে কোন বিষয়ে পড়ছে তা বড় কথা নয় তার উত্তর হবে খুবই ডিপ্লোমেটিক। আগে তো অনার্স শেষ করি, তারপর মাষ্টার্স, তারপর না হয় চাকরির কথা ভাবা যাবে।

প্রথম কথা, আপনি অনার্স পড়ছেন, তবে এটা শেষ করে কেন মাষ্টার্স করবেন? যেটা অনার্স এরই সমমান। অর্থাৎ যারা অনার্স পড়েনি, শুধু ডিগ্রী (পাস) কোর্স করেছে তাদের জন্য এই মাষ্টার্স কোর্সটি রাখা হয়েছে, তারা যেন অনার্স এর সমমান হতে পারে। আর আপনি অনার্স শেষ করে আবারও আর একটি অনার্স সমমান এর ডিগ্রীর জন্য অনেক বড় বড় (সরি, দামী দামী) বেসরকারি ভার্সিটিতে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালছেন!

দ্বিতীয়ত, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বর্তমানে প্লে-গ্রুপ থেকে অনার্স পর্যন্ত পাশ করতে মোট ২০ বছর লেগে যায়। এই ২০ বছরেও আপনি ঠিক করতে পারেন না আপনি কি করবেন? কি হবেন? কি করতে চান? কি করা উচিত? কোন পেশায় যাবেন? কেন যাবেন?
এর প্রকৃষ্ট উদাহরন হলো বর্তমান আমাদের দেশের কর্মক্ষেত্রগুলি।
(১) আমার পরিচিত একজন সিএসই আজ সরকারী অফিসে ৩য় শ্রেণীর চাকরীতে আছেন।
(২) বাংলায় অনার্স ও মাষ্টার্স! করা একজন ব্যাংকে চাকরী করছেন।
(৩) মার্কেটিং বিভাগে অনার্স ও মাষ্টার্স! করা একজন একটি এনজিওর ডোনেশন প্রোগ্রামে চাকরী করছেন।
(৪) সমাজ কল্যান বিভাগে অনার্স ও মাষ্টার্স! করা একজন ঔষধ কোম্পানীর সেলস রিপ্রেজেন্টিভ।
(৫) রসায়ন বিভাগে অনার্স ও মাষ্টার্স! করা ছেলেটা আজও যে কোন একটা চাকরীর জন্য শুধু আবেদন করেই যাচ্ছে।
(৬) রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স মাষ্টার্স! করা একটা ছেলে টেলিভিশনে ইংলিশ নিউজ প্রেজেন্টার।

আমরা এই ২০ বছর কেন পড়াশুনা করি? কোন উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাই? আমরা নিজেই জানি না। আমাদের এই সিস্টেম থেকে বেড়িয়ে আসা দরকার। এ রকম বিশেষায়িত পড়াশুনাগুলি আমাদের বদলানো দরকার। নয়তো আমাদের ছাত্র/ছাত্রীদের সচেতন করা দরকার। তাদের চিন্তা, চেতনা, মনন, মানসিকতা ও ইচ্ছাগুলিকে বিবেচনায় এনে কে কি হতে চায় তা প্রত্যেক অভিভাবককে বুঝতে হবে। তারা কোন বিষয়টাতে বেশি মনোযোগী? কোন বিষয়টা পছন্দ করছে? সেদিকে একটু খেয়াল রাখতে হবে।

আপনার স্বপ্ন আপনার ছেলে/মেয়েকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কিছু বানানোর সেটা কোন দোষের নয় আপনি আপনার বাচ্চাকে ছোটবেলা থেকে সেভাবে, সেই মন মানসিকাতা নিয়ে বেড়ে উঠতে সাহায্য করুন। অবচেতন মনে তাকে ভাবতে দিন তাকে আপনার ইচ্ছা পূরন করার সুযোগ করে দিন। নয়তো আপনি যেমন স্বপ্ন দেখতে জানেন এরকম স্বপ্নতো সেও দেখতে জানে। হয়তো আপনি স্বপ্ন দেখছেন আপনার সন্তান বড় কোন ব্যাংক কর্মকর্তা হবে। কিন্তু আপনার সন্তান স্বপ্ন দেখছে সে বড় হয়ে একজন ভালো খেলোয়াড় হবে। দু’জনের স্বপ্নের মধ্যে একটা দূরত্ব হয়ে গেল। ফলাফল আপনার সন্তান হয়তো কিছুই হলো না। এই জন্য দায়ী কে? আপনি হয়তো এক তরফা আপনার সন্তানকেই দায়ী করবেন। কিন্তু না আমি দোষটা কাউকেই দিব না। কারন স্বপ্ন দেখার অধিকার সবারই আছে। আপনার সন্তানকে ছোট থেকেই ব্যাংক কর্মকর্তা হওয়ার ব্যাপারে অনুপ্রেরণা দিন। ব্যাংক কর্মকর্তা হলে কি ধরনের সুবিধা সেগুলো তার সামনে তুলে ধরুন। তাকে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করুন। সে একদিন আপনার স্বপ্ন পূরণ করবেই। অন্যথায় আপনার সন্তানের স্বপ্ন পূরণ করতে চেষ্টা করুন। সে তো আর খারপ কিছু চাইছে না। আমাদের দেশে অনেক খেলোয়ার আছে যারা তাদের স্বপ্ন পূরণ করার জন্য খেলোয়াড়ের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। সাড়া বিশ্বকে তাদের খেলোয়াড়ী গুন দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশকে চিনিয়েছেন।
একবার চেষ্টা করেই দেখুন না। অন্তত একটা স্বপ্ন তো পূরণ হোক!

পাপ শপাংকের সাতকাহন-১

এ্যারিস্টটলের মতে মানুষ কোনো পাপ কাজ করতে পারে না, সে যাই করে তার নিজের জন্যই করে। তখনকার গ্রীক দার্শনিকরা পাপকে আক্রাশিয়া নাম দিয়েছিলেন। প্লেটো এ্যারিস্ট টল যতই পাপের অস্তিত্ব অস্বীকার করুক না কেন, আকিনাস, দেকার্ত সবাই এই আক্রাশিয়ার অস্তিত্বের ওপর অগাধ বিশ্বাস রেখেছিলেন। কেউ কেউ নিজের বিবেকের বিপরীতে কিছু করাকেই পাপ বলতেন, কেউ কেউ খোদ বিবেকের উৎস এবং তার পঠন পাঠন নিয়েই প্রশ্ন তুলতেন।

তখন আমাদের ভার্সিটির গেটের সামনে বাঁচা বাবা নামের একটা রেস্টুরেন্ট ছিলো। রান্নায় তেমন বাহারী স্বাদ না থাকলেও হলের একই রকম খাবার থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমাদের একমাত্র উপায় ছিলো এই রেস্টুরেন্ট টি। কারো জন্মদিন, বা কোনো বান্ধবী প্রপোজ করেছে অথবা সেমিস্টার ফাইনালে টপ করলেই চল বাঁচা বাবা। পাশ করে বের হয়ে জবে ঢুকলাম, ওর বেশ কয়েকবছর পর কনভোকেশনের ডাক পেলাম। তখনও গিয়ে দেখলাম দিব্যি গম গম করছে বাঁচা বাবা। কনভোকেশনের বিশাল ভূড়িভোজের পরেও বাঁচা বাবাতে বসে চা বা পরোটার সাথে এক বাটি সব্জি এখনো স্মৃতির মানসপটে। যেসব ৯-১০ বছরের ছেলেগুলো কাজ করতো তারা তখন জোয়ান। আর যারা যুবক ছিলো, অনেকেই বিয়ে শাদী করেছে, রেস্টুরেন্টের পাশেই একটা ঘর করে সংসার জাকিয়ে বসেছে। ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে যখন দেশ জুড়ে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের আয়োজন চলছিলো, সেসময় রাঙ্গুনিয়ার সেই ছোট্ট রেস্টুরেন্ট টির ওপর বুলডোজার পড়ে। এরপর সেখানে রেস্টুরেন্ট টি দাড়াতে পারেনি। জানি না যারা ওই প্রতিষ্ঠান ঘিরে নিজের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করেছিলো, তারা এখন কেমন আছে।

তখন পুরো ঢাকা শহর ঘুরে বুঝলাম, হঠাৎ করে দুর্নীতি যদি বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে প্রায় কয়েক কোটি সংগ্রামী মানুষ পথে বসে যাবে। যদিও একসময় মানুষ ঠিকই মানিয়ে নেয়, কিন্তু মানুষ না খেয়ে বেচে থাকতে পারে মাত্র তিনদিন। আর একটা ঘুনে ধরা সিস্টেম ঠিক হতে লাগে বছরের পর বছর। তখন আরো একটা প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেলো পাপ আসলে কি জিনিস? আসলেই কি এর অস্তিত্ব আছে?

এই যে এতগুলো সংগ্রামী মানুষ, তারা চুরি করছে না, হত্যা রাহাজানী ডাকাতি করছে না। তারা খুব সাধারন ভাবেই ব্যাবসা করছে সিস্টেমের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে। কারন এটা তাদের জন্য সস্তা এবং তার চেয়ে বড় কথা সাধ্যের নাগালে। রাস্ট্র পারেনি বলেই তারা বেচে থাকার এরকম সৎ পথ বেছে নিয়েছে। এটা কিভাবে পাপ হতে পারে?

তাহলে পাপ বলে কি কিছু নেই? সেটা কিভাবে হয়? হত্যা খুন ধর্ষন এগুলো পাপ, তাই না?

মধ্যযুগের লেখক অগাস্টিনের মতে আমরা পাপ করি যখন কোনো কিছু করার সদিচ্ছা যদি দুর্বল হয়। প্রায় সমসাময়িক একিউনাস বিশ্বাস করতেন আমরা পাপ করতে পারি কারন আমাদের ইচ্ছাগুলো কল্পনা রং এ মেশাতে পারি এবং তাকে যুক্তি সংগত করতে পারি যাতে করে আমাদের মনে হয় এটাই ছিলো সর্বোত্তম যার ফলে নিজেকে বোঝাতে পারি যে আমি এটাই করতে চাই।

তার মানে পুরো ব্যাপারটাই নিজের স্বার্থে ভাবা বা নিজের জন্য করা। যখন মানুষ অপরের জন্য না ভেবে নিজের স্বার্থে কিছু করে তাহলেই কি পাপ হবে?মনে হয় না, যখন কারো কোনো ক্ষতি করে বা কোনো কিছু ক্ষতি হয় তাহলেই পাপ বলে ধরে নেয়া যায়, তাই না? কিন্তু যদি এমন হয় যে পরের ভালো করতে গিয়ে নিজের ক্ষতি হয় তাহলে সেটাই বা কেমন বুদ্ধিমানের কথা?

তখন প্রশ্ন আসতে পারে কোনো কিছু বিচার করার অধিকারটা কার আছে? ঈশ্বর?

সেক্ষেত্রে পাপ ব্যাপারটাকে দুভাগে ভাগ করা যেতে পারে। নৈতিক মূল্যবোধ যেটা কিনা মানুষ সম্পূর্ন স্বাধিনভাবে বিচার করতে পারে এবং যার ফল সবার জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে, যদি তা নাও হয়, তাহলে ক্ষতি করবে না। একে নৈতিক পাপাচার বা দর্শনগত পাপ। ধর্মীয় পাপের ব্যাপারটা পুরোপুরি ঈশ্বর বা তার প্রদত্ত পথপ্রদর্শক বা ধর্মগ্রন্থে উল্লেখিত বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এক্ষেত্রে নৈতিক পাপাচারের অনেক কিছু ধর্মীয় পাপাচারের লিস্টে থাকে না। এই যেমন দাসপ্রথা, শিশুকাম, বাল্যবিবাহ, লুট, ধর্মের নামে হত্যা ইত্যাদি।

ব্যাক্তিগতভাবে পাপের কনসেপ্টটা একটা হাস্যকর কৌতুক মনে হয়। একটা শিশুর সামনে আপনি দুটো মুস্টিবদ্ধ হাত ধরলে তাকে কিছু বলার আগেই সে একটা হাত বেছে নিয়ে তা খোলার চেস্টা করবে। সেটাতে কিছু না থাকলে আরেকটা হাত ধরে বসবে। আপনি যদি আবার আগের হাতটি মুস্টিবদ্ধ করেন সে আবার ওটা ধরবে। তখন তার কাছে ব্যাপারটা অভ্যাসগত খেলায় পরিনত হয়। যতক্ষন না টডলার পরিপক্ক হবে তার সামনে প্রতিদিন এই মুস্টিবদ্ধ হাত ধরুন, সে আনন্দের সাথেই খেলবে।

বিশ্বাসের ক্ষেত্রে মানুষ এমনই। মানুষ এত বিশ্বাসী কেন এটা ভাবতে গিয়ে দেখলাম দর্শনের চাইতে এর সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারে নিউরোসায়েন্স বা এনাটমি। মানুষের মাথার ডানে ভেন্ট্রোলেটারাল প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স অংশটির জন্য মানুষ বিশ্বাসী হয়। তাহলে ধর্মের উৎপত্তী এত পড়ে আসলো কেন? এর প্রধান কারন যখন নিয়েনডার্থালরা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াতো অর্থাৎ মানুষের বিবর্তন শুরু হয়নি, তখন তারা ছিলো বেশ ক্ষিপ্র এবং পঞ্চইন্দ্রিয় সমূহ খুব শক্তিশালী কারন তাদের মস্তিস্কের এই অংশগুলো বেশ বড় ছিলো। তারা খুব শিকারী ছিলো, এবং মাথার পেছনের দিকটা অপেক্ষাকৃত বড় হওয়ায় তারা বুদ্ধিমান ছিলো। তাদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স এতটা উন্নত না থাকায় তারা মৃত সৎকারের আচারেই সীমাবদ্ধ ছিলো। ঈশ্বরের কনসেপ্ট তাদের মধ্যে আসেনি। মানুষের ঐশ্বরিক ধারনা অনেক পরে আসে যখন নিয়েনডার্থালরা বিলুপ্ত হতে থাকে এবং মানুষ সমাজবদ্ধ হতে থাকে। সমৃদ্ধির ফলে তখন মৃত ব্যাক্তির সৎকারের সাথে সাথে আত্মা, মৃত্যুপরবর্তী জীবন নিয়ে ভাবতে শুরু করে।

আর ঠিক এমসয়টাতেই প্রচলন হয় সভ্যতার কুৎসিত দাসপ্রথা। বলা হয়ে থাকে বর্নবাদ, জাতিগত বিদ্বেষ থেকে শুরু করে হানিকারক বিষয় সমূহের উৎপত্তি ঠিক এখান থেকেই।

চলবে….

বিশ্বপিতা তুমি হে প্রভু………. মহান যীশু ও তার বাণী

বিশ্বপিতা তুমি হে প্রভু………. মহান যীশু ও তার বাণী
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

‘বড়দিন’ যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে পারি, যে দিন, “মানুষের মধ্যে মানুষের এই ‘বড়ো’র আবির্ভাব” সেদিনই আমাদের বড়দিন। যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিনকে ইংরেজীতে ক্রিসমাস (ঈযৎরংঃসধং) বলা হয় কিন্তু বাংলায় বলা হয় ‘বড়দিন’। ‘বড়দিন’ শব্দটি বাংলার মানুষের। ‘বড়দিন’ শব্দটি সম্ভবত প্রথম ব্যবহার করেছেন কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত। কারণ কবি ঈশ্বরচন্দ্রগুপ্ত ‘বড়দিন’কে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি কবিতা রচনা করেছেন।

‘বড়দিন’ শিরোনামের কবিতায় তিনি লিখেছেন,
“যদিও আমরা হই হিন্দুর সন্তান।
বড়দিনে সুখি তবু, খৃষ্টান সমান।”

আরেকটি ‘বড়দিন’ কবিতায় তিনি ইংরেজ সাহেব সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন,
“খৃষ্টের জন্ম দিন, বড়দিন, বড়দিন নাম।
বহু সুখে পরিপূর্ণ, কলিকাতা ধাম ॥”
কেরানী, দেওয়ান আদি, বড়বড় নেট।
সাহেবের ঘরে ঘরে, পাঠাতেছে ভেট।”

কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ‘বড়দিন’ কবিতায় যীশু খ্রীষ্ট ও কৃষ্ণকে তুলনা করে এক চমৎকার উপমা বেঁধেছেন,
“কেথলিক, দল সব, প্রেমানন্দে দোলে।
শিশু ঈশু গড়ে দেয়, মেরিমার কোলে ॥
বিশ্বমাঝে চারু রূপ, দৃশ্য মনোলোভা
যশোদার কোলে যথা, গোপালের শোভা ॥

এখানে মেরি ও যীশুর সঙ্গে যশোদা ও কৃষ্ণের তুলনা করেছেন। যে যীশু নাজারেথের যীশু, বিদেশী ইংরেজদের যীশু, সেই যীশু ও মেরী, বাঙালী ও বাংলা ভাষাভাষি মানুষের আত্মার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনায় বড়দিনের অনেক চিত্র দেখতে পাই। তার পুনশ্চ কাব্যের ‘শিশু তীর্থ’ কবিতায় শিশু যীশুর চিত্র তুলে ধরেছেন।
“মা বসে আছেন তৃণশয্যায়, কোলে তাঁর শিশু,
উষার কোলে যেন শুকতারা।
…উচ্চস্বরে ঘোষণা করলো। জয় হোক মানুষের,
ওই নবজাতকের, ওই চিরজীবিতের।”

তিনি পুনশ্চ কাব্যের ‘মানবপুত্র’ কবিতায় লিখেছেন,
“মৃত্যুর পাত্রে খৃষ্ট যেদিন মৃত্যুহীন প্রাণ উৎসর্গ করলেন
রবাহূত অনাহূতের জন্যে,
তারপরে কেটে গেছে বহু শত বছর।
আজ তিনি একবার নেমে এলেন নিত্যধাম থেকে মর্তধামে।
চেয়ে দেখলেন, সেকালেও মানুষ ক্ষতবিক্ষত হত যে-সমস্ত পাপের মারে…।”

রবীন্দ্রনাথ ‘খৃষ্ট’ প্রবন্ধগ্রন্থের ‘যিশু চরিত’ ‘মানবসম্বন্ধের দেবতা’ ‘খৃষ্টধর্ম’ ‘খৃষ্টোৎসব’ ‘বড়োদিন’ ও ‘খৃষ্ট’ প্রবন্ধগুলোর মধ্যে যীশু খ্রীষ্টের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। ‘যীশু চরিত’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “তিনি আপনাকে বলিয়াছেন মানষের পুত্র। মানবসন্তান যে কে তাহাই তিনি প্রকাশ করিতে আসিয়াছেন। তাই তিনি দেখাইয়াছেন, মানুষের মনুষত্ব সাম্রাজ্যের ঐশ্বর্যেরও নহে, আচারের অনুষ্ঠানেও নহে; কিন্তু মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের প্রকাশ আছে এই সত্যেই সে সত্য। মানব সমাজে দাঁড়াইয়া ঈশ্বরকে তিনি পিতা বলিয়াছেন।… তাই ঈশ্বরের পুত্ররূপে মানুষ সকলের চেয়ে বড়ো, সাম্রাজ্যের রাজারূপে নহে।”

তিনি লিখেছেন, “মানুষকে এই মানবপুত্র বড়ো দেখিয়াছেন বলিয়াই মানুষকে যন্ত্ররূপে দেখিতে চান নাই।” অপরদিকে ‘খৃষ্টধর্ম’ প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, “যিনি বড়ো তিনি যে প্রেমিক। ছোটকে নিয়ে তাঁর প্রেমের সাধ্যসাধনা।… মানুষের মধ্যে মানুষের এই বড়োর আবির্ভাব, যিনি মানুষের হাতের সমস্ত আঘাত সহ্য করছেন এবং যাঁর সেই বেদনা মানুষের পাপের একেবারে মূলে গিয়ে বাজছে।

এই আবির্ভাব তো ইতিহাসের বিশেষ কোন একটি প্রান্তে নয়।… মানুষের সেই বড়ো, নিয়ত আপনার প্রাণ উৎসর্গ ক’রে মানুষর ছোটোকে প্রাণদান করছেন।” বড়দিন সম্পর্কে বলতে গিয়ে ‘বড়োদিন’ নামক প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “আজ তাঁর জন্মদিন এ কথা বলব কি পঞ্জিকার তিথি মিলিয়ে? অন্তরে যে দিন ধরা পড়ে না সে দিনের উপলব্ধি কি কালগণনায়? সেদিন সত্যের নাম তাগ করেছি, যেদিন অকৃত্রিম প্রেমে মানুষকে ভাই বলতে পেরেছি, সেইদিনই পিতার পুত্র আমাদের জীবনে জন্মগ্রহণ করেছেন, সেইদিনই বড়োদিনÑ যে তারিখেই আসুক। …সেদিন বড়োদিন নিজেকে পরীক্ষা করার দিন, নিজেকে নম্র করার দিন।” তিনি ‘খৃষ্টোৎসব’ প্রবন্ধ শুরু করেছেন তার ‘গীতাঞ্জলি’র একটি কবিতা বা একটি গান দিয়ে,
“তাই তোমার আনন্দ আমার ’পর, তুমি তাই এসেছ নিচে।
আমায় নইলে, ত্রিভুবনেশ্বর, তোমার প্রেম হত যে মিছে।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন ‘বড়দিন’ নিয়েই শুধু রচনা করেননি। তিনি যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন ‘বড়দিন’ দেশে বিদেশে যখন যেখানে গিয়েছেন, সেখানেই পালন করেছেন। শান্তিনিকেতন আশ্রমে ১৯১০ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম তিনি বড়দিন উৎসব পালনের আয়োজন করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি ২৫ ডিসেম্বর ‘বড়দিন’ পালিত হয়ে আসছে। ২৫ ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনের মন্দিরে যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন পালন করা হয়। ধ্বনিত হয় যীশু খ্রীষ্টের প্রার্থনা সঙ্গীত, নাম জপ ও বাইবেল পাঠ। ধ্যান প্রার্থনার পর সবাই জ্বলন্ত মোমবাতি হাতে নিয়ে ছাতিমতলায় সম্মিলিত হয়।

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও তার লেখনীর মাধ্যমে যীশু খ্রীষ্টের নাম ও বড়দিনের বিষয়ে তুলে ধরেছেন। তার বিষের বাঁশি কাব্যগ্রন্থের ‘সত্য-মন্ত্র’ কবিতায়, খ্রীষ্টনাম উচ্চারিত হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, “চিনেছিলেন খ্রীষ্ট বুদ্ধ
কৃষ্ণ মোহাম্মদ ও রাম
মানুষ কী আর কী তার দাম।”
তিনি প্রলয়-শিখা কাব্যের নমষ্কার কবিতায় লিখেছেন,
“তব কলভাষে খল খল হাসে বোবা ধরণীর শিশু,
ওগো পবিত্রা, কূলে কূলে তব কোলে দোলে নব যিশু।”
চন্দ্রবিন্দু কাব্যগ্রন্থের গ্রন্থের ‘ভারতকে যাহা দেখাইলেন’ সেই কবিতায় তিনি লিখেছেন,
“যীশু খ্রীষ্টের নাই সে ইচ্ছা
কি করিব বল আমরা!
চাওয়ার অধিক দিয়া ফেলিয়াছি
ভারতে বিলিতি আমড়া।”

‘বড়দিন’ শিরোনামের কবিতায় তিনি অসাম্যের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়ে লিখেছেন,
“বড়লোকদের ‘বড়দিন’ গেল, আমাদের দিন ছোটো,
আমাদের রাতকাটিতে চায় না, খিদে বলে নিবে ওঠো।
পচে মরে হায় মানুষ, হায়রে পঁচিশে ডিসেম্বর।
কত সম্মান দিতেছে প্রেমিত খ্রীষ্টে ধরার নর।
ধরেছিলে কোলে ভীরু মানুষের প্রতীক কি মেষ শিশু?
আজ মানুষের দুর্গতি দেখে কোথায় কাঁদিছে যীশু!”

তার বিখ্যাত কবিতা ‘দারিদ্র্য’-এর মধ্যে দারিদ্র্যের জয়গান করতে গিয়ে তিনি যীশু খ্রীষ্টের উপমা তুলে ধরেছেন।
“হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান
কণ্টক মুকুট শোভা।”

আবার ‘বারাঙ্গনা’ কবিতায় মা মেরীর মাতৃত্বের জয়গান গেয়েছেন।
তিনি এখানে মা অহল্যা ও মা মেরীর উপমা তুলে ধরেছেন,
“মুনি হ’ল শুনি সত্যকাম সে জারজ জবালা শিশু,
বিস্ময়কর জন্ম যাহার-মহাপ্রেমিক যীশু!
অহল্যা যদি মুক্তি লভে না, মেরী হতে পারে দেবী,

ক্রুশের উপরে যীশুর
শেষ সাতটি বাণী

THE SEVEN LAST WORDS
OF JESUS ON THE CROSS
(Bengali)
লেখক : ডঃ আর. এল. হাইমার্স, জুনিয়র|
by Dr. R. L. Hymers, Jr.
2016 সালের, 20শে মার্চ, প্রভুর দিনের সন্ধ্যাবেলায় লস্ এঞ্জেল্সের
ব্যাপটিষ্ট ট্যাবারন্যাক্ল মন্ডলীতে এই ধর্ম্মোপদেশটি প্রচারিত হয়েছিল
A sermon preached at the Baptist Tabernacle of Los Angeles
Lord’s Day Evening, March 20, 2016
‘‘পরে, মাথার খুলি নামক স্থানে গিয়া, তাহারা তথায় তাঁহাকে, এবং সেই দুই দুষ্কর্মকারীকে ক্রুশে দিল, এবং একজনকে তাঁহার দক্ষিণ পার্শ্বে, ও অন্য জনকে বাম পার্শ্বে রাখিল’’ (লূক 23:33)|

যীশুর শারীরিক দুঃখভোগ ছিল অতি তীব্র| এটা হয়েছিল চাবুকের আঘাতের দ্বারা যা আক্ষরিক অর্থেই তাঁর গায়ের চামড়া ফালি ফালি করে ছাড়িয়ে দিয়েছিল এবং পিঠে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল| ঐরকম চাবুকের আঘাতের ফলে অনেক লোক মারা যেত| এরপর, তারা একটা কাঁটার মুকুট নিয়ে তাঁর মাথায় চেপে বসিয়ে দিয়েছিল| তীক্ষ্ণ কাঁটা তাঁর মাথায় গেঁথে গিয়েছিল, আর রক্তের ধারা তাঁর মুখমন্ডল বেয়ে নেমে এসেছিল| তারা তাঁর মুখন্ডলেও আঘাত করেছিল, তাঁর গায়ে থুথু দিয়েছিল, এবং নিজেদের হাত দিয়ে তাঁর দাড়ি উপড়িয়ে নিয়েছিল| তারপরে তারা তাকে নিজের ক্রুশ যিরূশালেমের রাস্তা দিয়ে বয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল, সেই বধ্যভূমি পর্যন্ত যাকে বলা হয় কালভেরী| শেষ পর্যন্ত, বড় বড় পেরেক তাঁর পায়ের এবং হাতের তালুতে অর্থাৎ যেখানে হাতের তালু এবং কবজি সংযুক্ত হয়েছে, সেখানে বিদ্ধ করা হয়েছিল| এইভাবে তিনি ক্রুশের সঙ্গে পেরেকবিদ্ধ হয়েছিলেন|

বাইবেল বলছে:
‘‘মনুষ্য অপেক্ষা তাঁহার আকৃতি [তাঁহার দৃষ্টিগোচরতা] মানব সন্তানগণ অপেক্ষা তাঁহার রূপ বিকারপ্রাপ্ত [বিকৃত চেহারা] বলিয়া, [মনুষ্যের পছন্দের বাহিরে বিকৃত] যেমন অনেকে তাঁহার বিষয়ে হতবুদ্ধি হইত’’ (যিশাইয় 52:14)|

আমরা চলচ্চিত্রে বলিউড অভিনেতাদের যীশুর চরিত্র অঙ্কন করা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি| এই চলচ্চিত্রগুলি কখনো ক্রুশারোপনের সেই গভীর আতঙ্ক এবং যন্ত্রণাকর বর্বরতা বিশদভাবে দেখায় না| আমরা চলচ্চিত্রে যা দেখতে পাই সেটা কিছুই নয় যখন তার সঙ্গে যীশু ক্রুশের উপরে প্রকৃতপক্ষে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন তার তুলনা করা হয়| ততক্ষণ নয় যতক্ষণ না ‘‘খ্রীষ্টের আবেগ’’ আমরা দেখতে পাই যা প্রকৃতপক্ষে তাঁর প্রতি ঘটেছিল| সেটা সত্যি সত্যিই ভয়ঙ্কর ছিল|

তাঁর মাথার খুলিতে চিড় ধরেছিল| তাঁর মুখমন্ডল এবং ঘাড় বেয়ে রক্ত নিচে নেমে আসছিল| তাঁর চোখদুটি ফুলে উঠে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছিল| সম্ভবত তাঁর নাক ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং সম্ভবত কন্ঠার হাড়ও ভেঙ্গেছিল| তাঁর দুটি ঠোঁট ছিঁড়ে গিয়েছিল এবং রক্ত ঝরছিল| তাঁকে চিনতে পারা খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল|
তবুও এটাই হচ্ছে ঠিক সেই কথা যা দুঃখভোগরত ভৃত্যের বিষয়ে ভাববাদী যিশাইয় ভবিষ্যবাণী করেছিলেন, ‘‘মনুষ্য অপেক্ষা তাঁহার আকৃতি মানব সন্তানগণ অপেক্ষা তাঁহার রূপ বিকারপ্রাপ্ত বলিয়া, যেমন অনেকে তাঁহার বিষয়ে হতবুদ্ধি হইত’’ (যিশাইয় 52:14)| বিদ্রূপ এবং থুথু ছেটানোর কথাও সেই ভাববাদীর মাধ্যমে আগেই বলা হয়েছিল: ‘‘আমি প্রহারকদের প্রতি আপন পৃষ্ঠ, যাহারা দাড়ি উপড়াইয়াছে তাহাদের প্রতি আপন গাল পাতিয়া দিলাম; অপমান ও থুথু হইতে আপন মুখ আচ্ছাদন করিলাম না’’ (যিশাইয় 50:6)|

এটা আমাদের ক্রুশের কাছে নিয়ে আসছে| রক্তক্ষরণরত অবস্থায়, যীশুকে সেখানে ক্রুশারোপিত করা হল| যখন যীশু ক্রুশের উপরে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলেন, তখন তিনি সাতটি সংক্ষিপ্ত বাণী প্রদান করেছিলেন| আমি চাই যেন আমরা সকলে ক্রুশের উপরে যীশুর সর্বশেষ সেই সাতটি বাণীর বিষয়ে চিন্তা করি|

I. প্রথম বাণী – ক্ষমা
‘‘পরে, মাথার খুলি নামক স্থানে গিয়া, তাহারা তথায় তাঁহাকে, এবং সেই দুই দুষ্কর্ম্মকারীকে ক্রুশে দিল, একজনকে তাঁহার দক্ষিণ পার্শ্বে, ও অন্য জনকে বাম পার্শ্বে রাখিল| তখন যীশু কহিলেন,পিতঃ, ইহাদিগকে ক্ষমা কর; কেননা ইহারা কি করিতেছে তাহা জানে না’’ (লূক 23:33-34)|
এই কারণেই যীশু ক্রুশে গিয়েছিলেন – আমাদের পাপ ক্ষমা করার জন্য| যিরূশালেমে যাওয়ার বহু আগে থেকেই তিনি জানতেন যে তিনি নিহত হতে চলেছেন| নতুন নিয়ম শিক্ষা দেয় যে আপনার পাপের দেনা শোধ করার জন্য তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেকে ক্রুশারোপনের জন্য সমর্পণ করেছিলেন|
‘‘কারণ খ্রীষ্টও একবার পাপসমূহের জন্য দুঃখভোগ করিয়াছিলেন, সেই ধার্ম্মিক ব্যক্তি অধার্ম্মিকদের নিমিত্ত, যেন আমাদিগকে ঈশ্বরের নিকট লইয়া যান’’ (I পিতর 3:18)|
‘‘শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট
আমাদের পাপের জন্য মরিলেন’’ (I করিন্থীয় 15:3)|
যীশু প্রার্থনা করেছিলেন, ‘‘পিতঃ, ইহাদিগকে ক্ষমা কর,’’ যখন তাঁকে ক্রুশে ঝোলানো হচ্ছিল| ঈশ্বর তাঁর প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন| যারা সম্পূর্ণভাবে যীশুতে বিশ্বাস স্থাপন করেন তাদের প্রত্যেককেই ক্ষমা করা হয়| ক্রুশের উপরে তাঁর মৃত্যু আমাদের পাপের সমস্ত দেনা শোধ করে| তাঁর রক্ত আপনাদের সমস্ত পাপ ধুয়ে দূরে সরিয়ে দেয়|

II. দ্বিতীয় বাণী – পরিত্রাণ

যীশুর দুই পাশে দুই দস্যুকে, ক্রুশারোপিত করা হয়েছিল|
‘‘আর যে দুই দুষ্কর্ম্মকারীকে [অপরাধীকে] ক্রুশে টাঙ্গানো গিয়াছিল, তাহাদের মধ্যে একজন তাঁহাকে নিন্দা করিয়া বলিতে লাগিল, তুমি নাকি সেই খ্রীষ্ট, আপনাকে ও আমাদিগকে রক্ষা কর| কিন্তু অন্যজন উত্তর দিয়া, তাহাকে অনুযোগ করিয়া কহিল, তুমি কি ঈশ্বরকেও ভয় কর না, তুমি ত একই দন্ড পাইতেছ? আর আমরা ন্যায়সঙ্গত দন্ড পাইতেছি; কারণ যাহা যাহা করিয়াছি তাহারই সমুচিত ফল পাইতেছি: কিন্তু ইনি অপকার্য্য [মন্দ কার্য্য] কিছুই করেন নাই| পরে সে কহিল যীশু, আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন| তিনি তাহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি, অদ্যই তুমি পরমদেশে আমার সঙ্গে উপস্থিত হইবে’’ (লূক 23:39-43) |
দ্বিতীয় দস্যুর মন পরিবর্তন খুবই প্রকাশমূলক| এটা আমাদের কাছে প্রকাশ করছে
1. জলব্যাপ্তিস্মের দ্বারা অথবা মন্ডলীর সদস্যপদ গ্রহণের দ্বারা পরিত্রাণ হয় না – সেই দস্যু ইহাদের কোনটিই করে নাই|
2. ভাল উপলব্ধির দ্বারা পরিত্রাণ আসে না – দস্যুর শুধুমাত্র মন্দ উপলব্ধি ছিল – তাহাকে ক্রুশারোপিত করা হইয়াছিল আর সেইসঙ্গে পাপের অপরাধীও সাব্যস্ত করা হইয়াছিল|
3. সম্মুখে আগাইয়া যাওয়া অথবা আপনার হস্ত উত্তোলনের দ্বারা পরিত্রাণ আসে না – দস্যুর পদদ্বয়ের সহিত্, তাহার দুই হস্তও ক্রুশের সহিত পেরেকবিদ্ধ ছিল|
4. ‘‘যীশুকে আপনার হৃদয়ে আহ্বান করিবার’’ দ্বারা পরিত্রাণ আসে না| দস্যুটি সম্ভবত আশ্চর্য্যান্বিত হইত যদি তাহাকে কেহ ঐরূপ করিতে বলিতেন!
5. ‘‘পাপীর প্রার্থনা’’ করিবার দ্বারা পরিত্রাণ আসে না| সেই দস্যু এই প্রার্থনা করে নাই | সে শুধুমাত্র যীশুকে বলিয়াছিল তাহাকে স্মরণে রাখিতে|
6. যেভাবে আপনি জীবন-যাপন করিতেছেন তাহার পরিবর্তন ঘটাইলে পরিত্রাণ আসে না| সেই দস্যুর এইরূপ করিবার সময় ছিল না|

এই দস্যুকে যেভাবে পরিত্রাণ পেয়েছিল সেইভাবে আপনিও অবশ্যই পরিত্রাণ পাবেন:
‘‘প্রভু যীশুতে বিশ্বাস কর, তাহাতে পরিত্রাণ পাইবে’’ (প্রেরিত 16:31)|
সমগ্র অন্তঃকরণ দিয়ে যীশুতে বিশ্বাস স্থাপন করুন, এবং তিনি তাঁর রক্ত এবং ধার্ম্মিকতা দিয়ে আপনাকে উদ্ধার করবেন সেইভাবে, ঠিক যেভাবে ক্রুশারোপিত দস্যুকে তিনি উদ্ধার করেছিলেন|

III. তৃতীয় বাণী – আবেগ |
‘‘আর যীশুর ক্রুশের নিকটে তাঁহার মাতা, ও তাঁহার মাতার ভগিনী, ক্লোপার [স্ত্রী] মরিয়ম এবং মগ্দলিনী মরিয়ম, ইহাঁরা দাঁড়াইয়া ছিলেন| যীশু মাতাকে দেখিয়া, এবং যাঁহাকে প্রেম করিতেন, সেই শিষ্য নিকটে দাঁড়াইয়া আছেন দেখিয়া, মাতাকে কহিলেন, হে নারি, ঐ দেখ তোমার পুত্র ! পরে তিনি সেই শিষ্যকে কহিলেন, ঐ দেখ তোমার মাতা ! তাহাতে সেই দন্ড অবধি ঐ শিষ্য তাঁহাকে আপন গৃহে লইয়া গেলেন’’ (যোহন 19:25-27)|

যীশু যোহনকে তাঁর মায়ের যত্ন নিতে বলেছিলেন| আপনার উদ্ধার পাওয়ার পরে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর জীবনের প্রতি আরও কিছু থেকে যায়| আপনার সেইগুলির যত্ন নেওয়ার দরকার আছে| খ্রীষ্ট তাঁর প্রিয় মাকে প্রেরিত যোহনের হাতে অর্পণ করেছিলেন| তিনি আপনাকে স্থানীয় মন্ডলীর অধীনে অর্পণ করছেন| স্থানীয় মন্ডলীর যত্ন এবং স্নেহ ছাড়া খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর জীবনে কেউ এই কাজ করতে পারে না| সেটা যে সত্যি তা আজকের দিনে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই|
‘‘আর যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছিল প্রভু দিনদিন তাহাদিগকে তাহাদের সহিত [যিরূশালেমে] সংযুক্ত করিতেন’’ (প্রেরিত 2:47)|

IV. চতুর্থ বাণী – নিদারুণ যন্ত্রণা |
‘‘পরে বেলা ছয় ঘটিকা হইতে নয় ঘটিকা পর্য্যন্ত সমুদয় দেশ অন্ধকারময় হইয়া রহিল| আর নয় ঘটিকার সময় যীশু উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া ডাকিয়া, কহিলেন, এলী, এলী, লামা শবক্তানী? অর্থাৎ, ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?’’ (মথি 27:45-46)|
যীশুর এই নিদারুণ বেদনাময় কান্না দেখাচ্ছে ত্রিত্বের সত্যতা, স্বর্গীয় প্রকৃতি| পিতা ঈশ্বর মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, যখন পুত্র ঈশ্বর ক্রুশের উপরে আপনার পাপ বহন করছিলেন| বাইবেল বলছে:
‘‘কারণ একমাত্র ঈশ্বর আছেন, ঈশ্বর ও মনুষ্যদের মধ্যে একমাত্র মধ্যস্থও আছেন, তিনি মনুষ্য খ্রীষ্ট যীশু’’ (I তিমথীয় 2:5)|
V. পঞ্চম বাণী – দুঃখভোগ |
‘‘ইহার পরে যীশু, সমস্তই এখন সমাপ্ত হইল জানিয়া, শাস্ত্রের বচন যেন সিদ্ধ হয়, এই জন্য কহিলেন,আমার পিপাসা পাইয়াছে | সেই স্থানে সিরকায় পূর্ণ একটি পাত্র ছিল: তাহাতে লোকেরা সিরকায় পূর্ণ একটি স্পঞ্জ, এসোব নলে লাগাইয়া, তাঁহার মুখের নিকটে ধরিল’’ (যোহন 19:28-29)|
এই পদ আমাদের দেখাচ্ছে যে আমাদের পাপের দেনা শোধ করার জন্য যীশুকে কি গভীর দুঃখভোগের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল:
‘‘তিনি আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ, আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চূর্ণ হইলেন’’ (যিশাইয় 53:5)|

VI. ষষ্ঠ বাণী – প্রায়শ্চিত্ত |
‘‘সিরকা গ্রহণ করিবার পর, যীশু কহিলেন, সমাপ্ত হইল’’ (যোহন 19:30)|
আমি এতক্ষণ অবধি যা যা বলেছি তার অনেকটাই একজন ক্যাথলিক যাজক বলে দিতে পারতেন| কিন্তু এই ষষ্ঠ বাণীর উপরে প্রোটেস্ট্যান্ট পুনঃজাগরণ ঝুলে রয়েছে, সেই সঙ্গে আছে যুগ যুগ ধরে ব্যাপটিষ্টদের বিশ্বাস| যীশু বলেছিলেন, ‘‘ইহা সমাপ্ত হইল|’’
যীশু কি সঠিক ছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘ইহা সমাপ্ত হইল’’? ক্যাথলিক মন্ডলী বলছে, ‘‘না|’’ তারা বলেন যে তাঁকে নিশ্চয়ই নতুন করে ক্রুশারোপিত করতে হয়েছিল, এবং প্রতিটি জমায়েতে আবার উৎসর্গ করতে হয়েছিল| কিন্তু বাইবেল বলছে যে এটা ভুল হচ্ছে|
‘‘যীশু খ্রীষ্টের দেহ একবার উৎসর্গ করণ দ্বারা আমরা পবিত্রীকৃত হইয়া রহিয়াছি’’ (ইব্রীয় 10:10)|
‘‘কারণ যাহারা পবিত্রীকৃত হয় তাহাদিগকে তিনি একই নৈবেদ্য দ্বারা চিরকালের জন্য সিদ্ধ করিয়াছেন’’ (ইব্রীয় 10:14)|
‘‘আর প্রত্যেক যাজক দিন দিন সেবা করিবার এবং একরূপ নানা যজ্ঞ পুনঃপুনঃ উৎসর্গ করিবার জন্য দাঁড়ায়, সেই সকল যজ্ঞ কখনও পাপ হরণ করিতে পারে না: কিন্তু ইনি [যীশু], পাপার্থক একই যজ্ঞ চিরকালের জন্য উৎসর্গ করিয়া, ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন’’ (ইব্রীয় 10:11-12)|
যীশু ক্রুশের উপরে, একবার এবং আমাদের সকলের জন্য, সমস্ত পাপের পূর্ণ প্রায়শ্চিত্ত উৎসর্গ করেছিলেন|
যীশু সকলই শোধ করিয়াছেন,
সকলের জন্য আমি তাঁহার কাছে ঋণী;
পাপ গাঢ় কলঙ্ক রাখিয়া গিয়াছে,
তিনি উহা তুষারের ন্যায় শুভ্র করিয়া ধৌত করিয়াছেন|
(“Jesus Paid It All” by Elvina M. Hall, 1820-1889) |

VII. সপ্তম বাণী – ঈশ্বরের প্রতি দায়িত্ব অথবা সমর্পণ |
‘‘আর যীশু উচ্চ রবে চীৎকার করিয়া, কহিলেন, পিতঃ, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি : আর এই বলিয়া, তিনি প্রাণত্যাগ করিলেন’’ (লূক 23:46)|
মৃত্যুর আগে দেওয়া তাঁর সর্বশেষ বিবৃতিতে যীশু পিতা ঈশ্বরের প্রতি তাঁর সম্পূর্ণ সমর্পণকে দেখিয়েছেন| যেমন মহান স্পারজিয়ন নির্দেশ করেছেন যে, এটা প্রতিফলিত করছে যীশুর সেই নথিভূক্তকৃত প্রথম বাণীটিকেই, ‘‘আমার পিতার গৃহে আমাকে থাকিতেই হইবে ইহা কি জানিতে [পূর্বে জ্ঞাত হওয়া] না?’’ (লূক 2:49)| প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত, যীশু ঈশ্বরের ইচ্ছাই পালন করেছিলেন|

রুক্ষ অমার্জিত শতপতিদের মধ্যে একজন যিনি তাঁকে ক্রুশের সঙ্গে পেরেকবিদ্ধ করেছিলেন তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে এই সাতটি বাণী শুনছিলেন| সেই শতপতি এর আগেও অনেক ক্রুশারোপন দেখেছেন, কিন্তু যখন যীশুর জীবন-রক্ত প্রবাহিত হয়ে চলেছে তখনও এক বিস্ময়কর ধর্ম্মোপদেশ প্রচাররত অবস্থায় যেভাবে তিনি মারা যাচ্ছেন, সেইভাবে কোন মানুষকে এর আগে মারা যেতে তিনি কখনও দেখেননি|
‘‘যাহা ঘটিল তাহা দেখিয়া, শতপতি ঈশ্বরের গৌরব করিয়া, কহিলেন, সত্য এই ব্যক্তি ধার্ম্মিক ছিলেন’’ (লূক 23:47)|
সেই শতপতি একটুক্ষণ যীশুর সম্বন্ধে ভাবলেন, এবং তারপরে বললেন,
‘‘সত্যই ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন’’ (মার্ক 15:39)|
তিনি হলেন ঈশ্বরের পুত্র! তিনি মৃত্যু থেকে – জীবন্ত, স্বশরীরে – পুনরুত্থিত হয়েছেন| তিনি স্বর্গে আরোহণ করেছেন| তিনি ঈশ্বরের ডান দিকে বসে থাকেন| ‘‘প্রভু যীশুকে বিশ্বাস কর, তাহাতে পরিত্রাণ পাইবে’’ (প্রেরিত 16:31)|
কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা ভাবেন যে ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখলে সেটাই যথেষ্ট| কিন্তু তারা ঠিক নন| কেবলমাত্র ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস স্থাপনের দ্বারা কোন মানুষই পরিত্রাণ পেতে পারেন না| যীশু স্বয়ং বলেছেন, ‘‘আমা দিয়া না আসিলে, কেহ পিতার নিকটে আইসে না’’ (যোহন 14:6)| ডঃ এ. ডব্লিউ. টোজার বলেছিলেন, ‘‘ঈশ্বরের নিকট পৌঁছাইবার অনেকগুলি পথের মধ্যে খ্রীষ্ট না হইতেছেন শুধু একটি পথ, না হইতেছেন সবগুলি পথের তুলনায় সর্বোত্তম পথ; তিনি হইতেছেন একমাত্র পথ’’ (That Incredible Christian, p. 135)| যদি আপনি যীশুকে বিশ্বাস না করেন, আপনি হারিয়ে যাবেন| আপনি কত “উত্তম” সেটা কোন ব্যাপার নয়, আপনি কত ঘন ঘন মন্ডলীতে উপস্থিত হচ্ছেন বা বাইবেল পাঠ করছেন, সেগুলো কোন ব্যাপার নয়, আপনি যদি যীশুতে বিশ্বাস না করেছেন তাহলে আপনি হারিয়ে গেছেন| ‘‘আমা দিয়া না আসিলে, কেহ পিতার নিকটে আইসে না|’’ একমাত্র যীশুই রক্ত দিয়ে আপনার পাপ থেকে আপনাকে ধৌত করেন| আমেন|

সোনাবন্ধু ভুইলো না আমারে

তুমি বিনে আকুল পরান
থাকতে চায় না ঘরে রে
সোনা বন্ধু ভুইলো না আমারে –

এত আকুতি শাহ আবদুল করিমের গানের প্রতিটি লাইনে লাইনে পাওয়া যায়।
এই পরান আকুল, এই পরাণ ব্যাকুল, এই পরাণ ঘরে রয় না –
এখন সেই বন্ধু, সোনা বন্ধু যেন তারে না ভুলে যায় —
আহারে কি আকুতি !! প্রতিটি শব্দে প্রতি ইঞ্চি ইঞ্চি সুরে এই হৃদয়ের যে আকুলতা সে আকুলতার ব্যথা কষ্ট সেই বুঝে যে এই ভ্রমে পড়ে যায়। ভ্রম কেন ? ভ্রম এই জন্য যে এটা আসলেই একটা যন্ত্রনা। না কাজে মন বসে না ঘরে মন বসে, উড়ে যেতে ইচ্ছে করে এই চিত্ত। আহা কেন এমন ?

সাগরে ভাসাইয়া কুলমান
তোমারে সঁপিয়া দিলাম দেহ মনো প্রাণ

প্রেমের এমনি আকুলতা, এই প্রসংগে আমাদের এক আত্বীয় মেয়ের কথা মনে পড়ছে। রুমা( অন্য নাম তার ) যখন ঘর ছেড়ে বের হয়ে গেলো তাও এমন এক ছেলের সাথে তার জন্য তার শুধু পরিবার না তার পুরো আত্মীয় স্বজন এমনকি গ্রাম ও ছাড়তে হলো। তার মা একা একা চোখের জলে ভাসেন কিন্তু সমাজ এর বাইরে চলে যেতে হবে তাকে যদি মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখেন। রুমাও জানে এই পরিণতি। কিন্তু কি উপায়, এই হৃদয় তো কিছু বুঝে না।
সাগরে কুল মান সব যাক, কিন্তু তারে ছাড়া তো চলে না –

আমারে ছাড়িয়া যদি যাও
প্রতিজ্ঞা করিয়া বলো আমার মাথা খাও –

আহা কি কথা !! আমারে ছাড়িয়া যদি যাও প্রতিজ্ঞা করিয়া বলো আমার মাথা খাও —
আমার মাথা খাও, গ্রাম বাংলার এই প্রচলিত কথাকে সুরে সুরে কি অসাধারণ আকুলতায় পর্যবসিত করা যায় সে এই কবিই জানেন।
বাউল কবি অথচ বুঝতে পারেন যার জন্য এই মন পাগল হয়, দিল পাগল হয় তখন মন কোনো যুক্তি বুঝে না।

কুল মান গেলে ক্ষতি নাই আমার
তুমি বিনে প্রাণ বাঁচে না কি করিব আর

আসলেও তো কুল মান দিয়ে কি হবে ? যদি প্রাণই তো না বাঁচে –
তোমারেই চাই রে সোনাবন্ধু
সোনাবন্ধু ভুইলো না আমারে —

যুগ যুগ জিও সোনাবন্ধু —
শাহ আবদুল করিমের মত কবি, গীতিকার সুরকার কতদিন পরে পরে আসেন
এই পৃথিবীতে ?

শ্রদ্ধা প্রিয় কবি সুরকার গীতিকার শাহ আবদুল করিমের প্রতি। তিনি না থাকলে এই আকুল করা গান পেতাম না।

এমন মমতার সত্তা দেখিনি আর পূর্বে


স্বার্থহীন ভালোবাসা

দৃশ্যপট:-(০৯)

আজ ৫ বছর পর দূর পরবাস সৌদি আরব থেকে বাড়ি ফিরার পালা।
বাড়িতে কাউকে না জানিয়েই ফিরছি মায়ের কোলে। আমার আসাটা শুধু আমার বন্ধু হাসান জানে।
হাসানকে অনেক আগেই বলে রেখেছি ও যেন গাড়ি নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষা করে আমার জন্য।

আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে একটি বিমানের টিকেট আর ৭ ঘন্টার ব্যবধানে আমি নিজ মাতৃভূমিতে পা রাখতে পারলাম।
সবকিছু ঠিকঠাক মতই হলো।
হাসানের সাথে আলিঙ্গন করে গাড়িতে উঠে নিজ গ্রামের দিকে রওয়ানা হলাম।
চোখ জুড়ানো সবুজ মাঠ-ঘাট দেখে মনের ভিতর এক শীতল শান্তি অনুভব করছি।
পরবাসে যখন ছিলাম,তখন ভাবতাম কবে দেশে যাবো? কবে ধারদেনা পরিশোধ করে নিজের নামে জায়গা কিনবো।
সেই জায়গাতে বাড়ি উঠবে। বাড়ির নাম হবে হোসাইন ভিলা।

৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ নিজের জায়গাতে নিজের নামে ভিলা দাঁড় করালাম।
কতই না কষ্ট প্রবাসে,ফজরের আযানের আওয়াজে একজন পরবাসীর ঘুম ভাঙ্গে।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাসতা না করেই কর্মস্হলে যেত হয়! দীর্ঘ ৮ ঘন্টার ডিউটি শেষে বাসায় এসে আবার খাবার রান্না করে খেতে হয়! খাওয়া দাওয়া শেষে বিছানায় শুয়ে একটু বিশ্রাম না নিয়েই আবার বাহিরে গিয়ে কাজের সন্ধান করি এই ভেবে যে,এ মাসে দেশে রেমিটেন্সের পরিমানটা একটু বেশি যায়।

বাবার ঔষুধের টাকা,বোনের পড়ালেখার খরচ,ছোট ভাইয়ের একটা মোবাইলের আবদার ইত্যাদি সবার খরচের টাকা যেন এ মাসে দিতে পারি।
পিছনের এসব স্মৃতিচারণ করতে করতে আমার নিজ গ্রামে চলে আসলাম।

গাড়ির ভিতর থেকেই আমি দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি,আমার মমতাময়ী মা বাড়ির সামনের গেইটে দাঁড়িয়ে আছে হয়তো কারো অপেক্ষায়!
আমি হাসানকে বললাম, গাড়িটা একেবারে আমার মায়ের সামনে নিয়েই দাঁড় করাবি,মা যেন আমাকে দেখে অবাক হয়ে যায়।

হাসানের গাড়ি যতই সামনে অগ্রসর হচ্ছে আমার ভিতরে হার্টবির্ট ততই বাড়ছে।
এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।
গাড়িটা থামনোর পর আমার আম্মুর নজর হলো গাড়ির ভিতরে কে???
আমি নামতে দেখেই আমার মায়ের চোখের পানি আর কে ধরে রাখে?
দূর থেকেই দুই হাত বাড়িয়ে মা বলতেছে আমায়।
আমার বাবা চলে এসেছে,আমার বাবা চলে এসেছে।
ইমোশনালের আঘাত এতটাই যে, আমার মত কঠিন মানুষটার চোখের জল অটোমেটিক ঝরতে থাকলো!
মায়ের কপালে চুমু দিলাম,মা ও আমার কপালে চুমু দিয়ে বলতে লাগলো,আমার বাঁকা চাঁদ।

৪/৫ মিনিটের ভিতর ঐ স্হানে ২০/২৫ জনের উপস্হিতি,তাদের মাঝে কেউ কাঁদছে কেউ হাসছে।
মাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাতে বিভোর দুজন।
এ কান্না হলো খুশির কান্না।

অথচ এর চাইতে বেশি কেঁদেছিলাম যখন নিজ দেশ ও মায়ের বুক ছেড়ে পাড়ি জমাই যোজন-যোজন দূর পরবাসে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘ ৫ মিনিটের কান্না! বিমানবন্দরে অবস্হানকৃত আশে পাশের সবাই মা ছেলের বিচ্ছেদের কান্না দেখছে।
পাশে দাঁড়ানো এক মধ্য বয়সী নারীর চোখে ও পানি আমাদের বিচ্ছেদ দেখে।

মাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতেই ঘরে উঠলাম।
এদিকে মা চলে গেল রান্নাঘরে,আমার সাথে করে নিয়ে আসা আমার লাগেজ গুলো খুলতে শুরু করলাম।

ধীরে ধীরে সবাই উপস্হিত,
ছোট ভাই বলতেছে
ভাইয়া আমার মোবাইল আনছো??

বড় বোন,
ভাই আমার বোরকা আর তোর দুলাভাইয়ের ল্যাপটপ এনেছিস?

আদরের ছোট ভাগনি,
মামা আমার কানের দুল কই???

হাজারো চাওয়া,হাজারো আবদার ব্যাগ খোলার আগেই।
একটি বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম,এতো ব্যস্ত আর বেদিক হলে হয়?
সবাই কিছু না কিছু পাবে।
নিরাশ কেউ হবেনা।

ঐদিকে আম্মু খাবারের জন্য ডাকতেছে!
আমি গিয়ে খাবারের টেবিলে বসলাম,অল্প সময়ের ভিতর মা অনেক কিছুই রান্না করলো।
আমি ভাত মুখে তুলি আর আম্মু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে এক নজরে!
আমার পেটের দিকে তাকায়। আবার আমার চোখের দিকে দেখে,আর ঝরঝর ঝুম বৃষ্টি ধারায় চোখ দিয়ে পানি ঝরায় আমার মা।

আর বলে কতদিন যেন না খেয়ে কাটিয়েছিলি আমার বাঁকাচাঁদ?
কত রাত যেন নির্ঘুম পার করেছিলি?

অথচ আমি ফোন দিলে ঠিকি বলেছিস,হ্যাঁ দুপুরের খাবার খেয়েছি!
যখন বলতি তখন আমার মন ছটফট করতো!

আমি জানি তুই তখন মিথ্যা বলতি।
না খেয়েই বলতি হ্যাঁ মা আমি খেয়েছি।

অাজ সকাল থেকেই তোর মায়ের মনটা ছোটফট করেছে,কারন খুজে পাইনি কেন এমন হচ্ছে আজ? অকারনে কখনই আমার ধড়ফড় করেনি কখনো!
এখন বুঝলাম।

অবশেষে আমি মাকে প্রশ্ন করলাম।
মা সবাই তো জিজ্ঞেস করলো কার জন্য কি এনেছি?তুমি তো কিছুই চাইলেনা মা?
মা আবারো কান্না করে বলতে লাগলো।
আমার ছেলে আমার বুকে চলে এসেছে!
আমার জন্য পৃথিবীর বুকে এর চাইতে বড় আর কি চাওয়া হতে পারে?

সবাই সবার আবদারকৃত জিনিস নিয়ে চলে গেলো। দিনশেষে আমার পাশে শুধু রয়ে গেল আমার মমতাময়ী মা!

পৃথিবীতে ১০০% খাঁটি স্বার্থহীন ভালবাসা মা ছাড়া আর কেউ করেনা।

স্বার্থছাড়া কেউ কাউকে ভালবাসেনা।
কিন্তুু মায়ের ভালবাসা স্বার্থহীন।
খাদহীন খাঁটি।
প্রবাসীদেরকে কখনো গালি দিবেন না। তাদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করবেন না।তারাই হলো দেশের অর্থনীতির চাকা।
তাদের পাঠানো রেমিটেন্সের টাকায় দেশের উন্নতি হচ্ছে।
এ বহতা ব্লগের সকল সদস্যদের মধ্য হতে কারো না কারো ভাই,বাবা,চাচা,মামা পরবাসে জীবন পার করছে,নিজে কাঁঠফাটা রোদে পুড়ে নিজ পরিবারকে শীতল ছায়া প্রদান করছে।

একটি দৃশ্যপট

অনেক পুরাতন লিখা। আজ থেকে দেড় বছর আগে লিখেছিলাম। গল্পটিতে বেশ কিছু টাইপো ছিলো সংশোধন করে নিয়েছি।

এ গল্পের প্রধান চরিত্র একজন নারী, একজন মা!

মোঃ শাহাদাত হোসাইন।

সামানান কালীলা

পবিত্র কোর’আনে আল্লাহর বাণীকে, সত্যকে গোপন (conceal) করার ক্ষেত্রে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন ‘তাক্তুমু, ইয়াকতুমুনা’ এই শব্দগুচ্ছ। আর ধর্মের কাজ করে মানুষের কাছ থেকে তার বিনিময়ে তুচ্ছ পার্থিব মূল্য, বৈষয়িক স্বার্থ small price, a gain) হাসিল করার ক্ষেত্রে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন ‘সামানান কালিলান’। এই শব্দ দুটো কোর’আনে বার বার এসেছে। এ কাজটি যে কেবল হারামই নয়, এটা যে কুফর, যারা এ কাজ করবে তারা যে আগুন খাচ্ছে, পরকালেও তারা যে জাহান্নামে যাবে, তারা যে আলেম নয় পথভ্রষ্ট, পবিত্র কোর’আনের সুরা বাকারার ১৭৪-১৭৫ নম্বর আয়াতে এই সবগুলো কথা আল্লাহ দ্ব্যর্থহীন ও সরল ভাষায় উল্লেখ করেছেন যা বোঝার জন্য কোনো তাফসির বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না, সরল অনুবাদই যথেষ্ট। এ আয়াতে আল্লাহ বলেন,“বস্তুত, যারা আল্লাহ কেতাবে যা অবতীর্ণ করেছেন তা গোপন করে এবং এর বিনিময়ে পার্থিব তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে, তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই ঢুকায় না। এবং আল্লাহ হাশরের দিন তাদের সঙ্গে কথাও বলবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব। এরাই হচ্ছে সেই সমস্ত মানুষ যারা সঠিক পথের (হেদায়াহ) পরিবর্তে পথভ্রষ্টতা (দালালাহ) এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করে নিয়েছে। আগুন সহ্য করতে তারা কতই না ধৈর্যশীল।”

এই দীনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নীতি এই আয়াতে ঘোষিত হয়েছে। যারা আল্লাহর অবতীর্ণ কেতাবের বিধিবিধান ও শিক্ষাকে গোপন করে এবং দীনের বিনিময়ে অর্থ বা স্বার্থ হাসিল করে তারা-

১। “আগুন ছাড়া কিছুই খায় না।” অর্থাৎ তারা যা কিছু খায় তা সমস্তই জাহান্নামের আগুন। তাদের এই অপকর্ম, গর্হিত কাজ তাদের ভক্ষিত সকল হালাল বস্তুকেও হারামে পরিণত করে, যেভাবে আগুন সব কিছুকেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।

২। “হাশরের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথাও বলবেন না”। এ থেকে বোঝা যায় আল্লাহ তাদের উপর কতটা ক্রোধান্বিত। আল্লাহ যার সাথে কথাও বলবেন না তার সেই মহাবিপদের দিন কী দুর্দশা হবে কল্পনা করা যায়?

৩। “তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না।” মানুষ মাত্রই পাপী, আল্লাহর ক্ষমার সরোবরে স্নান করেই মানুষ পাপমুক্ত হয়ে জান্নাতে যেতে পারে। আল্লাহর এই ক্ষমার হকদার হচ্ছে মো’মেনগণ। কিন্তু যারা ধর্মব্যবসায়ী তারা গাফুরুর রহিম, আফওয়ান গফুর, গাফুরুন ওয়াদুদ, সেই অসীম প্রেমময় ক্ষমাশীল আল্লাহর ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত হবে। আল্লাহ তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না।

৪। “তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব”। এ হচ্ছে চূড়ান্ত কথা যা সব অস্পষ্টতাকে নস্যাৎ করে দেয়। ধর্মের কাজ করে স্বার্থহাসিলকারীরা জাহান্নামী এ নিয়ে আর কোনো সন্দেহের বা দ্বিমত পোষণের অবকাশ থাকে না।

৫। “তারা হেদায়াতের বিনিময়ে পথভ্রষ্টতা ক্রয় করেছে”। খুবই দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য। আমরা আলেম সমাজের কাছে কেন যাই, কেন তাদের ওয়াজ, খোতবা নসিহত শ্রবণ করি? নিশ্চয়ই পরকালীন মুক্তির পথ জানার জন্য? হেদায়াহ শব্দের মানেই হচ্ছে সঠিক পথনির্দেশ। আল্লাহ বলেই দিচ্ছেন, যারা ধর্মের কাজের বিনিময় গ্রহণ করে তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট।

একজন পথভ্রষ্ট মানুষ কী করে আরেক ব্যক্তিকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে? এ কি সম্ভব?

কালের নটরাজ ( কাব্যগ্রন্থ ) বই আলোচনা

বই আলোচনা

কালের নটরাজ (কাব্যগ্রন্থ)

কামরুল ইসলাম

আমি মহাকালের নটরাজ
ভূমি থেকে উত্থিত শিবের অগ্নিবাণ, দ্রোহী শুদ্র চণ্ডাল
আফ্রিকার লুমুম্বা, স্পার্টাকাস, রাশার লেনিন
আমিই শৌর্যসাধক, বীরত্ব আমার নাম
কালের মহিমায়, মহানিনাদের নৈপুন্যে
প্রেম ও শক্তির প্রদীপ জ্বালাই।

💢বাস্তবতার অনুধাবন অনুপম ভাষাশৈলী স্বতন্ত্র পঙ্ক্তিমালা কবিতায় লক্ষনীয়।

নটরাজের বার্তাঃ
হে কালজয়ী মানব ! তোমার জন্য শুভ বার্তা
বিশ্বব্যাপী নতুনেরে করে আবর্তন …..

নটরাজ মানবভূমির রূপ পরিদর্শের বিশ্বব্যাপী পরিভ্রমনে পরিব্যাপ্ত, ক্রমান্বয়ে বিশ্বরূপে আবগাহন…

বিশ্বরূপঃ
মহাসাগরের জলস্রোত ঘূর্ণিজল, উৎকণ্ঠার অবসাদে নটরাজ, শিল্পের উদ্যান ফসলি স্বপ্ন উঁকি দেয় জলের বুঁদবুদে, …… বিশ্বরূপের মঙ্গলপ্রদীপ-অফুরান নিবেদনে। (পৃষ্ঠা ১১-১৪)।

💢কবির কবিতায় চৌকষ শব্দচয়ন সতন্ত্র ধারা মনকে ভরিয়ে তোলে। রোমান্স, প্রেম, বিরহ জীবন ও জগতের বাস্তব প্রকাশ কবিতার পঙ্ক্তিমালায়।

নটরাজঃ
এ ভর আয়োজন বিমর্ষ হেমলকে নটরাজ দাহিত স্বপ্ন বাসরে চেয়ে থাকে বিশ্ব পটভূমির ওপর- এ কোন বিশ্বরূপ ! যে রূপে অবগাহিত, তা কী নটরাজের বিশ্বালয়!

গানঃ
এমন ভূবন তারে খুঁজে ফিরি, যে আছে প্রাণে প্রাণে মনের তারে প্রাণে প্রাণে খুঁজি, এ ভূবনে … ওগো দাও সেই পূণ্যভূমি, মানবের পূণ্যভূমি ওগো, খুঁজে ফিরি যে আছে প্রাণে প্রাণে ।

মর্ত্যবিহারঃ
উষসীর রূপের মর্ত্যবিহার নটরঙ্গিনী, আঁচলজুড়ে লাবন্য নুয়ে পড়ে-রৌদ্রের ভেতর মুঠো আলোয় ভরে থাকে বিস্ময়, নয়নের শোভায় প্রভাতের রূপে-সপ্তগ্রামের নগর …..

আয়োজনঃ
সন্ধ্যের খোলা আকাশ, পড়ন্ত রোদের প্রতিশ্রুতি, সজীব স্বতন্ত্র সত্তায় গভীর স্বপ্ন নিয়ে গড়ে তোলে অনুরাগ ….. শতাব্দীর তারার মেলায়-নটরঙ্গিনীর উৎসব।

নীলসন্ধ্যাঃ
বিমর্ষ অনুভূতির মায়াশ্রমের প্রেমলীলায় মগ্ন নটরাজ ও নটনন্দিনী।

চাঁদের নটরঙ্গঃ
নীলপদ্মের ভ্রমে শূন্যরূপে নটরাজ,রূদ্ররূপে করে গ্রস …. যদি জানতে-রূদ্রের অনলে চাঁদ,অপরূপার নটরঙ্গে। (পৃষ্ঠা ১৫-২৪)।

💢বিশ্বব্যাপী অস্তির সময় নাগরিক জীবনের বাস্তব উপলদ্ধি ও পূর্ণ সারসংকলন পরিলক্ষিত হয় কবিতায়, শক্তি ও প্রেমের প্রতিক নটরাজের উত্থান মঙ্গলময় ধারার নতুন সমন্বয়ে কবিতাকে করেছে প্রাণবন্ত।

মানচিত্রঃ
চারদিকে শুকনো পাতার শিস, ভ্রমনের গুঞ্জন
গাঙশালিক ভুলেছে পথ, পথের ঠিকান
ঘাসের ওপর ফড়িং প্রজাপতি, মাঠে মাঠে ঘাস
আমি নীরব শান্ত, শতকলের ঘুমন্ত নটরাজ, দ্বারের প্রহরী
আকাশজুড়ে মেঘ আর নীলিমার ভস্ম, পড়ে থাকে ঈগলের মানচিত্র।

নবীন আলো ক্রমশঃ মেলে ধরে প্রেম
বীণার সুরে অধীর অনুরাগ
তবু ঐ রূপখানির ভেতর নোনাজল
ভেঙেছে দেয়াল…..
ধূসর স্বপ্ন অভিসারে।

কেতকীঃ
আচার্যের ধর্ম কুটির অন্তরলোকের সৌন্দর্যলোক অষ্টাঙ্গিক মার্গে
পরিশোধিত, জীবনের মোহিত আবেশে সম্যক দৃষ্টিপ্রাপ্ত…..

অশনি বাহনঃ
জলে জলে তরঙ্গ-ভঙ্গে কলধ্বনির উচ্ছ্বাসে নটিনী
নৃত্যপটিয়সী, মৃদঙ্গের তাল-বেতাল উতাল উন্মত্তে
শাদাটে নীলে নীলে নিরন্তর ভাসমান উদাস আরতি
পরম রঙের জ্বলন্ত পূর্ণিমায় হিপ্লোলিটাসের অঞ্জলি।

নির্বসিত প্রেম অলয় মৈনাক পর্বত, নটরাজের ভ্রমবশতঃঅবজ্ঞায়
নটিনী প্রলয়িনীর রূদ্ররূপে….

নটিনীর প্রেমঃ
নটরাজের স্বপ্ন অনুভূতিতে নটিনীর কালচক্র অনুভূত, কালে কালে
এই চক্র নবকালের উদ্বোধনে সহায়তার প্রতীকরূপে আবির্ভূত….

ফাগুণের রূপেঃ
ফাগুণের রূপে, শূন্য পেয়ালা, তবু শূন্য নয়
অপরূপের রূপ, নিরন্তর সব পিয়াসে মগ্ন হয়
বসন্তের নারী, ফুল উদ্যান, সরাব যত সবি
জন্ম মোর ফাগুণে, উন্মত্ত ফাগুণের কবি।

এসো ধ্বংস করিঃ
মঙ্গল প্রভাতের সেই অনন্দধ্বনিতে তুমি ওঠো
সহস্র বছরের অভিশপ্ত নোনাজল, সেবন করো
দ্রোহে দ্রোহ কর আঘাত, ওরা ধ্বংস হোক।

অনুভূতিঃ
প্রশান্তির সূর্য উড়েছিল
ও-বেলায়
স্বপ্ন দোলে
দিকভ্রান্ত নাবিকের….

প্রলয়ের বাদ্যঃ
ততক্ষণে তটে তটে বিদ্রোহ,
মরা গাঙে পড়ে থাকে শাদা বক …
যদি কিছু হতে না পারি, তবে দ্রোহী হবো
ধ্বংস প্রলয়ের বাদ্য বাজাবো নিরন্তর।

পৃথিবীর বুকে সব প্রেম
শত রূপে শত ভাবে,
তবু নিরবধি
মানবের তরে মানব হয়ে….

নটিনীর অভিলাষঃ
ওগো মহাকালের নটরাজ। শক্তির পূজারি নটরঙ্গিনী তোমারি দ্বারে
পূজার অর্ঘ্য লও, এসো শক্তির যুদ্ধাস্ত্রে, এসো ভালোবাসায়, এসো প্রেম-প্রদীপে
মহাকালের নব সূত্রপাতে এসো, ধ্বংস করো বৈষম্যের আঘাত।
আমি যে প্রেমের সারথী, মহাকালের প্রেমবীণায় এসো
জীবনের জয়গানে এসো, এসো সৃষ্টি প্রলয়ের আনন্দযজ্ঞে।

গানঃ
এমনও প্রেম দিও নাগো তুমি
এমনও ভরা দিনে
নিশিদিন ভাবি তোমারে, ওগো প্রিয়
এমনও প্রেম দিও না গো তুমি

আমিই নটরাজঃ
আমিই সর্বকালের নটরাজ
যুগ থেকে যুগান্তরে, শতক থেকে শতকে
রোদ ও ছায়ার মতো বারবার ফিরে আসি
বীরত্বের মহাযজ্ঞে, সৃষ্টি প্রলয়ের বাঁশি বাজাই
মহাধূমকেতু হয়ে প্রেয়সীর ললাটে, এঁকে দেই
শান্তির বার্তা ! মহাশান্তির বিশ্বালয়। (পৃষ্ঠা ২৪-৬৭)

💢কবি, প্রাবন্ধিক, সংগঠক কামরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের নতুন ধারার কবি, বিশেষ করে তার রোমান্টিক কবিতা, গান, গদ্য কবিতায় রয়েছে নতুনত্ব। আধুনিক কাব্যমালা, শব্দবিন্যাস, জীবনও বাস্তবতার অনুপম কথাচিত্র উপস্থাপন করেছেন কবিতার ক্যানভাসে, কবিতায় এঁকেছেন জীবনচিত্র। নিজস্ব শব্দচয়ন, বিষয়বস্তুর এক নিপুণ গাঁথুনিতে কবিতাকে করে তুলেছেন রঙিন। ঐক্যতান, প্রেম, বিরহের সতন্ত্র সত্তা আধুনিক কবিতার পাঠকের হৃদয়ে স্থান করে নিবে খুব সহজেই।

কালের নটরাজ
কামরুল ইসলাম
প্রচ্ছদ এঁকেছেন চারু পিন্টু
প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
প্রকাশকঃ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন
একাত্তর প্রকাশনী
৭৮ দক্ষিণ সায়েদাবাদ
ঢাকা-১০০০
মূল্য : ১৫০ টাকা।

লেখকঃ
শান্ত চৌধুরী
কবি, প্রাবন্ধিক, সংগঠক
যোগাযোগঃ [email protected]

দেখা হইয়াছে চক্ষু মিলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া – ২

১। ‘How to change your life’ বইটি একবার দ্বিতীয় সংস্করণে নামের বানান ভুল করে ‘How to change your wife’ হয়ে বের হয়েছিলো, তারপর সেটা সাথে সাথেই বেস্ট সেলার! পরে সেটা তারা কারেকশন করেছিল। তাতে কি? ব্যাপক বিক্রিই প্রমান করে সবাই এরকম একটা বই অনেক দিন থেকে খুঁজছিল।

>আহা এরকম যদি সত্যি একটা বই থাকত!

২। কয়েকদিন আগে ক্রিকেটার নাসির আর তার প্রেমিকা শোভার অডিওর কয়েকটা ভার্সন রিলিজ পেয়েছিল। বিশেষ করে শোভার কিছু অডিও। যারা বাংলা ভাষার সব ধরনের গালগালীর সংকলন চান তাদের জন্য আমি এটা চোখ বন্ধ করে সাজেস্ট করলাম। একবার শুনলে আপনার মনে হবে বাংলা ভাষার সব ধরনের গালীর উপর PhD করে ফেলেছেন। YouTube এ আছে।

>কষ্ট করে খুঁজে নিন। কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না! আর এই কেষ্ট যা তা কেষ্ট না।

৩। আপনি কি জানেন গুয়ামের আইন অনুসারে কোন কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারেনা!! তাই কিছু লোক আছে যারা পয়সার বিনিময়ে কুমারিত্বের অভিশাপ মুক্ত করার কাজ করে!! মেয়ের বাবা-মা সাধারনত এই কাজের জন্য অনেক টাকা খরচ করেন!! মজার বিষয় হলো এরা কাজ শেষে সার্টিফিকেটও দেয়!!

>সেইদিন খুব ইয়ার দোস্ত টাইপের একজন উপরের নিউজটা শেয়ার করে খুব দুঃখ করে আমাকে বললঃ কেন যে এই দেশে জন্ম নিলাম! এত দিন কি সব উল্টা পাল্টা চাকরী করছি! আমি এর আক্ষেপ শুনে একদম বাক্যহারা!

৪। বর্তমানে আমরা কেবল পোশাকে আধুনিক হচ্ছি, মানসিকতায় না। মেয়েদের স্লিভলেস পরা, সর্ট ড্রেস পরা বা স্কুটি চালানোই কেবল যদি আধুনিকতা হয় তবে সেটা ভুল, অবশ্যি ভূল। আমরা অনুকরণ করেই দ্রুত বড় হতে চাই, একবারে গাছের মগডালে ওঠার স্বপ্নের মতো, সিড়ি বাদ দিয়ে লিফটে উঠার মতো! এদিকে যে পাছার কাপড় খুলে কখন সবার অজান্তেই পড়ে গেছে সেদিকে কোন খবর নাই। আধুনিক হবেন সমস্যা নেই, বেঁচে থাকতে হলে আধুনিক হতে হবে এটা কে আপনাকে বলল?

>আপনি এই অদ্ভুত ধ্যান ধারনা নিয়ে আধুনিক না হয়ে আদিম হয়ে যাচ্ছেন। পাশ্চাত্যের ন্যাংটো সংস্কৃতি আমাদের এত সুন্দর সংস্কৃতির সাথে মিশিয়ে এটাকে আরও ন্যাংটো করে দিয়েছেন, সেটা কি জানেন?

৫। সেদিন যেন কোথায় ইন্টারনেটে পড়েছিলাম, এয়ারটেলের অ্যাড দেখে বন্ধুত্ব শিখো না, তাহসান এর নাটক দেখে প্রেম শিখো না। এগুলোতে হাজারটা জ্ঞানের কথা থাকতে পারে, তবে সবার অভিভাবক টাকা কিংবা অবস্থানের কথা কখনো লেখা থাকে না।

বাস্তবতা হলো, তোমার কাছে যখন মধু থাকবে তখন অসংখ্য শুভাকাংখী তোমার খোঁজ খবর নিবে, ভালো মন্দ জানতে চাইবে। এগুলোর অ্যাটিওলজী তুমি না, তোমার কাছে থাকা মধুটা। তাই নিজের কাছে থাকা এই মধুর ডিব্বাটার যত্ন নিও। মনে রেখ, ভোমরার অভাব না থাকতে পারে পৃথিবীতে, মধূ কিন্তু সবার কাছে থাকে না। কষ্ট করলে ঐ মধু সংগ্রহের জন্য করো, আশে পাশের ভোমরা গুলাকে আটঁকে রাখতে করো না।

>কথাটা দারুন বাস্তব এবং সত্য মনে হলো আমার কাছে । আপনার কি মনে হয়?

৬। অবশেষে সিভিতেও…সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংগৃহীত। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সেই ব্যক্তির স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘গ্র্যাজুয়েশনের পর স্বাভাবিক ভাবেই চাকরি খোঁজা একটা নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই এই অফিস ঐ অফিস ঘুরে ঘুরে সিভি ড্রপ আর ইন্টার্ভিউ দিতে দিতে এখন আমি বেশ বিরক্ত। গতকাল এক অফিসে গেলাম সিভি জমা দিতে, সেখানে এক আপুর সিভি নিয়ে একটা কথায় আমি বেশ অবাক হলাম। উনার মতে আমার দেয়া সিভি সেক্সি না। এখন মাথায় একটাই প্রশ্ন ঘুরছে… আপা সিভি সেক্সি হয় কেমনে? সিভিতে দেয়া ছবিতে ক্লিভেজ দেখায়, নাকি লিখাগুলোয় আমার চাকরীর এক্সপেরিন্সের বদলে কারো সাথে শুয়ে জব পাওয়ায় পার্রদশী কিনা তা দেখিয়ে? অবাক লাগে যখন প্রফেশনাল কোনো সিভির বদলে আজকাল মানুষ সেক্সি সিভি খুঁজে। হায়রে মানুষ!! এখন সিভিকেও সেক্সি হতে হবে!!! নাহলে জব কাছে আসবে না!’

>ভাষাটা সুমধুর হলেও যা লিখেছে সেটা পড়ার পর থেকে আমি বাক্যহারা। এই বিষয়ে আমার কিছু বলা সম্ভব না। আপনাদের কি মন্তব্য?

৭। মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ নিয়ে বিতর্ক কিংবা সমালোচনার শেষ নেই। গতবছর ফাইনালের মঞ্চের নাটকীয়তাকে ঘিরে কম বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। আর এবার অনুষ্ঠানটির ফাইনাল পর্ব শেষ হতে না হতেই সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে ফাইনালিস্টদেরকে নিয়ে। জনপ্রিয় মডেল এবং বিজ্ঞাপনের অভিনেত্রী ফারিয়া শাহরিন সম্প্রতি শেষ হওয়া ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানটি নিয়ে তার অভিমত শেয়ার করেছেন। দেশের একটা দৈনিক পত্রিকা এটা তুলে দিয়েছে। তিনি লিখেনঃ-
“আমরা কেন এই মেয়েগুলাকে নিয়ে হাসতেছি? ওদের কী দোষ। ওরা তো জেনেই আসছে যে ওদের চেহারাটাই আসল। ওদের কি শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া হয়েছিল নিবন্ধনের আগে? আমার এ নিয়ে সন্দেহ আছে। আর যদি নাই দিয়ে থাকে ওদের কী গ্রুমিং করাইছে বা কারা করাইছে যারা ‘হাউ আর ইউ’ বলার পর ‘আই এম ফাইন’ পর্যন্ত বলা শিখাই নাই?
এতো ক্ষ্যাত মেয়েরা কীভাবে ফাইনালিস্ট হয় মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশে? বিচারকরা কীভাবে ওদের এতো দূর আনলো? যতদূর জানি যে প্রতিযোগিতায় অনেকগুলো রাউন্ড থাকে। তাহলে এতোগুলো রাউন্ড কীভাবে এই মেয়েগুলা শেষ করে ফাইনালে আসলো? এই দেশে সবসময় ক্ষমারই মূল্যায়ন হয়, যোগ্যতার না। তাই এসব মেয়ে ওইটা জেনেই আসছে। ব্যর্থতা এসব সংগঠকদের যারা এত বড় একটা প্ল্যাটফর্মকে কমেডি শো বানানোর সুযোগ করে দেয়”!

>মেয়েটার কথার খুব যৌক্তিক তাৎপর্য আছে আর তাই এটা এখানে তুলে দিলাম।

৮। যুক্তরাষ্ট্রে একজন নারীর বুকে হাত দেয়ার জন্য আটক করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে। তিনি রোববার বিমানে চড়ে হিউস্টন থেকে আল বাকার্কি যাচ্ছিলেন। এ সময় তার সামনের সারিতে বসা একজন নারীর বুকে দু’বার হাত দেন। এ অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম ব্রুস আলেকজান্ডার। তিনি বলেছেন, ‘নারীদের অঙ্গ স্পর্শ করা দোষের কিছু না। কারণ, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প নিজে এ কথা বলেছেন’। এবিসি নিউজকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। ঘটনার শিকার নারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। তিনি কর্তৃপক্ষকে বলেছেন, প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন প্রথমবার হঠাৎ করেই তার বুকে ব্রুসের হাতের স্পর্শ লেগে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার একই ঘটনা ঘটার সময় বিপত্তি বাধে। আদালতের তথ্য অনুযায়ী, ফ্লাইট চলাকালীন ওই মহিলার ঝিমুনি এসে গিয়েছিল। তখন ব্রুস আলেকজান্ডার আবার তার বুক স্পর্শ করেন। এ সময় ওই নারী ঘুরে দাঁড়ান। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন, কেন তিনি এ কাজ করছেন? এবং তাকে অবশ্যই এসব কাজ বন্ধ করতে হবে। এ নিয়ে হৈচৈ শুরু হলে বিমানের স্টুয়ার্ডরা ওই নারীর সিট বদল করে দেন। বিমানটি আলবাকার্কিতে অবতরণের পর পুলিশ ব্রুস আলেকজান্ডারকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশকে বলেন, যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেছেন মেয়েদের গোপন স্থানে হাত দিলে কোন দোষ নেই। পুলিশ তার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেছে। মঙ্গলবার দিনের আরো পরের দিকে তাকে আদালতে তোলার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারাভিযানের সময় একটি অডিও টেপ প্রকাশিত হয়। সেখানে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে বলতে শোনা গিয়ে ছিল যে, সেলেব্রিটিরা চাইলে নারীদের অঙ্গ তাদের অনুমতি ছাড়াই খামচে ধরতে পারে। তার এই মন্তব্যের জন্য তার নিজের দলসহ সারা দেশে প্রবল সমালোচনা হয়।

>লেখাটার পড়ার পর আমাদের দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেবের কথা কেন যেন খুব করে মনে পড়ে গেল!

বর্তমান এবং সমসাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে আমার মতো একজন অতি তুচ্ছ আমজনতা কি ভাবে আর মন কি চায় সেটাই তুলে ধরার এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। পুরো লেখাটাই আমার ব্যক্তিগত মতামত। নিজের জীবনের কাছ থেকে যে ঘটনা গুলি দেখে মনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়েছে সেগুলি ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরে যাব যদি সময় ও সুযোগ থাকে। এই এক্সপেরিমেন্টের এটাই দ্বিতীয় লেখা পোষ্ট। আমার মাথায় সারাক্ষনই এরকম উল্টা পাল্টা লেখা ঘুরে……

এর আগের পর্ব পড়ুন:-
দেখা হইয়াছে চক্ষু মিলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া – ১

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুলাই ২০১৯

সস্তা ভালোবাসা আর বিকৃত মানসিকতা – ১

প্রেম, ভালোবাসা নামের এখনকার সম্পর্কগুলো বর্তমানে খুব সস্তা, হুটহাট করেই হয়ে যায়। যত্রতত্র প্রথম দেখা, মিষ্টি হাসি দেখেই এই সব শুরু হয়। যদিও পরে মানসিকতার দ্বন্দ্ব, সামাজিক, পারিবারিক প্রেক্ষাপটের অশান্তি, অর্থনৈতিক সমস্যায় এইসব ভালোবাসা জানালা দিয়ে লেজ তুলে পালায়। কারন আর যাই থাক, এতে কোন কমিটমেন্ট থাকে না। আর বিয়ের আগে সব উজাড় করে দেওয়া বালিকারাও জানে না আদৌ সে ছেলেটির সাথেই সংসার পাততে পারবে কিনা? কিংবা এই ছেলেটিই পরে তাকে গ্রহন করবে কিনা? যদি তা না হয় তাহলে ওর ভবিষ্যত কি? পূর্ণিমার চাঁদ নাকি ঘোর অমাবস্যা?

এইসব অনেক গল্পেরই পরের কাহিনী সবার জানা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেগুলি পাওয়া যায় ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইমো কিংবা কিছু নিষিদ্ধ ওয়েব সাইটে।

আজকাল মর্ডান জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা ফেসিয়াল টিস্যু পেপার চেন্জ করার মতো BF / GF চেন্জ করে। দুধ থেকে সরটা খেয়ে, ছেলেরা ভাগে আর মেয়েরা কাঁদে। ছেলেটা যদি আইটি এক্সপার্ট হয়, তাহলে তো আরো চমৎকার! এক হাজার টাকার মোবাইলেও আজকাল HD ক্যামেরা পাওয়া যায়। “মজাই মজা” শেষ হয়ে গেলে ছেলেরা ব্যস্ত হয় যায় অন্য মেয়ে নিয়ে আর সারা দেশের মানুষ ব্যাপক বিনোদনের ফ্রি সুযোগ পায় ইন্টারনেটে। মোবাইল কম্পানিগুলি তে খোঁজ নিয়ে দেখুন, মোবাইলের ডাটা প্যাক গুলি সব শেষ কি দেখে!

এসব মেয়েরা যে আজন্ম বেকুব তা তারা তাদের নিজেদের কার্যকলাপ দিয়েই প্রমাণ করে। সারাজীবন নিত্য নতুন স্টাইল করে বেড়ান এই সব মেয়েরা পরে দেখা যায় বোরকা পড়ে নাক মুখ ঢেকে সব সময় বাইরে যেতে। আর তাতেও যদি না সামলাতে পারে, তাহলে অবশেষে নিজের গলায় নিজেরই ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে শেষ বারের মতো নিজেকে আস্ত বেকুব প্রমান দিয়ে দৈনিক সংবাদ পত্রের প্রথম পাতার রগরগে নিউজ হতে।

এই সব বদের হাড্ডি ছেলেরা যদি নিত্য জামা বদলানোর মতো নিত্য নতুন নারী সঙ্গী তথা গার্লফ্রেন্ড পেয়ে যায় সবার অগোচরে, তবে সে কেন একটা মেয়েকে মোহরানা দিয়ে সম্মানের সাথে ঘরে তুলে স্ত্রীর মর্যাদা দিবে! এদের কাছে নারী যদি বিয়ে ছাড়াই এতটাই সহজ লভ্য হয়, তাহলে ঐ ছেলেদের কী দরকার বিয়ে নামের সারা জীবনের রেস্পনন্সিবিলিটির ঝামেলায় নিজেকে জড়ানোর !

এই সব মেয়েদের কাছে খুব জানতে ইচ্ছে করেঃ
#মেয়ে, যখন ছেলেবন্ধু তোমার কাছে তোমার হট পিক চায় তখন কি মনে থাকে না কাকে কি দিতে যাচ্ছো? এর ভবিষ্যত পরিনতি কি হতে পারে? শেষ পর্যন্ত সেগুলি কোথায় জায়গা করে নেবে?
#মেয়ে, যখন তোমার ছেলেবন্ধু এর সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্জনে সময় কাটাও, তখন কি একবারের জন্যও মনে থাকে না তুমি কার সম্মান মাঠে নামালে নিজেকে এভাবে খোলা রেখে?
#মেয়ে, যখন তোমার ছেলেবন্ধু তোমার জামার ভিতর ইচ্ছেমত হাত দেয় তখন কি মনে থাকে না, কার সম্পদ কার জন্য তুমি উন্মুক্ত করে দিলে?
#মেয়ে, যখন তুমি ছেলেবন্ধুর সাথে অমুকের ফ্ল্যাটে গিয়ে দুটি দেহ এক করে শুয়ে থাকো, তখন কি একবারের জন্যও মনে হয় না কার সম্পদ কাকে বিনামূল্যে বিলিয়ে দিচ্ছো? গভীর আবেগে ভেসে যেয়ে যেসব ভিডিওতে পোজ দেও, শেষ পর্যন্ত সেগুলি কোথায় জায়গা করে নেবে?

হয়তো শেষ পর্যন্ত এই ছেলেবন্ধুর সাথে তোমার বিয়ে হলোই না, অনেক কারনেই সেটা নাও হতে পারে। তখন কেন আবার সমস্ত অপবাদ ছেলেটাকে দিচ্ছ? ছেলেটা নির্দোষ অবশ্যই নয়, প্রশ্নই উঠে না, কিন্তু তুমি সুযোগ না দিলে এইসব কি হতে পারত? মজা কি শুধু ছেলেটা পেয়েছে, তুমি পাওনি? না পেলে, কি জন্য এভাবে নিজের শরীর বিনামূল্যে বিলিয়ে দিয়েছ? ছেলেটা যেমন একটু সুখের জন্য তোমাকে চেয়েছে, ঠিক তেমনি তুমিও চেয়েছো সে সুখের ভাগীদার হতে। এটা কি ভূল কিছু? আর সেই সুখের ভাগীদার হতে, খুব সহজে নিজেকে শিয়াল কুকুরের মতো জানোয়ার গুলির খাবার বানালে নিজেকে? আরে, নিজের ভালো তো একটা পাগলেও বুঝে!

আমরা যেন জেনেও বার বার ভুলি যাই, আমরা ঢেকে রাখা খাদ্য দ্রব্য সব সময় নিরাপদ মনে করি। কারণ তার ভিতরটা জীবাণু মুক্ত থাকে। আর খোলা জিনিসে মশা, মাছি আর পোকামাকড় এসে ভীড় করে। কখনও কি একবারও ভেবে দেখেছ, যাকে সবকিছু “চাহিবা মাত্র দিতে বাধ্য থাকিব” ভেবে দিয়ে দিলে, তার সাথে যদি তোমার বিয়ে না হয়, তখন ভবিষ্যতে পরের জনকে কি উত্তর দিবে?

এত্ত বড় ভালোবাসা, যেই ভালোবাসার স্ট্যাটাস ফেসবুকে দিতে দিতে আংগুল পর্যন্ত ব্যথা করে ফেলতে, সারারাত সুপার এফএনএফে কথা বলতে বলতে কাটিয়ে দিতে, তাকে দিয়ে যাকে বেঁধে রাখতে পার নি, ছোট্ট একটা শরীর দিয়ে কিভাবে সেটা সম্ভব?

ঈদের চাঁদ দেখলে আমরা যতটা খুশি হই, ততটা খুশি ঈদের দিনেও হই না। কারন ঈদের দিন মানে ঈদ শেষ, কিন্তু আর চাঁদ দেখা মানে কাল ঈদ। পার্থক্যটা কি আর ভেঙ্গে বললাম না। যে তোমার সাথে বিয়ের আগেই তোমার সব পেয়ে গেছে, তার আবার কি দরকার তোমাকে বিয়ে করার?

নিজের চরিত্র ভাল থাকলে নারীবাদী হতে হয় না। এই সব অশ্লীল কাজে সমর্থন যারা দেয়, আসলে তারা স্বার্থপর সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। কারন সুস্থ মস্তিকের বিবেকবান পুরুষ বা মহিলা একান্তই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের কারন ছাড়া এতে সমর্থন দিতে পারে না। একান্তই নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারের কারন ছাড়া আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে কেউ যায় না বা এতে সমর্থনও দিতে পারে না। নিজের জাগতিক ভোগ বিলাসের লোভ যখন সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভয়ের চেয়ে বেশী হয় তখনই মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হয়।

দোকানে ঢুকে কিছু কিনতে চাইলে সবাই দোকানের স্যাম্পলটা নেড়েচেড়ে ভালোভাবে দেখে নেয়, কেনার সময় কিন্তু নেয় কিন্তু শোকেসের ভিতরের ইন্ট্যাক্ট প্যাকেট। বর্তমানে এইসব মেয়েরা সবাই ইন্ট্যাক্ট প্যাকেট থেকে বের হয়ে এসে স্যাম্পল হবার প্রতিযোগিতায় নেমে গেছে….

মধু খাওয়া শিখিয়ে ভ্রমরের ডানা গজিয়ে দিয়ে এই সব মেয়েরা আশা করে, ভ্রমর এক ফুলেই, এক স্বাদের মধু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে….…হায়, কি বিচিত্র এদের আশা…..

পূনশ্চঃ এটা একটা জন সচেতনতা মূলক পোষ্ট। ব্যক্তি স্বাধীনতা ও নারী স্বাধীনতার নামে যা ইচ্ছা করার যদি অধিকার থেকে, তবে লেখার স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হয়ে কিছু সত্য কথা আমি কেন লিখতে বা বলতে পারবো না……..

সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত @ যুনাইদ, জুলাই ২০১৯

প্রেম শারীরিক

প্রেম সম্পূর্ণরূপে শারীরিক। শরীর বা অবয়ব নেই তো প্রেম নেই। অস্তিত্ব থাকতেই হবে এবং তা পরস্পরের কাছাকাছি আকর্ষিত হওয়ার মাধ্যমেই প্রেম।
রামের সঙ্গে রাধিকার প্রেম। মানে তারা পরস্পরের প্রতি শরীরগতভাবে আকর্ষিত। তাই প্রেম। তা যদি না হত, যদি মনের ব্যাপার হত তাহলে লুকিয়ে দেখা করার ইচ্ছে হয় কেন? শুধু তো মনের মিল তাহলে ব্যাপারটা প্রকাশ্যই হোক। শরীর বাদ দিয়ে যদি প্রেম হতো তাহলে রামের সঙ্গে ফতিমার প্রেম তাদের ফ্যামিলি কিংবা সবাই মেনে নিত। বিবাহিত স্বপ্না তার স্বামীর পরকীয়া প্রেম মেনে নিত।
কিন্তু মানে না বা মানা যায় না তার কারণ ফতিমার ফ্যামিলি জানে এবং স্বপ্নাও জানে, আজ না হোক কাল ওরা শারীরিক মিলনে লিপ্ত হবেই হবে।
যে কোন প্রেমিক বা প্রেমিকা তার দয়িতার বিয়েতে আপত্তি করবে না। ভাববে অন্য কারো সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে তো কি হয়েছে প্রেম তো আমাকেই করে। তা কিন্তু হয় না। বরং প্রেমিক প্রেমিকা ভাবে আমি ছাড়া আমার দয়িতার শরীর আর করো যেন না হয়। কেন না প্রেম শারীরিক তাই।
মনে মনে প্রতিশোধ স্পৃহা জেগে ওঠে ‘কি আমার সঙ্গে প্রেম আর অন্যলোককে বিয়ে, এ আমি কিছুতেই মেনে নেব না।’ কেন না প্রেম শারীরিক। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রেম করার আসল উদ্দেশ্য হল বিয়ে করা। অর্থাৎ শারীরিক সম্পর্কের ছাড়পত্র পাওয়া। প্রায়ই শোনা যায় বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস। তার আগে প্রেমের মাধ্যমে সেই সহবাসের পথ প্রশস্ত করা।
প্রেম বাদ দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক আকছার ঘটে। কিন্তু শরীর বাদ দিয়ে প্রেম একটাও নেই। শরীর বাদ দিয়ে প্রেম যদি হতো তাহলে পৃথিবীতে প্রায় আশি নব্বই শতাংশ মারামারি হানাহানি কমে যেত।
আমাদের সামাজিক পরিকাঠামোতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখাশুনা করে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন হয়। সেই শারীরিক সম্পর্ক থেকে গড়ে ওঠে প্রেম। কিন্তু কোন অসুবিধা নেই। হাজার হাজার লাখো লাখো এরকম বিয়ে করে অনেকের গভীর প্রেম। কোনভাবেই তা বিনষ্ট হয় নি। কেন না প্রেম শারীরিক।
কলেজের সেরা সুন্দরী মেয়েটি প্রেম করে আর ছাড়ে। কিংবা অনেকেই তার পেছনে ঘুর ঘুর করে। কিন্তু খারাপ দেখতে কালো মেয়েটির অনেক গুণ। তবু কেউ তাকে প্রেমের অফার দিচ্ছে না। কেন না প্রেম শারীরিক তাই।
বেশ্যাখানায় বারবার যেতে যেতে মেয়েটির সাথে রামুদাদার প্রেম হয়ে গেল। কিন্তু পাশের বাড়ির গুণবতী সুন্দরী মেয়েটি রামুদাদাকে পাত্তা দিত না। কাছে ঘেঁষতে দিত না তাই তার সাথে আমাদের অত ভাল ছেলে রামুদাদার প্রেম হল না। কেন না প্রেম শারীরিক তাই।
গল্পে উপন্যাসে গানে কাহিনীতে কবিতায় প্রেম লিখতে পড়তে ভাবতে বেশ ভালই লাগে। কিন্তু ওই পর্যন্ত। বাস্তবের যুক্তির কোন মিল নাই। শরীর চাই, না হলে প্রেমের কোন মূল্য নাই। পরিণতিও নাই। কিংবা প্রেম নাই।
টিন এজে কত ছেলে কত মেয়ে শুধু প্রেম করে নষ্ট হয়ে গেল। পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়ল। কেন না প্রেম শারীরিক তাই। যদি মনের ব্যাপার হতো তাহলে সরল সুন্দর টিন এজ মনে সুন্দরের ছাপ ফেলত। সে পড়াশুনায় এবং পড়াশুনা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে এগিয়ে যেত। তা কিন্তু হয় না। কেন না প্রেম করা মানে তার মনের মধ্যে শুধু দয়িতার শরীর ভাবনা ঢুকে গেল। বিপরীত এই শরীরের নেশা তাকে আর পড়াশুনা গান বাজনা আঁকা খেলাধূলা কোথাও কোনভাবে গভীর মনোযোগ দিতে দিল না। ফলে টিন এজ প্রেম করেই পিছিয়ে পড়ল। কেননা প্রেম শারীরিক তাই।
আমাদের পাড়ার বলরাম দাদা বহুবার সোনাইয়ের শরীর কাছে পাওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। চোখে চোখ মিলিয়েছে। অনেকবার ডেকেছে একা একা পার্কে। কিন্তু সোনাই বড্ড সেকেলে। যাকে বিয়ে করবে তার জন্য শরীর গুছিয়ে রেখেছে। বলরাম বলেছে – আমি তো তোমাকেই বিয়ে করব। তাতে সোনাই বলেছে – তাহলে বিয়ের পরে। তার আগে কাছে ঘেঁষবে না। ফলে সোনাইয়ের সঙ্গে বলরামের প্রেম গড়ে ওঠেই নি। অনিন্দিতার সঙ্গে এখন বলরামের প্রেম। বেশ জোরালো। কেন না প্রেম শারীরিক তাই।
আচ্ছা আপনাকে বলছি, আপনি কি কোন দেখতে শুনতে খারাপ, একেবারে পঙ্গু কিংবা কোন তৃতীয় লিঙ্গ কারো সাথে প্রেম করবেন? সে তো তার শারীরিক গঠনে পিছিয়ে থাকলেও মন তো সবার আছে। সেই মন সুন্দর থেকে সুন্দরতর সুন্দরতম হতেও পারে। হয়ও। আপনি কি তাদের সাথে প্রেম করবেন? করবেন না। কেন না প্রেম শারীরিক তাই।

আমাদের উচিত আগে নিজধর্ম সম্পর্কে ভালোভাবে জানা

আল্লাহ সকল জাতিগোষ্ঠীতে ও জনপদে ঐ এলাকার ভাষায় রচিত ধর্মগ্রন্থ সহকারে তার নবী-রসুলদেরকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু ঐ নবীদের বিদায়ের পরে তার শিক্ষা ও ধর্মগ্রন্থ বিকৃত করে ফেলা হয়েছে। ফলে ঐ এলাকার মানুষকে নতুন করে পথ দেখাতে আবির্ভূত হয়েছেন অন্য নবী যারা পূর্বের বিকৃত গ্রন্থকে রদ ঘোষণা করেছেন এবং নতুন বিধান জাতিকে প্রদান করেছেন। কেউ তাকে মেনে নিয়েছে, কেউ মেনে নেয় নি। এভাবে জন্ম হয়েছে একাধিক ধর্মের। কালক্রমে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, এক এলাকার ধর্মের অনুসারীরা অন্য এলাকায় অন্য ভাষায় নাযেলকৃত ধর্মকে ধর্ম হিসাবে এবং ঐ ধর্মের প্রবর্তককে নবী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। যেমন ইহুদিরা ঈসা (আ.) কে আল্লাহর প্রেরিত বলে স্বীকার করে না, খ্রিষ্টানরা আখেরী নবী মোহাম্মদ (সা.)-কে নবী হিসাবে স্বীকার করেন না, একইভাবে মুসলিমরা ভারতীয় অঞ্চলে ভারতীয় ভাষার মানুষের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত বুদ্ধ ও শ্রীকৃষ্ণ এঁদেরকে নবী হিসাবে স্বীকার করেন না। কিন্তু তাদের প্রচারিত ধর্মগ্রন্থের মধ্যে আখেরী নবীর আগমনের বহু ভবিষ্যদ্বাণী উল্লেখিত আছে যা গবেষণা করলে স্পষ্ট বোঝা যায় যে ঐ ধর্মগুলিও আল্লাহরই প্রেরিত (যা এখন বিকৃত হয়ে গেছে), এবং স্বভাবতই সেগুলির প্রবক্তারা আল্লাহরই বার্তাবাহক অর্থাৎ নবী ও রসুল। আল্লাহ বলেন, আমি প্রত্যেক জাতি-গোষ্ঠির মধ্যে কোন না কোন রসুল পাঠিয়েছি” (সুরা নাহল-৩৭)। এমন কোন জাতি নেই, যার কাছে সতর্ককারী (নাযের) আগমন করে নাই (সুরা ফাতির -২৫)।

কোর’আনের এইসব বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠির মধ্যে আল্লাহ বিভিন্ন যুগে নবী-রসুল পাঠিয়েছেন। মুসলিম হওয়ার শর্ত হিসাবে ঐ সব নবী-রসুলগণের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা অবশ্য জরুরি। তাদের মধ্যে কোনরূপ পার্থক্য করতেও আল্লাহ নিষেধ করেছেন এবং তাঁদের সকলকে নবী-রসুল হিসাবে বিশ্বাস করার ব্যাপারে মো’মেনদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে (সুরা বাকারা- ২৮৫, সুরা নেসা ১৫০-১৫২)। পবিত্র কোর’আনে মাত্র ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি যে আল্লাহ প্রায় এক লক্ষ চব্বিশ হাজার বা মতান্তরে দু-লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী রসুল পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “তোমার পূর্বেও আমি অনেক রসুল পাঠিয়েছি, যাদের মধ্যে কারো বিষয় তোমার কাছে বর্ণনা করেছি এবং তাদের মধ্যে কারো কারো বিষয় বর্ণনা করি নাই (সুরা মো’মেন-৭৯)। যদি সব নবীদের নাম-ধাম বৃত্তান্ত আল-কোর’আনে বর্ণনা করা হোত তাহলে একটি বিশ্বকোষের আকার ধারণ করত। প্রত্যেক নবী-রসুলগণ তাঁদের জাতির ভাষায় তথা মাতৃভাষায় ঐশীবাণী প্রচার করেছেন, যাতে তাদের জাতির লোকেরা সহজেই নবীর শিক্ষাকে বুঝতে ও অনুসরণ করতে পারে (সুরা এব্রাহীম-৫)। ঐসব ভাষা হিব্রু পার্শী, সংস্কৃত, পালি, চীনা বা অন্য যে কোন ভাষাই হোক না কেন। সুতরাং অতীত জাতির নবীদের জানতে হলে আমাদের অবশ্য বিভিন্ন ভাষায় রচিত ধর্মগ্রন্থগুলি যথা ‘বেদ-বেদান্ত, পুরাণ-গীতা-সংহীতা, উপনিষদ, মহাভারত, ত্রিপিটক, দিঘা-নিকায়া, জেন্দাবেস্তা, তওরাত-যবুর-ইঞ্জিল’ ইত্যাদি গবেষণা ও পাঠ করে কোর’আনের আলোকে অতীত নবীদের সম্বন্ধে সত্যিকার পরিচয় জানতে হবে। পাক-ভারত উপমহাদেশেও আল্লাহ নবী-রসুল-অবতার প্রেরণ করেছেন এবং তাঁদের প্রচারিত বাণী-ঐশীগ্রন্থ বিকৃত অবস্থায় হলেও ঐ জাতির মধ্যে এখনও বংশ-পরম্পরায় অনুসৃত হয়ে আসছে, তাদের ভক্ত-অনুরক্ত অনুসারীদের মাধ্যমে। ভারতবর্ষে আগত মহাপুরুষদের মধ্যে যুধিষ্ঠির, বুদ্ধ, মনু, শ্রীকৃষ্ণ, রাম, মহাবীর- এঁদের জীবন, দর্শন, প্রকৃতি ও ধর্মগ্রন্থ বিশ্লেষণ করে অনেক মনীষী তাদের গবেষণামূলক গ্রন্থে অসংখ্য যুক্তি, প্রমাণ, তথ্য, উপাত্ত উপস্থাপন করে মত প্রকাশ করেছেন যে এঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন আল্লাহর প্রেরিত অবতার তথা নবী-রসুল।

এই উপমহাদেশসহ বিভিন্ন জায়গায় আমরা দেখি এক ধর্মের অনুসারীদের অজ্ঞতা এবং ভুল জানার কারণে তারা এক ধর্মের অবতারদেরকে, মহাপুরুষদেরকে আরেক ধর্মের ধর্ম গুরুরা, ধর্ম ব্যবসায়ীরা অসম্মান করেন, অপমান করেন, গালাগালি করেন। এটা দুনিয়াময় ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বীজ। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ যদি অন্য ধর্মের প্রভু এবং অবতারদের প্রকৃত পরিচয় জানতে পারে তারা দেখবে যে তারা সকলেই এক স্রষ্টার থেকে আগত, তাদের ধর্মগুলিও সেই প্রভুরই অবতারিত, এবং সকল ধর্মের অবতারগণ মানুষের কল্যাণার্থেই এসেছিলেন। এই সত্য জানতে পারলে প্রত্যেকেই সেই অভিন্ন স্রষ্টার অবতারদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি পোষণ করবে, তখন সকল ধর্মের অনুসারীদের হৃদয় থেকে অন্যদের প্রতি বিদ্বেষভাব বিদূরিত হতে বাধ্য। এভাবে সাম্প্রদায়িকতার অপচর্চা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। একটি উদাহরণ: ইউরোপে খ্রিষ্টানরা যে ইহুদিদের উপরে হামলা চালিয়ে গত ১৯০০ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ ইহুদি হত্যা করেছে, তাদেরকে বিতাড়িত করেছে এ সবকিছুর গোড়ায় কারণ ছিল ইহুদিরা ঈসা (আ.)-কে জারজ সন্তান এবং মা মরিয়মকে ভ্রষ্টা বলে অপবাদ দিয়ে থাকে (নাউযুবেল্লাহ), এবং খ্রিষ্টানরা বিশ্বাস করে যে ইহুদিরা ঈসা (আ.)-কে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করেছে। ইহুদিরা এখনও যদি এই বিশ্বাসে উপনীত হয় যে, ঈসা (আ.) মুসার (আ.) মতোই আল্লাহর নবী ছিলেন, তারা নিশ্চয়ই আর তাঁকে ‘জারজ সন্তান’ বলে গালি দিতে পারবে না। একইভাবে হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধরা শেষ নবী, বিশ্বনবী মোহাম্মদ (সা.) কে নবী হিসাবে অস্বীকার করে। তাদের অনেকে এতটাই ইসলাম-বিদ্বেষী যে কার্টুন, চলচ্চিত্র, সাহিত্য, চিত্রকলা দিয়ে প্রায়ই ইসলামের নবীকে এবং পবিত্র কোর’আনকে অবমাননা করে চলছে যার ফলে অসংখ্য দাঙ্গায় প্রাণহানি, রক্তপাত ঘটেছে, আজও সেই আগুন জ্বলে যাচ্ছে কোটি ইসলামপ্রিয় মানুষের হৃদয়ে। কিন্তু গত ১৪০০ বছরে একজন মুসলিমও ঈসা (আ.)-কে নিয়ে কোন কটূক্তি করেছে বলে কেউ দেখাতে পারবে না। কিন্তু হিন্দুধর্মের যাঁরা অবতার তাদের ব্যাপারে মুসলিমদের সঠিক জ্ঞান নেই। ফলে তাদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে সেই মহামানবদের হেয় করে কথা বলেছে, হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। এই কাজটি হিন্দুরাও করেছে- যেখানে যে সংখ্যাগুরু সেই সেখানে সংখ্যালঘুদের উপরে আক্রমণ করেছে, তাদের উপাসনালয় ধ্বংস করেছে। এই কারণে ভারতীয় নবীদের সঠিক পরিচয় মানুষের সামনে তুলে ধরা দরকার।

আবার, সমস্ত দুনিয়ায় অন্যায় অবিচার অশান্তির মূল হচ্ছে ইহুদি-খ্রিষ্টান ‘সভ্যতা’। আত্মাহীন, স্রষ্টাহীন, নৈতিকতাহীন, দেহসর্বস্ব এই বস্তুবাদী সভ্যতাকে সব ধর্মের লোকেরাই অবলীলায় গ্রহণ করে নিয়েছেন এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতি গোগ্রাসে গিলছেন। তাদের উচিত ছিল তাদের সামষ্টিক জীবন পরিচালনা করার জন্য জীবনবিধান দিতে যে মহামানবদেরকে স্রষ্টা আল্লাহ পাঠিয়েছেন, সেই অবতারের শিক্ষা তাদের গ্রহণ করা। তা না করে সবাই যার যার ধর্মীয় শিক্ষাটাকে ব্যক্তি পর্যায়ে সীমাবদ্ধ করে রেখেছেন। কেউ মন্দিরের মধ্যে ঢুকিয়েছেন, কেউ মসজিদে ঢুকিয়েছেন, কেউ প্যাগোডায় ঢুকিয়েছেন, কেউ ঢুকিয়েছেন গির্জায়, আর ঐ সমস্ত উপাসনালয়ে বসে প্রত্যেক ধর্মের ধর্মজীবীরা ধর্মকে নিয়ে ব্যবসা করে খাচ্ছেন। তারা তাদের অবতারদের শিক্ষাকে গ্রহণ করেন নি, সাধারণ মানুষকেও সঠিক শিক্ষা দেয় নি। ফলে সাধারণ মানুষ চিরকালই ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থেকেছে, এখনও বঞ্চিতই আছে। তারা যদি তাদের সেই অবতারদের প্রকৃত শিক্ষাকে গ্রহণ করে নেয় তাহলে মানুষ সত্যিই মুক্তি পাবে। তারা যদি প্রত্যেকে সত্যসন্ধানী মন নিয়ে তাদের নিজেদের ধর্মগ্রন্থগুলি অভিনিবেশ সহকারে প্রণিধান করে তবে তারা বুঝতে পারবে যে, তাদের ধর্মের ধারাবাহিকতাই হচ্ছে ইসলাম নামক দীনটি। বিশ্বধর্মগুলির ধর্মীয় গ্রন্থাদিতে যে ভবিষ্যদ্বাণী উৎকলিত আছে সেখানেও এই শেষ ইসলামের এবং শেষ নবীর উল্লেখ রয়েছে। তাদের অবতারগণ এই শেষ নবীর অনুসারী হওয়ার জন্য নিজ জাতিকে হুকুম দিয়ে গেছেন। অন্য ধর্মের অনুসারীরা যদি শেষ ধর্মগ্রন্থ কোর’আন পাঠ করে এবং এর বক্তব্য ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে চিন্তা করে তাহলে খুব সহজেই তারা বুঝতে সক্ষম হবেন যে কোর’আন একটি ঐশীগ্রন্থ। সুতরাং মানবজাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে বড় একটি বাধা অপসারিত হবে। সমস্ত পৃথিবী যেভাবে অন্যায়, অবিচারে পূর্ণ হয়ে আছে, এই শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য সকলে মিলে একটি জাতিতে পরিণত হতে হবে। এই যে একজাতি হবে সেটার জন্য একটি ঐক্যসূত্র লাগবে। সেই ঐক্যসূত্র হলো স্রষ্টা, ঈশ্বর, আল্লাহর প্রেরিত শাস্ত্রগ্রন্থ আল কোর’আন। এই কোর’আনকে মেনে নেওয়ার জন্য সকল ধর্মগ্রন্থাদিতে নির্দেশ দেওয়া আছে। এখানে আমরা ভারতীয় নবীদের কথা বলতে পারি। সনাতন ধর্মের বহু ধর্মগ্রন্থে বিভিন্ন নামে শেষ নবীর উল্লেখ রয়েছে, যেগুলিতে শেষ নবীর জীবনের বহু ঘটনার বিবরণ ও লক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে যা দিয়ে কোন সুস্থ্য জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ ইসলামকে সত্যদীন বলে স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। বেদে পুরানে শেষ নবীকে কোথাও বলা হয়েছে কল্কি অবতার, কোথাও নরাশংস, কোথাও অন্তীম ঋষি, বৌদ্ধ ধর্মে তাঁকেই বলা হয়েছে মৈত্তেয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরবর্তীতে লেখার আশা রাখি। এ বিষয়গুলি সম্পর্কে জনসাধারণ বিশদভাবে অবগত নন, কারণ সকল ধর্মের অনুসারীদের মধ্যেই একটি পুরোহিত শ্রেণি জন্ম নিয়েছে যারা ধর্মকে নিজেদের কুক্ষিগত করে রেখেছে। তারা ধর্মের ইজারা নিয়ে সাধারণ মানুষকে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। কিন্তু সত্য উদ্ঘাটনের জন্য প্রত্যেক জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের উচিত নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। তাহলে বিকৃতির ঘন অন্ধকারের মধ্যেও কিছু মহাসত্যের আলোকচ্ছটা অবশ্যই তাদের দৃষ্টিগোচর হবে। এই সত্যসন্ধানে সাহায্য করার জন্য সেই ধর্মগ্রন্থের উক্তিগুলি পাঠকের সামনে আমরা তুলে ধরছি। সুতরাং প্রত্যেকের প্রথম করণীয় হচ্ছে নিজ ধর্মের অবতারদের নির্দেশ মান্য করে তাঁরা আখেরী যুগে (কলিযুগে, Last Hour) যে অবতার ১৪০০ বছর আগেই আগমন করেছেন সেই নবী মোহাম্মদ (সা.) এর অনুসারী হওয়া। যদি নিজ ধর্মের অবতারদেরকে তারা সম্মান করেই থাকেন তাঁর নসিহত অবশ্যই তাকে শুনতে হবে।

সন্দেহের সংসার

প্রিয় মানুষটি অন্য কারো সাথে অন্তরঙ্গ সময় কাটাচ্ছে, সেটা আপনি কখনই মেনে নিতে পারেন না। কিন্তু সেই আপনিই যখন পছন্দের কারো সাথে ভালোলাগা মুহূর্তগুলো উপভোগ করেন, তখন কি একবারও আপনার মনে হয় আপনার সেই প্রিয় মানুষটির কথা, যাকে আপনি একচেটিয়া ভাবে সন্দেহ করে যাচ্ছেন? আমি জানি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে কেউই প্রস্তুত নন। আমরা মানুষ। আমাদের চরিত্র বিচিত্র রকমের। আমরা নিজের বেলায় শুধু ষোল আনা বুঝি। অন্যকে বুঝতে চাই কম। আর গোলমালের সূত্রপাত এখানেই।

একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, আপনি সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকেন। হোক সে অফিসে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। দেশে বা দেশের বাইরে। সময় কখন বয়ে চলে যায় স্রোতের মত টেরও পান না। কিন্তু আপনার প্রিয়জন বাসায় কিভাবে সময় কাটান, একবারও কি ভেবেছেন? যারা চাকরী করছেন বা ব্যবসা সামলাচ্ছেন তাঁদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু অন্যরকম। সেখানে দুজনের সন্দেহের মাত্রাটা দুজনের প্রতি সমান। আপনার প্রিয়জন যদি গৃহিণী হয়ে থাকেন তবে টিভি দেখে, পত্রিকা পড়ে বা ইন্টারনেট ঘেঁটে সময় কাটান। তিনি যখন অনলাইনে আসেন তখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হাজারো মুখের মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন। তাঁর মানে এই নয় যে, তিনি আপনার থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন। যদি ব্যতিক্রম কিছু ঘটে সেটার জন্য আমি আপনাকেই দায়ী করব।

ইন্টারনেটে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে তোলাটাকে আপনি যদি সহজভাবে না নিতে পারেন তবে অবশ্যই আপনি তাকে পর্যাপ্ত সময় দিবেন। আর তা যদি না পারেন তাঁর সময় কাটানোর জন্য বন্ধুদের সাথে অনলাইনে সময় কাটানোটাকে সহজভাবে মেনে নিন। প্রাণ খুলে গল্প করার সময় আপনি দিবেন না, আবার কারো সাথে করতেও দিবেন না, তাহলে ঐ মানুষটা আর একজন কারাবন্দীর মধ্যে পার্থক্য কোথায় বলুন? মানুষ কারো সাথে গল্প করলে কখনই তাঁর হয়ে যায় না। প্রাণ খুলে গল্প করার মাঝে নারীরা এক ভিন্ন ধরনের আনন্দ খুঁজে পায়।

সামান্য খুটিনাটি বিষয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভয়ানক ঝগড়ার সৃষ্টি হতে দেখেছি আমি। এর পেছনে মূল কারণ সন্দেহ। স্বামী আর স্ত্রীর মধ্যে প্রাইভেসি বলে কিছু নেই। এই প্রাইভেসির দেয়াল আমরা নিজেরাই তৈরি করি ভুল বোঝা বা সন্দেহের কংক্রিট দিয়ে। যা শেষ পর্যায়ে ছাড়াছাড়িতে পতিত হয়। আর যাদের সন্তানাদি আছে তাঁরা বেড়ে ওঠে কুরুক্ষেত্রের মতন সংসারে। যা তাঁদের মানসিক বিকাশে বাঁধ সাধে। আপনার প্রিয়জনের যদি আপনাকে ভালো না লাগে তাহলে সে এমনিতেই আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে। আপনি ঠেকাতে পারবেন না। বেশীরভাগ পুরুষ মনে করেন আমার স্ত্রীর অন্য কারো সাথে দৈহিক সম্পর্ক আছে। ভালোবাসার মানুষটি সম্পর্কে এমন ভাবনা প্রত্যেক পুরুষই অন্তরে পুষে রাখেন।

একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন, কোন নারীই স্বামী ব্যতীত অন্য কারো সাথে দৈহিক মেলামেশা করতে আগ্রহী নন। অবশ্য যারা চারিত্রিক ভাবে ছোটবেলা থেকে অন্যরকম তাঁদের কথা আলাদা। মেয়েরা ঘুরতে বেশী পছন্দ করেন। পছন্দ করেন গল্প করতে। দৈহিক চাহিদা নয় বরং হৈচৈ করে সময় কাটাতে তাঁরা বেশী পছন্দ করেন। তাঁদের মন অতি কোমল। তাঁর প্রতি অশ্লীল সন্দেহ পোষণ করেন এটা যদি সে ঘুনাক্ষরেও টের পায় তাহলে সর্বনাশ। তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করুন। বেশী বেশী সময় দিন। মনে দাগ কাটে এমন আচরণ করবেন না। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রাখার ব্যাপারে তাকে স্বাধীনতা দিন। কেউ যদি পাপ করার আশা পোষণ করে, তাকে মানুষের পক্ষে পাহারা দিয়ে থামানো সম্ভব নয়।

নিজে ধর্মের হুকুম আহকাম মেনে চলুন। প্রিয়জনকেও উৎসাহিত করুন ধর্ম পালনে। যারা পাপকর্মে লিপ্ত তাঁদের পরকালের করুণ পরিনতির কথা বার বার বিভিন্ন উপায়ে স্মরণ করিয়ে দিন। সব কাজে তাঁর মতামতকে প্রাধান্য দিন। দূরে থাকলে দিনে একাধিকবার খোঁজ খবর নিন। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তাঁর সাথে শেয়ার করুন। তাঁর থেকে অভিনয় করে হলেও বুদ্ধি নেবার চেষ্টা করুন।

দেখবেন তাঁর জগতে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই। আপনি যখন তাঁর থেকে দূরে সরে যান তখনই সে মলিন মুখে অন্যের পানে তাকায় মনের কষ্ট গুলোকে শেয়ার করার জন্য। বাড়তে থাকে দূরত্ব। আপনি নিজের চোখের যেমন যত্ন নেন, একটা ধূলি কণার আঘাতও লাগতে দেন না, প্রিয় জনের ঠিক তেমন যত্ন নিন। শান্তিময় জীবন যাপন করুন। হাসি খুশীর মাঝে বেড়ে ওঠা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পৃথিবীকে উপহার দিন।